হালাল হারাম পরিচয় । ইসলামে হালাল উপার্জনের এত গুরুত্ব কেন ?

431

ইসলামি শরীয়াতে হালাল ও হারাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পৃথিবীর সব আসমানি গ্রন্থেই হালাল-হারামের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। হালাল-হারামের বিষয়গুলো নির্ধারিত করার ইখতিয়ার শুধুমাত্র আল্লাহর বিধায় বাস্তবজীবনে হালাল কাজ করা আর হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার নামই হচ্ছে ইবাদত। ইসলামের মূলমন্ত্রই হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহ পাকের হুকুম বা আদেশ মানা আর রাসূলুল্লাহ সা. এর তরীকায় জীবন যাপন করা। শুধু মাত্র লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ দ্বীন ইসলাম নহে অথবা শুধু মাত্র মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ দ্বীন ইসলাম নহে। উভয়ের সমম্বয়েই কালেমা বা দ্বীন ইসলাম।

ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল-হারাম
ক. হালাল : কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে যে সব বিষয়কে বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে, ইসলামি শারীয়াতের পরিভাষায় তা হালাল বা বৈধ। অন্য কথায়- হালাল অর্থ বৈধ, উপকারী ও কল্যাণকর বস্তুসমূহ। মানুষের জন্য যা কিছু উপকারের ও কল্যাণকর ঐ সমস্ত কর্ম ও বস্তুকে আল্লাহ পাক মানুষের জন্য হালাল করেছেন। যেমন: নামায, রোযা , হজ্জ, যাকাত, পর্দা, ছাগল মাংস ভক্ষণ, আল্লাহ নির্দেশিত ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি। একজন মুসলিমের উচিত সর্বদা হালাল বা বৈধ পদ্ধতি অবলম্বন করা।

(২) হারাম : কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে যে সব বিষয়কে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে, ইসলামি শারীয়াতের পরিভাষায় তা হারাম বা অবৈধ। অন্য কথায়, হারাম অর্থ অবৈধ, ক্ষতিকারক, অকল্যাণকর কর্ম ও বস্তুসমূহ: যা মানুষের জন্য অপকারের বা ক্ষতির কারণ। ঐ সমস্ত কর্ম বা বস্তকে আল্লাহ পাক হারাম করেছেন। যেমন: শুকরের মাংস মানুষের জন্য ক্ষতিকারক, সুদ, ঘুষ, বেনামাজী, বেপর্দা এবং সকল পাপ কর্ম ইত্যাদি। হারাম কাজ করলে আল্লাহর শাস্তি নির্ধারিত বিধায় এ ধরনের কাজ বর্জন করাও বাধ্যতামূলক। যেমন: সুদ খাওয়া, গীবত করা বা অপবিত্র কিছু খাওয়া  বা অবৈধ ব্যবসা বাণিজ্য করা।

হালাল ও হারাম বিধানের উদ্দেশ্য-
বিশ্বমানবতার কল্যাণ সাধন এবং অকল্যাণ ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করা। হালাল বিধান পালনেই বান্দার জন্য রয়েছে- আত্মার কল্যাণ, দেহের কল্যাণ এবং বিবেক-বুদ্ধির সুস্থতা। যা দ্বীন-ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এতে আল্লাহ বান্দার প্রতি নাযিল করেন রহমত ও বরকত। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি হারাম কাজ করে তার অন্তর-আত্মা নষ্ট হয়ে যায়, দেহের ক্ষতি হয় এবং বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। যা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় বহন করে। এক কথায় তাকে গোনাহগার বানিয়ে দেয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য সব ধরনের কঠোরতা তুলে নিয়ে ইসলামের হালাল ও হারামের বিধান মানুষকে অশান্তির শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ থেকে নিষ্কৃতি দান করেছেন। হালাল-হারামের বিধান নির্ধারণে আল্লাহ বলেন- ”যারা অনুসরণ করে সেই রাসূলকে (যিনি) নবী, উম্মী, যাঁকে তারা পায় উল্লিখিত তাদের কাছের তওরাতে ও ইঞ্জীলে, আর যিনি তাদের নির্দেশ দেন সৎকাজের ও তাদের নিষেধ করেন অসৎকাজ থেকে, আর তাদের জন্য বৈধ করেন ভালো বিষয়বস্তু ও তাদের জন্য নিষেধ করেন মন্দ জিনিসগুলো, আর যিনি তাদের থেকে দূর করে দেন তাদের বোঝা ও বন্ধন যা তাদের উপরে ছিল। অতএব যারা তাঁতে বিশ্বাস করে ও তাঁকে মান্য করে ও তাঁকে সাহায্য করে আর অনুসরণ করে সেই আলো যা তাঁর সঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে, — এরা নিজেরাই হচ্ছে সফলকাম। [সূরা আরাফ : আয়াত ১৫৭]

