যাকাত নিয়ে যত কথা । মাসায়েল-ফাযায়েল ও অনাদায়ের ভয়াবহতা ।

436
যাকাত মাসায়েল ফাযায়েল

“যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে, আল্লাহর পথে ব্যয় (যাকাত) করে না, তাদেরকে আপনি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন।” [সূরা তাওবা: ৩৪]

মুফতি আবদুল্লাহ আল মাসুমঃ কোন বিষয় করার পূর্বে সে বিষয় প্রথমে তা ভালভাবে শিখি। যেমন ব্যবসা/চাকুরী করার পূর্বে তা শিখি । অথচ দ্বীনের ব্যাপারে আমরা একদম উলটো । এখানে যাকাতের মাসায়েল-ফাযায়েল ও অন্যান্য বিষয় বিষয় আলোচনা করা হবে । যা জানব আমরা …
(০১)যাকাত পরিচিতি (০২) কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে যাকাতের বিধান (০৩)যাকাত প্রদানের উপকারিতা (০৪)যাকাত প্রদান না করার ভয়াবহতা (০৫) যাকাতযোগ্য সম্পদ (০৬) যাকাতযোগ্য সম্পদের যাকাত আদায়ের শর্তাবলী (০৭) নেসাব (০৮) যাকাত ও ঋণ (০৯) যাকাত হিসাবের পদ্ধতি (১০) যাকাত আদায়ে কতিপয় ভুল-ত্রুটি (১১) যাকাত আদায় পদ্ধতি

যাকাত পরিচিতি

যাকাত একটি অত্যাবশ্যকীয় “ফরয” ইবাদাত। যাকাত ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। আর যাকাতের বিধান অস্বীকারকারী বেঈমান। যাকাত শব্দের শাব্দিক অর্থঃ

  • যাকাত (الزكاة) শব্দটি আরবী। আরবী প্রাচীন ও নির্ভরযোগ্য অভিধানগুলোতে এর অর্থ লেখা হয়েছে – বৃদ্ধি, পবিত্রতা, প্রশংসা করা, বরকত হওয়া। বিশিষ্ট আরবী অভিধানবিদ আল্লামা ইবনে মানযুর রহ. (মৃত ৭১১হি.) লিখেছেন – “আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে যাকাতের মূল অর্থ হল, পবিত্রতা, বৃদ্ধি, বরকত ও প্রশংসা। এসবকটি অর্থে ‘যাকাত’ শব্দটি কুরআন ও হাদীসে ব্যবহৃত হয়েছে।”
  • তবে শাব্দিকভাবে মূল সম্পদ থেকে যাকাত হিসেবে যে সম্পদটুকু বের করা হয়, তাকে ‘যাকাত’ বলা হয়। তবে আল্লামা যামাখশারী রহ. লিখেছেন – যাকাত আদায়ের কাজটিকেও ‘যাকাত’ বলা হয়।

যাকাত – এর পারিভাষিক অর্থঃ

“মুসলিম, প্রাপ্ত বয়স্ক ও সুস্থ সস্তিস্কসম্পন্ন ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ বিশেষ সম্পদের মালিক হলে, উক্ত সম্পদের উপর পূর্ণ একটি চন্দ্র বর্ষ অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত সম্পদের একটি নির্ধারিত পরিমাণ শরীয়ক্ত কর্তৃক নির্ধারিত লোকদেরকে মালিক বানিয়ে দেয়াকে শরীয়তের পরিভাষায় যাকাত বলা হয়।”
উল্লেখ্য মৌলিকভাবে যাকাতের বিধান মক্কায় অবতীর্ণ হয়, তবে তাফসীলীভাবে মদীনায় অবতীর্ণ হয়।

কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে যাকাতের বিধান

কুরআনুল কারীমে অন্তত ২৭ স্থানে নামাযের সাথেই যাকাতের আদেশ করা হয়েছে। যেমন, সূরা হাজ্জ-এ এসেছে ।

فأقيموا الصلاة و آتوا الزكاة واعتصموا بالله

“তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহর দ্বীনকে আঁকড়ে ধর” – ৭৮

কুরআনুল কারীমের পাশাপাশি হাদীসেও যাকাতের বিধান স্পষ্টভাবে এসেছে। হাদীসে মাশহুরে এসেছে –بني الإسلام على خمس: شهادة أن لا إله إلا الله، وأن محمد رسول الله، وإقام الصلاة، وإيتاء الزكاة، وصوم رمضان، وحج البيت لمن استطاع إليه سبيلاً.
“পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলাম দাঁড়িয়ে আছে। যথা – ১. এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়অসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। ২. নামায কায়েম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. রোযা রাখা। ৫. যে সামর্থ্য রাখে সে হজ্ব করা। – সহীহ বুখারী ১/৬, সহীহ মুসলিম ১/৩২

যাকাত – এর তাৎপর্য

যাকাতের তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর ও মর্মস্পর্শী। সংক্ষেপে তা হল নিম্নরূপঃ

যাকাত সম্পদ সিকিউর করে। এক হাদীসে এসেছি –
حصنوا أموالكم بالزكاة
“তোমরা তোমাদের সম্পদকে যাকাত আদায়ের মাধ্যমে সুরক্ষিত করো” – মারাসীল, আবু দাউদ, ২০৫

যাকাত সম্পদ বৃদ্ধি করে, সম্পদ হ্রাস করে না।
যাকাত প্রদান সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে।

যাকাত প্রদানের উপকারিতা

যাকাত আদায়ের উপকারীতা ও কল্যাণের বহু দিক কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে এর কিছু উল্লেখ করা হল-
যাকাত আদায়ে বহুগুণ সওয়াব অর্জন হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন –
وما آتيتم من زكواة تريدون وجه الله فأولائك هم المضعفون
“তোমাদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যাকাত যাকাত প্রদান করে তারাই আল্লাহর নিকট দিগুণ সওয়াব প্রাপ্ত হয়” – সূরা রূম: ৩৯

যাকাত-সাদাকা আল্লাহ তাআলার ক্ষোভের আগুন নিভিয়ে দেয় ও অপমৃত্যু রোধ করে। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন –
إن الصدقة لتطفئ غضب الرب وتدفع ميتة السوء
“নিঃসন্দেহে দান-সাদাকা (যাকাত) আল্লাহ তাআলার ক্ষোভের আগুন নিভিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে।” – জামে তিরমিযী ৬৬৪

যাকাত আদায়ের মাধ্যমে সম্পদের অনিষ্টতা দূর হয়। হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, কেউ তার সম্পদেও যাকাত আদায় করলে এর ফায়দা কী? নবীজী জবাবে বললেন –
من ادى زكاة ماله فقد ذهب عنه شره
“যে ব্যক্তি তার সম্পদের যাকাত আদায় করবে, এর মাধ্যমে তার থেকে তার সম্পদের যাবতীয় অনিষ্টতা দূর হয়ে যাবে”। – সহীহ ইবনে খুযাইমা – ৪/১৩

