12.9 C
New York
Friday, October 24, 2025

Buy now

spot_img
Home Blog Page 28

যুক্তি নয় বিশ্বাস- আল্লাহ কী সব সংশয়ের উত্তর দিতে বাধ্য ?

“যাই হোক, তুমি যতই বুদ্ধিমান হও না কেন – আমার এমন কিছু প্রশ্ন আছে যেগুলোর উত্তর আমাকে এখনও পর্যন্ত কেউ দিতে পারে নি। তুমিও দিতে পারবে না। আর যারা দিয়েছে তারা আমাকে সন্তষ্ট করতে পারে নি। আমার প্রশ্নগুলোর অকাট্য উত্তর কেউ দিতে পারলে আমি আস্তিক হয়ে যেতাম। তোমাকে বলি শোন…”

“দাঁড়াও দাঁড়াও… এত তাড়াহুড়ো কীসের? আমি তো এসেছি কেবল মেহমানের সাথে দেখা করতে – আরমানের চাচাত ভাই বলে কথা। চল চল, কথা যদি বলতেই হয়, চা খেতে খেতে বলা যাবে।”
আরমান আর ওর ভাই দুইজনেই বিরক্ত হল। যেন ওরা একদমই ধরে নিয়েছিল যে আমি এসব নাস্তিকতা নিয়েই কথা বলতে এসেছি। দুজনের মুখ দেখেই মজা পেলাম। আরমান রেগেছে কারণ ওর আসলে তর সইছে না।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আমিই শুরু করলাম, “তুমি বলছ তোমার এমন কিছু প্রশ্ন আছে যেগুলোর উত্তর কেউ দিতে পারে নাই; আর তোমার ধারণা আমিও দিতে পারব না, তাই তো? মানে The absolute question বা questions, ঠিক?”
“হ্যাঁ, আমি তাহলে শুরু করি…”
“তোমার প্রশ্ন আমার শোনা লাগবে না! সেটা তাকদীর বা ভাগ্য নিয়ে নাকি পাত্থর নিয়ে আমার তা জানা লাগবে না। শুধু শুনে যাও। মুসলিমদের পক্ষ থেকে The Absolute Answer বা অকাট্য উত্তরের বৈশিষ্ট্যই এমন… প্রশ্নই শোনার প্রয়োজন নেই।”
মানুষকে মাঝে মাঝে অবাক হতে সময় দিতে হয়, তা না হলে পরবর্তী ঘটনা বা কথায় মনোযোগ কমে যাবার আশাংকা থাকে। তাই একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলাম।
“শুনে রাখ, আমরা আল্লাহ সুবহানাহুর ওপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করেছি তাঁকে না দেখেই। কোনও প্রমাণ ছাড়াই। আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন কুরআনের শুরুতেই সূরা বাকারাহের ২য় ও ৩য় আয়াতে বলেছেন তাঁর কিতাব তাদেরই পথপ্রদর্শক ‘যারা অদেখা বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে’, এর তাৎপর্য হল এই যে, কিছু মানুষ কখনোই বিশ্বাস করবে না। এমনকি তাদেরকে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করে দেখালেও তারা বলবে যে সেটা যাদু ছিল… হেন ছিল, তেন ছিল – কিন্তু বিশ্বাস স্থাপন করবে না। শেষমেশ বিশ্বাস ওই ‘না দেখা বিষয়েই’ গিয়ে পড়বে। আর তাই তুমি বিশ্বাস করবে কি করবে না সেটা তোমার নিয়্যাতের উপরই নির্ভরশীল হবে।
তুমি যদি বিশ্বাস করতে চাও তবে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর না জেনেই করতে হবে, আর বিশ্বাস করতে না চাইলে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর জেনেও তুমি বিশ্বাস করবে না। তুমি প্রয়োজনে প্রমাণের অযোগ্য ‘মাল্টিভার্স’ থিউরিতে বিশ্বাস করবে, বিশ্বাস করবে কিছু গোঁড়ামিপূর্ণ মানুষ… মানুষের দেওয়া থিউরিতে… শুধুমাত্র বিশ্বাস না করবার জন্য প্রয়োজনে তোমার পূর্ব পুরুষদেরও বানর বলে দাবি করবে… ভাবতেও হাস্যকরা লাগে, এতসব মানবরচিত থিউরির জোড়াতালি আর প্রশ্নের ছড়াছড়ি শুধুমাত্র আল্লাহকে অবিশ্বাস করবার জন্য! এই ধরনের থার্ডক্লাস মানুষেরা আবার জিজ্ঞাসা করে আল্লাহ কেন জাহান্নাম বানালেন!
কিন্তু হ্যাঁ, তার মানে এই না যে ওইসব ফালতু প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। অবশ্যই আছে আর সেগুলো আর কেউ না জানলেও আল্লাহ রব্বুল আলামীন ঠিকই জানেন!” চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে রেখে দিলাম। আমার কন্ঠ আরও জোরালো হল।
বলতে থাকলাম, “আমাদেরকে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর জানানো হয় নাই। কারণ আমাদের সেগুলোর প্রয়োজন নাই। ‘আল্লাহ কেন মহাবিশ্ব সৃষ্টি করলেন, কীই বা হতো কিছু না সৃষ্টি করলে? এমনই একটি প্রশ্নের উত্তর আল্লাহ ফেরেশতাদেরই বলেছিলেন ‘আমি যা জানি, তোমরা তা জান না’। সুতরাং আমরা জানি না তো কী হয়েছে,
আল্লাহ সুবহানাহু হলেন ‘আল-আলীম’ অর্থাৎ সর্বজ্ঞ The All Knowing, তাঁর জ্ঞানের উপর কোনো জ্ঞান বা প্রশ্ন নেই। তোমাদের প্রশ্ন তো কিছুই না।
আর তুমি যেমন বললে না! ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে প্রশ্নগুলোর উত্তর পাবার। তার মানে তোমার মনে এই ধারণাও আসা স্বাভাবিক যে ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে সৃষ্টিকর্তা থাকবার। তুমি আর তোমার মত সমস্ত নাস্তিকেরাই তাদের বিশ্বাস নিয়ে দোদুল্যমান। আর সেটাই স্বাভাবিক। কারণ আল্লাহ মানুষের ভেতর তাঁকে বিশ্বাসের বিষয়টি ফিতরাতগতভাবে দিয়ে দেন, আর তা অবিকল থাকে যতক্ষণ না মানুষ দুনিয়ার বস্তাপচা তত্ত্ব খেয়ে খেয়ে সেই ফিতরাত নষ্ট করে ফেলে।
আমার কিন্তু কোনোই সন্দেহ নেই যে আল্লাহ রয়েছেন এবং একজনই রয়েছেন। এটি সবচেয়ে বড় সত্য। আর বিশ্বাস কর, তোমার আর তোমার মত নাস্তিকদের সমস্ত প্রশ্নের জবাব আল্লাহ দিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু কিয়ামতের দিনের আগে সেসবের জবাব তোমাদের পাওয়া হবে না। সেদিন তোমাদের কিছুই করার থাকবে না!
ভয়ঙ্কর-মজার ব্যাপার কী জান? সেদিন তোমাদের সাথে অবিচারও করা হবে না। এ অবস্থায় মারা গেলে তোমরা সেদিন কী বলে কান্নাকাটি করবে জান? বলবে,‘আমরা নিজেদের সাথে জুলুম করেছি। ইয়া আল্লাহ, আপনি আমাদের আরেকটি সুযোগ দিন’ কিন্তু কেউ সেদিন একথা বলবে না যে ‘আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর পাই নি’ বা ‘আমার উপর জুলুম করা হয়েছে’।
না না, আসলে তাও না। আল্লাহ হচ্ছেন আমাদের রব! তিনি তো বাধ্য নন তাঁরই এক নগন্য সৃষ্টির প্রশ্নের উত্তর দিতে! আল্লাহকে অবিশ্বাস করে কোনো বড় কিছু হয়ে যায় নি কেউ যে আল্লাহ তাকে উত্তর দিতে বাধ্য। বরং আমরা তাঁর বান্দা! আমরাই না আল্লাহর কাছে বাধ্য! আল্লাহু আকবার! তাই আমার তো মনে হয়, নাস্তিকদেরকে কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই জাহান্নামে ফেলে দেওয়াও হতে পারে। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক। তবে হ্যাঁ, আল্লাহ যদি তোমাদের প্রশ্নের উত্তর না ই দেন, তখন কী করবে?”
এতক্ষণে দেখলাম ছেলেটার চোখমুখ ফ্যাকাশে হয়ে এসেছে। কিন্তু আমি থামলাম না।
“তখন তোমরা এটা জানবে যে একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, তিনি আল্লাহ। কিন্তু বান্দা হয়ে তোমার সৃষ্টিকর্তার সাথে দেখা তো দূরের কথা, কথাও বলতে পারবে না। এই মানসিক শাস্তিই তো তোমাদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারবে। তুমি কি ভেবেছিলে জাহান্নামের আগুনের উত্তাপই সেখানকার সর্বোচ্চ শাস্তি! আর তুমি তোমার প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে সেখানে দিব্যি মানসিক শান্তিতে থাকবে! মোটেও না। জাহান্নামকে গড়া হয়েছে শারীরিক মানসিক সবদিক থেকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।
তোমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তোমাকে জাহান্নামে পাঠানো হবে নাকি না দিয়েই পাঠানো হবে সে বিচার আল্লাহ করবেন। কিন্তু একথাও আমরা জানি যে আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন তাঁর জান্নাতি বান্দাদের সাথে সরাসরি দেখা করবেন ও কথা বলবেন। আর এটাই হল জান্নাতিদের সবচেয়ে বড় পাওয়া – তাঁদের রবের সাথে সাক্ষাত, যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাঁকে বান্দারা না দেখেই, কোনো অকাট্য প্রমাণ ব্যতিরেকেই, প্রশ্নগুলোর উত্তর না পেয়েই বিশ্বাস করেছিল। অথবা হয়ত সে সৃষ্টির মধ্যেই যথেষ্ট প্রমাণ মেনে নিয়েছিল বা প্রশ্নগুলোর জানা উত্তরেই সন্তুষ্ট ছিল – কারণ সে মূলত বিশ্বাস করতে চেয়েছিল।
আমি ভাবলেও শিওরে উঠি যখন নাস্তিকেরা জানবে যে একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, তাদের বিচারও হল। দুনিয়ায় থাকাকালীন ওই ‘না দেখে বিশ্বাস করা’ মানুষগুলো জান্নাতে গিয়ে আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছে অথচ তখন এত ঠাঁটবাট নিয়ে চলা নাস্তিকগুলো এত বিদ্যে আওড়ানোর পরও তাঁদের রবকেই দেখতে পাবে না। একটুখানি বিজ্ঞানের গোঁড়ামিতে একটুখানি বিশ্বাসই আর করা হল না! অথচ বিজ্ঞানের জ্ঞানও আল্লাহর রহমতেই আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব হয়েছিল! আফসোস এদের জন্য!”
আমার কণ্ঠ জোরালো হয়ে যাওয়ায় আশেপাশের অনেকেরই অনাকাঙ্ক্ষিত মনোযোগ আকর্ষণ করে ফেলেছি। আরমানের চাচতো ভাই বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে। আরমানও ব্যতিক্রম নয়। যদ্দুর মনে পড়ে, এমন কড়াভাবে ও আগে কখনও আমাকে কথা বলতে দেখে নাই হয়তো।
আমি এবার একটু শান্ত হয়ে বললাম, “দেখো, তোমার যদি সত্যিই এমন কোনো প্রশ্ন থাকে যেগুলোর উত্তর তুমি সত্যিই জানতে চাও তাহলে তুমি জান্নাতে গিয়ে আল্লাহ সুবহানাহুতা’লাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেই পার! সুতরাং তোমারও ওই একটাই পথঃ সিরতল মুস্তাকিম!
তুমি বলছো তোমার প্রশ্নগুলোর অকাট্য উত্তর কেউ দিতে পারলে তুমি আস্তিক হয়ে যেতে! হাস্যকর। তুমি আস্তিক হও বা না হও তাতে কেবল একজন ছাড়া কারও কোনো লাভক্ষতি নেই, কারও কিছু আসে যায় না। সে একমাত্র মানুষটি হচ্ছ তুমি নিজে। জান্নাত নয়তো জাহান্নাম… পছন্দ তোমার।
এটাই তোমার সমস্ত প্রশ্নের সোজাসাপ্টা উত্তরঃ কোনো প্রমাণ নেই। আর প্রমাণ নেই বলেই আমরা মু’মিন অর্থাৎ বিশ্বাসী। অকাট্য প্রমাণ বা সোজা কথায় আল্লাহকে দেখলে পরে তো যে কেউই বিশ্বাস করতো। না দেখে বা অকাট্য প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস করাটাই হলপরীক্ষা।

তাই তুমি যে যুক্তিই খোঁজো না কেন কোন সময়েই তা তোমার কাছে বিতর্কের ঊর্ধে যাবে না… যতক্ষণ না তুমি আসলে প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস করতে চাও। তাই বলছি তোমার নিয়্যাত ঠিক করে নাও। সমস্ত উত্তর পেয়ে যাবে।

বলে উঠে পড়লাম।
আসার আগে বলে আসলাম, “মানুষকে মাঝে মাঝে একা চিন্তা করবার জন্য সময় দিতে হয়। তুমি চালাক হলে বুঝতে পারবে যে এই সময়টাতে শয়তান তোমাকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করবে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে নিও।”
ওখানে আমি আর তখন দাঁড়াই নি। সালাম দিয়ে চলে এসেছি। শেষবার শুধু দেখলাম বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে ছেলেটি। আরমানের দিকে খেয়াল করি নি।

এটা পড়তে পারেন – অপ্রমাণ্যের প্রমাণ
===================
লেখক — তানভীর আহমেদ

অপ্রমাণ্যের প্রমাণ

কুযুক্তির যুক্তি একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ -মেরাজের কথকথা- অবিশ্বাসের বিশ্বাস।

[১]

সকাল সকাল আবু বকরের (রদিআল্লাহু আ’নহু) কাছে উপস্থিত হয়েছে কিছু লোক। কী যেন শুনতে এসেছে তারা। চোখে মুখে উন্নাসিকতা আর উচ্ছ্বাস।
“তোমার বন্ধু সম্পর্কে এখন কী বলবে, হে আবু বকর!? তিনি তো এখন দাবি করছেন—তিনি নাকি গতরাতে বায়তুল মুকাদ্দাস গিয়েছিলেন, সেখানে নাকি ইবাদাত করেছেন, আবার এক রাতের মধ্যেই মক্কায় ফিরে এসেছেন।”
আবু বকর (রদিআল্লাহু আ’নহু) ভাবলেন স্বভাবসুলভ মিথ্যাচারই হয়তো করছে কুরাইশরা। “তোমরা আমাকে আগে বলো, তিনি কি সত্যিই এ কথা বলেছেন কি না।” কুরাইশ লোকগুলো হাঁ-সূচক উত্তর দিল। “তিনি তো এখনও লোকদের কাছে এই কাহিনী বর্ণনা করছেন।”
আবু বকর (রদিআল্লাহু আ’নহু) বললেন, “আল্লাহর কসম! যদি তিনি ﷺ একথা বলে থাকেন, তবে তিনি সত্য বলছেন। আর এতে এতো আশ্চর্যের কী আছে? তিনি যখন বলেন যে তাঁর কাছে আসমান থেকে ওহী নাযিল হয়, একজন ফেরেশতা তা তাঁর কাছে নিয়ে আসেন, আমি তো সেসব কথায় বিশ্বাস করি; আর সেগুলো তো তোমাদের এখনকার বর্ণনার চেয়েও বিস্ময়কর!”

[২]

