18.5 C
New York
Wednesday, June 11, 2025

Buy now

spot_img

লিঙ্গ পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতি – রুপান্তরকামী

আমার নাম ক্লো। আমি একজন মেয়ে। কিন্তু একটা সময় আমি নিজেকে ভাবতাম রুপান্তরকামী

আমার বয়স যখন বারো বছর, তখন মনে হলো আমার কী যেন ঠিক নেই। আমি আসলে মেয়ে না। ভুল শরীরে আটকে পড়া একজন মানুষ, একজন ছেলে। আমি ছেলে হতে চাই, মেয়ে হতে চাই নি কখনো।

কেন এমনটা ভাবতাম আমি? আমার শরীরটা ছিল আগাগোড়া মেয়েদের মতো। আমার বয়স যখন নয় তখন আমার বয়োঃসন্ধি হয়। ঝামেলাটা তখন থেকেই শুরু। আমি নিজেকে নিয়ে সুখী হতে পারছিলাম না।

আমার বয়োঃসন্ধি একটু আগে হওয়ায় আমি আমার সমবয়সী মেয়েদের থেকে একটু লম্বা ছিলাম, ছেলেদের সাথে টেক্কা দিতে পারতাম – যেটা নিয়ে আমি মনে মনে বেশ অহংকার করতাম। আমার মনে হতো আমি ঠিক মেয়েদের মতো না, ছেলেদের সাথেই বরং আমি বেশি যাই। কিন্তু একটা পর্যায়ে ছেলেগুলো যখন ‘আরো ছেলে’ হয়ে উঠলো, তখন একটা মেয়ে হিসেবে কী আর ওদের মতো হওয়া যায়? বিষয়টা আমাকে যন্ত্রণা দিত। যে কারণে একাও হয়ে গেলাম, মেয়ে বন্ধুদের হারাতে থাকলাম।

মেয়ে হয়েও নিজেকে ছেলে ভাবার, বা হতে চাওয়ার অন্য একটা কারণও ছিল। যে সমাজে আমি বড় হয়েছি, সেখানে মেয়েরা নিজেদের ‘লুকস’ নিয়ে প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন থাকে। বয়োঃসন্ধি হবার আগ থেকেই আমি খুব করে চাইতাম আমি খুব সুন্দরী হবো, ‘বটম-হেভি’, ‘কার্ভি’ শরীরে আবেদন থাকবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা হলো না। আমি হলাম শুকনো-টিঙটিঙে। এগারো বছর বয়সে ফোন হাতে পেয়ে আমি ইন্সটাগ্রামের অ্যাকাউন্ট খুললাম। ইন্সটাগ্রাম এর জগতটাই শো-অফ। ছেলেদের অ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য মেয়েরা পাগলের মতো কন্টেন্ট বানায়।

এ ধরণের কন্টেন্টে যন্ত্রণা বেড়েই চললো। কিন্তু এসব থেকে দূরে সরিয়ে রাখার মতো অবস্থাও আমার ছিল না। আমি তো চেয়েছিলাম চোখে-লাগার মতো একটা মেয়ে হতে, কিন্তু প্রতিযোগিতায় পেরে উঠার মতো সুন্দরী আমি ছিলাম না। আশে-পাশের মেয়েদের দেখতাম, তাদের সাথে নিজেকে তুলনা করে নিজের ভেতরকার ইনসিকিউরিটি কেবল বেড়েই চললো।

আমার যন্ত্রণায় হাওয়া দিল নারীবাদীদের চিন্তাভাবনা। এরা নারীসুলভ বিষয়গুলোকে এত ঘৃণার চোখে দেখে! মাসিক হওয়া, গর্ভবতী হওয়া, সংসার, বাচ্চা-কাচ্চা সামলানো – এসব বিষয়কে তারা এমনই ভয়ংকর আর বাজেভাবে উপস্থাপন করে যে এসবের প্রতি আমার বিতৃষ্ণা জন্মে গেলো। ওদের কথাবার্তা শুনে আমার মনে হতো সংসার-বাচ্চাকাচ্চা এসব করে হবেটা কী!

