আদর্শ, সুখি দাম্পত্য জীবন গড়তে রাসূল সা. এর নির্দেশনা ।

0
309
ভালবাসা

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি তাঁর বান্দাদেরকে এতটা ভালবাসেন, এতটা ক্ষমা করেন। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্ললাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যিনি তাঁর উম্মাতকে ভালবেসেছেন, ভালবাসতে শিখিয়েছেন।

বর্তমানে আমাদের সমাজে ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদের হার আশংকাজনক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ’ (এমএসভিএসবি) শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে, দেশে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়েছে। এ বিচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি এগিয়ে।

অথচ আমরা যদি রাসুল সাঃ এর দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত নির্দেশনা মেনে চলতাম তাহলে এই বিচ্ছেদের মিছিল অনেকাংশে কমে যেত । দেখা নেওয়া যাক সেগুলো –

মুহাব্বত (ভালবাসা) বা দাম্পত্য জীবন সুখি করার রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাত তরিকাঃ একজন স্বামী এবং স্ত্রী পরস্পর তিনটি চাহিদাকে কেন্দ্র করে একে অপরের সাথে জড়িয়ে থাকে।

  • ১→শারীরীক চাহিদা,
  • ২→মানসিক চাহিদা এবং
  • ৩→আধ্যাত্মিক চাহিদা।

এর কোন একটির ঘাটতি বয়ে আনতে পারে অসন্তুষ্টি। আর তাই বিয়ের আগ মুহূর্তে সুন্নাহ মোতাবেক পারিবারিক জীবন অতিবাহিত করার একটা রাফ প্ল্যান করে নিতে পারেন। কিছু বিষয় হাইলাইট করে যদি সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা যায় তবে প্রতিটি ঘর হয়ে উঠবে প্রশান্তিময়। বিয়ে পরবর্তী (দাম্পত্য জীবন – এ) রোমান্স/ ভালবাসা যেনো আমৃত্যু টিকে থাকে এজন্য নিম্নের সুন্নাতি বিষয়গুলোতে আসুন সকল পুরুষরা একটু চোখ বুলিয়ে নেইঃ

১) সহধর্মিণীর হৃদয়ের ভাষা বুঝুনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) একবার আ’ইশাকে (রা) বললেন, হে আ’ইশা! আমি অবশ্যই জানি কখন তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাক আর কখন অসন্তুষ্ট হও। আ’ইশা জিজ্ঞেস করলাম, তা আপনি কিভাবে জানেন? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, যখন তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাক, তখন তুমি এরূপ বল,‘মুহাম্মাদের রবের কসম, আর যখন তুমি অসন্তুষ্ট হও তখন বল, ‘ইবরাহীমের রবের কসম’! আ’ইশা (রা) বললেন, জী হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আল্লাহর শপথ! (রাগের সময়) আমি কেবল আপনার নামটাই বাদ দেই। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, আল্লাহর রাসুল (সা) তাঁর সহধর্মিণীর হৃদয়ের অনুভূতি কতোটা গভীরভাবে বুঝতেন। আসলে স্বামী এবং স্ত্রীর সম্পর্ক তো এমনই হওয়া উচিত। একে অপরের সুখদুঃখ যতো বেশী বুঝতে পারবে ততো তাদের মাঝে প্রশান্তি বিরাজ করবে।

২) স্ত্রী দুঃখ পেলে সান্ত্বনা দেয়াঃ আল্লাহর রাসুল (সা) এর প্রিয় সহধর্মিণী সাফিয়াহ (রা) ইসলাম গ্রহনের পুর্বে ইহূদী ছিলেন। তো রাসুলুল্লাহ (সা) একবার হযরত সাফিয়াহর (রা) গৃহে গিয়ে দেখলেন, তিনি কাঁদছেন । কারণ জিজ্ঞেস করলে, তিনি বললেন- আ’ইশা এবং যায়নাব বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহর স্ত্রী এবং গৌরবের দিক হতে একই রক্তধারার অধিকারিণী । সুতরাং আমরাই শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার। একথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, তুমি কেন বললে না যে, ‘আমি আল্লাহর নবী হযরত হারুণের বংশধর ও হযরত মুসার ভ্রাতুষ্পুত্রী এবং রাসুলুল্লাহ (সা) আমার স্বামী ।