মানুষ প্রমাণ খোঁজে, প্রমাণের উপযুক্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলে, শত আলোচনা করে জ্ঞান জাহির করে ছাড়ে। গবেষণা আর বিজ্ঞানচর্চার এই যুগে প্রমাণগুলো আজ বৈজ্ঞানিক হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রমাণ চাই করতে করতে মানুষ যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বাস্তবতা ভুলে যায় তা হলো—প্রমাণ ছাড়াই অনেক অপ্রামাণ্য বিষয়াদি সে বাস্তব জীবনে অনায়াসে স্বীকার করে নেয়, বিশ্বাস করে নেয়—এমন সব অপ্রামাণ্য বিষয়াদি যা বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করা যায় না। একটু চোখ বুলানো যাক।
দর্শন ও যুক্তিবিদ্যাগত সত্য (Philosophical & Logical Truths)
বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক বা Theoretical বিষয়গুলো যুক্তি ও গণিতের ওপর নির্ভর করে প্রমাণ করা হয়। আর বিজ্ঞান যেসব দর্শন ও যুক্তিবিদ্যার ওপর টিকে রয়েছে, সেগুলো বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করা যায় না। যেমন, একই সাথে একটি বিষয় সত্য আবার মিথ্যা হতে পারে না—এই যুক্তিটির ওপর ভিত্তি করে অনেক সময়ই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়। অথচ একই সাথে একটি বিষয় সত্য আবার মিথ্যা হতে পারে না’—এই যুক্তিটির নিজেরই কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দেয়া যায় না। এটা কেবলই উপলব্ধির বিষয়। তেমনই দর্শন ও যুক্তিবিদ্যাগত অন্যান্য সমস্ত সত্যগুলোই অপ্রামাণ্য, কেবল উপলব্ধির বিষয়। ‘পৃথিবীর সমস্ত আপেল লাল’—এই বাক্য সত্য হলে ইকবাল সাহেবের কেনা আপেলটি যে লালই হবে, তার আলাদা কোনো প্রমাণ দিতে হয় না। কারণ, দর্শনগত ও যুক্তিগত ধারণাগুলো বিজ্ঞান প্রথমে সত্য ধরে নিয়েই সামনে এগোয়। তাই সেগুলো আবার প্রমাণ করতে গেলে চক্রাকারে তর্ক (Argument in a circle) ছাড়া আর কিছুই হবে না।
আর গাণিতিক সত্যগুলোও (Mathematical Truths) দর্শনগত ও যুক্তিগত সত্যের আরেকটি রূপমাত্র। যেমন, ‘পাঁচ’ সংখ্যাটির ধারণা বা ‘এক’ এর পর ‘দুই’ সংখ্যাটাই আসে বা এক এক যোগ করলে ‘দুই’-ই হয়—এমন সব অতি সাধারণ গাণিতিক বিষয়গুলোও দর্শনগত উপলব্ধির বিষয়। এগুলো বিজ্ঞান দিয়ে আলাদাভাবে প্রমাণ করতে হয় না।
অধিবিদ্যাগত / অবস্তুগত সত্য (Metaphysical Truths)
আমাদের এই জগতটা আসলে কোনো কম্পিউটার সিমুলেশন বা কারো স্বপ্ন নয়, বরং বাস্তবজগত আর এতে যা কিছু হচ্ছে তা বাস্তবিকই হচ্ছে। ১০ মিনিট আগে যে ঘটনাটা অতীত হয়েছে তা সত্যিই ঘটেছে, নিজ সত্ত্বা বা ‘আমি’ এর উপলব্ধি, অন্যান্য মানুষের সত্ত্বা বা মনের অস্তিত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলো এধরনের সত্যের অন্তর্ভুক্ত এবং বিজ্ঞানের আওতারই বাইরে। কোনোরকম প্রমাণ ছাড়াই আমরা এই জগতের বাস্তবতা, অতীতের বাস্তবতা, নিজ ও অপরাপর সত্ত্বার অস্তিত্ব ইত্যাদি Metaphysical ব্যাপারগুলো দিব্যি মেনে নিই।
তাই হাস্যকর হলেও সত্য, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ প্রমাণ বলে ফেনা তোলা কাউকে নিজের মনের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে বললেই চুপসে যেতে দেখা যায়।
মানবিকতা ও নৈতিকতা (Morals & Ethics)
মানবিকতা ও নৈতিকতাকে কখনো বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করা বা মাপা যায় না। নাৎসি বিজ্ঞানীরা যে গ্যাস চেম্বারে মানুষ হত্যায় মেতে উঠতো, হিংস্র সব গবেষণায় মেতে উঠতো সেগুলো যে নীতিবিবর্জিত, অমানবিক ছিলো—তা বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। এছাড়া ধর্ষণ, অজাচার ইত্যাদির মতো নৈতিকতা বিবর্জিত কার্যকলাপের কোনো বৈজ্ঞানিক সদুত্তর নেই। বিজ্ঞান এগুলোর খারাপ প্রভাব দেখাতে পারে মাত্র। কিন্তু এগুলো অপরাধ কিনা সেই প্রশ্নে বিজ্ঞান নীরব।
ধর্মীয় বিশ্বাস আর বিধিবিধানে মুক্তচিন্তার দাবিদারেরা বিজ্ঞান টেনে আনলেও ধর্ষণ, সমকামিতার মতো বিষয়াদিতে ঠিকই ‘মানবিকতা’ আমদানি করে, তখন তাদের বিজ্ঞান পালিয়ে বেড়ায়। বাস্তবতা বিবর্জিত হয়ে যারা LGBT rights বা সমকামিতা সমর্থন করে আর —‘ভালোবাসা যে কারও মধ্যে হতে পারে’, ‘এটা ব্যতিক্রম তবে অস্বাভাবিক কিছু না’— এধরনের ফালতু বাহানা দাঁড় করায়, তাদের বেশিরভাগও অজাচার বা Incest-কে অনৈতিক মনে করে; তখন তাদের ওইসব গাঁজাখুরি যুক্তি আর দেখা যায় না। আবার কিছু কুলাঙ্গার স্রষ্টাকে অস্বীকার করে বিজ্ঞানকে রবের আসনে বসায়। কিন্তু বিজ্ঞান নৈতিকতার প্রশ্নে অচল হওয়ায় ওই কুলাঙ্গাররাও রক্তসম্পর্কের অজাচারকে অনৈতিক প্রমাণ করতে পারে না; তবুও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এদেরকে যদি বলা হয় নিজ স্ত্রীকে নিজ ছেলের সাথে অজাচার করতে দেবে কিনা—তখন ওদেরও ঠিকই নৈতিকতা চলে আসে। আর সর্বশেষ শ্রেণির যেসব চূড়ান্ত কুলাঙ্গাররা নৈতিকতার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় অপারগ হয়ে সমকামিতার সাথে সাথে নিজ বাবা-মা, ছেলেমেয়েদের সাথেও এমন অজাচারের বৈধতা দিয়ে দেয়, সেই কুলাঙ্গারদের ব্যাপারে বোঝাই যায় যে এরা আসলে সমাজে কী প্রতিষ্ঠা করতে চায়… এককথায় চূড়ান্ত মাত্রার ব্যভিচার ও অরাজকতা—ঠিক যেমনটা শয়তান চায়।
নৈতিকতা এবং এর থেকে উৎসারিত অপরাধবিজ্ঞান গড়েই উঠেছে ধর্মীয় অনুশাসনগুলোকে কেন্দ্র করে। কারণ, কারও ইচ্ছা হলেই কোনো কিছু করে ফেলতে পারবে কিনা—এমন সমস্ত বিষয়াদি শেষমেশ নৈতিকতার প্রশ্নেই এসে দাঁড়ায়, যা বিজ্ঞানের আওতার বাইরে।
আর মানুষভেদে যেহেতু নৈতিকতার মূল্যায়ন ভিন্ন, তাই যে-কেউ দাবি করতেই পারে যে, সে আরেকজনের নির্ধারণ করে দেয়া নৈতিকতার স্কেলে চলবে না। তাই এক্ষেত্রেও সবচেয়ে যৌক্তিক হলো সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নির্ধারিত সার্বজনীন নৈতিকতা মেনে নেয়া। তাছাড়া, সৃষ্টিকর্তাই বিধান প্রদান ও নৈতিকতার স্কেল নির্ধারণের সবচেয়ে বেশি হকদার ও একচ্ছত্র অধিকারী। তা না হলে যে যা খুশি তা-ই করতে চাওয়ার অধিকার দিতে দিতে একসময় সভ্যতার পতন নিশ্চিত হয়; একারণেই আধুনিক Individualism, Secularism তথা সেক্যুলার ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। আর সমস্ত অধঃপতনের সূত্রপাত হয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নির্ধারিত নৈতিকতা ও অনুশাসন ছুঁড়ে ফেলে বিজ্ঞান দিয়ে সবকিছু ব্যাখ্যা করার চেষ্টায় মেতে উঠে।
ইদানিংকালে সমকামিতা বিষয়ে মানবিকতার প্রশ্ন এড়াতে ‘গে জিন’ (Gay Gene) আবিষ্কারের নতুন ফন্দি আঁটা হয়েছে। অর্থাৎ জন্মগতভাবেই কেউ সমকামি হয়ে গেলে তো একাজে আর অমানবিকতার তীর আসবে না। কিন্তু বহু চেষ্টা হলেও এমন জিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ কারণে বলতে শোনা যায়, বিজ্ঞানীরা ‘ধারণা করছেন’ সমকামিতার কারণ হল ‘গে জিন’। আর তাতেই নাস্তিক্যবাদীদের আস্ফালন শুরু হয়ে যায়, এমন সব নিউজগুলো ফলাও করে প্রচার করতে দেখা যায়। অথচ এমন ধারণা যে তাহলে অন্যসব অপরাধের ক্ষেত্রেও করে নেওয়া যায় অর্থাৎ কেউ সিরিয়ালি খুন করছে —‘কিলার জিন’ এর কারণে, কেউ ধর্ষণ করছে ‘রেপিস্ট জিন’ এর কারণে, এতে তার কোন দোষ নেই, কেবল সেই জিনটা খুঁজে পাওয়া বাকি— একই যুক্তি এসব ক্ষেত্রে ঠিকই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এভাবে যখন যে যুক্তি যেভাবে নিজের কাজে লাগে, সেভাবে যাচ্ছেতাইভাবে জোড়াতালি দিয়ে গড়ে উঠে ওদের তর্কগুলো।
সভ্যতার অধঃপতনের একটি বাস্তব উদাহরণ হলো, আমেরিকায় ৩০–৪০ বছর আগে সমকামিতাকে অপরাধ আর মানসিক ব্যাধি হিসেবে দেখা হলেও এখন সেখানে এটা বৈধ করা হয়ে গেছে। এছাড়া বিশ্বের কিছু জায়গায় Incest Marriage এরও বৈধতা রয়েছে! আবার কিছু জায়গায় রীতিমতো উলঙ্গ হয়ে ঘোরাফেরার অধিকারের জন্য আন্দোলনও চলে। আর বলাই বাহুল্য, সভ্যবেশী অসভ্যদের দেশে মানুষ উলঙ্গ হয়ে চলাফেরার জন্য নির্ধারিত বহু বিচ রয়েছে! এভাবে ধীরে ধীরে পশুর স্তরও অতিক্রম করে নেমে যাচ্ছে ওরা। আর এই সমস্তকিছুর প্রাথমিক পদক্ষেপ ছিলো স্রষ্টাকে অস্বীকার করে, তাঁর নির্ধারিত নৈতিকতাকে অস্বীকার করে বিজ্ঞান দিয়ে সবকিছু ব্যাখ্যা করার চেষ্টা। কারণ ওই একটাই, বিজ্ঞানে ‘নৈতিকতা’ প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই!
শিল্পকলা ও নান্দনিকতা (Aesthetic and literature)
শিল্পকলার মূল্য বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করা যায় না। সৃজনশীলতা, সৌন্দর্য্যবোধ ইত্যাদি বিষয়গুলো বিজ্ঞানের আওতার বাইরে আর তাই শিল্পসাহিত্যও বিজ্ঞান দ্বারা মাপা যায় না। সে কারণে পাথরের ভাস্কর্য যতো নিখুঁতই হোক না কেন, বিজ্ঞানের হিসাবে তার মূল্য কেজি দরে অন্যান্য পাথরের মতোই। তেমনই চিত্রকর্ম, সাহিত্যকর্ম বাস্তবে যতই সৃজনশীল ও নান্দনিক হোক না কেন, সেগুলোর সবই বিজ্ঞানের হিসাবে রীতিমতো মূল্যহীন। কারণ শিল্পসাহিত্য বিজ্ঞান দ্বারা অপ্রামাণ্য।
দেশীয় কলাবিজ্ঞানীরা আল্লাহকে অবিশ্বাসের জন্য এতো বিজ্ঞান কপচায়, অথচ শিল্পকলারই যে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই তা তাদের মনে থাকে না। এছাড়া শিল্পবোধে আসক্তি বেশিরভাগ সময়েই নগ্নতায় গিয়ে ঠেকে। প্রাচীন গ্রিক ভাস্কর্য থেকে উপমাহাদেশীয় প্রাচীন মূর্তি, চিত্রকর্ম, সাহিত্য সবকিছু সেই সাক্ষ্যই বহন করে। কামনা-বাসনাকে নির্জীব এসব শিল্পমাধ্যমে ধারণ করা মূলত Objectophilia নামক বিকারগ্রস্ততার প্রায়োগিক রূপ। শিল্পচর্চাকারীদের বেশিরভাগই এই মানসিক বিকারগ্রস্ততায় আক্রান্ত হয়ে যায় আর নিজেদের সাহিত্যে-শিল্পকর্মে নগ্নতা, বিকৃত যৌনাচার ইত্যাদির প্রকাশ ঘটায়। চিত্রকর ছবিতে এগুলো ফুটিয়ে তোলে, সাহিত্যিক নিজের গল্প-কবিতা-উপন্যাসের কল্পিত চরিত্রদের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলে, তো ভাস্কর ফুটিয়ে তোলে ভাস্কর্যে। শিল্পের আধুনিক রূপ সিনেমা, গান ইত্যাদিতেও শিল্পের নামে বেহায়াপনা, অশ্লীলতার প্রসার হয়। শিল্পের নামে ওদের কাছে সবই চলে।
কিন্তু এরকম বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, অবাধ যৌনাচার বা এমন কিছু হওয়ার সুযোগ রয়েছে তেমন বেশিরভাগ মাধ্যমগুলোকেই ইসলামি অনুশাসন কখনো বৈধতা দেয় না। বৈধতা দেয় না কোনোটিরই লাগামহীনতার। সে কারণেই যুগে যুগে কলাচর্চাকারীদের ইসলামের প্রতি এতো বিদ্বেষ। এককথায়, তারা শিল্পের নামে যা খুশি তা করার স্বাধীনতা চায়। অর্থাৎ, তারা সেক্যুলারিজমই চায় ‘শিল্প’ নামক মুখোশের আড়ালে। এ কারণেই দেখা যায়, যে-ই শিল্পসাহিত্য সচেতন, সে-ই সেক্যুলার। আবার যে সেক্যুলার সেও শিল্পসাহিত্য অনুরাগী।
চৈতন্যবোধ (Conscience/Consciousness)
নিজস্ব অনুভূতি বা চৈতন্যবোধ কখনো বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। বিজ্ঞান কখনোই বলতে পারে না ভালোবাসার, ঘৃণার, রাগ-অভিমান করার বা বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হবার অনুভূতি কেমন। স্ক্যান করে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। কিন্তু অনুভূতিগুলো আসলে কেমন তা জানা যায় না।
এছাড়াও অনুভূতি-অভিজ্ঞতা হয় একান্তই নিজস্ব ও ব্যক্তিভেদে একেক রকম। বিশ্বাস, ভালোবাসা ইত্যাদি ছাড়াও সমুদ্রের পাড়ে সূর্যাস্ত দেখার অনুভূতি কেমন, ঝর্ণার মৃদু শব্দ শোনার অনুভূতি কেমন—এসব থেকে শুরু করে সাধারণ লাল রঙ দেখার অনুভূতিটিও আসলে একজনের নিকট কেমন—তা বিজ্ঞান তো দূরের কথা, দ্বিতীয় আরেকজনও বলতে পারে না; এমনকি দ্বিতীয়জনকে হুবহু একই বিষয়াদি দেখানো-শোনানো হলেও। চেতনা, অনুভূতি, অভিজ্ঞতার একান্তই ব্যক্তিগত হওয়ার এই ব্যাপারটিকে Qualia বলা হয়ে থাকে।

[৩]

বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণ করা যায় না—এমন অজস্র বিষয়াদি জানার পর ‘বিজ্ঞান’ সম্বন্ধেই কিছু বিষয় লক্ষণীয়।
প্রথমত, অনেকে বিজ্ঞানকে সব সমস্যার সমাধান মনে করে, মনে করে বিজ্ঞান হলো Omnipotent. অথচ দর্শন, যুক্তি, মানবিকতা-নৈতিকতা ইত্যাদি বিষয়াদি যে বিজ্ঞান দিয়ে অপ্রামাণ্য, তা তাদের মাথায় আসে না। তাছাড়াও ‘বিজ্ঞান দিয়ে সব ব্যাখ্যা করা যায়’ বা ‘বিজ্ঞান হলো Omnipotent’ অথবা ‘বিজ্ঞান একসময় ঠিকই উত্তর খুঁজে বের করবে’ এই কথাগুলোও স্রেফ দর্শনগত উক্তি বা বিশ্বাসমাত্র। এই কথাগুলোরও কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই! এগুলোও বিজ্ঞানের প্রতি অন্ধবিশ্বাস—একে বলা হয় Scientism যা কিনা New-Atheism এর ভিত্তি।
দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞান আসলে কী? পর্যবেক্ষণ, গবেষণা, যুক্তিতর্ক, দর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে জগত সম্বন্ধে জানবার পদ্ধতিগত উপায়ই হল বিজ্ঞান। সাধারণত বিজ্ঞান দুই উপায়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছায় —Deductive reasoning আর Inductive Reasoning. Deductive reasoning-এর মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য কিছু দর্শন, যুক্তিতর্ককে সত্য ধরে নিয়ে শেষমেশ সিদ্ধান্তে আসা হয়। আর Inductive Reasoning-এ পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তে আসা হয়। প্রথমটিতে যে কেবলই উপলব্ধি ও দর্শনগত কিছু সত্যকে মেনে নিয়েই সামনে আগানো হয়—তা আগেই আলোচিত হয়েছে। আর ২য় উপায়ে অর্থাৎ, Inductive Reasoning-এ যেসব পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তে আসা হয়, সেগুলোর পরবর্তী পর্যবেক্ষণ সবসময়ই ভিন্ন ফলাফল দেখাতে পারে। যেমন—কেউ যদি একটি শহরের ২০,০০০ কবুতর পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধন্তে আসে যে, এই শহরের কবুতরগুলো সাদা, তাহলে তার সিদ্ধান্ত আপাত সত্য হলেও অ্যাবসোলুট সত্য হবে না। কারণ ২০,০০১ তম কবুতরটি সবসময়ই বাদামি বা ধূসর হতেই পারে। Inductive Reasoning ভিত্তিক এমন বহু তথ্য আমরা ‘বিজ্ঞান’ শব্দের আড়ালে নিত্য অকাট্য ভেবে নিই।
তাছাড়া আরেকজনের পর্যবেক্ষণ থেকে আসা সিদ্ধান্ত যে আসলেও সত্য—সেটা মেনে নিয়ে আমরা মূলত সিস্টেমনির্গত ‘বিজ্ঞানী’ দাবিদারদেরকে বিশ্বাস করে যাই। এছাড়াও রাজনীতির প্রশ্নে, ইতিহাসের প্রশ্নে, নৈতিকতার প্রশ্নে, এরকম আরো অনেক প্রশ্নে আমরা নানাজনের কথা বিশ্বাস করে যাই অহরহ, তখন বলি না চাক্ষুষ প্রমাণের কথা। কিন্তু ‘সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব’ যা উপলব্ধিগতভাবে আমরা অনুভব করি—সে ব্যাপারে বিশ্বাস করতে পারি না ৪০ বছর ধরে ‘আল-আমিন’ বা বিশ্বাসী মানুষটি শেষ নবুওয়্যাতের আর এক রাতের মধ্যে ইসরা-মিরাজের দাবি নিয়ে এলে, লেখাপড়া না জেনেও কুরআনের মত অশ্রুতপূর্ব বাণী নিয়ে এলে, আসলে বিশ্বাস করতে পারি না তা নয়, বরং বিশ্বাস করতে চাই না।
তৃতীয়ত, বিজ্ঞান বিভিন্ন বিষয়াদির ব্যাখ্যাস্বরূপ অনেক তত্ত্ব দাঁড় করায়। আর অনেকসময়ই সেসব তত্ত্ব পর্যবেক্ষণেরও অযোগ্য হলেও মানুষ তাতে ‘বিশ্বাস’ করে, স্রেফ বায়াসড সিস্টেমনির্গত ‘বিজ্ঞানীরা’ বিশ্বাস করেন বলে। এই সিস্টেম বায়াসড কারণ এটি একটি নির্দিষ্ট বস্তুবাদী দর্শনের ওপর গড়ে ওঠা, এবং এই সিস্টেম অন্ধভাবে সায়েন্টিজমে বিশ্বাসী। অর্থাৎ এই সিস্টেম বিশ্বাস করে ‘বিজ্ঞান দিয়ে সব ব্যাখ্যা করা যায় বা যাবে’। বায়াসড এই সিস্টেম থেকে বের হওয়া বায়াসড বিজ্ঞানীদের অপ্রমাণিত মত এবং বিশ্বাসকে উপস্থাপন করা হয় বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হিসেবে। বেশি বেশি প্রচার করা হয় নাস্তিকতার উপসংহারকে সমর্থন করে এমন বিভিন্ন হাইপোথিসিসগুলোকে। ফলস্বরূপ এই সিস্টেমনির্গত অপ্রমাণিত, প্রমাণঅযোগ্য দাবিগুলোকে আমরা হরহামেশা বিশ্বাস করি। যেমন, Multiverse Theory-তে অনেক বিজ্ঞানীই বিশ্বাসী, অথচ সবাই জানে যে এই মহাবিশ্বের বাহিরে কোনোকিছু পর্যবেক্ষণও সম্ভব নয়। এখন স্রষ্টাও পর্যবেক্ষণ-আওতামুক্ত, আবার অন্য মহাবিশ্বও পর্যবেক্ষণ-আওতার বাহিরে। তাহলে কেন শেষমেশ থিওরিই বেছে নেয়া! এবং একে বৈজ্ঞানিক্ব (scientific) বলে দাবি করা? যেন স্রষ্টাকে অবিশ্বাসের জন্যই এতোসব নাটক। তা না হলে যে বস্তুবাদী হওয়া যায় না, পাওয়া যায় না ‘যা খুশি তা করা’র সার্টিফিকেট।
চতুর্থত, তাত্ত্বিক বিষয়াদি ছাড়াও পরিমাপসহ অন্যান্য প্রায়োগিক ক্ষেত্রের মূল বিষয়গুলোও আমরা কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়া মেনে নিই। প্র্যাক্টিকালের বিষয়গুলো হলো এককগুলো। যেমন, এক মিটার আসলে কতোটুকু? কেন এতোটুকুই হলো? কেন সামান্য বেশি বা সামান্য কম হলো না—এই প্রশ্নগুলো আমরা কেউ করি না। কারণ এই ধরনের বিষয় মেনে না নিয়ে তর্ক করা আসলে অযথা কালক্ষেপণের খারাপ নিয়্যাতকেই নির্দেশ করে। অথচ একই জিনিস যে আল্লাহর দেয়া বিধিবিধানগুলোর জন্যও প্রযোজ্য—তা নাস্তিক আর সংশয়বাদীদের খেয়াল থাকে না। এই বিধান এমন কেন হলো, ওটা অমন কেন হল, কেন ওটা এরকম হলো না—এমন সমস্ত প্রশ্নও যে মেনে না নেয়ার খাতিরে অযথা কালক্ষেপণেরই নামান্তর তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে নাস্তিক, সংশয়বাদী আর সমঘরানার প্রাণীরা কেবল দুটো কারণে করে থাকতে পারে। এক, তাদের বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি লোপ পেয়েছে অথবা দুই, কেবল অবিশ্বাসের জন্য তারা ভণ্ডামি বা Hypocrisy-তে মেতেছে।
পঞ্চমত, বিজ্ঞানের একটি শাখা Quantum Physics-এর অনেক বিষয়ই আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে অনুধাবণ করা গেলেও বিজ্ঞান তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারে না। যেমন, Quantum Entanglement হলো ইলেকট্রনের মতো উপপারমাণবিক কণিকাগুলোর এমন এক বিশেষ অবস্থা, যখন বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরত্ব হলেও দু’টি কণিকার মধ্যে একরকম যোগাযোগ থাকে। পুরো মহাবিশ্বে এই অবস্থায় কণিকারা বিরাজমান থাকায় পুরো মহাবিশ্ব রীতিমতো একটা জীবন্ত দেহের মতো! অথচ এটা পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম সূত্র—মহাবিশ্বে আলোর গতিবেগ সর্বোচ্চ—এর বিপরীত। এর কারণ হিসেবে কোয়ান্টাম কণিকার জগত আর তার ধর্মকে আলাদা বিবেচনা করেই এর নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়। কিন্তু বলাই বাহুল্য, অন্যান্য সবকিছুর মতো এখানকার ‘কেন’ প্রশ্নেও বিজ্ঞান নীরব। কীভাবে হয় সে ব্যাখ্যাতেই বিজ্ঞান সীমাবদ্ধ থাকে।