যাকাত প্রদানের উপকারিতা (পার্থিব দিক)

ইসলামের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হল, এর প্রতিটি বিধান মানব কল্যাণকে নিশ্চিত করে। মানবের জন্য অকল্যাণকর এমন কোনও বিধান তাতে নেই। যাকাতও এর ব্যতিক্রম নয়। যাকাতের সবচেয়ে কল্যাণকর দিকটি হল-অর্থ-সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয় যা দারিদ্র বিমোচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

আজকে আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে যদি যাকাতের বিধান থাকত এবং প্রত্যেক সম্পদশালী মুসলমান স্বতস্ফূর্তভাবে যাকাত দিত ও সেটা যথাযথ খাতে ব্যয় হত তবে বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখান থেকেই সরবরাহ হয়ে যেত।

যেমন, গত বছর (২০১৭) শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সম্পূর্ণ বাজেটের ১৫.০৬% বরাদ্দ ছিল। যার মধ্যে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ ছিল। তাই এ অংশটুকু সহজেই যাকাতের মাধ্যমে সমাধা করা যেত।

প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বিধবাদের জন্য গত বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৫.০৮% যা যাকাতের মাধ্যমে সরবরাহ করা যেত।

চিকিৎসার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করে প্রতিটি হাসপাতালে দরিদ্র রোগীদের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা যেত।

সমাজের অনেক পরিবার পুঁজির অভাবে কিছু করতে পারে না, তাদেরকে যাকাতের অর্থ প্রদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করা যেত।

যাকাত প্রদান না করার ভয়াবহতা

যাকাত আদায় না করার ক্ষতি ও ভয়াবহতা অনেক। কুরআন ও হাদীসে যাকাত আদায় না করার বহু ক্ষতি ও ভয়বহতা তুলে ধরা হয়েছে। নিম্নে এর কিয়দাংশ উল্লেখ করা হল-

পরকালীন আযাব। আগুনের উত্তপ্ত দাগ। কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে –
وَاَلَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجَنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ.

“যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে, আল্লাহর পথে ব্যয় (যাকাত) করে না, তাদেরকে আপনি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন। যেদিন সেগুলো উত্তপ্ত কওে তা দ্বারা তাদেও মুখমন্ডল, পার্শ্ব ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। এবং বলা হবে, এগুলো তোমাদের সেই সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্য কৃক্ষিগত কওে রেখেছিলে। এখন নিজেদের অর্জিত সম্পদেও স্বাদ আস্বাদন কর” – সূরা তাওবা: ৩৪-৩৫

বিষধর সাপের দংশন। হাদীসে এসেছে –
من آتاه الله مالا فلم يؤد زكاته مثل له يوم القيامة شجاعا أقرع له زبيبتان يطوقه يوم القيامة ثم يأخذ بلهزمتيه يعني بشدقيه ويقول: أنا مالك أنا كنزك.

“আল্লাহ তাআলা যাকে সম্পদ দান করেছেন, অথচ সে তার যাকাত আদায় করেনি, তাহলে তার সেই সঞ্চিত সম্পদকে কেয়ামতের দিন মাথায় টাক পড়া বিষধর সাপে রূপ দেয়া হবে। যার চোখের উপর দুটি কালো দাগ থাকবে। সেই সাপ কেয়ামতের দিন তার গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। সেটা তার মুখে দংশন করতে থাকবে আর বলবে, আমি তোমার সম্পদ। আমি তোমার সঞ্চয়।” – সহীহ বুখারী ১/১৮৮

যাকাত না দেয়া জাহান্নামের কারণ। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে –
مانع الزكاة يوم القيامة  في النار
“যে যাকাত আদায় করবে না কেয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে”। – তাবরানী, সগীর, ১/৫৮

যাকাত প্রদান না করার ভয়াবহতা (পার্থিব দিক)

যাকাত আদায় না করলে দুর্ভিক্ষ আসে: হাদীসে এসেছে –
ما منع قوم الزكاة إلا ابتلاهم الله بالسنين
“যে সম্প্রদায় যাকাত দিবে না। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত করবেন” – ইবনে মাজাহ, ৪০৯১

যাকাত আদায় না কররা সম্পদ ধ্বংসের কারণ। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে –
ما تلف مال في بر ولا بحر إلا بحبس الزكاة.

“স্থলভাগে ও সমুদ্রে যত সম্পদ ধ্বংস হয় তা যাকাত আদায় না করার কারণেই হয়ে থাকে”। – আত্-তারগীব ওয়াত্ তাহরীব, হাদীস: ১১৩০

সুতরাং ব্যবসায়ীদের ভাবা উচিত। স্থলে বা জলে পণ্য পরিবহনের সময় এর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে শুধু ইন্সুরেন্স করা যথেষ্ট নয়। বরং আল্লাহর ইন্সুরেন্স আগে সম্পন্ন করতে হবে। যথা সময়ে যাকাত আদায় করতে হবে। তবেই সম্পদের নিরাপত্তা লাভ হবে। হাঁ, এরপরও কারো সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। সেটা তার ঈমানের পরীক্ষা নেয়া হতে পারে।

যাকাতযোগ্য সম্পদ

আমাদের সমাজের বহুল ব্যবহৃত যাকাতযোগ্য ৩টি সম্পদ হলঃ

স্বর্ণ-রূপা
নগদ ক্যাশ
ব্যবসায়িক পণ্য

এছাড়া আর ৩ প্রকার সম্পদেও যাকাত দিতে হয়। সেগুলো হলঃ

ফসল
পশু
ভূ-গর্ভস্থিত সম্পদ

যাকাতযোগ্য সম্পদ নির্ধারণের মানদণ্ডঃ

বর্ধনশীল সম্পদ
বর্ধনহীন সম্পদ

যাকাতযোগ্য সম্পদ – ০১: “স্বর্ণ” ও “রূপা”

সোনা-রূপার যাকাতযোগ্য হওয়া বলতে কী বুঝায়?
নিজস্ব মালিকানায় থাকতে হবে ।
যে কোন আকৃতিতে থাকলেই চলবে ।
যে কোন অবস্থায় থাকতে পারে ।
মালিকানা বহাল থেকে যে কারো দখলে থাকতে পারে ।
ব্যবহারে থাকতে পারে বা অব্যবহৃত অবস্থায় থাকতে পারে ।

স্বর্ণ-রৌপ্যের অলংকারের যাকাত

কেউ কেউ মনে করেন, সোনা-রূপার অলংকার যাকাতযোগ্য নয়। এ ধারণা অগ্রগণ্য নয়।

■একবার এক মহিলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসল। সাথে তার এক মেয়ে ছিল। মেয়ের হাতে স্বর্ণের ভারি দুটি চুড়ি ছিল। নবীজী মহিলাকে বললেন, তুমি কি এর যাকাত আদায় করো? মহিলাটি জবাবে বলল, না। নবীজী বললেন –

