20.5 C
New York
Wednesday, June 11, 2025

Buy now

spot_img

তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের একজন ‘সেলিব্রিটি’ – আরিফুল ইসলাম

তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের একজন ‘সেলিব্রিটি’। তিনি যে পারফিউম ব্যবহার করতেন সেটা এতোটাই ইউনিক ছিলো যে, রাস্তা দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে বুঝতে পারতো, একটু আগে ‘তিনি’ এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেছেন।

এই সময়ে ‘সোনার চামচ’ মুখে নিয়ে জন্মানো একজন ছেলের যে ফিচারগুলো থাকতে পারে: হাতে Rolex এর ঘড়ি, পকেটে i-phone X, পরনে Armani স্যুট, আর Lambirghini কার।

আমাদের আজকের গল্পের মানুষটিও ‘সোনার চামচ’ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

মুস’আব ইবনে উমাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু। আরবের প্রখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। বড়লোক বাবা-মা’র সন্তান। তখনকার সবচেয়ে দামী জামা গায়ে দিয়ে তিনি যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটতেন, তাঁর জামা তখন রাস্তার ধুলোময়লা মুছে নিয়ে যেতো। এতো বড় জামা ছিলো যে, জামা মাটি পর্যন্ত গড়াতো। জুতোর ক্ষেত্রে তখনকার সময়ের সবচেয়ে মূল্যবান ব্রান্ড ছিলো ইয়েমেনী জুতোর। তাঁর পায়ে সেরা ব্রান্ডের সেরা জুতো থাকতো। তিনি যে সুগন্ধি ব্যবহার করে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতেন, সেই সুগন্ধির সুভাষ অনেকক্ষণ রাস্তায় থেকে যেতো। মানুষ বুঝতে পারতো, এই রাস্তা দিয়ে একটু আগে মুস’আব হেঁটে গেছেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সম্পর্কে বলেন, “মক্কায় মুস’আবের চেয়ে সুদর্শন আর উৎকৃষ্ট পোশাকধারী আর কেউ ছিলো না।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কালিমার দাওয়াত দেওয়া শুরু করলেন, সেই খবর মুস’আবের কাছে পৌঁছলো। তিনি চলে গেলেন দারুল আরকামে, যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে মিটিং করতেন।

দারুল আরকাম, যাকে এখনকার সময়ের টাউন হল মিটিং এর সাথে তুলনা করা যায়। সেখানে গিয়ে দেখা হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ এ মুস’আব ইবনে উমাইর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন।

এটা ছিলো সেই সময় যখন কেউ মুসলমান হলে তাঁর উপর নেমে আসতো অকথ্য নির্যাতন। খাব্বাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর চামড়া পোড়ানো হয়েছে, বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উত্তপ্ত রোদের মধ্যে অত্যাচার করা হয়েছে।

এইরকম সময়ে একজন মানুষ যিনি এখনকার সময়ের কথা চিন্তা করলে বলা যায় এসির রুমে বসে থাকার কথা, তিনি কিনা নিজের জীবনকে ‘ঝুঁকি’র মধ্যে ফেলে দিয়ে সাক্ষী দিচ্ছেন ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নাই’!

সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করা মুস’আব ইবনে উমাইর এর ইসলাম গ্রহণের কথা তাঁর মা খুন্নাস বিনতে মালিক জেনে যান। মা তাকে একটা ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখেন এবং চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন ইসলাম ত্যাগ করার জন্য।

কিন্তু যে মুস’আব সত্যের সন্ধান পেয়েছেন তিনি কিভাবে পারেন এই বন্দিত্বের শৃঙ্খলের ভয়ে সত্য ত্যাগ করতে? মায়ের প্রস্তাব কোনোভাবে মানলেন না তিনি।