[৪]

Burden of Proof এর ভুল প্রয়োগ
Burden of Proof হলো কেউ কোনো দাবি নিয়ে এলে সেই দাবির পক্ষে প্রমাণ পেশ করার Burden বা দায়ভার। এতো এতো কিছু প্রমাণ ছাড়া মেনে নিলেও কেবল স্রষ্টার ক্ষেত্রেই এসে নাস্তিকদের Burden of Proof খোঁজাটা আসলে ভণ্ডামিই নির্দেশ করে। কিন্তু সেটা বাদ দিলেও ইতিহাসে Burden of Proof-এর সবচেয়ে বাজে আর বুদ্ধিহীন প্রয়োগ সৃষ্টিকর্তার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে, আর সেটা করে যত্তসব বুদ্ধিহীন অথর্বরাই। কারণ আস্তিক-নাস্তিক আলোচনায় Burden of Proof-এর কথা যখন আনা হয়, তখন by default বা আগে থেকেই ধরে নেয়া হয় যে কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই আর সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব এক নতুন দাবি। আর তাই দাবিকারীকে নিজ দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করতে হবে। যুক্তি ঠিক আছে, তবে প্রয়োগ নয়! বরং সৃষ্টির নৈপুণ্য আর সুবিন্যাস থেকেই by default একজন Intelligent Designer / Manufacturer বা এককথায় স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়। ঠিক যেমন এই লেখাটি পড়বার সময় by default একজন লেখকের অস্তিত্ব মন স্বীকার করে নেয়। লেখাটির পেছনে যে একজন বুদ্ধিমান সত্ত্বার অস্তিত্ব আছে তা আলাদা করে প্রমাণ করতে হয় না।
ডিএনএ কোডিংয়ের কথাও যদি বাদ দেই—মহাবিশ্বের উৎপত্তি, ছায়াপথ, নক্ষত্রসমূহ থেকে শুরু করে অণু এবং আণবিক কণার মতো বস্তুর আকার আকৃতিও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনেকগুলো মৌলিক ধ্রুবকের উপর নির্ভর করে। আর প্রতিটি সংখ্যায় যে পরিমাণ নিখুঁত সমন্বয় করা হয়েছে, তা একজন Intelligent Designer-এর অস্তিত্বের দিকেই নির্দেশ করে। মহাকর্ষ ধ্রুবক যদি ১০৬০ এর (অর্থাৎ, ১ এর পরে ৬০ টি শূন্য) এক ভাগ বেশি বা কম হতো, তাহলে কোনো ছায়াপথ, গ্রহ নক্ষত্র কিছুই সৃষ্টি হতো না। শুধুমাত্র এই ধ্রুবকের অতো সূক্ষ্ম পরিমাণ বিচ্যুতিতেও মহাবিশ্বের সূচনালগ্নেই এর অতিব্যাপ্তি হয়ে যেতো বা মুহূর্তেই ধীর ব্যাপ্তির কারণে পরক্ষণেই গুটিয়ে ধ্বংস হয়ে যেতো। আবার, মহাজাগতিক ধ্রুবকের মান ১০১২০ এর এক ভাগও এদিক-সেদিক হলে তা মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের হারে একই প্রভাব ফেলে কখনো এ পর্যন্ত আসা তো দূরের কথা, মহাবিশ্ব নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যেতো।
যে সমস্ত বিচ্যুতির কথা বলা হচ্ছে, তা যে আসলে কতো ক্ষুদ্র তা বুঝতে পৃথিবীতে মোট যতোটি বালুকণা রয়েছে—তা কল্পনা করা যেতে পারে। এই সংখ্যক বালুকণা দিয়ে যদি একটা ধ্রুবক গঠিত হয়েছে বলে ধরা হয়, তবে পৃথিবীতে আরেকটি বালুকণা যোগ করলে বা একটি সরিয়ে নিলে আর কোনো কিছুরই অস্তিত্ব থাকতো না! প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক, পারমাণবিক মৌলিক কণিকাগুলোর ভর, হাবল ধ্রুবকসহ আরও বহু ধ্রুবকের এমন নিখুঁত ভারসাম্য বা Fine Tuning একজন বুদ্ধিমান সত্ত্বা আছেন এই যৌক্তিক উপসংহারের দিকেই by default নিয়ে যায়। তাই এক্ষেত্রে Burden of Proof আসলে নাস্তিকদের ওপরেই বর্তায়। আমরা সৃষ্টিজগত থেকে স্বভাবজাতভাবেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব বুঝি। এটাই হলো by default. এখন তোমরা নিজেদের অস্বীকারের প্রমাণ দাও।
নাস্তিক্যবাদী বিজ্ঞানীরা এমন অসম্ভব নিখুঁত বিন্যাসকে স্রষ্টা ছাড়া ব্যাখ্যা করার চেষ্টায় Multiverse Theory এনেছে যেখানে মূলত বলা হয় পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলোর যতো সম্ভাবনা হওয়া সম্ভব, তার সবগুলো ক্রমান্বয়ে হয়ে চলছে অর্থাৎ লক্ষ-কোটি বিলিয়ন সংখ্যক মহাবিশ্ব বিভিন্ন মানের মৌলিক ধ্রুবক নিয়ে ক্রমাগত জন্মাচ্ছে আর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনোটি হয়তো টিকে যাচ্ছে কিছুকাল। আর এভাবে করে যে মহাবিশ্বটির সবকিছু এক্কেবারে Perfect হয়ে গিয়েছে, ঠিক সেটাতেই সৌভাগ্যবশত আমরা রয়েছি! অথচ এই তত্ত্ব বা বিশ্বাস প্রমাণের কোনো উপায় নেই। কারণ, অন্য কোনো মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণই সম্ভব নয়। এই তত্ত্বও যে Burden of Proof-এর দাবি রাখে সে কথা আর কেউ বলে না। কেবল সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে অবিশ্বাসের জন্য এই সমস্ত রূপকথায় বিশ্বাস আর প্রচার-প্রসার করে চলে। অথচ না দেখেই আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসের কথা এলে, আল্লাহর ইচ্ছায় এক রাতে ইসরা-মিরাজ ভ্রমণের কথা এলে এরাই আবার রূপকথা বলে বলে মুখে ফেনা তোলে।
আগেকার যুগের জ্ঞানীরাও সৃষ্টিনৈপুণ্য থেকে স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুধাবণ করতে পারতেন। তখন কেবল শুধু আজকের মতো সূক্ষ্ম মানসহ জানা ছিল না। নবি ইবরাহিম (আ.) নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের বৈচিত্র্যময় বিষয়গুলো দেখে চিন্তাভাবনা করে স্রষ্টায় বিশ্বাসে এসে পৌঁছেছিলেন (৬ : ৭৫), তো অ্যারিস্টটল কল্পনা করেছিল সারাটা জীবন মাটির নিচে কাটিয়ে দেওয়া কিছু মানুষেরা হঠাৎ উপরে উঠে এলে সৃষ্টিবৈচিত্র্য দেখে ঠিকই একজন স্রষ্টায় বিশ্বাসী হয়ে উঠবে। অবশ্য ইব্রাহিম (আ.)যে আল্লাহরই কাছে আন্তরিকভাবে সাহায্য প্রার্থনাস্বরূপ বলেছিলেন, “যদি আমার প্রতিপালক আমাকে পথ-প্রদর্শন না করেন, তবে অবশ্যই আমি বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।” (৬ : ৭৭) এমন সাহায্য চাওয়া অ্যারিস্টটল বা হালের অ্যান্টনি ফ্লিউদের বেলায় শোনা যায় না। অথচ স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুধাবনের পর তাঁর কাছে আন্তরিকভাবে সাহায্য প্রার্থনাই হলো সর্বপ্রথম দায়িত্ব যা কিনা প্রকৃত মুমিনরা সুরা ফাতিহার মাধ্যমে দিনে কমপক্ষে ১৭ বার করে থাকে।
.

[৫]

আসলে প্রমাণ খোঁজাতে সমস্যা নেই। সমস্যা হল যাচাইয়ের সৎ মানসিকতা থেকে প্রমাণ না খুঁজে অবিশ্বাস পুষে রেখে কালক্ষেপণের জন্য ‘প্রমাণ চাই, প্রমাণ চাই’ বলে বেড়ানো। এমন মানুষদের আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিই, অন্তরে সৎ নিয়্যাত রয়েছে নাকি কালক্ষেপণের বা সংশয় সন্দেহে ডুবে থেকে দুনিয়াতে যা খুশি তাই করে বেড়ানোর ধান্দা রয়েছে তা সম্পর্কে আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল।
ইসরা ও মিরাজের রাতের পরদিন সকালে তাই মক্কার কাফিরদের জন্যও কাফেলার প্রমাণ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা বিশ্বাস করেনি। অথচ আবু বকরও (রদিআল্লাহু আ’নহু) প্রমাণ খুঁজেছিলেন। অতঃপর প্রমাণ পাবার পর ঠিকই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে মুহাম্মাদ (ﷺ) সত্য বলছেন। অর্থাৎ, প্রমাণের চেয়েও বড় হলো আসলেও আপনি আন্তরিক কিনা, আসলেও আপনি বিশ্বাস করতে চান কিনা। নইলে শত-সহস্র প্রমাণেও কোন ফায়দা হবে না। তাই আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন বান্দাদের থেকে প্রথমেই চেয়েছেন গায়েবে বিশ্বাস, কারণ যে বিশ্বাস করতে চায় না তার জন্য কোনো প্রমাণই অকাট্য হবে না। সে কারণেই সুরা বাকারার প্রথমেই আল্লাহ বলেছেন ‘যারা গায়েবে বিশ্বাস করে’। কারণ আমরা আসলে প্রমাণ পেয়ে বিশ্বাস করি—তা নয়। বরং একটা বিষয় সচেতন বা অবচেতনভাবে বিশ্বাস করি বলেই প্রমাণ পাই, সে বিষয়ের প্রমাণ গ্রহণ করি। আর আমরা যে সবকিছুর প্রমাণ পেয়ে পেয়ে বিশ্বাস করি না—তা তো আগেই আলোচনা হলো। তাই আবু বকরের (রদিআল্লাহু আ’নহু) মতো সর্বোত্তম ঈমান না হোক, সামান্য বিশ্বাসের সদিচ্ছা আর আন্তরিকতাও যদি অন্তরে না থাকে, তবে কখনোই ‘বিশ্বাস’ সম্ভবপর নয়।
“… এরপর আবু বকর (রদিআল্লাহু আ’নহু) সেখান থেকে সোজা রাসুলুল্লাহ ﷺ এর নিকট চলে আসলেন এবং বললেন, “হে আল্লাহর নবী! আপনি কি এদের কাছে বলেছেন যে এই রাতে আপনি বায়তুল মুকাদ্দাস গিয়েছিলেন?”
তিনি ﷺ বললেনঃ হ্যাঁ।
আবু বকর (রদিআল্লাহু আ’নহু) বললেনঃ হে আল্লাহর নবী! সে মসজিদটির বর্ণণা দিন তো; আমি সেখানে গিয়েছিলাম।
তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন যে ঐসময় বায়তুল মুকাদ্দাসকে আমার সামনে তুলে ধরা হল। আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম।
এরপর রাসুলুল্লাহ ﷺ আবু বকর (রদিআল্লাহু আ’নহু) এর কাছে বায়তুল মুকাদ্দাসের বর্ণণা দিতে লাগলেন। আর আবু বকর (রদিআল্লাহু আ’নহু) প্রতিবারই বলতে লাগলেন, “আপনি সত্যই বলেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি আল্লাহর রাসূল।”
Reference: [১] ও [৫] সীরাতুন্নবী ﷺ ইবন হিশাম (র), ২য় খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) পৃষ্ঠা ৭৪

===================
লেখক — তানভীর আহমেদ

নাস্তিক বন্ধু ! ও তার প্রিয়তমা

সমাজতন্ত্রের প্রবর্তক কাল মার্কস, লেলিন ও কমিনিজমের চেতনা যার ঈমানের প্রদীপকে ঢেকে রেখেছিল। বিপ্লবী ‘চে’ যার স্বত্তা জুড়ে । ফিদেল কাস্ত্রকে সে তার পথ প্রর্দশক মনে করতো। সামাজতান্ত্রিক বিপ্লবকেই সে মানবতার একমাত্র সমাধান মনে করতো । তার ইসলাম বিরোধী একটি বক্তব্য শুনে আমি চমকে উঠেছিলাম ।
কি বলে ছেলেটা !!!

প্রথম দেখা হয়েছিল শাহবাগের আজিজ মার্কেটে। ভাল বক্তা ও আবৃত্তিকার। এক আবৃত্তির অনুষ্টানে পরিচয়। লিটলম্যগ নিয়ে কাজ করত। অতঃপর ওর সাথেই বন্ধুত্ব। দুই মেরুর দুজন। আড্ডাতে তর্কের ঝড় উঠতো।
আমি আমার বন্ধু জাবেদ নওশাদ এর কথা বলছি। ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা ভার্সিটি শাখার নেতা সে।

এভাবেই চলে গেল একযুগ। বিশ্বাস অবিশ্বাসের দ্বন্দে দুজনের সম্পর্কের টানান পোড়ন। বেশ কয়েক বছর ধরে জাবেদের সাথে দেখা নেই।
আমি তাবলীগের কাজে লেগে যাওয়ার পর একবার জাবেদের সাথে দেখা করতে তার অফিসে গিয়েছিলাম । সে তখন বড়ো কর্পোরেট ব্যবসায়ী। দাওয়াত দিলাম । অনেক কথা হল । সে এক দীর্ঘশ্বাস আর কান্নার কথা। মনে হলো প্রদীপটা এখন একেবারে নিভেই গেছে । আমার মতো দুর্বল ঈমানওয়ালার দ্বারা দোয়া আর চোখের পানি ফেলা ছাড়া কিছুই করার ছিল না।

গতবছর হঠাৎ একদিন জাবেদের ফোন। দোস্ত আমি জাবেদ। তোদের হবিগঞ্জে আছি। পারলে একবার দেখে যাবি। আমি জানতে চাইলাম কোথায় আছিস, তোদের পাটির কাজে নাকি? বলল, তুই হবিগঞ্জের চৌধুরী বাজার এসে কল দিস। এটা আমার নাম্বার । বললাম , আমার বাসাতে বেড়িয়ে যা।বললো, তুর ভাবি সাথে । ইচ্ছে থাকার পরেও সম্ভব হবে না ।

আজ প্রিয় বন্ধু জাবেদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। বুকের ভেতর ছিল চাপা কষ্ট । কান্নার নদী। চৌধুরী বাজার খোয়াই মুখ গিয়ে কল দিলাম , দোস্ত আমি এসেছি, তুই কই। ওপাশ থেকে বললো , দাড়া আমি আসছি ।

তিন চার মিনিট পরেই, লম্বা সফেদ জুব্বা, বুক পকেটে কলম ও মেসওয়াক, হাতে তাসবিহ , মাথাতে সাদা পাগরী , মুখ ভর্তি চমৎকার কালো দাড়ি। এক যুবক এসে আমাকে সালাম করে জড়িয়ে ধরলো। মোসাফাহ ও মোয়ানাকা করতে করতে ডুকরে কেঁদে উঠলো ।

আমি জাবেদকে চিনতে পেরে চমকে উঠলাম।মনে হলো আমি স্বপ্ন দেখছি!
আমি বাকরোদ্ধ!!
অমার অজান্তেই তার এই বিপ্লবিক পরির্বতন !!!