অতএব তোমরা কোন দিক হতে আমার চাইতে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হতে পার ?’ অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সা) তাঁর নিজ হাত দিয়ে সাফিয়াহর (রা) চোখ মুছে দিলেন। বিয়ের পর একটি দম্পতির মাঝে অবশ্যই এই গুনটি বিরাজ করতে হবে। আপনার বেটার হাফ (সহধর্মীনি) সবসময় হাস্যজ্জ্বল থাকবে এমন ভাবাটা বোকামী। এসময় একে অপরকে সান্ত্বনা দিয়ে তাদের কাছে টানতে হবে।

৩) স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে শোয়াঃ আল্লাহর রাসুল (সা) প্রায় সময় উম্মুল মু’মিনীন খাদিজা (রা) এর কোলে মাথা রাখতেন, এবং তাঁর মৃত্যুর পর আ’ইশা (রা) এর উরুর উপর মাথা রেখে শুতেন। যখন আ’ইশা (রা) ঋতুবর্তী অবস্থায় উপনীত হতেন, তখন নবী (সা) তাঁর উরুর উপর শুয়ে কোর’আন তিলাওয়াত করতেন। একজন পুরুষ তার বৈবাহিক জীবনে কতোবার এভাবে স্ত্রীর উরুতে মাথা রেখে শুয়েছেন??

একটাবার ভাবুন, মহিলাদের এই সেন্সেটিভ সময়ে আপনার একটু সুক্ষ্ম আহ্লাদ তার মনের দুঃখ নিমিষেই ভুলিয়ে দিতে পারে। একবার মাথা রেখে দেখুনই না স্ত্রী সব উজাড় করে দিয়ে দিবে, প্রমিজ। এক্ষেত্রে একজন স্ত্রীরও উচিত স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে নিজের কথাগুলো শেয়ার করা। নিশ্চিত স্বামী বেচারা পরদিন আস্ত গোলাপ বাগান নিয়ে আসতেও কুন্ঠাবোধ করবেন না।

৪) একে অপরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিনঃ উম্মুল মু’মিনীন আ’ইশা (রা) প্রায় সময় রাসুলুল্লাহর (সা) মাথার চুল আচড়ে দিতেন। এমনকি তিনি রাসুলুল্লাহ (সা) এর মাথা ধৌত করে দিতেন। আমি তো মনে করি, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছাকাছি আসার এটাই সবচেয়ে বড় সুযোগ। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না, একে অপরের মাথায় সিম্পলি হাত বুলিয়ে দেয়া বা একে অপরের চুল আচড়ে দেয়ার মাধ্যমে যে ভালোবাসা – র  আদানপ্রদান হবে তা অবিশ্বাস্য।

৫) একই পাত্র হতে খাওয়ার অভ্যেস শুরু করুনঃ যখন উম্মুল মু’মিনীন আ’ইশা (রা) গ্লাসে করে পানি খেতেন, আল্লাহর রাসুল (সা) ঠিক প্রিয় সহধর্মিণীর ঠোট লাগা অংশে ঠোট লাগিয়ে পানি পান করতেন। যখন আ’ইশা (রা:) গোশত খেতেন, তখন আল্লাহর রাসুল (সা:) আ’ইশা হতে গোশতটা টান দিয়ে নিয়ে নিতেন, এবং ঠিক আ’ইশা (রা:) যেদিকটায় ঠোঁট লাগিয়ে খেয়েছেন, একই স্থান থেকে নবী (সা:) খাওয়া শুরু করতেন। অফিস থেকে আসতে দেরী হোক আর যাই হোক, স্ত্রীর সাথে আজ হতে মাঝে মাঝে একই প্লেটে, একই গ্লাসে খাওয়া শুরু করুন। (প্রতিদিন করতে বলবো না, না হয় নেকামি ভেবে বৌ-শাশুড়ির দ্বন্দ্ব জেগে উঠতে পারে)। এতে হৃদতা, ভালোবাসা বাড়বে। খেতে খেতে দু’জনার হৃদয় হতে এমন ফ্রেগ্রেন্স বের হবে, আহ! শুধু সুকুন আর সুকুন।

