আমার নাম ভিক্টোরিয়া। আমি এক বছর আগে এই মাসে ইসলামে ফিরে এসেছি, এটি আমার ফিরে আসার গল্প।
হাই স্কুলের সময়ে এক মুসলিমাহর সাথে আমার পরিচয় হয় এবং দ্রুতই ওর সাথে আমি বন্ধুত্ব করি। আমি প্রায়ই ওর বাড়িতে যেতাম। আল্লাহর প্রতি ওর পরিবারের আনুগত্য দেখে অবাক হতাম এবং এটি ওদের মধ্যে একতা তৈরী করতো। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে প্রার্থণা করতো, মহিলারা পুরুষদের পিছনে। আমি এই ধর্ম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলাম এবং সুযোগ পেলেই আমি ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা করতাম। হাই স্কুলের পড়া শেষে আমরা আলাদা হয়ে যাই, আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। আমাকে গাইড করার জন্য, আমার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য সেই মানুষটা আর ছিলো না।
আমি ধর্ম থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম, মনে হচ্ছিলো কোনো উচ্চ ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস রাখার কোনো কারণ নেই। আমি গির্জায় উপস্থিত হতাম কিন্তু আমার কোনো অনুভূতি কাজ করতো না। সব ট্রেডিশনাল অনুষ্ঠানগুলো পরিবর্তন হচ্ছিলো, সব প্রার্থণা ভিন্নরকম ছিলো, আমি সেই শব্দ গুলোও এখন জানি না। আমার মনে আছে, আমি চিন্তা করতাম যে, “আমি কীভাবে এমন কিছু বিশ্বাস করতে পারি যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে, কোনোকিছুই সামঞ্জস্যপূর্ণ না।” আমি গির্জা থেকে সরে এসেছি।
ইউনিভার্সিটিতে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়ন বিষয়ে ক্লাস করার। আমার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ছাড়াই এটা ইসলাম সম্পর্কে আরো জানার একটা পার্ফেক্ট সু্যোগ ছিলো। আমি আমার প্রথম এসাইনমেন্ট বেছে নিয়েছিলাম “নারী এবং হিজাব” বিষয়ে।
আমি যে বিষয়টি বেছে নিয়েছিলাম তাতে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, আমি কেবল অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এটি এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল যা আমি সবসময় ভাবতাম। আমি মুগ্ধ ছিলাম, আমার আরও জানার দরকার ছিল। আমি লাইব্রেরিতে গিয়ে বই এবং ডিভিডি বের করতাম এবং নিজে নিজে গবেষণা করতাম।
আমার বাবা যখন আমার ঘরে ইসলাম সম্পর্কিত বইগুলি দেখতেন তখন বিভিন্ন মন্তব্য করতেন, যখন টেলিভিশনে ইসলামকে ছোট করে দেখানো হতো “টেররিস্ট এটাক” এর কারণে। আমি আমার কৌতূহল প্রকাশে ভয় পেতাম। আমি জাজড হওয়ার ব্যাপারে ভয় করতাম, আমার পরিবার ও বন্ধুদের ভালবাসা হারাতে ভয় পেতাম। আমি কিছু সময়ের জন্য ইসলাম থেকে দূরে থেকেছি।
