শবে বরাত,বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি কোনটাই কাম্য নয় ।

518
শবে বরাত বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি

মুফতি আব্দুল মালেক : এতোদিন পর্যন্ত শবে বরাতকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর মানুষ বাড়াবাড়িতে লিপ্ত ছিলো। তারা এ রাতটি উপলক্ষে নানা অনুচিত কাজকর্ম এবং রসম-রেওয়াজের অনুগামী হচ্ছিলো। উলামায়ে কেরাম সব সময়ই এই সবের প্রতিবাদ করেছেন এবং এখনো করছেন। ইদানীং আবার এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ছাড়াছাড়ির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাদের দাবী হলো ইসলামে শবে বরাতের কোনো ধারণা নেই। এ ব্যাপারে যতো রেওয়ায়েত আছে সব মওজু বা জয়িফ (জাল বা দুর্বল)। এসব অনুযায়ী আমল করা এবং শবে বরাতকে বিশেষ কোনো ফজিলতপূর্ণ রাত মনে করা শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়। তারা এসব বক্তব্য সংবলিত ছোটখাট পুস্তিকা ও লিফলেট তৈরি করে মানুষের মধ্যে বিলি করে। বাস্তব কথা হলো, আগেকার সেই বাড়াবাড়ির পথটিও যেমন সঠিক ছিলো না, এখনকার এই ছাড়াছাড়ির মতটিও শুদ্ধ নয়। ইসলাম ভারসাম্যতার দীন এবং এর সকল শিক্ষাই প্রান্তিকতা মুক্ত সরল পথের পথ নির্দেশ করে।

শবে বরাতের ব্যাপারে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান হলো, এ রাতের ফজিলত সহি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মিলিত কোনো রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোনো পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশি ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত।

এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মতো মনে করা এবং এই রাতের ফজিলতের ব্যাপারে যতো হাদিস এসেছে, তার সবগুলোকে মওজু বা জয়িফ মনে করা ভুল যেমন অনুরূপ এ রাতকে শবে কদরের মতো বা তার চেয়েও বেশি ফজিলতপূর্ণ মনে করাও ভিত্তিহীন ধারণা।

শবে বরাতের (পনের শাবানের রাত) ফজিলত ও করণীয় এখানে শবে বরাতের (পনের শাবানের রাত) ফজিলত ও করণীয় বিষয়ক কিছু হাদিস যথাযথ উদ্ধৃতি ও সনদের নির্ভরযোগ্যতার বিবরণসহ উল্লেখ করা হলো।

একটি হাদিস

ﻋﻦ ﻣﻌﺎﺫ ﺑﻦ ﺟﺒﻞ رضي الله عنه ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻰ صلي الله عليه وسلم ﻗﺎﻝ ﻳﻄﻠﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻰ ﺧﻠﻘﻪ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﺠﻤﻴﻊ ﺧﻠﻘﻪ ﺇﻻ ﻟﻤﺸﺮﻙ ﺃﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ
মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. বলেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।

(সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৫৬৬৫/ সুনানে বাইহাকী–শু‘আবুল ঈমান, হাদীস নং ৩৮৩৩/ মু‘জামে তাবরানী, কাবীর, হাদীস নং ৩৫৪৩)

এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফিরাতের দ্বারা ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত হয়। কিন্তু শিরকি কাজ-কর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যাপক রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত থাকে।

যখন কোনো বিশেষ সময়ের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফিরাত ঘোষণা হয়, তখন তার অর্থ এই হয় যে, এই সময় এমন সব নেক আমলের ব্যাপারে যত্ববান হতে হবে যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের উপযুক্ত হওয়া যায় এবং ঐ সব গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। যার কারণে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফিরাত থেকে বঞ্চিত হয়। যেহেতু উপরোক্ত হাদিস এবং অন্যান্য হাদিসে অর্ধ-শাবানের রাতে ব্যাপক মাগফিরাতের ঘোষণা এসেছে, তাই এ রাতটি অনেক পূর্ব থেকেই শবে বরাত তথা মুক্তির রজনী নামে প্রসিদ্ধ হয়েছে। কেননা, এ রাতে গুনাহসমূহ থেকে মুক্তি লাভ হয় এবং পাপের অশুভ পরিণাম থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

যদি শবে বরাতের ফজিলতের ব্যাপারে দ্বিতীয় কোনো হাদিস না থাকতো, তবে এই হাদিসটিই এ রাতের ফজিলত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এবং এ রাতে মাগফিরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হতো। অথচ হাদিসের কিতাবসমূহে নির্ভরযোগ্য সনদে এ বিষয়ক আরো একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

হাদিসটির সনদ বিষয়ক আলোচনা
উপরোক্ত হাদিসটি অনেক নির্ভরযোগ্য হাদিসের কিতাবেই নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান তার কিতাবুস সহি-এ -যা সহি ইবনে হিব্বান নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ- এই হাদিসটি উদ্ধৃত করেছেন। এটি এই কিতাবের ৫৬৬৫ নং হাদিস। এছাড়া ইমাম বাইহাকি রহ. শুআবুল ঈমান-এ (৩/৩৮২, হাদিস ৩৮৩৩); ইমাম তাবরানি আলমুজামুল কাবির ও আলমুজামুল আওসাত-এ বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়াও আরো বহু হাদিসের ইমাম তাদের নিজ নিজ কিতাবে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।

