কাজা নামাজ । শরীয়তে ঈমানের পরেই নামাযের স্থান এবং তা ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ, সবল বিবেকবান মুসলমান নর-নারীর ওপর প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। ইচ্ছাকৃত নামাজ ছেড়ে দেয়া কবিরা গুনাহ। পরে তার কাজা আদায় করা ওয়াজিব।
নামাজের গুরুত্বঃ নামাজ ফরজ হওয়া প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন,
‘হে নবী! আমার বান্দাদের মধ্যে যারা মুমিন তাদের বলুন, নামাজ কায়েম করতে’। (সূরা ইবরাহিম, আয়াত-৩১)।
অন্যত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘তোমরা লোকদের সঙ্গে উত্তমভাবে কথা বলবে এবং নামাজ আদায় করবে। (সূরা বাকারাহ, আয়াত-৮৩)।
অন্য হাদিসে এসেছে- রাসুল সাঃ আবু দারদা রাঃ কে বলেন-“তুমি ফরজ নামায ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করবেনা। কেননা, যে ব্যাক্তি ইচ্ছাকৃত তা পরিত্যাগ করে তাঁর উপর থেকে আল্লাহর দায়িত্ব উঠে যায়।সুনানে ইবনে মাযাহ হাদিস-৩০১
উল্লেখিত আয়াত ও হাদিস থেকে শরীয়তে নামাযের মান ও অবস্থান সুস্পষ্ট বোঝা যায় এবং নামায ছেড়ে দেওয়ার পরিণতি যে কত ভয়াবহ তাও সুস্পষ্ট ।
কাজা নামাযের পরিচয় ।
নামায যথাসময়ে আদায় করা আবশ্যক। তবে যদি কোন বৈধ কারনে আদায় করা না যায় পরে তা আদায় করার নাম কাযা। রাসুল সাঃ ইবাদাতে কাযার দর্শনটি অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী করে বুঝিয়েছেন- ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন,”জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এসে বললেন, আমার আম্মা হাজ্জের মানৎ করেছিলেন তবে তিনি হজ্জ আদায় না করেই ইন্তিকাল করেছেন। আমি কি তাঁর পক্ষ হতে হজ্জ আদায় করতে পারি? আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তার পক্ষ হতে তুমি হজ্জ আদায় কর। তুমি এই ব্যাপারে কি মনে কর যদি তোমার আম্মার উপর ঋণ থাকত তা হলে কি তুমি তা আদায় করতে না? সুতরাং আল্লাহর হক আদায় করে দাও। কেননা আল্লাহ্র হকই বেশী আদায়যোগ্য।”(সহীহ বুখারী,১৮৫২)
নামায হল আল্লাহর হক বা ঋণ । তা পরিশোধ করা আবশ্যক। সেটা সময়মত আদায় করতে না পারলেও পরে কাজা পড়তে হবে।
কোন নামাযের কাযা করবঃ- পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাজ ছুটে গেলে কাযা করা ফরজ। এশার নামাজের সময় বিতিরসহ যে কোনো ওয়াজিব নামাজের কাযা করা ওয়াজিব।
নফল নামাজ শুরু করার পর ওয়াজিব হয়ে যায়। কোন কারণে নফল নামাজ নষ্ট হলে অথবা শুরু করার পর কোন কারণে যদি ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে তার কাযা করাও ওয়াজিব। যেই ওয়াক্তের সুন্নত নামাজ সেই ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেলে তা আর কাযা করতে হয় না। তবে যদি ফজরের ফরজ ও সুন্নত নামাজ একসাথে ছুটে যায় তাহলে সেই দিন সূর্য মধ্য আকাশ থেকে পশ্চিম দিক ঢলে যাবার পূর্বে ফজর নামাজ কাযা আদায় করলে তার সাথে সুন্নতও পড়তে হবে। সূর্য ঢলে গেলে বা শুধু ফজরের সুন্নত ছুটে গেলে পরবর্তিতে তা আর আদায় করতে হবে না।
কারো যদি যোহর বা জুম’আর পূর্বের চার রাকাত সুন্নত ছুটে যায় তাহলে ফরজের পর ওয়াক্ত থাকতে থাকতেই তা আদায় করে নিতে হবে। ওয়াক্ত শেষ হলে তা আর আদায় করা লাগবেনা। তবে এসকল ক্ষেত্রে সুন্নতে মু’আক্কাদা ছেড়ে দেয়ার কারণে গোনাহগার হতে হবে।
উল্লেখ্য জুমা নামাজের কাযা নেই। জুমা পড়তে না পারলে চার রাকাত জোহার কাযা পড়তে হবে।
কাযা নামাজের সময় : কাজা নামাজ পড়ার নির্দিষ্ট সময় নেই। যখনই স্মরণ হবে এবং সময়-সুযোগ হবে পড়ে নিতে হবে। তবে নামাযের নিষিদ্ধ সময়গুলোতে পড়া যাবেনা।
সফর বা ভ্রমণের সময়ের কাযা : সফরে যে নামাজ কাযা হবে তা মুকিম হয়ে পড়তে গেলে কসর পড়বে। কসর মানে চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ দুই রাকাত পড়বে। তেমনি মুকিম অবস্থায় কাযা হলে সফরে তা পুরা পড়তে হবে। মূল বিষয় হল,নামায যে অবস্থায় কাযা হয়েছে সেই অবস্থার নামায কাযা আদায় করবে।
কাযা নামাযের নিয়ত। যদি এক বা দুই ওয়াক্ত নামায কাযা হয় তবে নির্দিষ্ট সেই ওয়াক্তের উল্লেখপূর্বক নিয়ত এভাবে করবে- আমি অমুক ওয়াক্তের নামাযের কাযা আদায় করছি। অতটুকু যথেষ্ট। যাদের জিম্মায় অনেক কাজা নামাজ রয়েছে। আর কাজা নামাজ আদায় করার সময় এ নিয়ত করতে হবে, আমি অমুক দিনের জোহরের নামাজ কাজা আদায় করছি।
যদি দিন-তারিখ মনে না থাকে, এমতাবস্থায় এভাবে নিয়ত করবে আমি আমার জীবনের সর্বপ্রথম জোহর যে ওয়া নামাজের কাজা আদায় করছি। এভাবে প্রত্যেক কাজা নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে নিয়ত করবে। এভাবে ততদিন পর্যন্ত কাজা নামাজ আদায় করতে থাকবে, যতক্ষণ না ব্যক্তির মন এ সাক্ষ্য দেবে, তার জিম্মায় কোনও নামাজ কাজা নেই ।
উল্লেখ্য বিভিন্ন পর্ব তথা শবে কদর,শবে বারাত,শবে মেরাজ ইত্যাদিতে আমরা নফল কম করে আমার জিম্মায় যে কাজা নামাজ আছে টা আদায় করা উচিত । কেননা নফলের জন্য আল্লাহ্ পাকড়াও করবেন না বরং ফরজের জন্য করবেন ।
আল্লাহ আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে পড়ার তাওফিক দান করুক । আমীন।
রেফারেন্সঃ-
১) ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭১
২) আল মামসূত লিস সারখসী ১/১৬১
৩) তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৮৩
৪) আপকে মাসায়েল ৩/৬০৩
৫) ফাতাওয়া শামী ৩/৭১
৬)জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ওয়েবসাইট
এটা পড়তে পারেন মৃতের একাধিক জানাজা কি জায়েজ ?