দুই বছর আগে, আমি আগে উল্লিখিত এই বন্ধুটির খোঁজ পেয়েছি ফেসবুকে, আমি ওকে এড করতে ভয় পেতাম। ওর নাম দেখে আমার মনে পড়ে যেত সেই অবিচ্ছিন্নতা যা আমি একসময় ওর বাড়িতে অনুভব করেছিলাম, মনে হয় যেনো আমি সবসময় সেসবের সাথে যুক্ত ছিলাম। আমি একটা অনলাইন ক্লাস জয়েন করি যা ছিলো “রিভার্টস” দের জন্য এবং আমি প্রতিটি কোর্স ধাপে ধাপে নিজের স্পীডে নিচ্ছিলাম (যা আমি আজকেও নিচ্ছি), যা আমাকে খুব বেসিক থেকে শুরু করিয়েছিলো, প্রতিটি শব্দ ইংরেজিতে ব্যাখ্যা করা (আরবি শব্দটি বলার পরে) এবং কোরআন থেকে সুস্পষ্ট উদাহরণ দেয়া।
দুই গ্রীষ্ম আগে আমি স্থির করেছিলাম যে আমি রমজানে রোজা রাখবো এবং সুবহানাল্লাহ আমি পুরো মাস শেষ করতে সক্ষম হয়েছি। সেই মাসে আমি ভাবতাম কীভাবে ওযু শেষ করতে হয়, কীভাবে নামাজ পড়তে হয়, আরবীতে কীভাবে আমার রোজা ভঙ্গ করতে হয় এবং কুরআনের ইংরেজি অনুবাদ পড়তে হয়। যখন ঈদ নিকটবর্তী হচ্ছিলো আমি কিছুটা একা অনুভব করছিলাম, এমন কেউ ছিলো না যার সাথে আমি উদযাপন করবো।
তাই আমি সাহস সঞ্চার করে আমার হাই স্কুল ফ্রেন্ডকে ম্যাজেস পাঠাই। আমি ওকে আমার কৌতূহল সম্পর্কে বলি, কীভাবে আমি রোজা রাখছি, আমার ইসলাম গ্রহণ করার ইচ্ছার ব্যাপারে এবং আমার সহায়তা প্রয়োজনের ব্যাপারে। ও খুবই আনন্দিত হলো এবং ওর ফ্যামিলিও। ও আমাকে জোর করলো যাতে আমি আমার ঈদ ও আর ওর পরিবারের সাথে কাটাই।
সুবহানাল্লাহ, আল্লাহ আমাকে তার ফেসবুক পেজটি দেখার অনুমতি দিয়েছিলেন, তাকে ম্যাসেজ দিয়ে সাহায্য চাওয়ার সাহস দিয়েছিলেন। আমরা যত বেশি কথা বলেছি এবং সংযুক্ত হয়েছি ততই আমি ধর্মটিকে ভালোবেসে ফেলেছি। ও ওর ব্যস্ততার মাঝেও আমার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য সময় বের করতো, যদি একই প্রশ্ন বারবার ও হয় তাও।
কয়েক মাস পরে ডিসেম্বরে আমি একটি স্বপ্ন দেখলাম, পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি ভাবলাম, আমি অবিশ্বাসী হয়ে মরতে চাই না। পরেরদিন আমি হিজাব পরে আমার সেই ফ্রেন্ডের সাথে তার হাজবেন্ডসহ RIS – Reviving the Islamic Spirit conference এ গিয়েছিলাম। আমি আমার শাহাদাহ পাঠ করেছিলাম এবং তারা সাক্ষী ছিলো। আলহামদুলিল্লাহ, সব কষ্ট সহ্যের পরে আমি শান্তি খুঁজে পেয়েছি। আল্লাহ আমাকে একজন চমৎকার জীবনসঙ্গী দিয়েছেন। আমি আমার সহযোদ্ধা বোন এবং ভাইদের কাছে পৌঁছাচ্ছি।
আমি জানি কেমন অনুভূত হয় যখন পরিবার, বন্ধু-বান্ধবদের হারাতে হয় এবং ধর্মীয় চর্চার কারণে কর্মস্থলে দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়। আপনার যদি যে কোনো বিষয়ে বা সাপোর্টের জন্য কারো প্রয়োজন হয় তবে আমি সর্বদা এখানে আছি। আমি কিছু পরিবার এবং বন্ধুকে হারিয়েছি ঠিক, তবে আলহামদুলিল্লাহ আমি যা কল্পনা করতাম তার চেয়ে বেশি অর্জন করেছি, আমরা সবাই একই উম্মতের অংশ। আসসালামু আলাইকুম।
(অনূদিত)