আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়

442
আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়
إِذَا جَآءَ نَصۡرُ ٱللَّهِ وَٱلۡفَتۡحُ (١) وَرَأَيۡتَ ٱلنَّاسَ يَدۡخُلُونَ فِى دِينِ ٱللَّهِ أَفۡوَاجً۬ا (٢)
“যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়, এবং আপনি দেখবেন মানুষ দলে দলে আল্লাহ তা’লার দ্বীনে প্রবেশ করছে।”
[সূরা নাছর, ১-২]
কুরআনের এই ছোট্ট সূরা ‘নাছর’ আমরা সাধারণত ছোটবেলাতেই মুখস্ত করি। সলাত আদায়েও অহরহ তিলাওয়াত হয় এই সূরা। অথচ উপলব্ধি করি না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর ﷺ জীবনের সার্থকতা ঘোষণা দেওয়া আয়াতগুলো!
এমনটা তো সত্যিকার মুমিনরা সকলেই চাই, তাই নয় কি? মানুষ দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করুক, আসুক আল্লাহর আদিষ্ট শরীয়াতের ছায়াতলে। কিন্তু কখনও কি প্রশ্ন করি কখন বা কী করলে আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়? আল্লাহ তো ওয়াদা করেছেনই إِنَّ نَصۡرَ ٱللَّهِ قَرِيبٌ۬ (٢١٤) ‘আল্লাহর সাহায্য নিকটে’ (২ঃ২১৪), তাহলে কেন এখনও এই রক্তাক্ত উম্মাহর জন্যও সাহায্য আসছে না? কী করলে আসবে স্বয়ং আল্লাহর সাহায্য?
يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن تَنصُرُواْ ٱللَّهَ يَنصُرۡكُمۡ وَيُثَبِّتۡ أَقۡدَامَكُمۡ (٧)
“ওহে যারা ঈমান এনেছো, যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ রাখবেন।”
[সূরা মুহাম্মাদ, ৭]
وَلَيَنصُرَنَّ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُ ۥۤ‌ۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِىٌّ عَزِيزٌ (٤٠)
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সাহায্য করবেন যারা আল্লাহ তা’লার সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, শক্তিধর।”
[সূরা হাজ্জ, ৪০]
কিন্তু আমরা তো নগন্য বান্দা! আর আল্লাহ সুবহানাহুতা’লা হলেন রব্ব! নগন্য মাখলুক হয়ে স্বয়ং আল্লাহকে কীভাবে সাহায্য করব আমরা? স্বয়ং আল্লাহ তা’লাই দিলেন উত্তর –
لَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا رُسُلَنَا بِٱلۡبَيِّنَـٰتِ وَأَنزَلۡنَا مَعَهُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ وَٱلۡمِيزَانَ لِيَقُومَ ٱلنَّاسُ بِٱلۡقِسۡطِ‌ۖ وَأَنزَلۡنَا ٱلۡحَدِيدَ فِيهِ بَأۡسٌ۬ شَدِيدٌ۬ وَمَنَـٰفِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعۡلَمَ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُ ۥ وَرُسُلَهُ ۥ بِٱلۡغَيۡبِ‌ۚ إِنَّ ٱللَّهَ قَوِىٌّ عَزِيزٌ۬ (٢٥)
“আমি আমার রাসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। আরও নাযিল করেছি ‘হাদীদ’ যাতে রয়েছে প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এইজন্য যে আল্লাহ জেনে নিবেন কে না দেখেই তাঁকে ও তাঁর রাসূলগণকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহই শক্তিধর, পরাক্রমশালী।”
[সূরা হাদীদ, ২৫]
এভাবেই আল্লাহ তা’লা তাঁকে সাহায্য করার উপায়ও স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছেন। হাতে ‘হাদীদ’ তুলে নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনকে সাহায্য করা হল আমাদের দায়িত্ব। তাহলেই চলে আসবে কাঙ্ক্ষিত সাহায্য ও বিজয় – যা আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন মুমিনদের জন্য ওয়াদা করেছেন।
কিয়ামাত পর্যন্ত একদল বান্দা ‘হাদীদ’ উঠিয়ে নিয়ে আল্লাহর সাহায্য করতে থাকবে। আর তাই তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকেও হবে সাহায্যপ্রাপ্ত। ঠিক যেমন সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছিলেন স্বয়ং আল্লাহর রাসূল ﷺ! রাসূলের ﷺ জীবন সায়াহ্নে এসেছিল আকাঙ্ক্ষিত বিজয়। মানুষ দলে দলে প্রবেশ করেছিল আল্লাহর দ্বীনে। তিনি ﷺ যে সেই ‘হাদীদ’ সহকারে প্রেরিত হয়েছিলেন ইবাদাত কেবল আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট করতে!

“আমি কিয়ামত দিবসের পূর্বে তরবারি হাতে এই উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়েছি যে, ইবাদাত কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য বরাদ্দ হয়ে যাবে এবং তাঁর সাথে কোনো শরিক করা হবে না। আমার রিযিক আসে আমার বর্শার ছায়াতল হতে, আর যারাই আমার আদেশের বিরুদ্ধে যাবে তাদের জন্য অপমান (আর লাঞ্ছনা) তাকদিরে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে। আর যেই তাদের অনুকরণ করে সে তাদেরই একজন।”
[মুসনাদে আহমাদ ৪৮৬৯; সহীহ আল জামি’ ২৮৩১]
আর এজন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিলেন? তাঁর ভাষায়,
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوَدِدْتُ أَنِّي أُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ أُحْيَا، ثُمَّ أُقْتَلُ ثُمَّ أُحْيَا، ثُمَّ أُقْتَلُ ثُمَّ أُحْيَا، ثُمَّ أُقْتَلُ ‏”‏‏.‏
“… সেই সত্ত্বার শপথ যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ, আমি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করতে গিয়ে ভালবাসব শহীদ হয়ে যেতে, অতঃপর পুনরুত্থিত হয়ে আবার শহীদ হয়ে যেতে, অতঃপর পুনরুত্থিত হয়ে আবার শহীদ হয়ে যেতে, অতঃপর পুনরুত্থিত হয়ে আবার শহীদ হয়ে যেতে।”
[সহীহ বুখারি, ২৭৯৭]
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম।
তাহলে আমরাও কি আল্লাহর নাযিলকৃত ‘হাদীদ’ উঠিয়ে নিয়ে আল্লাহর সাহয্যে রত হবো, নাকি এক অনুভূতিশুন্য হৃদয় নিয়ে সূরা ‘নাছর’ তিলাওয়াত করে যাব, আর মিথ্যা স্বপ্ন বুনে যাব আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়ের?
রমাদান, ১৪৩৯ হিজরি
Facebook Comments