সত্যি বলতে, এরকম একটা চাওয়া নিয়ে যে আমি বড় হবো, সেরকমটা ভাবতেই তো আমাকে শেখানো হয় নি। তার উপর আমি ছিলাম বাড়ির ছোটো মেয়ে, একা একা থাকতাম, সংসারের কোনো দায়িত্বই আমার উপর ছিল না। আমার মা-বোন ওরা আমাকে বলতো আমি নাকি ‘টমবয়’ টাইপের। এসবের মাঝে বড় হয়ে আমার নিজেকে মেয়ে হিসেবে ভাবতে ভালোও লাগতো না।

একটা মেয়ে হিসেবে খুশি হওয়ার মতো কোনো কারণই আমি খুঁজে পেলাম না।

সে সময়ে আমি ট্রান্স কমিউনিটির বিভিন্ন মানুষের সাথে আমার পরিচয় হতে লাগলো। আমি আবিষ্কার করলাম আমার মতো অনেক মেয়ে আছে যারা নিজেদের ‘নারী’ পরিচয় নিয়ে নিজের মনের মধ্যে কুস্তি খেলছে। জানলাম মনের লিঙ্গই আসল লিঙ্গ। ওরা একজন আরেকজনকে অনেক সাপোর্ট দিত। আমার সেটা দেখে বেশ ভালো লাগতো। মনে হতো আমিও যদি এরকম সাপোর্ট পেতাম খুব ভালো হতো।

আমি নিজের মধ্যে কিছু পুরুষালি বৈশিষ্ট্য দেখতে চাইতাম। নারীসুলভ ব্যাপারগুলো ভালো লাগতো না।

এক পর্যায়ে ভাবতে শুরু করলাম, আমি বুঝি ছেলে। আমাকে ছেলেই হতে হবে।

আমি একজন রুপান্তরকামী – আগাগোড়া নারীর শরীরে আটকে পড়া পুরুষ।

আমার বয়স যখন বারোয় ঠেকলো, আমার সত্যি সত্যিই মনে হলো আমি মেয়ে না, আমি একটা ছেলে। আমার কাছের কিছু বন্ধুবান্ধবদের বিষয়টা বললাম। আমার বাবা-মাকে সরাসরি বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না, তাই চিঠি লিখে জানালাম।

‘তোমাদের ক্লো তোমাদের ছেলে।

আজ থেকে তোমরা আমাকে এই নামে ডেকো না, নতুন নামে ডেকো।’

ওরা প্রচণ্ড ধাক্কা খেলো। ধাক্কা খাওয়ারই কথা ছিল। ওরা এসব বুঝতো না। তবে ওরা আমাকে সাহায্য করতে চাইলো। ভাবলো কোনো বিশেষজ্ঞের সাথে আলাপ করবে, থেরাপিস্টের কাছে নিয়ে যাবে। আমি যার কাছে প্রথমে গেলাম, সে আমার কাছে কোনো কিছু ঠিকমতো জানতেও চাইলো না।

আমার হিস্ট্রি, আমি কেমন কী বোধ করি – কিছুই না। আর আমিও আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম ছেলে হতে চাওয়ার জন্য যা যা করার তাই করবো। আমার এই চাওয়াটা কতটুকু ঠিক, এটা কি আমার আবেগী মনের খেয়াল নাকি কোনো মানসিক সমস্যা – এই ব্যাপারে সে কোনো কিছু বোঝার বা বোঝানোর চেষ্টাও করেনি। দ্বিতীয় আরেকজনের কাছে গেলাম, সেও একই রকম। সবকিছুতেই ‘হ্যাঁ হ্যাঁ’ করতো।

আমি আমার বাবা-মাকে জানালাম, আমি ছেলে, আমি ছেলে হতে চাই, আমার শরীরকে মেডিক্যাল ট্রানজিশনের মাধ্যমে ছেলেদের মতো বানাতে হবে। ওরা প্রথমে আপত্তি করলো। আমি খুব করে চাপাচাপি করতে লাগলাম। আমার বয়স তখন তেরো বছর। ডাক্তার আমার বাবা-মাকে বললো, আমার সুস্থতার জন্য একটা রাস্তাই খোলা আছে আর সেটা হচ্ছে মেডিক্যাল ট্রানজিশনের মাধ্যমে ছেলে হয়ে যাওয়া।

আমার ‘মন’ বলছে আমি ছেলে, আমার শরীর বলছে আমি মেয়ে। এই সমস্যার নাম জেন্ডার ডিসফোরিয়া। ওরা বললো এর একমাত্র সমাধান ছেলেদের হরমোন প্রয়োগ এবং সার্জারির মাধ্যমে আমার মেয়েলি শরীরকে পুরুষের শরীরে রুপান্তর করা। শরীর আর মনকে এক সমতলে আনতে এটাই করণীয়।