হালালের উদাহরন
(১) মুসলমানদের গরু, ছাগল খাওয়ার হুকুম আল্লাহ পাক দান করেছেন। কিন্তু উহা যদি আল্লাহু আকবার তথা আল্লাহর নামে বলে কিন্তু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরীকায় জবেহ করা না হয় তবে উহা মুসলমানের জন্য হারাম হয়ে যাবে। কারন গরু বা ছাগল খাওয়া আল্লাহ পাকের হুকুম আছে কিন্তু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নুরানী সুন্নত তরীকা না থাকার কারনে উহা হারাম হয়ে যাবে। কিন্তু উহা যদি আল্লাহ পাকের নাম নিয়ে সুন্নত তরীকায় জবেহ করা হয় তখন উহা হালাল হবে। তেমনি শরীয়তের সমস্ত কাজ যখন আল্লাহ পাকের হুকুম ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরীকায় পালিত হবে তখন উহা হালাল বা বৈধ এবং এবাদতে গন্য হবে নচেৎ নয়।

হারামের উদাহরন
(১) আল্লাহ পাক শুকর খাওয়াকে হারাম করেছেন। কিন্ত কেউ যদি শুকরকে সুন্নত নিয়মে জবেহ করে তবুও উহা হালাল হবে না বরং হারাম হবে। এখানে আল্লাহ পাকের হুকুম নেই। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরীকা লাগালেও উহা বৈধ বা হালাল এবং এবাদতে গন্য হবেনা। তেমনি আল্লাহ পাক যে সমস্ত কাজ বা বস্ত হারাম করেছেন যেমন: শুকর, সুদ , ঘুস, বেপর্দা, হারাম ব্যবসা ইত্যাদি  সককিছুই হারাম হবে। এ গুলো ইবাদতে গণ্য হবে না।
হালাল হারামহারাম পথে উপার্জনগুলো কী : সাধারণত যেসব অবৈধ উপায়ে আয়ের পন্থা সমাজে চালু রয়েছে সেসবের মুধ্যে ঘুষ, সুদ, হারাম পণ্যসামগ্রীর ব্যবসা, কালোবাজারী, চোরাকারবারী, নাচ-গান, ফটকবাজারী, সব ধরনের প্রতরণা, পতিতাবৃত্তি, সমস্ত প্রকারের লটারী, জুয়া প্রভৃতিই প্রধান। রাসূল (সা.) এসব হারাম ও অনৈতিক পথে উপার্জন কঠোরভাবে রোধ করেছেন। তৎকালীন সময়েই শুধু নয়, বর্তমান যুগেও অন্য কোনও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এত ব্যাপকভাবে অবৈধ ও অশ্লীল উপায়ে উপার্জন ও ভোগের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়নি। একারণেই সেসব মতাদর্শে সামাজিক দুর্নীতি ও অনাচারের সয়লাব বয়ে যাচ্ছে।

হারাম উপার্জন নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ : ইসলামে যা কিছু বৈধ ঘোষণা দেয়া হয়েছে বা অবৈধ করা হয়েছে, তার অবশ্যই কতগুলো কারণ আছে । হতে পারে অনেক সময় সেগুলো প্রত্যক্ষভাবে আমাদের চোখে ধরা পড়ে, আবার অনেক সময় পড়ে না । ইসলামবেত্তাগণের মতে, ইসলামে হারাম উপার্জন নিষিদ্ধ হবার কয়েকটি কারণ রয়েছে । যেমন-

এক. হারাম উপার্জন একটি জুলুম : অবৈধ আয়ের উদ্দেশ্যে জনগণের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জুলুম করা হয়। হয়রানী করে বা কৌশলে প্রতারণা করে অথবা বাধ্য করে লোকদের নিকট থেকে ব্যক্তিবিশেষ বা অনেক সময় শ্রেণিবিশেষ উপার্জন করে থাকে। এতে জনগণ যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয় তেমনি সমাজে সৃষ্টি হয় অসন্তোষ। দরিদ্র ও সাধারণ লোক তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার হতে হয় বঞ্চিত। উপরন্ত কলহ, বিশৃঙ্খলা বিদ্বেষ ও বিভেদ সৃষ্টির পথ প্রশস্ত হয়। অনেক সময়ে ব্যক্তিবিশেষও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য অবৈধ অর্থ ব্যয় করে থাকে। যেমন ঘুষ। বিশ্বের সর্বত্রই এটা সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। বহু দেশে সামরিক আইন পর্যন্ত চালু করা হয়েছে ঘুষ উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকেই ঘুষ নিতে দেখা গেছে। ঘুষ বা উপরি আয় আজ অন্য আর দশটা উপায়ে আয়ের মতোই খুব সহজ ও স্বাভাবিক বলে স্বীকৃত হচ্ছে। কিন্তু যারা ঘুষ নেয় বা দেয় তাদের উদ্দেশ্যে রাসূলে (সা.) সতর্ক করে দিয়ে বলেন- ঘুষ গ্রহণকারী ও ঘুষ প্রদানকারী উভয়েরই উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। [বুখারী, মুসলিম]