৬) লজ্জা ফেলে মুসাহাফা করুনঃ আল্লাহর রাসুল (সা) প্রায় সময় স্ত্রীদের চুমু খেতেন। তাঁদের সাথে আদর আহ্লাদ করতেন। যখন রাসুলুল্লাহ (সা) সিয়াম রাখতেন, ঠিক তখন তিনি স্ত্রীদের চুমু দিয়েছেন এমন কথাও হাদিসে পাওয়া যায়। স্ত্রীর চোখে চোখ রাখা, তার কাজের মধ্যখান দিয়ে হুট করে চুমু দিয়ে আসা, আপনার ভালোবাসার গভীরতাকে আপনার স্ত্রীর অন্তরে পৌছঁতে সাহায্য করবে। ভালোবাসা লুকোনোর বিষয় নয়, তা প্রকাশ করার মাধ্যম ইসলাম শিখিয়েছে আমাদের। লজ্জা ভুলে একে অপরের সম্মুখে ভালোবাসা প্রকাশ করা শুরু করুন। একে অপরের সাথে মিলিত হন, কাছে টানুন। নিশ্চই স্বামী স্ত্রীর পবিত্র মিলন সাদাকাহ হিসেবে আল্লাহ তা’য়লা কবুল করেন।

আর তোমাদের প্রত্যেকে আপন স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও হচ্ছে সদকাহ্। তারা (সাহাবীরা)জিজ্ঞাসা করেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কেউ যখন যৌন আকাঙ্খা সহকারে স্ত্রীর সাথে সম্ভোগ (মিলন) করে, তাতেও কি সওয়াব হবে? তিনি বলেন: তোমরা কি দেখ না, যখন সে হারাম পদ্ধতিতে তা করে, তখন সে গোনাহ্গার হয় কিনা! সুতরাং অনুরূপভাবে যখন সে ঐ কাজ বৈধভাবে করে তখন সে তার জন্য প্রতিফল ও সওয়াব পাবে। [মুসলিম: ১০০৬]

৭) একে অপরের মুখে হাত তুলে খাইয়ে দিনঃ ভালোবাসা প্রদর্শনের উত্তম মাধ্যম হলো এই ক্ষুদ্র কাজটি। নিজ হাতের উপার্জন স্ত্রীর মুখে তুলে দেয়াও সওয়াবের কাজ। ভালোবাসার অস্তমিত সুর্যকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে এর তুলনা নেই। আল্লাহর রাসুল (সা) বলেন, ‘…তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্যেশ্যে যা ব্যয় করবে তার উত্তম প্রতিদান পাবে। এমনকি স্বীয় স্ত্রীর মুখে তুলে দেওয়া লোকমার বিনিময়েও’।

৮) স্ত্রীর হাতের কাজে সাহায্য করুনঃ আসওয়াদ (রহ) বলেন, আমি আ’ইশা (রা)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ (সা) ঘরে কী কাজ করতেন? তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন অর্থাৎ গৃহস্থালির কাজে পরিবার-পরিজনের সহযোগিতায় থাকতেন। যখন নামাজের সময় হতো নামাজে চলে যেতেন। স্ত্রীর ঘরের কাজে সাহায্য করা আল্লাহর রাসুল (সা) এর সুন্নাহ। নিশ্চই এই সুন্নাহর ব্যাপারে পুরুষদের সজাগ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। সারাদিন গৃহস্থালি কাজ করতে করতে স্ত্রী যখন হাপিয়ে উঠে, বন্ধের দিন গুলোতে পুরুষদের উচিত তাদের কাজে সাহায্য করা। এতে ভালোবাসা বাড়বে বৈ কমবে না।