আমার সমস্যা ছিল মানসিক, ওরা বললো সার্জারি করলে ঠিক হয়ে যাবে। আমার বাবা-মা জানতে চাইলো এই পদ্ধতিতে গেলে এমন কি হতে পারে যে আমি পরে আমার রুপান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়ে আফসোস করছি? ওরা কথাটাকে উড়িয়ে দিলো। তারা বোঝালো আমি এই ট্রানজিশন সার্জারির মাধ্যমে সত্যিকারের পরিচয়, সত্যিকারের ‘আমি’কে খুঁজে পাবো। ‘জেন্ডার আইডেন্টিটি’ নিয়ে আমার কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে না। তারা ভয়ও দেখালো যদি আমি এই সার্জারি না করি তাহলে আমি সুইসাইড করে বসতে পারি। তারা অভয় দিল, আমার দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, হতাশা – এসব সমস্যা কেটে যাবে।

শেষ পর্যন্ত আমার ট্রানজিশন সার্জারিতে বাবা-মা রাজি হল। একজন এনডক্রিনোলজিস্টের সাথে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। সে বললো আমার এটা করা ঠিক হবে না। সেজন্যই সম্ভবত অন্য আরেক এনডক্রিনোলজিস্টের কাছে আমাকে রেফার করা হলো। সে কোনো আপত্তি করলো না, আমাকে একটা কনসেন্ট ফর্মে সাক্ষর করতো বললো এই মর্মে যে হরমোন নেওয়ার ব্যাপারে আমার আপত্তি নেই। আমি আর আমার মা সাক্ষর করলাম। কনসেন্ট ফর্মে হরমোনের সাইড ইফেক্ট এর ব্যাপারে তেমন কোনো তথ্যই ছিল না। আর আমিও এসব পাত্তা দিই নি।

আমি হরমোন নেওয়া শুরু করলাম। হরমোনের প্রভাবে স্বাভাবিকভাবেই বাহ্যত আমার শরীরে বেশ কিছু পুরুষালি ভাব প্রকাশ পেতে থাকলো। নিজেকে খুব চমৎকার দেখাচ্ছিল তা নয়, তবে প্রথম প্রথম আমার ভালোই লাগছিল। মনে হচ্ছিল যেন নিজের শরীরের ওপর শেষ পর্যন্ত বুঝি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি!

এই যে প্রথম প্রথম ভালো লাগা — এটা ছিল টেস্টোস্টেরনের সাময়িক প্রভাব। ড্রাগ যেমন শরীরে একটা উত্তেজনা তৈরি করে, টেস্টোস্টেরনের প্রভাবটাও তেমন। খুব উৎফুল্ল বোধ করতাম এবং সেটাকে স্বাভাবিক ‘পুরুষালি অনুভূতি’ মনে করে ভেবেছি আমি বোধহয় সুস্থতার দিকে এগোচ্ছি। শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন নিতে শুরু করলাম, যে কারণে আমার যৌন চাহিদা এতটাই যে আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারছিলাম না এবং এক পর্যায়ে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ি।

আমার বন্ধুরা অনেকেই রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে, আর আমি আমার ‘জেন্ডার আইডেন্টিটি’ নিয়ে প্রচণ্ড সংকটে। বাধ্য হয়ে ডেটিং অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুললাম কাউকে পাবার আশায়। আমার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেল। আমি হয়তো কাউকে চাচ্ছি, কিন্তু স্ক্রিনের অপরপাশে যে আছে সে আমার নিতান্তই ইন্টিমেট ছবি দেখতে চাইছে – বোঝার উপায় নেই আসলেই কী সে আমায় চায়? আমার মনে বিষাদের ছায়া আরো গাঢ় হলো।

যেহেতু আমি ‘ছেলে’, তাই মাসিক বন্ধ করার জন্য ‘পিরিয়ড ব্লকার’ নিতে শুরু করলাম। সে সময়টা প্রচণ্ড অবসন্নতায় ভুগতাম। টেস্টোস্টেরন নেওয়ার আগ পর্যন্ত সেরকম থাকতাম। টেস্টোস্টেরন নেওয়ার পর আবার শরীরে শক্তি ফিরে পেতাম। কিন্তু সেটা ছিল সাময়িক। মনের মধ্যে কোনো স্বস্তি ছিল না। এক বছর ধরে হরমোন নেওয়ার পর মানসিক সমস্যার সাথে যুক্ত হলো শারীরিক নানা সমস্যা। প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হয়ে গেল। বারবার টয়লেটে যেতাম, ঠিকমত প্রস্রাব পরিষ্কার হতো না, কখনও কখনো রক্তপাতও হতো। টেস্টোস্টেরন নেওয়া বন্ধ করলাম, অবস্থা আরো খারাপের দিকে গেলো। যারা আমাকে বলেছিল রুপান্তরিত হলে আমার সমস্যাগুলো চলে যাবে, তারা এসবের কথা আমাকে কিছুই বলে নি, সেই ‘কনসেন্ট ফর্মে’ এসবের কিছুও লেখা ছিল না।

