8.3 C
New York
Friday, October 24, 2025

Buy now

spot_img
Home Blog Page 6

শয়তান কিভাবে গোমরাহ করে,এক বুযুর্গ শয়তানকে গোমরাহ করার ঘটনা

বনী ইসরাঈলের এক বুযুর্গ শয়তানকে গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট করার জন্যে বারবার চেষ্টা করেছেন; কিন্তু পারেননি। একদিন তিনি বিশেষ কোন প্রয়োজনে কোথাও যাচ্ছিলেন। শয়তানও তখন তার সঙ্গী হয়ে পড়ল। পথে রিপুকাম ও ক্ষোভের অনেক হাতিয়ারই ব্যবহার করল সে। মাঝে মধ্যে তাকে ভয় দেখাবারও চেষ্টা করল। কিন্তু ব্যর্থ হলো বারবারই।

বুযুর্গ একবার পাহাড়ের পাদদেশে বসেছিলেন। শয়তান তখন পাহাড়ের উপরে উঠে একটি পাথর ছেড়ে দিল। বুযর্গ যখন লক্ষ করলেন বিশাল একটি পাথর তার দিকে গড়িয়ে পড়ছে। তখন তিনি আল্লাহর যিকিরে মশগুল হয়ে পড়লেন। পাথর তাকে পাশ কেটে অন্য দিকে গড়িয়ে পড়ল। শয়তান বাঘ ও সিংহের আকৃতি ধরে তাকে ভয় দেখাতে চাইল। তাতেও কাজ হলোনা। একবার বুযুর্গ নামায পড়ছিলেন। শয়তান তখন সাপের আকৃতি ধরে বুযুর্গের মাথা থেকে পা পর্যন্ত জড়িয়ে ধরল। অতঃপর তার ফনাটি সিজদার স্থানে বিছিয়ে দিল। বুযুর্গ এতেও ভীত হলেন না।

এবার শয়তান পূর্ণ নিরাশ হয়ে সম্পূর্ণ নিজের আকৃতিতে সেই বুযুর্গের সামনে এলো এবং বলল : আপনাকে গোমরাহ করার সকল কৌশলই আমি অবলম্বন করেছি। কিন্তু তার কোনটিই কাজে আসেনি। তাই আমি এখন আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাচ্ছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে আপনাকে আর ভ্রষ্ট করার চেষ্টা করবনা। সুতরাং আপনিও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিন। বুযুর্গ বললেন : এটাতো তোর সর্বশেষ কৌশল। দুর্ভাগা, তোর ভীতি প্রদর্শনেও আমি ভীত হইনি। তোর বন্ধুত্বেরও আমার কোন প্রয়োজন নেই।

শয়তান তখন বলল : আমি কি আপনাকে একথা বলে দিব, মানুষকে আমি কিভাবে গোমরাহ করি?
বুযুর্গ বললেন : বল। শয়তান বলল : তিনটি বিষয়ের দ্বারা –
১. কার্পণ্য, ২. ক্রোধ ও ৩. নেশা।

শয়তান বলল : মানুষের মধ্যে যখন কার্পণ্য সৃষ্টি হয়, তখন সঞ্চয়ের নেশায় পড়ে যায়। খরচ করেনা। অন্যের হক নষ্ট করে। আর মানুষ যখন রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তখন সে আমাদের হাতের খেলনায় পরিণত হয়। যেমন ছোট বাচ্চাদের হাতে খেলার বল থাকে ঠিক তেমন। আমরা তার ইবাদত বন্দেগীর মোটেও পরোয়া করিনা।

সে যদি স্বীয় দু’আর দ্বারা মৃতকে জীবিতও করে তবুও আমরা নিরাশ হইনা। আমরা একটি কথায় তার সকল বন্দেগী মাটিতে মিশিয়ে দেই। আর মানুষ যখন নেশা করে মাতাল হয়ে পড়ে, তখন আমরা ছাগলের মত তার কান ধরে যে কোন পাপের দিকে নিয়ে যাই এবং খুব সহজেই নিয়ে যাই।

ফকীহ আবুল লাইস রা. বলেন : এ ঘটনায় জানা গেল মানুষ যখন ক্ষুদ্ধ ও রাগান্বিত হয়, তখন সে শয়তানের হাতের খেলার ’বল’ হয়ে যায়। ছোট শিশুরা যেমন ’বল’ এদিক-ওদিক ছুড়ে মারে, শয়তানও তাকে অনুরুপ ইচ্ছামত এদিক সেদিক নিতে থাকে। তাই রাগের সময় আমাদের ধৈর্য্য ধারণ করা চাই, যাতে শয়তানের হাতের ক্রিড়নক হতে না হয়।
শিক্ষা : প্রিয় পাঠক উল্লেখিত ঘটনা থেকে আমরা একটি শিক্ষা নিতে পারি যে, আল্লাহওয়ালাদের সংস্পর্শে এসমস্ত শয়তানের ধোঁকা থেকে বাচতে পারব।

পাঠিয়েছেন : হাফেজ মো. হামিম খান রাশেদ, শিক্ষার্থী-মাদরাসাতুল ফালাহ্ আল-আরাবিয়াহ্, উত্তরা-ঢাকা


twitter takipçi hilesi


instagram takipçi hilesi


instagram beğeni hilesi


instagram takipçi satın al ucuz


instagram ucuz takipçi


tiktok ucuz takipçi


escort eskişehir


escort bursa

তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না – তোমরাই জয়ী হবে .

আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।’ (সূরা আল ইমরান ৩:১৩৯)

মক্কায় একসময় এমন এক পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো ইসলাম গ্রহণ করলেই তার ওপর বিপদ-আপদ ও জুলুম-নিপীড়নের পাহাড় ভেঙে পড়তো। কোন গোলাম বা গরীব মানুষ ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে ভীষণভাবে মারপিট এবং কঠোর নির্যাতন-নিপীড়নের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত করা হতো।

সে যদি কোন দোকানদার বা কারিগর হতো তাহলে তার রুজি-রোজগারের পথ বন্ধ করে দেয়া হতো। সে যদি কোন প্রভাবশালী পরিবারের কোন ব্যক্তি হতো তাহলে তার নিজের পরিবারের লোকেরা তাকে নানাভাবে বিরক্ত করতো ও কষ্ট দিতো এবং এভাবে তার জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলতো।

এ অবস্থায় মক্কায় এক মারাত্মক ভীতি ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছিল। এ পরিস্থিতি যদিও দৃঢ় ঈমানের অধিকারী সাহাবীগণের অবিচল নিষ্ঠার মধ্যে কোন প্রকার দোদুল্যমানতা সৃষ্টি করেনি তবুও মানবিক প্রকৃতির তাগিদে অধিকাংশ সময় তাদের মধ্যেও একটা মারাত্মক ধরনের চিত্তচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়ে যেতো। এ ধরনের অবস্থার একটা চিত্র পেশ করে হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত বর্ণিত একটি হাদীসে।

তিনি বলেন, ‘যে সময় মুশরিকদের কঠোর নির্যাতনে আমরা ভীষণ দুরবস্থার সম্মুখীন হয়ে পড়েছিলাম, সেসময় একদিন আমি দেখলাম নবী (সা:) কাবা ঘরের দেয়ালের ছায়ায় বসে রয়েছেন। আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাদের জন্য দোয়া করেন না?

একথা শুনে তার চেহারা আবেগে-উত্তেজনায় রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো এবং তিনি বললেন, ‘তোমাদের পূর্বে যেসব মুমিনদল অতিক্রান্ত হয়েছে তারা এর চাইতেও বেশি নিগৃহীত হয়েছে। তাদের কাউকে মাটিতে গর্ত করে তার মধ্যে বসিয়ে দেয়া হতো এবং তারপর তার মাথার ওপর করাত চালিয়ে দুই টুকরা করে দেয়া হতো।

কারো অঙ্গ-প্রতঙ্গের সন্ধিস্থলে লোহার চিরুনী দিয়ে আঁচড়ানো হতো, যাতে তারা ঈমান প্রত্যাহার করে। আল্লাহর কসম, এ কাজ সম্পন্ন হবেই, এমনকি এক ব্যক্তি সান’আ থেকে হাদরামাউত পর্যন্ত নিশঙ্ক চিত্তে সফর করবে এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারো ভয় তার মনে থাকবে না।’

সূত্র: বুখারী, আবু দাউদ ও নাসাঈ


twitter takipçi hilesi


instagram takipçi hilesi


instagram beğeni hilesi


instagram ucuz takipçi satın al


ucuz takipçi instagram


tiktok ucuz takipçi


escort eskişehir


escort bursa

নবীজির শিক্ষা : নবীজির যৌবন যুবকদের প্রেসক্রিপশন -মো. জসীমুদ্দীন

মানুষের জীবন স্রোতবাহী নদীর মত। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অনবরত বইতে থাকে। তার বয়ে যাওয়া শেষ হয় যখন তার জীবনে সন্ধ্যা নেমে আসে। জীবন প্রবাহ জীবনের বিভিন্ন ভাগে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রবাহিত হয়। মানুষের শৈশব থাকে, থাকে যৌবন ও বার্ধক্য।

এই সময়গুলোর আবেগ ও অনুভূতি এক নয়, ভিন্ন ভিন্ন। শৈশব ও কৈশরে হৃদয়ে যে স্বচ্ছ সুন্দর ও নির্মল অনুভূতি জাগে যৌবন ও বার্ধক্যে জাগে ভিন্ন অনুভূতি। শৈশব ও কৈশোর পেরিয়ে যখন তার জীবনে যৌবন ও তারণ্যের ছোয়া লাগে তখন জাগে অসুস্থ ও অনির্মল অনুভূতি। ভাবাবেগের প্রবাল্যে দিশেহারা হয়ে যায়। তার অশান্ত মন এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। অজানা এক তৃষ্ণায় সে কাতর হয়ে পড়ে। ভূলে যায় তার জন্মের উদ্দেশ্য এবং মৃত্যুর পর অনন্ত অসীম জীবনবানের শান্তি সুখের সাফল্য।

যৌবন ও তারণ্যের আদর্শ প্রতীক এবং শ্বাশ্বত বিধানের বাণী বাহক মুহাম্মদ সা. এর তারোণ্য ও যৌবন কেমন ছিলো। কেমন ছিলো তার যৌবনের দিনগুলো। শৈশব ও কৈশরের স্বচ্ছ সুন্দর ও কোমল অনুভূতির মধ্যে যখন তিনি একটা বিশেষ সময়ে এসে উপনীত হলেন, তারুণ্য ও যৌবনের কোন কলুষতা কোন পঙ্খিলতা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি ছিলেন সর্বদা সচ্ছ এবং পরিশিলীত জীবন বোধের অধিকারী।

তার তারুণ্য উচ্ছল এবং যৌবনের উদ্দামতার সময়গুলো যে ভাবে তিনি প্রবাহিত করেছিলেন এবং চির সুন্দর ও শ্বাশ্বত আদর্শ স্থাপন করেছিলেন তা সর্বযুগের এবং সকল যুগের জন্য অনুসরণীয়। সমাজের জুলুম শোষণ দরিদ্র অসহায়ত্ব এবং রাষ্ট্রের চরম বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য দেখে সদা সর্বদা তিনি ব্যাকুল ও অস্থির থাকতেন।

তার এই ব্যাকুলতা ও অস্থিরতা তাকে প্রেরণা ও সাহস যুগিয়েছিলো হিলফুল ফুযুল নামের সামাজিক কল্যাণকর একটি সংগঠন গড়ে তোলার। সেই সংগঠনের সংবিধান ও মূলনীতি ছিল দারিদ্র অসহায় ও দূর্গতদের সেবা করা। সমাজের শোষিত ও বঞ্চিতদের সাহায্য করা। অত্যাচারী শাসকও প্রবঞ্চনাকারীকে বাধা প্রদান ও দমন করা।

রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং যাবতীয় অন্যায় দূরিভূত করা। মানুষের মধ্যে মৈত্রি স্থাপন করা। তরুণের চির সুন্দর ও শাশ্বত আদর্শ ও শিক্ষার প্রতিই নির্দেশ  করেছে রাসূলের উজ্জলদীপ্ত যৌবনের এই কর্মকাণ্ড।

যুবকের চরিত্র সুন্দর ও শুভ হবে এবং সমাজের কল্যাণ চিন্তায় ব্রতী হবে। মৃত্যু সুন্দর ও কল্যাণকে ধারণ করবে এবং অসত্য অসুন্দর ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে। যুবক হবে ফুলের মত সুন্দর। সমাজ পরিবার ও রাষ্ট্র যেন তার সৌন্দর্যতায় শুভস্মাত হয়। তাহলে তার জীবন সফল ও সার্থক হবে এবং মরেও অমর হবে।

জ্ঞানগর্ব কথা
* তুমি দুনিয়ার সব পেয়েছো কিন্তু আল্লাহ কে পাওনি তবে তুমি কিছুই পাওনি। – আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.
* যুবকরা কাজ করে জোশে, আর বৃদ্ধরা কাজ করে হুঁসে। -হাকীমুত তুল্লাব মুফতী হাবিবুল্লাহ দা. বা.
* দুনিয়ার মোহে পড়ে নিজেদের ইলম ও দ্বীনকে বিক্রি করে দিও না।  -আল্লাম কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ.


twitter takipçi hilesi


instagram takipçi hilesi


instagram beğeni hilesi


instagram ucuz takipçi satın al


takipçi satın al


tiktok takipçi satın al ucuz


eskişehir gerçek escort


bursa gerçek escort

হাদিসের আলোকে কেয়ামতের আলামত সমূহ -মুফতি তারেকুজ্জামান

(লেখাটি তৈরি করতে আমার তিনদিন লেগেছে। আপনি চাইলে এর জন্য দশ মিনিট ব্যয় করতে পারেন। পোস্টটি প্রামাণ্য, কিন্ত অনেক বড়। যাদের জানার আগ্রহ ও সময় আছে, শুধু তারাই ধৈর্য্য সহকারে পড়তে পারেন।)

আজ আমরা কেয়ামতের আলামত নিয়ে আলোচনা করব। কেয়ামতের আলোচনাকে দুভাগে ভাগ করা যায়। এক: ছোট আলামত ও বড় আলামত হিসেবে।
দুই: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত হিসেবে।

আমরা দুই আঙ্গিকেই আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
কেয়ামতের পূর্বে কেয়ামতের নিকটবর্তিতার প্রমাণস্বরূপ যে আলামতগুলো প্রকাশ পাবে সেগুলো ছোট আলামত ও বড় আলামত এই দুই ভাগে বিভক্ত। ছোট আলামতগুলো কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার অনেক আগেই প্রকাশিত হবে। ছোট আলামতগুলো শেষ হলে এরপর শুরু হবে বড় আলামতগুলোর প্রকাশ। এখন পর্যন্ত বড় কোনো আলামত প্রকাশ হয়নি; বরং ছোট আলামত শেষ হওয়ার পর সত্ত্বরই তা প্রকাশ পাবে।

সুতরাং আমরা যদি কেয়ামতের আলোচনাকে অতীত, বর্তমান ও ভবিষত হিসেবে করি তাহলে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে শুধু ছোট আলামতগুলোর আলোচনা থাকবে। আর ভবিষ্যতের মধ্যে কিছু ছোট ও বাকিগুলো বড় আলামতের আলোচনায় করা হবে। কেননা, ছোট আলামতের মধ্যে কোনো কোনো আলামত ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়ে অতীত হয়ে গেছে। কোনো কোনো আলামত অতীত হয়ে পুনঃপ্রকাশ হচ্ছে। কিছু আলামত প্রকাশিত হয়েছে এবং অব্যাহতভাবে প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে। আর কিছু আলামত এখনও প্রকাশ পায়নি। কিন্তু নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সংবাদ অনুযায়ী সেগুলো অচিরেই প্রকাশ পাবে।

কেয়ামতের যেসব আলামত অতীত হয়ে গেছে

১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে:
قَالَ أَبُو حَازِمٍ: سَمِعْتُهُ مِنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ، صَاحِبِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةَ كَهَذِهِ مِنْ هَذِهِ، أَوْ: كَهَاتَيْنِ ” وَقَرَنَ بَيْنَ السَّبَّابَةِ وَالوُسْطَى.
অর্থাৎ সাহল রা. সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি ইরশাদ করেন, আমি এবং কেয়ামত এ দুটির মতো একসাথে প্রেরিত হয়েছি। এ বলে তিনি শাহাদত আঙুল ও মধ্যমা আঙুলকে একসাথে মিলিয়ে দেখালেন। (সহিহ বুখারি: ৭/৫৩, হা. নং ৫৩০১, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, মিসর)

২. চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়া। (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় থাকাকালীন কাফেরদেরকে মোজেজা দেখাতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছিল। এর কারণে কাফেররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জাদুকর বলে অভিহিত করেছিল।)
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
اقتربت الساعة وانشق القمر
অর্থাৎ কেয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। (সূরা কামার:১)

৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যু। (১১ হিজরি মোতাবেক ৬৩১ খ্রিষ্টাব্দে নবি কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যু হয়।)

৪. মুসলমানদের বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়। (১৭ হিজরি মোতাবেক ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে উমর রা. এর খেলাফত আমলে এটা বিজিত হয়।)
৫. ব্যাপক মহামারি, যাতে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটবে। (উমর রা. এর সময় সিরিয়াতে আমওয়াসের প্লেগে শীর্ষস্থানীয় বড় বড় সাহাবিসহ অসংখ্য মুসলমান শাহাদাতবরণ করেন।)
৬. সম্পদের প্রাচুর্যতা। (রোম-পারস্য বিজয়ের পর মুসলমানদের অভাবনীয় প্রাচুর্যতা এসেছিল।)
৭. ব্যাপক ফেতনা, যা পুরো আরবকে গ্রাস করে নিবে। (উসমান রা. এর শাহাদাতের পর যে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছিল; বিশেষত আলি রা. এবং মুআবিয়া রা. এর মাঝে ইজতিহাদদি (চিন্তাগত) মতানৈক্যের কারণে জঙ্গে জামাল, জঙ্গে সিফফিন, হাররার যুদ্ধ, খারেজিদের আবির্ভাবের পাশাপাশি যে বিভক্তি ও ফেতনা শুরু হয়েছিল, আরবের প্রত্যেকেই এর সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে:
عَوْف بْنَ مَالِكٍ، قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ وَهُوَ فِي قُبَّةٍ مِنْ أَدَمٍ، فَقَالَ: “اعْدُدْ سِتًّا بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ: مَوْتِي، ثُمَّ فَتْحُ بَيْتِ المَقْدِسِ، ثُمَّ مُوْتَانٌ يَأْخُذُ فِيكُمْ كَقُعَاصِ الغَنَمِ، ثُمَّ اسْتِفَاضَةُ المَالِ حَتَّى يُعْطَى الرَّجُلُ مِائَةَ دِينَارٍ فَيَظَلُّ سَاخِطًا، ثُمَّ فِتْنَةٌ لاَ يَبْقَى بَيْتٌ مِنَ العَرَبِ إِلَّا دَخَلَتْهُ، ثُمَّ هُدْنَةٌ تَكُونُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ بَنِي الأَصْفَرِ، فَيَغْدِرُونَ فَيَأْتُونَكُمْ تَحْتَ ثَمَانِينَ غَايَةً، تَحْتَ كُلِّ غَايَةٍ اثْنَا عَشَرَ أَلْفًا”
অর্থাৎ আউফ বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলাম। তিনি তখন একটি চামড়ার তৈরি তাঁবুতে ছিলেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামাতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, অতঃপর বকরির পালের মহামারীর মতো তোমাদেরকে মহামারী আক্রমণ করবে, সম্পদের প্রাচুর্য; এমনকি এক ব্যক্তিকে একশ দিনার দেওয়ার পরও সে অসন্তুষ্ট থাকবে।

অতঃপর এমন এক ফেতনা আসবে, যা আরবের প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করবে। অতঃপর যুদ্ধ বিরতির চুক্তি, যা তোমাদের ও বনি আসফার বা রোমকদের মাঝে সম্পাদিত হবে। অতঃপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকা উড়িয়ে তোমাদের বিপক্ষে আসবে; প্রত্যেক পতাকার নীচে থাকবে বার হাজার সৈন্য। (সহিহ বুখারি: ৪/১০১, হা. নং ৩১৭৬, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, মিসর)

উল্লেখিত হাদিসের ছয়টি আলামতের মধ্য হতে পাঁচটিই ঘটে গেছে। আর ষষ্ঠটি তথা খ্রিস্টানদের সাথে সন্ধিচুক্তি ও তাদের বিশ্বাসঘাতকতা- এটা ইমাম মাহদি রা. এর সময়ে ঘটবে ইনশাআল্লাহ; যেমনটি নুআইম বিন হাম্মাদ রহ. বিরচিত ‘আল ফিতান’ এর বর্ণনা থেকে জানা যায়।
৮. আরব উপদ্বীপ, পারস্য ও রোম জয়। (এ তিনটি অঞ্চল তৎকালীন বিশ্বের প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময় থেকে নিয়ে উমর রা. এর খেলাফতের সময়ের মধ্যেই বিজিত হয়ে গিয়েছিল।)
সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে-
عَنْ نَافِعِ بْنِ عُتْبَةَ، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فِي غَزْوَةٍ….. قَالَ: تَغْزُونَ جَزِيرَةَ الْعَرَبِ فَيَفْتَحُهَا اللهُ، ثُمَّ فَارِسَ فَيَفْتَحُهَا اللهُ، ثُمَّ تَغْزُونَ الرُّومَ فَيَفْتَحُهَا اللهُ، ثُمَّ تَغْزُونَ الدَّجَّالَ فَيَفْتَحُهُ اللهُ.
অর্থাৎ নাফে বিন উতবা রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমরা একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে এক যুদ্ধে ছিলাম। ….. একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আরব উপদ্বীপে যুদ্ধ করবে, অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাতে তোমাদের বিজয় দান করবেন। অতঃপর পারস্যের সঙ্গে যুদ্ধ করবে, সে যুদ্ধেও আল্লাহ তোমাদের বিজয় দান করবেন। অতঃপর তোমরা রোমের সাথে যুদ্ধ করবে সে যুদ্ধেও আল্লাহ তোমাদের বিজয় দান করবেন। অতঃপর তোমরা দাজ্জালের সাথে লড়াই করবে সেখানেও আল্লাহ তোমাদের বিজয় দান করবেন। সহিহ মুসলিম: ২/২২২৫, হা. নং ২৯০০ প্র. দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)

৯. নবুয়তের মিথ্যা দাবিদারদের আত্মপ্রকাশ। (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবিদের যুগে মুসাইলামাতুল কাজ্জাব, আসওয়াদ আনাসি, তুলাইহা বিন খুওয়াইলিদ আসাদি ও মহিলাদের মধ্য হতে সাজ্জাহ এবং পরবর্তীতে মুখতার কাজ্জাব, হারিস কাজ্জাব এবং অধুনা মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানিসহ বিভিন্ন যুগে অসংখ্য মিথ্যা নবি আত্মপ্রকাশ করেছে।)
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَقْتَتِلَ فِئَتَانِ فَيَكُونَ بَيْنَهُمَا مَقْتَلَةٌ عَظِيمَةٌ، دَعْوَاهُمَا وَاحِدَةٌ، وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُبْعَثَ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ، قَرِيبًا مِنْ ثَلاَثِينَ، كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ.
অর্থাৎ আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ হবে। তাদের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হবে। অথচ তাদের উভয় দলের দাবি হবে এক। আর কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যে পর্যন্ত না প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাচারী দাজ্জাল তথা চরম মিথ্যুকের আবির্ভাব ঘটে, যাদের প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহর রাসুল বলে দাবি করবে। (সহিহ বুখারি: ৪/২০০, হা. নং ৩৬০৮, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, মিসর)

১০. হেজাজে আগুন বের হওয়া।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে:
أَخْبَرَنِي أَبُو هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَخْرُجَ نَارٌ مِنْ أَرْضِ الحِجَازِ تُضِيءُ أَعْنَاقَ الإِبِلِ بِبُصْرَى.
অর্থাৎ আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না হিজাজের ভূমি থেকে এমন আগুন বের হবে, যা বসরার উটগুলোর গর্দান আলোকিত করে দিবে। (সহিহ বুখারি: ৯/৫৮, হা. নং ৭১১৮, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, মিসর)
সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি ৬৫৪ হিজরীতে এই আগুন প্রকাশিত হয়েছে। এটা ছিল এক মহাঅগ্নি। তৎকালীন ও তৎপরবর্তী আলেমগণ এই আগুনের বিবরণ দিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যেমন ইমাম নববি রহ. লিখেছেন- “আমাদের যুগে ৬৫৪ হিজরীতে মদিনাতে আগুন বেরিয়েছে। মদিনার পূর্বপার্শ্বস্থ কংকরময় এলাকাতে প্রকাশিত হওয়া এই আগুন ছিল এক মহাঅগ্নি। সকল সিরিয়াবাসী ও অন্য সকল শহরের মানুষ তাওয়াতুর সংবাদের ভিত্তিতে তা অবহিত হয়েছে। মদিনাবাসীদের মধ্যে একব্যক্তি আমাকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, যিনি নিজে সে আগুন প্রত্যক্ষ করেছেন।”

১১. তাতার ও মোঙ্গলীয়দের বিরূদ্ধে যুদ্ধ।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُقَاتِلُوا قَوْمًا نِعَالُهُمُ الشَّعَرُ، وَحَتَّى تُقَاتِلُوا التُّرْكَ، صِغَارَ الأَعْيُنِ، حُمْرَ الوُجُوهِ، ذُلْفَ الأُنُوفِ، كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ المَجَانُّ المُطْرَقَةُ،
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্নিত, তিনি বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না; যতক্ষণ না তোমরা এমন এক জাতির সাথে যুদ্ধ করবে, যাদের পায়ের জুতা হবে পশমের এবং যতক্ষণ না তোমরা তুর্কদের সাথে যুদ্ধ করবে, যাদের চক্ষু ছোট, নাক চেপ্টা, চেহারা লাল ফর্সা, যেন তাদের চেহারা পেটানো ঢাল। (সহিহ বুখারি: ৪/১৯৬, হা. নং ৩৫৮৭, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, মিসর)
নোট: হাদিসে যে জাতির সাথে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে তারা ইতিহাসে মোঙ্গল বা তাতার জাতি নামে প্রসিদ্ধ। হাদিসে বর্ণিত সবগুলো বৈশিষ্ট্যই তাদের মাঝে বিদ্যমান ছিল। ইমাম নববি রহ. বলেন, “আমাদের যুগে তাদের দেখা মিলেছে। তিনি বলেন, এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মোজেজা যে, তিনি তুর্কদের চক্ষু ছোট, নাক চেপ্টা, চেহারা লাল ফর্সা, যেনো তাদের চেহারা পেটানো ঢাল বলে যেসব বৈশিষ্টের কথা বলে গিয়েছেন হুবহু সেসব বৈশিষ্টমণ্ডিত জাতির সাথে মুসলমানরা ইতিমধ্যে কয়েকবার যুদ্ধ করেছে এবং এখনও যুদ্ধ চলছে।” মোটকথা এদের সাথে যুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। বিখ্যাত আইনে জালুতের যুদ্ধে মুসলমানরা তাদেরকে চুড়ান্তভাবে পরাজিত করেছে।

কেয়ামতের যেসব আলামত বর্তমানে চলমান

১. যুদ্ধলব্ধ মালকে ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করা হবে।
২. আমানতকে গনিমত সাব্যস্ত করা হবে। (অর্থাৎ হালাল মনে করে খেয়ে ফেলবে।)
৩. জাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে। (অর্থাৎ আদায় করতে কুন্ঠিত হবে।)
৪. ইলমে দীন পার্থিব স্বার্থের জন্য অর্জন করা হবে।
৫. পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে।
৬. মায়ের অবাধ্যতা করতে শুরু করবে।
৭. বন্ধুকে নিকটে রাখবে ও পিতাকে দূরে সরিয়ে দিবে।
৮. মসজিদসমূহে হট্টগোল শুরু হবে।
৯. পাপাচারী ব্যক্তি কওমের নেতা হয়ে যাবে।
১০. হীনতম ব্যক্তি জাতির প্রতিনিধিত্ব করবে।
১১. অত্যচারের ভয়ে দুষ্ট লোকদের সম্মান করা হবে।
১২. গায়িকা নারীদের গান-বাদ্য ব্যাপক হবে।
১৩. বাদ্যযন্ত্রের প্রসার ঘটবে।
১৪. মদ পান করা হবে।
১৫. উম্মতের পরবর্তী লোকেরা তাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি অভিসম্পাত করবে।

যেমন সুনানে তিরমিজির বর্ণনায় এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا اتُّخِذَ الفَيْءُ دُوَلاً، وَالأَمَانَةُ مَغْنَمًا، وَالزَّكَاةُ مَغْرَمًا، وَتُعُلِّمَ لِغَيْرِ الدِّينِ، وَأَطَاعَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ، وَعَقَّ أُمَّهُ، وَأَدْنَى صَدِيقَهُ، وَأَقْصَى أَبَاهُ، وَظَهَرَتِ الأَصْوَاتُ فِي الْمَسَاجِدِ، وَسَادَ القَبِيلَةَ فَاسِقُهُمْ، وَكَانَ زَعِيمُ القَوْمِ أَرْذَلَهُمْ، وَأُكْرِمَ الرَّجُلُ مَخَافَةَ شَرِّهِ، وَظَهَرَتِ القَيْنَاتُ وَالمَعَازِفُ، وَشُرِبَتِ الخُمُورُ، وَلَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا، فَلْيَرْتَقِبُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ، وَزَلْزَلَةً وَخَسْفًا وَمَسْخًا وَقَذْفًا وَآيَاتٍ تَتَابَعُ كَنِظَامٍ بَالٍ قُطِعَ سِلْكُهُ فَتَتَابَعَ.
অর্থাৎ হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন যুদ্ধলদ্ধ সম্পদ নিজের সম্পদে পরিণত হবে, আমানতের মাল লুটের মালে পরিণত হবে, জাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে, ধর্ম বিবর্জিত শিক্ষার প্রচলন হবে, পুরুষ নিজের স্ত্রীর অনুগত হয়ে যাবে, কিন্তু মায়ের অবাধ্য হবে, বন্ধু-বান্ধবকে কাছে টানবে, কিন্তু পিতাকে দূরে ঠেলে দিবে, মসজিদে কলরব ও হট্টগোল হবে, পাপাচারীরা গোত্রের নেতা হবে, নিকৃষ্ট লোক সমাজের কর্ণধার হবে, কোনো মানুষের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য তাকে সম্মান দেখানো হবে, গায়িকা-নর্তকী ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে, মদ পান করা হবে, এ উম্মতের শেষ সময়ের লোকেরা পূর্ববর্তী মনীষীদের অভিসম্পাত করবে, তখন তোমরা অগ্নিবায়ু, ভূমিধস, ভূমিকম্প, চেহারা বিকৃতি ও পাথর বর্ষণের শাস্তির অপেক্ষা করো, যা একটির পর একটি এমনভাবে প্রকাশ পাবে, যেমন একটি পুঁতির মালা কেটে দিলে তা একটির একটি পড়তে থাকে । (সুনানে তিরমিজি: ৪/৬৫, হা. নং ২২১১ প্র.দারুল গারবিল ইসলামি, বৈরুত)

সুনানে তিরমিজিতে আরও বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فِي هَذِهِ الأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَتَى ذَاكَ؟ قَالَ: إِذَا ظَهَرَتِ القَيْنَاتُ وَالمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الخُمُورُ.
অর্থাৎ ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এ উম্মতের মাঝে ভূমিধস, চেহারা বিকৃতি ও পাথর বর্ষণ হবে। তখন মুসলমানদের মধ্য হতে একজন বললো, হে আল্লাহর রাসুল, এটা কখন হবে? তিনি উত্তরে বললেন, যখন গায়িকা নারীদের গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রসার ঘটবে এবং মদপান করা হবে। (সুনানে তিরমিজি: ৪/৬৫, হা. নং ২২১২ প্র. দারুল গারবিল ইসলামি, বৈরুত)
এটা যে কেয়ামতের আলামতের অন্তর্ভুক্ত তা অন্য একটি বর্ণনা থেকে জানা যায়। সুনানে ইবনে মাজাহ এর বর্ণনায় এসেছে-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ مَسْخٌ، وَخَسْفٌ، وَقَذْفٌ
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ রা. সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি ইরশাদ করেছেন, কেয়ামতের পূর্বে ভূমিধস, চেহারা বিকৃতি ও পাথর বর্ষণ হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২/১৩৪৯, হা. নং ৪০৫৯ প্র. দারু ইহইয়াইল কুতুবিল আরাবিয়্যা)

