মানুষ সবাই আল্লাহর সৃষ্টি। দুনিয়ার শুরু লগ্ন থেকে নিয়ে অদ্যবধি মানুষের বসবাস এ পৃথিবীজুড়ে। কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে মানুষের বসবাস। যাদের পথচলা শুরু হয়েছিল পৃথিবীর সূচনালগ্নে, সে মানুষগুলো এখন আর নেই। আজকের মানুষগুলোও একদিন হারিয়ে যাবে। থেমে যাবে তাদের পথচলা। মানুষ চলে যায়, তবে রয়ে যায় তার রেখে যাওয়া আদর্শ। কীর্তি বেঁচে থাকে আজীবন।
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন এক মানবের আবির্ভাব ঘটেছে। যিনি মহামানব,অতুলনীয়। তার মতো আরেকটি মানুষ আসেনি। আসবেও না। ইয়াকুত তো পাথর তবে সাধারণ কোন পাথর নয়। এমনিভাবে তিনিও একজন মাটির তৈরি মানুষ; তবে সাধারণ মানুষ নন। এ সর্বশ্রেষ্ট মানুষটি হলেন, আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি সকলের রাহবার,নবীদের সরদার,রহমতের কাণ্ডারী। জগতবাসির জন্য রহমত।
মহান আল্লাহ রাব্ববুল আলামীন রাসূলকে সম্ভোধন করে বলেছেন, হে রাসূল আমি আপনাকে জগতবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। রাসূলের ছেলেবেলা, যৌবনকাল, নবুওয়তের আগে ও পরে মানুষের সাথে চলাফেরা, ওঠাবসা, লেনদেন, আচার ব্যবহার, ইবাদত বন্দেগি ও রাষ্ট্র পরিচালনাসহ ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের জন্য রয়েছে আদর্শ। আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে লক্ষ করে বলেছেন, আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাঝে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। এ শ্রেষ্ঠ মানুষটির আদর্শ যারা গ্রহণ করবে, তারা পৌঁছে যাবে শ্রেষ্ঠত্বের কাতারে। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে তারা হবেন সম্মানিত। তারাই হবেন আল্লাহ তাআলার প্রিয়বান্দা। আল্লাহ তাআলা তাদের জন্যই রেখেছেন পরকালের সুখ-শান্তি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ সম্পর্কে জানতে হলে জানতে হবে নবী জীবনের নানা দিক।
উল্লেখ করছি নবীজির জীবনাদর্শের কিছু দিক। হেরা গুহার রশ্মি: আরবদের মাঝে সর্বদা লেগে থাকতো ঝগড়া বিবাদ। সাধারণ বিষয়কে কেন্দ্র করে মারামারি হানাহানিতে লিপ্ত হওয়া ছিলো সে যুগের সাধারণ ব্যাপার। সমাজের এমন দুরাবস্থার কী সমাধান। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কী উপায়! এ নিয়ে ভাবনায় ডুবে থাকেন মুহাম্মদ নামের শান্তিপ্রিয় মানুষটি।সর্বদা মানবতার মুক্তির চিন্তায় বিভোর তিনি। ঘরে ঘরে শান্তি পৌঁছে দিতে প্রতিষ্ঠা করলেন হিলফুল ফুজুল নামের শান্তিমূলক সংগঠন।
জাহেলিয়াতের প্লাবন থামানোর ফিকির নিয়ে ধ্যানে বসলেন হেরা গুহায়। তিনি চেয়ে থাকতেন কাবার রহস্যময় কালো ঘরটির দিকে, যা সভ্যতার প্রথম সূতিকাগার। তিনি যেন অপেক্ষায় আছেন কাবার মালিকের হেদায়েতের প্রত্যাশায়। এভাবেই কেটে গেল তিনটি বছর। হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় পূর্ণ হলো চল্লিশ বছর। ২৭ রমজান রাতে আল্লাহর ওহি নিয়ে হাজির হলেন জিবরাঈল আমীন। নাযিল হলো ওহি। তিনি এখন আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষিত নবী। সনদপ্রাপ্ত নবী। নাযিল হয় সুরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত।
