ইসলামের যে বিধানগুলো আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে তার অন্যতম হলো স্ত্রীর মোহর। বিয়ের কারণে নারীর সতীত্ব রক্ষার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের খাতিরে ইসলাম স্বামীর উপর যে অর্থনৈতিক যিম্মাদারী আরোপ করেছে। তারই নাম মোহর। কুরাআন হাদীসে কোথাও একে “সিদাক” শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে কোথাও বা আবার অন্য শব্দে। কত প্রসঙ্গে কত ভাবে যে মহাপ্রজ্ঞাময় আল্লহ তাআলা এই বিধানটি বর্ণনা করেছেন।

বিবাহ বন্ধন, বিবাহ বিচ্ছেদ, ঈমানদার ব্যক্তি ও সমাজের বৈশিষ্ট প্রসঙ্গে এভাবে জাহেলী  সমাজের বর্বরতা রোধ প্রসঙ্গে। মোট কথা পবিত্র কুরআনের অনেক স্থানে অনেকভাবে মোহরের বিবরণ এসেছে। এই মোহর আদায় করা স্বামীর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য এবং বিয়েতে স্ত্রীর জন্য মোহর নির্ধারণ এবং তাতে নারীর পূর্ণ মালিকানা প্রদান ইসলামের এক অনন্য বৈশিষ্ট। তবে একথা ঠিক যে, একজন নারী মোহর বাবদ যে সম্পদ লাভ করেন তা দাম্পত্য জীবনে তার নিঃস্বার্থ সেবার প্রকৃত বিনিময় হতে পারে না।

মোহরের প্রচলিত রুপ: মুসলমানের নৈতিক অবক্ষয় ও দীনদারীর অধঃপতনের এ যুগে মোহর মূলত দাম্পত্য রক্ষার বা নিরাপত্তার একটি হুমকি মূলক প্যাঁচানো কাগুজে পদ্ধতি ও রেওয়াজী বিষয়ে পরিণত হয়েছে বাস্তবে যার কোন কার্যকারিতা  নেই। বর-কনে উভয় পক্ষের সম্মতিতে স্বামীর আদায়ের সামর্থের বাইরে মোটা অংকের মোহর নির্ধারণ মুসলিম পরিবারগুলোর একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। মোহর যে স্ত্রীর অপরিহার্য অধিকার এবং স্বামীর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য তার কোন চিন্তা বা গরজ কারোর ভিতরই থাকেনা।

মোটা অংকের মোহর নির্ধারণের অর্থ স্বামী এটাই বুঝে যে, কখনও দাম্পত্য জীবন শেষ করতে চাইলে এই বিশাল অংকের মোহর তার পরিশোধ করতে হবে, অন্যথায় নয়। অপর দিকে অপরিহার্য অধিকার মোহরের টাকা অপ্রাপ্তির মধ্য দিয়েই কাংখিত দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করল মেয়েটি। আর শুরুতেই সে জেনে গেল এটাকা মূলত পাওয়ার জন্য ধার্য হয়নি; বরং এ টাকা পাওয়ার মতো পরিস্থিতি অর্থাৎ তালাক না পড়ার আকাংখাই তার মাঝে প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠে।

সবচে বড় লজ্জার ব্যাপার হলো স্বামীদের ভিতর তৈয়ার হয়েছে মোহর পরিশোধের চিন্তা বাদ দিয়ে স্ত্রীর নিকট বেহায়ার মতো ক্ষমা চাওয়ার মানসিকতা। তাও আবার নিকৃষ্টতম কায়দায় ফেলে। সে কায়দাটি হলো দাম্পত্যের একদম প্রথম প্রহরে অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময় ও অনুভূতির মধ্যে স্বাভাবিক কিংবা প্রচ্ছন্ন হুমকির মাধ্যমে কাপুরুষের মতো মোহরের টাকার দায় থেকে ক্ষমা চায়। একেবারে নতুন জীবনে প্রবেশকারী লাজুক স্ত্রীও দাম্পত্যের প্রথম প্রহরেই উপায় না দেখে ক্ষমা করে দেয়।