أيسرك أن يسورك الله بهما يوم القيامة سوارين من نار؟

“ তোমরা কি এটা পসন্দ করবে যে, আল্লাহ তাআলা এর পরিবর্তে তোমাদেরকে আগুনের চুড়ি পড়িয়ে দিবেন? – সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৬৩

■আরেক হাদীসে এসেছে, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রা. এর হাতে রূপার অংলকার ছিল। নবীজী বললেন, তুমি কি এর যাকাত আদায় করো? জবাবে তিনি বললেন, না। নবীজী তখন বললেন–
هو حسبك من النار
“এটিই তোমার জাহান্নামী হওয়ার জন্য যথেষ্ট”। – সুনানে আবু দাউদ, ১৫৬৫

■সৌদী আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড ‘লাজনাতু দাইমা লিল-বুহুসিল ইলমিয়্যা ওয়াল ইফতা’ (Permanent Committee for Scholarly Research and Ifta) তাঁদের ১৭৯৭ নং ফতোয়ায় এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিশদ আলোচনার পর স্পষ্ট লিখেছেন –

والأرجح من القولين قول من قال بوجوب الزكاة فيها إذابلغت النصاب أن كان لدي مالكيها من الذهب والفضة أو عروض التجارة ما يكمل النصاب.

“এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য বক্তব্য হল, অলংকারে যাকাত আসা। যখন তা নেসাব পরিমাণ হবে অথবা স্বর্ণ ও রূপা বা ব্যবসায়িক পণ্য মিলে তা নেসাব পরিমাণ হবে।”

যাকাতযোগ্য সম্পদ – ০২: “নগদ-ক্যাশ”

■নগদ-ক্যাশও যাকাতযোগ্য সম্পদ। কুরআন ও হাদীসে স্বর্ণ ও রূপার যাকাতের বিধান পাওয়া যায়। স্বর্ণ ও রৌপ্য সে সময়ে Medium of Exchange হিসেবে ব্যবহৃত হত।

যুগের ফকীহগণ স্বর্ণ ও রৌপ্যের ন্যায় কাগুজে মুদ্রায় নিম্নোক্ত চারটি গুণ থাকায় কাগুজে মুদ্রার মাঝেও স্বর্ণ-রূপার যাকাতের বিধান আরোপ করেছেন।

Medium of Exchange
Wide Acceptability
Standard / Measure of Value
Store of Value

■এ ব্যাপারে স্বীকৃতি প্রদানকারী উল্লেখযোগ্য ফিকহ ফোরামগুলো হলঃ

ইসলামী ফিকাহ্ একাডেমী জিদ্দা, রেজুলেশন নং: (৯)/৩/০৮/৮৬, সন: ১৯৮৬ইং।
হাইয়াতু কিবারিল উলামার সিদ্ধান্ত, সন ১৩৯৩ হি.।
ইসলামী ফিকাহ একাডেমী, মাক্কাতুল মুর্কারামা, সন: ১৪০২ হি.।
ইসলামী ফিকাহ একাডেমী, হিন্দ, সন: ১৯৮৯ ইং।
এ্যাওফি এর ৩৫ নং শরীয়াহ্ স্ট্যান্ডার্ড, ধারা: ৩/১/২।

নগদ-ক্যাশের বিস্তৃতি

নগদ অর্থের যাকাতযোগ্য কতিপয় অবস্থা

  • হাতে নগদ
  • ব্যাংক বা কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত মূল অর্থ
  • ব্যবসায়ে বিনিয়োগকৃত নগদ মূলধন ও প্রাপ্ত মুনাফা
  • বন্ড, ডিবেঞ্চার, ট্রেজারী ইত্যাদির জন্য বিনিয়োগকৃত মূল অর্থ
  • জীবন বীমায় প্রদত্ত মূল অর্থ
  • শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকৃত অর্থ
  • বৈদেশিক মুদ্রা
  • ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে প্রদত্ত অর্থ
  • বায়না হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ
  • জামানত হিসেবে প্রদত্ত অর্থ
  • সিকিউরিটি মানি হিসেবে প্রদত্ত অর্থ
  • উসুলযোগ্য ঋণ
  • ক্রেতার নিকট বিক্রেতার পাওনা
  • অগ্রিম মূল্য হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ
  • প্রভিডেন্ট ফান্ডে প্রদত্ত ঐচ্ছিক অর্থ
  • সঞ্চয়পত্রের মূল অর্থ

যাকাতযোগ্য সম্পদ – ০৩: “ব্যবসায়িক পণ্য”

■কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে তৃতীয় যাকাতযোগ্য সম্পদ হল ব্যবসায়িক পণ্য অনুসারে “ব্যবসায়িক পণ্য”ও যাকাতযোগ্য সম্পদ। এটি বহুল প্রচলিত তৃতীয় প্রকার যাকাতযোগ্য সম্পদ।

■কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে –
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ

‘হে মুমিনগণ, তোমরা যা উপার্জন করো এর উৎকৃষ্ট থেকে ব্যয় করো’ [সূরা বাকারা, ২৬৭]

■হাদীসে এসেছে-হযরত সামূরা রা. বলেন,

كان النبي صلى الله عليه وسلم يأمرنا أن نخرج الصدقة من الذي نعد للبيع.

“নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আদেশ করতেন, আমরা ব্যবসার জন্য যেসব পণ্য প্রস্তুত করি এর যাকাত আদায় করতে” [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৬২]

 

যাকাতযোগ্য সম্পদ – ০৩: “ব্যবসায়িক পণ্য” (Cont.)

ব্যবসায়িক পণ্য যাকাতযোগ্য হওয়ার জন্য ২টি গুণ থাকা আবশ্যক।

‘আল-আমল’ বা কাজ। এর অর্থ হল, ক্রয় বা অন্য কোনও বিনিময়ের সূত্রে পণ্যের মালিকানা অর্জন করা।

‘নিয়ত’ বা ইচ্ছা। এর অর্থ হল, পণ্য ক্রয় বা বিনিময়ের মাধ্যমে মালিকানা অর্জনের সময়ই তা বিক্রি করে লাভ করা উদ্দেশ্য থাকা।

■এই দুইটি থাকলেই তা যাকাতযোগ্য হবে নতুবা নয়। কোন বস্তুর ব্যবসায়িক পণ্য ব্যাপারে তাই আমরা কয়েকটি কেইস-এর আলোচনা লক্ষ্য করতে পারি।

■কেইস # ০১:

একটি কোম্পানী একটি গাড়ি ক্রয় করেছে। ক্রয়ের সময় নিয়ত ছিল, কোম্পানীর ব্যক্তিগত কাজে তা ব্যবহার করা হবে। এটি ছিল মূল নিয়ত। সাথে এ নিয়তও ছিল, দাম ভাল পেলে বিক্রি করে দিবে।

