বিয়ে ও আমাদের সমাজ

616
বিয়ে ও আমাদের সমাজ

রাসুল সা. বিয়ে করেছেন 25 বছর বয়সে। সুতরাং আমি মনে করি, ছেলেদের 25 এ বিয়ে করাই সুন্নত! না করলে যে সমস্যা তা না। কিন্তু সাবির্ক বিবেচনায় এই বয়সই বিয়ের জন্য পারফেক্ট! কেন? আমার কিছু যুক্তি আমি দিচ্ছি

1.  25 এ বিয়ে করলে সুন্নত আদায় হয়। (মেয়েদের জন্য 17-20) 2. এ বয়সটা হচ্ছে ছেলের বিয়ের জন্য পারফেক্ট সময়! কারণ, এই বয়সে ছেলেদের মধ্যে ম্যাচুরিটি চলে আসে পাশাপাশি রোমান্টিক ভাবটাও বজায় থাকে। বয়স যত বাড়বে, ততই রোমান্টিক ভাবটা ডাইভার্ট হয়ে কর্ম-পেশা, ক্ষমতা ইত্যাদির প্রতি আগ্রহ চলে আসবে।

3.  এ বয়সে বিয়ে না করলে প্রেম করার সম্ভাবনা প্রায় অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকাটাও কঠিন।

4.  25 কে একটা ছেলের জন্য পরিপূর্ণ যৌবন ধরা হয়। সুতরাং 25 বছর থেকে যত দিন লেইট করা হবে ততই তার জন্য ক্ষতিকর!

5.  যেহেতু এই বয়সে একটা ছেলে পরিপূর্ণ যুবক থাকে, সেহেতু যুবক তার সংসারের নানারকম টেনশন মাথায় আসার পূর্বেই স্ত্রীর সাথে প্রেমে লিপ্ত হতে কোনা শরয়ী বাঁধা নাই। বয়স যত বাড়বে, বাচ্চা-কাচ্চা ও সংসারের দায়িত্ব যখন মাথায় আসবে তখন আর নতুন প্রেমকে ঠিকভাবে রোমন্থন করতে পারবে না। আজকাল তো অনেককে এমনও বলতে শুনি, “ধুর মিয়া! বিয়া করলে কি আর বউরে নিয়া ঘুরা যাবে? তখন তো ঘর-সংসার!” অথচ বিয়ের আগে যে ওটা হারাম, কয়জন জানেন? জানলেও মানেন কয়জন?

6.  সন্তাদের যদি প্রপারলি মানুষ করতে চান, তাহলে 25 এ বিয়ের বিকল্প নাই। যত লেইট হবে, বাচ্চা-কাচ্চা তত দেরি করে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সমাজে প্রায়শই দেখা যায়, বাবা হয় বুড়ো হয়ে মারা গেছেন, সন্তানের পড়ালেখা শেষ হওয়ার নাম নাই। আবার এমনও দেখা যায়, বাবা হাসপাতালে পড়ে আছেন বার্ধক্যজনিত কারণে, এদিকে সন্তান টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ জোগাচ্ছেন, পাশাপাশি.. নানারকম টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছেন। আমি মনে করি একজন সফল বাবা হতে হলে সময়মত বিয়েটা খুবই জরুরি। সন্তান মানুষ হওয়ার পিছনে বাবা-মায়ের বড় একটা ভূমিকা রয়েছে, যা অনস্বীকার্য! অনেকে এটাও বলেন, যে, আরে আল্লাহ দেখবেন! এত কিছু দেখলে হবে নাকি? বলি, আল্লাহ কি এসে আপনার সন্তানকে মানুষ করে দিয়ে যাবেন? অথচ যখন বিয়ের বয়স ছিলো, তখন ঠিকই উল্টা-পাল্টা করে বেড়িয়েছেন!

7.  কম বয়সে বিয়ে করলে, নানারকম গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়। যা কিনা যৌবনে একটা মানুষের জন্য সবচে বড় চ্যালেঞ্জ! গোনাহ থেকে বেঁচে থাকাও ইবাদাত কবুলের বড় শর্ত! ইত্যাদি।

আরো অনেকগুলো পয়েন্ট রয়েছে এই মুহূর্তে মনে আসছে না। আরেকটা বড় ব্যাপার হচ্ছে, আমরা সবাই ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার করে খুব লাফাই। ওকে ফাইন! ভালো কথা যে,

আপনি ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত! যদি আপনি ক্যারিয়ার নিয়েই চিন্তিত হন, তাহলে বউ-সন্তান নিয়ে কেন ক্যারিয়ারের চিন্তা করতে পারেন না? উনাদের নিয়ে কেন দুনিয়া আর আখেরাতের স্বপ্ন দেখতে পারেন না?