অনেক সময় রেওয়াজ মনে করে বৃদ্ধ দাদী-নানীরা নববধুকে শিখিয়ে দেয় যে স্বামী বাসর রাতে মোহর মাফ  চাইলে মাফ করে দিস। না করবিনা ! প্রশ্ন হলো এক্ষমা করাটা কি স্ত্রীর আন্তরিক ও স্বতঃস্ফূর্ত ছিল? অবলা মেয়েটি কি তখন অপরিহার্য অধিকার মোহরের টাকা দাবি করা বা ছেড়ে দেয়ার স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর্যায়ে থাকে? স্বামীর ক্ষমা চাওয়ার উত্তরে তার পক্ষে কি অতি বিনয়ের সঙ্গেও ‘না’ বাচক কোন উত্তর দেয়া সম্ভব? সাহস করে “না” বাচক উত্তর দিলেও কি মেয়েটি বিভিন্ন রকমের পেরেশানীর শিকার হবেনা? এজন্যই তো বাস্তব অভিজ্ঞাতায় দেখা যায় এভাবে মোহরের টাকা ক্ষমার পর দুর্ভাগ্যক্রমে দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল দেখা দিলে ক্ষমাকৃত সেই মোহর টাকা যথারীতি পাওনা টাকা হিসেবেই দাবী করা হয়। না দিলে কিংবা অস্বীকৃতি জানালে লাল দালানের ভাত পর্যন্তও খেতে হয়।

এর সোজা অর্থ হলো অবলা মেয়িটি যে দাম্পত্য জীবনের একদম প্রথম প্রহরে স্বামীর ক্ষমা চাওয়ার প্রেক্ষিতে মাফ করে ছিল সেটা ছিল নিতান্তই নিরুপায় হয়ে এবং এক ধরণের চাপে পড়ে। আর এভাবে ক্ষমা নিয়ে কি কারও টাকা ভোগ করার সুযোগ ইসলাম দিয়েছে? শুনুন দয়ার নবী সা. কি বলেন, সাবধান! জুলুম করোনা। জেনে রেখো কারও সম্পদ তার আন্তরিক সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্যের জন্য ভোগ করা বৈধ নয়”। [মিশকাত:২৫৫]

আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে স্বামীর সামর্থ ও সাধ্যের চেয়ে অনেক বেশি মোহর ধার্য করা হয় কেবল সামাজিক সম্মান বৃদ্ধির জন্য। বর-কনে উভয় পক্ষই ধরে রাখেন, এ মোহর পরিশোধের জন্য নয়, বরং সামাজিক ভাবে বড় ফিগারের মোহর জাহির করার জন্য। এসব প্যাঁচানো উদ্দেশ্য ও রেওয়াজী কাগুজে পদ্ধতির মার-প্যাঁচে পড়ে আর্থিক অপরিহার্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চনার শিকার হয় নারী। তামাশায় পরিণত হয় মোহরের মত এক ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান ও আর্থিক অধিকার।

মোহরের গুরুত্ব: যেই মোহর আজকের মুসলমানদের কাছে খেল-তামাশা ও রেওয়াজী পদ্ধতিতে পরিণত হলো তার গুরুত্ব ইসলামে স্বীমাহীন। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। এরপর তারা যদি তোমাদের জন্য খুশি  মনে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তাহলে তা ভোগ কর স্বাচ্ছন্দে। [নিসা.৪]

বর্ণিত আয়াতের মাধ্যমে এ কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত হয় যে, মোহর স্ত্রীর অপরিহার্য অধিকার ও প্রাপ্য। তা আদায় করা স্বামীর উপর ফরজ। এর নির্দেশদাতা স্বয়ং আল্লহ তাআলা। স্ত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া তাতে অন্য কারো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তাই প্রত্যেক মুমিন-মুসলমান স্বামীর অবশ্য কর্তব্য খুশিমনে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে স্ত্রীর মোহর আদায় করা। কারো অনুরোধ, উপরোধ কিংবা জোর-জবরদস্তির অপেক্ষায় থাকা কুরআনের নির্দেশ পরিপন্থী ও জঘন্য অপরাধ। চাপ দিয়ে কিংবা কোন কৌশলে পূর্ণ মোহর বা কিছু অংশ স্বামী মাফ করিয়ে নিলেও তা মাফ হবেনা এবং পরিশোধ করার পর কোন কায়দায় ফেলে তা ফেরতও নিতে পারবেনা।

