17.3 C
New York
Wednesday, October 22, 2025

Buy now

spot_img
Home Blog Page 13

মোহর : নারীর অপরিহার্য অধিকার : মুফতী পিয়ার মাহমুদ

ইসলামের যে বিধানগুলো আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে তার অন্যতম হলো স্ত্রীর মোহর। বিয়ের কারণে নারীর সতীত্ব রক্ষার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের খাতিরে ইসলাম স্বামীর উপর যে অর্থনৈতিক যিম্মাদারী আরোপ করেছে। তারই নাম মোহর। কুরাআন হাদীসে কোথাও একে “সিদাক” শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে কোথাও বা আবার অন্য শব্দে। কত প্রসঙ্গে কত ভাবে যে মহাপ্রজ্ঞাময় আল্লহ তাআলা এই বিধানটি বর্ণনা করেছেন।

বিবাহ বন্ধন, বিবাহ বিচ্ছেদ, ঈমানদার ব্যক্তি ও সমাজের বৈশিষ্ট প্রসঙ্গে এভাবে জাহেলী  সমাজের বর্বরতা রোধ প্রসঙ্গে। মোট কথা পবিত্র কুরআনের অনেক স্থানে অনেকভাবে মোহরের বিবরণ এসেছে। এই মোহর আদায় করা স্বামীর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য এবং বিয়েতে স্ত্রীর জন্য মোহর নির্ধারণ এবং তাতে নারীর পূর্ণ মালিকানা প্রদান ইসলামের এক অনন্য বৈশিষ্ট। তবে একথা ঠিক যে, একজন নারী মোহর বাবদ যে সম্পদ লাভ করেন তা দাম্পত্য জীবনে তার নিঃস্বার্থ সেবার প্রকৃত বিনিময় হতে পারে না।

মোহরের প্রচলিত রুপ: মুসলমানের নৈতিক অবক্ষয় ও দীনদারীর অধঃপতনের এ যুগে মোহর মূলত দাম্পত্য রক্ষার বা নিরাপত্তার একটি হুমকি মূলক প্যাঁচানো কাগুজে পদ্ধতি ও রেওয়াজী বিষয়ে পরিণত হয়েছে বাস্তবে যার কোন কার্যকারিতা  নেই। বর-কনে উভয় পক্ষের সম্মতিতে স্বামীর আদায়ের সামর্থের বাইরে মোটা অংকের মোহর নির্ধারণ মুসলিম পরিবারগুলোর একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। মোহর যে স্ত্রীর অপরিহার্য অধিকার এবং স্বামীর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য তার কোন চিন্তা বা গরজ কারোর ভিতরই থাকেনা।

মোটা অংকের মোহর নির্ধারণের অর্থ স্বামী এটাই বুঝে যে, কখনও দাম্পত্য জীবন শেষ করতে চাইলে এই বিশাল অংকের মোহর তার পরিশোধ করতে হবে, অন্যথায় নয়। অপর দিকে অপরিহার্য অধিকার মোহরের টাকা অপ্রাপ্তির মধ্য দিয়েই কাংখিত দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করল মেয়েটি। আর শুরুতেই সে জেনে গেল এটাকা মূলত পাওয়ার জন্য ধার্য হয়নি; বরং এ টাকা পাওয়ার মতো পরিস্থিতি অর্থাৎ তালাক না পড়ার আকাংখাই তার মাঝে প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠে।

সবচে বড় লজ্জার ব্যাপার হলো স্বামীদের ভিতর তৈয়ার হয়েছে মোহর পরিশোধের চিন্তা বাদ দিয়ে স্ত্রীর নিকট বেহায়ার মতো ক্ষমা চাওয়ার মানসিকতা। তাও আবার নিকৃষ্টতম কায়দায় ফেলে। সে কায়দাটি হলো দাম্পত্যের একদম প্রথম প্রহরে অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময় ও অনুভূতির মধ্যে স্বাভাবিক কিংবা প্রচ্ছন্ন হুমকির মাধ্যমে কাপুরুষের মতো মোহরের টাকার দায় থেকে ক্ষমা চায়। একেবারে নতুন জীবনে প্রবেশকারী লাজুক স্ত্রীও দাম্পত্যের প্রথম প্রহরেই উপায় না দেখে ক্ষমা করে দেয়।

অনেক সময় রেওয়াজ মনে করে বৃদ্ধ দাদী-নানীরা নববধুকে শিখিয়ে দেয় যে স্বামী বাসর রাতে মোহর মাফ  চাইলে মাফ করে দিস। না করবিনা ! প্রশ্ন হলো এক্ষমা করাটা কি স্ত্রীর আন্তরিক ও স্বতঃস্ফূর্ত ছিল? অবলা মেয়েটি কি তখন অপরিহার্য অধিকার মোহরের টাকা দাবি করা বা ছেড়ে দেয়ার স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর্যায়ে থাকে? স্বামীর ক্ষমা চাওয়ার উত্তরে তার পক্ষে কি অতি বিনয়ের সঙ্গেও ‘না’ বাচক কোন উত্তর দেয়া সম্ভব? সাহস করে “না” বাচক উত্তর দিলেও কি মেয়েটি বিভিন্ন রকমের পেরেশানীর শিকার হবেনা? এজন্যই তো বাস্তব অভিজ্ঞাতায় দেখা যায় এভাবে মোহরের টাকা ক্ষমার পর দুর্ভাগ্যক্রমে দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল দেখা দিলে ক্ষমাকৃত সেই মোহর টাকা যথারীতি পাওনা টাকা হিসেবেই দাবী করা হয়। না দিলে কিংবা অস্বীকৃতি জানালে লাল দালানের ভাত পর্যন্তও খেতে হয়।

এর সোজা অর্থ হলো অবলা মেয়িটি যে দাম্পত্য জীবনের একদম প্রথম প্রহরে স্বামীর ক্ষমা চাওয়ার প্রেক্ষিতে মাফ করে ছিল সেটা ছিল নিতান্তই নিরুপায় হয়ে এবং এক ধরণের চাপে পড়ে। আর এভাবে ক্ষমা নিয়ে কি কারও টাকা ভোগ করার সুযোগ ইসলাম দিয়েছে? শুনুন দয়ার নবী সা. কি বলেন, সাবধান! জুলুম করোনা। জেনে রেখো কারও সম্পদ তার আন্তরিক সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্যের জন্য ভোগ করা বৈধ নয়”। [মিশকাত:২৫৫]

আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে স্বামীর সামর্থ ও সাধ্যের চেয়ে অনেক বেশি মোহর ধার্য করা হয় কেবল সামাজিক সম্মান বৃদ্ধির জন্য। বর-কনে উভয় পক্ষই ধরে রাখেন, এ মোহর পরিশোধের জন্য নয়, বরং সামাজিক ভাবে বড় ফিগারের মোহর জাহির করার জন্য। এসব প্যাঁচানো উদ্দেশ্য ও রেওয়াজী কাগুজে পদ্ধতির মার-প্যাঁচে পড়ে আর্থিক অপরিহার্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চনার শিকার হয় নারী। তামাশায় পরিণত হয় মোহরের মত এক ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান ও আর্থিক অধিকার।

মোহরের গুরুত্ব: যেই মোহর আজকের মুসলমানদের কাছে খেল-তামাশা ও রেওয়াজী পদ্ধতিতে পরিণত হলো তার গুরুত্ব ইসলামে স্বীমাহীন। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। এরপর তারা যদি তোমাদের জন্য খুশি  মনে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তাহলে তা ভোগ কর স্বাচ্ছন্দে। [নিসা.৪]

বর্ণিত আয়াতের মাধ্যমে এ কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত হয় যে, মোহর স্ত্রীর অপরিহার্য অধিকার ও প্রাপ্য। তা আদায় করা স্বামীর উপর ফরজ। এর নির্দেশদাতা স্বয়ং আল্লহ তাআলা। স্ত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া তাতে অন্য কারো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তাই প্রত্যেক মুমিন-মুসলমান স্বামীর অবশ্য কর্তব্য খুশিমনে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে স্ত্রীর মোহর আদায় করা। কারো অনুরোধ, উপরোধ কিংবা জোর-জবরদস্তির অপেক্ষায় থাকা কুরআনের নির্দেশ পরিপন্থী ও জঘন্য অপরাধ। চাপ দিয়ে কিংবা কোন কৌশলে পূর্ণ মোহর বা কিছু অংশ স্বামী মাফ করিয়ে নিলেও তা মাফ হবেনা এবং পরিশোধ করার পর কোন কায়দায় ফেলে তা ফেরতও নিতে পারবেনা।

এভাবে মা-বাবা, ভাই-বোন বা অন্য কেউ স্বীয় মেয়ে, বোন বা আত্মীয়ের মোহর তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া নিতেও পারবেনা, মাফও করতে পারবেনা। নিলে তা হবে আত্মসাতের শামিল। তবে স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় হৃষ্টচিত্তে মোহরের অংশ বিশেষ বা পূর্ণ মোহর মাফ করে দেয় কিংবা পুরোপুরি বুঝে নিয়ে অংশ বিশেষ বা পূর্ণ মোহরই ফিরিয়ে দেয় তবে তার ব্যবহার বৈধ হবে। [আহকামুল কুরআন জাসসাস:২/৫৭-৫৮; ইবনে কাসীর:১/৪৪২; বয়ানুল কুরআন:২/৯৩; তাফসীরে উসমানী:১০০]

অন্য আয়াতে আল্লহ তাআলা ইরশাদ করেন

“উল্লেখিত নারীরা ছাড়া অন্যদেরকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে এই শর্তে যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় সম্পদের বিনিময়ে তলব করবে বিয়ে করার জন্য, ব্যভিচারের জন্য নয়। অতএব তাদেরকে তোমরা যে উপভোগ করেছ একারণে তাদের প্রাপ্য ও ধার্যকৃত বিনিময় (মোহর) প্রদান কর। আর মোহর নির্ধারিত থাকার পরও তোমরা পরষ্পরে কোন বিষয়ে সম্মত হলে তাতে তোমাদের কোন গুণাহ হবে না। নিশ্চয় আল্লহ সর্বহজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।” [নিসা-২৪]

পবিত্র এই আয়াতটি দ্বারাও একথা অকাট্য ভাবে প্রমাণিত হয় যে, মোহর ইসলামের অতিগুরুত্বপূর্ণ ফরজ এবং বিয়ের অপরিহার্য অনুষঙ্গ এবং মোহর এমন কিছু হতে হবে যা শরীআতে সম্পদ বলে গণ্য। বিয়ের সময় মোহরের কথা উল্লেখ না করলেও কিংবা না দেয়ার শর্ত করলেও তা বাতিল হয়না; বরং স্বামীর যীম্মায় যথা নিয়মে বাকী থাকে। তাই স্বামীর অবশ্য কর্তব্য যথাযথভাবে স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা। এভাবে একথাও প্রমাণিত হয় বিয়ের পর সহবাস হলে কিংবা একান্তে সাক্ষাত হলে পূর্ণ মোহর আদায় করা অপরিহার্য।

সুতরাং বিয়ের সময় মোহর ধার্য করা হলে ধার্যকৃত পূর্ণ মোহর আর ধার্য করা না হলে মোহরে মিছল তথা ঐ নারীর বংশে তার মতো অন্যান্য নারীদের সাধারণত যে মোহর নির্ধারণ করা হয়েছে সেই পরিমাণ মোহর আদায় করতে হবে। তবে স্ত্রীর ইচ্ছে করলে ধার্যকৃত মোহর থেকে কিছু ছেড়ে দিতে পারে। এভাবে স্বামীও ইচ্ছে করলে কিছু বেশি দিতে পারে। স্বেচ্ছায় স্বাগ্রহে হলে এতে দোষের কিছু নেই। [আহকামুল কুরআন; জাসসাস:২/১৪০-১৪৬, আহকামুল কুরআন; ইবনুল আরাবী:১/৩৮৪-৩৯০; তাফসীরে উসমানী:১০৫]

এ ব্যাপারে প্রিয় নবী সা. ইরশাদ করেন মোহর আদায় না করার নিয়তে কেউ যদি কোন নারীকে বিয়ে করে আল্লাহ তাআলা খুব ভাল করেই জানেন যে, তার মোহর আদায়ের নিয়ত নেই, তাহলে সে স্বয়ং আল্লাহকে ধোঁকা দেয়ার স্পর্ধা দেখাল এবং অন্যায় ভাবে নারীকে উপভোগ করল। কিয়ামতের দিন সে ব্যভিচারীরুপে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। [মাজমাউয যাওয়ায়েদ:৪/৫২২-৫২৩]

পাঠক, লেখার কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় মোহরের অপরিহার্যতা প্রসঙ্গে দুটি আয়াত ও একটি হাদীস উল্লেখ করেই ক্ষান্ত করলাম। নতুবা এ প্রসঙ্গে আরও একাধিক আয়াত ও অসংখ্য হাদীস রয়েছে।

মোহর কখন আদায় করবে: কুরআন -হাদীসের ভাষ্যমতে বিয়ের সাথে সাথেই মিলনের পূর্বেই পূর্ণ মোহর আদায়  করা উচিৎ। সম্ভব না হলে অন্তত কিছু হলেও আদায় করে দেয়া উচিৎ। এ ব্যাপারে মহানবী যথেষ্ট তাকিদ দিয়েছেন। হযরত আলীর সাথে ফাতিমার রা. বিয়ে সম্পাদিত হলে রাসূলুল্লহ সা. হযরত আলী রা. কে বললেন, হে আলী! মিলনের পূর্বেই তুমি তোমার স্ত্রীকে কিছু দাও। হযরত আলী রা. জানালেন তার কাছে কিছু নেই। তখন মহানবী সা. বললেন- অমুক দিন তোমাকে যে, লৌহবর্মটি দিয়েছিলাম সেটি কোথায়? উত্তরে আলী রা. বললেন, সেটি অবশ্য আমার কাছে আছে। এটা শুনে মহানবী সা. সেই বর্মটিই মোহর হিসেবে দিতে বলেছেন। [আবু দাউদ:১/২৮৯-২৯০]

এভাবে জনৈক আনসারী সাহাবী এক নারীকে বিয়ের আগ্রহ প্রকাশ করলে নবীজী সা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মোহর আদায় করার জন্য তোমার নিকট কি আছে? তিনি কিছুই নেই জানালে, রাসূলুল্লহ সা. বললেন- যাও মোহরের জন্য একটি লোহার আংটি হলেও যোগাড় করে নিয়ে আস। [বুখারী :২/; আবু দাউদ : ১/২৮৭।]

তবে যদি অনিবার্য কারণে বিয়ের সময় বা মিলনের পূর্বে পূর্ণ মোহর বা তার কিছু অংশও আদায় সম্ভব না হয়, তাহলে কবে নাগাদ তা আদায় করা হবে তার তারিখ নির্ধারণ করে নিতে হবে। পরিষ্কার ভাবে মোহর আদায়ের তারিখ নির্ধারণ না করে শুধু মৌখিকভাবে কাগজে-কলমে রেওয়াজী পদ্ধতিতে মোহর নির্ধারণ করে সারা জীবন তা আদায় না করা বা স্ত্রীর কাছ থেকে বেহায়ার মতো মাফ করিয়ে নেয়া কিংবা আদায় না করে স্ত্রীর দেনা কাঁধে নিয়ে মৃত্যুবরণ করা কেবল ইসলামের বিধানমতে কঠিন অন্যায় তাই নয়; সুস্থ বিবেক ও রুচির বিচারেও নিতান্ত হীন ও কাপুরুষোচিত কাজও বটে।

মোহর তলব করার অধিকার স্ত্রীর রয়েছে: এ কথা ঠিক যে মোহর নগদ আদায় না করলেও বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে কিন্তু তা আদায়ের তারিখ  করে নিতে হবে। স্বামী যদি তাও না করে তাহলে ইসলাম স্ত্রীকে এই অধিকার দিয়েছে যে, মোহর উসূল না হওয়া পর্যন্ত সে নিজেকে স্বামীর কাছে সোপর্দ করা হতে বিরত থাকতে পারবে এবং স্বামীকে যৌন সম্পর্ক স্থাপন এমনকি চুম্মন-আলিঙ্গন ইত্যাদি থেকে বাধা দিতে পারবে ও স্বামীর সাথে কোথাও সফরে যেতেও অস্বীকার করতে পারবে। স্বামী এগুলোতে তাকে বাধ্য করতে পারবে না। এই অবস্থাতেও স্ত্রী মোহর তো পাবেই। স্ত্রীর ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণও স্বামীর নিয়মিত দিতে হবে। [শামী; হেদায়া: ভরণ-পোষণ অধ্যায়]

মোহরের পরিমাণ: মোহরের পরিমাণ নিয়েও মুসলিম উম্মাহ বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির শিকার। কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় মোহরের অংক এত বেশি যে, স্বামীর পক্ষে তা আদায় করা আদৌ সম্ভব না। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, মোহরের পরিমাণ এত তুচ্ছ ও সামান্য যে, তা উল্লেখ করার মতো না। আবার এমনও হয় যে, একজন লোকই যখন মেয়ের পক্ষের হয় তখন বলে মোহর যত বড় অংকের হয় ততই ভাল। এই লোকটিই যখন ছেলের পক্ষের হয় তখন কম মোহরের পক্ষ নেয়। এগুলোর কোনটিই শরীয়তে কাম্য নয়।

মোহর মূলত একটি সম্মানী যা স্বামী স্ত্রীকে দিয়ে থাকে যার মূল উদ্দেশ্যই হলো স্ত্রীকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান। এজন্য ইসলাম বলে মোহর এত সামান্য নির্ধারণ করা উচিৎ নয় যাতে মর্যাদার কোন ইঙ্গিত বহন করে না। আবার এত অধিকও নির্ধারণ না করা যা আদায় করাই স্বামীর পক্ষে অসম্ভব হয়। এমন হলে মোহর হয়ে যাবে স্রেফ তামাশা। রাসূলুল্লহ সা. ও সাহাবা রা. এর আমল এর জীবন্ত নমুনা। আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান রহ. বলেন- আমি উম্মুল মুমিনীনা আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবী সা. কি পরিমাণ মোহর দিয়েছেন? জবাবে তিনি বললেন নবী সা. তাঁর স্ত্রীদেরকে ১২উকিয়া অর্থাৎ পাঁচ শ দিরহাম মোহর দিয়েছেন।” [মুসলিম:হাদীস:১৪২৬; আবু দাউদ:হাদীস:২১০৫; নাসায়ী:৬/১১৬, ১১৭]

আবু হুরায়রা রা. বলেন রাসূলুল্লহ সা. এর যুগে আমাদের মোহর ছিল দশ উকিয়া অর্থাৎ ৪০০দিরহাম”। [নাসায়ী:৬/১১৭]  প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ ইসলামে নির্ধারিত নেই। তবে সর্বনিম্ন পরিমাণটি নির্ধারিত রয়েছে। হানাফী মাযহাব মতে সর্বনিম্ন মোহর দশ দেরহাম। যার পরিমাণ প্রায় দুই তোলা সাড়ে সাত মাশা রুপা। [নিসা.২০; বাদায়ে:২/২৭৫]

এই সর্বনিম্ন মোহর নির্ধারিত থাকার উদ্দেশ্য এই নয় যে, এত সামান্য পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা শরীআতে প্রশংসনীয়; বরং উদ্দেশ্য হলো এর চেয়ে কম মোহর শরীআত সম্মত নয় যদিও স্ত্রী রাজী থাকে। কারণ এত কম মোহর নির্ধারিত হলে মোহরের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। তাছাড়া মোহরের এই সর্বনিম্ন পরিমানও রাখা হয়েছে মূলত আর্থিক ভাবে অসচ্ছল লোকদের কথা বিবেচনা করে। যেন তারা নারীর সম্মতির শর্তে এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে বিয়ে করতে পারে। মোহরের সকল সামাজিক মেকি প্রথা ও পোশাকী রেওয়াহ থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ও আমাদের সমাজকে রক্ষা করুন। আমীন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া মিফতাহুল উলুম মাদ্রাসা, নেত্রকোণা।

কা’বা ঘরের ব্যাপারে ইসলাম বিরোধীদের অভিযোগসমূহ ও তাদের খণ্ডন

দ্বীন ইসলামের কেন্দ্রস্থল মক্কা নগরীর পবিত্র কা’বা ঘর সম্পর্কে নাস্তিক মুক্তমনা ও খ্রিষ্টান মিশনারীরা বিভিন্ন অভিযোগ তোলে। তাদের দাবিঃ কা’বা গৃহকে কিবলা হিসাবে গ্রহণ করা বিভিন্ন কারণে পৌত্তলিকতা বা paganism। কারণগুলো হচ্ছেঃ

❏ মুসলিমরা মানুষের তৈরি একটি স্থাপনার(কা’বা) দিকে মাথা নত করছে
❏মুসলিমরা কা’বার উপাসনা করে
❏কা’বায় এক সময় ৩৬০টি মূর্তি ছিল। যেখানে এক সময় মূর্তিপুজা হয়েছে তা কী করে একত্ববাদী ইবাদতের কেন্দ্র হয়?

