“আমি ধূমপান করিনা, কিন্তু আমি আমার পকেটে একটি ম্যাচবক্স রাখি। যখন আমার হৃদয় কুপ্রবৃত্তির কারণে গুনাহ করতে চায় ,তখন আমি একটি কাঁঠি জ্বালাই এবং আমার হাতের তালুর কাছে নিয়ে তাপ দেই। এবং আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করিঃ ”আলী তুমি সামান্য এই তাপ সহ্য করতে পারছ না, কিভাবে জাহান্নামের অসহ্য তাপ সহ্য করবে?” –কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী

ক্যাসিয়াস মার্কাস ক্লে, ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে এটাই ছিল তাঁর নাম। ১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি লুইসভিল কেন্টাকিতে আলী আফ্রিকান-আমেরিকান মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।আমেরিকান এই বক্সার চ্যাম্পিয়ান খ্রিষ্টান হতে মুসলমান হওয়ার জন্য তার খেতাব , সম্মান ও প্রাণ নিয়ে টানাটানি চলে কিন্তু বীরদর্পে তিনি ঘোষণা করলেন, আমার নাম ‘ক্যাসইয়াস ক্লে নয়, আমি এখন মোহাম্মদ আলী।’

১৯৬৪ সালে তিনি সৈনিক জীবনে প্রবেশ করতে ব্যার্থ হন পরীক্ষায় অনুত্তীর্ন হয়ার কারনে। ১৯৬৬ সালে তিনি উত্তীর্ন হন।ভিয়েতনামে যুদ্ধের জন্য তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি যুদ্ধে যেতে অস্বীকৃতি জানান এই বলে যে, “এ যুদ্ধ পবিত্র কুরআন শিক্ষার বিরোধী। আমি এ যুদ্ধে সামিল হতে পারি না। আমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের অনুমতি ছাড়া যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারি না। কোন খৃস্টানের কিংবা অবিশ্বাসীদের যুদ্ধে শরিক হওয়া আমাদের উচিত হবে না।” তিনি আরও বলেন, “তাদের (ভিয়েতনামীদের) সাথে আমার কোন বিবাদ নেই। তারা (ভিয়েতনামীরা) আমাকে কালো বলে গাল দেয় নি। অন্যত্র তিনি বলেন,” তারা (মার্কিনিরা) কেন আমাকে উর্দি পরিয়ে দশ হাজার মাইল দূরে পাঠিয়ে ভিয়েতনামীদের উপর বোমা আর বুলেট মারতে বলবে যখন লুইসভিলেই (আলীর গ্রাম) সামান্যতম মানবাধিকার অস্বীকার করে নিগ্রোদের সাথে কুকুরের মত আচরণ করা হয়।”

মোহাম্মদ আলী তিন তিনবার বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন।১৯৬৭ সালে ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস ও ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতার কারণে গ্রেফতার হন এবং তার বক্সিং খেতাব কেড়ে নেয়া হয়। শুধু কি তাই, তার বক্সিং লাইসেন্সও স্থগিত করা হয়।

মোহাম্মদ আলী ১৯৬১ সালের দিকে মুসলমান হন।প্রথম দিকে তিনি বিভ্রান্ত সংগঠন ‘নেশন অব ইসলামে’ থাকলেও ১৯৭৫ সালে আলী সুন্নি মুসলমানে দীক্ষিত হন। Howard University ‘র চার হাজার উৎফুল্ল ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় তিনি বলেন, “Black Is Best”.

তিনি ৬১ টি বক্সিং প্রতিযোগিতার মধ্যে ৫৬ টিতে জয়ী হন। মাত্র ০৫ টিতে পরাজিত হন।১৯৮১ সালে এই মহান বক্সার অবসর গ্রহণ করেন।১৯৮৪ সালে আলীর পারকিসন্স রোগ ধরা পড়ে।বর্তমানেও তিনি এই রোগে ভোগছেন।

১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন সর্বকালের সেরা এই ক্রীড়াবিদ। বিমানবন্দরে আলীকে স্বাগত জানাতে লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত হয়েছিল। সেই সময় বাংলাদেশের নাগরিকত্বও দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশে এসে এত খুশি হয়েছিলেন, ফিরে গিয়ে সবাইকে বলেছিলেন, ‘স্বর্গ দেখতে চাইলে বাংলাদেশে যাও।’


–লিখাটি উইকিপিডিয়া,বিভিন্ন ব্লগ,দৈনিক পত্রিকা থেকে সংগৃহীত এবং কিছু অংশ সংযোজন করে লিখা

Facebook Comments