হাদিসটির সনদ সহি। কেউ কেউ হাদিসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদিস সহি তথা নির্ভরযোগ্য হাদিসেরই একটি প্রকার। ইমাম মনজিরি, ইবনে রজব, নুরুদ্দিন হাইসামি, কাস্তাল্লানি, জুরকানি এবং অন্যান্য হাদিস বিশারদ এই হাদিসটিকে আমলযোগ্য বলেছেন।
[দেখুন আত-তারগিব ওয়াত তারহিব ২/১৮৮; ৩/৪৫৯. লাতায়েফুল মাআরিফ ১৫১; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ ৮/৬৫; শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা ১০/৫৬১]

বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধ শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানি রহ. সিলসিলাতুল আহাদসিস-সাহিহা ৩/১৩৫-১৩৯ এ এই হাদিসের সমর্থনে আরো আটটি হাদিস উল্লেখ করার পর লেখেন, ‘এ সব রেওয়ায়েতের মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে এই হাদিসটি নিঃসন্দেহে সহি প্রমাণিত হয়। তারপর আলবানি রহ. ওই সব লোকের বক্তব্য খন্ডন করেন যারা কোনো ধরনের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বরাতের ব্যাপারে কোনো সহি হাদিস নেই।
ইদানিং আমাদের কতক সালাফি বা গাইরে মুকাল্লিদ বন্ধুকে দেখা যায়, তারা নানা ধরনের লিফলেট বিলি করেন। তাতে লেখা থাকে যে, শবে বরাত (লাইলাতুল নিস্ফি মিন শাবান) এর কোনো ফজিলতই হাদিস শরিফে প্রমাণিত নেই। ওই সব বন্ধুরা শায়খ আলবানি রহ. এর গবেষণা ও সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। কেননা, তাদেরকে আলবানি রহ. এর বড় ভক্ত মনে হয় এবং তার কিতাবাদি অনুবাদ করে প্রচার করতেও দেখা যায়।

এই রাতের আমল
উল্লেখিত হাদিস শরিফে এ রাতের কী কী আমলের নির্দেশনা-ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তা আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। নিম্নে এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস পেশ করছি।
عن عائشة بنت أبي بكر قالت قام رسول الله صلي الله عليه وسلم من الليل يصلي فأطال السجود حتى ظننت أنه قد قبض فلما رأيت ذلك قمت حتى حركت إبهامه فتحرك فرجعت فلما رفع إلي رأسه من السجود وفرغ من صلاته قال يا عائشة أظننت أن النبي قد خاس بك؟ قلت لا والله يا رسول الله ولكنني ظننت أنك قبضت لطول سجودك فقال أتدرين أي ليلة هذه؟ قلت الله ورسوله أعلم قال هذه ليلة النصف من شعبان، إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هم

হজরত আলা ইবনুল হারিস রহ. থেকে বর্ণিত, হজরত আয়েশা রা. বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সা. রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়লো। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! অথবা বলেছেন, ও হুমাইরা, তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসুলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশঙ্কা হয়েছিলো, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ সা. তখন ইরশাদ করলেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তায়ালা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ [শুআবুল ঈমান, বায়হাকি ৩/৩৮২-৩৬৮]

ইমাম বায়হাকি রহ. এই হাদিসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, এ রাতে দীর্ঘ নফল পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরিয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। তবে মনে রাখতে হবে যে, অনেক অনির্ভরযোগ্য ওজিফার বই-পুস্তকে নামাজের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এতো রাকাত হতে হবে, প্রতি রাকাতে এই সুরা এতোবার পড়তে হবে- এগুলো ঠিক নয়। হাদিস শরিফে এসব নেই। এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। সঠিক পদ্ধতি হলো, নফল নামাজের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকাত করে যতো রাকাত সম্ভব হয় পড়তে থাকা।
কুরআন কারিম তিলওয়াত করা। দরুদ শরিফ পড়া। ইস্তেগফার করা। দোয়া করা এবং কিছুটা ঘুমের প্রয়োজন হলে ঘুমানো। এমন যেনো না হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতে ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়া সম্ভব হলো না।

পরদিন রোজা রাখা
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে, হজরত আলি ইবনে আবি তালেব রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, পনের শাবানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করবো। আছে কি কোনো রিজিক প্রার্থী? আমি তাকে রিজিক দেব। এভাবে সুবেহ সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৩৮৪] এই বর্ণনাটির সনদ জয়িফ বা দুর্বল। কিন্তু মহাদ্দিসিনে কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো, ফাজায়েলের ক্ষেত্রে জয়িফ হাদিস গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখার কথা সহি হাদিসে এসেছে এবং আইয়ামে বিজ অর্থাৎ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার বিষয়টিও সহি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