এভাবে মা-বাবা, ভাই-বোন বা অন্য কেউ স্বীয় মেয়ে, বোন বা আত্মীয়ের মোহর তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া নিতেও পারবেনা, মাফও করতে পারবেনা। নিলে তা হবে আত্মসাতের শামিল। তবে স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় হৃষ্টচিত্তে মোহরের অংশ বিশেষ বা পূর্ণ মোহর মাফ করে দেয় কিংবা পুরোপুরি বুঝে নিয়ে অংশ বিশেষ বা পূর্ণ মোহরই ফিরিয়ে দেয় তবে তার ব্যবহার বৈধ হবে। [আহকামুল কুরআন জাসসাস:২/৫৭-৫৮; ইবনে কাসীর:১/৪৪২; বয়ানুল কুরআন:২/৯৩; তাফসীরে উসমানী:১০০]

অন্য আয়াতে আল্লহ তাআলা ইরশাদ করেন

“উল্লেখিত নারীরা ছাড়া অন্যদেরকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে এই শর্তে যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় সম্পদের বিনিময়ে তলব করবে বিয়ে করার জন্য, ব্যভিচারের জন্য নয়। অতএব তাদেরকে তোমরা যে উপভোগ করেছ একারণে তাদের প্রাপ্য ও ধার্যকৃত বিনিময় (মোহর) প্রদান কর। আর মোহর নির্ধারিত থাকার পরও তোমরা পরষ্পরে কোন বিষয়ে সম্মত হলে তাতে তোমাদের কোন গুণাহ হবে না। নিশ্চয় আল্লহ সর্বহজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।” [নিসা-২৪]

পবিত্র এই আয়াতটি দ্বারাও একথা অকাট্য ভাবে প্রমাণিত হয় যে, মোহর ইসলামের অতিগুরুত্বপূর্ণ ফরজ এবং বিয়ের অপরিহার্য অনুষঙ্গ এবং মোহর এমন কিছু হতে হবে যা শরীআতে সম্পদ বলে গণ্য। বিয়ের সময় মোহরের কথা উল্লেখ না করলেও কিংবা না দেয়ার শর্ত করলেও তা বাতিল হয়না; বরং স্বামীর যীম্মায় যথা নিয়মে বাকী থাকে। তাই স্বামীর অবশ্য কর্তব্য যথাযথভাবে স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা। এভাবে একথাও প্রমাণিত হয় বিয়ের পর সহবাস হলে কিংবা একান্তে সাক্ষাত হলে পূর্ণ মোহর আদায় করা অপরিহার্য।

সুতরাং বিয়ের সময় মোহর ধার্য করা হলে ধার্যকৃত পূর্ণ মোহর আর ধার্য করা না হলে মোহরে মিছল তথা ঐ নারীর বংশে তার মতো অন্যান্য নারীদের সাধারণত যে মোহর নির্ধারণ করা হয়েছে সেই পরিমাণ মোহর আদায় করতে হবে। তবে স্ত্রীর ইচ্ছে করলে ধার্যকৃত মোহর থেকে কিছু ছেড়ে দিতে পারে। এভাবে স্বামীও ইচ্ছে করলে কিছু বেশি দিতে পারে। স্বেচ্ছায় স্বাগ্রহে হলে এতে দোষের কিছু নেই। [আহকামুল কুরআন; জাসসাস:২/১৪০-১৪৬, আহকামুল কুরআন; ইবনুল আরাবী:১/৩৮৪-৩৯০; তাফসীরে উসমানী:১০৫]