■কেইস # ০২:

কোম্পানী ব্যবসা তথা বিক্রি করে দেয়ার উদ্দেশ্যে অনেকগুলো গাড়ি ক্রয় করেছে। এরপর এর থেকে একটি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজেও প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। তবে ব্যবসার নিয়ত থেকে বের করা হয়নি।

■কেইস # ০৩:

একটি বস্তু ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়েছে। পরবর্তীতে বিক্রির পূর্বে নিয়ত বা উদ্দেশ্য পরিবর্তন করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটি আর বিক্রি করবে না। ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করবে।

■কেইস # ০৪:

একটি বস্তু ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়েছে। পরবর্তীতে নিয়ত বা উদ্দেশ্য পরিবর্তন করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটি বিক্রি করে দিবে।

■কেইস # ০৫:

হিবা, গিফট, দান সূত্রে, ওসিয়ত সূত্রে অথবা বিবাহের মোহরানা হিসেবে কিংবা খুলা তালাকের বিনিময়ে কোন বস্তুর মালিকানা অর্জন হলে মালিকানা অর্জনের সময় ব্যবসার নিয়ত করা হলে সেটা ব্যবসায়িক পণ্য হবে কি না।

যাকাতযোগ্য সম্পদ – ০৩: “ব্যবসায়িক পণ্য” – এর বিস্তৃতি

■ব্যবসায়িক পণ্য বলতে বুঝানো হয়, যা বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করা উদ্দেশ্য। মূল পণ্যের সাথে সংযোজন হয়ে দাম বৃদ্ধিতে যা যা ভূমিকা রাখবে সবাই পণ্য বলে বিবেচিত হবে। যেমনঃ

১.ব্যবসার মূল পণ্য।
২.কাঁচা মাল (Raw Material)।
৩.এখনও প্রসেসে আছে (Goods in process)।
৪.যে পণ্য রাস্তায় আছে। শিপমেন্ট হয়ে গেছে।
৫.যে পণ্য কাউকে কমিশনের বিনিময়ে বিক্রি করে দিতে বলা হয়েছে।
৬.উক্ত পণ্য স্পর্শযোগ্য হতে পারে,অথবা অদৃশ্য হক (Abstract Rights / Intangible Rights) ও হতে পারে। যেমন, কপি রাইট, ট্রেডমার্ক ইত্যাদি।

■তবে নিম্নের জিনিসগুলো ব্যবসায়ের উপাদান হিসেবে বিবেচিত হবে না।

পণ্য পরিষ্কার করার জন্য ক্রয়কৃত কাঁচা মাল (Raw Material)।
পণ্য প্যাকেটিং করার জন্য ক্রয়কৃত কাঁচা মাল (Raw Material)।

■বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, পণ্য প্যাকেটিং করার জন্য ক্রয়কৃত কাঁচা মালে স্বতন্ত্রভাবে ব্যবসার নিয়ত করা হলে তা ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। তদ্রুপ প্যাকেটিং যদি বিশেষায়িত হয়, যা মূল পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে তবে তা ব্যবসায়ের পণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। নতুবা পণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না।


এটাও পড়ুন ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থনীতি


যাকাতযোগ্য সম্পদের যাকাত আদায়ের শর্তাবলী

■পূর্বোক্ত বহুল প্রচলিত যাকাতযোগ্য সম্পদসমূহে যাকাত আদায়ের শর্তাবলী দু’ ধরনের।

সম্পদকেন্দ্রিক শর্ত
ব্যক্তিকেন্দ্রিক শর্ত

■সম্পদকেন্দ্রিক শর্তাবলীঃ

যাকাতযোগ্য সম্পদে পূর্ণ মালিকানা (Full Ownership) থাকা
নেসাব
পূর্ণ এক বৎসর (হাওল) অতিবাহিত হওয়া

■ব্যক্তিকেন্দ্রিক শর্তাবলীঃ

মুসলিম হওয়া
সাবালক হওয়া
বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া

প্রথম শর্ত “যাকাতযোগ্য সম্পদে পূর্ণ মালিকানা থাকা”

■যাকাতযোগ্য সম্পদে পূর্ণ মালিকানা (Full Ownership) বলতে মূলত বুঝায়ঃ

সম্পদে অন্য কারো হক প্রতিষ্ঠিত না থাকা।
তসররুফে (Dispose) পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা।
এর মুনাফা (Income) মালিকের জন্য অর্জন হওয়া।

■সুতরাং যে সম্পদ ব্যক্তি থেকে হারিয়ে গেছে তাতে যাকাত নেই।
■তদ্রুপ সম্পদ কোথায় আছে জানা আছে, তবে উসূল সম্ভব নয় তাতেও যাকাত নেই।
■তদ্রুপ যে মোহর বিলম্বে আদায় করা হয়। তাতে নারীর যাকাত দিতে হবে না। কারণ, তাতে নারীর তসররুফের অধিকার নেই।
■তদ্রুপ মধ্যম ও দূর্বল প্রকৃতির প্রাপ্য ঋণের যাকাত নেই। যেমন, বকেয়া বেতন।

দ্বিতীয় শর্ত “নেসাব”: পরিচিতি

■যাকাতযোগ্য সম্পদ থাকলেই যাকাত দিতে হয় না; বরং একটি নূন্যতম পরিমাণে তা থাকতে হয়। যাকাতযোগ্য সম্পদের সেই নূন্যতম পরিমাণ (Lot) কেই পরিভাষায় ‘নেসাব’ বলা হয়। শব্দটি আরবী-نصاب। আরবী ভাষায় প্রত্যেক জিনিসের মূলকে ‘নেসাব’ বলা হয়।

■সুতরাং, নেসাব পরিমাণ সম্পদ হল যাকাত ফরয হওয়ার উৎস।
■সালাফ থেকে ইমাম লাইছ ইবনে সা’দ রহ. (মৃ.১৭৫হি./৭৯১ইং) যাকাতের নূন্যতম লটকে ‘নেসাব’ নাম দিয়েছেন।
■নেসাব ৩ ধরণের সম্পদের উপর ধরা হয়।

–স্বর্ণ-রৌপ্যের নেসাবঃ যদি কারও কাছে স্বর্ণ ব্যতীত অন্য কোন সম্পদ না থাকে তাহলে স্বর্ণের স্বতন্ত্র নেসাব যাকাতের জন্য বিবেচ্য। না হলে, রূপার নেসাব বিবেচ্য হবে।
–নগদ-ক্যাশের নেসাবঃ স্বর্ণ বা রৌপ্য যে নেসাবে ধরলে যাকাত আসবে সেই নেসাবই ধরতে হবে।
–ব্যবসায়িক পণ্যের নেসাবঃ এর বিধানও নগদ-ক্যাশের অনুরূপ।

