‘‘জ্ঞান-সাধকের দোয়াতের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে মূল্যবান’’ এ কথাটি হাদিস হিসেবে জনশ্রুতি থাকলেও হাদীস বিশারদগণের নির্ভরযোগ্য মতানুসারে এটি হাদীস নয়; বরং পরবর্তী কারো বাণী। ইমাম সাখাবী রাহ. ‘আল মাকাসিদুল হাসানাতে’ ( পৃ. ৪৪২, বর্ণনা: ১০০৫ ) এটিকে হাসান বসরী রাহ.-এর বাণী বলে উল্লেখ করেছেন।
শাওকানী রাহ.,যারকাশী রাহ.,তাহের পাটনী রাহ.-সহ আরো অনেক হাদিস বিশারদ এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন।
(দেখুন: আল ফাওয়াইদুল মাজমূআ, খ. ১ পৃ. ২৮৭, বর্ণনা: ৫৩; আললাআলিল মানছূরাহ, পৃ. ১০১, বর্ণনা: ১০; আল আসারুল মারফূআ ২০৭; কাশফুল খাফা, খ.২ পৃ.২০০; তাযকিরাতুল মাওযূআত খ. ২ পৃ. ৩৬৯; মিযানুল ইতিদাল খ.৩ পৃ. ৪৯৮।)
সুতরাং এটিকে হাদীস হিসেবে বলা উচিত নয়।
এটা পড়তে পারেন-নামায মুমিনের মেরাজ-আঠারো হাজার মাখলুকাতঃ এগুলো কি হাদীস ?
এটি হাদীস নয় : ফিরিশতারা গুনাহ মাথায় নিয়ে মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন
কোনো ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশের সময় ফিরিশতারা তার গুনাহ মাথায় করে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন, যাতে গুনাহসহ কোনো ব্যক্তিকে পবিত্র মসজিদে প্রবেশ করতে না হয়। ওই ব্যক্তি বেশি দেরি করলে একসময় ফিরিশতারা বলেন, আল্লাহ! তার গুনাহ বহন করতে আমাদের তো খুব কষ্ট হচ্ছে। তখন আল্লাহ বলেন, গুনাহগুলো সমুদ্রে ফেলে দাও।
মসজিদে যত বেশি সময় কাটানো যায় ততই ভালো। কিন্তু মসজিদে বেশি সময় অবস্থান করার প্রতি উদ্বুদ্ধকারী উপরোক্ত বর্ণনার কোনো ভিত্তি নেই। নামাযের পর পবিত্র অবস্থায় নামাযের স্থানে বসে থাকলে ফিরিশতা মাগফিরাতের দুআ করে – হে আল্লাহ তাকে মাফ করে দিন, তার প্রতি রহম করুন। (সহীহ বুখারী, হাদীস:৬৫৯) এক নামাযের পর আরেক নামাযের অপেক্ষায় থাকলে গুনাহ মাফ হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস:২৫১) কিন্তু ফিরিশতারা গুনাহ মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন আর দেরি করে বের হলে কষ্টের কারণে তা সমুদ্রে ফেলে দেন- গুনাহ মাফ হওয়ার এই আজগুবি কাহিনীর কোনোই ভিত্তি নেই। এ ধরনের কল্পিত বিষয় বলা আবার হাদীস হিসেবে বলা অনেক বড় অন্যায়।
এটি কি হাদীস : সালাম দিলে নববই নেকী আর জওয়াব দিলে দশ নেকী
উপরের কথাটা বেশ প্রসিদ্ধ। কেউ কেউ প্রশ্ন করে থাকেন যে, এটা হাদীস কি না? আমাদের জানামতে এ কথাটা হাদীসের প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহে নেই। বরং একটি সহীহ হাদীসে এসেছে যে, সালামে শুধু ‘আস্সালামু আলাইকুম’ বললে দশ নেকী, ‘ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বৃদ্ধি করলে বিশ নেকী এবং ‘ওয়া বারাকাতুহ’সহ পুরো সালাম বললে ত্রিশ নেকী পাওয়া যায়।
দেখুন : সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৫১৫৩, জামে তিরমিযী হাদীস : ২৬৮৯
এজন্য ওই প্রচলিত কথাটির পরিবর্তে উপরোক্ত হাদীসে উল্লেখিত বিষয়টি প্রচার করা উচিত।