আমি ‘ছেলে’তে রুপান্তরিত হবার চেষ্টা তখনও করে যাচ্ছিলাম। মা-কে বললাম বাইন্ডার কিনে দিতে, যেন আমার বুক দেখে বোঝা না যায় আমি একটা মেয়ে। প্রচণ্ড টাইট এই জিনিসটা বুকে পরতে হয় যেন বুকটা চ্যাপ্টা হয়ে থাকে। সারাদিন এটা পরে থাকতে আমার খুবই অসুবিধা হতো, কিন্তু এটাও চাইতাম না কেউ আমাকে দেখে মেয়ে ভাবুক। কারণ আমার মন তো বলছে ‘আমি ছেলে।’

এক পর্যায়ে অতিষ্ট হয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ডবল ম্যাসেকটমি করাবো – আমার স্তন কেটে ফেলে দেব, পুরোদস্তুর ছেলেদের মতো হয়ে যাবো। ম্যাসেকটমি করা হয় ব্রেস্ট ক্যান্সারের সেসব রোগীদের যাদের ক্যান্সার সর্বশেষ পর্যায়ে ঠেকেছে। আমি একজন জেন্ডার স্পেশালিস্ট এর শরণাপন্ন হলাম। আমাকে বুঝিয়ে বলা হলো ম্যাসেকটমি সার্জারি কীভাবে করে জেন্ডার ডিসফোরিয়া নিরাময় করে। এসব ছিল ওদের প্রপাগান্ডা যেটা তখন বুঝতে পারিনি। হাসপাতালে দেখলাম আমার মতো আরো অনেকে এই সার্জারি করার জন্য এসেছে। তাদের দেখে আমি ভাবলাম, আচ্ছা আমি তো একা না, অনেকেই তো আমার মতো আছে।

আমার বয়স পনেরো হলো। ততদিনে প্রায় দুই বছর ধরে আমি শরীরে ছেলেদের হরমোন নিচ্ছি। আমার মেয়েলী শরীরের স্থানে স্থানে পুরুষালী ভাব। দীর্ঘদিন ধরে বাইন্ডিং পরার কারণে আমার স্তনের আকার নষ্ট হয়ে গেছে। আমার শরীরকে নিয়ে আমার নিরাপত্তাহীনতার বোধ তখন চরমে পৌঁছলো। আমি ম্যাসেকটমি করে স্তন কেটে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকলাম। আমি জানতাম এটা করলে আমি কখনো বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারবো না। কিন্তু তাতে কী? আমি তো ভাবতাম আমি বাচ্চাকাচ্চা নেব না, আমি ছেলে, স্তন দিয়ে করবোটা কী! আসলে কী সমস্যা হতে পারে সেসব বোঝার মতো অবস্থা আমার ছিলই না।

যাই হোক, আমি ম্যাসেকটমি করালাম, আমার মনে তখন বিজয়ের অনুভূতি – আমাকে ওরা বোঝালো আমি অনেক বড় কিছু অর্জন করেছি।

‘রুপান্তর’ সফল হয়েছে। ট্রান্স কমিউনিটি থেকে অনেক বাহবা পেলাম।

তবে কিছুদিন পর আমি বাস্তবতায় ফিরতে শুরু করলাম। আমার নিজের শরীর নিয়ে অস্বস্তি লাগছিল, কেমন যেন অদ্ভূত অনুভূতি। ওরা কিছুদিন পর স্টিচ খুললো, আমার বুকে তখন কালো ক্ষতের দাগ, চামড়াগুলো যেন পুড়ে গেছে, কীসব ফ্লুইড বের হচ্ছে। ওরা আমার ‘লুকস’ ছেলেদের মতো বানানোর জন্য অজস্র কাঁটাছেঁড়া করলো। নিজেই নিজেকে দেখে পাগল হয়ে গেলাম, উফ, এত বীভৎস! সহ্য করতে পারছিলাম না…

কয়েক মাস পর মনে হতে লাগলো, আমি তো আগেই ভালো ছিলাম, সুন্দরী ছিলাম। আমার আগের সেই নরম মেয়েলী শরীরটাই তো আমি চাই। কিন্তু ততদিনে আমি আর আগের সেই নেই, ‘ছেলেদের মতো’ হয়ে গেছি। আমি খুব করে চাচ্ছিলাম আমি আবার আগের মতো হয়ে যাই। যখন বাসায় কেউ থাকতো না, আমি স্কার্ট পরে মেয়েদের মতো সাজগোজ করে নিজেকে দেখতাম, ভালো লাগতো। আমার দুঃখ কেবল বাড়তেই লাগলো।