দ্বিতীয় শর্ত “নেসাব”: স্বর্ণ ও রৌপ্যের নেসাব

■যদি কারও কাছে স্বর্ণ ব্যতীত অন্য কোন সম্পদ না থাকে তাহলে স্বর্ণের স্বতন্ত্র নেসাব যাকাতের জন্য বিবেচ্য। না হলে, রূপার নেসাব বিবেচ্য হবে।

■রূপার নেসাবঃ

হাদীসের ভাষায় রূপার নেসাব হল “৫ উকিয়া”।
১ উকিয়া খাঁটি রূপায় ৪০ দিরহাম হয়। তাই রূপার নেসাব (৫ ´ ৪০) বা ২০০ দিরহাম।
উপমহাদেশীয় হিসাব অনুযায়ী রূপার নেসাব ধরা হয় সাড়ে বায়ান্ন (৫২ ১/২)তোলা বা ভরি।
গ্রামের হিসাবে আসে ৬১২.৬০ গ্রাম। তবে আমাদের দেশে গ্রামের হিসাবে ৬১২.৩৬ গ্রাম রূপার নেসাব হিসেবে প্রচলিত।

■স্বর্ণের নেসাবঃ

সালাফের ভাষায় স্বর্ণের নেসাব হল “২০ দিনার”।
আমাদের উপমহাদেশে স্বর্ণের নেসাব হিসেবে সাড়ে সাত (৭ ১/২)ভরি স্বর্ণকে ধরা হয়।
গ্রামের হিসাবে আসে ৮৭.৫২ গ্রাম। তবে আমাদের দেশে গ্রামের হিসাবে ৮৭.৪৮ গ্রাম স্বর্ণের হিসাবে প্রচলিত।

■নববী যুগের নেসাবঃ

নববী যুগে রৌপ্যমুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যে যাকাতের নিসাব সাধারণত রূপার নেসাবে ধরা হত। স্বর্ণের যাকাতের প্রচলন তেমন ছিল না। এ সংক্রান্ত হাদীসগুলোও রূপার নেসবা সংক্রান্ত। সুতরাং যারা বর্তমান সময়ে যারা স্বর্ণের নেসাবকে মূল ধরার কথা বলেন, তাদের কথা সঠিক নয়।

স্বর্ণ ও রৌপ্যের যাকাতে অংশের দিক থেকে মিলানো

স্বর্ণের পরিমাণ (ভরি) রূপার পরিমাণ (ভরি) যাকাতের পরিমাণ
স্বর্ণ থেকে রূপা থেকে
সাড়ে ৬ ভরি ৭ ভরি ০.১৬২৫ ০.১৭৫
সাড়ে ৫ ভরি ১৪ ভরি ০.১৩৭৫ ০.৩৫
৫ ভরি সাড়ে ১৭ ০.১২৫ ০.৩৬২৫
সাড়ে ৩ ভরি ২৮ ভরি ০.০৮৭৫ ০.৭
আড়াই ভরি ৩৫ ভরি ০.০৬২৫ ০.৮৭৫

নগদ-ক্যাশ ও ব্যবসায়িক পণ্যের নেসাব

 

■কাগুজে মুদ্রার নেসাবঃ

কাগুজে মুদ্রার ব্যাপারে সকলেই একমত যে, স্বর্ণ/রূপা যেটার নেসাবে ধরলে যাকাত আসবে সেটাই ধরা হবে

■কাগুজে মুদ্রার নেসাবের ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ

স্বর্ণ/রূপার কোন মূল্য ধরা হবে?
ক্রয় মূল্য কোনটা ধরা হবে?
রূপার কোন ক্যারেট ধরতব্য হবে?
পাইকারী না খুচরা মূল্য ধর্তব্য?
কোয়ালিটির ভিন্নতার কারণে একাধিক দর প্রচলিত থাকলে?

■ব্যবসায়িক পণ্যের নেসাবঃ

ব্যবসায়িক পণ্যের নেসাবের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য হিসাব করা হবেমূল্য যে নেসাবে পৌঁছবে সেই নেসাব অনুযায়ী যাকাত আবশ্যক হবেসাধারণত তা রূপার নেসাবে পৌঁছে যায়, তাই রূপার নেসাবে যাকাত আদায় করবেএজন্য বলা হয়, শুধু স্বর্ণ থাকলে কেবল সেক্ষেত্রেই স্বর্ণের নেসাব ধরা হয়এছাড়া সকল ক্ষেত্রেই রূপার নেসাব ধরা হয়

তৃতীয় শর্ত “পূর্ণ এক চন্দ্র বর্ষ (হাওল) অতিবাহিত হওয়া”

■আরবী “হাওল” শব্দের অর্থ বাংলা অর্থ “যাকাত বর্ষ”। হাওল দ্বারা মূলত আমরা বুঝতে পারি, যেদিন প্রথমবার পূর্ব বর্ণিত যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবেন, সেদিন থেকে গড়ে ঐ নেসাবের উপর পূর্ণ এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া আবশ্যক। যেদিন এক বছর শেষ হবে সেদিন যাকাত আদায় করা আবশ্যক হবে। এর আগে নয়।

■হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীস এসেছে,
إذا كانت لك مئتا درهم وحال عليها الحول ففيها خمسة دراهم
‘যখন তোমার ২০০ দিরহাম হবে ও এর উপর এক বছর অতিক্রান্ত হবে তখন তুমি এর থেকে যাকাত হিসাবে ৫ দিরহাম আদায় করবে’ – সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫৭৩

■আন্তর্জাতিকভাবে দুই ধরণের বর্ষ প্রচলিত। এক, চন্দ্র বর্ষ। দুই, সৌর বর্ষ।
■ইসলামের অন্যান্য বিধানের ন্যায় যাকাতের বিষয়েও চন্দ্র বর্ষ-ই ধরতব্য।
■একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নঃ যাকাতের জন্য কি সৌর বর্ষ ধরা যাবে? যদি কেউ সৌর বর্ষ ধরে যাকাত আদায় করে তবে তার জন্য কি বিধান হবে?

যাকাত ও ঋণ

■আমাদের দৈনন্দিন জীবনে “ঋণ” একটি অতি পরিচিত বিষয়। “যাকাত” আদায়ে এই “ঋণ” – এর কিছু হিসাব-নিকাশ আছে।

■এই ঋণ মৌলিকভাবে ২টি ভাবে ঘটনার জন্ম দেয়ঃ

ঋণ প্রদান
ঋণ গ্রহণ

■ঋণ প্রদান করলে ঋণ গ্রহিতার কাছে থেকে অর্থ পাওয়া যায়, তাই এতে ঋণ প্রদানকারী “পাওনাদার” – এ পরিণত হয়।
■অপরদিকে, ঋণ গ্রহণ করলে ঋণদাতাকে অর্থ প্রদান করতে হয়, এবং তাতে ঋণ গ্রহীতা “দেনাদার” – এ পরিণত হয়।

■অন্যের নিকট প্রাপ্য ঋণ আবার ২ প্রকারঃ

উসূহওয়ার আশা আছে
উসূল হওয়ার আশা নেই

পাওয়ার আশা আছে এমন ঋণের যাকাত কখন আদায় করবে?

