জীবনের সারকথা

612
মৃত্যু জীবন ইসলামের ইতিহাস

মদীনার বিশিষ্ট আলিম ও কাজী সালামা ইবনে দীনার। মানুষ তাকে চিনে ইবনে হাযেম নামে। তিনি বলেন- ঝলমলে এক সকালে আমি উমর উবনে আব্দুল আজীজের দরবারে হাযির হলাম। তিনি আমার বয়োজ্যেষ্ঠ এবং ব্যালের খেলার সাথী। পরবর্তীতে তিনি খলীফাতুল মুসলিমীন নিযুক্ত হন।

অনেক দিন পর তাঁর সাথে আমার দেখা হল। প্রথম পলকেই তাঁর শরীরের এক আশ্চর্য এক পরিবর্তন লক্ষ্য ক্রলাম। তার সেই হৃষ্টপুষ্ট নিটোল স্বাস্থ্য শ্রীহীন হাড্ডিসার কঙ্কালে পরিণত হয়েছে। তিনি আমাকে কাছে ডেকে নিলেন। আমি তাঁর কাছে গেলাম,তিনি আমাকে নিয়ে তাঁর শীর্ণ গৃহে প্রবেশ করলেন।

আমি বললাম- এ কী হয়েছে আপনার ! কোথায় আপনার নিটোল স্বাস্থ্য,কোমল ত্বক আর ক্লান্তিময় চেহারা ! কোথায় আপনার সেই সম্পদের বৈভব,বিলাসবসনের বাহুল্য আর চাকচিক্যের ঝলকানি !আপনি আজ খলীফাতুল মুসলিমীন- অর্ধজগতের অধিপতি ! অথচ এমন নিরাড়ম্বর গৃহ !

-তুমি কেমন পরিবর্তনের কথা বলছ হে ইবনে হাযেম- বলেই তিনি ফুঁফিয়ে কেঁদে ফেললেন। কেমন জানি আনমনা হয়ে গেলেন। আমার দিকে তাকিয়ে আছেন পলকহীন। অথচ দেখে মনে হয়,সামনে তাঁর দিগন্তসম মরুপ্রান্তর আর অনন্তে তাঁর দৃষ্টি অন্তরীণ। খানিক পরে বললেন, মনে কর,আমি মারা গেছি। তিন দিন কেটে গেছে। তুমি এসেছ আমায় দেখতে। কবর খুঁড়ছ পরম আগ্রহে। হঠাৎ তুমি প্রকম্পিত হলে। শঙ্কায় শিউরে উঠলে। কেননা আমার চক্ষু কোটরাগত। আমার পেট ফেটে গেছে। পোকা মাকড় পরমনান্দে রক্ত চুষছে। দেহের স্থানে স্থানে গভীর দংশন,সাপের দংশন, আঁধারের দংশন ……


এটা পড়তে পারেন আহা, এ কবর যদি আমার হত !


 

এখন বাস্তবতায় ফিরে আসো। গভীর মনোযোগে একটু ভাব ! আমি বাস্তবতায় কী মনোরম আর কল্পনায় কী বীভৎস। অথচ সেই পরিস্থিতি সামনে অত্যাসন্ন। হে ইবনে হাজেম ! তুমি কী একটি হাদিস স্মরণ করিয়ে দিতে পার ? আমি বললাম মদীনায় আমি তো আপনাকে অনেক হাদিস শুনিয়েছি। আপনি কোনটা ইচ্ছা করেছেন ? তিনি বললেন আবু হুরায়রা যে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। বললাম,হ্যাঁ হ্যাঁ স্মরণে এসেছে। তিনি বললেন – তবে আমাকে তা শুনাও। আমি তোমার থেকে সে হাদিসটি শুন্তে চাই।

আমি বললাম নবীজি সাঃ ইরশাদ করেছেন,

তোমাদের সবার সামনে একটি করে উপত্যকা আছে।তা পাড়ি দেওয়া ভীষণ কষ্টকর। প্রতি পদে পদে তাঁর মৃত্যুর হাতছানি, প্রত্যেক হালকা ছিপছিপে দেহধারী তা সহজে পাড়ি দিবে।

 

হাদিসটি শুনে আবার তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। এবার খুব বেশি কাঁদলেন। আমি খুব ভয় পেলাম। না জানি এই কান্নাই তাঁর শেষ কান্না হয়। কান্না থামিয়ে কিছুক্ষণ পরে বললেন, আমি সেই উপত্যকা পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।অথচ আমার ভাবনার আকাশে নিরাশার কালো মেঘের আনাঘোনা।

—লেখক যুবায়ের আহমেদ

Facebook Comments