তাদের এই অভিযোগগুলো দেখে অনেক সরলপ্রাণ মুসলিম বিভ্রান্ত হচ্ছেন। নিচে তাদের অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করে সেগুলোর খণ্ডন করা হল।

❏ মানুষের তৈরি একটি স্থাপনার(কা’বা) দিকে মাথা নত করাঃ

ইসলাম বিরোধীরা বলতে চায় যে, কা’বার দিকে মুখ করে উপাসনা করা একটি পৌত্তলিক রীতি।
মুসলিমরা কেন কা’বার দিকে মুখ করে উপাসনা করে? উত্তর হচ্ছেঃ কা’বা মুসলিমদের কিবলা (উপাসনার দিক)। এটি আল কুরআনের নির্দেশ যে কিবলা অর্থাৎ কা’বার দিকে মুখ করে সলাত আদায় করতে হবে {সুরা বাকারাহ ২:১৪২-১৪৬ দ্রষ্টব্য; এই লিঙ্ক থেকে পড়তে পারেনঃ https://goo.gl/8u9pVM }। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, মুসলিমমাত্রই কা’বার দিকে মুখ করে সলাত পড়ে। এটি মুসলিম উম্মাহর ঐক্যেরও একটি নিদর্শন।
পৃথিবীতে একটিও বহু ঈশ্বরে বিশ্বাসী কিংবা মূর্তিপুজারী কোন জাতি আছে যারা এরূপ কোন কিবলার দিকে মুখ করে উপাসনা করে?
উত্তর হচ্ছেঃ না।
ইসলাম ছাড়া আর একটিমাত্র ধর্মের লোকদের এইরূপ কিবলার কনসেপ্ট আছে। আর সেটি হচ্ছে ইহুদি ধর্ম।
বাইবেলের পুরাতন নিয়ম(Old testament) অংশটি ইহুদি-খ্রিষ্টান উভয় ধর্মালম্বীদের ধর্মগ্রন্থ। বাইবেলের এ অংশে উপাসনা সংক্রান্ত বিধি-বিধানের বিবরণ এসেছে এবং তার মধ্যে একাধিকবার এই কিবলার এই এসেছে। বাইবেল অনুযায়ী বনী ইস্রাঈলের নবীগণও কিবলার দিকে ফিরে উপাসনা করতেন। বনী ইস্রাঈলের জন্য কিবলা ছিল বাইতুল মুকাদ্দাস(Temple Mount) যেটি মুহাম্মাদ(ﷺ) এর শরিয়তেও প্রথম কিবলা ছিল। নবী দাউদ(আ) এর ইবাদতের বিবরণ দিয়ে বাইবেলে বলা হয়েছেঃ
.
“ ঈশ্বর, আপনার পবিত্র মন্দিরের দিকে আমি মাথা নত করি। আমি আপনার নাম, প্রেম এবং নিষ্ঠার প্রশংসা করি। কারণ আপনার নাম এবং আপনার বাণীকে আপনি সমস্ত কিছুর উপরে সুউচ্চ করেছেন।”
(বাইবেল, গীতসংহিতা/সামসঙ্গীত/জবুর শরীফ ১৩৮:২)
I bow down toward your holy temple and give thanks to your name for your steadfast love and your faithfulness; for you have exalted your name and your word above everything.
(Bible, Psalms 138:2)
লিঙ্কঃ https://goo.gl/8gFwR9
.
বাইবেলে এটিই নবী রাসুলদের ইবাদতের রীতি এবং এ অনুয়ায়ী ইহুদিদের ধর্মীয় আইন হচ্ছে তাদের কিবলা অর্থাৎ মসজিদুল আকসা{বাইতুল মুকাদ্দাস/Temple Mount} এর দিকে ফিরে ইবাদত করা। হাজার হাজার বছর ধরে ইহুদিরা এভাবেই ইবাদত করে আসছে। [১]
বনী ইস্রাঈলের শরিয়তে যে কিবলার ধারণা ছিল তা আল কুরআন দ্বারাও প্রমাণিত [সুরা ইউনুস ১০:৮৭ নং আয়াত দ্রষ্টব্য; লিঙ্কঃ https://quran.com/10/87 ]। বাইবেলের নতুন নিয়ম(New Testament) এ যিশু খ্রিষ্ট বলেছেন যে পূর্ববর্তী নবীদের সকল আইন মেনে চলতে হবে এবং এগুলো চিরস্থায়ী আইন। বাইবেল অনুযায়ী তিনি নিজেও পূর্ববর্তী নবীদের শরিয়তের অনুসারী ছিলেন। [২] কাজেই আমরা দেখতে পেলাম যে, কিবলার দিকে ফিরে উপাসনা করা মোটেও পৌত্তলিক জাতির রীতি নয় বরং এটি বনী ইস্রাঈল জাতির একটি ধর্মীয় আইন। এবং এটি কুরআনের শরিয়তেও বহাল রাখা হয়েছে। যে সব খ্রিষ্টান মিশনারী মুসলিমদের কিবলার ধারণাকে পৌত্তলিকতার সাথে মিলিয়ে অপপ্রচার চালান, তারা নিজ ধর্মীয় গ্রন্থের বিধানকে গোপন করে এই মিথ্যাচার করেন। কিবলার দিকে ফিরে উপাসনা করা যদি পৌত্তলিকতা হয়, তাহলে বাইবেলের নবীগণও পৌত্তলিক (নাউযুবিল্লাহ)। বরং খ্রিষ্টানরাই সেইন্ট পলের দর্শন গ্রহণ করে তাওরাতের শরিয়ত ও বনী ইস্রাঈলের ইব্রাহিমী উপাসনার রীতি বাদ দিয়েছে এবং নব উদ্ভাবিত পৌত্তলিক রোমক উপাসনা রীতি গ্রহণ করেছে। যারা নিজেরাই পৌত্তলিক(pagan), তারা আবার অন্যদেরকে পৌত্তলিকতার জন্য অভিযুক্ত করে!


কুরবানীর জন্য কাকে নেওয়া হয়েছিল – ইসমাঈল(আ) নাকি ইসহাক(আ) ?


মুসলিমরা কা’বার উপাসনা করেঃ

এটি পশ্চিমা বিশ্বে একটি খুব কমন ধারণা। খ্রিষ্টান মিশনারীদের লাগামহীন প্রচারণার দ্বারা এই ধারনা ব্যাপক ‘জনপ্রিয়তা’ লাভ করেছে।
কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে— ইসলামের মূল কথাই হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া আর কারো উপাসনা করা যাবে না। কেউ যদি কা’বার উপাসনা করে, তাহলে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়। কুরআন ও হাদিসে কোথাও কা’বার উপাসনার কথা বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে কা’বার প্রভু আল্লাহ তা’আলার উপাসনা করতে।
.
“ অতএব তারা যেন ইবাদত করে এই ঘরের(কা’বা) প্রভুর। যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং ভীতি থেকে তাদেরকে নিরাপদ করেছেন। ”
(কুরআন, কুরাইশ ১০৬:৩-৪)

প্রকৃতপক্ষে যারা এরূপ অভিযোগ করে তারা আসলে জানেই না যে পৌত্তলিকতা কী। সব থেকে অজ্ঞ মুসলিমটিও কখনোই কা’বাকে আল্লাহর মূর্তি বলে মনে করে না। বরং মুসলিমদের কাছে এটি আল্লাহর ইবাদতের ঘর। ঠিক যেমন ইহুদিদের কাছে বাইতুল মাকদিস বা বাইতুল মুকাদ্দাস {হিব্রুতে Bethel বা Bait HaMikdash, ইংরেজিতে Temple Mount} হচ্ছে ঈশ্বরের ইবাদতের গৃহ। অথচ ইহুদিদেরকে তারা বলে একত্ববাদী আর মুসলিমদেরকে বলে পৌত্তলিক!
সৌদি আরব থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দূরবর্তী স্থানে মুসলিমরা সলাত আদায় করে থাকে। পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিমদের থেকেই কা’বা অনেক দূরে অবস্থিত। এমন কোন মূর্তিপুজারী কি আছে, যে তার দেবতার মূর্তিকে হাজার হাজার মাইল দূরে রেখে উপাসনা করে? কখনো যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে কিবলার দিক বোঝা যাচ্ছে না, তখন যে কোন দিকে ফিরে সলাত আদায় করা যায়। এমনকি কা’বাকে যদি কখনো ধ্বংসও করে ফেলা হয়, তাহলে মুসলিমরা কা’বা যে স্থানটিতে আছে, সেই স্থানের দিকে মুখ করে সলাত আদায় করবে। [৩] এ থেকে প্রমাণ হয় যে মুসলিমরা মোটেও কা’বার ইমারতের উপাসনা করে না বরং কা’বা মুসলিমদের জন্য শুধুমাত্র ইবাদতের দিক বা কিবলা। যে কোন পৌত্তলিকের কাছে তার দেবতা সব থেকে পবিত্র ও মহান। অথচ ইসলাম ধর্মে একজন মু’মিন মুসলিমের জান, মাল ও ইজ্জত কা’বার চেয়ে বেশি মর্যাদাবান। [৪]
কোন পৌত্তলিক কখনোই তার দেবতার মূর্তির উপর দাঁড়ায় না। কোন হিন্দু ধর্মালম্বী কি কখনো তার দেব মূর্তির উপর উঠে দাঁড়াতে পারবে? কিংবা কোন ক্যাথোলিক খ্রিষ্টান কি কখনো যিশু বা মরিয়মের মূর্তির উপর উঠে দাঁড়াতে পারবে? কখনোই না।
মুসলিমদের কাছে কা’বা হচ্ছে কিবলা এবং ইবাদতের ঘর। এর উপর উঠে দাঁড়িয়ে মুসলিমরা আযান দিতে পারে। প্রতি বছর হজের মৌসুমে কা’বার ছাদে উঠে এর গিলাফ পরিবর্তন করা হয়। [৫]
এখানে ক্লিক করে কা’বার ছাদে দাঁড়িয়ে গিলাফ পরিবর্তনের ছবি দেখুনঃ https://goo.gl/ZgUjQT
এসব থেকে প্রমাণিত হয় যে কা’বা মুসলিমদের নিকট মোটেও মূর্তি বা প্রতিমা জাতীয় কিছু না এবং মুসলিমরা কখনোই কা’বার উপাসনা করে না।

❏ কা’বায় এক সময় ৩৬০টি মূর্তি ছিল। যেখানে এক সময় মূর্তিপুজা হয়েছে তা কী করে একত্ববাদী ইবাদতের কেন্দ্র হয়ঃ

মুহাম্মাদ(ﷺ) এর আগমনের পূর্বে কা’বায় মূর্তিপুজা হত এই ইতিহাসকে ব্যবহার করে দ্বীন ইসলামের একত্ববাদী চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে খ্রিষ্টান মিশনারী ও নাস্তিক-মুক্তমনারা। কা’বায় এক সময় মূর্তিপুজা হত এমনকি সেখানে এক সময় ৩৬০টি মূর্তিও স্থাপন করা হয়েছিল; – কিন্তু এটাই কা’বার প্রাচীনতম ইতিহাস নয়। কা’বা মোটেও মূর্তিপুজার জন্য স্থাপন করা হয়নি বরং এর স্থাপনের উদ্যেশ্য ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। কা’বা নির্মাণ করেন তাওহিদের(একত্ববাদ) দাওয়াহর মহানায়ক আল্লাহর নবী ইব্রাহিম(আ) এবং তাঁর পুত্র ইসমাঈল(আ)। আল কুরআনে বলা হয়েছেঃ
.
“ স্মরণ কর, যখন ইব্রাহিম ও ইসমাঈল কা’বাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করেছিলঃ আমাদের প্রভু! আমাদের থেকে কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।
হে আমাদের প্রভু, আমাদের উভয়কে আপনার আজ্ঞাবহ করুন এবং আমাদের বংশধর থেকেও একটি অনুগত দল সৃষ্টি করুন, আমাদের হজের রীতিনীতি বলে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি তাওবা কবুলকারী, দয়ালু।
হে আমাদের প্রভু, তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন রাসুল প্রেরণ করুণ যিনি তাদের কাছে আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন। এবং তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান। ”
(কুরআন, বাকারাহ ২:১২৭-১২৯)
.
এমনকি ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থেও কা’বার কথা উল্লেখ আছে এবং তাদের ধর্মগ্রন্থ থেকে আমি প্রমাণ করেছি যে ইব্রাহিম(আ) মক্কায় এসেছিলেন। এ সংক্রান্ত আমার পোস্টের লিঙ্কঃ https://goo.gl/VygdWp
কালক্রমে ইব্রাহিম(আ) ও ইসমাঈল(আ) এর বংশধর মক্কার আরবরা একত্ববাদী ধর্ম ছেড়ে বিভিন্ন কাল্পনিক দেবতার মূর্তি সহকারে পুজা শুরু করে এবং কা’বাগৃহেও মূর্তি স্থাপন করে। ইব্রাহিম(আ) এর দোয়ার ফসল নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) আগমন করে তাদেরকে পুনরায় একত্ববাদী ইসলামের দিকে আহ্বান করেন এবং কা’বা ঘরকে মূর্তিমুক্ত করে পুনরায় এক আল্লাহর উপাসনার গৃহে পরিনত করেন ঠিক যেমনটি ইব্রাহিম(আ) এর সময়ে ছিল। এটিই হচ্ছে কা’বাগৃহের ইতিহাস। [৬] অর্থাৎ মূর্তিপুজা ছিল ইব্রাহিম(আ) এর পরবর্তী লোকদের নব উদ্ভাবন ও পথভ্রষ্টতা। কা’বা নির্মাণের সাথে এর কোন সম্পর্কে নেই এবং এই ইতিহাস মোটেও কা’বাকে মূর্তিপুজার মন্দির প্রমাণ করে না।
.
এরপরেও যদি খ্রিষ্টান মিশনারীরা অপতর্ক করতে চায়, তাহলে আমরা বলব—বাইতুল মুকাদ্দাস তো আপনাদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী ঈশ্বরের মহামন্দির(Temple Mount) যেখানে যিশু খ্রিষ্টসহ অন্য নবী-রাসুলগণ এক কালে উপাসনা করতেন ও শিক্ষা দান করতেন । [৭] বাইবেল অনুযায়ী এই মহা মন্দিরের গোড়াপত্তনকারী হচ্ছেন ইব্রাহিম(আ) এর নাতি ইয়া’কুব(আ), [৮] এবং এখানেও এক সময় পরবর্তী প্রজন্মের লোকেরা মূর্তিপুজা করেছে—ঠিক যেমনটি কা’বায় হয়েছে! এই তথ্য শুনে হয়তো অনেকেই চমকে উঠতে পারে, কিন্তু ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থে এমনটিই বলা আছে। —-
.
“ ৩ তাঁর পিতা হিষ্কিয় যে সমস্ত উচ্চস্থান ভেঙে দিয়েছিলেন, মনঃশি আবার নতুন করে সেই সব বেদী নির্মাণ করেছিলেন। বাল মূর্ত্তির পূজার জন্য বেদী বানানো ছাড়াও, ইস্রায়েলের রাজা আহাবের মতই মনঃশি আশেরার খুঁটি পুঁতেছিলেন। তিনি আকাশের তারাদেরও পূজা করতেন
৪ মূর্ত্তিসমূহের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে তিনি প্রভুর প্রিয় ও পবিত্র মন্দিরের মধ্যেও বেদী বানিয়েছিলেন। (#এই সেই_জায়গা_যেখানে প্রভু বলেছিলেন, “আমি  জেরুশালেমে আমার নাম স্থাপন করব।”)
৫ মন্দিরের দুটো উঠোনে তিনি আকাশের নক্ষত্ররাজির জন্য বেদী বানান। “
(বাইবেল, ২ রাজাবলী(2 Kings) ২১:৩-৬)
বাংলা বাইবেল থেকে সংশ্লিষ্ট অংশের লিঙ্কঃ https://goo.gl/FtvZQj
ইংরেজি বাইবেল থেকে সংশ্লিষ্ট অংশের লিঙ্কঃ https://goo.gl/hN31FW

খ্রিষ্টান মিশনারীরা কা’বার বিরুদ্ধে যে (অপ)যুক্তি প্রদান করেন, সেই এক যুক্তি কিন্তু Temple mount এর ক্ষেত্রেও খাটে। কিন্তু এ ব্যাপারে তারা অন্ধের ভান করে কা’বার বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেন। নাস্তিক-মুক্তমনাদেরকেও কখনো বাইবেলের নবী-রাসুলদের Temple mountকে pagan temple বলতে দেখা যায় না; কারণ তাহলে যে জার্মানীর ভিসা নাও জুটতে পারে! এই হচ্ছে তাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। প্রকৃতপক্ষে বাইতুল মুকাদ্দাস(Temple Mount) কিংবা কা’বা গৃহের মসজিদ(মসজিদুল হারাম) এর কোনটিই pagan temple(পৌত্তলিকদের মন্দির) নয় বরং উভয়টিই এক-অদ্বিতীয় আল্লাহর উপাসনাগৃহ।

নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) কা’বা থেকে মিথ্যা দেবতাদের মূর্তি অপসারণ করতে করতে যা বলছিলেন, ইসলাম বিরোধীদের উদ্যেশ্যে আমরাও ঠিক তাই বলি—

“সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।”
(কুরআন, বনী ইস্রাঈল(ইসরা) ১৭:৮১)
============
লেখকঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার
===========
তথ্যসূত্রঃ
[১] ■ “Why Do We Face East When Praying Or Do We – How to calculate mizrach – Questions & Answers” [chabad.org]
http://www.chabad.org/…/Why-Do-We-Face-East-When-Praying-Or…
■ “Mizrah” – Wikipedia, the free encyclopedia
https://en.wikipedia.org/wiki/Mizrah
■ The Western Wall (Wailing Wall) – an Orthodox Jewish prayer. Jerusalem. Israel (You Tube)
https://www.youtube.com/watch?v=5H-zCfM4Mws
[২] বাইবেল, মথি(Matthew) ৫:১৭-২০, লুক(Luke) ১৬:১৬-১৭
[৩] Question regarding Muslims worshiping Ka’bah and Hajr Aswad (islamqa Hanafi)
http://islamqa.org/…/muslims-worshiping-kabah-and-hajr-aswad
[৪] আবদুল্লাহ ইবনে আমর(রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ(ﷺ)কে কা’বা ঘর তাওয়াফ করতে দেখলাম এবং তিনি বলছিলেনঃ কত উত্তম তুমি হে কা’বা! আর্কষীয় তোমার খোশবু, কত উচ্চ মর্যাদা তোমার! কত মহান সম্মান তোমার। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! আল্লাহর নিকট মু’মিন ব্যক্তির জান-মাল ও ইজ্জতের মর্যাদা তোমার চেয়ে অনেক বেশী। আমরা মু’মিন ব্যক্তি সম্পর্কে সুধারণাই পোষণ করি।
[সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস নং ৩৯৩২]
[৫] “Hajj 2013 | Exclusive Kaba Kiswa change 2013-1434 Arafa Day ” (You Tube)
https://www.youtube.com/watch?v=YRPWbfbq2lo
[৬] ■“A brief history of al-Masjid al-Haraam in Makkah” — islamqa(Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)
https://islamqa.info/en/3748
■ ‘আর রাহিকুল মাখতুম’, শফিউর রহমান মুবারকপুরী(র) {তাওহিদ পাবলিকেশন্স} পৃষ্ঠা ৪৬৩-৪৬৬
[৭] বাইবেল, মথি(Matthew) ২১:১২-১৫, ২১:২৩; লুক(Luke) ২:৪৬-৪৯, ২০:১, ২১:৩৭-৩৮
[৮] বাইবেল, আদিপুস্তক(Genesis) ২৮:১০-২২

সমকামিতা একটি ভয়ানক ব্যাধি

ফারিসের ইচ্ছা ছিল লাইব্রেরীতে যাওয়ার। আমিই ওঁকে জোর করে ধরে ক্যান্টিনে নিয়ে গেলাম। খুব চা খেতে ইচ্ছা করছিল তাই। ক্যান্টিনে পৌঁছে আমরা দক্ষিণ পার্শ্বের ছোট টেবিলটিতে বসলাম। খাবারের অর্ডার ফারিসই দিল। তবে চা নয়। কফি। চকলেট ফ্লেবারের কফি। আমরা কফি খাচ্ছিলাম আর গল্প করছিলাম। মিনিট দশেক পর রফিক ভাই এলেন। রফিক ভাই ভার্সিটির সংস্কৃতি সংঘের সভাপতি। সংস্কৃতি সংঘের সভাপতি হলেও সংস্কৃতির বদলে ইসলামের ভুল ধরার পেছনেই বেশি সময় ব্যয় থাকেন। কথায়-কথায় ইসলামকে আক্রমণ করাটা তাঁর অভ্যাস। ফারিসকে দেখে তিনি এগিয়ে এলেন। আমাদেরকে কফি খেতে দেখে একটু ঠাট্টা করেই বললেন, “কিরে মোল্লার দল? তোরা দেহি ক্যান্টিনে বইয়া বইয়া কফি খাইতাছস। কাম কাজ নাই”?