যে পাওনা উসূলের আশা নেই, তার কি যাকাত আদায় করতে হবে?

যাকাত ও ঋণ (পাওনা ঋণ)

হানাফী মাযহাবে “প্রাপ্য ঋণ” বা “পাওনা ঋণ” – এর ৩টি প্রকার দেখা যায়ঃ

মযবুত পাওনা (الدين القوي): এমন ঋণ যা ব্যবসায়িক পণ্য বাকিতে বিক্রয় করে পাওনা সৃষ্টি হয়েছে অথবা টাকা করজ দিয়ে হয়েছে অথবা স্বর্ণ-রূপা কাউকে দেয়ার কারণে পাওনা সৃষ্টি হয়েছে। মোটকথা, এমন সম্পদের বিপরীতে সৃষ্ট দায়, যে সম্পদ নিজের কাছে থাকলেও এর যাকাত দিতে হত।

মধ্যম পাওনা: (الدين المتوسط): এমন পাওনা, যা কোনও সম্পদ বাকিতে বিক্রির পরিবর্তে অন্যের উপর দায় সৃষ্টি হয়েছে। তবে সেই সম্পদ ব্যবসার সম্পদ নয়। স্বাভাবিক ব্যবহারের জিনিস। যা তার নিকট সারা বছর পড়ে থাকলেও এর উপর যাকাত আসত না।

দূর্বল পাওনা (الدين الضعيف): এমন পাওনা যা কোন সম্পদের বিনিময়ে সৃষ্টি হয়নি। না ব্যবসায়িক সম্পদ, না ব্যবহারের সম্পদ। না এটি কোন করজের বিপরীতে হয়েছে। বরং কোন সম্পদের বিনিময় ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে। যেমন, বিবাহের অনাদায়ী মোহরানা, অনাদায়ী মীরাসের সম্পদ, অনাদায়ী ওসিয়তের সম্পদ, ইত্যাদি।

যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে উক্ত ৩টি ঋণ বা পাওনার বিধান কি?

যাকাত ও ঋণ (পাওনা ঋণ)

■মানুষ সাধারণত ২ ভাবে ঋণী হতে পারেঃ

শরীয়াতের পক্ষ থেকে ঋণী হওয়াযেমন, মানত, কাফফারা আদায় না করা। (যাকাতএর জন্য প্রতিবন্ধক নয়)
মানুষের পক্ষ থেকে ঋণী হওয়া। (প্রতিবন্ধক হওয়া বা না হওয়ার ব্যাপারে সালাফগণের মতামত-ই এখনকার আলোচ্য বিষয়)

■যে আলেমগণ ঋণকে প্রতিবন্ধন, তাঁদের দৃষ্টিতে এর ক্ষেত্র বা সীমাঃ

হানাফী মাযহাবে ঋণ শুধু স্বর্ণ-রূপা, নগদ-ক্যাশ, ও ব্যবসায়িক পণ্যের জন্য প্রতিবন্ধকফসলের যাকাত, খারাজ এবং অন্যান্য শরীয়তী ঋণের ক্ষেত্রে তা প্রতিবন্ধক নয়
হাম্বলী মাযহাবে ফল-ফসলের যাকাতের ক্ষেত্রেও তা প্রতিবন্ধক
মালেকী মায়হাবেও ফসলের ক্ষেত্রে ঋণ প্রতিবন্ধক নয়তাঁদের মতে ঋণ নগদ ক্যাশে প্রতিবন্ধক এবং ব্যবসায়িক পণ্য দ্বারা যদি ঋণ পরিশোধ সম্ভব না হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হবে

কতিপয় প্রায়োগিক ঋণ এবং যাকাত বিষয়ে এর শরঈ বিধান

■সাধারণ ঋণ যা বিশেষ প্রয়োজনে নেয়া হয়।

■দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ যা বছরে বছরে শোধ করা হয়।

■কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য মূল্য।

■ব্যবসায়িক পণ্যের জন্য গৃহীত ঋণ।

■ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ, যা পণ্যের জন্য নয়।

■ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ।

■শিল্প ঋণ।

■প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ ক্রয়ের জন্য ঋণ গ্রহণ।

■অবৈধ পন্থায় ঋণী হওয়া, যেমন সুদী চুক্তিতে ঋণ গ্রহণ।

■বছরের বিভিন্ন সময়ে কাঁচামাল ও ব্যবসায়িক পণ্য ক্রয়ে ঋণ গ্রহণ কিন্তু যাকাত দেয়ার সময়ে সঠিক ঋণের হিসাব মনে করা যাচ্ছে না।

■সালাম চুক্তি।

■ইস্তিসনা চুক্তি।

■অগ্রিম ডাউন পেমেন্ট গ্রহণ।

■সাধারণ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির মাধ্যমে অগ্রিম গ্রহণ। (সালাম চুক্তি নয়)

■ট্যাক্স।

■মুদির দোকানদারের ক্রেতার কাছে থেকে অগ্রিম গ্রহণের বিপরীতে প্রতিদিন মূল্য পরিশোধের হিসাবে পণ্য দেয়া।

■কর্মচারীর বেতন, বাড়ি ভাড়া, সার্ভিসের পেমেন্ট বকেয়া থাকা।

স্বর্ণ ও রৌপ্যের যাকাত আদায়

স্বর্ণ-রূপার যাকাত ৩ ভাবে হতে পারেঃ

শুধু স্বর্ণ আছেঃ এক্ষেত্রে শুধু স্বর্ণের যাকাত আদায় করবে
শুধু রূপা আছেঃ এক্ষেত্রে শুধু রূপার যাকাত আদায় করবে
দুটিই আছেঃ এক্ষেত্রে মিলিয়ে আদায় করবে

■স্বর্ণ ও রৌপ্যের যাকাতের পরিমাণ ৪০ ভাগের ১ ভাগ।
■কারও কাছে ২টিই যদি থাকে এবং উভয়টিই পৃথকভাবে যাকাতযোগ্য তবে প্রত্যেকটির যাকাত আলাদাভাবে আদায় করতে হবে।
■কিন্তু ২টিই আছে কিন্তু পৃথকভাবে কোনটির নেসাব পূর্ণ হয় না, দুইটি মিলিয়ে হয়, তাহলেও যাকাত আদায় করতে হবে।

■একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নঃ

কোনও নারী দীর্ঘদিন তার স্বর্ণালংকারের যাকাত দেয়নি। এখন যখন যে যাকাত দেয়ার ইচ্ছা করেছে, তখন স্বর্ণের আগের মূল্য ও বর্তমান মূল্যে অনেক তফাৎ। যেমন, একজন নারীর কাছে ৮ ভরি স্বর্ণ আছে। ৫ বছর যাবত যাকাত দেয়নি। ৫ বছর আগে ভরি প্রতি মূল্য ছিল ৩৫ হাজার টাকা।  এখন ৫ বছর পর যখন যাকাত দেয়ার ইচ্ছা করেছে, এখন ভরি প্রতি ৪৫ হাজার টাকা। যাকাত সে টাকায় আদায় করবে। স্বর্ণ দিয়ে নয়।  এখন প্রশ্ন হল, বর্তমানে স্বর্ণের কোন মূল্য ধরে সে যাকাত দিবে?