৯) স্ত্রীর সাথে গল্প করতে ভুলবেন নাঃ বাসায় স্ত্রীর সাথে যে মুহূর্তগুলো কাটাবেন, ঠিক এসময়গুলো চেষ্টা করবেন প্রিয় মানুষের সাথে গল্প-গুজব করে কাটাতে। মাঝে মাঝে হাস্যরস এবং দুষ্টুমি করবেন। এতে আপনাদের মাঝে ভালোবাসা বাড়বে। আল্লাহর রাসুল (সা) প্রায় সময় তাঁর স্ত্রীদের গল্প শোনাতেন। আ’ইশা (রা) কে তিনি উম্মে যারাহ এর বিখ্যাত গল্প শুনিয়ে বলেছিলেন যে, ‘হে আ’ইশা আমি তোমাকে আবু যারাহ এর মতো ভালোবাসি, যেভাবে সে উম্মে যারাহ কে ভালোবাসতো’।

মাঝে মাঝে বিবিদের সাথে বসে বিভিন্ন ঘটনা, কাহিনী ও আন্যান্য আলোচনা করতেন। এক এক বিবি নতুন নতুন কিসসা শুনাতেন, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে নিজেও কিসসা শুনাতেন। আম্মাজান হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মধ্যে এমনভাবে হাসতেন, কথা বলতেন ও বসে থাকতেন, আমাদের মনেই হতো না যে তিনি একজন মহান পয়গাম্বর। (উসওয়ানে রাসূলে আকরাম) প্রতিদিন বাইরে যে কর্মব্যস্ত সময়ে কাটে তা প্রিয় সহধর্মিণীকে শেয়ার করতে পারেন, এতে আপনার উপর তার বিশ্বাস দৃঢ় হয়ে জন্মাবে।

 

১০) স্ত্রীকে নিয়ে তার প্রিয় জায়গায় ঘুরতে যানঃ একবার ইথিওপিয়া থেকে কিছু লোক এসে মাসজিদ আন নববীতে তরবারি খেলা দেখাচ্ছিল। আ’ইশা (রা:) রাসূল (সা:) কে বললেন তিনি খেলা দেখতে চান। এমন অবস্থায় আমরা হলে কী বলতাম? “হ্যাঁ!! উম্মাহর এই অবস্থা আর তুমি চাও খেলা দেখতে!! ছি! যাও যাও কুরআন পড়…তাফসীর পড়…” অথচ রাসূল(সা) আ’ইশাকে নিয়ে গেলেন এবং তাঁকে আড়াল করে সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন। আ’ইশা (রা) রাসূলুল্লাহর পিছনে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতে লাগলেন।

এত দীর্ঘ সময় তিনি খেলা দেখলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বারবার এক পা থেকে আরেক পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন। তিনি আ’ইশা(রা) কে জিজ্ঞেস করলেন যে তাঁর দেখা শেষ হয়েছে কিনা। আ’ইশা বললেন তিনি আরো দেখতে চান। কোন আপত্তি না করে রাসূল (সা) সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলেন। দীর্ঘক্ষণ পর আ’ইশা(রা) নিজেই ক্লান্ত হয়ে বললেন যথেষ্ট হয়েছে। এরপর রাসূল(সা) তাঁকে বাসায় নিয়ে আসলেন। কি শ্রেষ্ঠ ভালোবাসাই না ছিলো আল্লাহর রাসুল (সা) এবং তাঁর সহধর্মিণীদের মাঝে! আপনিও একই সুন্নাহ অনুসরন করুন, ভালোবাসায় টুইটম্বুর অবস্থা হবে।

১১) স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করুনঃ আ’ইশা (রা) তখন হালকা গড়নের ছিলেন। রাসূল (সা) কোন এক সফর থেকে ফিরছিলেন। সাথে ছিলেন আ’ইশা। তিনি সাহাবীদেরকে বললেন সামনে এগিয়ে যেতে। তাঁরা চোখের আড়াল হলে রাসূল (সা) আ’ইশাকে দৌড় প্রতিযোগীতায় আহ্বান করলেন। আয়েশা জিতে গেলেন সেইবার। এর কয়েক বছর পর পুনরায় দৌঁড় হলে হযরত আয়েশা (রাঃ) হেরে যান।

অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আয়েশা! আজ আমি তোমাকে হারিয়ে দিয়েছি, তুমি আমার সঙ্গে পার নি। এটা প্রথম প্রতিযোগিতায় তুমি জিতে যাওয়ার বদলা। (আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং-২২১৪) আমাদের দেশের পুরুষরা কি স্ত্রীর সাথে এমন প্রতিযোগিতা করেছে কখনো? আপনি শুরু করুন। রাসুল (সা) কে ভালোবেসে আপনি যদি একই ভাবে আপনার স্ত্রীকেও ভালোবাসতে থাকেন, এর চেয়ে উত্তম আর কিছু হতে পারে না।

১২) সহধর্মিণীকে প্রিয় নামে ডাকুনঃ আ’ইশাকে (রা:) নবী (সা:) আদর করে ডাকতেন হুমায়রা বলে। হুমায়রা অর্থ ‘লাল বর্ণের রমনী’। রাসুলুল্লাহ (সা:) এর আদর মাখা ডাক শুনে আ’ইশা (রা:) কাছে আসতেন তাকে জড়িয়ে ধরতেন, এরপর কবিতা পাঠ করে আল্লাহর রাসুলকে (সা:) শোনাতেন। এমনও হয়েছে আল্লাহর রাসুল (সা:) একবার আ’ইশার (রা:) দিকে তাকিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বলেন, ‘তোমার চক্ষুদ্বয় কত্ত সাদা’! প্রিয় সহধর্মিণীকে এমন ভালো অর্থবোধক নামে ডাকতে পারেন, এতে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। একে অপরকে যতো বেশী কম্পলিমেন্ট দেয়া যায়, ঠিক ততো একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ধরে রাখতে সুবিধা হবে।

১৩) প্রিয় মানুষের জন্য নিজেকে সাজানঃ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন,‘আমি যেমন আমার জন্য স্ত্রীর সাজগোজ কামনা করি, অনুরূপ তার জন্য আমার নিজের সাজগোজও পছন্দ করি।’ অর্থাৎ যাবতিয় সাজসজ্জা যেনো কেবল প্রিয় মানুষকে খুশি করার জন্যই করা হয়, এতে পস্পরের প্রতি আগ্রহ জন্মাবে এবং একে অপরকে আরো অধিকভাবে কাছে টানতে পারবে। আমাদের দেশের নারীরা তো এক্ষেত্রে বলা চলে স্বামীর সামনে ছেঁড়া পুরোনো কাপড়ই পরিধান করে। অথচ এক্ষেত্রে উচিত সবচেয়ে বেস্ট পোশাক একে অপরের জন্য পরিধান করা।

১৪ সুগন্ধী ব্যবহার করাঃ আ’ইশা (রা) এর কাছে যেসব সুগন্ধি থাকত, সেগুলো থেকে উত্তম সুগন্ধি হজরত আ’ইশা (রা) রাসুলুল্লাহ (সা) কে লাগিয়ে দিতেন। সুগন্ধী আল্লাহর রাসুল (সা) এর প্রিয় ছিলো। তাই স্বামীদের উচিত তাদের স্ত্রীদের সম্মুখে সুগন্ধী ব্যবহার করা, এবং স্ত্রীদের উচিত তাদের স্বামীদের সম্মুখে নিজেকে রঙ দিয়ে সাজানো যা তাকে আকৃষ্ট করে।

 

১৫) বৈবাহিক সম্পর্কের গোপনীয়তা রক্ষা করাঃ সাংসারিক সমস্যা নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা না করাই শ্রেয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে উপভোগ্য বিষয়গুলো গোপন করা। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে সর্ব-নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে নিজের স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং যার সাথে তার স্ত্রী মিলিত হয়, অতঃপর সে এর গোপনীয়তা প্রকাশ করে বেড়ায়’। তাই এব্যাপারে খুব সতর্কতার সাথে ডিল করতে হবে। ভুলেও যেনো একে অপরের গোপনীয় কথা অন্যকে না বলা হয়। আমাদের সমাজে অধিকাংশ বিয়ে ভেঙ্গে যায় কেবল এই বিষয়ে অবহেলার কারনে।

