কেমন ছিলেন নবী (সাঃ) ?

মা আ’ইশা (রা.) বলেন, প্রিয়নবীকে দু’টি কাজের মধ্যে একটি বেছে নিতে বলা হলে সহজ কাজটিই বেছে নিতেন। পাপের সাথে সম্পৃক্ত কাজ থেকে তিনি দূরে থাকতেন।

তিনি ক্রোধ ও দুর্বিনীত ব্যবস্থা থেক দূরে ছিলেন। সকলের প্রতি তিনি সহজেই রাজী হয়ে যেতেন। তাঁর দান ও দয়াশীলতা পরিমাপ করা অসম্ভব ছিল। তিনি কল্যাণ ও দানশীলতায় পরিপূর্ণ বাতাসের চেয়ে অগ্রণী ছিলেন।

বীরত্ব ও বাহাদুরীর ক্ষেত্রে প্রিয় নবী (সাঃ) – এর স্থান ছিল সবার উপরে। তিনি ছিলেন সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বীর। তিনি সুকঠিন সময়েও পশ্চাৎপসারণ না করে সামনে এগিয়ে যেতেন। তাঁর চেয়ে বেশী দৃঢ়তার সাথে অন্য কেউ শত্রুর মোকাবেলা করতে সক্ষম হতো না। তিনি ছিলেন সর্বাধিক লাজুক প্রকৃতির।

তিনি সাধারণত মাটির দিকে দৃষ্টি রাখতেন। কোনো কিছু তাঁর পছন্দ না হলে তাঁর চেহারা দেখেই বোঝা যেত। লজ্জাশীলতা ও সম্মানবোধ এত প্রবল ছিল যে, কারো মুখের ওপর সরাসরি অপ্রিয় কথা বলতেন না। তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশী ন্যায়পরায়ণ পাক-পবিত্র, সত্যবাদী এবং বিশিষ্ট আমানতদার। বন্ধু, শত্রু সকলেই এটা স্বীকার করতেন। তিনি ছিলেন অতি বিনয়ী ও নিরহঙ্কার।

বিশ্বজাহানের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূল (সাঃ) নিজের জুতো, কাপড় নিজেই সেলাই করতেন। নিজ বকরি দোহন করা ইত্যকার নানা সাংসারিক কাজ তিনি নিজ হস্ত মোবারক দিয়েই করতেন। অঙ্গীকার পালনে তিনি ছিলেন অগ্রণী।

তিনি আত্বীয়-স্বজনের প্রতি অতিমাত্রায় খেয়াল রাখতেন। মানুষের সাথে সহৃদয়তা ও আন্তরিকতার সাথে মেলামেশা করতেন।

স্বভাবগতভাবেই তিনি কখনো অশালীন কথা বলতেন না। কাউকে কখনো অভিশাপ দিতেন না। উচ্চস্বরে কথা বলতেন না। তাঁর খাবার-দাবার, আচার-আচরণ, কথা-বার্তা সকল কিছু সকল মানুষের প্রতি সমান ছিল। তিনি কাউকে ছোট মনে করতেন না।

সাইয়্যেদুল মুরসালিন প্রিয়নবী (সাঃ) বেশীরভাগ সময় গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। অপ্রয়োজনে কথা বলতেন না। কথার শুরু ও শেষে সুস্পষ্ট উচ্চারণ করতেন।

তিনি ছিলেন নরম মেজাজের অধিকারী। তিনি কখনো সমালোচনা করতেন না। সত্য ও ন্যায়ের পরিপন্থী কোনো কিছু দেখলে তিনি বিরক্ত হতেন। তাঁর মন ছিল বড় উদার।

তিনি কাউকে ইশারা করতে চাইলে হাতের পুরো তালু ব্যবহার করতেন। বিস্ময়ের সময় হাত উল্টাতেন। ক্রুদ্ধ হলে মুখ ফিরিয়ে নিতেন এবং খুশী হলে দৃষ্টি নিচু করতেন। অধিকাংশ সময়ে মৃদু হাসতেন।

হাসির সময়ে তাঁর দাঁতের কিয়দংশ ঝকমক করত। তিনি সম্মানিত লোককেই নেতা নিযুক্ত করতেন।

মানুষের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতেন। সাহাবাদের খবরা-খবর নিতেন। সব বিষয়েই মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতেন। কোনো বিষয়ে অমনোযোগী থাকা তিনি পছন্দ করতেন না। তাঁর কাছে তাঁদের মর্যাদাই ছিল অধিক— যারা ছিলেন অন্যের দুঃখে কাতর, স্বভাবতই গম্ভীর এবং অন্যের সাহায্যকারী।

তিনি উঠতে বসতে সর্বদাই আল্লাহকে স্মরণ করতেন। তাঁর বসার জন্য আলাদা কোনো জায়গা ছিল না। যেখানে খালি জায়গা পেতেন সেখানেই বসতেন। তিনি ছিলেন সবার কাছে পিতৃতুল্য। তিনি তাদেরকেই অধিক সম্মান দিতেন যারা বেশীমাত্রায় তাকওয়ার অধিকারী। তাঁর মজলিস বা সমাবশ ছিল জ্ঞান, ধৈর্য, লজ্জাশীলতা ও আমানতদারীর মজলিস।

তিনি বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করতে আদেশ দিতেন। অপরিচিত লোককে অবজ্ঞা বা উপেক্ষা করা হতো না।

তিনি তিনটি বিষয় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতেন।
১) অহঙ্কার
২) কোনো জিনিসের বাহুল্য এবং
৩) অর্থহীন কথা।

আর তিনটি বিষয় থেকে লোকদের নিরাপদ রাখতেন। এগুলো হচ্ছে—
১) পরের নিন্দা
২) কাউকে লজ্জা দেওয়া এবং
৩) অন্যের দোষ প্রকাশ করা।

তিনি এমন কথাই শুধু মুখে আনতেন, যে কথায় সওয়াব লাভের আশা থাকত। তিনি যখন কথা বলতেন তখন সাহাবীগণ এমনভাবে মাথা নিচু করে বসতেন যে, মনে হতো তাদের মাথায় চড়ুই পাখি বসে আছে।

তিনি হাসলে সাহাবীগণ হাসতেন, তিনি অবাক হলে তারাও অবাক হতেন, তিনি নীরব হলে সবাই নীরব হয়ে যেতেন। এমনই ছিল তাঁর ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন তাঁর মজলিশের সবচেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদাশীল। পোশাক পরিধানে তিনি ছিলেন অতীব শালীন।

-বিভিন্ন সীরাতগ্রন্থ থেকে সংকলিত।

সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লাম
তোমাকে ভালোবাসি হে নাবী
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
লিখেছেনঃ রাজিব হাসান (বা-রাকাল্লাহু ফি ইলমিহি)

Facebook Comments