মরার পর কৃতকর্মের হিসাব যদি না নেওয়া হতো, তাইলে বিয়ে না করে নানারকম অপকর্ম করলেই বা কি! তাই না? কিন্তু আপনি যদি আল্লাহতে বিশ্বাসী হন! তাহলে ক্যারিয়ারটা আপনার বউ-বাচ্চাকে নিয়েই গঠন করুন না কেন? আপনার ভালো ক্যারিয়ার হলে, ভোগ করবে কে? সবাই না? তাহলে কেন আপনি এত সময় নষ্ট করছেন? ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার করে আবার গোনাহও করছেন! আজকাল অনেকের মাথায় এটা কাজ করে, আল্লাহ! হাজবেন্ডকে নিয়ে ঘুরবো কেমনে! বা বউকে নিয়ে ঘুরবো কেমনে? মানুষ কি বলবে! মানুষ কি বলবে সেটা কেন আপনি দেখেন? আপনি মানুষেরটা খান না পড়েন? আপনার হিসাব কি মানুষ দিয়ে দিবে? আপনি যদি আপনার বউকে নিয়ে ঘুরেন তাইলে সমস্যা কি? সমাজ কি বলবে, সেটা ভুলে যান। আল্লাহ কি বলে সেটা দেখেন।

আজকাল আমাদের সমাজে মেয়ের-ছেলের ফ্যামিলি দ্বীনদারি যতটা না দেখেন, তার থেকে বেশি দেখেন, ছেলে-মেয়ে দেখতে কেমন, ক্যারিয়ার কেমন, ইত্যাদি ইত্যাদি! অথচ, হাদিস অনুযায়ী আমরা কেউ দ্বীনদারী দেখি না। দেখি না জাত-বংশ। আমাদের কাছে বাহ্যিক রুপ-লাবন্য আর সৌকর্ষ এখন মহা আগ্রহের বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ইতিহাস সাক্ষী, সংসারী আর সুখী হওয়ার জন্য, রূপ-লাবন্য, টাকা-পয়সা কিছুই কাজে আসে না। মারা গেলে টাকা-পয়সা তো দূরে থাকে, কোমড়ে যদি সামান্য সুতাও বাঁধা থাকে, সেটাও খুলে রাখা হয়, শুধু কাফনে জড়িয়ে 3.5 হাত জায়গা জোটে। তাও একসময় শরীর পচেঁ-গলে শেষ হয়ে যায়। কী থাকে?

সবচে বড় বিষয়, আমরা সমাজ সমাজ, নিয়ে লাফাই। সমাজ কি বলবে সেটা ভাবি। হ্যাঁ, সেটা ভাবা উচিত যদি খারাপ কাজের বিরুদ্ধে হয়। ভালো কাজে সমাজ পরে, আগে শরীয়ত ও ধর্ম! অথচ, আমরা ধর্ম ভুলে ভালো কাজ না করার জন্য সমাজের কথা শুনি। সবকিছু আজ উল্টো হয়ে গেছে। ভালো কাজকে আমরা খারাপ মনে করি, খারাপকে ভালো মনে করি সমাজের দোহাই দিয়ে। অথচ এই সমাজ আপনার হিসাব দিবে না। আপনি বিপদে পড়লে, আপনি গোনাহ করলে সমাজ আপনাকে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে না যে, মাফ করে দেন একে!


বিয়ে নিয়ে এই লেখাটা পড়তে পারেন  ভালবাসা ও দু’টি বাস্তবতা


কার পিছনে আমরা দৌঁড়াচ্ছি ভাই? একটুও কি ভাবছি? হায়! কবে বুঝবো আমরা? নিজে তো গোনাহ করছি, অন্যকেও উৎসাহ দিচ্ছি। গোনাহ থেকে তো ফিরাচ্ছিই না। অনেক আলেম পরিবারই এমন রয়েছেন, সাধারণ মানুষের কথা আর কি বলবো? যাঁদের মুখে মুখে তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর উপর ভরসা করার কথা বললেও সেই তাঁরাই বাস্তবে সেটা মানতে নারাজ। মানে সুবিধাবাদি আর কি! ছেলে তো ইনকাম করে না, কি খাওয়াবে? আমরা মেয়ে দিবো না এমন ছেলের কাছে। বউ পালবে কীভাবে? ইত্যাদি!

বলি, তখন কি আল্লাহ থাকেন না? অথচ হাদিসে রয়েছে, একবার এক দরিদ্র সাহাবি রা. নিজের দরিদ্রতার কথা বললে, রাসুল সা. তাঁকে বিয়ের পরামর্শ দিয়েছিলেন। পরে ওই সাহাবি রা. এর আর কোনো অভাব-ছিলো না। আসলে, বিয়ে করলে একটা মানুষ আসবে, মানুষ বাড়বে এই চিন্তা থেকে কেন আমরা বেরিয়ে আসতে পারি না? আমরা কেন এটা বুঝি না যে, একটা মানুষ বাড়লে কি, সে তো তাঁর নিজের রিজিক নিয়েই আসবেন আমাদের ঘরে। বিশ্বাসটা মুুখে মুখে না রেখে, অন্তরে যদি আজ মুসলিমরা লালন করতো, তাহলে এতটা অধ:পতন হতো না। আল্লাহ মাফ করুক। আমিন।

পরিশেষে একটাই কথা, যত বেশি তাড়াতাড়ি বিয়ের প্রচলন ঘটবে, সমাজে ততটাই অপকর্ম কমে যাবে ইনশা-আল্লাহ ! তখন ধর্ষণ, শ্লীলতাহানী সহ নানারকম অপকর্মই কমে যাবে ইনশা আল্লাহ! আমরাই কিন্তু সমাজকে বানাই। আবার আমরাই সমাজ নিয়ে লাফাই! আসলে আমরাই তো সমাজ। তাই নয় কি? তাহলে কেন মিথ্যা জিনিষকে আমাদের অবশ্য কর্তব্য ধরে নিচ্ছি? যেখানে আমাদের কোনো দুনিয়া ও আখিরাতে উপকার নাই? আল্লাহ আমাদের প্রতিটি বাবা-মাকে ইখলাস, তাওয়াক্কুল ও সঠিক পথে পরিচালিত করুন। সেই সাথে সাথে আমরা যারা সন্তান রয়েছি। তাদেরও । আমিন।

Facebook Comments