এ ব্যাপারে প্রিয় নবী সা. ইরশাদ করেন মোহর আদায় না করার নিয়তে কেউ যদি কোন নারীকে বিয়ে করে আল্লাহ তাআলা খুব ভাল করেই জানেন যে, তার মোহর আদায়ের নিয়ত নেই, তাহলে সে স্বয়ং আল্লাহকে ধোঁকা দেয়ার স্পর্ধা দেখাল এবং অন্যায় ভাবে নারীকে উপভোগ করল। কিয়ামতের দিন সে ব্যভিচারীরুপে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। [মাজমাউয যাওয়ায়েদ:৪/৫২২-৫২৩]

পাঠক, লেখার কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় মোহরের অপরিহার্যতা প্রসঙ্গে দুটি আয়াত ও একটি হাদীস উল্লেখ করেই ক্ষান্ত করলাম। নতুবা এ প্রসঙ্গে আরও একাধিক আয়াত ও অসংখ্য হাদীস রয়েছে।

মোহর কখন আদায় করবে: কুরআন -হাদীসের ভাষ্যমতে বিয়ের সাথে সাথেই মিলনের পূর্বেই পূর্ণ মোহর আদায়  করা উচিৎ। সম্ভব না হলে অন্তত কিছু হলেও আদায় করে দেয়া উচিৎ। এ ব্যাপারে মহানবী যথেষ্ট তাকিদ দিয়েছেন। হযরত আলীর সাথে ফাতিমার রা. বিয়ে সম্পাদিত হলে রাসূলুল্লহ সা. হযরত আলী রা. কে বললেন, হে আলী! মিলনের পূর্বেই তুমি তোমার স্ত্রীকে কিছু দাও। হযরত আলী রা. জানালেন তার কাছে কিছু নেই। তখন মহানবী সা. বললেন- অমুক দিন তোমাকে যে, লৌহবর্মটি দিয়েছিলাম সেটি কোথায়? উত্তরে আলী রা. বললেন, সেটি অবশ্য আমার কাছে আছে। এটা শুনে মহানবী সা. সেই বর্মটিই মোহর হিসেবে দিতে বলেছেন। [আবু দাউদ:১/২৮৯-২৯০]

এভাবে জনৈক আনসারী সাহাবী এক নারীকে বিয়ের আগ্রহ প্রকাশ করলে নবীজী সা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মোহর আদায় করার জন্য তোমার নিকট কি আছে? তিনি কিছুই নেই জানালে, রাসূলুল্লহ সা. বললেন- যাও মোহরের জন্য একটি লোহার আংটি হলেও যোগাড় করে নিয়ে আস। [বুখারী :২/; আবু দাউদ : ১/২৮৭।]

তবে যদি অনিবার্য কারণে বিয়ের সময় বা মিলনের পূর্বে পূর্ণ মোহর বা তার কিছু অংশও আদায় সম্ভব না হয়, তাহলে কবে নাগাদ তা আদায় করা হবে তার তারিখ নির্ধারণ করে নিতে হবে। পরিষ্কার ভাবে মোহর আদায়ের তারিখ নির্ধারণ না করে শুধু মৌখিকভাবে কাগজে-কলমে রেওয়াজী পদ্ধতিতে মোহর নির্ধারণ করে সারা জীবন তা আদায় না করা বা স্ত্রীর কাছ থেকে বেহায়ার মতো মাফ করিয়ে নেয়া কিংবা আদায় না করে স্ত্রীর দেনা কাঁধে নিয়ে মৃত্যুবরণ করা কেবল ইসলামের বিধানমতে কঠিন অন্যায় তাই নয়; সুস্থ বিবেক ও রুচির বিচারেও নিতান্ত হীন ও কাপুরুষোচিত কাজও বটে।

মোহর তলব করার অধিকার স্ত্রীর রয়েছে: এ কথা ঠিক যে মোহর নগদ আদায় না করলেও বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে কিন্তু তা আদায়ের তারিখ  করে নিতে হবে। স্বামী যদি তাও না করে তাহলে ইসলাম স্ত্রীকে এই অধিকার দিয়েছে যে, মোহর উসূল না হওয়া পর্যন্ত সে নিজেকে স্বামীর কাছে সোপর্দ করা হতে বিরত থাকতে পারবে এবং স্বামীকে যৌন সম্পর্ক স্থাপন এমনকি চুম্মন-আলিঙ্গন ইত্যাদি থেকে বাধা দিতে পারবে ও স্বামীর সাথে কোথাও সফরে যেতেও অস্বীকার করতে পারবে। স্বামী এগুলোতে তাকে বাধ্য করতে পারবে না। এই অবস্থাতেও স্ত্রী মোহর তো পাবেই। স্ত্রীর ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণও স্বামীর নিয়মিত দিতে হবে। [শামী; হেদায়া: ভরণ-পোষণ অধ্যায়]

