কেন আমি ইসলাম মানব বা ইসলাম গ্রহণের উপকারিতা

428
কেন ইসলাম

মূল : আই. এ. ইবরাহীম, বঙ্গানুবাদ : মুহাম্মদ ইসমাইল জাবীহুল্লাহ সম্পাদনাঃ মুয়াজ আব্দুল্লাহ । ইসলামে ব্যক্তি ও সমাজের প্রচুর কল্যাণ নিশ্চিত করা হয়েছে। ইসলামের খাতিরে ব্যক্তি যে সমস্ত কল্যাণ ও ফায়দা লাভ করে তা এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইত্যাদি।

১. চিরন্তন জান্নাতের পথ:

আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন:
“হে নবী! যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে আপনি এমন জান্নাতের সুসংবাদ দিন যার নিচ দিয়ে নদী সমূহ প্রবহমান থাকবে।” (সূরা আল-বাকারা: ২৫)

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
“তোমরা সামনে ধাবিত হও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে, যা আকাশ ও পৃথিবীর মত প্রশস্ত। এটা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহ ও তার রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারীদের জন্য।” (সূরা আল-হাদীদ: ২১)

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন:

“আমি ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে জানি যে সর্বশেষে জাহান্নাম থেকে বের হওয়ার অনুমতি পাবে এবং সর্বশেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ঐ ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে মুখের উপর ভর করা অবস্থায় (উপুড় হয়ে) বের হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে জান্নাতের কাছে এসে মনে করবে জান্নাত ভর্তি হয়ে গেছে। সে ফিরে এসে বলবে: হে আল্লাহ!জান্নাতকে দেখলাম ভর্তি হয়ে গেছে। আল্লাহ তা‘আলা পুনরায় বলবেন:যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে আবার জান্নাতের কাছে এসে মনে করবে যে, জান্নাত ভর্তি হয়ে গেছে। ফিরে এসে পুনরায় বলবে-আল্লাহ! জান্নাতকে দেখলাম ভরপুর হয়ে গেছে। আল্লাহ তা‘আলা এবার বলবেন: যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমার জন্য সেখানে রয়েছে দুনিয়া ও তার দশগুণ পরিমাণ স্থান।” সহীহ বুখারী, #৬৫৭১ এবং সহীহ মুসলিম, #১৮৬; সহীহ মুসলিম, #১৮৮ এবং মুসনাদ আহমাদ, #১০৮৩২ -এ বর্ণিত।

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:

“আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় এক সকাল অথবা এক সন্ধ্যা কাটানো দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তা হতে উত্তম। আর জান্নাতের মধ্যকার তোমাদের কারো ধনুক বা পা রাখার সমপরিমাণ স্থান দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম।” সহীহ বুখারী, #৬৫৬৮ এবং মুসনাদ আহমাদ, #১৩৩৬৮।

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

“আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জান্নাতকে প্রস্তুত করে রেখেছি যাকে কোন চোখ দেখেনি। কোন কান (যথার্থ) শোনেনি এবং কোন অন্তর কল্পনাও করতে পারে নি।” সহীহ মুসলিম, #২৮২৫ এবং মুসনাদ আহমাদ, #৮৬০৯।

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য বর্ণনায় বলেন:

يُؤْتَى بِأَشَدِّ النَّاسِ بُؤْسًا فِى الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيُصْبَغُ صَبْغَةً فِى الْجَنَّةِ فَيُقَالُ لَهُ يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ بُؤْسًا قَطُّ هَلْ مَرَّ بِكَ شِدَّةٌ قَطُّ فَيَقُولُ لاَ وَاللَّهِ يَا رَبِّ مَا مَرَّ بِى بُؤُسٌ قَطُّ وَلاَ رَأَيْتُ شِدَّةً قَطُّ

অর্থাৎ “দুনিয়ার সবচেয়ে দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত জান্নাতি ব্যক্তিকে বেহেশত থেকে ঘুরিয়ে এনে জিজ্ঞাসা করা হবে-হে আদম সন্তান! তুমি কি দুনিয়াতে কখনো দুঃখ দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছিলে? তোমার উপর দিয়ে কি কোন কঠিন পর্যায় অতিক্রম করেছ? সে বলবে: না। হে আল্লাহ! দুনিয়াতে আমার উপর কখনও দুঃখ-দুর্দশা আসে নি। এবং আমি কোন কঠিন পর্যায়কে অবলোকন করি নি।” সহীহ মুসলিম, #২৮০৭ এবং মুসনাদ আহমাদ, #১২৬৯৯।

যখন আপনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন সেখানে অত্যন্ত সুখে ও শান্তিতে বসবাস করবেন। কোন রোগ-বালাই, যন্ত্রণা, চিন্তা অথবা মৃত্যু সেখানে থাকবে না। আপনার উপরে থাকবে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি। আপনি সেখানে হবেন চিরস্থায়ী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

“আর যারা ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে আমি তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাব যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ প্রবহমান থাকবে। তারা সেখানে থাকবে চিরস্থায়ী। তাদের সাথে থাকবে পবিত্র সঙ্গিনী। আমি তাদেরকে সুশীতল ছায়ায় প্রবেশ করাবো।” (সূরা আন-নিসা: ৫৭)