ফারিস বলল, “থাকবে না কেন ভাই? অবশ্যই আছে। কাজের মাঝে একটু বিরতি নিলাম। যাতে শরীরটা চাঙ্গা হয়। এই আর কি”।
– ভাল ভাল।
– কফি খাবেন ভাই?
– কফি! হ খাওয়া যায়। দিতে ক।

ক্যান্টিনের আসাদ মামাকে ডেকে আরও একটা কফি দিতে বললাম। রফিক ভাই একটা সিগারেট ধরালেন। তবে একটান দিয়েই নিভিয়ে ফেললেন। নেভানোর কারণটা অবশ্য ফারিস। রফিক ভাই জানেন, সিগারেটের গন্ধ ফারিস একদম সহ্য করতে পারে না। মিনিট পাঁচেক পর কফি এল। কফির কাপটা ফারিস রফিক ভাইয়ের দিগে এগিয়ে দিল।

কাপটা হাতে নিয়ে রফিক ভাই বললেন, “ঈদের অনুষ্ঠানে আরটিভি সমকামিতা নিয়া একটা নাটক প্রচার করল। সেইখানে না খারাপ কিছু দেহানো অইল। আর না খারাপ কোন কতা প্রচার করা অইল। তার পরেও হুজুররা এইডা নিয়া লাফালাফি শুরু করল। অনলাইন অফলাইনে এক্কেবারে ঝর তুইলা ফেলল। এই কামডা কি ঠিক অইল? তুঁই ক”?
.
যা ভেবেছিলাম তাই। আজও তিনি ফারিসের সাথে তর্ক করতে এসেছেন। ওনার প্রশ্নের জবাবে ফারিস বেশ শান্ত গলায় বললো, “হুজুররা কেন সমকামিতার বিরোধিতা করেন জানেন ভাই”?
– কেন আবার? তারা মানুষের কাজ কামের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তাই।
– আপনার ধারণা সম্পুর্ণ ভুল ভাই।
– ভুল মানে?
– হুজুরদের বিরোধীতার আসল কারণটা আপনি জানেন না।
– জানি জানি। খুব জানি। হুজুরগো আমার চিনা আছে। খালি মসজিদ মাদ্রাসা লইয়া পইরা থাকে। আর মানুষের কাজে-কামে নাক গলায়। মানুষরে দাস বানাইয়্যা রাখবার চায়। এইডাই মেন কারণ।
– রফিক ভাই, আপনি আবারো ভুল বলছেন।
– ভুল কইতাছি? তাইলে ঠিকটা কি?
– হুজুরদের সমকামিতাকে সাপোর্ট না করা, কিংবা সমকামীদের বিরোধিতা করার কারণ হল- সমকামিতা একটি গর্হিত কাজ?
– গর্হিত কাম? হা হা হা। হাঁসাইলি ফারিস। হাঁসাইলি। সমকামিতা খারাপ কাম অইব কেন? এইডা মানুষের জেনেটিক বিষয়। মানুষ জন্মগতভাবেই সমকামী অইতে পারে। হেইডা কি তোর জানা নাই?
– আপনি একটা মস্তবড় ভুল ইনফরমেশন দিলেন ভাই।
– আমি ভুল ইনফরমেশন দিছি?
– এইতো, এইমাত্র দিলেন।
– তাইলে ঠিকটা তুই-ই ক। আমি শুনি।

রফিক ভাই এর কথা শেষ হলে ফারিস আমাকে লক্ষ্য করে বললো, “তুই তো হিস্টোলজি আমার থেকে ভাল করে পড়েছিস। রফিক ভাই কে একটু পায়ু ও যোনীর গাঠনিক পার্থক্যগুলি বল তো”।

ফারিসের কথা শেষ হলে আমি বললাম, “আসলে মেয়েদের যোনী যৌনমিলনের জন্য স্পেশালভাবে তৈরি একটি অঙ্গ। যোনী তিন স্তর বিশিষ্ট পুরু ও স্থিতিস্থাপক মাসল দ্বারা তৈরি। যোনীর অভ্যন্তরে রয়েছে ন্যাচারাল লুব্রিকেন্ট। যার ফলে যোনীর ভিতরে লিংগ অতি সহজেই ঢুকে যেতে পারে। ন্যাচারাল লুব্রিকেন্ট, তিন স্তর বিশিষ্ট লেয়ার ও স্থিতিস্থাপক মাসল থাকার কারণে যোনীতে লিঙ্গ প্রবেশের ফলে কোন রকম রক্তপাত কিংবা ঘর্ষণ পরিলক্ষিত হয় না। অপরদিকে মলাশয় একটি অত্যন্ত নাজুক অঙ্গ। মলাশয়ে নেচারাল লুব্রিকেন্ট অনুপস্থিত। মলাশয়গাত্র একেবারেই পাতলা। একস্তর বিশিষ্ট আবরণ থাকে। আর মলাশয়ে লিঙ্গ যোনীর মত সহযেই ঢুকতে পারে না। চাপ দিয়ে ঢুকাতে হয়। যেহেতু মলাশয় গাত্র পাতলা ও ন্যাচারাল লুব্রিকেন্ট অনুপস্থিত, তাই লিঙ্গ ঢুকানোর ফলে রক্তপাত হয়। ফলে বীর্য অতি সহজেই রক্তের সাথে মিশে ইনফেকশন তৈরি করতে পারে। ইউমিনোলজিক্যাল স্টাডি থেকে আরও জানা যায় যে, বীর্যরস ইমিউনোসাপ্রেসিভ। আর মানুষের এন্যাল রুটের ইমিনো সিস্টেম যোনির ইমিউনো সিস্টেমের তুলনায় দুর্বল হয়। বীর্যরস যদি মলাশয়ে নির্গত হয়, তাহলে মলাশয়ের ইমিনো সিস্টেম আরও দুর্বল হয়ে পরে। ফলে জীবাণু বিনা প্রতিরোধে শরীরে প্রবেশ করে। এবং বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে”।

আমার কথা শুনে রফিক ভাই সন্তুষ্ট হতে পেরেছে বলে মনে হল না। তিনি এবার বললেন, “সবই বুঝলাম। কিন্তু বিজ্ঞানীরা যে গে জীন আবিষ্কার করছে। গে জীনডাই তো যথেষ্ট সমকামিতাকে জেনেটিক্যালি প্রোভ করবার জন্য”।
রফিক ভাইয়ের কথা শুনে ফারিস হাঁসতে শুরু করল। হাসি থামিয়ে রফিক ভাইকে বলল, “ভাই একটা প্রশ্ন করি”?
– আর কি প্রশ্ন করবি? এইবার তো তুই আমার কাছে হাইরা গেলি। হো হো হো।
– সে না হয় পরে দেখা যাবে। আগে বলেন তো, আপনি গে জীনের কথা কোথা থেকে শুনেছেন?
– হেইডা তোরে কওয়া যাইবো না। এইডা সিক্রেট ব্যাপার।
– আমি বলি?
– ক দেহি?
– ‘অভিজিৎ রায়ের’ বই থেকে। তাইনা?

ফারিসের সন্দেহটা ঠিক। রফিক ভাই কোন জবাব দিল না। রফিক ভাইইয়ের চুপ থাকাটাই মৌন সম্মতি নির্দেশ করে।
এরপর ফারিস বললো, “আচ্ছা রফিক ভাই। আমি যদি গণিতবিদের কাছে অর্থনীতি বুঝতে যাই- তাহলে সেটা কেমন হবে”?
– পাগলে কয় কি? গণিতের লোকগো কাছে তুই অর্থনীতির কি পাইবি? অর্থনীতি বুঝতে চাইলে অর্থনীতিবিদদের কাছে যাইতে অইব’।
– তাহলে আপনি যদি ইঞ্জিনিয়ার এর বই পড়ে মেডিক্যাল সাইন্স বুঝতে চান সেটা কেমন হবে?

রফিক ভাই কিছু বলল না। ফারিস বলল, “সবারই অধিকার আছে মেডিক্যাল সাইন্সের বিষয় গুলি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার। তাই বলে মিথ্যাচার করার অধিকার কিন্তু কারো নেই”।
– তার মানে তুই কইবার চাস অভিজিৎ দাদা মিসা কতা লিখছে তার বইডার মধ্যে?
– শুধুই কি মিথ্যা? তার গোটা বইটাই মিথ্যার ফুলঝুড়ি দিয়ে সাজানো।
– দাদাতো বইডার মধ্যে রেফারেন্স দিয়াই লিখছে। নাকি?
– রেফারেন্স দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু ভুল গবেষণার।
– ভুল?
– জ্বি ভাই। ভুল। অভিজিৎ রায় ‘গে’ জীনের কথা উল্লেখ করে দাবি করেছেন মানুষের সমকামী হওয়ার জন্য এই ‘গে’ জীন দায়ী। কিন্তু তথাকথিত ‘গে’ জীনের ফাদার উপাধিপ্রাপ্ত Dr. Dean Hamer ‘গে’ জীনের কথা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। ‘Scientific American Magazine’ যখন তাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে, ‘সমকামিতা কি জীনবিদ্যার সাথে সম্পর্কিত’? তখন তিনি তার উত্তরে বলেছিলেন, ‘Absolutely not’.
‘The Human Genome’ প্রজেক্ট শুরু হয়েছিল ১৯৯০ সালে এবং শেষ হয় ২০০৩ সালে। এই প্রজেক্টে মানুষের জীন নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করা হয়। কিন্তু তারা তথাকথিত ‘গে’ জীনের কোন অস্তিত্বই খুঁজে পায় নি।
Dr. George Rice, Dr. Neil and Whitehead, Drs. William Byne, Bruce Parsons এই সব বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, মানুষ কখনোই জন্মগতভাবে সমকামী হতে পারে না। আর ‘গে’ জীন বলে কোন জীনের অস্তিত্বই নেই। ছাড়াও অনেক বিজ্ঞানীই হেমারের গবেষণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন। যে গবেষনায় তিনি দাবি করেছিলেন যে, ‘মানুষ জন্মগতভাবে সমকামী হতে পারে’।

Laumann এর গবেষণায় দেখা গেছে যে, সমকামিতা সৃষ্টিতে শহর পরিবেশ গ্রাম্য পরিবেশের তুলনায় বেশি ভুমিকা পালন করে। যদি সমকামিতা জেনেটিক-ই হত তাহলে তো সব স্থানে এর বিস্তার সমান হওয়ার কথা ছিল। সমকামিতা আবেগ, কৌতুহল, আকর্ষণ ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ফলেই উদ্ভূত হয়। আর সমকামী সম্পর্ক অস্থায়ী। যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়।
এখন বলেন তো ভাই, অভিজিৎ রায় কি ভুল তথ্য আর মিথ্যা তথ্য দেন নি?

ফারিসের কথা শুনে রফিক ভাইকে কিছুটা চিন্তিত মনে হচ্ছে। তিনি বেশ কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। এরপর কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, “শুনলাম আমেরিকার মনোবিজ্ঞানীরা নাকি সমকামিতারে মানসিক রোগের চার্ট থেইকা বাদ দিছে? যদি দিয়াই থাকে তাইলে তোর কথা কেমনে মানি? হেরা নিশ্চয়ই তোর চাইতে বিজ্ঞান বেশি জানে”।

রফিক ভাইয়ের কথা শুনে ফারিস বেশ হাসিমুখে বললো, “ভাই আপনি জানেন কি? ১৯৭৩ সালের আগ পর্যন্ত আমেরিকায় সমকামিতা একটি মানসিক ব্যাধি হিসেবে গণ্য হত”।
– না। এইডা আমার জানা ছিল না।
– সমকামিতাকে মানসিক ব্যাধির চার্ট থেকে বাদ দেয়ার কারণ বিজ্ঞান নয়। অন্য কিছু।
– তোরা না! সব কামোই খালি সন্দেহ খুজস। আইচ্ছা ক দেহি হেই কারণডা কি?
– পলিটিকাল কারণ।
– পলিটিকাল?
– জি ভাই। পলিটিকাল। কেননা রাজনৈতিক দলগুলো সমকামী ও তাঁদের প্রতি সহনশীল ব্যাক্তিবর্গের ভোট পাওয়ার জন্য আমেরিকান মনোবিজ্ঞান সংস্থাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। তাঁদের চাপের মুখে সংস্থাটি নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। তবে তারা এটা বলার দুঃসাহস দেখায় নি যে- বিজ্ঞান এটা মেনে নিয়েছে। ২০০০ সালের মে মাসে ‘American Psychiatric Association’ ঘোষণা করে, ‘Currently, there is a renewed interest in searching for biological etiologies for homosexuality. However, to date there are no replicated scientific studies supporting any specific biological etiology for homosexuality’.

রফিক ভাই এবার চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বসলেন। এরপর বললেন, “তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু ব্যক্তিস্বাধীনতা বইলা তো একটা কথা আছে। নাকি? সমকামীরা তো সমাজের কোন ক্ষতি করতাছে না। তাইলে তাগো পিছনে লাইগ্যা লাভ কি? তারা তাগোর কাম করুক। আমরা আমাগোর কামে টাইম দেই। হেইডাই আমাগোর লাইগ্যা ভালা”।
– রফিক ভাই, একটা প্রশ্ন করি?
– হ কর।
– কেউ যদি আপনার সামনে গাঁজা খায় আপনি কি তাকে বাঁধা দেবেন?
– বাঁধা দিমু না মানে? এইডা তুই কি কস?
– কেন বাঁধা দিবেন? গাঁজা খাওয়াটা কি তার ব্যক্তিস্বাধীনতা নয়?
– রাখ তোর স্বাধীনতা। গাঞ্জা খাইলে হের শরীলো কি পরিমাণ ক্ষতি অইব তুঁই জানস? তারে অবশ্যই এই কাম থেইকা ফিরাইয়্যা রাহন লাগবো।
– সমকামীদেরও বাঁধা না দিলে যে বিভিন্ন ধরণের রোগ তাঁদের শরীরে বাসা বাঁধবে। সেটার খেয়াল কে করবে ভাই?
– মানে? তুই কি কইবার চাস?
– ভাই। বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, এনাল সেক্স অন্য যে কোন সেক্সের তুলনায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে ‘সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ’ গুলো অতি দ্রুত বিস্তার লাভ করে। আর সে জন্যেই আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন- সমকামীদের মধ্যে এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া সহ সব যৌনরোগ গুলোর সংক্রমণের হার বেশি। ‘গে-বাওয়েল সিনড্রোম’ নামক রোগ সমকামীদের মধ্যে অধিকমাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘গে-বাওয়েল সিনড্রোম’।
আচ্ছা রফিক ভাই বলেন তো; এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া রোগগুলোর মধ্যে কোনটা মানুষের জন্য অধিক ক্ষতিকারক?
– কোনডা আবার? এইডস। এইডা তো সবাই জানে। কারণ এইডার কোন অশুধ এহনো আবিষ্কার অয় নাই।
– আপনি শুনলে হয়তো অবাক হবেন, মরণঘাতী এইডস এর অন্যতম কারণ হচ্ছে সমকামিতা।
– এইডা কি তর কতা? নাকি বিজ্ঞানীদের?
– আমার কথা কেন হবে ভাই? এটা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত। আমেরিকান ‘সেন্ট্রাল ফর ডিজিজ কন্ট্রোল’ (CDC) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার UNAIDS দেয়া স্টাডি এ কথা প্রমাণ করেছে। তারা দেখিয়েছে যে, সমকামিতা এইডস এর অত্যন্ত বড় রিস্ক ফ্যাক্টর। CDC’র দেয়া তথ্য থেকে আরও জানা যায়, ১৯৯৮ সালে আমারিকায় নতুন এইচআইভি সংক্রামিত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৪%-ই ছিল সমকামী। ২০০৯ সালের আগষ্ট মাসে CDC’র দেয়া অপর একটি রিপোর্ট বলছে, সাধারণ জনগোষ্ঠীর চেয়ে সমকামীদের মধ্যে এইডস সংক্রমণের হার প্রায় ৫০গুণ বেশি। এছাড়া UNAIDS’র ২০১৫ এর একটি রিপোর্টও ঠিক একই কথাই বলেছে।
.
ফারিসের কথা শেষ হলে আমি বললাম, “আচ্ছা ফারিস। সমকামিতা কি যৌনরোগ ছাড়া অন্যান্য রোগের জন্যেও দায়ী? যেমনঃ ক্যান্সার বা এই টাইপের কিছু?”।
.
আমার প্রশ্ন শুনে ফারিস বললো, “গুড পয়েন্ট। অনেক সুন্দর একটা প্রশ্ন করছিস। প্রশ্নটা না করলে হয়তো আমার এই পয়েন্টটা মনেই আসতো না। সমকামিতা শুধু যৌনরোগই ছড়ায় না বরং অন্যান্য রোগও ছড়ায়। ক্যান্সার হল তাদের মধ্যে অন্যতম। এনাল সেক্সের ফলে মলাশয়গাত্রে অতি সহজেই ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। যেটা কিছুক্ষণ আগে তুই নিজেই বলেছিস। আর প্যাপিলোমা ভাইরাস খুব সহজেই এনাল রুট দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। ক্ষতের মাধ্যমে এই ভাইরাস অতি দ্রুত রক্তের সাথে মিশে যায়। যার ফলে এনাল ক্যান্সার সমকামীদের মধ্যে অনেক বেশি দেখা যায়। ‘Nursing Clinic of North America’র দেয়া ২০০৪ সালের একটি রিপোর্ট থেকে দেখা যায়- এইডস আক্রান্ত ৯০% এবং এইডস ব্যতীত ৬৫% সমকামীদের দেহে ‘Human Papilloma Virus’ রয়েছে। যা ক্যান্সারের জন্য দায়ী। সমকামীদের এনাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বিষকামীদের থেকে ১০গুণ বেশি। আর এইডস আক্রান্ত সমকামীদের এ ঝুঁকির পরিমাণ আরও বেশি। প্রায় ২০গুণ।
হেপাটাইটি-এ সমকামীদের মধ্যে বেশি হয়। ১৯৯১ সালে নিউইয়র্কে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সে সময়টাতে ৭৮% হেপাটাইটিস-এ তে আক্রান্ত ব্যক্তি ছিল সমকামী। এছাড়া বিভিন্ন প্যারাসাইট্রিক ও ব্যাকটেরিয়াল ডিজিজ সমকামীদের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে। সমকামিতার আরও বড় সমস্যা হল, সমকামীরা একটা সময়ে এসে বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী হয়ে যায়”।
.
ফারিসের পাশে বসা রফিক ভাই এতক্ষণ চুপই ছিলেন। কিন্তু ফারিসের কথা শুনে যেন তার টনক নড়ে উঠল। ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল। তিনি বেশ মোটা গলায় বললেন, “বিকৃত মস্তিষ্ক হইয়্যা যায় মানে? কস কি আবোল-তাবোল? এইসব ইনফরমেশন তোরে কেডায় দিছে?”
.
“Coprofilia কাকে বলে জানেন ভাই?” ফারিসের পাল্টা প্রশ্ন রফিক ভাইয়ের কাছে।
.
রফিক ভাই মাথা নাড়লেন। এরপর আবার চেয়ারে হেলান দিয়ে কফির কাপের দিকে মনোযোগ দিলেন। রফিক ভাইয়ের উত্তরটা জানা ছিল না বিঁধায় উত্তরটা ফারিস-ই দিল।
.
ফারিস বললো, “Coprofilia হল এমন একটি যৌন আচরণ যেখানে ব্যক্তি মলমুত্রের সংস্পর্শে এসে আনন্দলাভ করে। ফিনল্যান্ডের একটি সার্ভে থেকে জানা যায় যে ১৭% সমকামী এই অস্বাভাবিক যৌনাচারে লিপ্ত। একবার চিন্তা করুন ভাই। সমকামীরা মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্রতম অংশ। তারপরেও এই অস্বাভাবিক যৌনাচার তাদের মধ্যে ১৭%। আনুপাতিক বিচারে এই পারসেন্টেজটা তাহলে কত বিশাল?
সমকামীদের মধ্যে ধর্ষকামও বেশি দেখা যায়। ৩৭% সমকামী এই অস্বাভাবিক যৌনাচারে লিপ্ত। সমকামীরা যৌনতাড়িত বেশি হয়। একটা পর্যায়ে এসে সমকামীরা আত্ন বিধ্বংসী চিন্তা-চেতনার অধিকারী হয়ে যায়। ‘New York Times’র একটি প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, এইডস আক্রান্ত সমকামী ব্যক্তির তার সেক্সুয়াল পার্টনারের মধ্যে এইডস এর ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার পরেও এ নিয়ে কোন অনুতাপ নেই। কোন অনুশোচনা নেই। এছড়া সমকামীরা উন্নাসিক প্রকৃতির হয়। সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথাই থাকে না। অপরদিকে Bagley ও Tremblay’র রিসার্চ থেকে দেখা যায়, সমকামী ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বিষকামীদের চেয়ে ২ থেকে ১৩.৯ গুণ বেশি”।


বাইবেলের-ভবিষ্যদ্বাণী


ফারিসের কথা শেষ হলে রফিক ভাই বললেন, “তোর লাস্ট পয়েন্টটার সাথে আমি একমত হইতে পারলাম না ফারিস”।
– কেন ভাই?
– আত্মহত্যা কস আর মানসিক সমস্যাই কস। এইগুলার জন্য কইলাম সমকামীরা দায়ী না। এইডার জন্য দায়ী হোমোফোবিয়া। দায়ী সমাজের হুজুরগুলা। যারা উঠতে বইতে সমকামীদের বিরোধীতা করে। আর হোমোফোবিয়া ছড়াইবার কাম করে। সমকামীদের সামাজিকভাবে মাইন্যা নিলে এই সমস্যাডা মনে অয় আর থাকবো না।
– ভাইয়ের নিশ্চয় জানা আছে, নেদারল্যান্ড এ সমকামী বিয়ে আইনসিদ্ধ। মানে সেখানে সামাজিকভাবে সমকামিতাকে কোন অপরাধ বলে গণ্য করা হয় না।
– হ জানি। জানুম না কেন?
– ভাল। নেদারল্যান্ডের General Psychiatry’র দেয়া রিপোর্ট থেকে জানা যায়, তাদের দেশে সমকামীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা অনেক বেশি। সমকামীরা অনেক বেশি মেন্টাল ডিপ্রেশনে ভুগে। অপরদিকে কানাডা একটি উদার রাষ্ট্র। যেখানে সমকামিতা সাধারণ বিষয়। কানাডায় বছরে যে কটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে তার মধ্যে ৩০% আত্মহত্যাকারী সমকামী। একটু লক্ষ্য করুন ভাই। এই সব রাষ্ট্রে হোমোফোবিয়া নেই। তারপরেও এখানে সমকামীদের মানসিক সমস্যা বিষমকামীদের থেকে বেশি। আর এ থেকেই বুঝা যায়, সমকামীদের মানসিক সমস্যার কারণ হোমোফোবিয়া নয়। হুজুররাও নয়। তারা নিজেরাই এর জন্যে দায়ী। তাদের যৌন-উশৃঙ্খল জীবন যাপনই এর জন্য দায়ী।
– আইচ্ছা ফারিস। সমকামিতা তো খৃষ্টের জন্মেরও অনেক আগে থেইকাই চইলা আইতাছে। তাইলে এইডারে কি স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে ধরা যাইবো না?
– আপনি ধর্ষণকে কীভাবে দেখেন? এটাকে কি আপনি স্বাভাবিক আচরণ মনে করেন?
– পাগলে কয় কি? হা হা হা। ধর্ষণরে কি কোন সুস্থ মানুষ স্বাভাবিক আচরণ বইলা মাইনা নিব? হা হা হা।
– কেন নিবে না ভাই? আপনার আপত্তি কোথায়? ধর্ষণ তো খৃষ্টের জন্মের অনেক আগে থেকে চলে আসছে।
.
রফিক ভাই চুপচাপ। কফির কাপটিকে ঘুরাচ্ছেন। কপাল ভাঁজ করে কি যেন চিন্তা করছেন? হয়তো মনে মনে ভাবছেন, ‘আমার শেষ টোপটাও ফারিসকে গেলানো গেল না’। রফিক ভাই এর নিস্তব্ধতা আমাকে সত্যিই আনন্দিত করছে। আসলে মিথ্যা যতই বিশাল হোক না কেন, তার স্থিতি নেই। মিথ্যা তো সমুদ্রের ফেনার মত। আর ফেনা তো বিলীন হয়েই যায়।