সমাজে শুনালেন শান্তির বাণী। মানুষকে দেখালেন এক আলোর দিগন্ত। পূণ্য হলো আরব। ধন্য হলো আরবের মানুষ। হিংস্র স্বভাবের মানুষগুলো হয়ে গেলো মানব ফেরেশতা। আল্লাহর খুব প্রিয় বান্দা হওয়ার সৌভাগ্য হাসিল করলেন তারাই। দুনিয়ায় থাকাবস্থায় তারাই পেয়ে গেলেন জান্নাতের শুভ সংবাদ। আর হেরা গুহার এ আলোর রশ্মি ছড়িয়ে পড়ল সারা বিশ্বে। সঠিক পথের দিশা পেল সারা বিশ্বের মানুষ।
ইসলামের দাওয়াত: প্রথমে গোপনেই শুরু হলো ইসলামের দাওয়াত। জীবন সঙ্গিনী হযরত খাদীজা রাযি. সাড়া দিলেন রাসূলের ডাকে। গ্রহণ করলেন ইসলাম। বন্ধুবর হযরত আবু বকর রাযি. গ্রহণ করলেন ইসলাম। তিনি নিজেও শুরু করলেন দাওয়াতের কাজ। চাচাতো ভাই হযরত আলীও মুসলমান হয়ে গেলেন। এভাবেই বৃদ্ধি পেতে থাকলো মুসলমানদের সংখ্যা। কারণ মুহাম্মদ সম্পর্কে কেউ কখনো খারাপ শুনেনি। কেউ খারাপ জানেনি। তিনিও কারো সাথে কখনো খারাপ আচরণ করেন নি। তিনি ছিলেন সবার প্রিয়। সবাই ভক্তি করতো তাকে। তিনি ছিলেন বিশ্বস্ত ও সত্যবাদি। আল আমীন উপাধিতে ভূষিত ছিলেন সেই বাল্যকাল থেকেই। সবাই টাকা পয়সা, সোনা গয়না আমানত রেখে যেতো নির্ভয়ে। এমন মানুষের ডাকে কে না সাড়া দেয়। এ সুবাদে ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো মুসলমাদের সংখ্যা।
সময় এলো প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়ার। মহাম্মদ সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারওয়া পাহাড়ে দাঁড়িয়ে উচ্চ কণ্ঠে ডাকলেন মক্কাবাসিকে। তাদের বিশ্বস্ত ব্যক্তিটির ডাকে সাড়া দিয়ে সমেবেত হলো সবাই। সবাইকে শুনালেন আল্লাহর বানী। ডাকলেন সফলতার দিকে। আল্লাহর হুকম পালন করলে কী লাভ, না মানলে কী ক্ষতি তা জানালেন সবাইকে।
যাদের কপালে হেদায়াত লেখা নেই তারা বড় হতভাগা। তারা শুরু করলো মুসলমানদের বিরোধিতা। মানলো না রাসূলের কথা। গ্রহণ করলো না ইসলাম। অন্যদেরকেও বারণ করতো ইসলাম গ্রহণ থেকে। এতেই ক্ষ্যান্ত নয়। শুরু করলো মুসলমানদের উপর অসহনীয় নির্যাতন। তাদের অপরাধ ছিলো, তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করেছে। আল্লাহর রাসূলকে তার প্রেরিত রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করেছে। আল্লাহ তাআলার হুকুম পালন করেছে।
মুসলমানরা নির্যাতন সহ্য করেছে। নির্যাতনের ভয়ে জন্মভূমি ছেড়েছে। কিন্তু নির্যাতনের ভয়ে ইসলাম ত্যাগ করেনি। এটাই ঈমানের স্বাদ। যারা একবার এ স্বাদ পেয়েছে, গলায় ছুড়ি লাগালেও তাদেরকে ঈমানের পথ থেকে ফিরিয়ে আনা যায় না। মদিনায় হিজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আহ্বানে ইসলামের প্রতি উৎসাহী হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন মদীনা থেকে মক্কায় হজ্ব করতে আসা মদীনার বারোজন লোক। তারা মূলত হজ্জ করতে এসে ইসলামের দাওয়াত পেয়েছিলেন। চলমান ………………
=============================
লেখক —- আতা খান