১। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, (রমজান মাসের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত তোমরা রোযা রেখো না। আর (শাওয়াল মাসের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত তোমরা ইফতার করো না। আকাশ মেঘলা থাকার দরুন যদি চাঁদ তোমাদের থেকে গোপন থাকে তবে (শা‘বান) মাসের দিনগুলো পূর্ণ করবে। অপর বর্ণনায় আছে, নবী করীম সা. বলেছেন, মাস কখনও ঊনত্রিশ রাতে (দিনে) ও হয়। সুতরাং চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখবে না। যদি মেঘলা আকাশের কারণে চাঁদ তোমাদের থেকে গোপন থাকে তবে (শাবান মাস) ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে। [বুখারী ও মুসলিম]
২। হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা সাহরী খাও। কেননা, সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে। [বুখারী ও মুসলিম]
৩। হযরত আমর ইবনুল আস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমাদের রোযা এবং আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিস্টান) দের রোযার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরী খাওয়া। [মুসলিম]
রোজার আয়াত – সিয়াম ও রামাদান সম্পর্কে নির্বাচিত কুরআনের আয়াত
৪। হযরত সাহল ইবনে সা‘দ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মানুষ ততদিন কল্যাণের সাথে থাকবে যতদিন তারা ইফতার শীঘ্র শীঘ্র করবে। [বুখারী ও মুসলিম]
৫। হযরত ওমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন এ (পূর্ব) দিক হতে রাত আসবে এবং এ (পশ্চিম) দিক হতে দিন প্রস্থান করবে এবং সূর্য অস্তমিত হবে তখনই রোযাদার ইফতার করবে।
৬। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে (মাঝে ইফতার না করে) রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ সা. আপনি তো একাধারে (সাওমে বেসাল) রোযা রেখে থাকেন? রাসূল সা. বললেন, তোমাদের মধ্য থেকে কে আমার মতো? আমি রাত যাপন করি, তখন আমার প্রতিপালক আমাকে আহার করান এবং পান করান। [বুখারী ও মুসলিম]
৭। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা এবং তা অনুসারে কার্যকলাপ করা পরিত্যাগ করেনি, তার পানাহার পরিত্যাগ করাতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। [বুখারী]
৮। হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মারা গিয়েছে অথচ তার জিম্মায় (ফরজ) রোযা রয়েছে, তার পক্ষে তার অলি (অভিবাবক) রোযা রাখবে। [বুখারী ও মুসলিম]
৯। হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে কখনও নাপাক অবস্থায় সকাল করে ফেলতেন। আর নাপাকী স্বপ্ন দোষের কারণে ছিল না, অতঃপর তিনি গোসল করতেন এবং রোযা অব্যাহত রাখতেন। [বুখারী ও মুসলিম]
১০। হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় শিঙ্গা নিয়েছেন এবং তিনি রোযা অবস্থায়ও শিঙ্গা নিয়েছেন। [বুখারী ও মুসলিম]
১১। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে রোযা অবস্থায় ভুল করে কিছু খেয়েছে বা পান করেছে সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে। কেননা, আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন। [বুখারী ও মুসলিম]
১২। তাবেয়ী হযরত আতা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যদি কেউ (রোযা অবস্থায়) কুলি করে অতঃপর মুখের সম্পূর্ণ পানি ফেলে দেয়, সে নিজের থুথু বা মুখে যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা গিলে ফেললে তার কোনো ক্ষতি হবে না। ইলককে চিবাবে না, যদি ইলক (আঠা জাতীয় বস্তু যা চিবানো যায়) মিশ্রিত থুথু গিলে ফেলে তবে আমি এ কথা বলব না যে, তার রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে এরূপ করা নিষেধ। [বুখারী, তরজমাতুল বাব]
১৩। হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত হামযা ইবনে আমর আসলামী রা. একবার নবী কারীম সা. কে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি সফরে থাকাকালে রোযা রাখতে পারবো? আর তিনি বেশি বেশি রোযা রাখতেন। তখন নবী করীম সা. বললেন,যদি চাও তবে রোযা রাখতে পার, আর যদি চাও তবে ভাঙ্গতেও পার। [বুখারী ও মুসলিম]
১৪। হযরত জাবের রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে (এক স্থানে) লোকের ভিড় দেখতে পেলেন এবং দেখলেন এক ব্যক্তির উপরে ছায়া দেওয়া হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি? লোকেরা বলল, এক রোযাদার ব্যক্তি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সফরে রোযা রাখা পুণ্যের কাজ নয়। [বুখারী ও মুসলিম]