হিজরত-মদিনায় হিজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আহ্বানে ইসলামের প্রতি উৎসাহী হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন মদীনা থেকে মক্কায় হজ্ব করতে আসা মদীনার বারোজন লোক। তারা মূলত হজ্জ করতে এসে ইসলামের দাওয়াত পেয়েছিলেন।
তারা আকাবা নামক স্থানে নবীজির কাছে শপথ করেন যে, যে কোনো অবস্থায় নবী মুহাম্মাদকে আমরা রক্ষা করবো এবং মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিবো। আমরা ইসলাম প্রসারে কাজ করবো একনিষ্ঠভাবে। এই শপথ আকাবার শপথ নামে পরিচিত। সময়টি ছিলো নবুওয়তের বারোতম বছর। নবুওয়তের তেরতম বৎসরে সংগঠিত হয় দ্বিতীয় বাইআতে আকাবা। সে বাইয়াতে অংশ নেন মদীনার সত্তরজন পুরুষ ও দুজন নারী।
মাদীনাবাসীরা রাসূলকে মদীনায় গমনের আমন্ত্রণ জানালেন। তাদের আগ্রহে কোন কমতি ছিলো না। রাসূলের প্রতি তাদের ভালোবাসা ছিলো আকাশচুম্বি। ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য জানমাল কুরবান করতে প্রস্তুত ছিলেন সবাই। মক্কার কাফেরদের অত্যাচারে অসহ্য হয়ে কেউ হিজরত করলেন আবিসিনিয়ায়। অনেকেই হিজরত করলেন মদীনায়। সেখানে কায়েম হলো ইসলামী পরিবেশ।
হযরত আবু বকর রাযি. হিজরতের ইচ্ছা করলে রাসূল বললেন, অপেক্ষা করো। রাসূল হিজরতের ইশারা দিলেন। রাসূলও হিজরতের ইরাদা করেছেন। এখন আল্লাহ তাআলার নির্দেশের অপেক্ষামাত্র। এদিকে মক্কার কাফেররা আটলো দুষ্টু বুদ্ধি। ষড়যন্ত্র করলো মেরে ফেলার। ঘেরাও করলো রাসূলের বাসবভন। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ এলো হিজরতের। রাসূল সাঃ হাতে একমুষ্টি মাটি নিলেন। শুরু করলেন সূরা ইয়াসিনের তেলাওয়াত। فاغشيناهم فهم لا يصرون পর্যন্ত পৌঁছে মাটিতে ফু দিয়ে নিক্ষেপ করলেন ঘেরাওকারীদের দিকে। চলে গেলেন তিনি। কেউ কিছু বুঝতে পারলো না।
রাসূল মদীনায় এলেন। মক্কার মুসলমান সবাই চলে এলেন মদীনায়। দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেন মদীনার মানুষ।ইসলামের নিয়মনীতি কার না ভালো লাগে! ইসলামী শিষ্টাচারে মুগ্ধ হয়ে ইসলামের পতাকাতলে আশ্রয় নিলেন অগনিত মানুষ। রাসূলের হাতে বায়আত হয়ে ধন্য হলেন তারা। ইসলামের বাণি ছড়িয়ে পড়লো সারা বিশ্বে। রাসূল ইসলামের দাওয়াত পাঠালেন বিভিন্ন দেশের শাসকদের কাছে।
যুদ্ধ জিহাদ: মুসলমানরা মদীনায় এসেও নিষ্কৃতি পান নি মক্কার কাফেরদের দুষ্কৃতি থেকে। মেতে ওঠে মুসলমানদেরকে দুনিয়া থেকে বিদায় করার ষড়যন্ত্রে। রক্ষা ও শক্তি সঞ্চারের জন্য বদর ও উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয় মক্কার কাফেরদের সাথেই। এছাড়াও আরো অনেক যুদ্ধ হয়েছে কাফেরদের সাথে। সবখানেই ইসলামের বিজয় হয়েছে। যে মক্কা ছেড়ে চলে এলেন নির্যাতনে অসহ্য হয়ে। রাসূল সাহাবাদের বিশাল বাহিনী নিয়ে বিজয় করেছেন স্মৃতি বিজড়িত পূণ্যভূমি মক্কা।
সারা আরব ইসলামের পদানত হলো। আরবজুড়ে উড়লো ইসলামের বিজয় কেতন। মক্কার যে সকল লোকেরা নির্যাতনের ভয়ে ইসলাম গ্রহণ করেনি আজ তারা গ্রহণ করেছে ইসলাম। ইসলামের বিজয় দেখে মক্কার লোকেরা দলে দলে গ্রহণ করেছে ইসলামধর্ম। ইসলামে যদি জিহাদ না থাকতো তাহলে হয়ত এতোদিনে ইসলামও থাকতো না। কারণ বিরোধি শক্তিকে প্রতিহত না করলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করলে তারা তো আমাকে ধ্বংস করে দিবে। তাই সর্বদা বিরোধি শক্তিকে দুর্বল করে রাখতে হবে। যখন যুদ্ধের প্রয়োজন হবে তখন যু্দ্ধ করতে হবে।
মুসলমানরা যখন কুফুরি শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ছেড়ে দিবে, তখনই নেমে আসবে মুসলমানদের পতন। আজ মুসলমানরা জিহাদ ছেড়ে দিয়েছে বলেই মুসলিম উম্মাহর করুণ পরিণতি। জিহাদ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান পর্যন্ত নেই মুসলিমদের। চলবে…………………
পূর্ব প্রকাশের পর...পূর্বের লেখা
লেখক- আতা খান