কলেজে পড়া অবস্থায় যখন বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে যেতাম, খাওয়ার বেলায় সবসময় দামী জিনিসটাই অর্ডার করতাম। ভাবতাম জীবনতো একটাই, খাওয়াদাওয়া, ঘুরাঘুরি, হাসিখুশি এটাইতো জীবন। অবশ্য থাকা পয়সার অভাব না হলে যা হয় আর কি! অথচ কখনো ভাবিনি আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা একবেলা একমুঠ খাবারের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কষ্ট করে!
দেখেই বোঝা যাচ্ছিল মানুষটা গরীব। প্রচন্ড ঠান্ডায় হি হি করে কাঁপছিল। সাথে ছোট্ট একটা মেয়ে তার। কন্যাই হবে। তার পরনেও প্রয়োজনীয় গরম কাপড় নেই। কনকনে শীতে তার দাঁতে কপাটি লেগে যাচ্ছে বারবার।
ভেতরে বসে বসে ব্যাপারটা লক্ষ্য করছিলেন এক দোকানদার। বুঝতে পারছিলেন, গরীব মানুষটা ভেতরে আসতে ইতস্তত করছে। একজন কর্মচারী দিয়ে তিনি তাকে ডেকে পাঠালেন।
– আপনি কোনও প্রয়োজনে এসেছিলেন?
– ইয়ে মানে, প্রয়োজন তো ছিল! কিন্তু আপনাদের দোকানের সাজসজ্জা দেখে মনে হলো, এটা বড়লোকদের দোকান। আশেপাশে আর কোন সস্তা দোকানও দেখছি না। দূরের কমদামী বাজারে যাওয়ার মতো ভাড়াও নেই। এদিকে আমার ছোট্ট মেয়েটা শীতে খুবই কষ্ট পাচ্ছে।
– আপনি কি শীতের কাপড় কিনতে এসেছেন?
– জ্বি! রাতে গায়ে দেয়ার জন্যে আমার পরিবারের ছয়টা কম্বল দরকার আর তিনটা বাচ্চার জন্যে শীতবস্ত্র। কিন্তু আপনাদের দোকান থেকে কিছু কেনার মতো আমার কাছে টাকা নেই। আমি কয়েক দিন একটানা কাজ করে বাড়তি কিছু টাকা জমিয়েছি। আমার কাছে ঐ কয়টা টাকাই শুধু আছে।
– কে বলেছে এখান থেকে আপনার কেনার কিছু নেই? আমাদের দোকানে সব ধরনের শীতবস্ত্র আছে। আর বিশেষ একটা কম্বল আমরা বিশেষ ছাড়ে বিক্রি করছি।
– ওটা কতো?
– একেকটা দুইশ’ টাকা করে! পাঁচটা একসাথে কিনলে, একটা কম্বল ফ্রি। পাশাপাশি প্রতিটি কম্বলের সাথে কোম্পানীর পক্ষ থেকে একটা করে শীতের জামাও পাওয়া যাবে।
– তাই নাকি! আল্লাহ বড়ই দয়ালু!
শীতের জামাটা পরে বাচ্চা মেয়েটার মুখে হাসি আর ধরে না। বারবার আয়নার সামনে গিয়ে দেখছে। বাবাকেও টেনে নিয়ে দেখাচ্ছে। তার খুশি দেখে দোকানের মালিক তো বটেই কর্মচারীরাও বিহ্বল হয়ে পড়লো।
লোকটা একহাতে কম্বল আরেক হাতে মেয়েকে ধরে চলে গেলো।
দোকানদারের পাশেই বসে তার এক বন্ধু বসে বসে চা পান করছিলেন। এতক্ষণ চুপ করে ছিলেন তিনি, টু’শব্দটিও করেন নি। এবার মুখ খুললেন –
– কী ব্যাপার! এই কম্বলটাই তো আমার কাছে তুমি গত সপ্তাহে একটাই ৩৫০ টাকায় বিক্রি করেছ?
– হাঁ, করেছি!
– আমার কাছ থেকে এত বেশি লাভ করলে যে?
– উঁহু! তোমার কাছ থেকে আমি নামমাত্র লাভ করেছি!
– তাহলে কিছুক্ষণ আগে লোকটার কাছে যে পাঁচটা কম্বল মাত্র ১০০০ টাকায় বিক্রি করলে? আবার একটা ফ্রী-ও দিলে !
– উঁহু, আমি তার কাছে বিক্রি করিনি, বিক্রি করেছি আল্লাহর কাছে। বিনিময়ে আল্লাহর কাছ থেকে আরেকটা জিনিস কিনেছি।
– আল্লাহর কাছ থেকে কিনেছ! কী কিনেছ?
– ঠান্ডা, শীতলতা কিনেছি।
– কিভাবে!?
– তাকে কম্বলের উষ্ণতা দিয়ে আমি আল্লাহর কাছ থেকে শীতলতা কিনেছি।
– কিসের শীতলতা?
– জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার শীতলতা। কেয়ামতের মাঠে মাথার ওপর নেমে আসা গনগনে সূর্যের তাপ থেকে বাঁচার শীতলতা।
কথাগুলো শুনে হৃদয়টা শান্তিতে ভরে গেলো। জ্বী এটাই জীবন! এটাই মানবতা। আমরা সবাই মিলে যদি সমাজের ছিন্নমূল মানুষদের পাশে এসে দাড়ায়, যারা এই শীতে একটা সামান্য কম্বলের জন্য কষ্ট পাচ্ছে, তাহলে কতই না খুশি হবেন আমার রাব্বে কারীম।
আল্লাহর সাথে ব্যবসা – এটাও পড়ুন
আল্লাহর সাথে ব্যবসা
লেখক – নও মুসলিমা আপু মুবাশ্বিরাহ্ শর্মা