১৬. সময় খুব দ্রুতবেগে অতিবাহিত হবে।
যেমন সহিহ ইবনে হিব্বানে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَتَقَارَبَ الزَّمَانُ، فَتَكُونُ السَّنَةُ كَالشَّهْرِ، وَيَكُونُ الشَّهْرُ كَالْجُمُعَةِ، وَتَكُونُ الْجُمُعَةُ كَالْيَوْمِ، وَيَكُونُ الْيَوْمُ كَالسَّاعَةِ، وَتَكُونُ السَّاعَةُ كَاحْتِرَاقِ السَّعَفَةِ، أَوِ الْخُوصَةِ.
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না সময় নিকটতর বলে মনে হতে থাকবে; এমনকি বছর মাসের মতো, মাস সপ্তাহের মতো, সপ্তাহ দিনের মতো, দিন ঘন্টার মতো এবং ঘন্টা খেজুর গাছের শুকনো ডাল জ্বলার মতো দ্রুত অতিক্রম করবে। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ১৫/২৫৭, হা. নং ৬৮৪২, প্র. মুআসসাসাতুর রিসালা, বৈরুত)
১৭. আমল কমতে থাকবে।
১৮. কৃপণতা বৃদ্ধি পাবে।
১৯. ফেতনা-ফাসাদ বেড়ে যাবে।
২০. অবৈধ হত্যা-খুন বৃদ্ধি পাবে।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: يَتَقَارَبُ الزَّمَانُ، وَيَنْقُصُ العَمَلُ، وَيُلْقَى الشُّحُّ، وَتَظْهَرُ الفِتَنُ، وَيَكْثُرُ الهَرْجُ. قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّمَ هُوَ؟ قَالَ: القَتْلُ القَتْلُ.
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. সূত্রে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, সময় নিকটতর হতে থাকবে, আমল কমে যেতে থাকবে, কৃপণতা ছড়িয়ে দেওয়া হবে, ফেতনার বিকাশ ঘটবে এবং হারজ ব্যাপকতর হবে। সাহাবায়ে কিরাম রা. জিজ্ঞেস করলেন, হারজ কী? নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হত্যা, হত্যা। (সহিহ বুখারি: ৯/৪৮, হা. নং ৭০৬১ প্র. দারু তাওকিন নাজাত, বৈরুত)

২১. পৃথিবী থেকে ইলম উঠে যাবে, সমাজ অজ্ঞতায় ছেয়ে যাবে।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে-
قَالَ أَبُو مُوسَى: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ أَيَّامًا، يُرْفَعُ فِيهَا العِلْمُ، وَيَنْزِلُ فِيهَا الجَهْلُ، وَيَكْثُرُ فِيهَا الهَرْجُ. وَالهَرْجُ: القَتْلُ.
অর্থাৎ আবু মুসা আশআরি রা. বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের পূর্বে এমন সময় আসবে যখন ইলম উঠে যাবে, অজ্ঞতার সয়লাব হবে, হারাজ বৃদ্ধি পাবে। আর হারাজ হলো হত্যা। (সহিহ বুখারি: ৯/৪৮, হা. নং ৭০৬৪, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, বৈরুত)

২২. মেয়েরা মায়ের সাথে দাসীদের মতো আচরণ করবে।
২৩. রাখাল ও নিঃস্ব শ্রেণির লোকেরা সুবিশাল অট্টলিকা নির্মানে প্রতিযোগিতা করবে।
যেমন সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে-
حَدَّثَنِي أَبِي عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ…. قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَتِهَا، قَالَ: أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا، وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ
অর্থাৎ উমর বিন খাত্তাব রা. বর্ণনা করেন, আমরা একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট বসা ছিলাম। …জিবরাঈল আ. বললেন, তাহলে আমাকে কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, দাসী নিজের মালিকাকে প্রসব করবে। আর তুমি দেখতে পাবে, নগ্নপদ, নগ্নদেহ, নিঃস্ব মেষ রাখালেরা অট্টলিকা নির্মাণের ক্ষেত্রে পরস্পরে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে। (সহিহ মুসলিম: ১/৩৬, হা. নং ৮, প্র. দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)

২৪. শুধু নিজের পরিচিত বিশেষ লোকদেরকেই সালাম দেওয়া হবে।
২৫. ব্যবসা-বানিজ্যের ব্যাপক প্রসার হবে।
২৬. স্ত্রী স্বীয় স্বামীকে ব্যবসায় সহযোগিতা করবে।
২৭. আত্মীয়তার সম্পর্ক শিথিল ও ছিন্ন হয়ে যাবে।
২৮. মিথ্যা সাক্ষ্য ব্যাপকতা লাভ করবে আর সত্যকে লুকানো হবে।
২৯. লেখালেখি ও প্রচার মাধ্যমের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।
যেমন মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে-
فَذَكَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ تَسْلِيمَ الْخَاصَّةِ، وَفُشُوَّ التِّجَارَةِ، حَتَّى تُعِينَ الْمَرْأَةُ زَوْجَهَا عَلَى التِّجَارَةِ، وَقَطْعَ الْأَرْحَامِ، وَشَهَادَةَ الزُّورِ، وَكِتْمَانَ شَهَادَةِ الْحَقِّ، وَظُهُورَ الْقَلَمِ.
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, কেয়ামতের পূর্বে শুধু বিশেষ লোকদেরই সালাম দেয়া হবে, ব্যবসা ব্যাপক প্রসার লাভ করবে; এমনকি স্ত্রী স্বীয় স্বামীকে ব্যবসায়িক কাজে সহযোগিতা করবে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হবে, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া হবে, সত্যকে গোপন করা হবে এবং কলমের বিস্তার ঘটবে। (মুসনাদে আহমাদ: ৬/৪১৬, হা. নং ৩৮৭০, প্র. মুআসসাসাতুর রিসালা)
৩০. অশ্লীলতা ও বে-হায়ায়ি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
৩১. প্রতিবেশীর সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা হবে না; বরং অসদাচরণ করা হবে।
৩২.খেয়ানতকারীকে আমানতদার আর আমানতদারকে খেয়ানতকারী বলা হবে।
যেমন মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে-
عَبْدَ اللهِ بْنَ عَمْرٍو فَحَدَّثَنِي مِمَّا سَمِعَ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ….. قَالَ: وَلَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَظْهَرَ الْفُحْشُ وَالتَّفَاحُشُ، وَقَطِيعَةُ الرَّحِمِ، وَسُوءُ الْمُجَاوَرَةِ، وَحَتَّى يُؤْتَمَنَ الْخَائِنُ وَيُخَوَّنَ الْأَمِينُ.
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না লজ্জাহীনতা ও অশ্লীলতা ব্যাপকতা লাভ করবে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে, প্রতিবেশীর সাথে খারাপ আচরণ করা হবে, খেয়ানতকারীকে আমানতদার মনে করা হবে আর আমানতদারকে খেয়ানতকারী মনে করা হবে। (মুসনাদে আহমাদ:১১/৬৪, হা. নং ৬৫১৪, প্র. মুআসসাসাতুর রিসালা)

৩৩. কালো খেজাব ব্যবহার করা।
যেমন সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَكُونُ قَوْمٌ يَخْضِبُونَ فِي آخِرِ الزَّمَانِ بِالسَّوَادِ، كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ، لَا يَرِيحُونَ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ.
অর্থাৎ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শেষ জামানায় এমন কিছু লোক আসবে, যারা কবুতরের পাকস্থলীর ন্যায় কালো খেজাব ব্যবহার করবে। এরা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। (সুনানে আবু দাউদ: ৪/৮৭, হা. নং ৪২১২ প্র. আল মাকতাবাতুল আসরিয়্যা, বৈরুত)
৩৪. অযোগ্য লোকদের ক্ষমতায় বসানো।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا ضُيِّعَتِ الأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ. قَالَ: كَيْفَ إِضَاعَتُهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: إِذَا أُسْنِدَ الأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ.
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন আমানতের খেয়ানত করা হবে তখন কেয়ামতের অপেক্ষা করো। কেউ বললো, হে আল্লাহর রাসুল, কিভাবে আমানতের খেয়ানত করা হবে? তিনি বললেন, যখন অযোগ্য লোকদের ক্ষমতায় বসানো হবে তখন কেয়ামতের অপেক্ষা করো। (সহিহ বুখারি: ৮/১০৪, হা. নং ৬৪৯৬, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, বৈরুত)

৩৫. মিথ্যা বৃদ্ধি পাবে।
৩৬. ঘনঘন বাজার-ঘাট গড়ে উঠবে।

যেমন মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَظْهَرَ الْفِتَنُ، وَيَكْثُرَ الْكَذِبُ، وَتَتَقَارَبَ الْأَسْوَاقُ، وَيَتَقَارَبَ الزَّمَانُ، وَيَكْثُرَ الْهَرْجُ. قِيلَ: وَمَا الْهَرْجُ؟ قَالَ: الْقَتْلُ.
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না ফেতনা-ফাসাদ বিস্তার লাভ করবে, মিথ্যার প্রসার ঘটবে, বাজার-ঘাট ঘনঘন হবে, সময় নিকটবর্তী হতে থাকবে এবং হারাজ বৃদ্ধি পাবে। প্রশ্ন করা হলো, হারাজ কী? তিনি বললেন, হত্যা। (মুসনাদে আহমাদ: ১৬/৪২২, হা. নং ১০৭২৪ প্র. মুআসসাসাতুর রিসালা, বৈরুত)

৩৭. হতাহত এত বেশি হবে যে, হত্যাকারী ও নিহত কেউ-ই জানবে না যে, কেনো হত্যা করা হলো?
যেমন সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا تَذْهَبُ الدُّنْيَا، حَتَّى يَأْتِيَ عَلَى النَّاسِ يَوْمٌ لَا يَدْرِي الْقَاتِلُ فِيمَ قَتَلَ، وَلَا الْمَقْتُولُ فِيمَ قُتِلَ ” فَقِيلَ: كَيْفَ يَكُونُ ذَلِكَ؟ قَالَ: الْهَرْجُ، الْقَاتِلُ وَالْمَقْتُولُ فِي النَّارِ.
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না মানুষের সামনে এমন একটি সময় আসবে, যখন হত্যাকারী জানবে না যে, সে কেনো হত্যা করল আর নিহত ব্যক্তিও জানবে না যে, সে কেন নিহত হলো? জিজ্ঞেস করা হলো, এটা কীভাবে হবে? তিনি বললেন, তখন অধিক হতাহতের ঘটনা ঘটবে। হত্যাকারী ও নিহত উভয়ে জাহান্নামে যাবে। (সহিহ মুসলিম: ৪/২২৩১, হা. নং ২৯০৮ প্র. দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)

নোট: হত্যাকারী জাহান্নামে যাওয়ার বিষয়টি তো স্পষ্ট। কিন্তু নিহত ব্যক্তি জাহান্নামে যাওয়ার কারন হলো, সেও অন্য কাউকে হত্যা করার অভিপ্রায়ে ছিল।

৩৭. পার্থিব লোভে মানুষ রাতারাতি দীন-ধর্ম পরিবর্তন করে ফেলবে।
যেমন সুনানে তিরমিজিতে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: تَكُونُ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ فِتَنٌ كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ فِيهَا مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا، وَيُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا، يَبِيعُ أَقْوَامٌ دِينَهُمْ بِعَرَضٍ مِنَ الدُّنْيَا.
অর্থাৎ আনাস রা. সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কেয়ামতের পূর্বে অন্ধকার রাতের ন্যায় ফেতনা আসতে থাকবে। সে সময় মানুষ সকালে মুমিন থাকবে বিকেলে কাফের হয়ে যাবে এবং বিকেলে মুমিন থাকবে সকালে কাফের হয়ে যাবে। লোকেরা পার্থিব স্বার্থে স্বীয় দীন বিক্রি করে দিবে। (সুনানে তিরমিজি: ৪/৫৮, হা. নং ২১৯৭ প্র. দারুল গারবিল ইসলামি, বৈরুত)

৩৮. উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল-হারামের কোনো পরওয়া থাকবে না।
যেমন সুনানে নাসায়িতে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ مَا يُبَالِي الرَّجُلُ مِنْ أَيْنَ أَصَابَ الْمَالَ مِنْ حَلَالٍ أَوْ حَرَامٍ.
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষের সামনে এমন একটি সময় আসবে, যখন সে পরওয়া করবে না যে, হালাল পন্থায় সম্পদ উপার্জন করছে নাকি হারাম পন্থায়। (সুনানে নাসায়ি: ৭/২৪৩, হা. নং ৪৪৫৪, প্র. মাকতাবুল মাতবুআতিল ইসলামিয়্যা, হালব)

৩৯. জালেম শাসক ও প্রশাসন জনগণকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দিবে, শারীরিক নির্যাতন করবে।
৪০.উলঙ্গ-অর্ধালঙ্গ নারীদের দেখা মিলবে।

যেমন সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا، قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ، وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا.
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুই প্রকারের জাহান্নামিকে আমি এখনও দেখিনি। এক শ্রেণি হলো, ঐসব লোক, যাদের সাথে সর্বদা গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে, যদ্বারা তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আরেক শ্রেণি হলো, ঐসব নারী, যারা পোষাক পরিহিতা, কিন্তু উলঙ্গপ্রায়, যারা গর্বের সাথে নৃত্যের ভঙ্গিতে বাহু দুলিয়ে পথ চলে, বুখতি উটের কুঁজোর ন্যায় তাদের খোপা বাঁধা থাকবে। এরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, এমনকি জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না; যদিও এর সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যায়। (সহিহ মুসলিম: ৩/১৬৮০, হা. নং ২১২৮, প্র. দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)

৪১.ইহুদি-খ্রিষ্টানদের পদেপদে অনুসরণ করা হবে।
যেমন ইমাম মারুজি রহ. রচিত ‘আসসুন্নাহ’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَتَرْكَبُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ وَبَاعًا بِبَاعٍ حَتَّى لَوْ أَنَّ أَحَدَهُمْ دَخَلَ جُحْرَ ضَبٍّ لَدَخَلْتُمْ، وَحَتَّى لَوْ أَنَّ أَحَدَهُمْ جَامَعَ أُمَّهُ بِالطَّرِيقِ لَفَعَلْتُمْ.
অর্থাৎ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মত তথা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের পদেপদে অনুসরণ করবে; এমনকি যদি তারা সাপের গর্তে প্রবেশ করে তাহলে তোমরাও সাপের গর্তে প্রবেশ করবে, এমনকি তাদের কেউ যদি নিজের মায়ের সাথে পথেঘাটে ব্যভিচার করে তাহলে তোমরাও তা করবে। (আসসুন্নাহ: পৃ. ১৮, হা. নং ৪৩, প্র. মুআসসাসাতুল কুতুবিস সাকাফিয়্যা, বৈরুত)

৪২. কোনো মাসের চাঁদ বড় দেখা যাবে।
৪৩. মসজিদ রাস্তাঘাটের মতো ব্যবহৃত হবে।
৪৪. আকস্মিক মৃত্যু বেড়ে যাবে।

যেমন তাবরানি মুজামে সগিরে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، رَفَعَهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مِنِ اقْتِرَابِ السَّاعَةِ أَنْ يُرَى الْهِلَالُ قِبَلًا, فَيُقَالُ لِلَيْلَتَيْنِ, وَأَنْ تُتَّخَذَ الْمَسَاجِدَ طُرُقًا, وَأَنْ يَظْهَرَ مَوْتُ الْفُجَاءَة.
অর্থাৎ আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার আলামত হলো, নতুন চাঁদ বড় দেখা যাবে, যদ্দরুন বলা হবে, এটা দুদিনের চাঁদ। মসজিদসমূহকে রাস্তায় রূপান্তরিত করা হবে। আকস্মিক মৃত্যু বেড়ে যাবে। (তাবরানি, মুজামে সগির:২/২৬০, হা. নং ১১৩২ প্র. আল মাকতাবুল ইসলামি, বৈরুত)

৪৫. বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু ফসল উৎপন্ন হবে না।
যেমন মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় এসেছে-
مُعَاذُ بْنُ حَرْمَلَةَ الْأَزْدِيُّ، قَالَ: سَمِعْتُ أَنَسًا يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُمْطَرَ النَّاسُ مَطَرًا عَامًّا، وَلَا تَنْبُتَ الْأَرْضُ شَيْئًا.
অর্থাৎ আনাস রা. বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ততদিন পর্যন্ত কেয়ামত হবে না, যতদিন না ব্যাপক বৃষ্টিপাত হবে, কিন্তু জমি কোনো ফসল উৎপন্ন করবে না। (মুসনাদে আহমাদ:১৯/৪১৭, হা. নং ১২৪২৯, প্র. মুআসসাসাতুর রিসালা, বৈরুত)

৪৬. ভূমিকম্প বৃদ্ধি পাবে।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقْبَضَ العِلْمُ، وَتَكْثُرَ الزَّلاَزِلُ، وَيَتَقَارَبَ الزَّمَانُ، وَتَظْهَرَ الفِتَنُ، وَيَكْثُرَ الهَرْجُ – وَهُوَ القَتْلُ القَتْلُ – حَتَّى يَكْثُرَ فِيكُمُ المَالُ فَيَفِيضَ.
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ততদিন পর্যন্ত কেয়ামত হবে না, যতদিন না ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, ভূমিকম্প বৃদ্ধি পাবে, সময় নিকটবর্তী হয়ে যাবে, ফেতনা-ফাসাদ প্রকাশ পাবে, হতাহত বৃদ্ধি পাবে এবং সম্পদের প্রাচু্র্য ঘটবে। (সহিহ বুখারি: ২/৩৩, হা. নং ১০৩৬, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, বৈরুত)