রফিক ভাই চুপ করে আছেন দেখে ফারিস বললো, “সমকামিতাকে সহজলভ্য করার জন্য আমেরিকাকে আজ চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। আমেরিকা আজ যৌন বিকারগ্রস্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। যৌনরোগ সেখানে মহামারি আকার ধারণ করেছে। আমেরিকার ৬৫ মিলিয়ন নাগরিক বিভিন্ন যৌনরোগে আক্রান্ত। যশুধুমাত্র HIV-তে আক্রান্ত হল ১.২ মিলিয়ন। এদের মধ্যে সমকামীদের পরিমাণ হল ৫৪%। আমেরিকার মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩.৫% হল সমকামী। তুলনামূলক অনুপাতে সমকামীরা একেবারেই নগণ্য। কিন্তু সংক্রমণের দিক থেকে এরাই সংখ্যাগরিষ্ট। শুধুমাত্র ২০১২ সালে ১৩,৭১২ জন এইডস আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঘটে। যাদের মধ্যে মেক্সিমাম-ই হল গে অথবা লেজবিয়ান। যৌনরোগুলোর ৫৭% সমকামীদের দ্বারা ছড়ায়।
রফিক ভাই। একটু ভাবুন। ভেবে দেখুন, সকামীতা কতটা ভয়ানক ব্যাধি। সমাজের জন্য কতটা ক্ষতিকর। ব্যক্তির জন্য কতটা ধ্বংসাত্মক। এর পরেও যদি আপনি সমকামিতার পক্ষ নেন, আর সমকামিতার বিরোধীতা করার জন্য হুজুরদের সমালোচনা করেন; তো আমার বলার কিছুই নেই ভাই। এস ইউর উইস ব্রাদার”।

ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি ফারিসকে ইশারা দিলাম। ওঁ কথা থামিয়ে দিল। রফিক ভাইয়ের কাছ থেকে আমরা বিদায় নিয়ে ফ্যাকাল্টির দিকে যাত্রা করলাম। চলে যাওয়ার সময় আমি রফিক ভাইয়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম। তাঁর মুখটা বেশ শুকনো দেখাচ্ছিল। পরাজিত সৈনিকের মত মনে হচ্ছিল। আর হবেই না কেন? তিনি আজও ফারিসের কাছে হেরেছেন। মারাত্মকভাবে হেরেছেন। আসলে মিথ্যা কখনোই সত্যের সামনে জয়ী হতে পারে না। কেননা মিথ্যার সে ক্ষমতা নেই।

ক্লাসে পৌঁছানোর পর আমি ফারিসকে বললাম, ‘আজ যা দেখালি না দোস্ত। রফিক ভাইকে একেবারে ভোঁতা করে ছেঁড়ে দিলি’।

ফারিস কিছু বললো না। কেবল ওঁর চিরচেনা হাঁসিটা উপহার দিল। বেশ নজরকাড়া হাসি। যেন মুক্তো ঝরছে।
============
লেখকঃ জাকারিয়া মাসুদ
===========
তথ্যসূত্রঃ
1) S. S. Witkin and J. Sonnabend, “Immune Responses to Spermatozoa in Homosexual Men,” Fertility and Sterility, 39(3): 337-342, pp. 340-341 (1983).
2) New Evidence of a gay gene’ by AnastasiaTouefexis, Time, November 13, 1995, vol. 146,issue 20,p.95
3) http://www.theatlantic.com/…/no-scientists-have-not…/410059/
4) https://concernedwomen.org/images/content/bornorbred.pdf
5) George Rice, et al., “Male Homosexuality: Absence of Linkage to Microsatellite Markers at Xq28,”Science, Vol. 284, p. 667.
6) William Byrne and Bruce Parsons, “Human Sexual Orientation: The Biologic Theories Reappraised,” Archives of General Psychiatry, Vol. 50, March 1993: 228-239
7) Laumann EO, Gagnon JH, Michael RT, Michaels S. 1994. The Social Organization of Sexuality. Chicago: University of Chicago Press
8) American Psychiatric Association . Fact sheet – “Gay,Lesbian and Bisexual Issues,” , May – 2000
9) http://www.evolvedworld.com/…/it…/169-back-to-school-sex-101
10) http://www.yourtango.com/experts/ava-cadell–ph-d—ed-d/3-reasons-men-cheat
11) Henry Kazal, et al., “The gay bowel syndrome: Clinicopathologic correlation in 260 cases,” Annals of Clinical and Laboratory Science, 6(2): 184-192 (1976).
12) Hepatitis A among Homosexual Men—United States, Canada, and Australia,” Morbidity and Mortality Weekly Report, CDC, 41(09): 155, 161-164 (March 06, 1992).
13) Glen E. Hastings and Richard Weber, “Use of the term ‘Gay Bowel Syndrome,’” reply to a letter to the editor, American Family Physician, 49(3): 582 (1994).
14) Paraphilias,” Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, Fourth Edition, Text Revision, p. 576, Washington: American Psychiatric Association, 2000; Karla Jay and Allen Young, The Gay Report: Lesbians and Gay Men Speak Out About Sexual Experiences and Lifestyles, pp. 554-555, New York: Summit Books (1979).
15) http://www.cdc.gov/hiv/topics/msm/index.htm
16) http://www.springerlink.com/content/jx13231641717w48/
17) http://www.cdc.gov/hiv/resources/qa/qa22.htm
18) http://www.unaids.org/…/aboutuna…/unaidsstrategygoalsby2015/
19) http://www.cdc.gov/hiv/topics/surveillance/basic.htm
20) Mads Melbye, Charles Rabkin, et al., “Changing patterns of anal cancer incidence in the United States, 1940-1989,” American Journal of Epidemiology, 139: 772-780, p. 779, Table 2 (1994).
21) N. Kenneth Sandnabba, Pekka Santtila, Niklas Nordling (August 1999). “Sexual Behavior and Social Adaptation Among Sadomasochistically-Oriented Males”. Journal of Sex Research.
22) Theo Sandfort, Ron de Graaf, et al., “Same-sex Sexual Behavior and Psychiatric Disorders,” Archives of General Psychiatry, 58(1): 85-91, p. 89 and Table 2 (January 2001).
23) http://www.youth-suicide.com/gay-bisexual/gbsuicide1.htm
24) Edward O. Laumann, John H. Gagnon, et al., The social organization of sexuality: Sexual practices in the United States, p. 293, Chicago: University of Chicago Press, 1994
25) The United States”. HIV/AIDS Knowledge Base. University of California, San Francisco. Retrieved November 25, 2011.
26) “Estimating HIV Prevalence and Risk Behaviors of Transgender Persons in the United States: A Systematic Review”. AIDS Behav. 12 (1): 1–17. Jan 2008. doi:10.1007/s10461-007-9299-3. PMID 17694429.
27) Centers for Disease Control and Prevention, (CDC) (June 3, 2011). “HIV surveillance—United States, 1981–2008”. MMWR. Morbidity and mortality weekly report. 60 (21): 689–93. PMID 21637182.
28) http://www2.law.ucla.edu/…/How-many-people-are-LGBT-Final.p…
29) https://simple.m.wikipedia.org/wiki/Coprophilia
30) https://en.m.wikipedia.org/wiki/HIV/AIDS
31) https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sadism

ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্ষকের শাস্তি

মুফতী ইউসুফ সুলতানঃ বেশ কিছুদিন ধরে সংবাদপত্রে ধর্ষণের সংবাদগুলো গুরুত্ব পাচ্ছে। ফেইসবুক ও ব্লগাগুলোতেও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচনায় আসছে। ভিন্ন শব্দ ও প্রকাশে সবার একটাই চাওয়া। ধর্ষককে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন করা।

এসব আলোচনা দেখে এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখার নিয়ত করেছি। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে শুরু করছি।

ধর্ষণের সংজ্ঞা:

উইকিপিডিয়া অনুযায়ী ধর্ষণ হলো:

Rape is a type of sexual assault usually involving sexual intercourse, which is initiated by one or more persons against another person without that person’s consent.
 ধর্ষণ এক ধরনের যৌন আক্রমণ। সাধারণত, একজন ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিরেকে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম বা অন্য কোনো ধরনের যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানোকে ধর্ষণ বলা হয়।

বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞা ও শাস্তির যেসব বিবরণ এসেছে:

দন্ডবিধি ১৮৬০ – The Penal Code 1860: ধারা ৩৭৫-৩৭৬
A man is said to commit “rape” who except in the case hereinafter excepted, has sexual intercourse with a woman under circumstances falling under any of the five following descriptions:

Firstly. Against her will.

Secondly. Without her consent.

Thirdly. With her consent, when her consent has been obtained by putting her in fear of death, or of hurt.

Fourthly. With her consent, when the man knows that he is not her husband and that her consent is given because she believes that he is another man to whom she is or believes herself to be lawfully married.

Fifthly. With or without her consent, when she is under fourteen years of age.

Explanation. Penetration is sufficient to constitute the sexual intercourse necessary to the offense of rape.

Exception. Sexual intercourse by a man with his own wife, the wife not being under thirteen years of age, is not rape.

376. Whoever commits rape shall be punished with 131[ imprisonment] for life or with imprisonment of either description for a term which may extend to ten years, and shall also be liable to fine, unless the woman raped is his own wife and is not under twelve years of age, in which case he shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to two years, or with fine, or with both.

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এ রয়েছে:

৯৷

  1. যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
    ব্যাখ্যা৷- যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ২[ ষোল বত্সরের] অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া, অথবা ৩[ ষোল বত্সরের] কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন৷
  2. যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তাহার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
  3. যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষন করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহা হইলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
  4. যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে-
    (ক) ধর্ষণ করিয়া মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন;
    (খ) ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
  5. যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে কোন নারী ধর্ষিতা হন, তাহা হইলে যাহাদের হেফাজতে থাকাকালীন উক্তরূপ ধর্ষণ সংঘটিত হইয়াছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়ী ছিলেন, তিনি বা তাহারা প্রত্যেকে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হইলে, হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য, অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যুন দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷

টিকা দুটিতে আছে: “ষোল বত্সরের” শব্দগুলি “চৌদ্দ বত্সরের” শব্দগুলির পরিবর্তে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০০৩ (২০০৩ সনের ৩০ নং আইন) এর ৩ ধারাবলে প্রতিস্থাপিত।


আরও পড়ুন – একটি অসম্ভাব্য কথোপকথন


ইসলামে ধর্ষণের সংজ্ঞা:

ইসলাম ধর্ষণকে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেনি। কারণ ইসলামে ধর্ষণ ভিন্ন কোনো অপরাধ নয়। বরং বিবাহবহির্ভূত যে কোনো যৌন সঙ্গমই ইসলামে অপরাধ। যাকে “যিনা” শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে।

যিনা সুস্পষ্ট হারাম এবং শিরক ও হত্যার পর বৃহত্তম অপরাধ। আল-কুরআনে আছে:
وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا ﴿٦٨﴾ يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا ﴿٦٩﴾ إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا ﴿٧٠﴾

এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (ফুরকান, ৬৮-৭০)

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا ﴿الإسراء: ٣٢﴾

আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (ইসরা, ৩২)

ইমাম কুরতুবী বলেন, “উলামায়ে কিরাম বলেন, ‘যিনা করো না’ –এর চেয়ে ‘যিনার কাছেও যেয়ো না’ অনেক বেশি কঠোর বাক্য।”

এর অর্থ যিনার ভূমিকা যেসব বিষয়, সেগুলোও হারাম।

যিনার শাস্তি

ইসলামে যিনার শাস্তি ব্যক্তিভেদে একটু ভিন্ন। যিনাকারী যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে। আর যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে একশত ছড়ি মারা হবে। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একই শাস্তি।
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ ﴿النور: ٢﴾

ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। (নূর: ২)

হাদীসে আছে,
البكر بالبكر جلد مائة، ونفي سنة، والثيب بالثيب جلد مائة والرجم

অবিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে শাস্তি এক শত বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে একশত বেত্রাঘাত ও রজম (পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড)। (সহীহ মুসলিম)

এই হাদীস থেকে অন্য ফিক্বহের ফকীহগণ বলেন, যিনাকারী অবিবাহিত হলে তার শাস্তি দুটো। ১. একশত বেত্রাঘাত। ২. এক বছরের জন্য দেশান্তর।
আর হানাফী ফকীহগণ বলেন, এক্ষেত্রে হদ (শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি) হলো একশত বেত্রাঘাত। আর দেশান্তরের বিষয়টি ক্বাযী বা বিচারকের বিবেচনাধীন। তিনি ব্যক্তি বিশেষে তা প্রয়োগ করতে পারেন।

ধর্ষণের শাস্তি

ধর্ষণের ক্ষেত্রে একপক্ষে যিনা সংঘটিত হয়। আর অন্যপক্ষ হয় মজলুম বা নির্যাতিত। তাই মজলুমের কোনো শাস্তি নেই। কেবল জালিম বা ধর্ষকের শাস্তি হবে।
ধর্ষণের ক্ষেত্রে দুটো বিষয় সংঘটিত হয়। ১. যিনা ২. বলপ্রয়োগ/ ভীতি প্রদর্শন।

প্রথমটির জন্য পূর্বোক্ত যিনার শাস্তি পাবে। পরেরটির জন্য ফকীহদের একটি অংশ বলেন, মুহারাবার শাস্তি হবে।

মুহারাবা (محاربة) হলো, পথে কিংবা অন্যত্র অস্ত্র দেখিয়ে বা অস্ত্র ছাড়াই ভীতি প্রদর্শন করে ডাকাতি করা। এতে কেবল সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া হতে পারে, আবার কেবল হত্যা করা হতে পারে। আবার দুটোই হতে পারে।

মালেকী ফকীহগণ মুহারাবার সংজ্ঞায় সম্ভ্রম লুট করার বিষয়টিও যোগ করেছেন।

তবে সকল ফকীহই মুহারাবাকে পৃথিবীতে অনাচার সৃষ্টি, নিরাপত্তা বিঘ্নিত করণ, ত্রাস সৃষ্টি ইত্যাদি অর্থে উল্লেখ করেছেন।

মুহারাবার শাস্তি আল্লাহ এভাবে উল্লেখ করেছেন,
إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَن يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم مِّنْ خِلَافٍ أَوْ يُنفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ذَٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ ﴿المائدة: ٣٣﴾

যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি। (মায়িদা: ৩৩)

এখানে হত্যা করলে হত্যার শাস্তি, সম্পদ ছিনিয়ে নিলে বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে দেয়া, সম্পদ ছিনিয়ে হত্যা করলে শূলীতে চড়িয়ে হত্যা করা – এরূপ ব্যখ্যা ফকীহগণ দিয়েছেন। আবার এর চেয়ে লঘু অপরাধ হলে দেশান্তরের শাস্তি দেয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

মোটকথা, হাঙ্গামা ও ত্রাস সৃষ্টি করে করা অপরাধের শাস্তি ত্রাস ও হাঙ্গামাহীন অপরাধের শাস্তি থেকে গুরুতর।

এ আয়াত থেকে বিখ্যাত মালেকী ফকীহ ইবনুল আরাবী ধর্ষণের শাস্তিতে মুহারাবার শাস্তি প্রয়োগের মত ব্যক্ত করেছেন।

উল্লেখ্য, ধর্ষক যদি বিবাহিত হয়, তাহলে এমনিতেই তাকে পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে। কিন্তু সে বিবাহিত না হলে তাকে বেত্রাঘাতের পাশাপাশি বিচারক চাইলে দেশান্তর করতে পারেন। কিংবা অপরাধ গুরুতর হলে বা পুনরায় হলে অবস্থা বুঝে মুহারাবার শাস্তিও প্রদান করতে পারেন।

ইসলামের বিধানের আলোকে বাংলাদেশের ধর্ষণ আইনের পর্যালোচনা:

১. বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে,

যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল বত্সরের অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া,অথবা ষোল বত্সরের কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন৷

ইসলামের সাথে এই সংজ্ঞার তেমন কোনো বিরোধ নেই। তবে এতে কিছু অসামঞ্জস্যতা আছে।

ইসলাম সম্মতি-অসম্মতি উভয় ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বিবাহ বহির্ভূত দৈহিক মিলনকে দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এই আইনে কেবল অসম্মতির ক্ষেত্রে তাকে অপরাধ বলা হয়েছে।

সম্মতি ছাড়া বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ইসলাম ও দেশীয় আইন উভয়ের চোখে অপরাধ। আর সম্মতিসহ সম্পর্ক ইসলামে অপরাধ, দেশীয় আইনে নয়।

এটি নৈতিকভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে সম্মতি সাপেক্ষে অনুমতি দেয়া হলে মানুষ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে উৎসাহী হয়; তার চাহিদা বিস্তৃত হয়। পরে এক পর্যায়ে সে জোরপূর্বক তার চাহিদা মেটাতে সচেষ্ট হয়। আবার কোনো ক্ষেত্রে শুরুতে সম্মতি থাকলেও পরে ভিন্ন কোনো কারণে সম্মতি ছিল না বলে বলা হয়।

সম্মতি আর অসম্মতির বিভাজনরেখা খুব ঠুনকো। এর দ্বারা ধর্ষণ কখনোই রোধ করা সম্ভব নয়।

একই ব্যক্তি তার স্ত্রীভিন্ন অন্য নারীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক করে যখন পার পেয়ে যাবে, তখন সে এক পর্যায়ে জোরপূর্বকও তা করবে। চাহিদাকে সীমিত না করে ধর্ষণ রোধ করার চিন্তা অমূলক।

পক্ষান্তরে ইসলাম মানুষের চাহিদাকে সীমিত করে দেয়। বিবাহ ছাড়া কোনো নারী-পুরুষ দৈহিক সম্পর্কে জড়িতে হলেই তাকে অপরাধ বলে গণ্য করে। কাজেই জোরপূর্বক করাকে অনুমোদন দেয়ার তো প্রশ্নই আসে না।

২. আইনে সম্মতির বিষয়টি অপরাধের সীমা হওয়ায় ষোল বছরের বয়সের কথা বলা হয়েছে, যা পূর্বে চৌদ্দ বছর ছিল এবং পরে তা সংশোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ ষোল বছরের কম কেউ সম্মতিক্রমে দৈহিক মিলন করলেও তা দন্ডনীয় অপরাধ হবে। এবং পুরুষ শাস্তি পাবে। তবে এক্ষেত্রে নারীর কোনো শাস্তি হবে না। (অবশ্য আইনে নারীর কোনো অবস্থায়ই শাস্তি হওয়ার কথা না। ধর্ষণ হলে তো নয়ই। ধর্ষণ না হলেও নয়। কারণ ধর্ষণ না হয়ে সম্মতিক্রমে হলে কারোরই শাস্তি হবে না।)

পক্ষান্তরে ইসলাম কোনো নির্দিষ্ট বয়স উল্লেখ করেনি। বরং বিবাহ বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ককেই যিনা বলেছে, যা দন্ডনীয় অপরাধ। এক্ষেত্রে নারীর সম্মতি থাকলে সেও শাস্তি পাবে। নতুবা পাবে না।

তবে ইসলামে যে কোনো বিধান প্রযোজ্য হওয়ার জন্য বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া জরুরী। আর বালেগ হওয়ার বয়স ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। স্বেচ্ছায় সম্মতিতে কেউ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক করলে তাকে বালেগই ধরা হবে। কাজেই তার ওপরও শাস্তি প্রযোজ্য হবে।

৩. আইনে ধর্ষণের কারণে মৃত্যু না হলে তার মৃত্যুদন্ড নেই। কেবল যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড। পক্ষান্তরে ইসলামে বিবাহিত কেউ ধর্ষণ বা যিনা করলে তার শাস্তি রজম বা পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড।

আইনে ধর্ষণের কারণে মৃত্যু হলে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর ইসলামে ধর্ষণের কারণে মৃত্যু হলে সে প্রথমে যিনার শাস্তি পাবে। পরে হত্যার শাস্তি পাবে। হত্যা যদি অস্ত্র দিয়ে হয় তাহলে ক্বিসাস বা মৃত্যুদন্ড। আর যদি অস্ত্র দিয়ে না হয়, এমন কিছু দিয়ে হয় যা দিয়ে সাধারণত হত্যা করা যায় না, তাহলে দিয়ত বা অর্থদন্ড, যার পরিমাণ একশত উটের মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ (প্রায় কোটি টাকা)।

ধর্ষণের সাথে যদি আরো কিছু সংশ্লিষ্ট হয়, যেমন ভিডিও ধারণ, তা প্রচার ও প্রসার ইত্যাদি, তাহলে আরো শাস্তি যুক্ত হবে।

ইসলামে ধর্ষণ প্রমাণ করা:

যিনা প্রমাণের জন্য ইসলামে দুটোর যে কোনোটি জরুরী।

  1. ১. ৪ জন স্বাক্ষ্য
  2. ২. ধর্ষকের স্বীকারোক্তি।

তবে স্বাক্ষ্য না পাওয়া গেলে আধুনিক ডিএনএ টেস্ট, সিসি ক্যামেরা, মোবাইল ভিডিও, ধর্ষিতার বক্তব্য ইত্যাদি অনুযায়ী ধর্ষককে দ্রুত গ্রেফতার করে স্বীকার করার জন্য চাপ দেয়া হবে। স্বীকারোক্তি পেলে তার ওপর শাস্তি কার্যকর করা হবে।

উপসংহার ও মন্তব্য:

ইসলামে ধর্ষণ ও যিনা, তথা সম্মতি ও অসম্মতি উভয় ক্ষেত্রেই পুরুষের শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। তবে নারীর ক্ষেত্রে ধর্ষিতা হলে কোনো শাস্তি নেই, সম্মতিতে হলে শাস্তি আছে। যৌন অপরাধ নির্ণয়ে ইসলাম নির্ধারিত বিভাজনরেখা (বিবাহিত-অবিবাহিত) সর্বোৎকৃষ্ট।

