ইসলামের অমৃত সুধা পান করার পর এই প্রথম পূজো’বিহীন দিন কাটছে আমার। যদিও এটা আমার জন্য অনেক সৌভাগ্যের, অনেক অশ্লীলতা থেকে বাঁচাতে পারছি নিজেকে।

এই সৌভাগ্য হয়তো সবার হয়না, আল্লাহ তা’লা যাকে হেদায়েত দেন তারই ভাগ্যে জুটে আল্লাহর এই অশেষ রহমত।

পূজায় সবসময় বিশেষ আকর্ষন থাকে গান আর নাচ । পড়ালেখার পাশাপাশি নাচের স্কুলেও ভর্তি হয়েছিলাম । বান্ধবীদের মধ্যে আমি, সুজাতা আর সূবর্ণা ছিলাম খুব কাছের। তিনজনই নাচে খুব পারদর্শী ছিলাম বলে পূজায় সবসময় আমাদের ডাক পড়তো। নিজেকে নিয়ে খুব গর্ব করতাম, এইজন্য যে পূজামন্ডপে নাচের সুযোগ পেয়েছি। যেটা সাধারণত সবার ভাগ্যে জুটে না।

কয়েকবছর আগের ঘটনা, অষ্টমীর দিন! যথারীতি নাচের জন্য আমাদের তিনজনের ডাক পড়লো। আমরাও খুব আগ্রহে ছিলাম। মধ্যরাতে মঞ্চে উঠলাম নাচ করার জন্য। নাচের একপর্যায়ে খেয়াল করলাম মাতাল অবস্থায় মঞ্চে উঠে পড়েছে আমাদের এলাকার এক আধবয়স্ক মানুষ। টাকার প্রভাব ছিলো বলে তাকে কেউ কিছু বললোনা। হঠাৎ সে আমাদের গায়ে হাত দিতে শুরু করলো, রাগে থাকতে না পেরে দিয়ে দিলাম একটা চড়!

দর্শকরা সবাই হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে! যেনো আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি তাকে চড় দিয়ে। অবশ্য অনেকেই খুশিও হয়েছিলো। বিষয়টা বড়দার চোখেও পড়লো, আমাকে মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার জন্য ইশারা করলো। আমি কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে চলে গেলাম।

বাবা বললেন, তুই কাজটা ভালো করিস নি, এরকম সামান্য ঘটনার জন্য তাঁকে চড় মারতে হবে কেনো?

আমি বললাম, এটা সামান্য ঘটনা? একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের গায়ে হাত দেয়া সামান্য ঘটনা? ও আচ্ছা এটা তো আমাদের ধর্মেই আছে! যেখানে দেবতারা এরকম অশ্লীলতা করতে পারে সেখানে সাধারণ মানুষের কাছে তো এটা সামান্য ঘটনাই! কথা শেষ না হতেই বাবার হাতের স্টীলের হ্যান্ডেলওয়ালা টর্চটা আমার দিকে ছুঁড়ে মারলো ! এখনো হাতে সেই আঘাতটার চিহ্ন আছে ।

জীবনে সেইদিনই প্রথম বাবার সাথে জোর গলায় কথা বলেছিলাম, বাবাও আমার ব্যবহার দেখে হতবাক! বড়দাও আমার কথা শুনে অবাক! কি বলে ফেলেছি আমি! তাদের চেহারার ভাবমূর্তি দেখে মনে হচ্ছে আমি অনেক বড় পাপ করে ফেলেছি। মা বললেন, যা বলেছিস বলেছিস! আর কোনদিন এরকম কথা মুখেও আনবি না!

সেইদিনের ঘটনার পর থেকে আর কোনোদিন পূজায় নাচতে যায়নি! মনে মনে চিন্তা করলাম, যেখানে নিজের ইজ্জতের কোনো দামই নেই, অন্তত সেটা আমার ধর্ম হতে পারেনা।

আরেকটা চিন্তা সবসময় মাথায় ঘুরপাক খেতো, যখন প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হতো, এর আগমূহুর্তে দূর্গার হাতে সবাই চিঠিতে নিজের ইচ্ছার কথা লিখে বেধে দিতো। আমিও দিয়েছিলাম কয়েকবার! পরক্ষনে ভাবতাম প্রতিমা টা তো পানিতে তলিয়ে যাবে! তাহলে আমাদের ইচ্ছার চিঠিগুলো ভগবানের হাতে কে পৌছাবে?

ইসলাম গ্রহণের পর অন্তত সেই কনফিউশনটা আর নেই! কারণ আমার রাব্বে কারীমের কাছে নিজের ইচ্ছাটা চিঠির মাধ্যমে বলতে হয়না, বলতে হয় জায়নামাযে সিজদায় কান্নারত অবস্থায়! নিজের সব কষ্ট দূর হয়ে এখন প্রশান্তি মন নিয়ে অপেক্ষা করছি নিজের রবের দিদারে। আলহামদুলিল্লাহ।
.

====================================
লিখেছেন, মুবাশ্বিরাহ্ শর্মা – নবমুসলিমা এক বোন।

Facebook Comments