ভূমিকম্প কেন হয় ? এটা কী কাফেরদের ভয় বা নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য ?

ভূমিকম্প

নাস্তিক প্রশ্ন: ভুমিকম্প আর প্রবল ঘূর্ণিঝড় হবার মূল কারণ কি কাফের বা অবশ্বাসীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন বা তাদের নিধন করা? (Quran 16:45, 29:37,17:68) ? তবে মুসলিম দেশগুলোতে এত ভুমিকম্প সংঘটিত হয় কেন?

উত্তরঃ পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেঃ

“ যারা কুচক্র করে, তারা কি এ বিষয়ে ভয় করে না যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দেবেন কিংবা তাদের কাছে এমন জায়গা থেকে আযাব আসবে যা তাদের ধারণাতীত।”
(কুরআন, নাহল ১৬:৪৫)

“ আমি মাদইয়ানবাসীদের প্রতি তাদের ভাই শুআইবকে প্রেরণ করেছি। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায় তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, শেষ দিবসের আশা রাখো এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করো না। কিন্তু তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী বলল; অতঃপর তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল এবং নিজেদের গৃহে উপুর হয়ে পড়ে রইল।“
(কুরআন, আনকাবুত ২৯:৩৬-৩৭)

“তোমরা কি এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত রয়েছ যে, তিনি তোমাদেরকে স্থলভাগে কোথাও ভূগর্ভস্থ করবেন না। অথবা তোমাদের উপর প্রস্তর বর্ষণকারী ঘুর্ণিঝড় প্রেরণ করবেন না, তখন তোমরা নিজেদের জন্যে কোন কর্মবিধায়ক পাবে না।”
(কুরআন, বনী ইস্রাঈল(ইসরা) ১৭:৬৮)

এখানে সুরা নাহলের ৪৫নং আয়াতে অবিশ্বাসীদেরকে আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করা হচ্ছে। সুরা আনকাবুতের ৩৭নং আয়াতে একটি প্রাচীন জাতির কথা বলা হচ্ছে যারা তাদের নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হয়েছিল। সুরা বনী ইস্রাঈলের ৬৮ নং আয়াতেও অবিশ্বাসীদেরকে আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করা হচ্ছে।

আমরা যদি প্রসঙ্গসহ আলোচ্য আয়াতগুলো পড়ি, তাহলে দেখব যে এখানে কোন জায়গায় ভুমিকম্প, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির মূল কারণের ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি। বরং এই আয়াতগুলোতে অন্য প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে, ভুমিকম্প, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির কারণ তো দূরের প্রসঙ্গ, এখানে ২টি আয়াতে অবিশ্বাসীদেরকে আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। আর অপর আয়াতে একটি প্রাচীন জাতির ধ্বংসের ইতিহাস বর্ণণা করা হয়েছে। ভুমিকম্প, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির মূল কারণ কাফেরদের নিধন করা— এমন কথা এসব জায়গায় বলা হয়নি। বলা হয়েছে যে এগুলোর দ্বারা আল্লাহ মানুষকে শাস্তি দিতে পারেন।

কুরআনের মূল প্রসঙ্গ থেকে দূরে সরে গিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন আরেকটি প্রসঙ্গ নিয়ে এসে মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ এটি।

অভিযোগকারীরা প্রশ্ন তুলেছেনঃ “তবে মুসলিম দেশগুলোতে এত ভুমিকম্প সংঘটিত হয় কেন?”

১৯০০ সাল থেকে এই পর্যন্ত যতগুলো শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে তার মধ্যে মুসলিম দেশ ছিল মাত্র একটি, ইন্দোনেশিয়া! দেখুন- http://earthquake.usgs.gov/earthquak…/…/10_largest_world.php

যেখানেই টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষ হয়, সেখানেই ভুমিকম্প হয়। সেখানে মুসলমান থাকুক আর না থাকুক, কিছুই যায় আসে না। আজকে যদি সব মুসলমান সেখান থেকে সরে যায় এবং হিন্দুরা গিয়ে সেখানে থাকা শুরু করে, তখন ভুমিকম্পটাও সেখান থেকে সরে যাবে না। আল্লাহ তাঁর বানানো মহাবিশ্বের নিয়ম, পদার্থ বিজ্ঞানের আইন মুসলিমদের জন্য আলাদা করে তৈরি করেন নি।

একটা বিষয় আপনাকে মাথায় রাখতে হবে- আল্লাহ্ যদি মুসলিম দেশগুলোকে সবরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখতেন তাহলে কারও কোন সন্দেহ থাকতো না আল্লাহর সম্পর্কে। তখন আর পরীক্ষা বলে কিছু থাকতো না।

এ ছাড়া পবিত্র কুরআন বা হাদিসে মোটেও এ কথা বলা হয়নি যে মুসলিমদের দুনিয়ার জীবনে কোন পরীক্ষা করা হবে না বা বিপদ দেয়া হবে না। বরং উল্টোটিই কুরআন ও হাদিসে বলা আছে।

“ মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, “আমরা বিশ্বাস করি”; এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে।”
(কুরআন, আনকাবুত ২৯:২-৩)

” এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্য্যশীলদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে – “নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই কাছে ফিরে যাবো।” তারাই হচ্ছে সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই সুপথপ্রাপ্ত। ”
(কুরআন, বাকারাহ ২:১৫৫-১৫৭)

দুনিয়ার জীবনের কষ্ট ও দুর্ভোগ মুমিনদের জন্য চূড়ান্তভাবে কল্যাণ নিয়ে আসে।

“নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।অবশ্যই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।”
(কুরআন, ইনশিরাহ ৩৪:৫-৬)

আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ (র)……….আবু সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্নিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল যাতনা, রোগ ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আপতিত হয়, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এ সবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।

[ সহীহুল বুখারী, হাদিস : ৫৬৪২, অধ্যায়: রোগী। অনুচ্ছেদ: রোগের কাফ্ফারা ও ক্ষতিপূরণ]

 

Facebook Comments

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here