বাংলাদেশের আইনে যতটুকু শাস্তি রয়েছে তা প্রয়োগে প্রশাসনের অবহেলা আর বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক চাপ প্রয়োগে ধর্ষণের উপযুক্ত শাস্তি হয় না। উপরন্তু ধর্ষিতাকে একঘরে করে রাখা হয়, তাকে সমাজে বাঁকা চোখে দেখা হয়। তার পরিবারকে হুমকি-ধামকি দেয়া হয়। এগুলো কোনোটিই ইসলাম সমর্থন করে না।

ইমাম-খতীব-মুহাদ্দীস-মুফাসসির-মুফতী-ওয়ায়েজ সবারই এ বিষয়ে সচেতনতা তুলে ধরা প্রয়োজন।

সহযোগী সূত্র:

১. الموسوعة الفقهية الكويتية
২. أحكام جريمة اغتصاب العرض في الفقه الإسلامي و تطبيقاتها في المملكة السعودية، إعداد: إبراهيم بن صالح بن محمد اللحيدان
৩. উইকিপিডিয়া
৪. নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০: ধারা ৯
৫. দন্ডবিধি ১৮৬০ – The Penal Code 1860: ধারা ৩৭৫, ৩৭৬

বিশ্বস্ত বন্ধুত্বের পথে ৪ টি পদক্ষেপ

যখন আমরা বিশ্বস্ত বন্ধুর কথা ভাবি, তখন আমরা কেবল সর্বকালের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু আবু বকর আস-সিদ্দীক্ব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর কথাই ভাবতে পারি। তাঁর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে রাসূল (ﷺ)  বলেন, “আমি যার কাছেই ইসলাম পেশ করেছি, সে-ই ইসলাম গ্রহণের পূর্বে নিজে নিজে বিবেচনা করেছে, একটু চিন্তিত হয়েছে কিংবা আমার নবুওয়াতের প্রমাণ চেয়েছে। কিন্তু আবু বকরকে ইসলাম পেশ করার সঙ্গে সঙ্গে নিঃসংকোচে সে ইসলাম গ্রহণ করেছে।” সুবহান আল্লাহ! কী অপূর্ব তাদের বন্ধুত্বের ভীত। নবী (ﷺ) তাঁকে এতোটাই বিশ্বাস করতেন যে, তিনি তাঁকে ‘আস-সিদ্দিক্ব’ উপাধি দিয়েছিলেন, কারণ তাঁর বিশ্বাস ছিলো দৃঢ় ও অটল, আর তাঁর বন্ধুত্ব ছিলো পাথরের মতো কঠিন যার কারণে তিনি অনেকবারই নবীজির (ﷺ) বাণীকে সমর্থন করতে গিয়ে বিসর্জন দিয়েছেন নিজের সম্পদ ও নিরাপত্তা।

বন্ধুত্ব
যে সকল বন্ধু আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে ।

ভালো বন্ধুর একটি মৌলিক উপাদান হলো একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা। একটি চমৎকার হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে কিয়ামতের দিন তারা আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবে। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, সাত প্রকার লোককে আল্লাহ তা’আলা হাশরের ময়দানে নিজের আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। যখন সে ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। তাদের মধ্যে রয়েছেন সেই  দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসেন এবং সেই মহব্বতের জন্যই তারা একত্রিত হন। এবং সেই মহব্বতের কথা স্মরণ রেখেই পরস্পর থেকে পৃথক হন, [বুখারী], যা আমাদের দেখায় জীবন চলার পথে ভালো সাহচর্যের মাধ্যমে কতো সুউচ্চ মর্যাদায় আমরা উন্নিত হতে পারি।

বন্ধুত্বকে অনেকটা সেই পথিকের সাথে তুলনা করা যায়, যে কিনা একটি চূড়ান্ত গন্তব্যের পথে যাত্রা করেছে; যেমনটা একজন লেখক লিখেছেন,
“একাকী ভ্রমণ অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু একজন অভিজ্ঞ পথিক জানেন, ভ্রমণই হচ্ছে তার জীবন আর মানব জীবনে সঙ্গী অপরিহার্য এক অঙ্গ। ‘সঙ্গী’ মানে তারাই, যারা এক পাতে খাবার খায়। তারাই প্রকৃত সুখী, যারা ভেবে নিতে পারে যে, তারা সর্বদা পথেই আছে এবং যাত্রাপথে যাদের সাথেই তাদের সাক্ষাত ঘটে, প্রত্যেককেই তারা নিজেদের কাঙ্ক্ষিত সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করে। উত্তম পথিকেরা তাদের বিরক্তিকর সঙ্গীদের দিকে খেয়াল রাখে। তাদের সঙ্গীরা কখন মনোবল হারাচ্ছে, তারা ঠিক ঠিক তা বুঝতে পারে। তারা যেভাবে তাদের খুঁজে পায়, সেভাবেই তাদের গ্রহণ করে নেয়, তাদের কথা শুনে। বুদ্ধিমত্তার সাথে, নম্রভাবে, সর্বোপরি ভালবাসার সাথে তারা তাদের সামনে এগিয়ে যেতে এবং যাত্রাপথের আনন্দ ফিরে পেতে উৎসাহ যোগায়।”

একবার এক ‘আলিম পরস্পরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার জন্য ভালোবাসার এই সুন্দর ধারণাটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিলেনঃ
“একটি বন্ধুত্বকে আল্লাহর জন্য বলে মোহরাঙ্কিত করা সেই সম্পর্কটি কেবল আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও বিশ্বাসের উপর গড়ে তোলার বাধ্যবাধকতাই নির্দেশ করে, এই বন্ধুত্বটি কেবল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলারই স্বার্থে। এটি আরো নির্দেশ করে যে এক্ষেত্রে কেবল সাধারণ ভালোবাসাই যথেষ্ট নয়; বরং এর দ্বারা বোঝায় সেই ভালোবাসা যা গড়ে ওঠে মৈত্রীর উপর। যা উন্মেষ ঘটায় সহযোগীতা, সম্মান ও শ্রদ্ধার। অর্থাৎ আপনি যাদের ভালোবাসেন কথা ও কাজ উভয় ক্ষেত্রেই তাদের সাথে থাকা। আল্লাহর স্বার্থে অনুগত হওয়ার প্রকৃত অর্থ হলো আল্লাহকে ভালোবাসা ও তাঁর দ্বীনের কল্যাণে কাজ করা; তাদের ভালোবাসা যারা আল্লাহ আয্‌যাওয়াজাল-এর প্রতি অনুগত ও তাদের সাহায্য করা।”

ভালো সঙ্গী খুঁজে পেতে আমরা বিশ্বাসের বীজ বপন করছি যাতে আমাদের বন্ধুত্ব বিশ্বাসের উপর গড়ে ওঠে, আর প্রত্যেকের বিশ্বাস যেনো তাকে ভালো বন্ধু পেতে উৎসাহ যোগায়।


আরও পড়ুন – আল্লামা আতহার আলী রহ., চেতনার বাতিঘর এক মহান পুরুষ


ভালো সহচর পাওয়ার ব্যবহারিক কৌশল

উপর্যুক্ত বন্ধুদের মতো কিছু বিশ্বস্ত বন্ধু খুঁজে পেতে আপনাকে সাহায্য করার জন্যই এখানে কিছু ব্যবহারিক কৌশলের কথা উল্লেখ করা হলো যেগুলো আপনি কাজে লাগাতে পারেনঃ

১. আন্তরিক হোন এবং নিজে থেকে শুরু করুনঃ

ভালো বন্ধু খুঁজে পাওয়ার চাবিকাঠি হলো সকল ইসলামিক কার্যকলাপের পাশাপাশি নিয়্যাতের ব্যাপারে আন্তরিক হওয়া, আর উপর্যুক্ত গুণাবলী ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো নিজের মধ্যে বিকাশ ঘটানো যা আমরা ভালো বন্ধুদের মাঝে দেখতে চাই।

২. খারাপ বন্ধু ত্যাগ করুনঃ

আমি জানি খারাপ বন্ধু ত্যাগ করার সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা খুব সহজ নয়, কিন্তু মনে রাখবেন আপনি যদি কোনো কিছু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার জন্য ত্যাগ করেন তবে তিনি এর পরিবর্তে অনেক উত্তম কিছু দান করবেন। তার মানে এই নয় যে একসাথে সব খারাপ বন্ধুকেই ত্যাগ করতে হবে, বরং তাদের ভালো কাজ করার উপদেশ দিন, তাদের ভেতর পরিবর্তন নিয়ে আসার জন্য অনুপ্রেরণার উৎসে পরিণত হোন এবং তাদের জন্য দু’আ করুন।

৩. ন্যায়পরায়ণ বন্ধুর খোঁজ করুনঃ

এটা সম্ভব কেবল জ্ঞানী লোকদের মজলিশে উপস্থিত থাকার মাধ্যমে, যারা তাদের সত্যবাদীতা, ন্যায়পরায়ণতা ও উত্তম সাহচর্যের জন্য বিশেষ পরিচিত। সঠিক জায়গায় যান। ঈমান বৃদ্ধির জন্য আমাদের উচিত সে সকল স্থানে যাওয়ার লক্ষ্য স্থির করা যেখানে গেলে ভালো মানুষদের পাওয়া যাবে (মসজিদ, ইসলামিক হালাকা [Study Circle], কিংবা আপনি OIEP/ICD থেকেই শুরু করতে পারেন) এবং ক্ষতিকর স্থান এড়িয়ে চলা।

লক্ষ করুন এ ব্যাপারে নবী (ﷺ) কী বলেছেনঃ

সৎ সহচর ও অসৎ সহযোগীর দৃষ্টান্ত হলোঃ একজন কস্তুরীর (সুগন্ধি) ব্যবসায়ী, অন্যজন হাপর চালানকারী (অর্থাৎ কামার)। কস্তুরীর ব্যবসায়ী হয় তোমাকে বিনামূল্যে কস্তুরী দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে তা কিনে নেবে। যদি এ দু’টির একটিও না হয়, তবে তুমি অন্তত তার কাছ থেকে এর সুঘ্রাণটা পাবে। আর হাপর চালানকারী হয় তোমার কাপড় পুড়ে ফেলবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।
[বুখারী ও মুসলিম]


৪. আল্লাহর কাছে দু’আ করুনঃ

সবসময় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে দু’আ করুন যাতে তিনি আপনাকে উত্তম সাহচার্যের দিকে পরিচালিত করেন, আর নিজের পাশাপাশি বন্ধুদের জন্যও দু’আ করুন যাতে আল্লাহ সকলের দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে সর্বোত্তম কল্যাণ দান করেন।

এই ৪ টি কৌশলই আপনার ভালো বন্ধুর অনুসন্ধানে সাহায্য করবে যারা আপনাকে সহায়তা করবে ন্যায়পরায়নতার বীজ বপনে। আর সবশেষে দু’আ করি আমরা সবাই যেনো আখিরাতের বিশ্বস্ত বন্ধুদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি। আমীন।

ইসলামের এক তৃতীয়াংশ জ্ঞান আছে যে হাদিসটাতে

আমীরুল মুমিনীন আবু হাফস্ উমার ইবন আল-খাত্তাব (রা) হতে বর্ণিত হয়েছেতিনি বলেছেনআমি রাসূলুল্লাহ্ (সা) কে বলতে শুনেছি

সমস্ত কাজের ফলাফল নির্ভর করে নিয়্যতের উপরআর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়্যত করেছেতাই পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের জন্য হিজরত করেছেতার হিজরত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের দিকে হয়েছেআর যার হিজরত দুনিয়া (পার্থিব বস্তু) আহরণ করার জন্য অথবা মহিলাকে বিয়ে করার জন্য তার হিজরত সে জন্য বিবেচিত হবে যে জন্য সে হিজরত করেছে।” (সহীহ্ আল-বুখারী: ১/১সহীহ্ মুসলিম: ২০/৪৬৯২)

প্রেক্ষাপটঃ রাসূলুল্লাহ(সা) এই কথাটি বলেছিলেন, যখন জানা গিয়েছিল যে এক ব্যক্তি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত(migrate) করেছে এক নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, আল্লাহ্‌ ও রাসূলুল্লাহ(সা) এর নির্দেশ মেনে চলার জন্য নয়।

ব্যাখাঃ এটি বুখারী শরীফের সর্বপ্রথম হাদিস। ইমাম নাওয়াবীও এই হাদিসটি দিয়েই তাঁর ‘৪০ হাদিস’ গ্রন্থ শুরু করেছেন – এর অন্যতম কারণ হলো ইমাম নাওয়াবী এই গ্রন্থটি পড়ার আগে পাঠককে তার নিয়ত বা উদ্দেশ্য ঠিক করে নেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।

ইমাম শাফীঈ এর মতে ইসলামের এক তৃতীয়াংশ জ্ঞান রয়েছে এই হাদিসে, ফিকাহশাস্ত্রের ৭০টি বিষয় এই হাদিস এর সাথে জড়িত। আপাতদৃষ্টিতে হাদিসটিকে খুব সাধারণ মনে হলেও এর অর্থ ও তাৎপর্য অনেক গভীর। এই হাদিসটির অন্যতম তাৎপর্য হলো – শাহাদাহ বা কালিমা তাইয়েবা একজন মুসলমানের জীবনে কি ধরণের প্রভাব ফেলবে এই হাদিসটি তা বর্ণনা করে।

শাহাদাহ এর দুইটি অংশের সাথে এই হাদিসের সম্পর্কঃ

১ম অংশঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ্‌ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কোন উপাস্য নাই)।অন্যভাবে বললে, একজন  প্রকৃত মুসলমান এর প্রত্যেকটি কাজের উদ্দেশ্য বা নিয়ত হবে আল্লাহ্‌ কে খুশী করা এবং আল্লাহ্‌র নির্দেশ মেনে চলা, কারণ তিনি ছাড়া মেনে চলার যোগ্য, উপাসনার যোগ্য আর কেউই নাই। ইবাদতের একমাত্র যোগ্য সত্তা যেহেতু আল্লাহ্‌, কাজেই আল্লাহ্‌র আবেদী তথা হুকুম-আহকাম মেনে চলাই হবে একজন মুসলমানের জীবনের উদ্দেশ্য। একজন মু’মীন পড়াশুনা করবে এই উদ্দেশ্যে যে আল্লাহ্‌ জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন, সে চাকরী করবে, ব্যবসা করবে এই উদ্দেশ্যে যে আল্লাহ্‌ তাকে পরিবারের দেখাশুনা ও ভরণ-পোষনের দায়িত্ব দিয়েছেন, সে অপচয় করবে না কারণ আল্লাহ্‌ অপচয়কারীকে ভালবাসেন না – এভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার উপাস্য ও সন্তুষ্টির লক্ষ্য হবে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা।

আল্লাহ্‌ মহাগ্রন্থ কোরআনে বলেনঃ
“আমার ইবাদত করা ছাড়া অন্য আর কোন উদ্দেশ্যেই আমি জ্বীন ও মানুষকে সৃষ্টি করি নাই” – সূরা জারিয়াত(৫১:৫৬)

কারো কোন ভাল কাজের যদি নিয়ত থাকে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা, কেবল তখনই তা ইবাদত বলে গণ্য হতে পারে এবং সে তার জন্য সাওয়াব পেতে পারে। যদি কেউ কোন ভাল কাজ কোন পার্থিব প্রাপ্তি বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে করে, তার প্রতিদান সে দুনিয়ার স্বাভাবিক নিয়মে দুনিয়াতেই পাবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন সাওয়াব বা আখিরাতে কোন প্রতিদান পাবে না।


আরও পড়ুন – মহানবীর ﷺ কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য


একটা উদাহরন দিচ্ছি। আমি যদি সুন্দর কাপড় পড়ে জুমু’আর নামাজ পড়তে যাই এই কারণে যে আমার বন্ধুরা আমাকে সুন্দর বলবে, আমি আল্লাহর কাছ থেকে আর কোন প্রতিদান পাবো না, কারণ আমার নিয়ত ছিল আমাকে যেন বন্ধুদের চোখে সুন্দর দেখায়, এবং তাদের চোখে আমাকে সুন্দর দেখিয়েছে, অর্থাৎ আমি এর প্রতিদান দুনিয়ায় পেয়ে গেছি। অন্যদিকে, আমি যদি সুন্দর কাপড় পড়ে জুমু’আর নামাজ পড়তে যাই আল্লাহকে খুশী করার উদ্দেশ্যে, এটা মনে রেখে যে রাসূলুল্লাহ(সা) সুন্দর কাপড় পড়ে জুমুআর নামাজ পড়তে যেতেন, তাহলে আমি আখিরাতে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ্‌র কাছ থেকে এর প্রতিবান পাবো। আমার বন্ধুদের চোখে যদি আমাকে ভালো লাগে বা তারা যদি আমার প্রশংসা করে, তবে সেটা হবে বোনাস। আমার বন্ধুরা যদি আমার প্রশংসা না-ও করে তবুও আমি পরের সপ্তাহে সুন্দর কাপড় পড়ে জুমু’আর নামাজে যাওয়ার চেষ্টা করবো । কারণ, আমার লক্ষ্য আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন, বন্ধুদের প্রশংসা পাওয়া নয়।

২য় অংশঃ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (মুহাম্মদ(সা) আল্লাহর রাসূল)। শাহাদাহ এর প্রথম অংশ বলে আমরা সব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করব, কিন্তু কিভাবে করব তা বলে শাহাদাহ এর দ্বিতীয় এই অংশটি। এই বাক্যাংশটি মেনে নেয়া অর্থ হচ্ছে, মুহাম্মদ(সা) দ্বীন ইসলাম পালনের যে পথ দেখিয়ে গেছেন, যেভাবে আল্লাহর ইবাদত করা শিখিয়ে গেছেন, যেভাবে তাঁর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালিত করেছেন, আমরা ঠিক সেভাবেই তা করব। কারণ তিনি আল্লাহর রাসূল ছিলেন, কাজেই তিনি দ্বীন আমাদের কাছে পূর্নরূপে পৌঁছিয়েছেন এবং কোন ত্রুটি করেন নাই।

আল্লাহ্‌ কোরআনে বলেনঃ

যে রাসূলের আনুগত্য করে সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের ওপর আমি আপনাকে পাহারাদার হিসাবে পাঠাইনি। – সূরা নিসা (৪:৮০)

উল্লেখিত হাদিসে এই কথাটি এভাবে বলা হয়েছে যে, হিজরত সহ অন্য সকল কাজেই যে রাসূলুল্লাহ(সা) কে অনুসরণ করবে এবং তাঁর আদেশ-নিষেধসমূহ পালন করে চলবে, সে আল্লাহকেই মেনে চলবে এবং সঠিকভাবে ইসলামের পথে থাকবে।

উল্লেখ্য, এই হাদিসটি জনপ্রিয় একটি প্রশ্নঃ অমুসলিম ভাল মানুষেরা কেন পরকালে বেহেশতে যাবে না – এই জিজ্ঞাসার উত্তর দেয়। অমুসলিমরা কখনোই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নিয়তে কিছু করে নাই, কাজেই আল্লাহ্‌ আখেরাতে তাদেরকে কোন প্রতিদান দিবেন না। তারা যে উদ্দেশ্যে ভাল কাজ করেছিল, যেমন লোকে তাদেরকে ভাল বলবে, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে – সেই উদ্দেশ্য দুনিয়াতেই সফল হয়েছিল। আল্লাহ্‌ ন্যায়বিচারক, তিনি ন্যায়বিচারই করেছেন। ঐ লোকটি দুনিয়া চেয়েছিল, আল্লাহ্‌ তাকে দুনিয়া দিয়েছিলেন, সে আখিরাত চায়নি, তাই আল্লাহ্‌ তাকে আখিরাত দিবেন না। লক্ষ্য করুন, আমাদের পৃথিবীটাও কিন্তু এই নিয়মেই চলে। আপনি কোন কিছু পেতে চাইলে আপনাকে সেই উদ্দেশ্যে কাজ করতে হবে, এমনি এমনি কেউ আপনাকে সেটা দিয়ে যাবে না। আপনি ডাক্তারি পড়তে চাইলে, আপনাকে ভর্তি ফরম কিনে ডাক্তারী পড়ার জন্য আবেদন করতে হবে। আপনি যত মেধাবী ছাত্রই হোন না কেন, আপনি যদি ঘরে বসে থাকেন, অথবা আপনি যদি কোন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভর্তি ফরম কিনে জমা দেন, আপনি আশা করতে পারেন না যে আপনি ডাক্তারী পড়তে পারবেন।

কাজেই এই হাদিস থেকে আমরা যে প্র্যাক্টিকাল শিক্ষা গ্রহণ করবো তার সারমর্ম হল এইঃ

১) আমরা সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে কাজ করব। আল্লাহ্‌ যা করতে বলেছেন (ঈমান, নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্জ ও অন্যান্য ভালো কাজ) তা করে এবং যা হতে বিরত থাকতে বলেছেন (শিরক, কারণবিহীন হত্যা, ব্যভিচার, চুরি, গীবত, অহংকার ইত্যাদি) তা হতে বিরত থাকলেই কেবল আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারব।

আর, অন্য মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলা থেকে শুরু করে সততার সাথে লেন-দেন করা, এরকম যেকোন ভাল কাজের প্রতিদান যদি আমরা আখিরাতে পেতে চাই, তাহলে ভাল কাজ গুলো করার সময় মনে মনে এই নিয়ত রাখতে হবে যে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই কাজটি করছি। পৃথিবীর কারো কাছে প্রতিদান আমি চাই না, ইনশাআল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ই আমাকে প্রতিদান দিবেন যখন সময় হবে।

২) আমরা রাসূলের (সা) দেখানো পথে কাজ করব। রাসূলুল্লাহ(সা) যেভাবে নামাজ পড়তে বলেছেন সেভাবে নামাজ পড়ব, যেভাবে দু’আ করতে বলেছেন সেভাবে দু’আ করব, যেভাবে ইসলামের প্রচার করতে বলেছেন সেই ভাবে প্রচার করব, যেভাবে পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজন ও মানুষের সাথে ব্যবহার করতে বলেছেন ঠিক সেভাবেই করব। নিয়ত ঠিক করার পর, শুধুমাত্র রাসূলের(সা) দেখানো পথ অনুসরনে ভাল কাজ করলেই আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়া যাবে। অন্য কাজ, তা আপাতদৃষ্টিতে যত ভালই হোক না কেন, যদি রাসূলুল্লাহ(সা) না করে থাকেন এবং তাঁর সঠিকপথে পরিচালিত সাহাবীরা না করে থাকেন, তো আমরা সেটা করা থেকে বিরত থাকব। যেমন: আমরা শবে বরাত বা ঈদ-ঈ-মিলাদুন্নবী পালন করব না, কারণ রাসূলুল্লাহ(সা) বা তাঁর সঠিকপথে পরিচালিত সাহাবীরা এই কাজগুলি করেন নাই। কেউ হয়ত বলতে পারেন, এগুলো তো ভাল কাজ, ঐ দিনগুলি পালনের উসিলায় কিছু ইবাদত করা হয়। কিন্তু, এই যুক্তি ঠিক নয়। নামাজ বেশী পড়াও তো ভাল কাজ। আপনি মাগরিব এর নামাজ ৩ রাকাত না পড়ে ৪ রাকাত পড়েন না কেন? পড়েন না কারণ রাসূলুল্লাহ(সা) এভাবে শিখিয়ে যাননি। এমনিভাবে, নামাজের মত বাকী সকল ইবাদত ও কাজেই রাসূলুল্লাহ(সা) কে অনুসরণ করতে হবে, কেবল তখনই আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সন্তুষ্টি পাওয়া যাবে। কারণ, দ্বীনে নতুন আবিস্কৃত প্রথাসমূহ নিকৃষ্টতম কাজ (বিদআত) এবং প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা (মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ)।

আশা করি উপরে আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট হয়েছে কেন এই হাদিসটিকে ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন হাদিস বলে গণ্য করা হয়। আরও জানতে চাইলে রেফারেন্সের বইগুলি দেখতে পারেন।

রেফারেন্সঃ

১) আন-নাওয়াবীর ৪০ হাদিস। অনুবাদঃ নিজামুদ্দীন মোল্লা।

২) Commentary of forty hadiths of An-Nawawi –  Dr. Jamal Ahmed Badi

৩) Sacred Scrolls: 40 Hadeeth Nawawi – based on the lectures of Shaykh Yasir Qadhi and Imam Suhaib Webb.