আশ্চর্য হলাম । কোন সে জিয়ন কাঠির পরশে আমার দোস্ত জাবেদ আজ আলোর দিকে ।
স্বর্গের পথে।
তার হাত ধরে চললাম ।
যেতে যেতে বললো ঐ মসজিদে আছি। মাস্তুরাত সহ জামাত নিয়ে এসেছি। আম্মা ও তুর ভাবি সাথে আছেন। মসজিদের ভেতর পৌছে যা শুনলাম ,এই জামাতের আমীর জাবেদ নওশাদ-ই।
সাথীরা আমীর সাহেবের বন্ধু হিসাব অনেক একরাম করলেন।

বললাম , আমীর সাহেব কী ভাবে এখানে? এই পথে?

জাবেদ বললো , আমি বিয়ে করেছি দুবছর হলো। তোর ভাবির বাসা উত্তরাতে । সে বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছে বছর তিনেক আগে এর পরেই বিয়ে। সে প্রায়ই আমাদের বাসার পাশে এক মহিলা গাইনী ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য যায় । খুব নামকরা চিকিৎসক । ঢাকা মেডিকেলে একসময় বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। তিনি আমার স্ত্রীকে প্রায়ই দাওয়াত দিতেন । আখেরাতের কথা বলতেন। সে তার কথা শুনে প্রভাবিত হতে থাকে। একদিন উনার সাথে মেয়েদের সাপ্তাহিক তালিমে চলে যায়। ঐ তালিমের পয়েন্ট আমি যে বিল্ডিং এ থাকি এর চতুর্থ তলাতে। সেই থেকে তার লাইফ স্টাইলে একটা পরিবর্তন আসতে থাকে। চাকুরির চেষ্টা করছিল। সেই ইচ্ছেটাও বাদ দেয়। আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে সে প্রতি সপ্তাহে তালিমে যাচ্ছিল । এক সময় নামাজ পড়তে থাকে । টিভি দেখা ছেড়ে দেয় । বাহিরে বের হওয়ার আগ্রহ কমে যায় ।

এনিয়ে দুজনের মাঝে দুরত্ব বাড়তে থাকে। আমি এসব একদম সহ্য করতে পারতাম না। তুই জানিস ধর্মকর্ম আমি একদম সহ্য করতে পারতাম না । এসব দেখলে গায়ে জ্বালা দিয়ে উঠতো। কোন হুজুর দেখলেই মাথা গরম হয়ে উঠতো।
ভাবতাম আমাদের অগ্রগতি আর উন্নতির পথে যতো বাধা- এই ধর্মের নামে নষ্টামি।
কিন্তু স্ত্রীর ঈমানের র্স্পশে আমার ভেতরেও এক সময় প্রভাব পড়তে থাকলো। ওর কৌশলের কাছে আমি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম। বিনা তর্কেই সে ইসলামকে আমার সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করছিল । একদিকে তার হেকমতের দাওয়াত অপর দিক ভালবাসা। এক সময় তোর ভাবির দোয়া , কান্নাকাটি ও ফিকির আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায় ।

আমি ওর প্রেম ও ভালবাসার কাছে পরাজিত হতে থাকলাম। কেবল ওর মন রক্ষার্তে প্রথম তিন দিন। সেখান থেকেই আমার চোখের পর্দাটা সরে গেল। রঙ্গিন ধোকার চশমাটা চোখ থেকে খসে পড়লো। তোর ভাবি এরপর মেহনত আরো বাড়িয়ে দিল । এসব ছিল ওর তালিমে শেখে আসা কৌশল। আমি পুরোপুরি দ্বীনের এই পরশে বদলে যেতে থাকলাম । এ বছরই চিল্লাতে বের হলাম। পরের বছর একত্রে তিন চিল্লা। নিজামুদ্দীন মারকাজে দুমাস দিয়ে আসি। মাস্তুরাতে ১৫দিনের জন্য এলাম । আজ দুবছর ধরে এপথেই আছি। জীবনের সব ভুলের মাশুল দিতে চাই এই পথে জান মাল ব্যয় করে। এটাই এখন আমার একমাত্র প্রধান কাজ। ছোট ভাইকে ব্যবসা বূঝিয়ে দিয়েছি । সেও চিল্লা দিয়েছে । মাঝে মধ্যে আমিও বসি।

ঈমানদীপ্ত এই যামানার দুই মহীয়সী নারীর সফল দাওয়াতী মেহনতের কারগুজারী শুনে চোখের পানি ফেললাম । শুকরিয়া স্বরূপ দুরাকাত নামাজ পড়লাম । যোহরের পর সে কথা রাখলো মিম্বরে বসে । যা বললো নিজর কানকে বিশ্বাস হচ্ছিল না । জাবেদের ভেতর থেকে ঈমানের বারুদ যেন ঝড়ে পড়ছিল শ্রুতাদের মাঝে । অনেক শ্রোতা কেঁদে দিলেন ওর ঈমানদীপ্ত বয়ানে।

মাত্র দুবছরের ঈমানী মেহনত!
একজন মানুষকে কী করতে পারে ?
কোথায় পৌছে দিতে পারে ?

রূপকথার গল্পকে হার মানানো এই দিন বদলের গল্প আমাদের কী শিক্ষা দেয়? ভালবাসা না জাবেদদের ঘৃনা ভরে দূরে ঠেলে দিব আমরা নাস্তিক,নাস্তিক বলে। কেউ কেউ ধর্মের নামে বিকৃত চিন্তায় চাপাতি চালাবে জাবেদদের গর্দানে।

আল্লাহর অসংখ্য বান্দারা ঠিকই কাজের কাজটি প্রতি মুহুর্তে আঞ্জাম দিয়ে যাবেন এসমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জাবেদদের আমূল বদলে দিতে। প্রতিটি মসজিদে হর রোজ চলবে দায়ীদের ফিকির, দাওয়াত তালীম ইস্তেকবালের আমল।
মহল্লায় মহল্লায় চলবে গাশত তালীম ও প্রতিদিন আড়াই ঘন্টা থেকে আট ঘন্টার ফিকির। ঘরে ঘরে চলবে মাস্তুরাতের বদলে দেয়া তালীম ও নিরব ফিকির। কোন সে শক্তি আছে বিশ্বব্যপী উম্মাহর এই নিরব বিপ্লবকে স্তব্দ করে দেয়?

একজন নারী বদলে দিল জাবেদ নওশাদকে।
কৃতজ্ঞ নওশাদ ভাবি আপনার কাছে। আমরা হাজার যুবক যা পারিনি আপনি তা করে দেখালেন, কিভাবে সমাজকে বদলে দিতে হবে। আল্লাহ আপনার মেহনতের উত্তম প্রতিদান দিবেন। দুনিয়ার কোটি কোটি জাবেদ নওশাদদের জন্য এই ধরনীতে আপনার মতো দরদী ফিকিরমন্দ লোকের বড়ই প্রযোজন।

জাবেদ নওশাদরাতো আমাদের অবুঝ ভাই । একটু ঈমানী পরশ পেলেই এরা দলে দলে বদলে যাবে।

কবুল করো আমাদের, হে দয়াময়। সকল ওয়াসওয়াসা ও ফেতনা থেকে হেফাজত করো এই মেহনতকে। আমীন।


এটা পড়তে পারেন —এ যুগের ইব্রাহিম আদহাম


=======================

সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ.

জ্বিন কিভাবে আগুনের তৈরি হতে পারে ?

নাস্তিক প্রশ্নঃ পূর্বে ধারণা করা হত যে পৃথিবীর সব কিছু চারটি উপাদান থেকে তৈরি-মাটি,পানি,বায়ু ও আগুন! কিন্তু এখন আমরা জানি আগুন কোন উপাদান/পদার্থ নয় বরং এক ধরণের রিঅ্যাকশনারী কেমিক্যাল প্রসেস! তাহলে জ্বিন(Jinn) কিভাবে আগুনের তৈরি হতে পারে(Quran 55:15) ?

উত্তরঃ পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেঃ

“ এবং তিনি জ্বিনকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াহীন আগুনের শিখা থেকে।”
(কুরআন, আর রহমান ৫৫:১৫)

.
আলোচ্য আয়াতে مَّارِجٍ অর্থ অগ্নিশিখা। نَّارٍ অর্থ এক বিশেষ ধরণের আগুন।কাঠ বা কয়লা জ্বালালে যে আগুন সৃষ্টি হয় এটা সে আগুন নয়।এর অর্থঃ ধোঁয়াবিহীন শিখা। [তাফসির কুরতুবী, তাফসির ফাতহুল কাদির, কুরআনুল কারীম(বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির), ড.আবু বকর জাকারিয়া, ২য় খণ্ড, সুরা আর রহমানের ১৫নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ২৫২৮]

সাহাবী ইবন আব্বাস(রা) বলেনঃ ইহা হল ধুম্রহীন আগুনের শিখা যা মানুষকে মেরে ফেলে। (তাবারী ১৭/৩৩)

আবু দাউদ তায়ালিসী(র) বলেন যে, আবু ইসহাক(র) থেকে শু’বাহ(র) তাদেরকে বর্ণণা করেছেনঃ উমার আল আসাম(র) যখন অসুস্থ তখন আমরা তাঁকে দেখতে যাই।তিনি তখন বলেনঃ আমি তোমাদেরকে একটি হাদিস বলছি যা আমি আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ(রা) থেকে শুনেছি।অতঃপর তিনি বলেন, বর্ণিত এই ধুম্রহীন আগুন হল সেই ধুম্রহীন আগুনের তেজের সত্তর ভাগের এক ভাগ যে ধুম্রহীন আগুন থেকে জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতঃপর তিনি পাঠ করেন, “এর পূর্বে সৃষ্টি করেছি জিনকে, প্রখর শিখাযুক্ত অগ্নি হতে{হিজর ১৫:২৭}” (তাবারী ১৬/২১)

জ্বিনদের প্রকৃতি সম্পর্কে কুরআনে আরো উল্লেখ আছে—

“ সুলাইমান বললেন, হে পরিষদবর্গ, তারা আত্নসমর্পণ করে আমার কাছে আসার পূর্বে কে তার{সাবার রাণী} সিংহাসন আমাকে এনে দেবে?

জনৈক শক্তিশালী-জ্বিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে ওঠার পূর্বে আমি তা এনে দেব এবং নিশ্চয়ই আমি এ কাজে শক্তিমান, বিশ্বস্ত।
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। …”
(কুরআন, নামল ২৭:৩৮-৪০)

অর্থাৎ জিনেরা মানুষের মত কোন প্রাণী নয়।এরা এমন এক প্রকারের প্রাণী মুহূর্তের মধ্যেই যাদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের ক্ষমতা আছে।কিংবা হয়তো এরা মানুষের থেকে ভিন্ন কোন মাত্রা(dimension) এর প্রাণী।আল্লাহ ভালো জানেন। জিনের অস্তিত্ব বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণ করাও সম্ভব হয়নি, নাকচ করাও সম্ভব হয়নি।কুরআনে জিন সম্পর্কে যা বলা আছে, বিজ্ঞান তা সম্পর্কে এখনো অজ্ঞ।

নাস্তিক-মুক্তমনাগণ প্রশ্ন তোলেন যেঃ আগুন যেহেতু কোন উপাদান বা পদার্থ নয় কাজেই এটি জিন বা কোন প্রাণী সৃষ্টির উপাদান হতে পারে না।কাজেই কুরআনে জ্বিন জাতি সম্পর্কিত তথ্য অত্যন্ত ‘অবৈজ্ঞানিক’।

এর জবাবে আমরা মুসলিমরা বলবঃ আপনাদের চিন্তা অত্যন্ত সংকীর্ণ। আপনাদের কেন এমন চিন্তা হল যে মহাবিশ্বের সকল প্রাণই পৃথিবীর প্রাণের মত কোন উপাদান দ্বারা গঠিত হতে হবে? এ থেকে ভিন্ন কোন মেকানিজমে মহাবিশ্বের কোন প্রাণ সৃষ্টি হতে পারে না এ নিশ্চয়তা আপনাদের কে দিল? সত্যিকারের বিজ্ঞানীরা কিংবা বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিরা কখনোই এটা কল্পনা করে না যে মহাবিশ্বের সকল প্রাণীই পৃথিবীর প্রাণীর ন্যায় তৈরি। বরং অনেক ধরণের প্রাণের সম্ভাব্যতায় একজন বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি বিশ্বাস করতে বাধ্য।

বিজ্ঞানী G. Feinberg এবং R.Shapiro তাঁদের ‘LIFE BEYOND EARTH’ বইতে(প্রকাশক William Morrow and Co., Inc., New York) উল্লেখ করেছেন যে, আমাদের পৃথিবীর বাইরে প্রাণের বিস্তার সব থেকে বেশি সম্ভব সূর্য বা অন্য কোন নক্ষত্রে প্লাজমার মাঝে। প্লাজমার মাঝে উদ্ভুত সম্ভাব্য সেই প্রাণীদেরকে তাঁরা ‘Plasmabeasts’ বা প্লাজমা-জন্তু বলে অভিহীত করেছেন। [১]

সমান সংখ্যক ইলেক্ট্রন ও ধণাত্মক আয়নযুক্ত উচ্চ আয়নিক গ্যাসকে প্লাজমা বলা হয়। আন্তঃনাক্ষত্রিক জগতে বিশেষ করে সূর্য ও অন্যান্য নক্ষত্রের বায়ুমণ্ডলে গ্যাসসমূহ উচ্চ আয়নিত অবস্থায় থাকে, তাই সেখানে প্লাজমা অবস্থা বিরাজ করে। এ ছাড়া পরীক্ষাগারে ক্ষরণ নলে কিংবা তাপ নিউক্লিয় রিএক্টরে প্লাজমা অবস্থা সৃষ্টি করা যায়। প্লাজমা অবস্থা তৈরির জন্য ৫০,০০০ K থেকে বেশি তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়।আন্তঃনাক্ষত্রিক প্লাজমাকে সহজেই “ধোঁয়াবিহীন অগ্নিশিখা” বলে অহিহীত করা যায়।

বিজ্ঞানী G. Feinberg এবং R.Shapiro প্লাজমাকে বলেছেন ‘Plasmabeasts’ গঠনের উপাদান।

একেবারে সাম্প্রতিক সময় ২০০৭ সালে V.N. Tsytovich এর নেতৃত্বে General Physics Institute of the Russian Academy of Science এর বিজ্ঞানীদের একটি দলও মত প্রকাশ করেছে যেঃ প্লাজমা অবস্থা থেকে প্রাণের বিকাশ হওয়া খুবই সম্ভব। [২]

বিজ্ঞানী Robert A. Freitas মহাবিশ্বে ‘নন-বায়োলজিক্যাল’ প্রাণের সম্ভাব্যতার ব্যাপারে মত প্রকাশ করেছেন।তাঁর মতে এ ধরণের প্রাণ ব্যবস্থায় বিপাক ক্রিয়া চারটি ধাপ দ্বারা হতে পারে। যথাঃ

ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম, শক্তিশালী নিউক্লিয় বল(strong nuclear force), দুর্বল নিউক্লিয় বল(weak nuclear force), এবং মহাকর্ষ।এই সম্ভাব্য জীবন প্রক্রিয়ার নামকরণ করা হয়েছেঃ Chromodynamic, Weak Nuclear Force And Gravitational Life।পৃথিবীর প্রাণীকূল কার্বনভিত্তিক।বিজ্ঞানী Robert A. Freitas এর মতে Chromodynamic life শক্তিশালী নিউক্লিয় বলভিত্তিক।এ ধরণের প্রাণের বিকাশের পরিবেশ থাকতে পারে কেবল নিউট্রন স্টারে।তিনি আরো বলেন যেঃ মহাকর্ষীয় প্রাণী(Gravitational creatures) এর অস্তিত্ব থাকাও সম্ভব যারা সরাসরি মহাকর্ষীয় বল থেকে শক্তি আহরণ করতে পারে।

Robert A. Freitasসহ অন্যান্য বিজ্ঞানীরা মহাশূণ্যে প্রাণের বিস্তার ও এর সম্ভাব্যতার ব্যাপারে এছাড়াও অনেকগুলো তত্ত্ব দিয়েছেন। [৩]
সেগুলোর সবগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলে একটা বই হয়ে যেতে পারে।

মহাবিশ্বে সম্ভাব্য প্রাণের বিকাশ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের উত্থাপিত অল্প কিছু তত্ত্ব উপরে আলোচনা করা হল। আমরা বলব না বিজ্ঞানীদের এই তত্ত্বগুলোই কুরআনে বর্ণিত জিনদের বর্ণণা; কেননা বিজ্ঞানীদের এই তত্ত্বগুলো এখনো প্রমাণিত নয়। তবে এখানে লক্ষ্যনীয় যে, বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বে সম্ভাব্য প্রাণ সম্পর্কে এমন সব তত্ত্ব দিয়েছেন যার সঙ্গে পৃথিবীর প্রাণীদের কোন মিল নেই। প্লাজমা থেকে প্রাণের উদ্ভবের তত্ত্ব বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন, কিন্তু তা দেখে কেউ কিন্তু এটা বলেনি যেঃ

“প্লাজমা অবস্থার ভয়ানক তাপে কিভাবে প্রাণের বিকাশ হতে পারে??”

শক্তিশালী নিউক্লিয় বলভিত্তিক প্রাণ এমনকি মহাকর্ষীয় প্রাণীর প্রস্তাবনা পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন যারা কিনা সরাসরি মহাকর্ষ বল থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি পেতে পারে। বাংলার নাস্তিক-মুক্তমনাকূলকে কিন্তু কোন বিজ্ঞানীকে কটাক্ষ করে বলতে দেখা গেল না যেঃ

“শক্তিশালী নিউক্লিয় বল কিংবা মহাকর্ষ – এর কোনটাই উপাদান/পদার্থ নয়।তাহলে এ থেকে কিভাবে প্রাণ সৃষ্টি হতে পারে?”

কিন্তু ৭ম শতাব্দীতে নাজিলকৃত গ্রন্থ আল কুরআনে যখন এক বিশেষ ধরণের অগ্নি(ধোঁয়াহীন আগুনের শিখা) থেকে গঠিত প্রাণীর কথা উল্লেখ করা হয়, তখন তাদেরকে কটাক্ষ করে বলতে দেখা যায় যে–“রিঅ্যাকশনারী কেমিক্যাল প্রসেস থেকে কিভাবে প্রাণ সৃষ্টি হতে পারে??”
এটা কি দ্বিমুখিতা নয়? এটা কি চিন্তার সংকীর্ণতা নয়?


এটা পড়তে পারেন – মহাবিশ্বের কী একাধিক স্রষ্টা থাকা সম্ভব – নাকি এর একজন স্রষ্টা আছে ?

======================
তথ্যসূত্রঃ

[১] [‘LIFE BEYOND EARTH’ বইটির আমাজন-অর্ডার লিঙ্কঃ https://www.amazon.com/Life-Beyond-Earth-Intel…/…/0688036422]

[২] ☛ http://www.dailygalaxy.com/…/inorganic-cosmic-dust-points-t…
☛ https://www.sciencedaily.com/releas…/2007/…/070814150630.htm

[৩] http://listverse.com/20…/…/17/10-hypothetical-forms-of-life/

সালাহুদ্দীন আইয়ুবী-সময়ের এক সাহসী বীর !