৪৭. মসজিদের সৌন্দর্য ও চাকচিক্য নিয়ে গর্ব করা হবে।
যেমন সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَتَبَاهَى النَّاسُ فِي الْمَسَاجِدِ.
অর্থাৎ আনাস রা. থেকে বণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ততদিন পর্যন্ত কেয়ামত হবে না, যতদিন না লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব করবে। (সুনানে আবু দাউদ: ১/১২১, হা. নং ৪৪৯, প্র. আল মাকতাবাতুল আসরিয়্যা, বৈরুত)

৪৮. হত্যা এত ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে যে, নিজের ভাই-ভাতিজী ও নিকটাত্মীয়দেরকেও হত্যা করা হবে।
যেমন সুনানে ইবনে মাজাহ-তে বর্ণিত হয়েছে-
حَدَّثَنَا أَبُو مُوسَى قَالَ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ لَهَرْجًا، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا الْهَرْجُ؟ قَالَ: الْقَتْلُ، فَقَالَ بَعْضُ الْمُسْلِمِينَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّا نَقْتُلُ الْآنَ فِي الْعَامِ الْوَاحِدِ مِنَ الْمُشْرِكِينَ كَذَا وَكَذَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيْسَ بِقَتْلِ الْمُشْرِكِينَ، وَلَكِنْ يَقْتُلُ بَعْضُكُمْ بَعْضًا، حَتَّى يَقْتُلَ الرَّجُلُ جَارَهُ، وَابْنَ عَمِّهِ وَذَا قَرَابَتِهِ.
অর্থাৎ আবু মুসা আশআরী রা. বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন, কেয়ামতের পূর্বে হারাজ ঘটবে। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, হারাজ কী? তিনি বললেন, হত্যা। তখন জনৈক মুসলমান প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা তো এখন এক বছরেই এত এত মুশরিকদের হত্যা করে ফেলি। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, মুশরিকদের হত্যা করা নয়, বরং তোমরা একে অপরকে হত্যা করবে; এমনকি মানুষ তার প্রতিবেশী, ভাতিজা ও নিকটাত্মীয়কে হত্যা করে ফেলবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২/১৩০৯, হা. নং ৩৯৫৯, প্র. দারু ইহইয়াইল কুতুবিল আরাবিয়্যা)

৪৯. মক্কার পাহাড় খুঁদে পানির নালা বের করা হবে এবং তার প্রাসাদগুলো পাহাড়ের চেয়ে উঁচু হয়ে যাবে।
যেমন মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাতে বর্ণিত হয়েছে-
عَبْد اللَّهِ بْن عَمْرٍو فَقَالَ:… فَإِذَا رَأَيْتَ مَكَّةَ قَدْ بَعَجَتْ كَظَائِمَ وَرَأَيْتَ الْبِنَاءَ يَعْلُو رُءُوسَ الْجِبَالِ فَاعْلَمْ أَنَّ الْأَمْرَ قَدْ أَظَلَّكَ.
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. বলেন,… অতঃপর যখন মক্কায় পানির নালা ও ট্যানেল কাটতে দেখবে এবং অট্টলিকাগুলো পাহাড়ের চেয়ে উঁচু দেখতে পাবে তখন জেনে রাখো, কেয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ৭/৪৬১, হা. নং ৩৭২৩২, প্র. মাকতাবাতুর রুশদ, রিয়াদ)

৫০. সমাজে সুদ এত ব্যাপক হয়ে যাবে যে, কেউ চাইলেও এ থেকে পরিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকতে পারবে না।
যেমন মুস্তাদরাকে হাকিমে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، لَا يَبْقَى فِيهِ أَحَدٌ إِلَّا أَكَلَ الرِّبَا، فَإِنْ لَمْ يَأْكُلْهُ أَصَابَهُ مِنْ غُبَارِهِ.
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষের সামনে এমন এক সময় আসবে যখন এমন কেউ থাকবে না, যে সুদ খাবে না। একান্ত যদি কেউ সুদ নাও খেতে চায় তাহলে কমপক্ষে তার কিছু ধুলাবালি হলেও খেতে বাধ্য হবে। (মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/১৩, হা. নং ২১৬২, প্র. দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত)

৫১. পুরুষ এবং নারী উভয় শ্রেণির মাঝে সমকামিতা বেড়ে যাবে।
যেমন মুজামে কাবির তাবরানিতে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلْ لِلسَّاعَةِ مِنْ عِلْمٍ تُعْرَفُ بِهِ السَّاعَةُ؟ فَقَالَ: نَعَمْ، يَا ابْنَ مَسْعُودٍ، إِنَّ لِلسَّاعَةِ أَعْلَامًا، وَإِنَّ لِلسَّاعَةِ أَشْرَاطًا….. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يَكْتَفِيَ الرِّجَالُ بِالرِّجَالِ، وَالنِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ.
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, কেয়ামতের কি এমন কিছু আলামত রয়েছে, যদ্বারা কেয়ামতের বিষয়ে অবগত হওয়া যাবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, হে ইবনে মাসউদ। নিশ্চয় কেয়ামতের অনেকগুলো আলামত ও নিদর্শন আছে। …হে ইবনে মাসউদ, কেয়ামতের আলামত ও নিদর্শনসমূহের একটি হলো, পুরুষরা পুরুষদের দ্বারা তৃপ্ত হবে আর নারীরা নারীদের দ্বারা তৃপ্ত হবে। (মুজামে কাবির তাবরানি: ১০/২২৮, হা. নং ১০২৫৬, প্র. মাকতাবা ইবনে তাইমিয়া, কায়রো)

৫২. মানুষ নিজ স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পরে তা অস্বীকার করবে এবং এভাবেই তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর সাথে অবৈধ সহবাসের দরুন সমাজে অসংখ্য জারজ সন্তানে ভরে যাবে।
যেমন মুজামে আওসাত তাবরানিতে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلْ لِلسَّاعَةِ مِنْ عِلْمٍ تُعْرَفُ بِهِ السَّاعَةُ؟ فَقَالَ: نَعَمْ، يَا ابْنَ مَسْعُودٍ، إِنَّ لِلسَّاعَةِ أَعْلَامًا، وَإِنَّ لِلسَّاعَةِ أَشْرَاطًا….. يَا ابْنَ مَسْعُودٍ، إِنَّ مِنْ أَعْلَامِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا أَنْ يَكْثُرَ أَوْلَادُ الزِّنَا. قُلْتُ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَهُمْ مُسْلِمُونَ؟ قَالَ: نَعَمْ. قُلْتُ: أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَالْقُرْآنُ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ؟ قَالَ: نَعَمْ. قُلْتُ: أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَأَنَّى ذَلِكَ؟ قَالَ: يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يُطَلِّقُ الرَّجُلُ الْمَرْأَةَ، ثُمَّ يَجْحَدُهَا طَلَاقَهَا، فَيُقِيمُ عَلَى فَرْجِهَا، فَهُمَا زَانِيَانِ مَا أَقَامَا.
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, কেয়ামতের কি এমন কিছু আলামত রয়েছে, যদ্বারা কেয়ামতের বিষয়ে অবগত হওয়া যাবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, হে ইবনে মাসউদ। নিশ্চয় কেয়ামতের অনেকগুলো আলামত ও নিদর্শন আছে। …হে ইবনে মাসউদ, কেয়ামতের আলামত ও নিদর্শনসমূহের একটি হলো, জারজ সন্তান বৃদ্ধি পাবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হে ইবনে মাসউদ, তারা কি মুসলমান? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, হে ইবনে মাসউদ, তাদের সামনে কি কুরআন থাকবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, হে ইবনে মাসউদ, তাহলে এমনটা (জারজ সন্তানের বৃদ্ধি) কীভাবে হবে? তিনি বললেন, মানুষের সামনে এমন একটি সময় আসবে, যখন সে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তা অস্বীকার করবে। অতঃপর তার সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে। এভাবে যতদিন তারা সংসার করবে তারা ব্যভিচারী হিসেবে থাকবে। (মুজামে আওসাত, তাবরানি: ৫/১২৭, হা. নং ৪৮৬১, প্র. দারুল হারামাইন, কায়রো)

কেয়ামতের যেসব আলামত ভবিষ্যতে ঘটিতব্য

১ আরব ভূমি ঝর্ণা ও সবুজ ঘাসে পূর্ণ হয়ে যাবে।
২. সম্পদের এত প্রাচুর্য ঘটবে যে, দান নেওয়ার মতো কোনো লোক থাকবে না, যদ্দরুন দানকারীরা চিন্তায় পড়ে যাবে।
যেমন সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكْثُرَ الْمَالُ وَيَفِيضَ، حَتَّى يَخْرُجَ الرَّجُلُ بِزَكَاةِ مَالِهِ فَلَا يَجِدُ أَحَدًا يَقْبَلُهَا مِنْهُ، وَحَتَّى تَعُودَ أَرْضُ الْعَرَبِ مُرُوجًا وَأَنْهَارًا.
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না; যতক্ষণ না সম্পদের আধিক্য ও প্রাচুর্য্য ঘটবে এবং যতক্ষণ না মানুষ স্বীয় সম্পদের জাকাত নিয়ে বের হবে, কিন্তু তা গ্রহণ করার মতো কাউকে পাবে না এবং যতক্ষণ না আরব ভূমি সবুজ ঘাস ও নদ-নদীতে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম: ২/৭০১, হা. নং ১৫৭, প্র. দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)
সহিহ মুসলিমে এর পরের বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكْثُرَ فِيكُمُ الْمَالُ، فَيَفِيضَ حَتَّى يُهِمَّ رَبَّ الْمَالِ مَنْ يَقْبَلُهُ مِنْهُ صَدَقَةً، وَيُدْعَى إِلَيْهِ الرَّجُلُ فَيَقُولُ: لَا أَرَبَ لِي فِيهِ.
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না তোমাদের মাঝে সম্পদের আধিক্য ও প্রাচুর্য্য ঘটবে; এমনকি সম্পদের মালিক তার সদকা কে গ্রহণ করবে- তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়বে। সম্পদ নেওয়ার জন্য মানুষকে ডাকা হবে, কিন্তু সে বলবে, আমার কোনো প্রয়োজন নেই। (সহিহ মুসলিম: ২/৭০১,হা. নং ১৫৭, প্র. দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)

৩. চতুষ্পদ জন্তু ও জড়পদার্থও কথা বলবে।
যেমন সুনানে তিরমিজিতে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُكَلِّمَ السِّبَاعُ الإِنْسَ، وَحَتَّى تُكَلِّمَ الرَّجُلَ عَذَبَةُ سَوْطِهِ وَشِرَاكُ نَعْلِهِ وَتُخْبِرَهُ فَخِذُهُ بِمَا أَحْدَثَ أَهْلُهُ مِنْ بَعْدِهِ.
অর্থাৎ আবু সাঈধ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না চতুষ্পদ হিংস্র প্রাণী মানুষের সাথে কথা বলবে, যতক্ষণ না কারও চাবুকের মাথা এবং জুতার ফিতা মানুষের সাথে কথা বলবে এবং তার উরুদেশ বলে দিবে তার অনুপস্থিতিতে তার পরিবার কী করেছে? (সুনানে তিরমিজি: ৪/৪৬, হা. নং ২১৮১ প্র. দারুল গারবিল ইসলামি, বৈরুত)

৪.পুরুষের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যাবে এবং নারীদের সংখ্যা পঞ্চাশ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যাবে।
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: لَأُحَدِّثَنَّكُمْ حَدِيثًا سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يُحَدِّثُكُمْ بِهِ أَحَدٌ غَيْرِي: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ العِلْمُ، وَيَكْثُرَ الجَهْلُ، وَيَكْثُرَ الزِّنَا، وَيَكْثُرَ شُرْبُ الخَمْرِ، وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، وَيَكْثُرَ النِّسَاءُ حَتَّى يَكُونَ لِخَمْسِينَ امْرَأَةً القَيِّمُ الوَاحِدُ.
অর্থাৎ আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তোমাদের কাছে একটি হাদিস বর্ণনা করব, যা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে শুনেছি এবং আমি ব্যতীত আর কেউ সে হাদিস বলতে পারবে না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের আলামতের মধ্যে রয়েছে ইলম উঠে যাবে, অজ্ঞতা বেড়ে যাবে, ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে, মদ্যপানের মাত্রা বেড়ে যাবে, পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে এবং নারীদের সংখ্যা এত বেড়ে যাবে যে, একজন পুরুষকে পঞ্চাশজন নারীর দেখাশুনা করতে হবে । (সহিহ বুখারি: ৭/৩৭, হা. নং ৫২৩১, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, বৈরুত)

নোট: সম্ভবত নারীদের এ আধিক্য ও পুরুষদের স্বল্পতা প্রচণ্ড রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের কারণে হবে। এতে অধিকাংশ যোদ্ধারা মারা যাবে, যদ্দরুন পৃথিবী জুড়ে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হবে। আল্লাহই ভালো জানেন।

৫. চেহারা বিকৃতি, ভূমিধস ও পাথর বর্ষণ হবে। কোথাও এমন ধ্বংসাত্মক রূপ নিবে যে, তথাকার কেহই বেঁচে থাকবে না।
যেমন সুনানে তিরমিজিতে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَكُونُ فِي آخِرِ هَذِهِ الأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ، قَالَتْ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَنَهْلِكُ وَفِينَا الصَّالِحُونَ؟ قَالَ: نَعَمْ إِذَا ظَهَرَ الخُبْثُ.
অর্থাৎ আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ উম্মতের শেষভাগে ভূমিধস, চেহারা বিকৃতি ও পাথর বর্ষণ হবে। আয়েশা রা. বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের মধ্যে সৎ ও ভালো লোকেরা থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যখন পাপাচার-অশ্লীলতা বেড়ে যাবে। (সুনানে তিরমিজি: ৪/৪৯, হা. নং ২১৮৫, প্র. দারুল গারবিল ইসলামি, বৈরুত)
মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ صُحَارٍ الْعَبْدِيِّ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُخْسَفَ بِقَبَائِلَ، فَيُقَالُ: مَنْ بَقِيَ مِنْ بَنِي فُلَانٍ؟ قَالَ: فَعَرَفْتُ حِينَ قَالَ: قَبَائِلَ أَنَّهَا الْعَرَبُ، لِأَنَّ الْعَجَمَ تُنْسَبُ إِلَى قُرَاهَا.
অর্থাৎ সুহার আবদি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না অনেক গোত্রকে এমনভাবে ধসিয়ে দেওয়া হবে যে, বলাবলি করা হবে, অমুক বংশের কেউ বেঁচে আছে কি? সুহার রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গোত্র বলাতে আমি বুঝতে পারলাম, তারা হবে আরবের। কেননা, অনারবীদেরকে তাদের এলাকার দিকে সম্বোধন করা হয়। (মুসনাদে আহমাদ: ২৫/৩১৩, হা. নং ১৫৯৬৫, প্র. মুআসাসাসাতুর রিসালা, বৈরুত)

৬. বিভিন্ন গোনাহে লেপ্ত হওয়ার কারণে মানুষ বানর ও শুকরে রূপান্তরিত হয়ে যাবে।
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَيَبِيتَنَّ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي عَلَى أَشَرٍ وَبَطَرٍ وَلَعِبٍ وَلَهْوٍ، فَيُصْبِحُوا قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ بِاسْتِحْلَالِهِمُ الْمَحَارِمَ، وَاتِّخَاذِهِمُ الْقَيْنَاتِ، وَشُرْبِهِمُ الْخَمْرَ، وَأَكْلِهِمُ الرِّبَا، وَلُبْسِهِمُ الْحَرِيرَ.
অর্থাৎ ইবনে আব্বাস রা. সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, আমার উম্মতের কিছু লোক গর্ব, অহংকার ও খেলাধুলায় রাত কাটাবে। কিন্তু হারামকে হালাল, গান-বাদ্যে লিপ্ত হওয়া, মদ পান করা, সুদ খাওয়া ও রেশমের পোষাক পরার কারণে সকালে তারা বানর ও শূকরে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমাদ: ৩৭/৪৫২, হা. নং ২২৭৯০, প্র. মুআসাসাসাতুর রিসালা, বৈরুত)