একদিন গার্ডরা তাঁর বাঁধন কিছু সময়ের জন্য খুলে দিলে এই সুযোগ লুফে নিলেন মুস’আব। ছুটলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে। তখন মুসলমানদের একটা দলকে আবিসিনিয়ায় হিজরতে পাঠানো হচ্ছে। মক্কার নিরাপদ জীবন, আর নিজের সমস্ত সম্পদের মায়া ত্যাগ করে পলিটিকাল রিফিউজি হিসেবে পাড়ি জমান আবিসিনিয়ায়।

গুজবে কান দিয়ে তিনি যখন আবিসিনিয়া থেকে মক্কায় ফিরেন তখন আবার দেখা হলো তাঁর মায়ের সাথে। মা আবার তাকে বন্দি করার ভয় দেখান। তিনি মাকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং পাল্টা হুমকি দেন, গার্ডরা যদি তাকে বন্দি করতে চায় তাহলে তিনি তাদেরকে হত্যা করবেন।

ছেলের মুখ থেকে এমন কথা শুনে মা রেগে বললেন, “এখন থেকে তাহলে তোমাকে কোনো সম্পদ দেওয়া হবেনা, তুমি সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত”।

যে মুস’আব আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করতেন, ইসলাম গ্রহণের জন্য সেই মুস’আবকে তাঁর মা ‘ত্যাজ্যপুত্র’ ঘোষণা করেন! অভাব অনটনের কথা চিন্তা না করে মুস’আব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইসলামের প্রতি অটল থাকেন।

একবার মুস’আব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটা মিটিং এ উপস্থিত হন। তাকে দেখে সাহাবীরা চোখ নামিয়ে ফেলেন, কেউ কেউ কান্না শুরু করেন। কারণ তাঁর পরনে ছিলো তালি দেওয়া এক জীর্ণ জোব্বা। যে মুস’আব আরবের সবচেয়ে দামী জামা পরতেন, যে মুস’আব ছিলেন আরবের একজন মডেল, ইসলাম গ্রহণ করার পর সেই মুস’আবের গায়ে কিনা তালি দেওয়া এক জীর্ণ জামা!

ইসলাম মেনে চলতে গিয়ে নিজের বিলাসী জীবন ত্যাগ করতে বিন্দুমাত্র বিচলিত ছিলেন না এই সাহাবী।

তাকে এই অবস্থায় দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “…মুস’আব এসবকিছু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করে এসেছে এবং সে রাসূলের কাজে নিবেদিত করেছে।”

প্রথম আকাবার শপথের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুস’আব ইবনে উমাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইসলামের প্রথম এম্বাসেডর হিসেবে মদীনায় প্রেরণ করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় মদীনার অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে।

উহুদ যুদ্ধের দিন মুস’আব ইবনে উমাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু পান ইসলামের পতাকা বহন করার মহান দায়িত্ব। যুদ্ধের ময়দানে যখন গুজব রটলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাহাদত বরণ করেছেন তখন অনেক সাহাবী যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকলেন। কিন্তু মুস’আব ইবনে উমাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু যুদ্ধ চালিয়ে যেতে লাগলেন আর ঘোষণা করতে লাগলেন ‘ওয়ামা মুহাম্মাদুন ইল্লা রাসূল, কাদ খালাত মিন কাবলিহির রাসূল’ – মুহাম্মদ একজন রাসূল ছাড়া কিছুই নন, তাঁর পূর্বে বহু রাসূল অতিবাহিত হয়েছেন।

কাফিররা তাঁর ডান হাত কেটে ফেললে তিনি বাম হাতে পতাকা তুলে ধরেন। তাঁর বাম হাতটি কেটে ফেললে তিনি দুই হাতের বাহুর মাঝখানে ইসলামের ঝাণ্ডা তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে একটা তীর এসে তাকে আঘাত করে। তীরের আঘাতে তিনি শহীদ হন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজীউন)