সালাহুদ্দীন আইয়ুবী-প্রেরণার বাতিঘর

মহান আল্লাহ এই মহাজগতের সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা। আল্লাহ মানুষ সহ বহু প্রকারের প্রাণী, জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে মানুষকে করেছেন সৃষ্টির সেরা জীব। আর তাদের হাতেই ন্যাস্ত করেছেন পৃথিবীর পরিচালনার ভার। আর সঠিক উপায়ে পরিচালনার জন্য পৃথিবীর ঊষালগ্ন থেকেই সেখানে প্রেরণ করেছেন নবী-রাসুল যারা  মানুষের মাঝে আল্লাহর আইন-কানুন ও জীবন চলার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে সে অনুযায়ী চলতে মানুষকে সাহায্য করেছেন। আর নবী-রাসুলদের এই কাজের সাহায্যার্থে আল্লাহ তাদের অনেকের উপর প্রেরণ করেছেন আসমানি কিতাব এবং তাদের দিয়েছেন সর্বযুগের চিরন্তন আদর্শ ইসলাম। রাসূল (সাঃ) ছিলেন সেই নবী – রাসুলদের মধ্যে শেষ রাসুল যার পর আর কোন নবী বা রাসূল আসবেন না। কিন্তু মানুষের মাঝে আল্লাহর আইন-কানুন ও জীবন চলারপদ্ধতি পৌছিয়ে দিতে এবং সেগুলো সূক্ষ্মরূপে – সুশৃঙ্খল উপায়ে পালনের উদ্দেশ্যে সমগ্র পৃথিবীতে একক রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের মধ্য থেকে নির্বাচিত খলীফাদের  দায়িত্ব দিয়েছেন। আর সেই ক্রমধারায় নবী-রাসুলের পর খলিফাগণ দাওয়া ও জিহাদের মাধ্যমে একের পর এক অঞ্চলে ইসলামকে পৌছিয়ে দিয়েছেন। সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি ছিলেন তেমনি একজন সুলতান যিনি ইসলামিক রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি বায়তুল মুকাদ্দাস ( ইহুদী-খৃষ্টানদের কথ্য মতে জেরুজালেম) ক্রসেডারদের দ্বারা দখলের  প্রায় ৯০ বছর পর পুনরায় (হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর খিলাফতের সময়  সেটি ইসলামিক রাষ্ট্রের ছায়াতলে আসে) তাদের হাত থেকে মুক্ত করেন, এবং সেখানকার মুসলিম নাগরিকদের তাদের অত্যাচারের  হাত  থেকে  রক্ষা করেন।

১১৬৯ সালের ২৩ মার্চ। সালাহুদ্দিন আইউবি গভর্নর ও সেনাপ্রধান হয়ে মিসর আগমন করেন। ফাতেমি খিলাফতের কেন্দ্রীয় খলীফা তাকে এ-পদে নিয়োগ দিয়ে বাগদাদ থেকে প্রেরণ করেন।তার (দ্বাদশ শতাব্দীর) আগে থেকেই ইউরোপ, ফ্রান্স ও জার্মানি ইসলামিক রাষ্ট্র ভাঙ্গার  জন্য  ক্রশ ছুঁয়ে শপথ করে, ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিয়ে বিশ্ব জুড়ে ক্রুশের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুরু করে নানা চক্রান্ত। সেই সঙ্গে তারা চালায় সশস্র অভিযান। মুসলিমদের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দখল করে রাখে ইসলামের মহান স্মৃতি চিহ্ন প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস।

সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ছোটবেলায় গভর্নর নিজামুল মূলক এর মাদরাসায় জাগতিক ও আদর্শিক  পড়াশুনা ও যুদ্ধ বিদ্যায় জ্ঞান লাভ করেন। রাজনীতি, কূটনীতি, ভূগোল, ইতিহাস ও প্রত্যক্ষ যুদ্ধ কৌশলের উপর গভীর জ্ঞান ও আগ্রহের কারণে চাচা শেরেকাহ ও নুরুদ্দীন জঙ্গী তাকে স্পেশাল প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। প্রশিক্ষণটি মূলত তৈরি হয় এক যুদ্ধের ময়দানে, যেখানে সালাহুদ্দিন আইউবি দীর্ঘকাল আবরোধের মধ্যে যুদ্ধ করেও হতাশ না হয়ে সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা মাথায় সৈন্যদের নিয়ে যুদ্ধ করে ফিরে আসেন। এর পরই নুরুদ্দীন জঙ্গী  তাকে মিশরের গভর্নরের পদের জন্য মনোনীত করেন।

সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গীও চিন্তা চেতনায় ছিলেন সালাহুদ্দীন আইউবির মতই। সেসময় যেখানে ইসলামিক খিলাফতের সব আমির, গভর্নর ও  উজিররা খৃষ্টানদের চক্রান্তে পা দিয়ে তাদের থেকে সুন্দরি মেয়ে ও প্রচুর ধন-সম্পদ নিত এবং মূলত ক্ষমতার লোভে ইসলামিক রাষ্ট্র থেকে স্বাধীন হয়ার স্বপ্ন দেখত, ঠিক তখনই সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ও নুরুদ্দীন জঙ্গী ইসলামিক খিলাফত রাষ্ট্রকে ইহুদী–খৃষ্টানদের চক্রান্ত থেকে মুক্ত করে বাইতুল মুকাদ্দাস কে সেই ক্রসেডারদের থেকে মুক্ত করার জন্য একের পর এক জিহাদ করে গেছেন।সালাহুদ্দীন আইয়ুবি মিশরের গভর্নর হয়ার পরই সর্ব প্রথম  সেখান থেকে খৃষ্টানদের চক্রান্তে পা দেয়া আমির-উজিরদের সুকৌশলে সরকারী দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে দেন। এজন্য তাকে মারার জন্য ক্রসেডারদের দালালরা অনেক ফন্দি আটার পরও তারা ব্যর্থ হয়। দালালরা অনেক সুন্দরী মেয়ে ব্যবহার করেও পাথরের মত সালাহুদ্দীনকে গলাতে পারেনি। যেখানে অন্যান্য আমিররা সানন্দেই তাদের গ্রহণ করত।

দালালরা সালাহুদ্দীনকে গলাতে না পেরে তাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে নিজেরা ক্ষমতায় বসার জন্য মিশরের সেনাবাহিনির মধ্যে থাকা সুদানি সেনাদের মধ্যে বিদ্রোহ করার চেষ্টা করে এই বলে যে তোমরা সুদানি তারা মিসরি। সুদানের বর্ডার মিশরের কাছে থাকাতে  বিদ্রোহের পর সেখান থেকে আক্রমণ করাও সহজ ছিল। কিন্তু সালাহুদ্দীন আইয়ুবি তার চৌকস গোয়েন্দা প্রধান আলি বিন সুফিয়ান কে দিয়ে সব তথ্য আগেই পেয়ে যান । আর খুবই কৌশলে তাদের বিদ্রোহ দমন করেন। এদিকে সেনা বিদ্রোহ করিয়ে দালালরা সম্রাট ফ্রাঙ্ককে আক্রমণ করার আগমনও জানায়। কিন্তু সালাহুদ্দীন আইউবি আগেই বিদ্রোহ দমন করেন, আর যখন পরে ফ্রাঙ্ক-এর সেনাবাহিনী আসে তারা পুরোপুরিভাবে সালাহুদ্দীনের কাছে পরাজিত হয়। এই দিকে ফ্রাঙ্ক মিসরে আক্রমণ করলে সিরিয়া থেকে নুরুদ্দীন জঙ্গিও ফ্রাঙ্ক-এর দেশে আক্রমণ করে বসেন। তাতে আক্রমনের খবর পেয়েই ফ্রাঙ্ক তার দেশে ফিরে যেয়ে দেখেন সেখানের চিত্রই বদলে গেছে। সব দিক দিয়েই ফ্রাঙ্কের শোচনীয় পরাজয় ঘটে।

ফাতেমি খিলাফতের খলীফা আজেদ ও যখন ক্রসেডারদের চক্রান্তে পা দেন তখন সালাহুদ্দীন আইউবি তাকে সুকৌশলে খিলাফতের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে মিশরকে বাগদাদের কেন্দ্রীয় খিলাফতের অধীনে  দিয়ে দেন , এতে করে খিলাফত রাষ্ট্র আবারো একটি রাষ্ট্রে পরিনত হয়।

মূলত ক্রসেডাররা  ফাতেমি খলীফাকে মদ আর নারীতে ব্যাস্ত রেখে তাকে অধমে পরিণত করে, এমনকি সে সালাহুদ্দীন আইয়ুবিকে হত্যারও  পরিকল্পনা করে। আর খলীফা হওয়া সত্ত্বেও তিনি সালাহুদ্দিন আইউবির উপর কথা বলতে ভয় পেতেন। চরিত্রের অধপতনের কারণেই মূলত এমনটি অনুভব করতেন তিনি। তাই তাকে সরিয়ে খিলাফতের দায়িত্ব একজনকে দেয়া ও একমুখী করা সালাহুদ্দীন আইয়ুবির পক্ষে সহজ হয়। 

সেকালে মসজিদে জুময়ার খুৎবাতে আল্লাহর ও রাসুলের নামের পর খলীফার নাম উচ্চারন করতে হতো। সালাহুদ্দীন আইয়ুবি জুময়ার খুৎবা থেকে খলীফার নাম উচ্চারন করা বাদ দিয়ে দেন।

সুলতান আইয়ুবি যেখানে ক্রসেডারদের আক্রমণ করে করে তাদের ইসলামিক রাষ্ট্রের দখলকৃত অঞ্চল থেকে বিতারিত করবেন, সেখানকার মুসলিমদের তাদের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিবেন, সেখানে ক্রসেডাররা সারাক্ষণই তাদের গোয়েন্দাদের ব্যবহার করে  মিসরে কোন না কোন সমস্যা তৈরি করে রাখত।  যাতে করে সালাহুদ্দীন আইয়ুবি নতুন করে তাদের আক্রমনের সময় না পান, তিনি যেন মিসর ঠিক করতেই তার সকল সময় পার করে দেন। তারা প্রায়ই চেষ্টা করত সুদানি বাহিনী দিয়ে সুদান থেকে মিসরে আক্রমণ করাতে, যাতে সালাহুদ্দীন শুধু তাদের নিয়েই ব্যাস্ত থাকেন। তারা মিসরের বিভিন্ন মাসজিদে তাদের প্রশিক্ষিত গোয়েন্দা ইমাম পাঠাত যারা সেখানে জিহাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে মানুষের ভিতর থেকে জিহাদের চেতনাকে ধ্বংস করতে চাইত।

ক্রসেডাররা মুসলিমদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করত মেয়েদের দিয়ে। তারা প্রায় সব আমিরদের কাছেই তাদের সুন্দরী মেয়েদের প্রেরণ করত, তাদের দিয়ে সেই আমির দের চরিত্র ধ্বংস করার পায়তারা করত। তারা জানত মুসলিমদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে তাদের ঈমানী শক্তি  যেটা দিয়ে তারা ক্রসেডারদের  সাথে লড়ে । আর সে শক্তির কাছেই তারা বার বার হারে, আর সে শক্তির বলেই তাদের চেয়েও অনেক কম পরিমাণ সৈন্য নিয়ে মুসলিমরা বার বার জয় লাভ করে।

ক্রসেডাররা তাদের নিজেদের মেয়েদের কে মুসলিমদের চরিত্র হরণের প্রশিক্ষণ দিত। তারা এ কাজে সে সকল মেয়েদেরও ব্যবহার করত যাদেরকে তারা মুসলিমদের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অপহরণ করে এনেছিল তাদের বাল্যকালে। তারা ক্রুশের স্বার্থে  এরূপ করাকে পুণ্য মনে করত। 

সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবি মিশরের স্থায়িত্ব আনার পরই আবার তার সেই বায়তুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করার সপথ পুরন করার জন্য বের হয়ে যান।  তিনি সর্ব প্রথম খৃষ্টানদের ফিলিস্তিনের শোবক দুর্গ অবরোধ করে সেটা জয় করে ফেলেন। পরে নুরুদ্দীন জঙ্গীর সহায়তায় কার্ক দুর্গও জয় করেন। কার্ক দুর্গ অবরোধ করার সময় সুদানিরা আবারো মিসরে সমস্যা তৈরি করতে চায় ক্রসেডারদের সাহায্যে। পরে সুলতান আইয়ুবি কার্কের অবরোধ নুরুদ্দীন জঙ্গীকে  দিয়ে মিসরে চলে আসেন। পরে নুরুদ্দীন জঙ্গী কার্ক দুর্গ সহ ফিলিস্তিনের আরও কিছু জায়গা দখল সম্পন্ন করেন।

ফিলিস্তিনের শোবক ও কার্ক দুর্গ পরাজয়ের প্রতিশোধ স্বরূপ ক্রসেডাররা পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নেয়। স্পেনের পূর্ণ নৌ বহর  এতে যুক্ত হয়। ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়ামও যুক্ত হয়। গ্রিস ও সিসিলির জঙ্গি কিশতিগুলোও যুক্ত হয়। ব্রিটিশরা ভাবতো তারা চাইলে একাই মুসলিমদের পরাজয় করতে পারে তাই তারা যুক্ত হতে চায় নি। কিন্তু তাদের পোপের অনুরধে তাদের কিছু যুদ্ধ জাহাজগুলোও যুক্ত করে।

…… এদিকে  সুলতান আইয়ুবি গোয়েন্দা মারফত তাদের আগমনের খবর পেয়ে যান, তিনি এও জেনে যান যে তারা আগে এসে মিসরের উপকুলের আলেকজান্দ্রিয়া অঞ্চল দখল করবে। তাই সুলতান আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সকল জনগণকে  সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যান এবং সেখানে ঘরগুলোতে মুসলিম সৈন্য দিয়ে ভরে রাখেন। ক্রুসেডাররা যখন উপকুলে এসে ভিরে তারা সেখানে আক্রমণের জন্য কোন সৈন্য না দেখে খুশি হয়, এবং পরে হেসে খেলে উপকূলের আলেকজান্দ্রিয়া দখল করতে যায়।

রাতে যখন তারা নগরীতে প্রবেশ করে তখনই আইউবির সৈন্যরা ঘর থেকে বেরিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করে নিষ্পেষিত করে দেয়। ওই দিকে তাদের জাহাজগুলোতে যেই সৈন্যদেরকে রেখে এসেছিল তাদের উপর হঠাৎ পেছন থেকে সুলতান আইয়ুবির যুদ্ধ জাহাজ আক্রমণ করা শুরু করে। তারা মিনজানিকের  সাহায্যে বড় বড় আগুনের গোলা ও পাথর মারতে শুরু করে ক্রুসেডারদের জাহাজের উপর। ক্রসেডাররা পালাতে থাকে জাহাজ নিয়ে এবং ধ্বংস হতে থাকে। ক্রসেডারদের আরেকটা অংশ ফিলিস্তিন থেকে আক্রমনের জন্য আসলে সুলতান নুরুদ্দীন  জঙ্গী তাদের উপর আক্রমণ করে তাদের পরাজয় করে দেন। এই যুদ্ধ শেষে নুরুদ্দীন জঙ্গী সুলতান আইয়ুবিকে তার অধিকৃত অঞ্চল দিয়ে সিরিয়ায় নিজ এলাকায় চলে যান।

সালাহুদ্দীন আইয়ুবির যুদ্ধ কৌশলের সবচেয়ে ভয়ানক কৌশল ছিল তার গেরিলা হামলা। তার সৈন্যরা গেরিলা বাহিনী দিয়ে শত্রুদের সেনা বহরের পেছনের অংশে আঘাত হরে নিমিষেই হারিয়ে যেত। তার এই কৌশল আজো সামরিক বিশ্লেষকরা প্রশংসা করে।

১১৭৪ সালের মে মাসে নুরুদ্দীন জঙ্গী মৃত্যু বরন করেন। তার মৃত্যুতে নেমে আসে শোকের ছায়া। সালাহুদ্দীন আইয়ুবি হারান তার প্রান প্রিয় চাচাকে জিনি বরাবরই তাকে সাহায্য দিয়ে আসতেন বিভিন্ন সময়ে। ক্রসেডাররা এতে  খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। কারন তারা এখন সালাহুদ্দীন আইয়ুবির সাথে আগের চেয়ে কম কষ্টে লড়তে পারবে।

জঙ্গীর মৃত্যুর পর তার মাত্র ১১ বছরের  নাবালেক  ছেলেকে ক্রসেডারদের গাদ্দাররা ক্ষমতার লোভে খিলাফতের মসনদে বসায়। যদিও মাত্র ১১ বছরের নাবালেগ ছেলেকে খলীফা হিসেবে মসনদে বসানো সকলের জন্য হারাম, তবুও তারা ক্ষমতার জন্য এটা করে। এতে নুরুদ্দীন জঙ্গীর স্ত্রী রোজি খাতুন অনেক বাধা দিলেও তারা তা অমান্য করে। রোজি খাতুনও ছিলেন মুলত তার স্বামীর মতোই একজন খাটি ইমানদার। যিনি এই অন্যায় মেনে নিতে না পেরে সালাহুদ্দীন আইয়ুবিকে চিঠি লিখেন এই বলে যে, উনি যেন এসে সিরিয়া দখল করেন।

এদিকে সালাহুদ্দীন আইয়ুবি আসবেন জেনে রোজি খাতুন সেখানকার জনগণকে  বুঝাতে থাকেন যে একজন নাবালেগকে  খলীফা হিসেবে মানা হারাম। আর এ কাজ গাদ্দাররা একারনে করেছে যাতে করে তারা তার নাবালক  ছেলেকে  ভুল বুদ্ধি দিয়ে সব করিয়ে নিতে পারে।

একদিন সালাহুদ্দীন  আইয়ুবি মাত্র ৭০০ সৈন্য নিয়েই সিরিয়ার মুল দুর্গ অবরোধ করেন। এতে সিরিয়ার জনগন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় এবং তারা সালাহুদ্দীন আইয়ুবিকে ভিতরে আসতে দেয়ার জন্য নগরীর মুল ফটক খুলে দিতে বলে। তারা বাধ্য হয়ে ফটক খুলে দিলে সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ভিতরে প্রবেশ করে। সকলে তাকে স্বাগত জানায়।

এদিকে  সুলতান আইয়ুবির  আগমনের খবর পেয়ে সকল আমলা- উজিররা  দামেস্ক ছেড়ে পালিয়ে যায়। নুরুদ্দীন জঙ্গীর ছেলেও পালিয়ে যায়। সাথে করে তারা প্রচুর মূল্যবান সম্মত্তি ও প্রচুর দিরহাম নিয়ে যায় আর সাথে করে খৃষ্টানদের দেয়া মেয়েগুলোও নিয়ে যায়।  তারা সিরিয়ার অদূরে হালব, হাররান ও মাশুল দুর্গে যেয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে খৃষ্টানদের প্রভাব থাকায় তারা নিরাপদেই থাকতে শুরু করে।