৭. বসরা শহর ব্যাপক গজব ও ধ্বংসের শিকার হবে।
যেমন সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ: يَا أَنَسُ، إِنَّ النَّاسَ يُمَصِّرُونَ أَمْصَارًا، وَإِنَّ مِصْرًا مِنْهَا يُقَالُ لَهُ: الْبَصْرَةُ – أَوِ الْبُصَيْرَةُ – فَإِنْ أَنْتَ مَرَرْتَ بِهَا، أَوْ دَخَلْتَهَا، فَإِيَّاكَ وَسِبَاخَهَا، وَكِلَاءَهَا، وَسُوقَهَا، وَبَابَ أُمَرَائِهَا، وَعَلَيْكَ بِضَوَاحِيهَا، فَإِنَّهُ يَكُونُ بِهَا خَسْفٌ وَقَذْفٌ وَرَجْفٌ، وَقَوْمٌ يَبِيتُونَ يُصْبِحُونَ قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ.
অর্থাৎ আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, হে আনাস, মানুষ বিভিন্ন শহরে বসবাস করবে। তন্মধ্য হতে একটি শহরের নাম হবে বসরা বা বুসাইরা। তুমি যদি ঐ শহরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করো কিংবা কোথাও প্রবেশ করো তাহলে তার লবণাক্ত অঞ্চল, কাল্লা নামক স্থান, তার বাজার ও নেতৃত্বস্থানীয় লোকদের ঘর থেকে দূরে থাকবে। তুমি ঐ এলাকার জঙ্গল বা পাহাড়ে চলে যাবে। কেননা, এ অঞ্চলে ভূমিধস, পাথর বর্ষণ ও প্রচণ্ড ভূমিকম্প হবে। আর একদল লোক রাতের বেলা ঘুমিয়ে থাকবে, কিন্তু সকালে তারা বানর ও শূকরে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। (সুনানে আবু দাউদ: ৪/১১৩, হা. নং ৪৩০৭, প্র. আল মাকতাবাতুল আসরিয়্যা, বৈরুত)

৮. ফুরাত নদীর তীরে স্বর্ণের পাহাড় ভেসে উঠবে এবং তা দখল করতে গিয়ে ৯৯% লোক মারা যাবে।
যেমন সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَحْسِرَ الْفُرَاتُ عَنْ جَبَلٍ مِنْ ذَهَبٍ، يَقْتَتِلُ النَّاسُ عَلَيْهِ، فَيُقْتَلُ مِنْ كُلِّ مِائَةٍ، تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ، وَيَقُولُ كُلُّ رَجُلٍ مِنْهُمْ: لَعَلِّي أَكُونُ أَنَا الَّذِي أَنْجُو.
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত হবে না; যতক্ষণ না ফোরাত নদীর তীরে স্বর্ণের পাহাড় ভেসে উঠবে। লোকেরা তা নিয়ে যুদ্ধ শুরু করবে, যদ্দরুন প্রত্যেক একশজনের মধ্যে নিরানব্বইজনই নিহত হবে। তাদের প্রত্যেকে বলবে, সম্ভবত আমিই (নিহত হওয়া থেকে) বেঁচে যাব। (সহিহ মুসলিম: ৪/২২১৯, হা. নং ২৮৯৪, প্র. দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)

৯. সত্যিকারের ইমানদার লোকেরা সমাজে অপরিচিত হয়ে যাবে, সংখ্যায় একেবারে কমে যাবে। শেষ পর্যন্ত শুধু মক্কা-মদিনাতেই ইসলাম বাকি থাকবে।
যেমন সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: بَدَأَ الْإِسْلَامُ غَرِيبًا، وَسَيَعُودُ كَمَا بَدَأَ غَرِيبًا، فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ.
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলাম অপরিচিত অবস্থায় শুরু হয়েছিল, আর শীঘ্রই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। সুতরাং সুসংবাদ অপরিচিতদের জন্য। (সহিহ মুসলিম: ১/১৩০,হা. নং ১৪৫, প্র. দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)
সহিহ মুসলিমে এর পরের বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ الْإِسْلَامَ بَدَأَ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ غَرِيبًا كَمَا بَدَأَ، وَهُوَ يَأْرِزُ بَيْنَ الْمَسْجِدَيْنِ، كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ فِي جُحْرِهَا.
অর্থাৎ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলাম অপরিচিত অবস্থায় শুরু হয়েছিলো, আর শীঘ্রই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। আর তা অবস্থান করবে মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববির মাঝে; যেভাবে সাপ তার গর্তে আশ্রয় নেয়। (সহিহ মুসলিম: ১/১৩১, হা. নং ১৪৬, প্র. দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)

১০. ভারতবর্ষে হিন্দুদের সাথে মুসলিমদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হবে, যা গাজওয়ায়ে হিন্দ নামে পরিচিত।
যেমন সুনানে নাসায়িতে বর্ণিত হয়েছে-
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَعِيلَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَزِيدُ، قَالَ: أَنْبَأَنَا هُشَيْمٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا سَيَّارٌ أَبُو الْحَكَمِ، عَنْ جَبْرِ بْنِ عَبِيدَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: وَعَدَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزْوَةَ الْهِنْدِ، فَإِنْ أَدْرَكْتُهَا أُنْفِقْ فِيهَا نَفْسِي وَمَالِي، وَإِنْ قُتِلْتُ كُنْتُ أَفْضَلَ الشُّهَدَاءِ، وَإِنْ رَجَعْتُ فَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ.
অর্থ: হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হিন্দুস্তান তথা ভারতের জিহাদ সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদি আমি সে জিহাদ পেয়ে যাই তাহলে আমি আমার জানমাল সবকিছু তাতে ব্যয় করব। এতে যদি আমি শাহাদাত বরণ করি তাহলে আমি হব সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদ। আর যদি গাজি হয়ে ফিরে আসি তাহলে আমি হব (জাহান্নামের আগুন থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরাইরা। (সুনানে নাসায়ি: ৬/৪২, হা. নং ৩১৭৪, প্র. মাকতাবুল মাতবুআতিল ইসলামিয়্যা, হালব)
নুআইম বিন হাম্মাদ রহ. এর আল ফিতানে বর্ণিত হয়েছে-
حَدَّثَنَا بَقِيَّةُ بْنُ الْوَلِيدِ، عَنْ صَفْوَانَ، عَنْ بَعْضِ الْمَشْيَخَةِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَذَكَرَ الْهِنْدَ، فَقَالَ: لَيَغْزُوَنَّ الْهِنْدَ لَكُمْ جَيْشٌ، يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ حَتَّى يَأْتُوا بِمُلُوكِهِمْ مُغَلَّلِينَ بِالسَّلَاسِلِ، يَغْفِرُ اللَّهُ ذُنُوبَهُمْ، فَيَنْصَرِفُونَ حِينَ يَنْصَرِفُونَ فَيَجِدُونَ ابْنَ مَرْيَمَ بِالشَّامِ. قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: إِنْ أَنَا أَدْرَكْتُ تِلْكَ الْغَزْوَةَ بِعْتُ كُلَّ طَارِفٍ لِي وَتَالِدٍ وَغَزَوْتُهَا، فَإِذَا فَتْحَ اللَّهُ عَلَيْنَا وَانْصَرَفْنَا فَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرِّرُ، يَقْدَمُ الشَّامَ فَيَجِدُ فِيهَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ، فَلَأَحْرِصَنَّ أَنْ أَدْنُوَ مِنْهُ فَأُخْبِرُهُ أَنِّي قَدْ صَحِبْتُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: فَتَبَسَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَضَحِكَ، ثُمَّ قَالَ: هَيْهَاتَ هَيْهَاتَ.
অর্থ: আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিন্দুস্তানের যুদ্ধের আলোচনার প্রাক্কালে বলেছেন, অবশ্যই তোমাদের একটি দল হিন্দুস্থানে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ সেই দলের যোদ্ধাদের সফলতা দান করবেন এবং তারা হিন্দুস্তানের রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে শিকল দিয়ে টেনে আনবে। আল্লাহ তাআলা সেই দলের যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর মুসলিমরা যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ইসা ইবনে মারইয়াম আ.-কে সিরিয়ায় পেয়ে যাবে। আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি যদি গাজওয়াতুল হিন্দে অংশগ্রহণের সুযোগ পাই তাহলে আমি আমার নতুন পুরাতন সকল সম্পদ বিক্রি করে এতে অংশগ্রহণ করব। এরপর যখন আল্লাহ তাআলা আমাদের বিজয় দান করবেন এবং আমরা যুদ্ধ থেকে ফিরে আসব তখন আমি হব (জাহান্নামের আগুন হতে) মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরাইরা, যে সিরিয়ায় গিয়ে ইসা ইবনে মারইয়াম আ.-এর সাথে মিলিত হবে। হে আল্লাহর রাসুল, আমার খুব আকাঙ্খা যে, আমি ইসা আ.-এর নিকটবর্তী হয়ে তাঁকে বলব, আমি আপনার সংশ্রবপ্রাপ্ত একজন সাহাবি। তিনি বলেন, অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন। এরপর বললেন, সে (যুদ্ধ) অনেক দেরি, অনেক দেরি! (আল ফিতান নুআঈম বিন হাম্মাদ: ১/৪০৯, হা. নং ১২৩৬, প্র. মাকতাবাতুত তাওহিদ, কায়রো)

১১. বাইতুল মাকদিস তথা জেরুজালেম মুসলমানদের দখলে আসবে।
যেমন সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: عُمْرَانُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ خَرَابُ يَثْرِبَ، وَخَرَابُ يَثْرِبَ خُرُوجُ الْمَلْحَمَةِ، وَخُرُوجُ الْمَلْحَمَةِ فَتْحُ قُسْطَنْطِينِيَّةَ، وَفَتْحُ الْقُسْطَنْطِينِيَّةِ خُرُوجُ الدَّجَّالِ، ثُمَّ ضَرَبَ بِيَدِهِ عَلَى فَخِذِ الَّذِي حَدَّثَهُ، أَوْ مَنْكِبِهِ ثُمَّ قَالَ: إِنَّ هَذَا لَحَقٌّ كَمَا أَنَّكَ هَاهُنَا، أَوْ كَمَا أَنَّكَ قَاعِدٌ، يَعْنِي مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ.
অর্থাৎ মুআজ বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বাইতুল মাকদিস (জেরুজালেম) আবাদ তথা বিজয় হওয়া মদিনার বিপর্যয়ের কারণ। আর মদিনার বিপর্যয় যুদ্ধ-বিগ্রহ শুরু হওয়ার কারণ। আর যুদ্ধ শুরু হওয়া কুসতুনতিয়া তথা ইস্তাম্বুল বিজয়ের কারণ। আর ইস্তাস্বুল বিজয় দাজ্জাল বের হওয়ার কারণ। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআজ রা. এর উরুতে বা কাঁধে নিজের হাত দ্বারা মৃদু আঘাত করে বললেন, নিশ্চয় এটা সত্য; যেমন সত্য তুমি এখানে উপস্থিত বা যেমন তুমি এখানে বসে আছ। (সুনানে আবু দাউদ: ৪/১১০, হা. নং ৪২৯৪, প্র. আল মাকতাবাতুল আসরিয়্যা, বৈরুত)

১২. মুসলিম ও খ্রিষ্টানরা পরস্পরে জোটবদ্ধ হয়ে শত্রুদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করবে। যুদ্ধে জোটশক্তি বিজয়ী হওয়ার পর খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের সাথে গাদ্দারি করে নয় লক্ষ ষাট হাজার সৈন্য জমা করে তাদেরকে শহিদ করে দিবে।
যেমন সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَسَّانَ بْنِ عَطِيَّةَ، قَالَ: مَالَ مَكْحُولٌ وَابْنُ أَبِي زَكَرِيَّا، إِلَى خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ وَمِلْتُ مَعَهُمْ، فَحَدَّثَنَا عَنْ جُبَيْرِ بْنِ نُفَيْرٍ، عَنِ الهُدْنَةِ، قَالَ: قَالَ جُبَيْرٌ: انْطَلِقْ بِنَا إِلَى ذِي مِخْبَرٍ، رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَأَتَيْنَاهُ فَسَأَلَهُ جُبَيْرٌ عَنِ الهُدْنَةِ، فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: سَتُصَالِحُونَ الرُّومَ صُلْحًا آمِنًا، فَتَغْزُونَ أَنْتُمْ وَهُمْ عَدُوًّا مِنْ وَرَائِكُمْ، فَتُنْصَرُونَ، وَتَغْنَمُونَ، وَتَسْلَمُونَ، ثُمَّ تَرْجِعُونَ حَتَّى تَنْزِلُوا بِمَرْجٍ ذِي تُلُولٍ، فَيَرْفَعُ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ النَّصْرَانِيَّةِ الصَّلِيبَ، فَيَقُولُ: غَلَبَ الصَّلِيبُ، فَيَغْضَبُ رَجُلٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ، فَيَدُقُّهُ، فَعِنْدَ ذَلِكَ تَغْدِرُ الرُّومُ، وَتَجْمَعُ لِلْمَلْحَمَةِ.
অর্থাৎ হাসসান বিন আতিয়্যা রহ. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাকহুল রহ. ও ইবনে আবু জাকারিয়া রহ. দুজনে খালিদ বিন মাদান রহ.-এর নিকট যেতে রওয়ানা হলে আমিও তাদের সঙ্গে গেলাম। তিনি জুবায়র বিন নুফাইর রহ. সূত্রে আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করলেন সন্ধি সম্পর্কে। তিনি বলেন, জুবায়র রহ. বললেন, আপনি আমাদের সঙ্গে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবি জু-মিখবার রা. এর নিকট চলুন। সুতরাং আমরা তার নিকট উপস্থিত হলে জুবাইর রহ. তাকে সন্ধি সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, অচিরেই তোমরা রোমানদের সঙ্গে সন্ধি করবে। অতঃপর তোমরা ও তারা একত্র হয়ে তোমাদের পশ্চাৎবর্তী একদল শত্রুর মোকাবিলা করবে। তোমরা তাতে বিজয়ী হবে, গনিমত অর্জন করবে এবং নিরাপদে ফিরে আসবে। শেষে তোমরা টিলাযুক্ত একটি মাঠে যাত্রাবিরতি করবে। অতঃপর খৃষ্টানদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি ক্রুশ উপরে উত্তোলন করে বলবে, ক্রুশ বিজয়ী হয়েছে। এতে মুসলিমদের মধ্যকার এক ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে তাকে হত্যা করবে। তখন রোমানরা চুক্তি ভঙ্গ করবে এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিবে। (সুনানে আবু দাউদ: ৪/১০৯, হা. নং ৪২৯২, প্র. আল মাকতাবাতুল আসরিয়্যা, বৈরুত)
এরপরের বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَسَّانَ بْنِ عَطِيَّةَ، بِهَذَا الْحَدِيثِ، وَزَادَ فِيهِ: وَيَثُورُ الْمُسْلِمُونَ إِلَى أَسْلِحَتِهِمْ، فَيَقْتَتِلُونَ، فَيُكْرِمُ اللَّهُ تِلْكَ الْعِصَابَةَ بِالشَّهَادَةِ.
অর্থাৎ হাসসান বিন আতিয়্যা রহ. থেকে এই সনদে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। তাতে অতিরিক্ত এসেছে যে, মুসলিমরা রাগান্বিত হয়ে তাদের অস্ত্র তুলে নিবে এবং যুদ্ধে লিপ্ত হবে। আল্লাহ এই দলকে শহীদি মৃত্যু দিয়ে সম্মানিত করবেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৪/১১০, হা. নং ৪২৯৩, প্র. আল মাকতাবাতুল আসরিয়্যা, বৈরুত)
সুনানে ইবনে মাজাহতে বর্ণিত হয়েছে-
حَدَّثَنِي عَوْفُ بْنُ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيُّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تَكُونُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ بَنِي الْأَصْفَرِ هُدْنَةٌ، فَيَغْدِرُونَ بِكُمْ، فَيَسِيرُونَ إِلَيْكُمْ فِي ثَمَانِينَ غَايَةً، تَحْتَ كُلِّ غَايَةٍ اثْنَا عَشَرَ أَلْفًا.
অর্থাৎ আউফ বিন মালেক রা. বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের ও হলুদ বর্ণের জাতি তথা রোমকদের মাঝে একটি চুক্তি হবে। অতঃপর তারা তোমাদের সাথে গাদ্দারি করবে এবং তোমাদের বিরূদ্ধে আশিটি পতাকা তথা রাষ্ট্র নিয়ে আসবে। প্রত্যেক পতাকার অধীনে বারো হাজার করে সৈন্য থাকবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩/১৩৭১, হা. নং ৪০৯৬, প্র. দারু ইহইয়াইল কুতুবির আরাবিয়্যি)

