মহানবী সাঃ এর ব্যতিক্রমধর্মী বিনয়

618
রাসুলর সাঃ এর বিনয়

আমরা যখন নেতা বা সিনিয়র টাইপের কিছু হয়ে যাই তখন আমাদের মধ্যে খুব হোমড়া-চোমড়া একটা ভাব চলে আসে। আমরা চাই আমরা বসে থাকব, আর সবাই আমাদের কাজ করে দিবে। মহানবী ﷺ কিন্তু মোটেও এরকম ছিলেন না। মুসলিম জাহানের নেতা হওয়ার পরেও তিনি সবার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতেন। আসুন একটা ঘটনা শুনি। 

বদরের যুদ্ধে যাওয়ার সময় মুসলিম বাহিনীর সহায়-সম্পদের অবস্থা খুবই করুন ছিল। সর্বসাকুল্যে উট ছিল প্রায় ৭৫টি, আর যোদ্ধার সংখ্যা ৩১৩ বা তার কিছু কম-বেশী। কাজেই, পথ চলতে তিনজন মানুষকে শেয়ার করতে হচ্ছে একটা উট।

আলী ইবনে আবি তালিব (রা) আর আবু লুবাবা (রা) পড়লেন এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে – তাদেরকে উট শেয়ার করতে হবে স্বয়ং মহানবী ﷺ-এর সাথে! মহানবী ﷺ একে তো মহান আল্লাহর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, তার উপর বয়সেও তাদের চেয়ে বহু বড়। খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বললেন: ও রাসূলাল্লাহ, আমরা দুজনেই তো বয়সে অনেক ছোট। আমরা হেঁটেই চলে যেতে পারব। আপনি একাই বরং উটে চড়ুন।

এরকম পরিস্থিতিতে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জায়গায় আসুন অন্য যেকোনো প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীকে রেখে একটু কল্পনা করি। রাসূলুল্লাহর ﷺ বয়স তখন প্রায় ৫৪ বছর। তার উপর তিনি ﷺ সেনাবাহিনীর প্রধান। মদীনাকে যদি একটা রাষ্ট্র হিসাবে কল্পনা করি তাহলে তিনি ﷺ সেই রাষ্ট্রেরও প্রধান। এই অবস্থায় নিজের জন্য একটা উট কিন্তু তাঁর এমনিতেই পাওনা। উনি যদি একাই একটা উটে চড়েন কেউ সেটা অস্বাভাবিক মনে করবে না। কেউ কিছু বলবেও না। কিন্তু, রাসূলুল্লাহ ﷺ তো আমার বা আপনার মতো সাধারণ কেউ নন। তিনি ﷺ তো অন্যের কষ্ট লাঘব করার কোনো সুযোগকে এক মুহূর্তের জন্যও ছাড়বেন না। তিনি তো আরাম করার মানুষ নন। তিনি তো বিনয়ের আধার।


এটা পড়তে পারেন-হযরত উমর (রাঃ) যখন আসামীর কাঠগড়ায়


রাসূলুল্লাহ ﷺ আলীর (রা) অনুরোধ গ্রহণ করলেন না, আবার এমনভাবে তার অনুরোধকে এড়িয়েও গেলেন না যাতে আলীকে ছোট করা হয়। এমন একটা কথা তিনি বললেন যার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন – তিনি আলী বা লুবাবাকে কোনো দয়া দেখাচ্ছেন না, বরং উটে একা একা চড়ার মধ্যে তাঁর কোনো উপকার নেই। তিনি ﷺ বললেন: তোমাদের দুজনের কেউই আমার চেয়ে বেশী শক্ত-সামর্থ্য নও, আর সওয়াবের প্রয়োজনীয়তা তোমাদের চাইতে আমারও কম নেই; কাজেই আমরা ভাগাভাগি করেই উটে চড়ব।

অগত্যা কি আর করা, আল্লাহর রাসূলের ﷺ সাথে উট ভাগাভাগি করে আলী (রা) আর লুবাবা (রা)-কে বদর প্রান্তরের দিকে যাত্রা করতে হলো। যে নেতা এত নির্লোভ, এত বিনয়ী তাঁকে তাঁর অনুসারী সাহাবীরা যে নিজের জীবন দিয়ে ভালবাসবেন এরকম হওয়াটাই কিন্তু স্বাভাবিক।

==============

লেখক-আদনান ফয়সাল

Facebook Comments