ইসলামে স্বাধীনতার অর্থ

318

ইসলামে স্বাধীনতা বলতে নাস্তিক্যবাদী শ্লোগানগুলোর মতো অনিয়ন্ত্রিত বা নামমাত্র নিয়ন্ত্রিত স্বাধিকার বুঝায় না।

ইসলাম একটি বাস্তববাদী ও ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গির ধর্ম। এতে তাই স্বাধীনতা একটি আপেক্ষিক বিষয়। কেননা মানুষ আল্লাহ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত স্বয়ংক্রিয় নিয়মের এক বিশাল জালের ভেতর আবদ্ধ, যা এ মহাবিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে।

আল্লাহ তা‘আলাই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। এতে যা কিছু হচ্ছে তা সরাসরি তাঁর নির্দেশ কিংবা তাঁর সৃষ্ট স্বয়ংক্রিয় নিয়মের মাধ্যমেই পরিচালিত হচ্ছে। এ মহাবিশ্বে কোনো কিছুই তাঁর নির্দেশ বা ইঙ্গিত ছাড়া হয় না। আর তিনি তাঁর সৃষ্টির ওপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।

তবে এর অর্থ এই নয় যে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে মানুষের জীবন প্রণালী কেমন হবে সে রায় দিয়ে দিয়েছেন। অনেকে যেমন তাকদীরের ইসলামী আকীদাকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করে থাকেন।

বস্তুত তাকদীর হলো, বান্দার যাবতীয় কাজ-কর্মের পূর্ব লিখন। যা কেবল স্রষ্টার নিরংকুশ জ্ঞান নির্ভর। এটি এমন এক জ্ঞান যা কোনো স্থান, কাল বা সসীম ইন্দ্রীয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এমন জ্ঞান, যা সর্বস্থান ও সর্বকালের সব বস্তুকে পূর্ণভাবে বেষ্টন করে রেখেছে।(১)

মানুষের স্বাধীনতা দায়বদ্ধ তার স্রষ্টার প্রতি, যিনি তাদেরকে বানিয়েছেন পৃথিবীতে তাঁর বান্দারূপে, যিনি সকল সৃষ্টিকে করেছেন তাদের অনুগত।

অগণিত সৃষ্টিকে তিনি মানুষের বশীভূত বানিয়েছেন যাতে তারা সাময়িক জীবনে এসবকে নি‘আমত হিসেবে গ্রহণ করে। এসবকে বশে এনে যাতে অর্জন করতে পারে পরকালীন জীবনের শাশ্বত সুখ।

মৌলিকভাবে এ দায়িত্ব বর্তায় তার আকল-বুদ্ধি, হেদায়াত-সুপথ (আসমানী শিক্ষা) এবং অনিবার্য পরিণামধারী উপকরণ নির্বাচনের স্বাধীনতার ওপর। একইভাবে সে নিজের প্রতি এবং অন্যান্য সৃষ্টির প্রতিও দায়বদ্ধ।

লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, সাধারণ অবস্থায় মানুষের পক্ষে মহাজাগতিক নিয়মের বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সে আসমানী শিক্ষাকে উপেক্ষা করতে পারে। যদিও তা হবে বিশেষভাবে চিরস্থায়ী জীবনে তার প্রত্যাবর্তনস্থলের হিসাবে। সুতরাং স্বাধীনতা মুফতে আসবে না, আর মুফতে তা সংরক্ষণ করা সম্ভবও নয়।

এক ধাপ এগিয়ে বলা যায়, মানুষের স্বাধীনতা যে জনসমষ্টির মধ্যে সে বাস করে তার বিশ্বাস ও চেতনার সঙ্গে জড়িত। চাই সে জনসমষ্টি পরিবার হোক কিংবা সেই কর্মস্থল সংগঠন হোক। আর যা ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সাধারণ ব্যাপারগুলোতে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতের অনুসারী। একটি দেশে একটি জনসমষ্টির ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য বিশ্ব-সমাজ বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তাই প্রযোজ্য।

চুক্তির নিয়ম হলো, মানুষ যখন সদস্য হিসেবে সুবিধাদি ভোগ করার জন্য স্বেচ্ছায় কোনো কিছু নিজের জন্য অপরিহার্য করে নেয় কিংবা কোনো জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়, তখন তাকে চুক্তির সময়সীমা অতিক্রম কিংবা দ্বিতীয় পক্ষের চুক্তি প্রত্যাহার পর্যন্ত এর ধারাগুলো মেনে চলতে হয়। অন্যথায় তাকে ভোগ করতে হয় শাস্তি।

এসব চুক্তি সত্ত্বেও মানুষের অনেক বিষয়ে পর্যাপ্ত স্বাধীনতা রয়েছে। নশ্বর ইহকালের বিচারে কিংবা শাশ্বত পরকালের মানদণ্ডে ভালো-মন্দ গ্রহণের স্বাধীনতা ছাড়াও মানুষ বহুবিধ স্বাধীনতার অধিকারী। এসবই গ্রহণীয় বা অগ্রহণীয় বিভিন্নতা ও বৈচিত্র্যের পরিচায়ক।

সুতরাং বৈষম্য ও বিভিন্নতা মানব সমাজের কল্যাণ সাধনে অন্যতম অপরিহার্য প্রাকৃতিক গুণ। অন্যথায় মানুষের জরুরি প্রয়োজনাদি ও সুখ-সমৃদ্ধি অর্জনে সহজাত সম্পদগুলোকে কাজে লাগাতে প্রেরণদায়ী প্রতিযোগিতা দুর্বল হয়ে পড়বে। তাছাড়া মানুষের পরিচয় ও পারস্পরিক সহযোগিতার জন্যও এই বিভিন্নতা অপরিহার্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَاٱلنَّاسُإِنَّاخَلَقۡنَٰكُممِّنذَكَرٖوَأُنثَىٰوَجَعَلۡنَٰكُمۡشُعُوبٗاوَقَبَآئِلَلِتَعَارَفُوٓاْۚإِنَّأَكۡرَمَكُمۡعِندَٱللَّهِأَتۡقَىٰكُمۡۚإِنَّٱللَّهَعَلِيمٌخَبِيرٞ١٣﴾ [الحجرات: ١٣]
“হে মানুষ, আমরা তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১৩]

লেখক – ড. সাঈদ ইসমাঈল চীনী
====================================
রেফারেন্স –

১) ইসমাঈল, কাশফুল গুয়ুম: ৫৫-৫৬ পৃ.।

লেখাটি #শেয়ার করে দাওয়াতি কাজে সাহায্য করুন!
————————————————————
► Website: www.articlebari.com
► Facebook: www.facebook.com/articlebari

Facebook Comments