নগদ-ক্যাশ টাকার যাকাত আদায়

■এখনে ২টি সূরত লক্ষ্য করা যায়ঃ

শুধু নগদ ক্যাশ আছে
নগদ ক্যাশ আছে।  সাথে স্বর্ণ/রূপার অলংকারও রয়েছে।  তবে শুধু নগদ ক্যাশে নেসাব হয় না। স্বর্ণ/রূপাকে মিলিয়ে হিসাব করলে নেসাব হয়

■নগদ-ক্যাশের সাথে স্বর্ণ-রৌপ্য মিলিয়ে নেসাব হলে, নিচের অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় ২টিতে আমাদের দৃষ্টিপাত করতে হবেঃ

মিলিয়ে নেসাব ধরবো কিনা? যদি মেলানো হয় তবে কোন নেসাবকে গ্রহণ করবো?
মিলানোর ক্ষেত্রে স্বর্ণ বা রূপার কোনটির মূল্য ধরতে হবে?

নগদ-ক্যাশের কতিপয় প্রায়োগিক উদাহরণ ও এর শরঈ বিধান

■ভবিষ্যতে কোনো কাজ সম্পাদনের উদ্দেশ্যে জমাকৃত অর্থ। যেমন, বাড়ি নির্মাণ, হজ্ব করা ইত্যাদি।
■ব্যবসায় প্রদেয় টাকা।
■ব্যাংক গ্যারন্টি মানি।
■কোম্পানির শেয়ারের যাকাত।
■শেয়ার বাজারে আমরা ২ ধরণের শেয়ারহোল্ডার দেখতে পাই –

  • যারা কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে কোম্পানির লভ্যাংশ লাভের আশা করে
  • যারা শেয়ার বাজারের দাম উঠা-নামার উপর শেয়ার কেনা-বেচার মাধ্যমে ক্যাপিটাল গেইন করতে চায়তারা বিক্রয়ের নিয়তে শেয়ার কিনে লভ্যাংশের সাথে তাদের কেনার কোন সম্পর্ক নাই

কোম্পানির শেয়ারের যাকাতের বিধান

বিধানঃ

দ্বিতীয় প্রকার শেয়ারহোল্ডারদের কাছে শেয়ার একটি ব্যবসায়িক পণ্যতাই যাকাত বর্ষ পূর্ণ হওয়ার দিন তারা শেয়ারের মার্কেট ভ্যালু অনুযায়ী যাকাত আদায় করবেক্রয়কৃত শেয়ারের বিপরীতে যাকাতযোগ্য সম্পদ আছে কি না তা বিবেচ্য নয়

প্রথম প্রকার শেয়ারহোল্ডারদেরকে তাদের শেয়ারের বিপরীত থাকা যাকাতযোগ্য সম্পদের জন্য যাকাত আদায় করতে হবেএজন্য তারা ব্যালেন্সশীটে থাকা ফিক্সড এ্যাসেট বা স্থায়ী সম্পদ বাদ দিয়ে কাঁচা-মাল, ব্যবসায়িক পণ্য, নগদ-ক্যাশের উপর যাকাত দিবে

মিশ্রিত শেয়ারহোল্ডারঃ
কিছু শেয়ারহোল্ডার আছে যাদের নির্দিষ্ট কোন নিয়ত থাকে না। যখন মনে হয় বিক্রি করলে মুনাফা হবে তখন বিক্রি করে, যখন মনে করে ডিভিডেন্ড নিলে বেশি মুনাফা হয় তখন তা বিক্রি করে না

তাদের বিধানঃ
যাকাত বর্ষের পূর্ণতার দিন সে তার নিয়ত দেখবে। সেদিন যেসব শেয়ারের ব্যাপারে বিক্রির নিয়ত থাকবে সেগুলোর বাজার মূল্য ধরে যাকাত হিসাব করবে। আর যেসব শেয়ারের ডিভিডেন্ডে অংশগ্রহণের নিয়ত থাকবে সেগুলোর পূর্বোক্ত পন্থায় শুধু ননফিক্সড এ্যসেটের যাকাত দিবে।

ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত আদায়

■ব্যবসায়িক পণ্য রূপার নেসাবে উপনীত হলে অথবা নগদ ক্যাশ ও ব্যবসায়িক পণ্য মিলে রূপার নেসাবে পৌঁছুলে অথবা স্বর্ণ, রূপা, নগদ ক্যাশ ও ব্যবসায়িক পণ্য মিলে রূপার নেসাবে উপনীত হলে যাকাত বর্ষ শেষে এর যাকাত দিতে হবে।
■উল্লেখ্য, ব্যবসায়িক পণ্যে স্বর্ণের নেসাব বিবেচ্য হওয়ার বিষয়টি অগ্রগণ্য নয়।  এভাবে বিবেচনা করলে বহু ব্যবসায়ীর যাকাত আসবে না।

■ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত দেয়ার জন্য আমরা পণ্যের ৩ ধরণের মূল্য দেখতে পাইঃ

পাইকারি মূল্য
খুচরা মূল্য
যাকাত বর্ষ পূর্ণ হওয়ার দিনে সমুদয় পণ্য বিক্রয় করলে যে মূল্য পাওয়া যায়

■মূল্য ধরার ব্যাপারে ২টি মত বহুল প্রচলিতঃ

শাইখুল ইসলাম তাকী উসমানী হাফিযাহুল্লাহ এর মতে, পাইকারি মূল্য হিসাব করা উত্তমঅধিক সতর্কতা

আমাদের উস্তাযে মুহতারাম মুফতি আবুল হাসান মো. আব্দুল্লাহ হাফিযাহুল্লাহ (প্রধান মুফতি ও পরিচালক মারকাযুদ্দাওয়া আল ইসলামিয়া, ঢাকা) লিখেছেন – তৃতীয়টি ধরে যাকাত আদায় করবে।