৪) ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটি এর ৪০ হাদিস সংক্রান্ত কোর্স

সম্মিলিত দুআ : একটি প্রশ্নের উত্তর

সম্মিলিত দুআ : একটি প্রশ্নের উত্তর-মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

প্রশ্ন : আমি জামেয়া ইসলামিয়া মদীনা মুনাওয়ারার একজন ফাযেলের এক ইংরেজি বইয়ে পড়েছি যে, শরীয়তে সম্মিলিত দুআর কোনো অস্তিত্ব নেই। কুরআন-হাদীস দ্বারা সম্মিলিত দুআ কোথাও প্রমাণিত নয়। একবার উমর ইবনুল খাত্তাব রা. ইস্তেসকার জন্য হযরত আববাস রা-কে ওসীলা বানিয়েছিলেন। সে সময়ও আববাস রা. একা দুআ করেছেন। তদ্রূপ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা (হাদীস ৬২৪২) তে বর্ণিত হয়েছে যে, একবার উমর রা.-এর নিকটে এই সংবাদ পৌছল যে, কিছু মানুষ একত্র হয়ে মুসলিম উম্মাহ ও উমর রা.-এর জন্য  দুআ  করছে।  এটা  শোনামাত্র তিনি তার গোলামকে লাঠি হাতে পাঠালেন যেন তাদেরকে মেরে তাড়িয়ে দেয়।

প্রশ্ন এই যে, তার এই দাবি কি সঠিক এবং উপরোক্ত রেওয়ায়েত কি ইবনে আবী শায়বায় বিদ্যমান আছে? যদি থাকে তবে তার সনদ কেমন?

উত্তর : উপরোক্ত দাবি সম্পূর্ণ ভুল। আর প্রশ্নোক্ত বর্ণনা মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বায় নেই।

এ বিষয়ে বাস্তব কথা এই যে, দুআ অনেক বড় আমল, এমনকি হাদীস শরীফে এসেছে যে, ‘দুআই ইবাদত।’ এই দুআ যেমন একা একা করা যায় তেমনি সম্মিলিতভাবেও করা যায়। শরীয়ত যেখানে কোনো একটি পন্থা নির্ধারণ করে দিয়েছে সেখানে ওইভাবে দুআ করতে হবে- একা হলে একা এবং সম্মিলিতভাবে হলে সম্মিলিতভাবে। কিন্তু শরীয়ত যেখানে কোনো একটি পন্থা নির্দিষ্ট করেনি সেখানে উভয় পন্থাই মুবাহ। বিনা দলীলে কোনো একটিকে যেমন নাজায়েয বলা যায় না তেমনি সুন্নত বা জরুরিও বলা যায় না। এধরনের ক্ষেত্রে উভয় পন্থাই মুবাহ ও দুআকারীর ইচ্ছাধীন থাকে।

উল্লেখ্য, সম্মিলিত দুআ দুইভাবে হতে পারে। এক. সমবেত লোকদের মধ্যে একজন দুআ করবে এবং অন্যরা আমীন বলবে। দুই. একস্থানে সমবেত হয়ে সবাই দুআ করবে, প্রত্যেকে নিজে নিজে দুআ করবে। এই উভয় ছুরত জায়েয।

এছাড়া সমবেত হওয়ারও দুই ছুরত হতে পারে। শুধু দুআর উদ্দেশ্যেই সমবেত হওয়া কিংবা কোনো দ্বীনি বা দুনিয়াবী কাজের উদ্দেশ্যে সমবেত হয়ে মজলিসের শুরু বা শেষে সম্মিলিতভাবে দুআ করা। এই দুই ছুরতই জায়েয। তবে কোথাও যদি কোনো শরয়ী সমস্যা যুক্ত হয় তবে তার হুকুম ভিন্ন।

এই সংক্ষিপ্ত মৌলিক আলোচনার পর শরীয়তের দলীলসমূহে সম্মিলিত দুআর সূত্র লক্ষ্য করুন।

১. প্রথম কথা তো হল, শরীয়তে সম্মিলিত দুআর এমন কিছু ক্ষেত্র বিদ্যমান রয়েছে যা একেবারেই সুস্পষ্ট এবং যে বিষয়ে দ্বিমতের কোনোই অবকাশ নেই। যেমন-

(ক) জামাতের নামাযের জাহরী (স্বশব্দে) কিরাআতে ইমাম যখন সূরা ফাতিহা সমাপ্ত করেন তো সবাই ‘আমীন’ বলে। নামাযে সূরা ফাতিহা মূলত কিরাআত হিসেবে পড়া হলেও তা একই সঙ্গে দুআও বটে। এজন্যই তা সমাপ্ত হওয়ার পর আমীন বলা সুন্নত। একই কারণে সূরা ফাতিহার অপর নাম ‘দুআউল মাসআলাহ।’

(খ) জানাযার নামায একদিকে যেমন নামায অন্যদিকে তা দুআও বটে। জানাযার নামাযের মূলকথা হচ্ছে দুআ। এই নামাযও জামাতের সঙ্গে আদায় করা হয় এবং তৃতীয় তাকবীরের পর ইমাম-মুকতাদী সবাই একসঙ্গে মাইয়্যেতের জন্য দুআ করে।

(গ) অনাবৃষ্টি দেখা দিলে এবং প্রয়োজন সত্ত্বেও যথারীতি বৃষ্টি না হলে শরীয়তে ‘ইস্তিসকা’র (অর্থাৎ আল্লাহর কাছে রহমতের বৃষ্টি কামনা করার) নির্দেশ এসেছে। ‘ইস্তিসকা’র বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। একটি পদ্ধতি  এই যে, সবাই সম্মিলিতভাবে দুআ করবে। যেমন সহীহ বুখারীতে আনাস রা.-এর বর্ণনা এসেছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির জন্য উভয় হাত উঠিয়ে দোয়া করেছেন এবং তাঁর সঙ্গে উপস্থিত সকলে হাত উঠিয়ে দোয়া করেছেন।-সহীহ বুখারী

(ঘ) জুমা ও দুই ঈদের খুৎবায় খতীব দুআ করেন এবং শ্রোতাগণ মনে মনে আমীন বলেন। সম্মিলিত দুআর এই পদ্ধতিও সব জায়গায় প্রচলিত রয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত ‘ইস্তিগফার’ এর মাধ্যমে খুৎবা সমাপ্ত করতেন (মারাসীলে আবু দাউদ; যাদুল মাআদ ১/১৭৯)

২. কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে-

قَالَ قَدْ اُجِیْبَتْ دَّعْوَتُكُمَا

‘তোমাদের দুজনের দুআ কবুল করা হয়েছে।’

এ আয়াতে ‘তোমাদের দুই জনের দুআ’ বলতে মুসা আ. ও হারূন আ. এর দুআ বোঝানো হয়েছে। একাধিক সাহাবী ও বেশ কয়েকজন তাবেঈ ইমামের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত মুসা আ. দুআ করেছেন এবং হারূন আ. আমীন বলেছেন। একেই আল্লাহ তাআলা ‘দুইজনের দুআ’ বলেছেন।

(তাফসীরে ইবনে কাছীর ২/৪৭০; আদ্দুররুল মানছূর ৩/৩১৫)

তো এটা তাঁদের দু’জনের সম্মিলিত দুআ ছিল, যা আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন এবং খোশখবরী শুনিয়েছেন যে- ‘তোমাদের দু’জনের দুআ কবুল করা হয়েছে।’

৩. সাহাবিয়ে রাসূল হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা আলফিহরী রা., যিনি বড় ‘মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ’ ছিলেন, একবার তাকে একটি বাহিনীর আমীর নিযুক্ত করা হয়। তিনি যুদ্ধের প্রয়োজনীয় প্রস্ত্ততি সমাপ্ত করার পর যখন যুদ্ধের সময় নিকটবর্তী হল তখন সহযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বললেন-

سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : لَا يَجْتَمِعُ مَلَأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ سَائِرُهُمْ إِلَّا أَجَابَهُمُ اللَّهُ

‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কিছু মানুষ যখন কোথাও একত্র হয়ে এভাবে দুআ করে যে, একজন দুআ করে এবং অন্যরা আমীন বলে তো আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের দুআ কবুল করেন।’

এই হাদীস বয়ান করে তিনি আল্লাহ তাআলার হামদ ও ছানা করলেন এবং দুআ করতে আরম্ভ করলেন। তাঁর দুআর একটি অংশ এই ছিল-

اللَّهُمَّ احْقِنْ دِمَاءَنَا وَاجْعَلْ أُجُورَنَا أُجُورَ الشُّهَدَاءِ

‘ইয়া আল্লাহ, আমাদের প্রাণ রক্ষা করুন এবং আমাদেরকে শহীদদের সমতুল্য ছওয়াব দান করুন।’

তাঁরা সবাই দুআতেই মশগুলে ছিলেন ইতোমধ্যে রোমক বাহিনীর সেনাপতি (অস্ত্র ত্যাগ করে) হাবীব ইবনে মাসলামা রা-এর তাবুতে এসে উপস্থিত হল।-মুজামে কাবীর, তাবরানী ৪/২৬; মুসতাদরাকে হাকেম ৩/৩৪৭

বর্ণনাটির সম্পূর্ণ আরবী পাঠ নিম্নরূপ :

عَنْ حَبِيبِ بن مَسْلَمَةَ الْفِهْرِيُّ وَكَانَ مُسْتَجَابًا أَنَّهُ أُمِّرَ عَلَى جَيْشٍ فَدَرَّبَ الدُّرُوبَ، فَلَمَّا لَقِيَ الْعَدُوَّ، قَالَ لِلنَّاسِ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ : لا يَجْتَمِعُ مَلأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ سَائِرُهُمْ إِلا أَجَابَهُمُ اللَّهُ، ثُمَّ إِنَّهُ حَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ، فَقَالَ : اللَّهُمَّ احْقِنْ دِمَاءَنَا وَاجْعَلْ أُجُورَنَا أُجُورَ الشُّهَدَاءِ، فَبَيْنَمَا عَلَى ذَلِكَ إِذْ نَزَلَ الْهِنْبَاطُ أَمِيرُ الْعَدُوِّ،فَدَخَلَ عَلَى حَبِيبٍ سُرَادِقَهُ.

رواه الطبراني في الكبير والحكم في المستدرك، والراوي عن ابن لهيعة أبو عبد الرحمن المقري، وهو أحد العبادلة الذين تعد روايتهم عنابن لهيعة صحيحة.

এই রেওয়ায়েতের সনদ কম করে হলেও ‘হাসান’ পর্যায়ের।

প্রশ্ন এই যে, সম্মিলিত দুআর ভিত্তি প্রমাণের জন্য এরচেয়ে স্পষ্ট বর্ণনার প্রয়োজন আছে কি?

৪. ইতিহাসে ‘আলা আলহাযরামী রা-এর ঘটনা সুপ্রসিদ্ধ। বাহরাইনের মুরতাদদের সঙ্গে ১১ হিজরীতে যে লড়াই হয়েছিল তাতে তিনি সিপাহসালার ছিলেন। সেই অভিযানের একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা এই যে, মুসলিম বাহিনী একস্থানে যাত্রাবিরতি করতেই কাফেলার সকল উট রসদপত্রসহ পলায়ন করল। একটি উটও পাকড়াও করা গেল না। অবস্থা এই দাড়াল যে, পরনের কাপড় ছাড়া কোনো রসদ কাফেলার সঙ্গে রইল না। সবার পেরেশান অবস্থা। ‘আলা আলহাযরামী রা. ঘোষকের মাধ্যমে সবাইকে একত্র করলেন এবং শান্তনা দিয়ে বললেন, ‘তোমরা মুসলমান, আল্লাহর রাস্তায় আছ তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। অতএব আল্লাহ তোমাদেরকে সহায়-সঙ্গী বিহীন অবস্থায় ত্যাগ করবেন না।’ ইতোমধ্যে ফজরের আযান হল। তিনি নামাযে ইমামতি করলেন। নামাযের পর দোজানু হয়ে বসে অত্যন্ত বিনয় ও কাতরতার সঙ্গে দুআয় মশগুল হয়ে গেলেন। কাফেলার সবাই দুআ করতে লাগল। এ অবস্থায় সূর্য উদিত হল, কিন্তু তারা দুআয় মশগুল রইলেন। একপর্যায়ে আল্লাহ তাআলা তাদের সন্নিকটে একটি বড় জলাশয় সৃষ্টি করে দিলেন। সবাই সেখানে গেলেন, তৃষ্ণা নিবারণ করলেন এবং গোসল করলেন। বেলা কিছু চড়ার পর একে একে সকল উট সমস্ত রসদসহ ফিরে আসতে লাগল।

হাদীস ও তারীখের ইমাম ইবনে কাছীর রাহ. বলেন, এটা ওই লড়াইয়ের অনেকগুলো অলৌকিক ঘটনার একটি, যা লোকেরা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে।

আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরবী ইবারতটুকু তুলে দিচ্ছি :

فلما قضا الصلاة جثا على ركبتيه وجثا الناس، ونصب في الدعاء ورفع يديه وفعل الناس مثله …

দেখুন, আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ৫/৩৪; তারীখে তাবারী ২/৫২৩

মোটকথা, শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্মিলিত দুআর প্রমাণ-সিদ্ধতা একটি স্পষ্ট বিষয়। এসম্পর্কে অতিরিক্ত দলীল-প্রমাণের প্রয়োজন নেই। সম্মিলিত দোয়া সম্পর্কে আরো হাদীস জানতে হলে শায়েখ আব্দুল হাফিজ মাক্কী সংকলিত ‘ইসতিহবাবুদ দোয়া বা‘দাল ফারাইয’ কিতাবটি (পৃ. ৬৮-৭৯) দেখা যেতে পারে।

প্রশ্নোক্ত বর্ণনা দু’টির স্বরূপ

প্রশ্নে আপনি জামেয়া ইসলামিয়া মদীনা মুনাওয়ারার ওই ফাযেলের উদ্ধৃতিতে দু’টি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি সম্মিলিত দুআর ভিত্তিহীনতা প্রমাণ করতে চেয়েছেন।

প্রথম বর্ণনা : একবার ইস্তিসকার সময় হযরত উমর রা. হযরত আববাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রা.কে দুআর জন্য অসীলা বানিয়েছিলেন। তিনি সেসময় একা দুআ করেন, সম্মিলিতভাবে নয়।

লক্ষ্য করুন, যদি এই রেওয়ায়েত সঠিকও ধরে নেওয়া হয় তাহলে এর মাধ্যমে শুধু একা দুআর বৈধতা প্রমাণ হতে পারে অথবা খুব বেশি হলে এটুকু যে, দুআ জামাতের সঙ্গে হওয়া অপরিহার্য নয়, একাকীও হতে পারে। কিন্তু এ বর্ণনা থেকে সম্মিলিত দুআ নিষেধ-এটা কীভাবে বোঝা গেল?!

এরপর মজার বিষয় এই যে, সে সময় হযরত আববাস রা. একা দুআ করেছিলেন- এ কথাটাই বানানো। হযরত আববাস রা-এর ওই দুআ সম্মিলিত দুআই ছিল।

সহীহ বুখারী ও তার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে পূর্ণ ঘটনা উল্লেখিত হয়েছে, যার সারাংশ এই যে, লোকেরা বৃষ্টির জন্য দুআর উদ্দেশ্যে একত্র হল। হযরত উমর রা. খুৎবা দিলেন এবং বললেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার চাচা) আববাসকে পিতার মতো মনে করতেন। অতএব তোমরা তাঁর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ কর এবং তাঁকে আল্লাহর দরবারে অসীলা বানাও। এরপর হযরত আববাস রা. ও উপস্থিত সবাই দুআ করতে আরম্ভ করেন। হযরত আববাস রা-এর দুআ এই ছিল-

اللَّهُمَّ إِنَّهُ لَمْ يَنْزِلْ بَلَاءٌ مِنَ السَّمَاءِ إِلَّا بِذَنْبٍ، وَلَمْ يَكْشِفْ إِلَّا بِتَوْبَةٍ، وَقَدْ تَوَجَّهَ الْقَوْمُ بِي إِلَيْكَ لِمَكَانِي مِنْ نَبِيِّكَ، وَهَذِهِ أَيْدِينَا إِلَيْكَ بِالذُّنُوبِوَنَوَاصِينَا إِلَيْكَ بِالتَّوْبَةِ، فَاسْقِنَا الْغَيْثَ.

সবাই দুআয় মশগুল ছিলেন। ইতোমধ্যে মুষলধারে বৃষ্টি হতে আরম্ভ করে। (ফাতহুল বারী ২/৫৭৭ কিতাবুল ইস্তিসকা)

দুআটির তরজমা এই, ‘ইয়া আল্লাহ, গুনাহর কারণে বিপদাপদ আসে আর তাওবার মাধ্যমেই তা দূর হয়। যেহেতু আপনার নবীর সঙ্গে আমার বিশেষ সম্বন্ধ আছে এজন্য সবাই আমাকে অসীলা বানিয়ে আপনার দয়ার ভিখারী হয়েছে। আমাদের গুনাহগার হাতগুলো আপনার দরবারে উত্তোলিত রয়েছে আর আমাদের কপাল তওবার সঙ্গে আনত রয়েছে। বৃষ্টির মাধ্যমে আপনি আমাদের ফরিয়াদ কবুল করুন।’

পাঠকবৃন্দই বলুন, এই দুআ সম্মিলিত ছিল না একাকী? তাছাড়া এ বিষয়ে তাবাকাতে ইবনে সাআদ : -এ স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, সে দোয়ায় ওমর রা. এবং সকল মানুষ হাত উঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে কেঁদেছিলেন।

দ্বিতীয় বর্ণনা : আপনি বলেছেন যে, দ্বিতীয় রেওয়ায়েত তিনি মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা (হাদীস ৬২৪২)-এর  উদ্ধৃতিতে লিখেছেন, কিন্তু মুসান্নাফের কোনো এডিশনেই উপরোক্ত নম্বরে এমন কোনো রেওয়ায়েত নেই। তদ্রূপ মুসান্নাফের অন্য কোনো স্থানেও আমরা ওই বর্ণনা পাইনি। তবে মুসান্নাফের ২৬৭১৫ নম্বরে (নতুন সংস্করণ) একটি রেওয়ায়েত আছে, সম্ভবত লেখক ইচ্ছাকৃতভাবে বা অজ্ঞাতসারে তা বিকৃত করে উল্লেখ করেছেন, কেননা, সম্মিলিত দুআ এর সঙ্গে ওই বর্ণনার কোনো সম্পর্ক নেই। পূর্ণ বর্ণনা নিম্নে উদ্ধৃত হল-

عن أبي عثمان قال : كتب عامل لعمر بن الخطاب رضي الله عنه إليه : أن ههنا قوماً يجتمعون، فيدعون للمسلمين وللأمير. فكتب إليه عمر: أقبل وأقبل بهم معك فأقبل. فقال عمر، للبواب : أعِدَّ لي سوطاً، فلما دخلوا على عمر، أقبل على أميرهم ضرباً بالسوط. فقال: يا أميرالمؤمنين! إنا لسنا أولئك الذين يعني أولئك قوم يأتون من قبل المشرق.

