মুহাম্মাদ(স) কি সন্তান জন্মে নারীর ভূমিকার ব্যাপারে অজ্ঞ ছিলেন?

মুহাম্মদ সাঃ রাসুল মাতৃগর্ভ

নাস্তিক প্রশ্ন: কুরআন বার বার উল্লেখ হয়েছে পুরুষের নির্গত বীর্য থেকে সন্তানের জন্ম হয় (Quran 86:5-6, 76:2, 23:13-14, 53:45-46, 80:19, 2:223) ! কিন্তু স্ত্রীর ডিম্বাণুর যে ভুমিকা সে ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি! এটা কি মুহাম্মাদের(স) অজ্ঞতা ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে? [নাউযুবিল্লাহ, নাসতাগফিরুল্লাহ]

উত্তরঃ পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেঃ
إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا
অর্থঃ আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সংমিশ্রিত শুক্রবিন্দু থেকে, তাকে আমি পরীক্ষা করব এইজন্য তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।
(কুরআন, দাহর(ইনসান) ৭৬:২)

উপরের আয়াতে نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ বা “সংমিশ্রিত শুক্রবিন্দু” দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? প্রাচীন তাফসিরকারকরা কিভাবে কুরআনের এই আরবি বুঝতেন? তাঁরা কি এই আয়াতের ক্ষেত্রে এটা বুঝতেন যে – মানবসৃষ্টিতে নারীর ডিম্বাণুর কোন ভূমিকাই নেই যেমনটি অভিযোগকারীরা দাবি করে থাকে? চলুন দেখি।
.
ইমাম তাবারী(র) কুরআনের সব থেকে প্রাচীন তাফসিরকারকদের একজন।
সুরা দাহরের ৭৬নং আয়াতের তাফসিরে ইমাম তাবারী(র) বলেনঃ

আল্লাহ মানুষকে এমন অবস্থায় সৃষ্টি করেছেন যে তার নিকৃষ্টতা ও দুর্বলতার কারণে সে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না।তিনি তাকে পুরুষ ও নারীর মিলিত শুক্রের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন এবং বিভিন্ন অবস্থায় পরিবর্তিত করার পর তাকে বর্তমান রূপ ও আকৃতি দান করেছেন।
(তাবারী ২৪/৮৯)
[সূত্রঃ তাফসির ইবন কাসির(হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী, মার্চ ২০১৪ সংস্করণ), ৮ম খণ্ড, সুরা দাহর(ইনসান) এর ২নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৬৮৫]

 

এখানে নর ও নারীর মিশ্র বীর্য বোঝানো হয়েছে।অর্থাৎ মানুষের সৃষ্টি পুরুষ ও নারীর দু’টি আলাদা বীর্য দ্বারা হয়নি {অর্থাৎ আলাদা আলাদাভাবে ২টি বীর্য থেকে হয়নি}। বরং দু’টি বীর্য সংমিশ্রিত হয়ে যখন একটি হয়ে গিয়েছে, তখন সে সংমিশ্রিত বীর্য থেকে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে।এটিই অধিকাংশ তাফসিরকারকের মত।
[বাগভী, কুরতুবী, ইবন কাসির,ফাতহুল কাদির]
[সূত্রঃ কুরআনুল কারীম(বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির), ড.আবু বকর জাকারিয়া, ২য় খণ্ড, সুরা দাহরের ২নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ২৭৩৭-২৭৩৮]

এখানে আমরা বেশ কয়েকজন প্রাচীন তাফসিরকারকের মতামত দেখলাম। তাঁরা সকলেই এই আয়াতে نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ বা “সংমিশ্রিত শুক্রবিন্দু” দ্বারা এটা বুঝতেন যে পুরুষ ও নারীর মিলিত বীর্য থেকে মানবসৃষ্টির সূচনা হয়। অভিযোগকারীরা এরিস্টল, গ্যালেনের অভিমত ও প্রাচীন ভারতীয় ভ্রূণবিদ্যার কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন যে কুরআনে মানবসৃষ্টিতে নারীর ডিম্বাণুর ভূমিকা উল্লেখ করা হয়নি।অথচ আমরা দেখছি যে কুরআনের প্রাচীন তাফসিরকারকরা মোটেও প্রাচীন ভ্রূণবিদ্যার ভুল তত্ত্বগুলোর ন্যায় ডিম্বাণুর কথা অস্বীকার করেননি বরং কুরআনের আলোচ্য আয়াত দ্বারা এটাই বুঝেছেন যে নারী ও পুরুষের সংমিশ্রিত বীর্য থেকে মানবসৃষ্টির সূচনা হয়, অর্থাৎ মানবসৃষ্টিতে পুরুষের শুক্রাণু ও নারীর ডিম্বাণু উভয়েরই ভূমিকা রয়েছে।

অভিযোগকারীরা দাবি করেন মানবসৃষ্টিতে স্ত্রীর ডিম্বাণুর ভুমিকার ব্যাপারে নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) নাকি অজ্ঞ ছিলেন।আমরা বলব—মুহাম্মাদ(ﷺ) অজ্ঞ ছিলেন না, বরং অভিযোগকারীরাই অজ্ঞ।

মুসাদ্দাদ (র) ……… উম্মে সালামা (রা) থেকে বর্ণিত যে, উম্মে সুলায়ম (রা) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)! আল্লাহ সত্য প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না । মেয়েদের স্বপ্নদোষ হলে কি তাদের উপর গোসল ফরয হবে ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। যখন সে বীর্য দেখতে পারবে।
এ কথা শুনে উম্মে সালামা (রা) হাসলেন এবং বললেন, মেয়েদের কি স্বপ্নদোষ হয় ?
তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তা না হলে সন্তান তার সদৃশ হয় কিভাবে।
[সহীহ বুখারী, অধ্যায়: নবী ও রাসুলগন | অনুচ্ছেদ: আদম (আ) ও তাঁর সন্তানাদির সৃষ্টি; হাদিস : ৩৩২৮]
আরেকটি বর্ণণায় আছে, রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) বললেনঃ (তা না হলে) তাঁর সন্তান তাঁর আকৃতি পায় কিরূপে? [সহীহ বুখারী,অধ্যায়: ইলম | অনুচ্ছেদ: ‘ইলম শিক্ষা করতে লজ্জাবোধ করা’; হাদিস : ১৩০]

আলোচ্য হাদিসগুলোতে আমরা দেখছি যে নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে মানবশিশুর জন্মের ব্যাপারে নারীর ভূমিকার কথা বলছেন।

এছাড়া কুরআনে আরো বিভিন্ন জায়গায় মানবসৃষ্টির প্রক্রিয়া আলোচনা করা হয়েছে এবং শুক্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সেসব জায়গায় ডিম্বাণুর কথা সরাসরি না এলেও মোটেও ডিম্বাণুর কথা অস্বীকার করা হয়নি। “চিনি থেকে সরবত তৈরি হয়”—এই কথা বলার অর্থ এই নয় যে সরবত তৈরিতে পানির ভূমিকা অস্বীকার করা হচ্ছে।

Facebook Comments

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here