যুদ্ধ শেষে যখন লাশগুলো দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছিলো, তখন মুস’আব (রাদিয়াল্লাহু আনহুর) জন্য ছিলো মাত্র এক টুকরো কাপড়। যে কাপড় দিয়ে মাথা ঢাকলে পা খালি থেকে যায়, পা ঢাকলে মাথা খালি থেকে যায়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ টুকরো কাপড় দিয়ে তাঁর মাথা আর ‘ইখলিস’ নামক ঘাস দিয়ে পা ঢেকে দিতে বলেন।

তিনি কাঁদতে কাঁদতে তেলাওয়াত করেন:

مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عٰهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُم مَّن قَضٰى نَحْبَهُۥ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا

মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত তাদের প্রতিশ্রুতি সত্যে বাস্তবায়ন করেছে। তাদের কেউ কেউ [যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করে] তার দায়িত্ব পূর্ণ করেছে, আবার কেউ কেউ [শাহাদাত বরণের] প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা (প্রতিশ্রুতিতে) কোন পরিবর্তনই করেনি।
[ সূরা আহযাব ৩৩:৩৩]

তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দেন, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি এরাই হলো শহীদ। তোমরা আসো, তাদের দেখে যাও। সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, কিয়ামতের আগ পর্যন্ত যারাই তাদেরকে সালাম দেবে, তাদেরকে তারা সালামের উত্তর প্রদান করবে।”

আসসালামু আলাইকুম ইয়া মুস’আব
আসসালামু আলাইকুম মা’শার আশ-শুহাদা।
– আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক হে মুস’আব
– সকল শহীদদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।

[ইসলাম মেনে চলতে গিয়ে যখন সুদ খাবার অফার আসে, ইসলাম মানতে গিয়ে যখন ঘুষ খাবার অফার আসে, ইসলাম মানতে গিয়ে যখন হারাম উপার্জনের অফার আসে তখন আমরা মুস’আব ইবনে উমাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কথা স্মরণ করতে পারি।
ইসলাম মানতে গিয়ে যিনি বিসর্জন দিয়েছিলেন বিলাসী জীবন, ইসলাম মানতে গিয়ে যিনি ‘নিরাপদ’ ক্যারিয়ারের মায়া ত্যাগ করে বেছে নিয়েছিলেন দুর্গম পথ।

ইসলাম মানতে গিয়ে যখন দেখবো জীবন সংকটময় হয়ে উঠছে, যখন দেখবো আয়-উপার্জনের রাস্তা সংকুচিত হয়ে আসছে তখন স্মরণ করতে পারি এই মহান সাহাবীকে; ইসলাম গ্রহণের আগে যার জামা মাটির ধুলোবালি মুছে নিতো আর ইসলাম গ্রহণের পর দাফনের সময় শরীর পুরোপুরি ঢাকার মতো জামা ছিলো না।]


instagram garantili takipçi satın al

Facebook Comments

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

[td_block_social_counter facebook="tagdiv" twitter="tagdivofficial" youtube="tagdiv" style="style8 td-social-boxed td-social-font-icons" tdc_css="eyJhbGwiOnsibWFyZ2luLWJvdHRvbSI6IjM4IiwiZGlzcGxheSI6IiJ9LCJwb3J0cmFpdCI6eyJtYXJnaW4tYm90dG9tIjoiMzAiLCJkaXNwbGF5IjoiIn0sInBvcnRyYWl0X21heF93aWR0aCI6MTAxOCwicG9ydHJhaXRfbWluX3dpZHRoIjo3Njh9" custom_title="Stay Connected" block_template_id="td_block_template_8" f_header_font_family="712" f_header_font_transform="uppercase" f_header_font_weight="500" f_header_font_size="17" border_color="#dd3333"]
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

adana escort

izmir escort

türk ifşa

porno

tiktok takipçi satın al

escort

smm panel

takipçi satın al

manavgat escort

buca escort

alanya escort

çeşme escort

alsancak escort

görükle escort

türk porno

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

takipçi satın al

izmir escort escort izmir izmir escort bayanlar urlexpander.edu.pl dnswhois.edu.pl createaform.com obio.link muzikindirdinle.com izlexl.com downloadbu.com xcryptotrack.com scriptsnulled.net