হালব ও মাসুলে আশ্রয় নেয়া আমিররা ক্রসেডারদের সাথে আতত করে সুলতান আইয়ুবিকে পরাজিত করে পুনরায় সিরিয়া দখল করার ফন্দি আটে।  এতে ক্রসেডাররাও তাদের সাহায্য করতে থাকে। সুলতান আইয়ুবি যেন নিজেদের মুসলিম ভাইদের সাথেই যুদ্ধ করতে করতে শেষ হয়ে যান সেই লক্ষ্যে ক্রসেডাররা হালব, মাসুল ও আশে-পাসের  আমিরদের সালাহুদ্দীন এর বিরুদ্ধে উদবু‍‌দ্ধ করতে থাকে। তাদের সাহায্য করতে থাকে। তারা সেখানকার মুসলিম জনগণদের গোয়েন্দা মারফত বিভ্রান্ত করতে থাকে। তাদের বুঝাতে থাকে সুলতান সালাহুদ্দীন অত্যাচারী, নির্দয় শাসক।

পরে বহু দিন যাবত সুলতান আইয়ুবি বায়তুল মুকাদ্দাসের বাঁধা স্বরূপ সেই কথিত মুসলিম আমিরদের  সাথেই যুদ্ধ করতে থাকেন। ক্রসেডাররা সেই আমিরদের প্রচুর ধন-সম্পত্তি ও সুন্দরী মেয়ে দিয়ে রেখেছিল। আর ক্ষমতার নেশা সে সকল আমিরদের জেকে বসেছিল।

এটাও পড়তে পারেন- নামায মুমিনের মেরাজঃ এটি হাদীস নয়

একদিন মরহুম সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গীর ছেলে প্রচুর মদ্য পানের ফলে ভুগে ভুগে মৃত্যুবরন করে। তাকে দেখার জন্য তার মা রোজি খাতুন আর কখনো যান নি।

অতঃপর অনেক দিন পর অনেক যুদ্ধ ও অনেক কষ্টের পর সুলতান আইয়ুবি হালব, মাসুল ও হাররান দখল করে নেন।  তখন সেখানকার মুসলিমরাই তাদের আমিরদের বিরুদ্ধে সালাহুদ্দীন এর জন্য দরজা খুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে বলে, পরে তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এতে সুলতানের নিজেদের সাথে যুদ্ধ করেই প্রচুর মুসলিম সৈন্য শেষ হয়ে যায়। ক্রসেডারদের গাদ্দার আমিরগুলোও তাদের সৈন্যদের এই বলে যুদ্ধে নিত যে, সালাহুদ্দীন ক্রসেডারদের সাথে আতত করেছে , আর আমরাই প্রকৃত ইসলামের পথে আছি।

হালব, হাররান আর মাসুল দুর্গ জয়  করার পর সালাহুদ্দীন আইয়ুবির সামনে বাইতুল মুকাদ্দাসের পথে আর কোন বাধা রইলনা।

সুলতান আইয়ুবির এইবার বাইতুল মুকাদ্দাস এর দিকে আগমনের পালা। ক্রসেডাররা এইবার আর মুসলিমদের থেকে সাহায্য পাবে না। কারন সব আমিরই এখন সালাহুদ্দীন আইয়ুবির আনুগত্য শিকার করেছে।  সুলতান আইয়ুবি এইবার সর্ব প্রথম কার্ক আক্রমণ করেন। সালাহুদ্দীন আইয়ুবি এর আগেও একবার কার্ক দখল করেন, কিন্তু ১ মাস পর সেটা আবারো ক্রুসেডারদের হাতে চলে যায়। কার্কের শাসনভার ছিল  অরনাত এর উপর। অরনাত একজন নাস্তিক ছিল যে রাসুল (সাঃ) কে নিয়ে বিদ্রুপ করত, তাই সুলতান তাকে ঘৃণা করতেন আর তাকে কাছে  পেলেই হত্যা করবেন   বলে শপথ নিয়েছিলেন। অরনাত মিসর আর সিরিয়ার হজ্ব কাফেলাগুলোর উপর হামলা করে তাদের সম্পত্তি ডাকাতি করত, আর মেয়েদের তুলে নিত।

সুলতান আইয়ুবি কার্ক আক্রমণ করলেন। কিন্তু তিনি সেটা অবরোধ না করে শত্রু যেন তার ইচ্ছা মত এলাকায় এসে যুদ্ধ করতে বাধ্য হয় সেই পরিবেশ তৈরি করলেন। তিনি শত্রুর সকল রসদ বন্ধ করে তাদের পানির উৎস গুলো দখল করলেন আর তাদের পানির তৃষ্ণায় যুদ্ধ ক্ষেত্রে পাগল করে ফেললেন। ক্রসেডাররা বর্ম পরে যুদ্ধে আসতো, আর তিনি যুদ্ধের জন্য সময় ঠিক করলেন জুন-জুলাই মাস, এতে তারা বর্মের ভিতর উত্তাপে জ্বলে-পুড়ে মরতে লাগলো। তাদের পরাজয় হল। সুলতান কার্ক ও আশে পাসের দুর্গ জয় করে নিলেন। সেই যুদ্ধে অরনাত সহ মোট ছয় জন সম্রাট ধরা পরে। সুলতান পরে তার শপথ মত অরনাত কে হত্যা করে বাকিদের ক্ষমা করে দেন।

এই যুদ্ধে ক্রসেডাররা তাদের সবচেয়ে বড় ক্রুশটা (তারা ভাবে এইটাতেই ইসা (আঃ) কে শূলে চড়ানো হয়েছিল) যুদ্ধের ময়দানে এনেছিল। তাদের সবচেয়ে বড় পাদ্রি (পোপ)  এটা আনে। পরে পোপ মৃত্যু বরণ করে আর বড় ক্রুশটি মুসলিমদের হাতে চলে আসে। পরে সুলতান বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করার পর  ক্রুসেডারদেরকে তাদের ক্রুশটি দিয়ে দেন।

এরপর পালা আক্রার দুর্গের । ক্রসেডাররা ভেবেছিল সুলতান আগে বায়তুল মুকাদ্দাস আক্রমণ করবেন। তাই তারা বুঝে উঠার আগেই সুলতান আগে আক্রা আক্রমণ করলেন। ২-৩ দিন অবরোধের পর সেটা জয় করে ফেলেন।

তারপর সুলতান আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ আসকালান অবরোধ করেন। প্রায় ৩৪ টি বছর পর এই অঞ্চলটি আবার স্বাধীন হল। ১১৫৩ সালের ১৯  সেপ্টেম্বর সম্রাট ফ্রাংক এটি দখলকরে নেয়। আসকালান থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার পূর্বে বায়তুল মুকাদ্দাস অবস্থিত।

এইবার পালা বায়তুল মুকাদ্দাসের ……….

ক্রসেডারদের দ্বারা বায়তুল মুকাদ্দাসের দখল হয় ১০৯৯ সালের ১৫ জুলাই মোতাবেক ৪৯২ হিজরীর ২৩ শাবান মাসে ।  ক্রসেডাররা বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করে মুসলিম শাসকদের সহায়তায়। সেসময় মুসলিম শাসকরা নিজেদের রাজ্য চলে যাবে বিধায় সকলেই একে একে ক্রসেডারদের পথ ছেড়ে দেয়, কেউই তাদের বাধা দেয় না। বরং অনেকেই তাদের সাহায্য করে, রসদ দেয়।

শুধু আরাকার আমির ছিলেন একজন  ইমানদার পুরুষ, যার সামরিক শক্তি খৃষ্টানদের তুলনায় কিছুই ছিল না। তবু তিনি খৃষ্টানদের দাবি পুরন করতে অস্বীকৃতি জানান। খৃষ্টান বাহিনি আরাকা ১০৯৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ মে পর্যন্ত অবরোধ করে রাখে। মুসলিমরা এমন প্রান-পন লড়াই করে যে বিপুল ক্ষতির পর ক্রসেডাররা পথ পরিবর্তন করে চলে যায়।

মুসলিম আমিরগনই সে সময় ক্রসেডারদের নিরাপদে বায়তুল মুকাদ্দাস পৌঁছে দিয়েছিল। পরে ১০৯৯ সালের ৭ জুন মাসে তারা বায়তুল মুকাদ্দাস আবরোধ করে এবং ১৫ জুলাই বায়তুল মুকাদ্দাসের ভিতরে প্রবেশ করে। সে সময় বায়তুল মুকাদ্দাসের গভর্নর ছিলেন ইফতেখারুদ্দৌলাহ, তিনি প্রানপন লড়াই করেছিলেন ক্রসেডারদের সাথে। কিন্তু তাদের রসদ ও সৈন্য অগণিত হয়ায় তিনি ব্যার্থ হয়েছিলেন। পরে ক্রসেডাররা নগরীতে ঢুকে সব মুসলিমদের হত্যা করে, তাদের নারীদের অত্যাচার করে, শিশুদের মাথা কেটে সেটা দিয়ে ফুটবল খেলে। মুসলিমরা আশ্রয়ের  জন্য মাসজিদুল আকসা ও অন্যান্য মাসজিদে যায় তারা ভাবে মাসজিদুল আকসা উভয়ের নিকট সম্মানিত হয়ায় তারা তাদের ছেড়ে দিবে। কিন্তু না ক্রসেডাররা সেখানে ঢুকে মুসলিমদের  হত্যা করে,  তাদের রক্ত  মাসজিদ গড়িয়ে গড়িয়ে বাইরে পরছিল, রক্তে খৃষ্টানদের ঘোরার পা ডুবে গিয়েছিল। খৃষ্টান ঐতিহাসিকদের মতে উদ্বাস্তু মুসলিমের সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার।

সুলতান আইয়ুবি বায়তুল মুকাদ্দাসের সেই অবমাননার কাহিনী তার পিতা নাজমুদ্দিন আইউব থেকে শুনতেন, নাজমুদ্দিন তার পিতার কাছ থেকে শুনতেন। পরে সুলতান এই কাহিনী তার নিজের ছেলেদের বলতেন।

১১৮৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রবিবার মোতাবেক  ৫৮৩ সনের ১৫ রজব  সুলতান আইয়ুবি দ্রুত বায়তুল মুকাদ্দাস পৌঁছে যান, অবরোধ করেন বায়তুল মুকাদ্দাস। এদিকে খৃষ্টানরাও তাদের পবিত্র ভুমি ছাড়তে নারাজ। তারাও আমরন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। সেখানকার প্রায় সব মুসলিমই বন্দি। তারা জেলের ভিতর থেকেই আজান আর তাকবীর ধ্বনি দিচ্ছেন। অনুরূপ খৃষ্টানরাও গির্জায় গান গাইছে ও প্রার্থনা করছে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। দুই পক্ষই দুই পক্ষকে আহত নিহত করে চলছে। শহিদদের সংখ্যা গোনে সুলতান আইয়ুবি টাস্কি খেয়ে যান। পরে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে ৫৮৩ হিজরীর ২৭ রজব মোতাবেক ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দ ২ অক্টোবর শুক্র বার সালাহুদ্দীন আইয়ুবি বিজয়ী বেশে বায়তুল মুকাদ্দাস প্রবেশ করেন। এটিই ছিল সেই রাত যেদিন আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সাঃ) বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে মিরাজে গমন করেন। 🙂

বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্ত হওয়ার পর সেখানকার মুসলিমরা প্রায়  ৯০ বছর পর ক্রসেডারদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেল।

ইংল্যান্ডের সম্রাট রিচার্ড যাকে ”ব্লাক প্রিন্স” বলা হত সে এর প্রতিশোধ নিতে  ৫২০ যুদ্ধ জাহাজ ও অনেকগুলো মালবাহী বড় জাহাজ নিজে রোম সাগর আসে। তখনই  ঝড়ের কবলে পরে প্রায় অনেক জাহাজ তলিয়ে যায়। যা বাকি থাকে তা দিয়েই সে বায়তুল মুকাদ্দাস আবার দখল করতে আসে। তখন তার সৈন্য ছিল ২লাখ।

সুলতান চাচ্ছিলেন তারা যেন আগে উপকূলীয় অঞ্চল আক্রা অবরোধ করে, এতে করে তাদের সেখানেই ব্যস্ত রেখে শেষ করে দিতে পারলে বায়তুল মুকাদ্দাস রক্ষা করা যাবে।

রিচার্ড যখন আক্রা আগমন করে  তারও আগেই তার জোট ভুক্ত রাষ্ট্ররা আক্রা অবরোধ করে। রক্ত ক্ষয়ী ও দীর্ঘ যুদ্ধের পর সকলে মিলে প্রায় ৬ লাখেরও বেশি সৈন্য নিয়ে আক্রা দখল করে নেয়। এতে তারা দখলের পর আক্রার প্রায় ৩ হাজার নিরস্র মুসলিমের  হাত পা বেধে তাদের উপর পিচাশের মত ঝাপিয়ে পরে হত্যা করে।

রিচার্ড আক্রা দখলের পর উপকূলীয় বাকি অঞ্চল আসকালান ও হিফা দখল করতে যায়, যেন সেগুলোকে দখল করে ক্যাম্প বানিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করা সম্ভব হয়। কিন্ত তারা যেন সেটা করতে না পারে তার জন্য সুলতান আইয়ুবি আগেই সেখান থেকে জনগনকে  সরিয়ে সেগুলোকে পোড়ে  ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন। পড়ে ক্রসেডাররা সেখানে যেয়ে আর কিছু পায় নি। শেষে একসময় রিচার্ড অসুস্থ হয়ে পরলে সে যুদ্ধ ত্যাগকরে নিজ দেশে চলে যায়, আর বলে যায় সে আবার আসবে বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করতে। কিন্তু পরে আর কেউ পারেনি বায়তুল মুকাদ্দাস দখল করতে। ……

কিন্তু না, ইসলামিক খিলাফতের শেষের দিকে যখন মুসলিম আমিররা ক্রসেডারদের সাথে বন্ধুত্বের কথা বলে মূলত তাদের দাসত্বকে গ্রহণ করল। তখনই ক্রুসেডাররা আবারো তুচ্ছ ও সংকীর্ণমনা  জাতীয়তাবাদের নীতিতে ইসলামিক রাষ্ট্রকে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে দিল। আবারো ক্রসেডাররা ফিলিস্তিনে ইহুদীদের প্রবেশের মাধ্যমে মূলত নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করল। সেখানে মুসলিমদের হত্যা করল, তাদের নিজ ভুমি থেকে ছাড়া করল, গঠন করল সেখানে ইসরাইল রাষ্ট্র, আর সেটা কতিপয় নাম ধারি মুসলিম শাসকদের কারনেই সম্ভব হয়েছিল।

সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবি তার জীবনে দুটো ইচ্ছা করেছিলেন এক বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করা আর  দুই হজ্ব করা। যদিও তিনি প্রথম ইচ্ছা  পুরন করতে পেরেছিলেন কিন্তু তার দ্বিতীয় ইচ্ছা অর্থের  অভাবে পুরন হয়নি। মিসরি কাহিনীকার মুহাম্মদ ফরিদ আবু হাদীদ লিখেছেন, মৃত্যুর সময় সালাহুদ্দীন  আইউবির মাত্র ৪৭ দিরহাম রূপা আর এক টুকরো সোনা ছিল। তার নিজস্ব কোন বাসগৃহ ছিল না। তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কোন অর্থ নিয়ে হজ্ব করতে চান নি।

১১৯৩ সালের ৪ মার্চে অবশেষে ইসলামের মহান নেতা সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবি ইন্তিকাল করেন। সেদিন সমগ্র ফিলিস্তিনের নারী-পুরুষ তাদের ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে তাদের সুলতানের জন্য মাতম করছিল। নগরীর অলিতে-গলিতে  কান্নার রোল বয়ে যাচ্ছিল। আজও সেই কান্নার রোল শোনা যায় সেই ফিলিস্তিনের অলিতে গলিতে আজও তারা তাদের সেই সালাহুদ্দীন আইউবিকেই খুজছে ক্রসেডারদের অত্যাচার থেকে তাদের মুক্তির জন্য।

অবশেষে ১৯২৪ সালের ৩ মার্চ ক্রসেডাররা ইসলামের সর্বশেষ খিলাফত থাকা অঞ্চল তুরস্ক থেকেও রাষ্ট্রীয় ভাবে থাকা খিলাফতকে ধ্বংস করল।

লর্ড কার্জন বলল, আমরা মুসলিমদের মেরুদণ্ড খিলাফতকে ধ্বংস করে দিয়েছি, তারা আর দাড়াতে পারবে না । তারা সেই সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর কবরে  লাথি মেরে বলল, উঠো সালাহুদ্দীন, তোমার বায়তুল মুকাদ্দাসকে রক্ষা কর। ……. আর আমরা কি করলাম?  পেরেছি কি সেই খিলাফতকে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করতে?  পেরেছি কি সেই বায়তুল মুকাদ্দাস কে রক্ষা করতে?
[রেফারেন্সঃ ইমানদীপ্ত দাস্তান …… এনায়াতউল্লাহ আলতামাশ, প্রখ্যাত উর্দু উপন্যাসিক এর লিখা। বইটি ৮ খণ্ডে এবং ৮#২৪০= ১৯২০ পৃষ্ঠা সম্বলিত।] বিস্তারিত জানতে দেখুন
লেখকঃ রাশেদুল ইসলাম

জীবনের সারকথা

মদীনার বিশিষ্ট আলিম ও কাজী সালামা ইবনে দীনার। মানুষ তাকে চিনে ইবনে হাযেম নামে। তিনি বলেন- ঝলমলে এক সকালে আমি উমর উবনে আব্দুল আজীজের দরবারে হাযির হলাম। তিনি আমার বয়োজ্যেষ্ঠ এবং ব্যালের খেলার সাথী। পরবর্তীতে তিনি খলীফাতুল মুসলিমীন নিযুক্ত হন।

অনেক দিন পর তাঁর সাথে আমার দেখা হল। প্রথম পলকেই তাঁর শরীরের এক আশ্চর্য এক পরিবর্তন লক্ষ্য ক্রলাম। তার সেই হৃষ্টপুষ্ট নিটোল স্বাস্থ্য শ্রীহীন হাড্ডিসার কঙ্কালে পরিণত হয়েছে। তিনি আমাকে কাছে ডেকে নিলেন। আমি তাঁর কাছে গেলাম,তিনি আমাকে নিয়ে তাঁর শীর্ণ গৃহে প্রবেশ করলেন।

আমি বললাম- এ কী হয়েছে আপনার ! কোথায় আপনার নিটোল স্বাস্থ্য,কোমল ত্বক আর ক্লান্তিময় চেহারা ! কোথায় আপনার সেই সম্পদের বৈভব,বিলাসবসনের বাহুল্য আর চাকচিক্যের ঝলকানি !আপনি আজ খলীফাতুল মুসলিমীন- অর্ধজগতের অধিপতি ! অথচ এমন নিরাড়ম্বর গৃহ !