দুই. হারাম উপার্জন নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী : চারিত্রিক নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী বিষয় যেমন- নৃত্য সঙ্গীত, মদ, বেশ্যাবৃত্তিসহ সবধরনের অশ্লীল কাজ ইসলামী সমাজে নিষিদ্ধ। এসবের ব্যবসা করাও তাই নিষিদ্ধ। সমাজে এসব কাজের এতটুকুও প্রশ্রয় দিলে অশ্লীলতা, বেহায়াপনার কলুষতা ছড়িয়ে পড়বে। এর বিষবাষ্প প্রবেশ করবে সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ফলে চরিত্রহননের সীমা থাকবে না। গোটা সমাজ পাপ-পংকিলতায় নিমজ্জিত হবে। সে জন্যেই এসব জিনিসের ভোগ শুধু নিষিদ্ধই নয়, এসবের শিল্প-কারখানা তৈরি করা ও ব্যবসা করা অর্থাৎ এ সমস্ত উৎস হতে উপার্জন করাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

তিন. অবৈধ কাজে ব্যয় : অবৈধ উপায়ে অর্জিত ধন-সম্পদ সাধারণত অবৈধ কাজে ব্যয় হয়। অবৈধ কাজে ব্যয়ের অর্থই হচ্ছে সামাজিক অনাচার ও পঙ্কিলতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, অবৈধ ও অসৎ উপায়ে যারা আয় করে থাকে তারা সে আয় নানা সমাজবিরোধী তথা ইসলামী অনুশাসনবিরোধী কাজে ব্যয় করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ নাচ-গান, সিনেমা, নানা রং তামাশা, বিলাস-ব্যসন, মদ্যসক্তি, বেশ্যাগমন, ব্যয়বহুল, প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি প্রভৃতির উল্লেখ করা যেতে পারে। এর যে কোনো একটিই সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। যদি এর সবগুলিই কোন সমাজ বা জাতির মধ্যে ক্রমে ক্রমে অনুপ্রবেশ তাহলে গোটা সমাজ ও জাতির চূড়ান্ত সর্বনাশ হবে। এ জন্যই রাসূল (সা.) কঠোরভাবে বলেছেন- অবৈধ উপায়ের উপার্জনে তৈরি রক্তমাংস দোযখের খোরাক হবে। [সুনানে তিরমিজি]

চার. অপব্যায় বৃদ্ধি পায় : হারাম উপার্জন সহজলভ্য হওয়ার ফলে উপার্জিত অর্থের প্রতি স্বাভাবিক টান মানুষের থাকে না । ফলে অপব্যয় ও অপচয় বৃদ্ধি পায় । আর অপব্যয়ের ছিদ্রপথেই সংসারে আসে অভাব-অনটন। সমাজে আসে অশান্তি। অশান্তি আর অনটন হতে রক্ষা পেতে হলে মিতব্যয়ীতাই হওয়া উচিৎ আদর্শ। কৃপণতা যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত অপব্যয়ও তেমনি অনভিপ্রেত। এ দুয়ের মধ্যবর্তী পথই হচ্ছে উত্তম পথ। অর্থাৎ, মিতব্যয়ীতাই উত্তম পথ। এ ব্যাপারে আল কুরআনে এরশাদ হয়েছে-

وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا

অর্থ : তারাই আল্লাহর নেক বান্দা যারা অর্থ ব্যয়ের ব্যাপারে না অপচয় ও বেহুদা খরচ করে, না কোনরূপ কৃপণতা করে। বরং তারা এ উভয় দিকের মাঝখানে মজবুত হয়ে চলে। [সূরা ফুরকান, আয়াত ৬৭]