ব্যবসায়িক পণ্যের কতিপয় প্রায়োগিক উদাহরণ ও এর শরঈ বিধান

■উৎপাদিত পণ্য

■এমন পণ্য যা বিক্রয় হয়েছে তবে ক্রেতা এখনও নিয়ে যায় নি।

■দোষযুক্ত পণ্য।

■এমন পণ্য যার বেচা-বিক্রি কম হয়।

■উৎপাদন প্রক্রিয়াধীন পণ্য।

■এমন পণ্য যা ক্রয় করে হয়েছে কিন্তু এখনও রাস্তায় আছে।

■দৃশ্যমান নয় এমন সম্পদ। যেমন, কপি রাইট, ট্রেড মার্ক, কম্পিউটার সফট্‌ওয়্যার।

■এমন পণ্য যা তৈরির জন্য অর্ডার করা হয়েছে এবং টাকা এডভান্সও করা হয়েছে।

■বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু।

■বাচ্চা দেয়ার উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু।

■পশু থেকে প্রাপ্ত দুধ, গোবরে ব্যবসার নিয়ত করা হলে।

যাকাত হিসাবের পদ্ধতি

ধাপ: ০১ যেদিন আপনার যাকাতবর্ষ পূর্ণ হবে সেদিন পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রথমে আপনি আপনার যাকাতযোগ্য সম্পদের একটি তালিকা করবেন।

ধাপ: ০২ উপরোক্ত সম্পত্তির পরিমাণ বের করবেন।

ধাপ: ০৩ এবার আপনি আপনার ঋণ বা দেনা যদি থাকে তা বের করবেন।

ধাপ: ০৪ এবার মোট কী পরিমাণ ঋণ আছে, সেটা যোগ করবে। এরপর তা মোট যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বিয়োগ দিবেন।

ধাপ: ০৫ সর্বশেষ বিয়োগ দেয়ার পর যাকাতযোগ্য সম্পদ যা দাঁড়ায় এর ২.৫% যাকাত হিসাবে আদায় করবেন।

যাকাত আদায়ের খাত

■সূলা তাওবা, আয়াত নং: ৬০

إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

“প্রকৃতপক্ষে যাকাত

১. ফকীর –
২. মিসকীনদের হক,
৩. সেই সকল কর্মচারীদের, যারা যাকাত উসূলের কাজে নিয়োজিত,
৪. যাদের মনোরঞ্জন করা উদ্দেশ্য তাদের। বর্তমানে এ খাতটি বিদ্যমান নাই ।
৫. তাছাড়া দাসমুক্তিতে,
৬. ঋণগ্রস্থের ঋণ পরিশোধে এবং
৭. আল্লাহর পথের মুজাহিদ ও
৮. মুসাফিরের সাহায্যেও ব্যয় করা হবে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত বিধান। আল্লাহ জ্ঞানেরও মালিক, হিকমতেরও মালিক।”

যাকাত আদায়ে কতিপয় ভুল-ত্রুটি

■যাকাতবর্ষ কবে পূর্ণ হয় তা যথাযথভাবে হিসাব না রাখা।
■যথাযথ হিসাব না করে অনুমান করে যাকাত আদায় করা।
■যাকাত হিসাবে বাজরে প্রচলিত যাকাতের শাড়ী ও লুঙ্গী আদায় করা।
■বিভিন্ন টিভি চ্যানেলকে যাকাত প্রদান।
■মসজিদের দান বাক্সে বা নির্মাণ কাজে যাকাত প্রদান।
■মাদ্রাসার নির্মাণ কাজ, মাদ্রাসার উস্তাযদের বেতন-ভাতা এসব খাতেও যাকাত প্রদান করা যাবে না।
■রমযানের হাফেযরদেরকে হাদীয়ার নামে যাকাতের অর্থ প্রদান।
■অনেক নারী কর্তৃক তাদের ব্যবহৃত স্বর্ণ/রূপার অলংকারের যাকাত আদায় করে না।
■কাজের বুয়াকে বেতন-বোনাস হিসেবে যাকাত প্রদান।
■ঋণ হিসাবে সুদের অংশও বিয়োগ করা।
■যাকাত আদায়ে নিজ আত্মীয়দের মাঝে উপযুক্ত খুঁজে খুঁজে বের করে যাকাত না দেয়া।

যাকাত আদায়ে আরও ভুল-ত্রুটি বিস্তারিত জানুন এখানে

যাকাত আদায় পদ্ধতি

যাকাত আদায়ের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলঃ

০১) যাকাত আদায়ে মালিকানা প্রদান

সঠিকভাবে যাকাত আদায়ের একটি মৌলিক শর্ত হল, যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে এর মালিকানা সত্ত্ব প্রদান করা। শুধু উপকার ভোগের অধিকার দিলে হবে না।

০২) অগ্রীম যাকাত আদায়

কেউ যদি কয়েক বছরের অগ্রিম যাকাত আদায় করতে চায়, তাহলে এরও সুযোগ আছে।  তবে কোন বছর যদি সম্পদ বেড়ে যায়, তাহলে বর্ধিত সম্পদের যাকাত আলাদা ভাবে দিতে হবে।

অগ্রিম যাকাত আদায় যাকাত হিসেবে যথেষ্ট হওয়ার জন্য মোট শর্ত তিনটি।  যথা –

  • যখন অগ্রিম যাকাত দিবে তখন মৌলিকভাবে নেসাবের মালিক থাকা।
  • যাকাতবর্ষ শেষে নেসাব বাকি থাকতে হবে। অর্থাৎ যে কয় বছরের অগ্রিম দিবে সেই বছরগুলোতে নেসাব বাকি থাকতে হবে।

যাকাতবর্ষের মাঝে নেসাব পরিপূর্ণরূপে নিঃশেষ না হওয়া।

০৩) সময়মত যাকাত আদায়

যাকাত আবশ্যক হওয়ার পর তৎক্ষণাৎ তা আদায় করাই নিয়ম । বিনা প্রয়োজনে বিলম্ব করা ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে এটি সম্পদের নিরাপত্তা।

০৪) নিয়ত

সঠিকভাবে যাকাত আদায়ের একটি মৌলিক শর্ত হল, নিয়ত করা। যাকাতের নিয়তে যাকাত প্রদান করা। মুখে বলা জরুরী নয়। সুতরাং হাদিয়া বলেও যাকাত প্রদান করা যাবে। শর্ত হল, মনে মনে যাকাতের নিয়ত থাকা।

০৫) ওকীল বা প্রতিনিধির মাধ্যমে যাকাত আদায়

এক্ষেত্রে ওকীল বা প্রতিনিধিকে

  • বিশ্বস্ত হতে হবে।
  • যাকাতের খাতে যাকাত আদায় করতে হবে।
  • (ওকীল বা প্রতিনিধি) যাকাত আদায়ের পূর্ব পর্যন্ত ব্যক্তির যাকাত আদায় হবে না।

লেখক
মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক,আই এফ একাডেমী এন্ড কনসালটেন্সি,
সহকারী মুফতি,ফতোয়া বিভাগ,জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ ঢাকা।

 

Facebook Comments