-তুমি কেমন পরিবর্তনের কথা বলছ হে ইবনে হাযেম- বলেই তিনি ফুঁফিয়ে কেঁদে ফেললেন। কেমন জানি আনমনা হয়ে গেলেন। আমার দিকে তাকিয়ে আছেন পলকহীন। অথচ দেখে মনে হয়,সামনে তাঁর দিগন্তসম মরুপ্রান্তর আর অনন্তে তাঁর দৃষ্টি অন্তরীণ। খানিক পরে বললেন, মনে কর,আমি মারা গেছি। তিন দিন কেটে গেছে। তুমি এসেছ আমায় দেখতে। কবর খুঁড়ছ পরম আগ্রহে। হঠাৎ তুমি প্রকম্পিত হলে। শঙ্কায় শিউরে উঠলে। কেননা আমার চক্ষু কোটরাগত। আমার পেট ফেটে গেছে। পোকা মাকড় পরমনান্দে রক্ত চুষছে। দেহের স্থানে স্থানে গভীর দংশন,সাপের দংশন, আঁধারের দংশন ……


এটা পড়তে পারেন আহা, এ কবর যদি আমার হত !


 

এখন বাস্তবতায় ফিরে আসো। গভীর মনোযোগে একটু ভাব ! আমি বাস্তবতায় কী মনোরম আর কল্পনায় কী বীভৎস। অথচ সেই পরিস্থিতি সামনে অত্যাসন্ন। হে ইবনে হাজেম ! তুমি কী একটি হাদিস স্মরণ করিয়ে দিতে পার ? আমি বললাম মদীনায় আমি তো আপনাকে অনেক হাদিস শুনিয়েছি। আপনি কোনটা ইচ্ছা করেছেন ? তিনি বললেন আবু হুরায়রা যে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। বললাম,হ্যাঁ হ্যাঁ স্মরণে এসেছে। তিনি বললেন – তবে আমাকে তা শুনাও। আমি তোমার থেকে সে হাদিসটি শুন্তে চাই।

আমি বললাম নবীজি সাঃ ইরশাদ করেছেন,

তোমাদের সবার সামনে একটি করে উপত্যকা আছে।তা পাড়ি দেওয়া ভীষণ কষ্টকর। প্রতি পদে পদে তাঁর মৃত্যুর হাতছানি, প্রত্যেক হালকা ছিপছিপে দেহধারী তা সহজে পাড়ি দিবে।

 

হাদিসটি শুনে আবার তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। এবার খুব বেশি কাঁদলেন। আমি খুব ভয় পেলাম। না জানি এই কান্নাই তাঁর শেষ কান্না হয়। কান্না থামিয়ে কিছুক্ষণ পরে বললেন, আমি সেই উপত্যকা পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।অথচ আমার ভাবনার আকাশে নিরাশার কালো মেঘের আনাঘোনা।

—লেখক যুবায়ের আহমেদ

প্রকৃত মৃত্যুর স্মরণ ও একটি ঘটনা

“প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং তোমরা নিজ নিজ কাজের প্রতিফল সম্পূর্ণভাবেই কিয়ামাতের দিন পাবে….” [সূরা আলে ইমরান-১৮৫]

তখনো আমি অনেক ছোট। শীতের এক রাতে ওয়াজে গিয়েছিলাম বাসা থেকে একটু দূরে। তিতাস পাড়ের মসজিদ প্রাঙ্গনের মাহফিলে। তখন ওয়াজ বলতে মাহফিল উপলক্ষে বসা দোকান-পাট থেকে কেনা-কাটা,চটপটি,ঝালমুড়ি খাওয়া, এসবই মনে করতাম। আমি এবং আমার দুই মামাতো ভাই মাহফিলের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছিলাম। ওয়াজ করছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন প্রসিদ্ধ বক্তা। তিনি রাসুল (সাঃ) এর এই হাদিসটি বর্ণনা করছিলেন। যার অর্থ হল-

যে ব্যাক্তি দৈনিক বিশবার মৃত্যুর কথা স্মরণ করবে তাকে মহান আল্লাহ তায়ালা শহীদি মৃত্যু দান করবেন।

কথাটি শোনা মাত্রই কেমন যেন থ খেয়ে গেলাম। ভাল লাগাই ভরে গেল মন। তাড়াতাড়ি বাসায় চলে গেলাম।ভাবতে লাগলাম দৈনিক মাত্র বিশবার মৃত্যুর কথা স্মরণ করলেই শহীদি মৃত্যু লাভ করতে পারবো ! বাহ,খুব চমৎকার !

শহীদের মর্যাদা সম্পর্কে আম্মাজির কাছে শুনেছিলাম। শহীদদেরকে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে বিনা হিসেবে জান্নাত দান করবেন। মনে মনে এমন মৃত্যু লাভের আকাঙ্খা হল এবং পরের দিনই বিশটি দানা দিয়ে একটি মালা তৈরি করলাম। আর দুই মিনিট পরপর আমাকে মরতে হবে একথা স্মরণ করে ২০ বার পূর্ণ করতাম মাত্র এক ঘণ্টাই। কিন্তু যখন একটু বুঝতে শুরু করলাম তখন মনে হল আসলে এভাবে কি মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে বলা হয়েছে ? প্রকৃত মৃত্যুর স্মরণ কিভাবে করতে হয়।

    আব্বাজীর ব্যাখ্যায় কিছুদিন আগে এই প্রশ্নের জট খুলল। প্রতিদিন ফজরের পর মসজিদে তা’লীমে করেন তিনি। তা’লীমের ব্যাপারে তার স্বাভাবিক নিয়ম হল-কিতাব খোলার পর যে হাদিস খানা বের হয় সেই আলোকে বয়ান করা। ঘটনাক্রমে সেদিন মৃত্যুর স্মরণের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বর্ণনা করলেন ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে ঘটে যাওয়া তার জীবনের এক আশ্চর্য ঘটনা। চারদিকে চলছে তুমুল যুদ্ধ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একের পর এক হত্যা করছে নিরীহ বাঙ্গালীকে। একদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামে মসজিদের আশপাশ এলাকায় পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণ শুরু হল। একের পর এক তারা কামানের গোলা ছুড়ছে বসতবাড়ি গুলোর উপর। প্রান বাঁচাতে সকলে আশ্রয় নিল মসজিদে, মুসলমানদের জন্য আল্লাহর ঘরই তো সবচাইতে নিরাপদ। আব্বাজী তখন সকলের উদ্দেশ্যে তা’লীম করছিলেন। তা’লীম শেষে অনিচ্ছাকৃতভাবেই মসজিদের মিম্বারের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। সাথে ছিলেন পরিচিত এক হাজী সাহেব। আনুমানিক ১৫-২০ মিনিট ঘুমানোর পর ধমকের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গল । চোখ খোলে দেখলেন তাদের দিকে বন্দুক উচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তানী কয়েকজন সৈন্য। আব্বাজী হাজী সাহেবকে বললেন- চলুন । ওরা বাইরে যেতে বলছে । মসজিদের সাথেই ছিল একটি পুকুর। রাতে বৃষ্টি হওয়াতে ঘাটটি ছিল একদম পরিষ্কার । আব্বাজী তাদের কাছে অজু করার অনুমতি চাইলেন । সাথে হাজী সাহেবকেও অনুমতি দিল। অজু শেষে তিনি এবং হাজী সাহেব ঘাটলাতেই নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন । এদিকে বিলম্ব দেখে পাকিস্তানী বাহিনীর সৈন্যরা অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করছিল । নামায শেষে এক সারিতে দাড় করিয়ে শুট করার আদেশ দিলেন বাহিনি-প্রধান। আব্বাজী ছিলেন সারির প্রথম ব্যাক্তি, তাঁর পিছনে ছিলেন হাজী সাহেব । আব্বাজী তাকে বললেন- চোখ বন্ধ করে কালিমা পড়ুন । তখন তাদের যেভাবে মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়েছিল সেটাই তো ছিল প্রকৃত মৃত্যুর স্মরণ। আর এভাবেই কেউ যদি দৈনিক বিশবার মৃত্যুর কথা স্মরণ করে নিঃসন্দেহে সে শহীদি মৃত্যু লাভ করবে। তো যাক, সেদিন তাদেরকে আর প্রান হারাতে হোল না। বাঙ্গালী মুক্তি বাহিনীর আক্রমণে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

পরকথা,আমি কখনো কি মৃত্যুকে সেভাবে স্মরণ করতে পেরেছি । এমন গভীরভাবে মৃত্যুর স্মরণই মানুষকে অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং সৎকাজের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। আর এভাবে মৃত্যুর কথা স্মরণ করলে নিঃসন্দেহে আমরা পাব শহীদি মর্যাদা। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।

উল্লেখ্য এখানে আব্বাজী হল- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুফতি নুরুল্লাহ রঃ।

লেখক- মুহাম্মাদ আজমতুল্লাহ নুর

একজন মিয়াজীর দরকার

ইসলামের ওপর লেখালেখি, ওয়াজ-নসীহত তো আর কম হচ্ছে না। তাই আজ আর লেখা নয়, একটি করুণ ঘটনা শুনাচ্ছি। ভারতের উর্দূ ‘মাসিক আরমগাঁ’ পত্রিকার ১৯৯৮ সালের দাওয়াতী এক বিশেষ সংখ্যায় মায়েল খায়রাবাদী নামের একজন লেখক ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন।

আজ থেকে প্রায় ৩০/৩৫ বছর পূর্বে ভারতের উত্তর প্রদেশের বস্তী নামের একটি জেলার একটি গ্রাম থেকে হিন্দু ঠাকুররা বারটি মুসলিম পরিবারকে মারধর করে উচ্ছেদ করে দিয়েছিল। তাদের ঘর-বাড়ি ও মসজিদ ভেঙ্গে-চুড়ে মিসমার করে ফেলেছিল। ঘটনাটি খুব মর্মান্তিক হওয়ায় তখনকার পত্র-পত্রিকায় প্রধান শিরোনাম হয়ে খবর প্রকাশিত হয়। মুসলমানদের এত বড় মর্মান্তিক একটি দুর্ঘটনার কথা পত্রিকায় পড়ে অনেক মুসলমান বিষয়টি জানতে ও বুঝতে গিয়েছিলেন। এ বিষয়ে যখন ঠাকুরদের প্রশ্ন করা হল, ঠাকুররা তখন এক দীর্ঘ কাহিনীর অবতারণা করল। তারা বলল, আমাদের সম্মানিত পূর্বপুরুষরা মোগল আমল থেকেই এখানকার রাজা ছিলেন। কৃষকদের কাছ থেকে খাজনা উসুল করতে তাঁদের খুব কষ্ট হত। কৃষকরা বড় অবাধ্য ছিল। কিছু ডাকাত আবার তাদের পিছনে ছিল। রাজার পক্ষ থেকে খাজনা উসুলের জন্য লোকজন যেত, ডাকাতদের সহায়তায় কৃষকরা তখন মারামারি, খুনাখুনিতে লিপ্ত হয়ে যেত। অনেক খুন-খারাবীর পর কখনো কখনো অর্ধেক অথবা তিন ভাগের একভাগ খাজনা উসুল করা সম্ভব হত।

আমাদের রাজা সাহেব প্রতি বছর দিল্লীতে শাহী দরবারে যেতেন। সেখানে মুসলিম রাজা ও নওয়াবদের সাথে তাঁর দেখা-সাক্ষাত হত। সাক্ষাতকালে খাজনা উসুলের ব্যাপারে মত বিনিময় হত। একবার আমাদের রাজা সাহেব শাহী দরবার থেকে আসার সময় সাথে করে একজন মিয়াজীকে নিয়ে আসলেন। মিয়াজীর পরিবারটি খুব ছোট। স্ত্রী, একটি যুবতী মেয়ে ও দুটি শিশু ছেলে। ঠাকুররা বলল, ঐ যে পুরাতন নিম গাছটি দেখা যাচ্ছে, তার ছায়ায় বসে মিয়াজী নিজের সন্তানদের তালীম দিতেন। আমাদের পূর্বপুরুষরা তাদের সন্তানদেরকেও পাঠালেন এবং বললেন, তাদের ফার্সী পড়িয়ে দিন। ফার্সী তখন আজকের ইংরেজির মতো রাজভাষা ছিল বলে হিন্দুরাও তা যথেষ্ট শিখত। মিয়াজীকে একটি ঘর এবং দশ বিঘা ক্ষেত, সাথে ক্ষেত করার মতো একজন লোকও দেওয়া হয়েছিল। মিয়াজী শিশুদেরকে তালীম দেওয়ার সাথে সাথে তরবিয়ত বা দীক্ষাও দিতেন। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে মাতাপিতাকে সালাম বা প্রণাম করবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। প্রতিদিন গোসল করবে। চুরি এবং মিথ্যা থেকে দূরে থাকবে। বড়দের সম্মান করবে। একে অপরে মিলেমিশে থাকবে ইত্যাদি। মিয়াজীর এই তালীম-তরবিয়তের প্রভাব শিশুদের ওপর পড়তে লাগল। গ্রামের মানুষের দৃষ্টিতে শিশুদের একটা অবস্থান সৃষ্টি হতে লাগল। হিন্দুদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে মিয়াজী জানতে পারলেন যে, স্বর্গ-নরকের বিশ্বাস এখানেও আছে। তখন শিশুদের তিনি নরকের ভয় দেখাতেন এবং স্বর্গলাভের লোভ দেখাতেন। এমন এমন গল্প শোনাতেন যাতে সততার দীক্ষা থাকত। শিশুরাও এ সমস্ত গল্প তাদের বাসা-বাড়িতে গিয়ে শোনাত এবং ভগবানের চর্চা আমাদের ঘরগুলিতেও হতে লাগল। মিয়াজী জুমআর দিন গ্রামে গাশত করতেন। ঘরে ঘরে গিয়ে শিশুদের মা-বাবার সাথে দেখা করতেন এবং খাসভাবে এই উপদেশ দিতেন যে, তোমরা আপন শিশুদেরকে যেভাবে বানাতে চাও, নিজেরাও তদ্রূপ হয়ে যাও। সবশেষে বললেন, ‘শিশুরা কি বড়দের অনুকরণ করে না?’

ঠাকুররা আগত মুসলমানদের উদ্দেশ্যে আরো বললো, এখন শুনুন আরেকটি ঘটনা। আশপাশে প্রসিদ্ধ জংগুয়া নামের এক ডাকাত তার ছেলেকে নিয়ে মিয়াজীর কাছে আসল এবং বলল, মিয়াজী! আমার বাচ্চাকে কি ফার্সী পড়িয়ে দিবেন? মিয়াজী বললেন, কেন নয়, অবশ্যই পড়াব। মিয়াজীর উত্তর শুনে ডাকাত জাংগুয়া বলল, তবে আমি তো খারাপ লোক, তাই রাজা সাহেব তা পছন্দ করবেন না। মিয়াজী তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, তুমি বাচ্চাকে পাঠিয়ে দাও। আমি রাজা সাহেব থেকে অনুমতি নিয়ে নেব। জাংগুয়ার ছেলে যখন মিয়াজীর কাছে পড়ার জন্য আসল, ঠিকই তখন রাজপুতেরা মিয়াজীর কাছে শেকায়েত করল। কিন্তু মিয়াজী বললেন, বিচক্ষণতার দাবি হচ্ছে, জাংগুয়ার ইচ্ছা পূরণ করা। আপনারা দেখবেন, আগামী বছর জাংগুয়া সকলের আগে খাজনা দিবে। হয়েছেও তাই। বৎসর পূর্ণ হওয়ার পর সত্যিই জাংগুয়াই সকলের আগে খাজনা নিয়ে আসল এবং বলল, বাপ আমার! এখন থেকে খাজনার ব্যাপারে আপনি আর কষ্ট  করবেন না। লোক পাঠানোর  প্রয়োজন নেই। আমি সব খাজনা উসূল করিয়ে দিব। আমাদের রাজা সাহেবের সবচেয়ে বেশি চিন্তা তাকে নিয়েই ছিল। তিনি বিষয়টিকে মিয়াজীর কারামত মনে করলেন। তারপর তো এই গ্রামে মিয়াজীর কারণে একটি পাঠশালাই হয়ে গেল।

ঠাকুররা আবার বলল, এরপর আরেকটি ঘটনা শুনুন। যার দ্বারা আমাদের এখানে একটি বিপ্লব হয়ে গেছে। একদিন মিয়াজী আমাদের পূর্ব পুরুষদের বললেন, আগামীকাল আমার মেয়ের বিয়ে। বিয়েতে আপনারাও অংশ নিবেন। আমাদের পূর্বপুরুষরা দুঃখ করে বললেন, আমাদেরকে আগে কেন বলেননি? আপনার মেয়ে তো আমাদেরই মেয়ে। আমরা ধুমধাম করে তাকে রুখসত করতাম। শহর থেকে নাচ-গানের জন্য গায়িকা ডেকে আনতাম, পাচক আসত, আতশবাজি আসত। মিয়াজী বললেন, ইসলামী তরীকায় বিয়ে-শাদী অত্যন্ত সাদাসিধে হয়। বরের সাথে মাত্র পাঁচজন লোক আসবেন। তাদের খাবার ঘরেই রান্না করা হবে। আর নাচ-গান ও আতশবাজি ফযুল খরচের কাজ। এটা ইসলামে নিষিদ্ধ।

তাই তার প্রয়োজন নেই। সত্যিই খুব সাদাসিধেভাবেই বিয়েটা হল। বিয়ের পর বরের বাবা কনের মহর বাবদ ছাপ্পান্ন টাকা দশ আনা কনেকে নগদ বুঝিয়ে দিয়ে তাকে রুখসত করিয়ে নিয়ে গেল। আমাদের পূর্বপুরুষরা ঐ টাকার ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলেন যে, এটা কী? তাঁদেরকে বলা হল, মহরের টাকা এভাবে দিয়ে দেয়াটা অত্যন্ত জরুরি। হিন্দুদের বিয়ের বিপরীত এই বিয়ের খুব ধুম পড়ে গেল এবং কয়েকটি গরীব রাজপুতদের খান্দান মুসলমান হয়ে গেল।

হিন্দু পন্ডিতরা তখন আমাদের পূর্ব পুরুষদের সাবধান করলেন যে, এই মিয়াজীকে এখানে বসবাস করতে দেয়া ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষরা পন্ডিতদের কথা কানে নিলেন না।

এখন সংক্ষেপে শুনুন যে, উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে যে সমস্ত বড় বড় প্রসিদ্ধ আলেম-ওলামা দেখতে পাচ্ছেন, তাঁদের পূর্বপুরুষদেরকে যারা মুসলমান বানিয়েছিলেন, তারা এই মিয়াজীর সুপুত্ররাই ছিলেন। কিন্তু আফসোস, শত আফসোস! মিয়াজীর আওলাদ এখন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাদের বারোটা পরিবার বা খান্দান হয়ে গেছে। এরা সবাই দুই বছরের মধ্যে এমন খারাপ হয়ে গেছে যে, দুই বছর পূর্বে এখানকার খারাপ চামাররাও এমন ছিল না। সংক্ষেপে এতটুকু বুঝে নিন যে, এরা নামকা মুসলমান, কাজে কাফের। তাদের এ অবস্থা দেখে আমরা তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছি। আপনারা তাদেরকে মুসলমান মনে করলে করতে পারেন, কিন্তু আমরা তাদেরকে মুসলমান মনে করাটা ইসলামের অসম্মান মনে করি। আপনারা যান এবং ঐ ধরনের একজন মিয়াজী পাঠিয়ে দিন। আমরা তাকে ঐ বারো পরিবারের সমস্ত জায়গীর বুঝিয়ে দিব।

এরপর লেখক মায়েল খায়রাবাদী সাহেব অত্যন্ত অনুতাপের সাথে বলেছেন যে, বড়ই আফসোসের কথা, এই ঘটনার পর আজ প্রায় পঁচিশ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে, (এখন প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর) আমরা এখনো সেখানে একজন মিয়াজী পাঠাতে সক্ষম হইনি। এটা এত বড় এক ট্রাজেডি, যা নিয়ে আমাদের আলেম সমাজের চিন্তা-ফিকির করা অতীব জরুরি। আজ কুরআনে কারীমের তাফসীরের কোনো অভাব নেই, ইসলামী সাহিত্যের দ্বারা লাইব্রেরি ও পাঠাগারগুলো ভরে গেছে। আজ সমাজ বদলের শ্লোগান যে সে দিয়ে বেড়াচ্ছে। সামাজিক আচার-আচরণ ঠিক করার ব্যাপারে কত কত বই-পুস্তক এবং পত্রিকা বের হচ্ছে কিন্তু মাফ করবেন-

وَ اَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ۝۱۳۹

এর কোথাও কি এরচেয়ে বেশি উত্তম তাফসীর নজরে পড়বে,  যা এক মিয়াজী উত্তর প্রদেশের বস্তী নামক জেলার একটি অজপাড়াগাঁয়ে নিজের ব্যক্তিগত আমলের নমুনা দ্বারা পেশ করেছিলেন? আজ একজন মিয়াজীর খুব প্রয়োজন।

=====================

লেখক ইসহাক ওবায়দী

কুরআনে কি আসলেই স্ববিরোধিতা আছে ? (এক)

নাস্তিক প্রশ্নঃ আল্লাহর একদিন মানুষের কয়দিনের সমান? – ১০০০ বছর (কুরআন ২২:৪৭) নাকি ৫০০০০ বছর (কুরআন ৭০:৪) !