২. জাহান্নাম থেকে মুক্তি

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং কুফরী অবস্থায় মারা গেছে তারা যদি আযাবের বিনিময়ে সারা পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও দেয় তা গ্রহণ করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর তাদের কোন সাহায্যকারীও নেই।” (সূরা আলে-ইমরান: ৯১)

অতএব, জাহান্নাম থেকে মুক্ত হওয়া ও জান্নাতে প্রবেশ করার এটাই (ইসলাম) একমাত্র সুযোগ। কারণ, কোন ব্যক্তি কাফের অবস্থায় মারা গেলে দুনিয়ায় এসে ঈমান আনার কোন পথ খোলা থাকবে না। কিয়ামতের দিন কাফেরের কি পরিস্থিতি হবে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে তা উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন
“আর আপনি যদি দেখেন, যখন তাদেরকে দোযখের উপর দাঁড় করানো হবে। তারা বলবে: কতই না ভালো হত, যদি আমরা পুনঃপ্রেরিত হতাম; তাহলে, আমরা স্বীয় পালনকর্তার নিদর্শনসমূহে মিথ্যারোপ করতাম না এবং আমরা মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম।” (সূরা আল-আন‘আম: ২৭)

দ্বিতীয়বার তাদের কাউকে আর তাওবার জন্য ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হবে না।

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী দোযখী ব্যক্তিকে দোযখ থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করবেন: হে আদম সন্তান! তুমি কি দুনিয়ায় কখনও সুখ-শান্তির দেখা পেয়েছ? তোমার কাছে কি কখনও সুখের সময় এসেছে? সে বলবে: না, হে আল্লাহ! আমি সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের দেখা পাই নি। সহীহ মুসলিম, #২৮০৭ এবং মুসনাদ আহমাদ, #১২৬৯৯।

৩. আসল সুখ ও আত্মিক শান্তি:

আমরা আল্লাহ তা‘আলার আদেশ নিষেধ মেনে দুনিয়াতে সৌভাগ্য ও আত্মিক শান্তি নিশ্চিত করতে পারি। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেন:

“যারা ঈমান আনে তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা প্রশান্তি লাভ করে।” (সূরা আর-রা‘দ: ২৮)

অপরদিকে যারা আল্লাহ তা‘আলার কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় দুনিয়ায় তাদের জীবন কণ্টকময় হয়ে পড়ে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“আর যে আমার জিকির (স্মরণ) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন নির্বাহের পথ সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।” (সুরা তাহা: ১২৪)

এখান থেকেই আয়াতের ব্যাখ্যা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কেন কিছু কিছু মানুষ প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েও প্রকৃত শান্তি না পেয়ে আত্মহত্যা করে! উদাহরণস্বরূপ— “Cat Stevens” মুসলিম হয়ে “ইউসুফ ইসলাম” নাম ধারণ করেছেন। তিনি ছিলেন বিখ্যাত পোপ-সংগীত-শিল্পী। তার এক রাত্রের আয়ের পরিমাণই ছিল ১,৫০,০০০ ডলার। তিনি ইসলাম গ্রহণ করার পর সত্যিকার শান্তিলাভ করেছেন যা তিনি অর্থের প্রাচুর্য সত্ত্বেও লাভ করতে পারেন নি।

নও-মুসলিমদের ঘটনাসমূহ পড়তে নও-মুসলিমদের-কাহিনী ব্রাউজ করতে পারেন। এই লিংকটিতে আপনি পাবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পেশার নও মুসলিমদের চিন্তা-ভাবনা ও অনুভূতি; যারা বিভিন্নজন বিভিন্ন স্তরের শিক্ষিত ব্যক্তিত্ব, যাদের কৃষ্টি-কালচার ও ভিন্ন ভিন্ন।

৪. সত্যিকার তাওবা দ্বারা বিগত জীবনের গুনাহ ক্ষমা

কেউ যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আল্লাহ তা‘আলা তার বিগত জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দেন। হাদীসে এসেছে—
আমর ইবনুল আস রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন। তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম: আপনার হাত প্রসারিত করুন আমি আপনার হাতে বায়‘আত হব। তিনি তার হাত সম্প্রসারণ করলেন। আমি আমার হাত গুটিয়ে নিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: “তোমার কি হয়েছে হে আমর?” আমি বললাম: আমি শর্ত করতে চাই। তিনি বললেন: “কি শর্ত করতে চাও?” আমি জবাব দিলাম: আমাকে যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তুমি কি জানো না যে, ইসলাম তার পূর্বেকার সবকিছুকে (গুনাহ) ধ্বংস করে দেয়?” সহীহ মুসলিম, #১২১ এবং মুসনাদ আহমাদ, #১৭৩৫৭।

প্রবন্ধটি ইসলামহাউজ.কমে প্রকাশিত ইসলামের সচিত্র গাইড গ্রন্থ থেকে সঙ্কলিত ও সম্পাদিত

Facebook Comments