অর্থ : আবু উছমান বলেন, উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর একজন প্রশাসক তাকে পত্র লিখলেন যে, এখানে কিছু মানুষ আছে যারা একস্থানে একত্র হয় এবং মুসলমানদের জন্য ও ‘আমীরে’র জন্য দুআ করে। (হযরত) উমর রা. তাকে উত্তরে লিখলেন, ‘তুমি তাদেরকে নিয়ে আমার কাছে আস।’ প্রশাসক তাদেরকে নিয়ে উপস্থিত হলেন। এদিকে (হযরত) উমর রা. প্রহরীকে বললেন, একটা চাবুক প্রস্ত্তত করে রাখ। যখন তারা (হযরত) উমর রা.-এর দরবারে উপস্থিত হল তখন তিনি তাদের আমীরকে চাবুক মারতে লাগলেন। সে বলল, আমীরুল মু’মিনীন, আমরা ওই গোষ্ঠী নই, তারা মাশরিক থেকে আসে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ২৬৭১৫, কিতাবুল আদব, মান কারিহাল কাসাসা ওয়াজজারবা ফীহ)

উপরোক্ত রেওয়ায়েত মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করলে আপনি পরিষ্কার বুঝতে পারবেন যে, হযরত উমর রা. কেন নারাজ হয়েছেন এবং কেন প্রহার করেছেন।

এরা কোনো উদ্দেশ্যে একত্র হয়েছিল এবং নিজেদের মধ্যে একজনকে আমীর বানিয়েছিল। এরপর প্রতিদিন সম্মিলিত হয়ে মুসলমানদের জন্য ও নিজেদের আমীরের জন্য (আমীরুল মু’মিনীন উমর রা.-এর জন্য নয়) দুআ করত। বলাবাহুল্য, ইসলামী খিলাফত বিদ্যমান থাকা অবস্থায় গোপনে ভিন্ন নেতৃত্ব তৈরির কোনোই অবকাশ নেই। হযরত উমর রা. অত্যন্ত বিচক্ষণ ও দূরদর্শী ছিলেন। তাদের এই কার্যকলাপ থেকে বিদ্রোহ বা ফিৎনার আশঙ্কা করে তৎক্ষণাৎ তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন।

মোটকথা, বিষয়টা সম্মিলিত দুআর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, গোপন নেতৃত্ব সৃষ্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এজন্য এখান থেকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ভুল হবে যে, হযরত উমর রা. তাদেরকে সম্মিলিত দুআর জন্য প্রহার করেছিলেন।

সহীহ বুখারী (হাদীস ৬৪০৮) সহীহ মুসলিম (হাদীস ২৬৮৯)সহ বহু হাদীসের কিতাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওই হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যাতে যিকরের হালকার ফযীলত বয়ান করেছেন। সে হাদীসে যিকরের হালকায় কী আমল হয় তারও বিবরণ আছে। এই হাদীস যাদের জানা আছে তারা জানেন যে, তাতে তাসবীহ ও তাহলীলের সঙ্গে জান্নাতের প্রার্থনা, জাহান্নাম  থেকে  পানাহ  চাওয়া  ও  ইস্তেগফারের আমলও শামিল রয়েছে। প্রশ্ন এই যে, জান্নাত লাভের ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রার্থনা, ইসতিগফার- এগুলো কি দুআ নয়? আর যিকিরের হালকায় যিকরের সঙ্গে যখন দুআও শামিল রয়েছে তো এটা কি সম্মিলিত দুআ হল না?

এই হাদীস এবং এ বিষয়ের অন্যান্য হাদীস আর এ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শরয়ী দলীল বিদ্যমান থাকা অবস্থায় সম্মিলিত দুআ এর ওপর কীভাবে কাউকে প্রহার করা যেতে পারে?

আলোচনা দীর্ঘ হয়ে গেল তবুও একটি প্রয়োজনীয় বিষয়ে ইঙ্গিত করে দেওয়া মুনাসিব মনে করছি। বিষয়টি এই যে, উপরোক্ত সম্পূর্ণ আলোচনা এমন সম্মিলিত দুআ সম্পর্কে যাতে কোনো শরয়ী সমস্যা নেই। যদি কোথাও সম্মিলিত দুআর নামে এমন কোনো কাজ করা হয়, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে আপত্তিকর, তবে অবশ্যই তা সংশোধনযোগ্য। যেমন কোথাও এই রেওয়াজ হয়ে গেল যে, মাইয়্যেতের ঈসালে ছওয়াবের জন্য এটা অপরিহার্য মনে করা যে, অবশ্যই মাইয়্যেতের জন্য ঈসালে ছওয়াবের মাহফিল করে সম্মিলিত দু্আ করতে হবে, তা না হলে মাইয়্যেতের নিকট ছওয়াব পৌঁছবে না এবং তার হক আদায় হবে না! এটা অবশ্যই একটা ভ্রান্ত ধারণা যা সংশোধন করা জরুরি।

কিংবা যেখানে শরীয়ত সম্মিলিত দুআ কে শুধু মুস্তাহাব বা মুবাহ সাব্যস্ত করেছে কোনো অঞ্চলের মানুষ যদি তাকে অপরিহার্য মনে করতে থাকে যেন তা একটি অবশ্য পালনীয় সুন্নত তবে এটাও একটা ভুল ধারণা যা সংশোধন করা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সকল বিষয় নির্ধারিত সীমারেখার ভিতরে রাখার তাওফীক দান করুন। আমীন

আল-কুরআনের অলৌকিকত্ব

আল কুরআনের অলৌকিকত্বঃ আবু জাফর – আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনায় আন্তঃধর্মীয় সম্মেলনের একটি ঘটনা। উদ্যোক্তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন, সম্মেলনের সমাপ্তি টানা হবে প্রধান ধর্মসমূহের যে ধর্মগ্রন্থ তা থেকে পাঠ করার মধ্য দিয়ে। পাঠ করবেন ভিন্ন ধর্মের কোনো অনুসারী। তা-ই হলো। যথারীতি একজন আরব খ্রীষ্টান কুরআনুল কারীম থেকে একটি সূরা পাঠ করে শোনালেন। তিনি ছিলেন একজন ভালো আবৃত্তিকার। তাঁর মর্মস্পর্শী আবৃত্তি সবাইকে দারুণভাবে বিমোহিত করল। আবৃত্তিকার নিজেও বিশেষভাবে আন্দোলিত। পাঠ সমাপ্তির পর প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে উপস্থিত একজন প্রখ্যাত মুসলিম চিন্তাবিদ ও লেখক খ্রীষ্টান আবৃত্তিকারের কাছে জানতে চাইলেন, ‘আপনি কি মনে করেন, কুরআন আল্লাহর বাণী?’ সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, ‘অবশ্যই।’ কিন্তু তারপরই মুহূর্তকাল চিন্তা করে পুনরায় বললেন, ‘কিন্তু সেটা কেবল আরবদের জন্য।’

প্রকৃতপক্ষে কুরআনের যে পয়গাম, তা শুধু সারা বিশ্বের মানুষকেই আকর্ষণ করে না, কুরআনের বাণীই এত মর্মস্পর্শী, যা এমন সব মানুষকেও অভিভূত করে যারা একটিও কোনো আরবি শব্দ বোঝে না। অপর একটি ঘটনা। একবার সোভিয়েত নেতাদের সঙ্গে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুন নাসেরের এক বৈঠকে অন্যতম সঙ্গী ছিলেন মিশরের বিখ্যাত আবৃত্তিকার ক্বারী আবদুল বাসিত। আলোচনার এক বিরতি পর্বে প্রেসিডেন্ট জনাব বাসিতকে সোভিয়েত শীর্ষ নেতাদের সম্মুখে আল-কুরআন থেকে কিছু অংশ পাঠ করার জন্য আহবান জানালেন। যখন তেলাওয়াত শেষ হলো, ক্বারী আবদুল বাসিত দেখলেন, চার জনের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। পরে তারা বললেন, ‘কী পাঠ করা হলো তার কোনো অর্থ আমরা বুঝতে পারিনি, কিন্তু কী এক অনুপম মর্মস্পর্শিতা বিষয় যেন কথাগুলির মধ্যে ধ্বনিত হচ্ছিল।’

এটা সেই সময়ের কথা যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে কুরআন মুসলমানদের জন্য সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ছিল। এটা সেই সময়ের কথা, যখন কুরআন পাঠ, কুরআন শিক্ষা এমনকি এক খন্ড কুরআন কাছে রাখাও ছিল গুরুতর দন্ডযোগ্য অপরাধ। কেজিবি সর্বদা অত্যন্ত কঠিনভাবে এদিকে নজর রাখতো।

কেজিবি এজেন্টদের এতটুকু সন্দেহ হলেই তারা যখন তখন যে কোনো গৃহে প্রবেশ করতো এবং দেখতো সেখানে কুরআন পাঠ বা সালাত আদায় করা হয় কি না। ধর্মীয় নেতাদেরকে বাধ্যতামূলক কঠিন শ্রমের কাজে নিয়োগ করা হতো। মসজিদ-মাদরাসা বন্ধ করে দিয়ে সেগুলি প্রেক্ষাগৃহ (Cinema House) ফ্যাক্টরি এবং অফিস হিসাবে ব্যবহার করা হতো। কেউ কোথাও কুরআন শরীফ এর একটি কোনো কপিও দেখতে পেতো না। রাষ্ট্র তার সর্বশক্তি নিয়ে এমন নির্মম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল যাতে কুরআন শরীফের একটি স্ফুলিঙ্গও কোথাও দেখা না যায়। তবুও ৭০ বছরের সেই কলঙ্কময় অন্ধকারের মধ্যেও মুসলমানরা কুরআনের আলোকশিখা জ্বালিয়ে রেখেছিল। জীবনের কঠিন ঝুঁকি নিয়ে তারা এমন একটি গোপন-ছদ্মবেশী কৌশল অবলম্বন করেছিল যাতে তাদের সন্তানেরা কুরআন শিক্ষা করতে পারে। পিতামাতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছোট ছোট ছেলেরা ওস্তাদদের কাছে মুখে মুখে কুরআন কণ্ঠস্থ করতো এবং কোনোরকম মুদ্রিত পুস্তক ছাড়াই ধর্মীয় শিক্ষা ও নির্দেশনার তালিম নিত। তাদের কথা যদিও কেউ মনে রাখেনি, কিন্তু আমাদের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সে এক উজ্জ্বলতম অধ্যায়। ( কুরআনের অলৌকিকত্ব )

কী ধরনের গ্রন্থ এ রকম চূড়ান্ত ভক্তি ও চূড়ান্ত কোরবানীর পরাকাষ্ঠা দাবী করতে পারে? পারে কেবল সেই মহাগ্রন্থ, যা শুরুতেই এই নিশ্চয়তা প্রদান করে- ‘এই সেই মহাগ্রন্থ, যাতে অনুমান সন্দেহের অবকাশ নেই এবং এই গ্রন্থ শুধু আল্লাহভীরুদের (মুত্তাকী) জন্যই পথপ্রদর্শক।’(সূরা বাকারা- ২) এবং তারপর কুরআনের প্রতিটি পংক্তি এই নিশ্চয়তারই সত্যতা তুলে ধরে এবং কুরআন এই ঘোষণা প্রদান করে- ‘পরম করুণাময় (আল্লাহ তাআলা) তিনিই (তোমাদেরকে) কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন’। (সূরা আর-রাহমান ১-২) এবং এই চ্যালেঞ্জও ঘোষণা করা হয়েছে:

‘তুমি (তাদের এ কথাও) বলো যে, যদি সব মানুষ ও জীন (এ কাজের জন্য) একত্রিত হয় এই কুরআনের অনুরূপ কিছু বানিয়ে আনবে, তারা তা করতে সক্ষম হবে না। যদি এ ব্যাপারে তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয় (তবুও)।’ (সূরা আলে ইমরান-৮৮) এতদসঙ্গে আল-কুরআনে আল্লাহ পাক অকাট্যভাবে এই কথাও জানিয়ে দেন যে, ‘আমিই এই স্মরণসম্বলিত (আল কুরআন) নাযিল করেছি, আমিই একে সংরক্ষণ করবো।’ (সূরা হিজর-৯)

 

আল কুরআন আরবী ভাষার সর্বপ্রথম লিখিত দলীল বা নমুনা। পৃথিবীতে এমন আর কোনো ভাষা নেই, যা চৌদ্দশ বছর ধরে একইভাবে অক্ষত অবস্থায় বিরাজমান। শতাব্দীর পর শতাব্দী কত সময় অতিবাহিত হয়ে গেল, পরিবর্তিত হয়ে গেল কত নদীর কত গতিপথ, কত সভ্যতার কত উত্থান-পতন ঘটলো, ভাষা হারিয়ে গেল, জন্ম নিলো নতুন ভাষা। প্রসঙ্গত একটি বাককীতির উপমা তুলে ধরতে পারি, Faeder ure on heo-vfonum (প্রভুর প্রার্থনা, ম্যাথু ৬, বাইবেল ৯০০ পর্ব), জানানো হয়েছে এই কথার অর্থ ‘সদাপ্রভু পিতা স্বর্গে আছেন।’ কিন্তু এ থেকে এই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে ওঠে, তৎকালীন কোনো রচনাই বর্তমান ইংরেজিভাষী পাঠকের কাছে পরিচিত ও পাঠযোগ্য নয়। কিন্তু যে কোনো আরবিভাষী মানুষ কুরআন আজ সাবলীলভাবে পাঠও করতে পারে, কুরআনের কী বক্তব্য তা বুঝতেও পারে এবং এই কথা মধ্যবর্তী সকল শতাব্দীর সকল পাঠকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

প্রখ্যাত পন্ডিত ড. হামিদুল্লাহ একটি ঘটনার বর্ণনা করেন। যেহেতু এ্যারামাইক (Aramaic) ভাষার মূল বাইবেল আর পাওয়া যায় না, খ্রীষ্টান পন্ডিতেরা একবার জার্মানীতে বাইবেলের সমস্ত গ্রীক পান্ডুলিপি একত্রিত করলেন। পৃথিবীর যেখানে যত পান্ডুলিপি ছিল, সব সংগ্রহ করার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেল, ‘এই সব পান্ডুলিপির মধ্যে দুই লক্ষাধিক বৈপরিত্য ও স্ববিরোধী বক্তব্য বিদ্যমান … যার এক অষ্টমাংশ অর্থাৎ পঁচিশ হাজার ভুল গুরুতর প্রকৃতির।’ এই প্রতিবেদন যখন প্রকাশিত হল, কিছু লোক মিউনিখে কুরআন গবেষণার জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করল। উদ্দেশ্য, বাইবেলের মতো একইভাবে কুরআনকেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচাই করে দেখা। এক বিশাল গবেষণা প্রকল্পের কাজ শুরু হল। যা প্রায় তিন প্রজন্মব্যাপী অব্যাহত ছিল। ১৯৩৩ সালের মধ্যে কুরআনের ৪৩,০০০ (তেতাল্লিশ হাজার) ফটোকপি সংগৃহীত হলো। সকল পান্ডুলিপি পরীক্ষার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পূর্বে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হল তাতে দেখা গেল, তু্চ্ছ দু’একটি অনুলিখনের ভুল ছাড়া কোথাও কোনো বৈপরিত্য খুজে পাওয়া যায়নি।

আল কুরআন যে অলৌকিকভাবে সংরক্ষিত হয়েছে, তার প্রত্যক্ষ কারণ হলো, কুরআনের প্রতি মুসলমানের এই প্রগাঢ় অনুরাগ ও ভক্তি ও সযত্ন মনোযোগ এবং এই বিষয়টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রদত্ত অনুপ্রেরণারও সুফল। একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূফফার সাহাবীদেরকে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে প্রতিদিন ভোরে গিয়ে ‘বুথান’অথবা ‘আল আকীক’ (মদীনার সন্নিকটে অবস্থিত দুটি বাজার) থেকে কোনোরূপ অপরাধ ও সম্পর্কচ্ছেদ ছাড়াই দুটি বড় উটনী নিয়ে আসতে পসন্দ কর?’ তৎকালীন সময়ে উট ছিল খুবই মূল্যবান আর উটনী ছিল আরো মূল্যবান। অনেকটা বর্তমান সময়ের ঝকঝকে নতুন একটি মোটরগাড়ির মতো। সাহাবীদের রা. আগ্রহদৃষ্টে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল-কুরআন থেকে দুটি সূরা শিক্ষা দেয়া অথবা পাঠ করা দুটি উটনী লাভ করা থেকেও উত্তম এবং তিনটি সূরা তিনটি উটনী অপেক্ষা উত্তম। -সহীহ মুসলিম ১৩৩৬


এটা পড়ুন – খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের দৃষ্টিতে নবীজির সত্যতা


এবং এজন্যই শতাব্দীর পর শতাব্দী এই মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর কিতাবের প্রতি এমন অভাবনীয় অনুরাগ ও ভক্তি অব্যাহত রেখেছে। ছেলেমেয়েদের জীবনে প্রথম পাঠ শুরু হয় এই কুরআন শিক্ষার মধ্য দিয়ে এবং কুরআন পাঠের মধ্য দিয়েই শুরু হয় মুসলমানের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা। আলকুরআন সাতটি অংশে বিভক্ত। এক একটি অংশকে বলা হয় ‘মনযিল’। অতএব প্রতি সপ্তাহে সম্পূর্ণ কুরআন পাঠ করা সম্ভব। আবার এই কুরআন ৩০ পারায় (Juz) বিভক্ত, সুতরাং প্রতি মাসেই কুরআন একবার পুরোপুরি পড়ে ওঠা যায়। আল-কুরআন হলো পৃথিবীর সর্বাধিক পঠিত এবং সর্বাধিক কণ্ঠস্থ একটি গ্রন্থ।

বর্তমান সময়ে আমরা অবশ্য কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ করি। উপনিবেশবাদী শিক্ষাব্যবস্থা এবং টেলিভিশনের যৌথ ও যুগপৎ যে যন্ত্রণাদায়ক কষাঘাত, তাকে আমরা ‘ধন্যবাদ’ জানাই। এই দুই কষাঘাতের অশুভ প্রভাবের শিকার হওয়ার ফলে লক্ষ লক্ষ মুসলিম ছেলেমেয়ের জীবনে কুরআন আজ আর তাদের শিক্ষা ও জীবনগঠনের সাথে সম্পৃক্ত নয়। আমরা দেখতে পাই, বহু মুসলিম গৃহে কুরআন পাঠের ব্যবস্থা করা হয় কেবল কারো মৃত্যু ইত্যাদি ধরনের বিশেষ উপলক্ষে। এতদসত্ত্বেও পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ও সমাজ, অন্তত বিগত কলঙ্কিত সোভিয়েত ইউনিয়নের  মতো এমন তমসাচ্ছন্ন হয়নি যে, কুরআন পাঠ একটা বড় রকমের ঝুঁকির ব্যাপার। সত্যই কী বদনসীব সেই ব্যক্তির, যে আকণ্ঠ তৃষ্ণা নিয়ে মারা যাচ্ছে অথচ তার হাতে রয়েছে নির্মল শান্তিদায়ক পানীয়! কী হতভাগা সেই ব্যক্তি, যে ব্যাধিগ্রস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে অথচ তার নিজেরই হাতে ধরা আছে নিরাময়ের অব্যর্থ ঔষধ!

অবশ্যই আমরা কুরআন পাঠ করবো, বুঝতে চেষ্টা করবো এবং বাস্তব জীবনে তার ব্যবহারিক প্রয়োগেও সচেষ্ট হবো। কিন্তু আমাদের অবশ্যই মনে রাখা আবশ্যক যে, পূর্ণ আত্মস্থতা এবং পরিপূর্ণ আদব ও শিষ্টাচার হলো কুরআন পাঠ ও কুরআনের পয়গাম অনুধাবনের অপরিহার্য পূর্বশর্ত। আমাদের জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য হবে আল-কুরআনকে সঙ্গে নিয়ে বেঁচে থাকা এবং সেটাই হবে প্রকৃত জীবন। অন্যথায় আমাদের জীবন হবে নিতান্তই বেঁচে থাকার ভান ও অভিনয়মাত্র।

একজন অ্যান্টনি ফ্লিউয়ের গল্প

প্রায় ৫০ বছর ধরে নাস্তিকতার প্রচার চালিয়ে যাবার পর ২০০৪ সালে পৃথিবীর নেতৃত্বস্থানীয় এবং সুপরিচিত নাস্তিক অ্যান্টনি ফ্লিউ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, অবশ্যই এ মহাবিশ্বের একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন।

জীবনভর দার্শনিক অনুসন্ধানের পর, এবং একজন নাস্তিক হিসেবে নিজের প্রায় সম্পূর্ণ জীবন কাটানোর পর শেষপর্যন্ত অ্যান্টনি ফ্লিউ এই উপসংহারে পৌছোন যে সকল যুক্তিপ্রমাণ একজন স্রষ্টার অস্তিত্বের দিকেই নির্দেশ করে।

জীবনের বেশীরভাগ সময় ধরেই নাস্তিকতায় দার্শনিক বীরপুরুষ হিসেবে পরিচিত ফ্লিউ যখন তার এই উপসংহার ঘোষণা করলেন তখন তাড়াহুড়ো করে অন্যান্য নাস্তিকরা তাকে জরাগ্রস্থ, ভীমরতিতে পাওয়া বুড়ো বলে প্রমানের জন্য উঠেপড়ে লাগলো। তারা প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে গেল শেষবয়সে গিয়ে ফ্লিউ কিছু খ্রিষ্টানদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজের মত বদলেছেন।

ফ্লিউ এই অভিযোগ অস্বীকার করলেন এবং নাস্তিকতা থেকে আস্তিকতার দিকে তাঁর এই দার্শনিক যাত্রা বর্ননা করে একটি বই লিখলেন, There Is A God, How The World’s Most Notorious Atheist Changed His Mind

কোন যুক্তি ও প্রমানের প্রেক্ষিতে তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌছুলেন এই বইতে ফ্লিউ তা ব্যাখ্যা করলেন।

এখন আমি বিশ্বাস করি এক অসীম বুদ্ধিমত্তা এই মহাবিশ্বকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনয়ন করেছেন। আমি বিশ্বাস করি যে সুক্ষাতিসুক্ষ নিয়মগুলো দ্বারা এই মহাবিশ্ব পরিচালিত হয় সেগুলোর মাধ্যমে একজন স্রষ্টার ইচ্ছা ও অস্তিত্ব প্রতিভাত হয়। আমি বিশ্বাস করি জীবন এবং জীবন ধারার উৎস ঐশ্বরিক। [১]