১৩. ‍সিরিয়ার দাবেক বা আমাক অঞ্চলে খ্রিষ্টান সৈন্যরা ঘাঁটি গাড়বে। মুসলমানরা তাদের সাথে যুদ্ধ করে তাদেরকে পরাজিত করবে।
যেমন সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَنْزِلَ الرُّومُ بِالْأَعْمَاقِ أَوْ بِدَابِقٍ، فَيَخْرُجُ إِلَيْهِمْ جَيْشٌ مِنَ الْمَدِينَةِ، مِنْ خِيَارِ أَهْلِ الْأَرْضِ يَوْمَئِذٍ، فَإِذَا تَصَافُّوا، قَالَتِ الرُّومُ: خَلُّوا بَيْنَنَا وَبَيْنَ الَّذِينَ سَبَوْا مِنَّا نُقَاتِلْهُمْ، فَيَقُولُ الْمُسْلِمُونَ: لَا، وَاللهِ لَا نُخَلِّي بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ إِخْوَانِنَا، فَيُقَاتِلُونَهُمْ، فَيَنْهَزِمُ ثُلُثٌ لَا يَتُوبُ اللهُ عَلَيْهِمْ أَبَدًا، وَيُقْتَلُ ثُلُثُهُمْ، أَفْضَلُ الشُّهَدَاءِ عِنْدَ اللهِ، وَيَفْتَتِحُ الثُّلُثُ، لَا يُفْتَنُونَ أَبَدًا فَيَفْتَتِحُونَ قُسْطَنْطِينِيَّةَ، فَبَيْنَمَا هُمْ يَقْتَسِمُونَ الْغَنَائِمَ، قَدْ عَلَّقُوا سُيُوفَهُمْ بِالزَّيْتُونِ، إِذْ صَاحَ فِيهِمِ الشَّيْطَانُ: إِنَّ الْمَسِيحَ قَدْ خَلَفَكُمْ فِي أَهْلِيكُمْ، فَيَخْرُجُونَ، وَذَلِكَ بَاطِلٌ، فَإِذَا جَاءُوا الشَّأْمَ خَرَجَ، فَبَيْنَمَا هُمْ يُعِدُّونَ لِلْقِتَالِ، يُسَوُّونَ الصُّفُوفَ، إِذْ أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ، فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَمَّهُمْ، فَإِذَا رَآهُ عَدُوُّ اللهِ، ذَابَ كَمَا يَذُوبُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ، فَلَوْ تَرَكَهُ لَانْذَابَ حَتَّى يَهْلِكَ، وَلَكِنْ يَقْتُلُهُ اللهُ بِيَدِهِ، فَيُرِيهِمْ دَمَهُ فِي حَرْبَتِهِ.
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ততোক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত হবে না; যতক্ষণ না রোমকরা (তথা ইউরোপের খ্রিষ্টানরা) আমাক বা দাবেক নামক অঞ্চলে তাঁবু ফেলে। এরপর মদীনা থেকে একদল সৈন্য তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বের হবে, যারা হবে তৎকালীন সময়ের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা। যখন উভয় দল মুখোমুখি হবে তখন রোমকরা মুসলমানদেরকে বলবে, যারা আমাদের লোকদেরকে বন্দী করে রেখেছে তাদের মাঝে এবং আমাদের মাঝে রাস্তা খালী করে দাও; আমরা শুধু তাদের সাথে যুদ্ধ করব। তখন মুসলমানরা বলবে, না, আল্লাহর শপথ! আমরা তোমাদের ও আমাদের ভাইদের মাঝে রাস্তা খালী করব না।

অতঃপর তারা তাদের সাথে যুদ্ধ শুরু করবে। যুদ্ধে মুসলমানদের এক তৃতীয়াংশ পলায়ন করবে। আল্লাহ তাদের তাওবা কখনো কবুল করবেন না। এক তৃতীয়াংশ শহীদ হবে। আর তাঁরা হবে আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম শহীদদের অন্তর্গত। আর এ তৃতীয়াংশ বিজয় লাভ করবে। তারা কখনো ফেতনায় পতিত হবে না। এরপর তারা ইস্তাম্বুল বিজয় করবে। বিজয় লাভের পর সবাই যাইতুন গাছে তলোয়ার ঝুলিয়ে গনীমত বন্টন করতে থাকবে। ইতিমধ্যে শয়তান চিৎকার করে বলবে, দাজ্জাল বের হয়ে তোমাদের পরিবারের নিকট পৌঁছে গেছে। শুনে তারা সবাই এসে দেখবে সংবাদ মিথ্যা ছিলো। এরপর তারা সিরিয়াতে পৌঁছতেই দাজ্জাল বের হয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম: ৪/২২২১, হা. নং ২৮৯৭, প্র. দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)

১৪. ব্যবসা-বানিজ্য এত বেশি বিস্তার ও গুরুত্ব লাভ করবে যে, ভালোভাবে হিসাব-কিতাব করার জন্য শিক্ষিত লোক পাওয়া যাবে না।
যেমন সুনানে নাসায়িতে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ عَمْرِو بْنِ تَغْلِبَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَفْشُوَ الْمَالُ وَيَكْثُرَ، وَتَفْشُوَ التِّجَارَةُ، وَيَظْهَرَ الْعِلْمُ، وَيَبِيعَ الرَّجُلُ الْبَيْعَ فَيَقُولَ: لَا حَتَّى أَسْتَأْمِرَ تَاجِرَ بَنِي فُلَانٍ، وَيُلْتَمَسَ فِي الْحَيِّ الْعَظِيمِ الْكَاتِبُ فَلَا يُوجَدُ.
অর্থাৎ আমর বিন তাগলীব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের আলামতের মধ্য হতে অন্যতম হলো ধন-সম্পদের প্রসার ঘটে তাতে প্রচুর্যতা আসবে, বানিজ্য বিস্তার লাভ করবে, ইলম উঠে যাবে, মানুষ কোনো পণ্য বিক্রি করে বলবে, অমুক গোত্রের বাবসায়ীর সাথে পরামর্শ না করে আমি এটা বিক্রি করব না। বড় একটি এলাকায় ভালোভাবে হিসাব-কিতাবকারী একজন লোক পর্যন্ত পাওয়া যাবে না। (সুনানে নাসায়ি: ৭/২৪৪, হা. নং ৪৪৫৬, প্র. মাকতাবুল মাতবুআতিল ইসলামিয়্যা, হালব)

১৫. আরবে পুনরায় মূর্তিপূজা শুরু হবে।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে-
قَالَ: قَالَ سَعِيدُ بْنُ المُسَيِّبِ، أَخْبَرَنِي أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَضْطَرِبَ أَلَيَاتُ نِسَاءِ دَوْسٍ عَلَى ذِي الخَلَصَةِ. وَذُو الخَلَصَةِ طَاغِيَةُ دَوْسٍ الَّتِي كَانُوا يَعْبُدُونَ فِي الجَاهِلِيَّةِ.
অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ততোক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত হবে না; যতক্ষণ না দাউস বংশের মহিলারা যুল খাসালার মূর্তিগৃহে যাবে। যুল খাসালা হলো দাউস বংশের মূর্তির নাম, জাহেলী যুগে তারা যার পূজা করতো। (সহিহ বুখারি: ৯/৫৮, হা. নং ৭১১৬, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, বৈরুত)

১৬. ইমাম মাহদির আবির্ভাব হবে।
যেমন সুনানে তিরমিজিতে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لاَ تَذْهَبُ الدُّنْيَا حَتَّى يَمْلِكَ العَرَبَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يُوَاطِئُ اسْمُهُ اسْمِي.
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ততোক্ষণ পর্যন্ত দুনিয়া ধ্বংস হবে না; যতক্ষণ না আমার বংশের এক ব্যক্তি আরবের রাষ্ট্রপ্রধান হবে। তাঁর নাম আমার নামের মতোই হবে। (সুনানে তিরমিজি: ৪/৭৫, হা. নং ২৩৩০, প্র. দারুল গারবিল ইসলামি, বৈরুত)
সুনানে আবু দাঊদে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْمَهْدِيُّ مِنِّي، أَجْلَى الْجَبْهَةِ، أَقْنَى الْأَنْفِ، يَمْلَأُ الْأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلًا، كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا وَظُلْمًا، يَمْلِكُ سَبْعَ سِنِينَ.
অর্থাৎ আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মাহদি আমার বংশের হবে। তাঁর কপাল প্রশস্ত হবে, নাক চওড়া হবে। সে পৃথিবীকে ন্যায় ও ইনসাফে ভরে দিবে, যেমন পূর্বে তা যুলম ও অত্যাচারে পূর্ণ ছিলো। সে সাত বছর পর্যন্ত রাজত্ব করবে। (সুনানে আবু দাউদ: ৪/১০৭, হা. নং ৪২৮৫ প্র. আল মাকতাবাতুল আসরিয়্যা, বৈরুত)

কেয়ামতের বড় আলামতগুলো

এতক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামতের ছোট ছোট আলামত নিয়ে আলোচনা করা হলো। এখন আমরা কেয়ামতের বড় বড় আলামত নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
উলামায়ে কিরাম বলেন, কেয়ামতের বড় আলামত দশটি, যা সহিহ মুসলিমে হুজাইফা রা. এর বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে। হাদিসটি হলো-
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ أَسِيدٍ الْغِفَارِيِّ، قَالَ: اطَّلَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْنَا وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ، فَقَالَ: مَا تَذَاكَرُونَ؟ قَالُوا: نَذْكُرُ السَّاعَةَ، قَالَ: إِنَّهَا لَنْ تَقُومَ حَتَّى تَرَوْنَ قَبْلَهَا عَشْرَ آيَاتٍ – فَذَكَرَ – الدُّخَانَ، وَالدَّجَّالَ، وَالدَّابَّةَ، وَطُلُوعَ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا، وَنُزُولَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَيَأَجُوجَ وَمَأْجُوجَ، وَثَلَاثَةَ خُسُوفٍ: خَسْفٌ بِالْمَشْرِقِ، وَخَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ، وَخَسْفٌ بِجَزِيرَةِ الْعَرَبِ، وَآخِرُ ذَلِكَ نَارٌ تَخْرُجُ مِنَ الْيَمَنِ، تَطْرُدُ النَّاسَ إِلَى مَحْشَرِهِمْ.
অর্থাৎ হুজাইফা বিন আসিদ গিফারি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা পরস্পর আলোচনা করছিলাম, ইতিমধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিকট তাশরীফ আনলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কী বিষয় নিযে আলোচনা করছিলে? তাঁরা বললো, আমরা কেয়ামতের ব্যাপারে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, কেয়ামত ততোক্ষণ পর্যন্ত সংঘটিত হবে না; যতক্ষণ না এর পূর্বে তোমরা দশটি নিদর্শন দেখতে পাবে। অতঃপর উল্লেখ করলেন, ধোঁয়া, দাজ্জাল, দাব্বাতুল আরদ, পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, ইসা আ. এর অবতরণ, ইয়াজুয মাজুযের আবির্ভাব, তিনটি ভূমিধস; একটি পূর্বাঞ্চলে, একটি পশ্চিমাঞ্চলে এবং একটি আরব উপদ্বীপে আর সর্বশেষ আলামত হলো আগুন, যা ইয়ামান থেকে বের হবে এবং লোকদেরকে হাশরের ময়দানের দিকে নিয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম: ৪/২২২৫ হা. নং ২৯০১, প্র. দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)

এটাই ছিল কেয়ামতের আলামতসমূহের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। এ থেকে মুসলমানদের সতর্ক ও সজাগ হওয়া দরকার। মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করা দরকার। এমন যেন না হয় যে, আমার উদাসীনতায় হঠাৎ মৃত্যু এসে আমাকে নিয়ে গেল! সদা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকি। আল্লাহ আমাদের সে তাওফিক দান করুন।

মহানবীর (সা.) সময়ে বাংলাদেশে নির্মিত হয় মসজিদ।

মহানবীর (সা.) সময়ে বাংলাদেশে নির্মিত মসজিদ।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর সময়ে লালমনিরহাট জেলায় মসজিদ নির্মাণ হয়েছিল বলে তথ্য রয়েছে। লালমনিরহাট জেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস গ্রামের ‘মজেদের আড়া’ নামক জঙ্গলে ১৯৮৭ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল প্রাচীন একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ।

ইসলামিক লেখক মতিউর রহমান বসনীয়া রচিত ‘রংপুরে দ্বিনী দাওয়াত’ বইয়ে এ মসজিদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, লালমনিরহাট জেলার এ প্রাচীন মসজিদ ও এর শিলালিপি দেখে আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি যে, বখতিয়ার খলজীর বাংলা বিজয়ের (১২০৪ খ্রি.) ৬০০ বছর আগেই বাংলা অঞ্চলে সাহাবি (রা.) দ্বারা ইসলামের আবির্ভাব হয়েছিল।

ধারণা করা হয়, মহানবীর (সা.) জন্মগ্রহণের ৫০ বছর পরেই বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব হয়। লালমনিরহাট জেলায় আনুমানিক ৬২০ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছিল।

লালমনিরহাটে মসজিদটির যে ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে- এতে কালেমা তায়্যিবা ও ৬৯ হিজরি লেখা রয়েছে।

হিজরি ৬৯ অর্থ হলো ৬৯০ খ্রিস্টাব্দ। রংপুর জেলার ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রাসূলের (সা.) মামা বিবি আমেনার চাচাতো ভাই আবু ওয়াক্কাস (রা.) ৬২০ থেকে ৬২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করেন (পৃ. ১২৬)।


তাকদির বনাম স্বাধীন ইচ্ছা – স্রষ্টা কি এখানে বিতর্কিত ?


অনুমান করা হয় যে, ৬৯০ খ্রিস্টাব্দের মসজিদটি আবু ওয়াক্কাস (রা.) নির্মাণ করেন। বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ও প্রাচীন এই মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণে ২১ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১০ ফুট। মসজিদের ভেতরের পুরুত্ব সাড়ে ৪ ফুট।

মসজিদে চার কোণে অষ্টকোণবিশিষ্ট স্তম্ভ রয়েছে। মসজিদের ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া যায় গম্বুজ ও মিনারের চূড়া (রংপুর জেলার ইতিহাস, পৃ. ১৬৪)।

বাংলাদেশে ঐতিহ্যবাহী মসজিদ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যম আল-জাজিরা সংবাদ প্রকাশ করে। #আল-জাজিরার প্রচারিত ভিডিওটি নিচে দেয়া হল।

রাসুল(ﷺ) এর ‘মিলাদ’ পালনের আদৌ কোন সুন্নাতসম্মত উপায় আছে কি?

আচ্ছা ধরুন, পরীক্ষায় আপনাকে ধান নিয়ে রচনা লিখতে দিল। ধান আপনার দৃষ্টিতে খুব সাধারণ একটা জিনিস। আপনি যদি ধানের বদলে খুব সুন্দর করে বাড়িয়ে বাড়িয়ে সাহিত্যিক ভাষা প্রয়োগ করে কাঁশফুল নিয়ে রচনা লেখেন, তাহলে আপনাকে কি ঐ রচনায় কোন নাম্বার দেওয়া হবে? নাকি শূণ্য দেওয়া হবে?

ইসলাম একটা পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যাবস্থা। এখানে কী কী করতে হবে তা খুব পরিষ্কারভাবে বলে দেওয়া আছে।কী কী করা নিষেধ, তাও পরিষ্কারভাবে বলা আছে।এরপরও যদি কেউ ইসলামের নাম করে কোন নিষিদ্ধ কাজ করে, তাহলে সে কি আল্লাহর নিকট কোন পূণ্য আশা করতে পারে?

আমাদের দেশসহ উপমহাদেশের মুসলিমদের এক বিরাট অংশ খুব ঘটা করে ১২ই রবিউল আউয়াল নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর জন্মদিন হিসাবে “ঈদে মিলাদুন্নবী” পালন করে থাকে। অথচ নবী(ﷺ) এরও এই ‘ঈদের’(!) কথা জানা ছিল না। শুধু তাই নয়, এই ‘ঈদের’(!) কথা জানা ছিল না সাহাবী, তাবিঈ, তাবে-তাবিঈ কারো।
তাহলে কোত্থেকে এলো এই ‘ঈদ’ ?

ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে বিজয়ী মহান মুজাহিদ সুলতান সালাহুদ্দিন আইউবী(র) (৫৩২-৫৮৯ হিজরী) ইরাকের ‘এরবল’ এলাকার গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন আবু সাঈদ মুযাফফরুদ্দীন কুকুবুরী(৫৮৬-৬৩০ হি.)কে। সর্বপ্রথম মুযাফফরুদ্দীন কুকুবুরী ৬০৪ হিজরীতে[কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে ৬২৫ হিজরীতে] মিলাদের প্রচলন ঘটান। সময়টি ছিল রাসুলের(ﷺ) মৃত্যুর ৫৯৩ বা ৬১৪ বছর পরে। [১]

প্রথম দিকে এইদিনটিতে তারা শুধুমাত্র নবী(ﷺ) এর জন্ম ও জীবনকাহিনী স্মরণ করতেন এবং মানুষজনের খাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। লক্ষ্যনীয় যে প্রথম দিককার সেই মিলাদে কিন্তু আজকের মত নবীর রূহের আগমন কল্পনা করে তার সম্মানে উঠে দাঁড়িয়ে ‘ইয়া নাবী সালামু আলায়কা’ বলা, জিলাপী বিতরণটাইপের ‘মিলাদ মাহফিল’ এমন কিছুই হত না।

ছোট্ট বিদআত আস্তে আস্তে ডালপালা মেলে বিশাল আকার ধারণ করল, একেবারে “ঈদে” পরিনত হল।

বিদআতী সুফীদের দ্বারা আস্তে আস্তে বিভিন্ন শির্কী আকিদাও এর সাথে যুক্ত হল— মিলাদ মাহফিলের সময়ে নাকি নবী(ﷺ) এর রূহ মোবারক সেখানে হাজির হয় [২] নাউযুবিল্লাহ।
এদেশে দু’ধরনের মিলাদ চালু আছে। একটি ক্বিয়াম(দাঁড়ানো)যুক্ত, অন্যটি ক্বিয়াম বিহীন। ক্বিয়ামকারীদের যুক্তি হ’ল, তারা রাসূলের ‘সম্মানে’ উঠে দাঁড়িয়ে থাকেন। এর দ্বারা তাদের ধারণা যদি এই হয় যে, মিলাদের মাহফিলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর রূহ মুবারক হাযির হয়ে থাকে, তবে এই ধারণা সর্বসম্মতভাবে কুফরী।

ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন একটি সুস্পষ্ট বিদ‘আত(নব উদ্ভাবিত আমল)।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
“কোনো ব্যক্তি যদি আমাদের এই দ্বীনের ভেতর এমন কিছু সৃষ্টি করে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।” [৩]

তিনি আরো বলেন,
‘তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হ’তে সাবধান থাক। নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদ‘আত ও প্রত্যেক বিদ‘আতই পথভ্রষ্টতা’। [৪]
জাবির(রা) হতে অন্য বর্ণনায় এসেছে, ﻭَﻛُﻞَّ ﺿَﻼَﻟَﺔٍ ﻓِﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭ
অর্থাৎ: ‘এবং প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম’। [৫]

ইমাম মালিক(র) স্বীয় ছাত্র ইমাম শাফিঈ(র)কে বলেছিলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীদের সময়ে যেসব বিষয় ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত ছিল না, বর্তমান কালেও তা ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত হবে না। যে ব্যক্তি ধর্মের নামে ইসলামে কোন নতুন প্রথা চালু করল, অতঃপর তাকে ভাল কাজ বা ‘বিদ‘আতে হাসানাহ’ বলে রায় দিল, সে ধারণা করে নিল যে, আল্লাহর রাসুল(ﷺ) স্বীয় রিসালাতের দায়িত্ব পালনে খেয়ানত করেছেন’। [৬]

মিলাদ বিদ‘আত হওয়ার ব্যাপারে চার মাযহাবের ঐক্যমত রয়েছে। ‘আল-ক্বওলুল মু‘তামাদ’ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, চার মাযহাবের সেরা বিদ্বানগণ সর্বসম্মতভাবে প্রচলিত মিলাদ অনুষ্ঠান বিদ‘আত হওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। উপমহাদেশের উলামায়ে কিরামের মধ্যে মুজাদ্দিদ আলফে সানী আহমাদ সারহিন্দী(র), আল্লামা হায়াত সিন্ধী(র), রশীদ আহমাদ গাংগুহী(র), আশরাফ আলী থানভী(র), মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী(র), আহমাদ আলী সাহারানপুরী(র) প্রমুখ উলামায়ে কেরাম ছাড়াও আহলে হাদীস আলিমগণ সকলে এক বাক্যে প্রচলিত মিলাদ অনুষ্ঠানকে বিদ‘আত ও গুনাহের কাজ বলেছেন।

অনেকেই মনে করেন যে ১২ই রবিউল আউয়াল বুঝি আসলেই নবী (ﷺ) এর জন্মদিন।এ ব্যাপারে সব থেকে শক্তিশালী মত হচ্ছে— রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মদিবস ৮ই রবিউল আউয়াল সোমবার। ৯ই রবিউল এর মতটিরও প্রসিদ্ধি আছে। ১২ই রবিউল আউয়াল এর মতটি নিতান্তই দুর্বল। ৮ ও ৯ রবিউল আউয়ালের মতগুলোও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত নয়। কিন্তু এটা প্রমাণিত যে ১২ রবিউল আউয়াল রাসুলের(ﷺ) মৃত্যুদিবস। অথচ ১২ রবিউল আউয়াল রাসুলের(ﷺ) মৃত্যুদিবসেই তাঁর জন্মবার্ষিকী বা ‘মিলাদুন্নবী’ অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।

মিলাদ উদযাপনকারীরা বলে থাকেন যে, মিলাদ বিদ‘আত হ’লেও তা ‘’বিদ‘আতে হাসানাহ’’। অতএব জায়েয তো বটেই বরং করলে সওয়াব আছে। কারণ এর মাধ্যমে মানুষকে কিছু বক্তব্য শোনানো যায়। উত্তরে বলা চলে যে, সলাত(নামাজ) আদায় করার সময় পবিত্র দেহ- পোশাক, স্বচ্ছ নিয়ত সবই থাকা সত্ত্বেও সলাতের স্থানটি যদি কবরস্থান হয়, মৃত কবরবাসীর ফায়েজ লাভের জন্য নামায পড়ে, তাহলে সে সলাত কবুলযোগ্য হয় না। কারণ এরূপ স্থানে সলাত আদায় করতে আল্লাহর নবী (ﷺ) নিষেধ করেছেন। রাসূল (ﷺ) -এর স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঐ সলাত আদায়ে কোন ফায়দা হবে না। তেমনি বিদ‘আতী অনুষ্ঠান করে নেকী অর্জনের স্বপ্ন দেখা অসম্ভব। কলসি ভর্তি দুধের মধ্যে অল্প একটু গোবর পড়লে যেমন পানযোগ্য থাকে না, তেমনি সৎ আমলের মধ্যে সামান্য শিরক-বিদ‘আত সমস্ত আমলকে বরবাদ করে দেয়।

হানাফী মাযহাবের কিতাব ‘ফাতাওয়া বাযযারিয়া’তে বলা হয়েছে, ﻣَﻦْ ﻇَﻦَّ ﺃﻥَّ ﺃﺭﻭﺍﺡَ ﺍﻷﻣﻮﺍﺕِ ﺣﺎﺿﺮﺓٌ ﻧَﻌْﻠَﻢُ ﻳَﻜْﻔُﺮُ – ‘যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মৃত ব্যক্তিদের রূহ হাযির হয়ে থাকে, সে ব্যক্তি কাফের’। [৭]

অনুরূপভাবে ‘তুহফাতুল কুযাত’ কিতাবে বলা হয়েছে, ‘’যারা ধারণা করে যে, মিলাদের মজলিসগুলিতে রা্সুলুল্লাহ (ﷺ) -এর রূহ মুবারক হাযির হয়ে থাকে, তাদের এই ধারণা স্পষ্ট শিরক’। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় জীবদ্দশায় তাঁর সম্মানার্থে উঠে দাঁড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ধমকি প্রদান করেছেন। [৮]

অথচ মৃত্যুর পর তাঁরই কাল্পনিক রূহের সম্মানে দাঁড়ানোর উদ্ভট যুক্তি ধোপে টেকে কি?

‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক আমার নামে মিথ্যা হাদিস রটনা করে, সে জাহান্নামে তার ঘর তৈরী করুক’। [৯]

‘‘তোমরা আমাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, যেভাবে খ্রিষ্টানগণ ঈসা(আ) সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করেছে।… বরং তোমরা বল যে, আমি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল।’’ [১০]

মিলাদ উদযাপনকারী ভাইদের মিথ্যা ও জাল হাদীস বর্ণনার দুঃসাহস দেখলে শরীর শিউরে ওঠে। সেখানে এই সব লোকেরা কেউবা জেনে-শুনে, কেউবা অন্যের কাছে শুনে ভিত্তিহীন সব কল্পকথা ওয়াযের নামে মিলাদের মজলিসে চালিয়ে যাচ্ছেন ভাবতেও অবাক লাগে। তারা নবী মুহাম্মাদ(ﷺ)কে নূরের তৈরি বলে মিথ্যাচার করেন। ‘নূরে মুহাম্মাদী’র আকিদা মূলতঃ আহলে কিতাব খ্রিষ্টানদের কিছু ফির্কা [১১] এবং হিন্দুদের অদ্বৈতবাদী ও সর্বেশ্বরবাদী আকিদার নামান্তর। যাদের দৃষ্টিতে স্রষ্টা ও সৃষ্টিতে কোন পার্থক্য নেই। এরা ‘আহাদ’ ও ‘আহমাদের’ মধ্যে ‘মীমের’ পর্দা ছাড়া আর কোন পার্থক্য দেখতে পায় না [নাউযুবিল্লাহ]। তথাকথিত মা‘রেফাতী পীরদের মুরীদ হলে নাকি মিলাদের মজলিসে সরাসরি রাসুল(ﷺ) -এর জীবন্ত চেহারা দেখা যায়। এই সব কুফরী দর্শন ও আকিদা প্রচারের মোক্ষম সুযোগ হল মিলাদের মজলিসগুলো। বর্তমানে সংবাদপত্র, রেডিও, টিভিতেও চলছে যার জয়জয়কার।

আল্লাহ আমাদেরকে এসব থেকে রক্ষা করুন- আমিন!
.
রাসুল(ﷺ) এর ‘মিলাদ’ পালনের আদৌ কোন সুন্নাতসম্মত উপায় আছে কি? এ ব্যাপারে জানার জন্য খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর(র) এর এই বক্তব্যটি দেখা যেতে পারেঃ https://goo.gl/emmdsz
.
.
[১] আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (দারুল ফিকর, ১৯৮৬) পৃঃ ১৩/১৩৭
[২] এই আকিদাটি খ্রিষ্টানদের বাইবেল থেকে ধার করা; দেখুনঃ বাইবেল, মথি(Matthew) ১৮:২০; খ্রিষ্টানরা তাদের নবীর উপর এমন মিথ্যা আরোপ করেছিল
[৩] বুখারী ও মুসলিম, রিয়াদুস সলিহীন, বই ১, বিদ’আত বা দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয়ের প্রচলন নিষিদ্ধ অধ্যায়; হাদিস নং ১৬৯
[৪] আবু দাউদ ৪৬০৭; মিশকাত ১৬৫, সনদ সহীহ
[৫] আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ ১৫৭৯; দুই ঈদ-এর খুৎবা’ অধ্যায়
[৬] আল ইনসাফ, পৃষ্ঠা ৩২
[৭] মিলাদে মুহাম্মাদী পৃঃ ২৫, ২৯
[৮] তিরমিযী, আবু দাউদ; মিশকাত ৪৬৯৯ ‘আদাব’ অধ্যায়
[৯] সহীহ বুখারী, হাদিস ১১০
[১০] সহীহ বুখারী, হাদিস ৩৪৪৫
[১১] ‘Jehovah’s Witness’ বা ‘যিহোবার সাক্ষী’ ফির্কার খ্রিষ্টানরা ঈসা(আ)কে ফেরেশতা মনে করে

প্রচলিত পদ্ধতিতে মুরগী ড্রেসিং করা এবং তার গোশত খাওয়া কি বৈধ ?

বাজারে জবাইকৃত মুরগির পশম ছাড়ানোর জন্য মেশিনে ড্রেসিং করার ব্যবস্থা থাকে। আমাদের দেশে প্রচলিত ড্রেসিংয়ের পদ্ধতি অনেকটা নিম্নরূপ। মুরগী জবাই করে ড্রেসিং মেশিনে দেয়ার আগে মুরগীর পশম নরম করার জন্য পেটের নাড়ি-ভুঁড়িসহ উত্তপ্ত গরম পানিতে চুবানো হয়। সেজন্য দোকানে হাঁড়িতে করে পানি ফুটানো হয়। আর ঐ ফুটন্ত পানির মধ্যে সারাদিনে অন্তত কয়েকশো মুরগী চুবানো হয়। কিন্তু ঐ পানি সাধারণত পরিবর্তন করা হয় না। ফুটানো পানি কমে গেলে ঐ পানির মধ্যে আবার পানি ঢালা হয়।
 
এভাবেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঐ পানিতে একের পর এক মুরগী চুবানোর ফলে পানির রঙ নর্দমার কালো ময়লা পানির রূপ ধারণ করে। এছাড়া যে মুরগীকে গরম পানিতে চুবানো হয় তার গায়ে এবং পায়ে প্রচুর পরিমানে নানা রকম ময়লা, রক্ত ও বিষ্ঠা লেগে থাকে। কিন্তু এসব ময়লার কোনো কিছুই গরম পানিতে চুবানোর আগে পরিস্কার করা হয় না। ফলে এসব ময়লা ফুটন্ত গরম পানিতে মিশার কারণে পানি নাপাক হয়ে যায়।
 
মূলত এসব কারণেই প্রচলিত পদ্ধতিতে মুরগী ড্রেসিং করাকে কেউ কেউ নাজায়েয বা মাকরূহ মনে করে। তাই মেশিনে মুরগী ড্রেসিং করার ক্ষেত্রে পরামর্শ হলো, মুরগী জবাই করার পর তার শরীর ভালো পানি দ্বারা ধুয়ে পরিস্কার করে তারপর গরম পানিতে চুবানো। এভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ মুরগী চুবানোর পর ঐ ময়লা পানি ফেলে দিয়ে আবার নতুন পরিস্কার পানি গরম করবে। দোকানে এমনটি সম্ভব না হলে সেখান থেকে মুরগী ড্রেসিং না করানোই শ্রেয় হবে। এক্ষেত্রে বাসা-বাড়িতে নিজেরা মুরগির পশম হাতে পরিষ্কার করা ভালো হবে।
 
তবে দোকানের ড্রেসিংয়ে উপরোক্ত ত্রুটিগুলো সত্ত্বেও কেউ যদি সেখানে মুরগী ড্রেসিং করায় তবে এতে উক্ত মুরগী খাওয়া হারাম বা মাকরূহ হয়ে যাবে না। বরং তা হালালই থাকবে।
 
কেননা একে তো মুরগির পশম উপড়ানোর জন্য গরম পানিতে তাকে এতো দীর্ঘ সময় রাখা হয় না যে, এর ফলে বাইরের নাপাক পানির প্রভাব গোশতের মধ্যে বিস্তার লাভ করে। তদ্রূপ পাকস্থলীর নাপাকির প্রভাবও গোশতের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না।
 
এ কারণেই এভাবে ড্রেসিং করার পর গোশতের মধ্যে নাপাকির গন্ধ পাওয়া যায় না এবং স্বাদের মধ্যেও পরিবর্তন আসে না। বরং এক্ষেত্রে মুরগির পশম ছাড়ানোর জন্য গরম পানিতে এতো সামান্য সময় রাখা হয়, যাতে শুধু চামড়ার লোমকূপগুলো ঢিলে হয়ে যায়।
 
অবশ্য উক্ত গরম পানি নাপাক থাকে বিধায় লোমকূপের ভেতরেও নাপাক ঢুকে যায়। তাই মুরগী ড্রেসিং করার পর পরিষ্কার পানি দ্বারা তা ভালোভাবে ধুয়ে পাক করে নিতে হবে। এভাবে ধুয়ে রান্না করলে তা খেতে কোনো অসুবিধা নেই। আর সবাই মুরগী রান্না করার আগে গোশত ভালোভাবে ধুয়েই নেয়। ফলে সব ময়লা ও রক্ত এমনিতেই দূর হয়ে যায় এবং তা পবিত্রও হয়ে যায়।
 
তবে দোকানে মুরগী ড্রেসিংয়ের ক্ষেত্রে কেউ কেউ মুরগির পেট কেটে নাড়ি-ভুঁড়ি বের করে গরম পানিতে চুবায়। মনে রাখতে হবে, মুরগির পেট কেটে এধরনের ফুটন্ত নাপাক পানিতে চুবানো বৈধ নয়। কেননা পেট কেটে নাপাক গরম পানিতে মুরগিকে চুবালে গোশতের ভেতরে নাপাক পানির প্রভাব দ্রুত বিস্তার করে। এতে উক্ত মুরগির গোশত খাওয়া মাকরূহ তাহরীমী হয়ে যায়। অতএব দোকানে মুরগী ড্রেসিং করাতে চাইলে পেট না কেটেই গরম পানিতে চুবাতে হবে।
 
[ফাতহুল কাদীর ১/২১১; আল-বাহরুর রায়েক ১/৪১৫; মাজমাউল আনহুর ১/৯১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ ১৬০-১৬১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৩৪; আহসানুল ফাতাওয়া ২/৯৬]

বিশ্বব্যাপী আযানধ্বনি – বিশ্বে প্রতিটি মুহুর্তেই আযানের ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে।