১৬ স্ত্রীর পরিবার এবং আত্মীয়ের খবর নেয়াঃ নবীজি (সা) মাঝে মাঝে একটা ভেড়া জবাই করে বলতেন, “এই ভেড়ার মাংস খাদিজার বান্ধবীদের জন্য পাঠিয়ে দাও।” লক্ষ্য করুন, নবীজি যে কেবল খাদিজার জীবিত অবস্থায় এমন করেছেন তা নয় বরং তিনি তো খাদিজা (রা) মারা যাবার পরেও তাঁর বান্ধবীদের সাথে সৌহার্দ্য বজায় রেখেছেন। এটা তিনি করতেন খাদিজার প্রতি ভালোবাসা থেকে। আবু বকর (রা) একবার বলছিলেন, আমি তিনটি বিষয় খুব পছন্দ করি, এর মাঝে একটি হল-‘আমি মুহাম্মদের শ্বশুর…’ উক্ত কথা দ্বারা এটাই প্রমান করে আল্লাহর রাসুল (সা) শ্বশুর বাড়ির লোকেদের কেমন মহব্বত করতেন, এবং কতোটা আপন করে নিয়েছিলেন। তাই স্বামীদের উচিত স্ত্রী পক্ষের আত্মীয়ের এবং পরিবারের দেখাশোনা করা, এবং স্ত্রীর উচিত স্বামীর পরিবারের এবং আত্মীয়ের দেখভাল করা। তবেই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পাবে এবং ভালোবাসা অটুট থাকবে। # রসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম যে তার স্ত্রীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে। আমি আমার স্ত্রীদের সাথে সবার চাইতে ভাল ব্যবহার করি। (তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং-১০৮২)

১৭) দোষ না ধরা: খাবারের ব্যপারে দোষ ধরতেন না, পছন্দ হলে খেতেন,না হলে রেখে দিতেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো বিছানার ব্যাপারে দোষ ধরতেন না, যা পেতেন তার উপরই শুয়ে থাকতেন। (আদাবু নবী)

১৮) সালাম বিনিময় করা আয়েশা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত খুশি মনে মুচকি হাসতে হাসতে গৃহে প্রবেশ করতেন এবং হৃদয়পূর্ণ সালাম দিতেন। (উসওয়ায়ে হাসানাহ)

১৯) কোমলতা প্রদর্শন আয়েশা (রাযিঃ) থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ দয়ালু, তিনি কোমলতাকে পছন্দ করেন। তিনি কোমলতার বিপরীতে দেন যা তিনি সহিংসতার বিপরীতে দেন না, কোমলতা ব্যতীত অন্য কিছুর বিপরীতে দেন না।” [সহীহ মুসলিম] আয়েশা (রাযি:) থেকে আরেকটি হাদিসে এসেছে, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ কোমলতাপূর্ণ, তিনি সকল বিষয়ে কোমলতাকে পছন্দ করেন।” বুখারি ও মুসলিম। জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযি:) থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, “যাকে কোমলতা থেকে বঞ্চিত করা হল তাকে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত করা হল।” [সহীহ মুসলিম]

 

 

নবিজি বিবিদের ভৎসনা, তিরস্কার করতেন না এবং তাদের সাথে রুক্ষ্ম ভাষায় কথা বলতেন না। বরং মায়া জড়ানো, মন জুড়ানো আকর্ষণীয় কথা ও ভাবভঙ্গি দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। তাদের কোন কথা মনের বিপরীত হলে তাদের সে কথা থেকে মনোযোগ ফিরিয়ে অন্য চিন্তা করতেন । ইমাম আহমদ আয়েশা (রাযি:) হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাকে খেতাব করে বলেছেন, হে আয়েশা! তুমি কোমলতা অবলম্বন করো; কেননা আল্লাহ তাআলা যখন কোনো পরিবারের কল্যাণ চান তখন তাদেরকে কোমলতার পথ দেখান, অন্য এক বর্ণনা মতে- আল্লাহ যখন কোনো পরিবারের কল্যাণ চান, তিনি তাদের মধ্যে কোমলতার প্রবেশ ঘটান।” [মুসনাদে আহমদ]