মোহরের পরিমাণ: মোহরের পরিমাণ নিয়েও মুসলিম উম্মাহ বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির শিকার। কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় মোহরের অংক এত বেশি যে, স্বামীর পক্ষে তা আদায় করা আদৌ সম্ভব না। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, মোহরের পরিমাণ এত তুচ্ছ ও সামান্য যে, তা উল্লেখ করার মতো না। আবার এমনও হয় যে, একজন লোকই যখন মেয়ের পক্ষের হয় তখন বলে মোহর যত বড় অংকের হয় ততই ভাল। এই লোকটিই যখন ছেলের পক্ষের হয় তখন কম মোহরের পক্ষ নেয়। এগুলোর কোনটিই শরীয়তে কাম্য নয়।

মোহর মূলত একটি সম্মানী যা স্বামী স্ত্রীকে দিয়ে থাকে যার মূল উদ্দেশ্যই হলো স্ত্রীকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান। এজন্য ইসলাম বলে মোহর এত সামান্য নির্ধারণ করা উচিৎ নয় যাতে মর্যাদার কোন ইঙ্গিত বহন করে না। আবার এত অধিকও নির্ধারণ না করা যা আদায় করাই স্বামীর পক্ষে অসম্ভব হয়। এমন হলে মোহর হয়ে যাবে স্রেফ তামাশা। রাসূলুল্লহ সা. ও সাহাবা রা. এর আমল এর জীবন্ত নমুনা। আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান রহ. বলেন- আমি উম্মুল মুমিনীনা আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবী সা. কি পরিমাণ মোহর দিয়েছেন? জবাবে তিনি বললেন নবী সা. তাঁর স্ত্রীদেরকে ১২উকিয়া অর্থাৎ পাঁচ শ দিরহাম মোহর দিয়েছেন।” [মুসলিম:হাদীস:১৪২৬; আবু দাউদ:হাদীস:২১০৫; নাসায়ী:৬/১১৬, ১১৭]

আবু হুরায়রা রা. বলেন রাসূলুল্লহ সা. এর যুগে আমাদের মোহর ছিল দশ উকিয়া অর্থাৎ ৪০০দিরহাম”। [নাসায়ী:৬/১১৭]  প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ ইসলামে নির্ধারিত নেই। তবে সর্বনিম্ন পরিমাণটি নির্ধারিত রয়েছে। হানাফী মাযহাব মতে সর্বনিম্ন মোহর দশ দেরহাম। যার পরিমাণ প্রায় দুই তোলা সাড়ে সাত মাশা রুপা। [নিসা.২০; বাদায়ে:২/২৭৫]

এই সর্বনিম্ন মোহর নির্ধারিত থাকার উদ্দেশ্য এই নয় যে, এত সামান্য পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা শরীআতে প্রশংসনীয়; বরং উদ্দেশ্য হলো এর চেয়ে কম মোহর শরীআত সম্মত নয় যদিও স্ত্রী রাজী থাকে। কারণ এত কম মোহর নির্ধারিত হলে মোহরের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। তাছাড়া মোহরের এই সর্বনিম্ন পরিমানও রাখা হয়েছে মূলত আর্থিক ভাবে অসচ্ছল লোকদের কথা বিবেচনা করে। যেন তারা নারীর সম্মতির শর্তে এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে বিয়ে করতে পারে। মোহরের সকল সামাজিক মেকি প্রথা ও পোশাকী রেওয়াহ থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ও আমাদের সমাজকে রক্ষা করুন। আমীন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া মিফতাহুল উলুম মাদ্রাসা, নেত্রকোণা।

Facebook Comments