লেখাটা যখন পড়ছিলাম, আমার রবের কসম আমার দু’চোখ দিয়ে অঝোরভাবে অশ্রু ঝরছিল।

বিশ্বব্যাপী আযানধ্বনি ঃ

অনেক আগে, মাসিক জাগো মুজাহিদ না কোন পত্রিকায় যেন, ঠিক মনে পড়ছে না। একটা খবর পড়ে দারুনভাবে আলোড়িত হয়েছিলাম। খবরটা হলো, বিশ্বে প্রতিটি মুহুর্তেই আযানের ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে। কয়দিন আগে একটা লেখায় সেই হিসেবটা পেলাম।

পৃথিবীর মানচিত্রে সবচেয়ে পূর্ব প্রান্তের মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। এ দেশের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে:
= সাবিল, জাভা, সুমাত্রা, বণির্য়া
ফজরের সময়, এই সাবিল শহর থেকে শুরু হয় হাজার হাজার ইন্দোনেশীয় মুয়াজ্জিনের আযান। ফজরের আযানের এই প্রক্রিয়ে ক্রমেই এগিয়ে চলে পশ্চিমের দিকে।

সাবিলের আযান শেষ হওয়ার প্রায় দেড় ঘন্টা পর জাকার্তায় প্রতিধ্বনিত হয় আযানের সুর। এরপরই সুমাত্রায় শুরু হয় আযানের এই পবিত্র প্রক্রিয়া।

ইন্দোনেশিয়ার আযানের ধ্বনি শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয়ে যায় পার্শ্ববর্তী মুসলিম দেশ ম্যালয়েশিয়া থেকে বার্মা জাকার্তায় শুরু হওয়ার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই আযানের সুর পৌচ্ছে যায় #বাংলাদেশের_রাজধানী_ঢাকায়

বাংলাদেশের পর আযানের ধ্বনি চলে পশ্চিম ভারতের দিকে। কলকাতা থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত এবং তারপর এগিয়ে যায় বোম্বের দিকে।

শ্রীনগর এবং শিয়ালকোট (পাকিস্থানের উওরের একটি শহর) শহর দু’টিতে আযানের সময় একই সাথে শুরু হয়। শিয়ালকোট, কোয়েটা এবং করাচির মধ্যে সময়ের পাথর্ক্য চল্লিশ মিনিটের মত।

তাই এ সময়ের মধ্যে সমগ্র পাকিস্থান জুড়ে শোনা যায় আজানের সুর। সেই সুর পাকিস্থানে মিলিয়ে যাবার আগেই আফগানিস্তান আর মাস্কাটে এসে এর ঢেউ লাগে। বাগদাদের সাথে মাস্কাটের সময়ের পার্থক্য এক ঘন্টার।

আযানের আহবান প্রতিধ্বনিত হয়, ‘ হিজায-ই-মুকদ্দাস’ (মক্কা-মদিনার পবিত্র শহরসমূহ), ইয়েমেন, সংযুক্ত আমিরাত, কুয়েত, এবং ইরাকের আকাশে বাতাসে। বাগদাদ এবং মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ার সময়ের পাথক্য ও এক ঘন্টা। তাই এ সময়ের মধ্যে সিরিয়া, মিশর, সোমালিয়া এবং সুদানে চলতে থাকে আযান।

পূর্ব ও পশ্চিম তুরস্কের মধ্যে ব্যবধান দেড় ঘণ্টার, এ সময়ে মাঝে সেখানে নামাজের আহবান শোনা যায়। আলেকজান্দ্রিয়া এবং ত্রিপলি (লিবিয়ার রাজধানী) এক ঘন্টার ব্যবধানে অবস্থিত। একইভাবে আযানের প্রতিধ্বনি সমগ্র আফ্রিকা জুড়ে চলতে থাকে। এর পর আটলান্টিক মহাসাগরের দেশ মরক্কো, মৌরিতানিয়ায় এসে পৌচ্ছে।

পৃথিবীর পূর্ব উপকূলে তাওহীদ এবং রিসালাতের প্রচারের যে ধারা শুরু হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ায় তা এসে আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে পৌছে সাড়ে নয় ঘন্টা পর।

ফজরের আজানের বার্তা আটলান্টিকের উপকূলে পৌঁছাবার পুর্বে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলে যোহরের আযানের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় এবং ঢাকায় এটা পৌঁছানোর পূর্বেই সেখানে শুরু হয়ে যায় আসরের আযান। দেড় ঘন্টার মত সময় পেরিয়ে এ প্রক্রিয়া যখন জাকার্তায় পৌঁছে ততক্ষণে সেখানে মাগরিবের সময় হয়ে যায়, এবং মাগরিবের সময় সুমাত্রায় শেষ না হতেই সাবিলে এশার আযানের আহবান ভেসে আসে।

এক্টু গভীরভাবে চিন্তা করলেই আমাদের চোখে পড়বে আযানের অবাক করা দিকটি, তা হলো-
= পৃথিবীর বুকে প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও হাজার হাজার মুয়াজ্জিনের গলায় উচ্চ স্বরে আযানের সুর ভেসে বেড়ায়। এমনকি আমরা যে মুর্হুতে আমার এই লিখাটা পড়ছে, নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে ঠিক এই মুর্হূতেও এই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও অন্ততঃ হাজার খানেক মানুশ শুনতে পাচ্ছে আযানের সুর, মুয়াজ্জিনদের গলায়, আর এমনি করে সে আহবান ভেসে বেড়াচ্ছে প্রতিটি মুর্হুতে।

আল্লাহু আকবার! আল্লাহু আকবার!
হাইয়া আলাস সালাহ!
হাই আলাল ফালাহ!
এসো কল্যাণের পথে, এরচেয়ে উওম ডাক আর কি হতে পারে।
====================================
লেখক – শায়খ Atik Ullah (বারা-কাল্লাহু ফি ইলমিহি)
কৃতজ্ঞতা Sanjida Mithila (আল্লাহ্‌ পাক উওম নিয়ামত দান করুক)

আজানের সুমধুর ধ্বনি আমাকে ইসলামের পথ দেখিয়েছে – অ্যালান রুনি

জীবনে কখনো কোনো মুসলিমের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়নি স্কটল্যান্ডের পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা শ্বেতাঙ্গ অ্যালান রুনির।

কিন্তু হঠাৎ একদিন তার কানে ভেসে এলো আজানের সুমধুর ধ্বনি। এটা তাকে বিমোহিত করে। এরপর তিনি পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন শুরু করেন। অবশেষে তিনি ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন।

তার ইসলাম গ্রহণের কাহিনী নিয়ে ব্রিটেনের ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকায় এক নিবন্ধ লিখেছেন রুনি।

আসুন তার বয়ানেই শুনি সেই মনোমুগ্ধকর কাহিনী:

‘তুরস্ক ভ্রমণকালে আমি একটি সৈকতে ছিলাম। সে সময় স্থানীয় একটি মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। আমি এটা শুনলাম এবং নিজের ভেতরে নতুন কিছু অনুভব করতে লাগলাম। এটা আমাকের আধ্যাত্মিকতার সন্ধান করতে অনুপ্রাণিত করলো।

দেশে ফিরে আমি স্থানীয় একটি লাইব্রেরিতে গিয়ে পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন শুরু করলাম। অধ্যয়ন করার সময় আমি ঈশ্বরকে বলতাম আমি যে যাত্রা শুরু করেছি তাতে তোমার পথনির্দেশনা চাই।

কোরআন অধ্যয়নের সময় আমি বহুবার প্রার্থনা করেছি।

পবিত্র কোরআন আমাকে বিমোহিত করে। এটা বিস্ময়কর একটি গ্রন্থ যেখানে আমি দেখতে পাই যে আমাদের নিজের সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয়েছে যা আমার মধ্যে নেই। আমি নিজেকে কিছুটা বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেই।

আমি জানতাম আমি যে কোনো সময় কোরআন অধ্যয়ন শেষ বন্ধ করে দিয়ে এই প্রক্রিয়ার সমাপ্তি টানতে পারি। কিন্তু আমি জানতাম এটা করা হলে তা হবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছেড়ে যাওয়া।

এবং আমি জানতাম যে এই প্রক্রিয়ার শেষ হলো আমি একজন মুসলিম হবো। কাজেই আমি অধ্যয়ন অব্যাহত রাখলাম। আমি তিনবার কোরআন অধ্যয়ন করলাম। আমি প্রতিটি বিষয়ে স্বস্তি অনুভব করলাম।

আমি অনলাইনে খোঁজাখুঁজি করে সময় কাটাতে লাগলাম যাতে আমার মত কারো অভিজ্ঞতা হয়েছে কিনা তা জানা। কিন্তু দেখলাম ইসলামের পথে প্রত্যেকের যাত্রাই অতুলনীয়।

এই প্রক্রিয়ায় আমার ১৮ মাস সময় লাগলো। কারো এর চেয়ে বেশি সময় লাগে, কারো লাগে কম সময়। তবে আমি এটা নিজেই করলাম, কারো সহায়তা ছাড়াই। তখন পর্যন্ত আমি কোনো মুসলিমের সাথে সাক্ষাৎ করিনি।

১৮ মাস পরে আমি নিজেকে মুসলিম হিসেবে ভাবতে লাগলাম। আমি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি, রোজা রাখি এবং কোরআনের নির্দেশ অনুসারে পানাহার করি।

পরে আমি দেখতে পাই আমার শহরে ছোট একটি মসজিদ আছে। আমি নিজেই সেখানে গেলাম, দরজায় কড়া নাড়লাম এবং নিজের পরিচয় দিলাম।

তারা প্রথমে আমাকে দেখে বিস্মিত হলো এবং আমাকে তাদের সম্প্রদায়ে স্বাগত জানালো। শুরু থেকেই তারা আমাকে গ্রহণ করলো এবং এখন আমি এই সম্প্রদায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

অবশ্যই, আমার এখনো অনেক কিছু শেখার আছে।

পবিত্র কোরআনের শিক্ষা মানলে আপনি নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারবেন।

আমি এখন একজন শ্বেতাঙ্গ, মধ্যবয়সী স্কটিশ মুসলিম এবং এটা নিয়ে আমি সুখী।’

গত ২৬শে অক্টোবর ব্রিটিশ দৈনিক দা ইন্ডিপেনডেন্টে প্রকাশিত অ্যালান রুনির প্রবন্ধ লিঙ্ক 


ভাষান্তর: ফাতিমা ফেরদৌসী আশা
কার্টেসি : আরটিএনএন

জীবনে ভালো থাকার জন্য যা করতে হবে

জীবন কতনা অদ্ভূত! কখনও কতইনা সুন্দর আর আনন্দময়, আর কখনও কত কষ্টকর! আমাদের জীবনটাই যে এমন! কেউ তো জানিনা আমার যতি চিহ্ন কোথায়… কী নিয়ে দুঃখ করবো আমি? আজ হয়ত আমি অনেক সুখী, যদি আজই চলে যেতে হয় এই জগত ছেড়ে, তবে আমি কি প্রস্তুত যাওয়ার জন্য? আমি যতটুকু সুখে আছি, অনেকেই তো তার চাইতে খারাপ আছেন, তাইনা?

জীবনটাই তো এমন! অনেক পাওয়া আর না পাওয়া দিয়ে ঘেরা… অনেক তৃপ্তি আর অতৃপ্তি মাখানো… তাকে তো আপন করে নিলে চলেনা! তাকে সাথে করে চলতে হতে হয়। এলোমেলো হয়ে গেলেও প্রস্তুত হতে হবে আখিরাতের জন্য… সেটাতে ভুলে গেলে চলবেই না!

একটা কথা শুনেছিলাম :

জীবনে যা ঘটেছে, তা ভালো হয়েছে। যা হচ্ছে, তা-ও ভালো হচ্ছে। আর ভবিষ্যতে যা ঘটবে, তা-ও ভালোই হবে।

ছেলেবেলায় শোনা সেই গল্পের কথা মনে পড়ে গেলোঃ

এক লোক মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখেন তার জুতো জোড়া হারিয়ে গেছে। ভীষণ মন খারাপ করে তিনি পথ চলতে শুরু করলেন খালি পায়ে।
কিছুদূর যাবার পর তিনি দেখলেন একজন ভিক্ষুককে যার দু’টো পা-ই নেই…
তখন তার নিজের জুতো হারাবার দুঃখ ঘুচে গেলো… আমার তো অন্ততঃ দু’টো পা অক্ষত আছে! যাক না দু’জোড়া জুতো…

যা হারিয়ে গেছে আমার, তার চাইতে অনেক বেশি কিছু আমার কাছেই আছে। অনেকের কাছে সেটুকুও তো নেই! এটাই হয়ত আত্মিক শান্তি অর্জনের ভাবনা হওয়া উচিত। আর সেই শান্তির খোজেই তো আমরা ছুটে চলেছি জগতময়! যদি মনেই শান্তি পাওয়া যায়, তবে আর ক্ষতি কী?

আজ কিছু টিপস পেলাম ইন্টারনেটে, কীভাবে ভালো থাকা যায় সে বিষয়ে কিছু কথা, কীভাবে মনটাকে ভালো রাখা যাবে সে বিষয়ে কিছু কথা…

  • নিজেকে কখনও অন্যের সাথে তুলনা করবেন না।
  • নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা থেকে বিরত থাকুন। সবকিছুকে পজেটিভ ভাবে গ্রহন করতে চেষ্টা করুন।
  • নিজেকে নিয়ে এবং কাছের মানুষদেরকে নিয়ে অনর্থক বেশি দুঃচিন্তা করবেন না। মনে রাখবেন, দুঃশ্চিন্তা কখনোই সমস্যার সমাধান করবেনা।
  • নিছক আড্ডা দিয়ে সময়ের অপচয় করবেন না।
  • শত্রুতা এবং অন্যের প্রতি ঘৃণা বজায় রাখবেন না। এতে কেবল দুঃশ্চিন্তা বাড়ে এবং মানসিক শান্তি নষ্ট হয়, যা আপনার স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • নিজের এবং অন্যের অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিন, শিক্ষাকে মনে রাখুন, ভুলকে ভুলে যান। অতীতের ভুল নিয়ে অতিরিক্ত ঘাটাঘাটি করে তিক্ততা বাড়িয়ে বর্তমানের সুন্দর সময়কে নষ্ট করবেন না।
  • মনে রাখবেন, জীবন একটি বিদ্যালয় যেখানে আপনি শিখতে এসেছেন। জীবনের যত সমস্যা তা এই বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত, এ নিয়ে তাই চিন্তা না করে বীজগণিতের মত সমাধানের চেষ্টা করুন।
  • প্রচুর পরিমাণে হাসুন এবং সবসময় হাসিখুশী থাকার অভ্যাস করুন। সেই সাথে অন্যদেরকেও হাসিখুশী রাখতে চেষ্টা করুন।
  • জীবনের সব ক্ষেত্রে জয় লাভ করা অসম্ভব। তাই হার মেনে নিতে প্রস্তুত থাকুন। এটাও আপনার একটা মানসিক বিজয়।
  • অন্যের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করুন।
  • অন্যেরা আপনাকে নিয়ে কি ভাববে তা নিয়ে চিন্তিত হবার কিছু নেই। নিজের কাজ করে যান আত্মবিশ্বাস নিয়ে।
  • সময়ের কাজ সময়ে করুন, কিছুতেই এখনকার কাজ পরে করার জন্যে ফেলে রাখবেন না।
  • যেসব জিনিস চিত্তাকর্ষক ও আকর্ষণীয়, কিন্তু ও উপকারী নয়, তা থেকে দূরে থাকুন।
  • সুসময় বা দুঃসময় যাই হোক না কেন, সবই বদলাবে, এটাই চিরন্তন নিয়ম, তাই কোনো কিছুতেই অতিরিক্ত উৎফুল্ল বা অতিরিক্ত দুঃখিত হবেন না।

অনেক তো শুনলাম… এবার শুধু একটা কথা বলতে চাই… মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলেছেনঃ

তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের সাহায্যে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন। (সূরা বাকারা: ১৫৩)

আর আরেকটা কথা বলেই শেষ করতে চাই আজকের মতন… এটাও পবিত্র কুরআন থেকে নেয়া। আমরা মানুষ। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ চেষ্টার পর আর কিছুই করার থাকেনা আমাদের… হৃদয়ে একটা শূণ্যতা সৃষ্টি হয় চাওয়া-পাওয়া নিয়ে। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সেই জায়গায় কত সুন্দর করে তার অভিভাবকত্বের নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন!

… এতদ্দ্বারা যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। (সূরা তালাক: ২)

এই স্বল্প সময়ের পৃথিবীতে যেন আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে বিদায় নিতে পারি সেই প্রার্থনা আমার সবার জন্য রইলো। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন, সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। সঠিক পথ তো সে-ই পায়, যে তার জন্য স্বপ্ন দেখে, চেষ্টা করে, হৃদয় যার লালায়িত থাকে মুক্তির প্রত্যাশায়……