বলা বাহুল্য, পনের শাবানের দিনটি শাবান মাসেরই একটি দিন এবং তা আইয়ামে বিজের অন্তর্ভুক্ত। এজন্য ফিকেহর একাধিক কিতাবেই এদিনে রোজাকে মুস্তাহাব বা মাসনুন লেখা হয়েছে। আবার অনেকে বিশেষভাবে এ দিনের রোজাকে মুস্তাহাব বা মাসনুন বলতে অস্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে হজরত মাওলানা মুহাম্মাদ তকি উসমানি দা.বা. তার ইসলাহি খুতুবাতে বলেন, ‘আরো একটি বিষয় হচ্ছে শবে বরাতের পরবর্তী দিনে অর্থাৎ শাবানের পনের তারিখে রোজা রাখা। গভীরভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। হাদিসে রাসুলের বিশাল ভাণ্ডার হতে একটি মাত্র হাদিস এর সমর্থনে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে, শবে বরাতের পরবর্তী দিনটিতে রোজা রাখ। সনদ বর্ণনার সূত্রের দিক থেকে হাদিসটি দুর্বল। তাই এ দিনের রোজাকে এই একটি মাত্র দুর্বল হাদিসের দিকে তাকিয়ে সুন্নাত বা মুস্তাহাব বলে দেয়া অনেক আলেমের দৃষ্টিতে অনুচিত।’

এ রাতের নফল আমলসমূহ সম্মিলিত নয়, ব্যক্তিগত
এ বিষয়টিও মনে রাখতে হবে যে, এ রাতের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকীভাবে করণীয়। ফরজ নামাজ তো অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোনো প্রমাণ হাদিস শরিফেও নেই আর সাহাবায়ে কেরামরে যুগেও এর রেওয়াজ ছিলো না। [ইক্তিযাউস সিরাতিল মুসতাকিম ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ ২১৯]


আরও জানতে পড়ুন শবে বরাত এর তাৎপর্য, ফজীলত ও আমল।


তবে কোনো আহ্বান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যায়, তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলের ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হবে না। কোনো কোনো জায়গায় এই রেওয়াজ আছে যে, এ রাতে মাগরিব বা ইশার পর থেকেই ওয়াজ-নসিহত আরম্ভ হয়। আবার কোথাও ওয়াজের পর মিলাদ-মাহফিলের অনুষ্ঠান হয়। কোথাও তো সারা রাত খতমে-শবিনা হতে থাকে। উপরন্তু এসব কিছুই করা হয় মাইকে এবং বাইরের মাইকও ছেড়ে দেয়া হয়। মনে রাখতে হবে, এসব কিছুই ভুল রেওয়াজ। শবে বরাতের ফাজায়েল ও মাসায়েল আগেই আলোচনা করা হয়েছে। এ রাতে মাইক ছেড়ে দিয়ে বক্তৃতা-ওয়াজের আয়োজন করা ঠিক নয়। এতে না ইবাদতে আগ্রহী মানুষের পক্ষে ঘরে বসে একাগ্রতার সাথে ইবাদত করা সম্ভব হয়, আর না মসজিদে। অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় আরামেরও মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। আল্লাহ আমাদের এসব ভুল কাজকর্ম পরিহার করার তাওফিক দিন।

এ রাতের আপত্তিকর কাজকর্ম
খিচুড়ি বা হালুয়া-রুটির প্রথা, মসজিদ, ঘর-বাড়ি বা দোকান-পাটে আলোক-সজ্জা, পটকা ফুটানো, আতমবাজি, কবরস্থান ও মাজারসমূহে ভিড় করা, মহিলাদের ঘরের বাইরে যাওয়া, বিশেষ করে বেপর্দা হয়ে দোকানপাট, মাজার ইত্যাদি স্থানে ভিড় করা, এসব কিছুই এ রাতের আপত্তিকর কাজ। এসব কাজের কোনো কোনোটা তো অন্য সময়েও হারাম। আর কিছু কাজ সাধারণ অবস্থায় জায়েজ থাকলেও (যেমন : খিচুড়ি রান্না করে গরিব-মিসকিনদের মাঝে বণ্টন করা) এগুলোকে শবে বরাতের কাজ মনে করা বা জরুরি মনে করা এবং এসবের পেছনে পড়ে এ রাতের মূল কাজ তওবা, ইস্তেগফার, নফল ইবাদত ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত থাকার কোনো বৈধতা থাকতে পারে কি? এসব কিছুই শয়তানের ধোঁকা। মানুষকে আসল কাজ থেকে বিরত রাখার জন্যই শয়তান এসব কাজ-কর্মে মানুষকে লাগিয়ে রাখে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে শাবান মাসে সকল গুনাহ ও পাপরাশি থেকে পবিত্র হয়ে যথাযথভাবে রমজান মাসকে বরণ করার তাওফিক দান
করুন। আমিন।
– লেখক : গবেষণামূলক উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মারকাযুদ্ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা

 

Facebook Comments