সার্জারির এগারো মাস পর আমি নিশ্চিত হলাম আমি ভুল করেছি। আমি একটা মেয়ে, আমি আসলে মেয়েই হতে চাই। আমি সাইকোলজি নিয়ে কিছু পড়াশোনা করলাম। বাচ্চাদের ব্যাপারে, প্যারেন্টিং নিয়ে কিছু জানলাম। আমি আবিষ্কার করলাম, সার্জারি করে শরীর থেকে যে অঙ্গটি আমি ফেলে দিয়েছি, সেটা স্রেফ শরীরে একটা অঙ্গ না। আমি একটা বাচ্চাকে আদর আর ভালোবাসা দেওয়ার ক্ষমতাটুকুও হারিয়েছি। এত কষ্ট লাগছিল আমার!

এক রাতে কাঁদতে কাঁদতে আমি ভেঙ্গে পড়লাম। আমার মা-কে টেক্সট করে আমার কাছে আসতে বললাম। আমি স্বীকারও করতে পারছিলাম না এতদিন ধরে যা করেছি সব পাগলামি করেছি। আমার খুব খারাপ লাগছিল এই ভেবে যে আমি আমার বাবা-মায়ের সম্মান, সময়, লাখ লাখ টাকা-নষ্ট করে সব হারিয়েছি, কিছুই পাইনি।

সেদিনের পর থেকে আমি হরমোন নেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দিই। কিন্তু সেই হরমোনের প্রভাবে আমি আজ পর্যন্ত ভুগে চলেছি। কিন্তু আমি যা হারিয়েছি তা আর কখনোই ফিরে পাবো না। প্রতিদিন আমার বুকে ক্ষতস্থানে আমাকে ব্যান্ডেজ পরতে হয়। আমার প্রস্রাবের সমস্যাও আজো রয়ে গেছে, খানিকবাদেই টয়লেটে যেতে হয়। এসবের কোনো চিকিৎসাও নেই।

আমার বয়স আজ আঠারো, অথচ আমি সেক্সুয়ালি ডিসফাংশনাল। শারীরিকভাবে এমন কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যেসব সমস্যা চল্লিশ পেরোনো মেনোপজ মহিলাদের হয়।

আমি পাগলামির বয়সটায় আমি জানতাম না একদিন আমি মা হতে চাইবো।

আমি আজ চাই, কিন্তু জানিনা মা হতে পারবো কিনা।

ওরা বলেছিল মেয়ে থেকে ছেলেতে ‘রুপান্তর’ হলে আমি একদম ঠিক হয়ে যাবো।

কিন্তু ‘রুপান্তর’ আমাকে ভেঙ্গেচুরে শেষ করে দিয়েছে।

যারা আমাকে এই পথে ঠেলে দিয়েছিল, বাহবা দিয়েছিল, তারা কেউ আমার পাশে নেই।

‘রুপান্তরকামী’ হয়ে আমি আজ আমি শরীর খুইয়েছি, মন হারিয়েছি।

আমি একটা মেয়ে হতে চাই। ছেলের মতো নয়, মেয়ের মতো মেয়ে।

(লেখাটি অ্যামেরিকান অ্যাক্টিভিস্ট ক্লো কোল– যিনি একজন ডি-ট্রানজিশনার, তার একটি পডকাস্টের আলোচনা থেকে অনুলিখন করা হয়েছে।)

কার্টেসি: Zim Tanvir

Facebook Comments

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

[td_block_social_counter facebook="tagdiv" twitter="tagdivofficial" youtube="tagdiv" style="style8 td-social-boxed td-social-font-icons" tdc_css="eyJhbGwiOnsibWFyZ2luLWJvdHRvbSI6IjM4IiwiZGlzcGxheSI6IiJ9LCJwb3J0cmFpdCI6eyJtYXJnaW4tYm90dG9tIjoiMzAiLCJkaXNwbGF5IjoiIn0sInBvcnRyYWl0X21heF93aWR0aCI6MTAxOCwicG9ydHJhaXRfbWluX3dpZHRoIjo3Njh9" custom_title="Stay Connected" block_template_id="td_block_template_8" f_header_font_family="712" f_header_font_transform="uppercase" f_header_font_weight="500" f_header_font_size="17" border_color="#dd3333"]
- Advertisement -spot_img

Latest Articles