অ্যান্টনি ফ্লিউ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমাজতান্ত্রিকদের পাঠচক্রে খুঁজে পাওয়া স্রোতের সাথে গাঁ ভাষানো নিরামিষ নাস্তিক কিংবা সামওয়্যার ইন ব্লগ বা মুক্তমনাতে ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে “মুক্তচিন্তার” পতাকা উড়ানো গালিবাজ শব্দসন্ত্রাসী জাতীয় নাস্তিক ছিলেন না। খুব অল্প বয়সে নাস্তিকতার উপর একটি লেখা প্রকাশ ফ্লিউ করে দার্শনিক অঙ্গনে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত Theology and Falsification নামের এই পেপারটি গত পঞ্চাশ বছরে বারবার পুনর্মুদ্রণ করা হয়েছে। ফ্লিউয়ের এই লেখা দার্শনিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল এবং ফ্লিউয়ের জন্য এনেছিল একজন তুখোড় দার্শনিক হিসেবে বিশ্বজোড়া খ্যাতি।


এটা পড়ুন  বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী মুহাম্মদ সাঃ সম্পর্কে যা তাঁর নবুওতের অনন্য দলীল ।


পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই একাডেমিক জগতের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল ফ্লিউয়ের অবস্থান। একপর্যায়ে তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসর হিসেবেও দায়িত্বরত ছিলেন। তবে অধিকাংশ নাস্তিকদের মধ্যে উপস্থিত একটি বৈশিষ্ট্য থেক ফ্লিউ মুক্ত ছিলেন। অধিকাংশ নাস্তিক নিজের নাস্তিকতার দিকে যাত্রার প্রাথমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, দশন, যুক্তি নিয়ে সামান্য ঘাঁটাঘাঁটি করে। কিন্তু নাস্তিকতার বিশ্বাসে সম্পূর্ণভাবে প্রবেশ করার সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, এবং দার্শনিক যুক্তিতর্ক সম্পর্কে তারা চিন্তা করা বন্ধ করে দেয়, অথবা শুধুমাত্র নিজেদের সংকীর্ণ অবিশ্বাসের বিশ্বাসের লেন্স দিয়ে সবকিছুকে বিচার করে।

এই জায়গাটাতে ফ্লিউ ছিলেন আলাদা। ফ্লিউয়ের একটি দুর্লভ গুণ ছিল, “প্রমাণাদি যেদিকে নিয়ে যায় তার অনুসরণ করা”র নীতির কথা তিনি বাকি নাস্তিকদের মতো শুধু মুখে দাবি করতেন না, বরং সত্যিকার ভাবেই এই নীতির অনুসরণ করতেন।

ফ্লিউয়ের নিজের ভাষায় –

এমনকি বিগ ব্যাং তত্ত্ব কিংবা ফাইন-টিউনিং তত্ত্ব প্রকাশের বহুপূর্বেই আমার অন্যতম সেরা দুইটি ধর্মতত্ত্ব বিরোধী বই প্রকাশিত হয়েছিলো। কিন্তু আশির দশকের শুরুর দিকে আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে পুনরায় চিন্তাভাবনা শুরু করতে বাধ্য হলাম । আমি এই কথা স্বীকার করেছিলাম যে সমসাময়িক মহাজাগতিক আবিষ্কারগুলোর কারনে নাস্তিকরা বিব্রত হতে বাধ্য। কারন থমাস অ্যাকুইনাস দশর্নের মাধ্যমে যেটি প্রমাণ করতে পারে নি [“মহাবিশ্বের একটি শুরু আছে] তা মহাবিশ্বতত্ত্ববিদরা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করতে শুরু করলেন।” [২]

আর এ কারনেই শেষপর্যন্ত আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতিই এবং নতুন আবিষ্কার তাকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সাহায্য করে যে – একজন বুদ্ধিমান সত্তাই এই মহাবিশ্বের উদ্ভাবন এবং ডিজাইন করেছেন। তিনি দেখলেন যে বিগ ব্যাং তত্ত্বানুসারে ধারণা করা হয় মহাবিশ্ব আনুমানিক তের বিলিয়ন বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে। যদি একে সঠিক বলে ধরে নেওয়া হয় তাহলে আমরা বর্তমানে জটিল পর্যায়ের জীব এবং জীববৈচিত্র [complex life & complexity of life] দেখি, বিবর্তনের মাধ্যমে তাতে উপনীত হবার মতো যথেষ্ট সময় পাওয়া যায় না। এছাড়া, মাইক্রো বায়োলজি এবং ডিএনএ এর ব্যাপারে আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিস্কার তাকে এই সিদ্ধান্তে আস্তে বাধ্য করে যে, এসব কিছুর পেছনে অবশ্যই একটি বুদ্ধিমান সত্ত্বা আছে।

২০০৭ সালে বেনজামিন উইকারের সাথে সাক্ষাৎকারে ফ্লিউ বলেছিলেন –
.
আমার সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করার পেছনে কাজ করেছে আইনস্টাইন সহ আরো বহু বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের মতের সাথে ক্রমবর্ধমান একাত্মতা যা আমি অনুভব করছিলাম। আইনস্টাইন সহ আরো অনেক বিজ্ঞানী তাদের সুক্ষদর্শিতার কারনে এই মত ব্যক্ত করেছিলেন যে এই মহাবিশ্বের অন্তর্নিহিত এবং সুসংহত জটিলতার (integrated complexity) পেছনে একজন বুদ্ধিমান সত্ত্বার ভূমিকা আবশ্যক। এছাড়া আমি নিজে ব্যক্তিগত এই উপসংহারে পৌছেছিলাম যে জীবন ও জীববৈচিত্র – যা মহাবিশ্বের চাইতেও বেশি জটিল – শুধুমাত্র একটি বুদ্ধিমান উৎসের দ্বারাই ব্যাখ্যা করা যায়।” [৩]
.
নাস্তিকরা সবসময় দাবি করে শুধু সাধারণ অশিক্ষিত, অজ্ঞ লোকেরা যারা কোন চিন্তাভাবনা করে না তারাই ধর্মে বিশ্বাস করে। কিন্তু অ্যান্টনি ফ্লিউ নাস্তিকদের সব যুক্তি জানতেন। এমনকি বর্তমানে নাস্তিকরা যেসব যুক্তি ব্যবহার করে এর অনেকগুলো তিনি নিজেই দাঁড় করিয়েছিলেন। নাস্তিকতার পক্ষে তিনি ৩০টির মতো বই লিখেছিলেন। কিন্তু যেহেতু তিনি অন্ধ অবিশ্বাসী ছিলেন না তাই শেষপর্যন্ত তিনি সেই উপসংহারে পৌছেছিলেন সব যুক্তি ও প্রমাণ যে দিকে নির্দেশ করছিল। আর তাই তিনি স্বীকার করে নিয়েছিল, এ মহবিশ্বের একজন স্রষ্টা থাকা আবশ্যক।

একজন নাস্তিক হিসেবে অ্যান্টনি ফ্লিউয়ের দার্শনিক পথ পরিক্রমার সবচেয়ে ইউনিক বৈশিষ্ট্য হল প্রমাণ ও যুক্তির অনুসরণের ব্যাপারে তার স্বদিচ্ছা, যা অন্যান্য নাস্তিকদের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই অনুপস্থিত। যখন ফ্লিউয়ের পাশাপাশি আপনি একজন ডকিন্স, হ্যারিস কিংবা ডেনেটকে দাড় করাবেন তখন তাদের আত্বকেন্দ্রিক, উগ্র, অপরিপক্ক এবং ঝগড়াটে রূপ খুব সহজেই ধরা পড়বে।

২০১০ সালে অ্যান্টনি ফ্লিউ মারা যান। একজন আস্তিক হিসেবে কিন্তু কোন নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারী না হয়ে। আর এখানেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। আমরা সত্যকথনের পাঠকদের জন্য, কিংবা নাস্তিকদের জন্য অ্যান্টনি ফ্লিউকে আস্তিকতার স্বপক্ষে কোন প্রমাণ হিসেবে উপস্থিত করছি না। আমরা এই কারনে অ্যান্টনি ফ্লিউয়ের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করছি কারন নাস্তিক এবং মুসলিম – দুই পক্ষের জন্যই এতে শিক্ষণীয় বিষয় আছে।

নাস্তিকদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়টি ইতিমধ্যে আলোচিত হয়েছে – আর তা হল অবিশ্বাসের অন্ধ বিশ্বাস বাদ দিয়ে বিশুদ্ধ ভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব বিষয়ে চিন্তার স্বদিচ্ছার বিষয়টি।

আর মুসলিমদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়টি হল আস্তিক হওয়া শেষপর্যন্ত আমাদের লক্ষ্য না। নাস্তিকদের তর্কে পরাজিত করাও আমাদের উদ্দেশ্য না। যদিও আমরা স্বীকার করি এ কাজটা আনন্দদায়ক। আমাদের উদ্দেশ্য ঈমান ও বিশুদ্ধ তাওহিদ অর্জন করা। আস্তিক হওয়া মানে হেদায়েত পাওয়া না। এ হল শুধু বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেওয়া। আমাদের কাজ হল বাস্তবতাকে স্বীকার করার পর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার আনুগত্য করা।

অনেক সময়েই দেখা আস্তিক-নাস্তিক বিতর্ক, কম্পারেটিভ রিলিজিয়েন নিয়ে আলোচনা ইত্যাদি নিয়ে আমরা এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে আমরা আমাদের ঈমানের দিকে আমাদের তাওহিদের বিশ্বাসের দিকে অমনযোগী হয়ে পড়ি। বুদ্ধি আপনাকে একটা পর্যায় পর্যন্ত এগিয়ে দিবে, যেমন অ্যান্টনি ফ্লিউয়ের ক্ষেত্রে তা তাকে সত্য পর্যন্ত পৌছে দিয়েছিল। কিন্তু এটুকুই যথেষ্ট না। সত্য পর্যন্ত পৌছানোর পর আমাদের দায়িত্ব শেষ না, বরং আমাদের মূল দায়িত্ব শুরু।

আমাদের মূল দায়িত্ব হল সত্যকে খুঁজে পাবার পর তার অনুসরণ করা। শোনা ও মানা। কারন যখন আপনি বুঝবেন মহাবিশ্বের একজন স্রষ্টা আছে, যখন আপনি উপলব্ধি করবেন আপনার একজন স্রষ্টা আছে, তখন আপনি এও বুঝবেন যে এই স্রষ্টার প্রতি আপনার দায়িত্ব আছে।
নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা, এই সুবিশাল মহাবিশ্ব ও এই অবিশ্বাস্য জটিল ও বৈচিত্রময় জীবনের সৃষ্টিকর্তা নিরর্থক আপনাকে, আমাকে, এই সবকিছুকে সৃষ্টি করেন নি।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন –
.
হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যেমনভাবে করা উচিৎ এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যু বরণ করোনা।

[আলে ইমরান, ১০২]
.
নিশ্চয় হেদায়েত কেবলমাত্র আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল -এর পক্ষ থেকেই।

======================
১। There Is A God, page 88
২। There Is A God, page 135.
৩। Dr. Benjamin Wiker: Exclusive Flew Interview, 30 October 2007
======================
.
সত্যকথন ডেস্ক

একটি অসম্ভাব্য কথোপকথন

মুসলিমঃ আচ্ছা তুমি কিসে বিশ্বাস কর?
নাস্তিকঃ আমি কোনো কিছুতে বিশ্বাস করি না। আমি কোনো ধর্মে বিশ্বাস করি না। আমি বিজ্ঞান মানি। যা প্রমাণ করা যায় আমি সেটা বিশ্বাস করি।

মুসলিমঃ আচ্ছা তার মানে কি তুমি কোন কিছুই বিশ্বাস করো না?
নাস্তিকঃ কেন বিশ্বাস করবো? কোন ধর্ম বিশ্বাস করবো? এই যে তোমার ধর্মে জিহাদের কথা আছে, এটা একটা আধুনিক মানুষ কিভাবে মেনে নিতে পারে? তারপর ধর তোমার ধর্মে আছে…

মুসলিমঃ দাঁড়াও, দাঁড়াও…তুমি সম্ভবত আমার প্রশ্নটা বুঝতে পারো নি। তুমি কেন আমার ধর্মে বিশ্বাস করো না আমি সেটা জিজ্ঞেস করি নি। আমি জিজ্ঞেস করেছি তুমি কি কোনো কিছুতেই বিশ্বাস করো না?
নাস্তিকঃ হ্যা। আমি কোন কিছুই বিশ্বাস করি না। যা বিজ্ঞানের মাধ্যমে প্রমাণ করা যায় আমি শুধু সেটাই মানি। এটাই আমার নীতি।

মুসলিমঃ তুমি কি বিশ্বাস করো স্রষ্টা নেই?
নাস্তিকঃহ্যা আমি বিশ্বাস করি কোনো স্রষ্টা নেই।
মুসলিমঃ এটা কি একটা বিশ্বাস না?
নাস্তিকঃ উমম…না…
মুসলিমঃ তাহলে স্রষ্টা নেই – এটার প্রমাণ দাও।

নাস্তিকঃ(কিছুক্ষন চিন্তা করে) আমি প্রমাণ দিতে পারছি না। আমি কিন্তু এটাও বলছি না যে কারো কাছে এমন কোন প্রমাণ নেই। হয়তো আছে, যেহেতু বিজ্ঞানের এতো উন্নতি হয়েছে। তবে আমার জানা নেই। এমনো হতে পারে এখন না থাকলেও কোন এক সময়ে এমন প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে…
মুসলিমঃ ঠিক আছে। খুব ভালো কথা। কিন্তু তুমি তো একটু আগেই বললে যা প্রমাণিত তুমি শুধু সেটাই মানো। আবার তুমি নিজেই বলছো তুমি কোন প্রমাণ দিতে পারছো না। তাহলে দেখা যাচ্ছে তুমি কোন প্রমাণ ছাড়াই দাবি করছো যে স্রষ্টা নেই। তাহলে কি এটা একটা বিশ্বাস না?
নাস্তিকঃ (চুপ)

মুসলিমঃ তাহলে কি বলা যায় যে স্রষ্টা আছে কি নেই তা তুমি নিশ্চিত ভাবে জানো না? কারন তুমি যদি বলো তুমি প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস করো তাহলে তো তুমি নিজেই তোমার নীতি লঙ্ঘন করছো
নাস্তিকঃ হ্যা, হ্যা। আমি আসলে জানি না। হয়তোবা স্রষ্টা আছে হয়তোবা স্রষ্টা নেই। আমি স্রষ্টাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না।


এটা পড়ুন – কুরআনের মতে পৃথিবী কি সমতল না গোলাকার ?


মুসলিমঃ ঠিক আছে। স্রষ্টাকে নিয়ে নাহয় খানিক পরে কথা বলা যাবে। আমি আগে তোমার ব্যাপারটা একটু বুঝতে চাচ্ছি। দেখো তুমি যদি বলো স্রষ্টা আছে কি নেই এটা তুমি জানো না – তাহলে কিন্তু আর তোমাকে নাস্তিক বা Atheist বলা যায় না। বরং তুমি আসলে একজন agnostic বা অজ্ঞেয়বাদী।
নাস্তিকঃ দুটার মধ্যে পার্থক্য কি?

মুসলিমঃপার্থক্য হল একজন নাস্তিক (atheist) একটা দাবি বা claim করে। তার দাবি হল – স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই। যদি তুমি কোন দাবি করো, তাহলে সেই দাবিকে প্রমাণ করার দায়িত্ব তোমার। তোমাকে প্রমাণ দিতে হবে যে স্রষ্টা নেই। কিন্তু নাস্তিকরা কোন গ্রহনযোগ্য প্রমাণ দেওয়া তো দূরের কথা কোন সম্ভাব্য প্রমাণ উপস্থাপনও করতে পারে না। সাধারণত তাদের কথাবার্তা বিভিন্ন ধর্মের প্রতি আক্রমণ করার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। তারা বেশিরভাগ সময়ই অন্যের অবস্থানের সমালোচনা করে, কিন্তু কখনোই নিজের অবস্থানের পক্ষে কোন প্রমাণ দেয় না।

নাস্তিকঃ ওকে, তাহলে একজন agnostic কি বলে?

মুসলিমঃ একজন agnostic বা অজ্ঞেয়বাদী কোন দাবি করে না। সে বলে – একজন স্রষ্টা আছেন কি না, এটা আমি জানি না। যেহেতু সে কোন দাবি করছে না, তাই তাকে কোন প্রমাণও দিতে হচ্ছে ন।

নাস্তিকঃ রাইট। হ্যা, আমি একজন agnostic
মুসলিমঃ ওকে। তাহলে তুমি কোন ধরণের agnostic?
নাস্তিকঃ মানে?
মুসলিমঃ দেখো অজ্ঞেয়বাদীদের মধ্যে দুটো ধারা আছে। কেউ বলে – আমি কিছু নিশ্চিত ভাবে জানি না। আবার কেউ বলে- কোন কিছু নিশ্চিত ভাবে জানা সম্ভব না। এটাকে অ্যাকচুয়ালি সংশয়বাদ বলা যায়।
আরেকদল আছে যারা বলে স্রষ্টা আছেন কি নেই এটা নিয়ে চিন্তা বা কথা বলার কোন প্রয়োজন নেই। অভিয়াসলি তু্মি তিন নাম্বার ক্যাটাগরিতে পড়ছো না, যেহেতু ধর্ম, স্রষ্টা এগুলো নিয়ে তোমার অনেক কিছু বলার আছে। তো প্রথম দুই দলের মধ্যে তুমি কোন দলে?

নাস্তিকঃ দ্বিতীয়টা। কোন কিছু নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব না।
মুসলিমঃ কিন্তু তুমি যদি বল কোন কিছু নিশ্চিত ভাবে জানা সম্ভব না তাহলে তুমি কিভাবে নিশ্চিতভাবে বল আমার বিশ্বাস ভুল? আর যদি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে জানা না যায় তাহলে – এই কথাটা যে সঠিক এটা তুমি কিভাবে নিশ্চিত হবে?

নাস্তিকঃ বুঝতে পারছি না, তোমার কথার মানে কি?

মুসলিমঃ মানে হল, তুমি কিভাবে নিশ্চিতভাবে জানলে কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে জানা সম্ভব না? ব্যাপারটা কি সাংঘর্ষিক হয়ে গেল না? আর তুমি যদি সংশয়বাদী হও তাহলে তুমি কিভাবে তোমার সংশয়ের ব্যাপারে সংশয়হীন হও? নিশ্চয় তোমার সংশয়ের ব্যাপারেও তোমার সংশয় থাকার কথা? কিন্তু সংশয়ের ব্যাপারে সন্দিহান হবার অর্থ তো নিশ্চয়তার দিকে যাওয়া, তাই না?

নাস্তিকঃ (কিছুক্ষন চুপ করে থেকে) ঠিক আছে। হয়তো নিশ্চিত ভাবে জানা সম্ভব, হয়তো না, কিন্তু স্রষ্টা আছেন কি না আমি জানি না।

মুসলিমঃ গুড। তাহলে তুমি স্বীকার করো যে আসলে তুমি জানো না। এটা বেশ ভালো একটা অবস্থান। এতক্ষণ তুমি নিজেকে ছাড়া বাকি সবকিছু নিয়ে কথা বলছিলে। এতক্ষণে তুমি মূল জায়গায় নজর দিচ্ছো। তাহলে এখন প্রশ্ন হল, স্রষ্টা যে আছেন এটা তুমি কেন জানো না?

নাস্তিকঃ আমি জানি না, হয়তো আমি বিষয়টা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা করি নি। হয়তো আমি যথেষ্ট প্রমাণ পাই নি?

মুসলিমঃ যদি তোমাকে প্রমাণ দেখানো হয় তাহলে কি তুমি তা দেখতে ও বিবেচনা করতে রাজি হবে?

নাস্তিক (নাকি agnostic?)ঃ হ্যা

…..

শেষপর্যন্ত আস্তিক এবং নাস্তিক দুজনেই বিশ্বাসের জায়গা থেকেই তর্ক করে। পার্থক্য হল এক পক্ষ স্বীকার করে, আরেকপক্ষ স্বীকার করে না। কিন্তু ঐ ব্যক্তি কখনোই সত্যের সন্ধান পাবার আশাও করতে পারে না, যে তার বিশ্বাস (অবিশ্বাসের) বাস্তবতাকে স্বীকার করতে রাজি না।

এই কথোপকথনটা আনলাইকলি কারন সাধারণ নাস্তিকরা যৌক্তিকভাবে চিন্তা করে না। তারা অন্ধভাবে তাদের বিশ্বাস আঁকড়ে থাকে, নিজ বিশ্বাসের পক্ষে কোন প্রমাণ দেয় না এবং তারা কখনো প্রশ্নের জবাব দেয় না। যদি কখনো জবাব দেয়ও তখন বাংলা প্রথম পত্রের মতো জবাব দেয়। আকারে বিশাল, সাবস্টেন্সের দিক থেকে শূন্য এবং কখনোই টু দা পয়েন্ট না। যদিও তারা আশা করে অন্য সবাই তাদেরকে প্রমাণ দিতে বাধ্য, এবং তাদের প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য, তারা যেভাবে চায় সেভাবেই উত্তর দিতে বাধ্য।

সহজ ভাবে বললে এই কথোপকথনটা বা এই চিন্তার ট্রেনটা অনুসরণের জন্য চিন্তার যে পরিপক্কতা বা ম্যাচিউরিটি দরকার সেটা অধিকাংশ নাস্তিকদের মধ্যে অনুস্পস্থিত। আর যেহেতু তারা অন্ধ অবিশ্বাসের অবস্থান থেকে কথা বলে তাই তারা এ বিষয়ে কোন যুক্তি কিংবা প্রমাণ বিবেচনা করতেও রাজি না

তবুও পরবর্তীতে কোন হামবড়া গোছের নাস্তিকের সাথে দেখা হলে (অবশ্য তাদের অধিকাংশই হামবড়া) তাকে এই প্রশ্নগুলো করতে পারেন। বাংলা প্রথম পত্র জাতীয় কথাবার্তা আর গরু রচনা জাতীয় অপ্রাসঙ্গিক কথার স্রোতে বাঁধ দিয়ে কথা চালিয়ে যদি মাঝামাঝি পর্যন্ত কথা চালিয়ে নিতে পারেন তাহলে ইন শা আল্লাহ হামবড়া নাস্তিকের হামবড়া ভাব আর থাকবে না।

===========================

সত্যকথন ডেস্ক