উক্ত সুন্নাতি কাজগুলো যদি বিয়ের পুর্বে একজন পুরুষ এবং নারী চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন, তবে বিয়ের পরবর্তী মুহূর্তগুলো কাটবে চমকপ্রদ। আমৃত্যু সুকুনের সাথে বসবাস করে যেতে পারবেন, যার শেষ গন্তব্য হবে আল-জান্নাত। আল্লাহ আমাদের আমলগুলোকে আরো সুন্দর করে দিক, এবং আমাদের মাঝে যারা অবিবাহিত তাদের দ্রুত বিবাহ সম্পাদিত হওয়ার তৌফিক দিক। আমিন।

বিঃদ্রঃ — অনেক স্বামী ও স্ত্রী বলে থাকেন ভালোবাসা মনের ব্যপার প্রকাশ করতে হবে কেন??? তারা বলেন ভালোবাসা প্রকাশ করা নাকি বোকামি ও ন্যাকামি, ভালোবাসা একে অপরের মধ্য প্রকাশ করলে নাকি দাম বেড়ে যায় ও ভালোবাসা কমে যায়। যারা এই ধরনের কথা বলেন তাদের বলবো তাদের ইসলামিক জ্ঞানের অভাব।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালেবাসা বৃদ্ধির জন্য নবিজি নিজেই ভালোবাসা প্রকাশ করতে বলেছেন ও বাস্তবে করে দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। বিয়ের আগে প্রেমিক ও প্রেমিকারা এতোই বেশী ভালোবাসা প্রকাশ করে, আবার সেই প্রেমিক ও প্রেমিকা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে বা তারা অন্য কাউকে বিয়ে করলে আর ভালোবাসা প্রকাশ করার ইচ্ছা থাকে না। তখন দাম্পত্য জীবনে প্রকৃত সুখ অর্জিত হয় না। কারন বিয়ের পর ভালোবাসা প্রকাশ আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও রহমত অর্জিত হয়।

আর বিয়ের আগে ভালোবাসা প্রকাশ আল্লাহর অভিশাপ, অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ অর্জিত হয়। একারনে বিয়ের আগে পুরুষ ও নারীর হারাম সম্পর্কের ভালোবাসা প্রথমে বাড়লেও পরবর্তীতে স্থায়ীত্ব লাভ করতে সক্ষম হয় না। এটা হলো বাস্তব ও পরীক্ষিত সত্য।

সেই প্রেমিক ও প্রেমিকারা যখন বিয়ে করে বিয়ের পর তখন ভালোবাসা প্রকাশ না করার কারনে ও টান না থাকার কারনে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে ও বলে থাকে আগেতো অনেক ভালোবাসার কথা বলতে এখন আমাকে বলো না,এখন আমাকে ভালোবাসো না।

যখন কোন ছেলে-মেয়ে বিয়ের আগে চরিত্র নষ্ট করে নাই ও প্রেমে কখনো জড়ায় নাই। বিয়ের পর তাদের (প্রেমে জড়ায় নাই ছেলে-মেয়ের ) ভালোবাসার সাথে বিয়ের আগে প্রেমে জড়িত ছেলে-মেয়ের ভালোবাসার সাথে মিলে না। আমাদের বিবাহিত বোন-ভাইদের তৌফিক দান করুন । আর যারা বিয়ে করে নাই তাদের কে বিবাহিত হওয়ার তৌফিক দান করুন । আমীন ।


garantili takipçi satın al


türk instagram takipçi satın al

Facebook Comments

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here