পাঁচ. জুয়ার শক্তিবৃদ্ধি : হারাম আয়ের বড় একটি উৎস হলো জুয়া। আজ যেমন সর্বত্র নানা ধরণের জুয়া চলছে, তেমনি অতীতেও এর প্রচলন ছিলো । জুয়ার ইতিহাস বহু প্রাচীন। জুয়ার কবলে পড়ে কত  পরিবার যে সর্বস্বান্ত হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। শিল্প বিপ্লবের পর জুয়ার আরও চমকপ্রদ ও নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কৃত হয়েছে। পূর্বে জুয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তীর ও পাশার খেলা। পরবর্তীতে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘোড়াদৌড়, তাসের বিভিন্ন খেলা, হাউজী, রুলেতে, শব্দচয়ন, লটারী প্রাইজবন্ড ইত্যাদি নানা ধরনের ও কৌশলের জুয়া। জুয়াকে তাই ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

অর্থ : হে মুমিনগণ, জেনে রাখ, মদ জুয়া মূর্তি এবং (গায়েব জানার জন্যে) পাশা খেলা, ফাল গ্রহণ ইত্যাদি অতি অপবিত্র জিনিস ও শয়তানের কাজ। অতএব, তোমরা তা পরিত্যাগ কর। তবেই তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে। [সূরা মায়েদা, আয়াত ৯০]

ছয়.  ফটকাবাজির প্রসার : এরই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফটকাবাজারী। ফটকাবাজারী সম্পূর্ণভাবে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবদান। শেয়ার মার্কেটে সম্ভাব্য মুনাফার চটকদার হিসেব দেখিয়ে ও অন্যান্য অপকৌশলের মাধ্যমে শেয়ার বিক্রির ফলে কত পরিবার যে রাতারাতি নি:স্ব হয়েছে তার হিসেব নেই। বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেট তার জাজ্জ্বল্যমান নজীর। ধোঁকাবাজী বা প্রতারণার ঘোর শত্রু  ইসলাম। রাসূল (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি ধোঁকাবাজী করে সে আমার দলভূক্ত লোক নয়। [আবু দাউদ]

হারাম থেকে বেঁচে থাকার জন্যে করণীয় : বাস্তবিকই ব্যক্তি ও সমাজ জীবন তথ্য সামগ্রিক অর্থনৈতিক জীবনে আয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে সততা ও মধ্যম পন্থা অনুসরণ করে চললে সুষ্ঠু ও সাবলীল উন্নতি হতে পারে। বস্তুত: পুঁজিবাদী সমাজের অর্থনৈতিক অবক্ষয় ও ক্রমবর্ধমান সামাজিক অনাচার ও পাপাচারের মুখ্য কারণ অপব্যয় ও অবৈধ পন্থায় ব্যয়। এজন্যেই রাসূল (সা.) এর মূলোচ্ছেদ করেছিলেন। ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারের দায়িত্বের কথাও উল্লেখযোগ্য। ব্যক্তি মানুষের অপরাধ প্রবণতা যদি আল্লাহর ভয়ে ও রাসূল (সা.)-এর সন্তষ্টি অর্জনের জন্যে স্বত:প্রবৃত্ত হয়ে সংশোধিত না হয় তাহলে সরকার অবশ্যই ইসলামী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ন্যূনতম ব্যবস্থা হচ্ছে, যাদের হাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ-সম্পদ রয়েছে তাদের সেসব সম্পত্তি বৈধ বা জায়েজ পথে অর্জিত হয়েছে কিনা তা নির্ণয় করা। এ উদ্দেশ্যেই মহানবী মুহাম্মাদ (সা.) এর নির্দেশে হিসবাহ নামে একটি দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দপ্তরটির কাজ ছিল অবৈধ উপায়ে আয় রোধ করা, একাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা। অবৈধভাবে গ্রহণ করে থাকলে তা মূল মালিকের কাছে প্রত্যর্পণ করা। যদি তা সম্ভব না হয় বা সেভাবে আয় না হয়ে থাকে তবে তা বায়তুল মালেই জমা দেওয়া হতো।

পরিশেষে…
আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি তিনি যেন তাঁর বান্দাদের হালাল ও হারামের পরিচয় লাভ করার পর এর বিধান পালনের তাওফিক দান করেন। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করেন এবং পরকালে মুক্তি দান করেন। আমিন।


এটা পড়ুন – সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ এর ব্যবসায়ীরা


[সূত্র :  ১. অর্থনীতিতে রাসুল (সা.)-এর দশদফা, শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান।, ২. ব্যবসা-বাণিজ্য : করণীয় বর্জণীয়, জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের। ৩। হালাল-হারামের পরিচয় ও বিধান,মাওলানা আব্দুস সাত্তার]

Facebook Comments