উত্তরঃ সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলো নিচে উল্লেখ করা হল।

“তারা তোমাকে[মুহাম্মাদ(ﷺ)] আযাব ত্বরান্বিত করতে বলে। অথচ আল্লাহ কখনও তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। তোমার প্রভুর কাছে একদিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান। ”
(কুরআন, হাজ্জ ২২:৪৭)

” তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন, অতঃপর তা তাঁর কাছে পৌছবে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান। “
(কুরআন, সাজদা ৩২:৫)

“ফেরেশতাগণ এবং রূহ তাঁর(আল্লাহর) দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর।”
(কুরআন, মাআরিজ ৭০:৪)

আরবি ভাষায় يَوْمِ [উচ্চারণঃ ইয়াওম; বহুবচনঃ أَيَّامٍ (আইয়াম)] শব্দটি ব্যাপকার্থে ব্যবহৃত হয়।আরবিতে শব্দটি দিন, পর্যায়কাল, সময়কাল ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। [১]

সুরা হাজ্জ ২২:৪৭ ও সাজদা ৩২:৫ তে হাজার বছরের দিন এবং সুরা মাআরিজ ৭০:৪ এ ৫০ হাজার বছরের দিনের কথা উল্লেখ আছে। উল্লেখ্য যে, হাজ্জ ২২:৪৭ ও সাজদা ৩২:৫তে أَلْفَ سَنَةٍ বা ‘হাজার বছর’ এর দিনের কথা উল্লেখ আছে; যা দ্বারা যেমন নির্দিষ্টভাবে ১০০০ বছর বোঝাতে পারে, আবার ‘হাজার বছর’ তথা বিশাল দৈর্ঘ্যের একটি সময়কালকেও বোঝাতে পারে।

এ ছাড়া সুরা ক্বফ ৫০:৩৮ এ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী তৈরির প্রক্রিয়া ছয় ‘আইয়াম’ এ সংঘটিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনে শব্দটির ব্যবহারের এই বৈচিত্র্য দ্বারাই বোঝা যাচ্ছে যে– يَوْمِ (ইয়াওম) শব্দটির অর্থ ব্যাপক; এ দ্বারা যে কোন সময়কালের দিনই বোঝাতে পারে। আরবি ভাষায় এ দ্বারা ২৪ঘণ্টা, ১ হাজার বছর, ৫০,০০০ বছর এমনকি হাজার বছর বা বিশাল দৈর্ঘ্যের একটি সময়কালকেও বোঝাতে পারে। মোট কথা, শব্দটি দ্বারা যে কোন time period বা পর্যায়কাল/সময়কাল বোঝাতে পারে।

সুরা হাজ্জ ২২:৪৭ এ বলা হয়েছেঃ “তোমার প্রভুর কাছে একদিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান।” আখিরাতের ১দিন সার্বক্ষণিকভাবে দুনিয়ার ১০০০ বছরের সমান হবার পক্ষে বিভিন্ন হাদিসের সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেন, নিঃস্ব মুসলিমগণ ধনীদের থেকে অর্ধেক দিন ৫০০ বছর পূর্বে জান্নাতে যাবে। (তিরমিযি ২৩৫৩, ২৩৫৪) সুতরাং আয়াতের অর্থ হবেঃ বান্দাদের ১০০০ বছর সমান হচ্ছে আল্লাহর ১ দিন। [২]

সুরা মা’আরিজের ৪নং আয়াতের ব্যাখ্যায় অধিকাংশ মুফাসসির বলেছেনঃ এখানে কিয়ামত দিবসের পরিমাণই উদ্যেশ্য নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ উল্লেখিত আযাব সেই সংঘটিত হবে, যে দিনের পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর। আর এই মতটির পক্ষে হাদিস রয়েছে। বিভিন্ন হাদিসে কিয়ামত দিবসের পরিমাণ ৫০,০০০ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, যাকাত না প্রদানকারীর শাস্তির মেয়াদ বর্ণনার হাদিসে বলা হয়েছেঃ “তার এ শাস্তি চলতে থাকবে এমন এক দিনে যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর, তারপর তার ভাগ্য নির্ধারণ হবে হয় জান্নাতের দিকে না হয় জাহান্নামের দিকে।” (মুসলিম ৯৮৭, আবু দাউদ ১৬৫৮, নাসাঈ ২৪৪২, মুসনাদ আহমাদ ২/৩৮৩)
[কুরতুবী]
তা ছাড়া অন্য হাদিসে “যে দিন সমস্ত মানুষ দাঁড়াবে সৃষ্টিকূলের রবের সামনে” [সুরা মুত্তাফফিফীন ৬] এ আয়াতের তাফসিরে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেন, “তা হবে এমন এক দিনে যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর, তারা তাদের কান পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে।” (মুসনাদ আহমাদ ২/১১২)

সুতরাং এখানে কিয়ামত দিবসের পরিমাণই বর্ণণা করা হয়েছে। তবে তা লোকভেদে ভিন্ন ভিন্ন বোধ হবে। কাফিরদের নিকট পঞ্চাশ হাজার বছর বলে মনে হবে। কিন্তু ঈমানদারদের জন্য তা এ দীর্ঘ হবে না। হাদিসে এসেছে, সাহাবায়ে কিরাম রাসুলুল্লাহ(ﷺ)কে এই দিনের দৈর্ঘ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ “আমার প্রাণ যে সত্তার হাতে, তাঁর শপথ করে বলছি এই দিনটি মু’মিনের জন্য একটি ফরয সলাত আদায়ের সময়ের চেয়েও কম হবে।” (মুসনাদ আহমাদ ৩/৭৫)
অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে, “এই দিনটি মু’মিনদের জন্য যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ের মত হবে।” (মুসতাদরাকে হাকিম ১/১৫৮, নং ২৮৩)

কিয়ামত দিবসের দৈর্ঘ্য ১০০০ বছর না ৫০,০০০ বছর? আলোচ্য আয়াতে (মা’আরিজ ৭০:৪) কিয়ামত দিবসের পরিমাণ ৫০,০০০ বছর এবং অন্য আয়াতে হাজার বছর বা ১০০০ বছর বলা হয়েছে {হাজ্জ ২২:৪৭ ও সাজদা ৩২:৫ দ্রষ্টব্য}। বাহ্যত আয়াতগুলোর মধ্যে বৈপরিত্য আছে বলে মনে হয়। উপরে যে হাদিসগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, তা দ্বারা এটি পরিষ্কার হয়ে গেছে যে সেই দিনের দৈর্ঘ্য আমল অনুসারে বিভিন্ন মানুষের জন্য বিভিন্ন রকমের হবে। কাফিরদের জন্য এটি ৫০,০০০ বছর এবং মুমিনদের জন্য এর সময়ের পরিমাণ অনেক কম হবে। তাদের মাঝখানবে কাফিরদের বিভিন্ন দল থাকবে।

অস্থিরতা ও সুখ-স্বাচ্ছন্দে সময় দীর্ঘ ও খাটো হওয়া প্রসিদ্ধ ও সুবিদিত। অস্থিরতা ও কষ্টের এক ঘণ্টা মাঝে মাঝে মানুষের কাছে এক দিন বরং এক সপ্তাহের চেয়েও বেশি মনে হয় এবং সুখ ও আরামের দীর্ঘতর সময়ও সংক্ষিপ্ত মনে হয়। [ফাতহুল কাদির দ্রষ্টব্য]

তা ছাড়া যে আয়াতে ১০০০ বছরের কথা আছে, সেই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কোন কোন মুফাসসির বলেন, সেই আয়াতে পার্থিব ১ দিন বোঝানো হয়েছে। এই দিনে জিব্রাঈল(আ) ও ফেরেশতাগণ আকাশ থেকে পৃথিবীতে এবং পৃথিবী থেকে আকাশে যাতায়াত করে এত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেন যা মানুষ অতিক্রম করলে এক হাজার বছর লাগতো।ফেরেশতাগণ এই দূরত্ব খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে অতিক্রম করেন। সে হিসাবে বলা যায় সুরা মা’আরিজে বর্ণিত ৫০,০০০ বছর সময় কিয়ামতের দিনের সাথে সংশ্লিষ্ট, যা পার্থিব দিন অপেক্ষা অনেক বড়। এর দৈর্ঘ্য ও সংক্ষিপ্ততা বিভিন্ন লোকের জন্য তাদের অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্নরূপ অনুভূত হবে। আর সুরা আস সাজদাহতে বর্ণিত ১০০০ বছর সময় আসমান ও যমিনের মধ্যকার চলাচলের সময় বর্ণিত হয়েছে। সুতরং আয়াতগুলোতে কোন বৈপরিত্য নেই। [৩]

প্রখ্যাত দাঈ ড. জাকির নায়েক এ আয়াতগুলোতে স্ববিরোধিতা আছে কিনা এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে—এখানে আয়াতগুলোতে বলা হচ্ছে যে, মহান আল্লাহর নিকট সময়ের গণনা পৃথিবীর সময়ের গণনার সাথে তুলনাযোগ্য নয়। মানুষের নিকট যা হাজার হাজার বছর, আল্লাহ তা’আলার নিকট এগুলো অতি ক্ষুদ্র পরিমাণের সময়।
ধরা যাক, কারো দুবাই থেকে আবু ধাবিতে যেতে ১ ঘণ্টা লাগলো। এবং দুবাই থেকে নিউ ইয়র্কে যেতে ৫০ ঘণ্টা লাগলো। এই তথ্যে কি কোন স্ববিরোধিতা বা বৈপরিত্য আছে? মোটেও না। কেননা এখানে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন সময়ের কথা বলা হচ্ছে। একইভাবে কুরআনের আলোচ্য আয়াতগুলোতেও ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন সময়ের কথা বলা হয়েছে।
কাজেই এ আয়াতগুলোতে কোন প্রকারের স্ববিরোধিতা নেই। [৪]

এবং আল্লাহ ভালো জানেন।

===
তথ্যসূত্রঃ

[১] “Translation and Meaning of yawm ( day, period ) in English Arabic Terms Dictionary”
http://www.almaany.com/…/di…/ar-en/yawm+%28+day,+period+%29/
[২] ইবন কাসির;
কুরআনুল কারীম(বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির), ২য় খণ্ড, ড.আবু বকর জাকারিয়া, সুরা হাজ্জের ৪৭নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ১৭৮২
[৩] দেখুনঃ ফাতহুল কাদির, সুরা আস সাজদাহ, আয়াত নং ৫; তাবারী, সুরা আস সাজদাহ আয়াত নং ৫;
কুরআনুল কারীম(বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির), ২য় খণ্ড, ড.আবু বকর জাকারিয়া, সুরা মা’আরিজের ৪নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ২৬৮৩-২৬৮৪

[৪]  Re: Allahs Days Equal to 1000 Years or 50,000 Years ? [Dr. Zakir Naik]
https://m.youtube.com/watch?v=EcJhBpHwGUY
 One day = 1000 year or 50000 years Contradictions in the Quran [Dr. Zakir Naik]

https://m.youtube.com/watch?v=YoK4VBCFwg0

ভূমিকম্প কেন হয় ? এটা কী কাফেরদের ভয় বা নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য ?

নাস্তিক প্রশ্ন: ভুমিকম্প আর প্রবল ঘূর্ণিঝড় হবার মূল কারণ কি কাফের বা অবশ্বাসীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন বা তাদের নিধন করা? (Quran 16:45, 29:37,17:68) ? তবে মুসলিম দেশগুলোতে এত ভুমিকম্প সংঘটিত হয় কেন?

উত্তরঃ পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেঃ

“ যারা কুচক্র করে, তারা কি এ বিষয়ে ভয় করে না যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দেবেন কিংবা তাদের কাছে এমন জায়গা থেকে আযাব আসবে যা তাদের ধারণাতীত।”
(কুরআন, নাহল ১৬:৪৫)

“ আমি মাদইয়ানবাসীদের প্রতি তাদের ভাই শুআইবকে প্রেরণ করেছি। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায় তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, শেষ দিবসের আশা রাখো এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করো না। কিন্তু তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী বলল; অতঃপর তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল এবং নিজেদের গৃহে উপুর হয়ে পড়ে রইল।“
(কুরআন, আনকাবুত ২৯:৩৬-৩৭)

“তোমরা কি এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত রয়েছ যে, তিনি তোমাদেরকে স্থলভাগে কোথাও ভূগর্ভস্থ করবেন না। অথবা তোমাদের উপর প্রস্তর বর্ষণকারী ঘুর্ণিঝড় প্রেরণ করবেন না, তখন তোমরা নিজেদের জন্যে কোন কর্মবিধায়ক পাবে না।”
(কুরআন, বনী ইস্রাঈল(ইসরা) ১৭:৬৮)

এখানে সুরা নাহলের ৪৫নং আয়াতে অবিশ্বাসীদেরকে আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করা হচ্ছে। সুরা আনকাবুতের ৩৭নং আয়াতে একটি প্রাচীন জাতির কথা বলা হচ্ছে যারা তাদের নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হয়েছিল। সুরা বনী ইস্রাঈলের ৬৮ নং আয়াতেও অবিশ্বাসীদেরকে আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করা হচ্ছে।

আমরা যদি প্রসঙ্গসহ আলোচ্য আয়াতগুলো পড়ি, তাহলে দেখব যে এখানে কোন জায়গায় ভুমিকম্প, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির মূল কারণের ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি। বরং এই আয়াতগুলোতে অন্য প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে, ভুমিকম্প, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির কারণ তো দূরের প্রসঙ্গ, এখানে ২টি আয়াতে অবিশ্বাসীদেরকে আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। আর অপর আয়াতে একটি প্রাচীন জাতির ধ্বংসের ইতিহাস বর্ণণা করা হয়েছে। ভুমিকম্প, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির মূল কারণ কাফেরদের নিধন করা— এমন কথা এসব জায়গায় বলা হয়নি। বলা হয়েছে যে এগুলোর দ্বারা আল্লাহ মানুষকে শাস্তি দিতে পারেন।

কুরআনের মূল প্রসঙ্গ থেকে দূরে সরে গিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন আরেকটি প্রসঙ্গ নিয়ে এসে মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ এটি।

অভিযোগকারীরা প্রশ্ন তুলেছেনঃ “তবে মুসলিম দেশগুলোতে এত ভুমিকম্প সংঘটিত হয় কেন?”

১৯০০ সাল থেকে এই পর্যন্ত যতগুলো শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে তার মধ্যে মুসলিম দেশ ছিল মাত্র একটি, ইন্দোনেশিয়া! দেখুন- http://earthquake.usgs.gov/earthquak…/…/10_largest_world.php

যেখানেই টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষ হয়, সেখানেই ভুমিকম্প হয়। সেখানে মুসলমান থাকুক আর না থাকুক, কিছুই যায় আসে না। আজকে যদি সব মুসলমান সেখান থেকে সরে যায় এবং হিন্দুরা গিয়ে সেখানে থাকা শুরু করে, তখন ভুমিকম্পটাও সেখান থেকে সরে যাবে না। আল্লাহ তাঁর বানানো মহাবিশ্বের নিয়ম, পদার্থ বিজ্ঞানের আইন মুসলিমদের জন্য আলাদা করে তৈরি করেন নি।

একটা বিষয় আপনাকে মাথায় রাখতে হবে- আল্লাহ্ যদি মুসলিম দেশগুলোকে সবরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখতেন তাহলে কারও কোন সন্দেহ থাকতো না আল্লাহর সম্পর্কে। তখন আর পরীক্ষা বলে কিছু থাকতো না।

এ ছাড়া পবিত্র কুরআন বা হাদিসে মোটেও এ কথা বলা হয়নি যে মুসলিমদের দুনিয়ার জীবনে কোন পরীক্ষা করা হবে না বা বিপদ দেয়া হবে না। বরং উল্টোটিই কুরআন ও হাদিসে বলা আছে।

“ মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, “আমরা বিশ্বাস করি”; এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে।”
(কুরআন, আনকাবুত ২৯:২-৩)

” এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্য্যশীলদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে – “নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই কাছে ফিরে যাবো।” তারাই হচ্ছে সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই সুপথপ্রাপ্ত। ”
(কুরআন, বাকারাহ ২:১৫৫-১৫৭)

দুনিয়ার জীবনের কষ্ট ও দুর্ভোগ মুমিনদের জন্য চূড়ান্তভাবে কল্যাণ নিয়ে আসে।

“নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।অবশ্যই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।”
(কুরআন, ইনশিরাহ ৩৪:৫-৬)

আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ (র)……….আবু সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্নিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল যাতনা, রোগ ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আপতিত হয়, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এ সবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।

[ সহীহুল বুখারী, হাদিস : ৫৬৪২, অধ্যায়: রোগী। অনুচ্ছেদ: রোগের কাফ্ফারা ও ক্ষতিপূরণ]