জীবনের প্রকৃত সফলতা / মুবাশ্বিরাহ্ শর্মা

214
সফলতা

ইসলাম গ্রহণের আগে আমার যত মেয়ে বান্ধবী ছিলো, তাদের বেশিরভাগই ছিলো মুসলিমা, আমার জানামতে তারা অনেকেই ধার্মিক এবং পরহেজগার ছিলো। নিয়মিত নামায আদায় করতো। একদিন আমি নাঈমাকে বললাম আমি খুব টেনশনে আছি, কিছু একটা উপায় দাও যাতে টেনশন কমে, সে মজা করে বললো, তাহাজ্জুদ এর নামায পড়ো! সব ঠিক হয়ে যাবে!

তখন কথাটার মর্মার্থ বুঝিনি, কিন্তু আল্লাহ তা’লার অশেষ রহমতে এখন বুঝতে পেরেছি, যখন মনের মধ্যে হতাশা আর কষ্ট অনুভব করি, তখনই মনে পড়ে তার সেই কথাটা! আর যখন সিজদায় যায়, তখনই মনের সব কষ্ট দূরীভূত হয়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ।

“এর চাইতে বোকামী আর কি হতে পারে? আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েই মনে করি পরকালের সব পুঁজি সঞ্চয় করে ফেলেছি”।

যেখানে অনন্তকাল থাকবো, সেখানকার জন্য মাত্র দুই ঘন্টা সাধনা। আর আজকাল পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে দু’ঘন্টা সময় ও খরচ হয় না। আমরা দশ মিনিটে এশার নামায পড়ে অবসর হয়ে যাই। অথচ ইশার নামাযই হলো সবচেয়ে দীর্ঘ।

চট্টগ্রামের অনেক মসজিদে এখন নারী এবং পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা নামাযের ব্যবস্তা করা হয়েছে, কয়েকদিন আগে আমি আর বান্ধবী নাঈমা বাইরে গিয়েছিলাম কিছু বইপুস্তক কেনার জন্য। নামাযের ওয়াক্ত হওয়াতে তেমনই এক মসজিদে আমি আর নাঈমা নামায পড়তে দুতলায় উঠলাম।

এক মাঝবয়সী আপুকে দেখলাম নামায পড়ছে, তার নামায পড়া দেখে আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছিল। আমি ভাবছিলাম, এ যদি হয় নামাযীর অবস্থা। তাহলে বেনামাযীর অবস্থা কি হবে। দেখলাম আপুটি দেড় মিনিটে চার রাকাত নামায পড়ে ফেলেছে। আমাদের অনেকেরেই অবস্থা এমন, দেড় মিনিটে চার রাকাত নামায পড়ে মনে করি জান্নাত কিনে ফেলেছি।

আমাদের মধ্যে এমন মানুষও আছে, যারা আজ পর্যন্ত ফজরের সময় ঘুম থেকে জেগে দেখেনি। সূর্যদয়ের চার থেকে পাঁচ ঘন্টা পর তাদের ঘুম ভাঙ্গে। জীবনে কখনও তারা ফজরের সিজদা আদায় করার সৌভাগ্য লাভ করেনি। আমাদের মাঝে এমনকত লোক আছে যে, জীবনে একবারও আল্লাহ্কে সিজদা করেনি!!

আমাদের সমাজে এমন কত ঘর আছে যে, ঘরের একজনও পবিএ কোরআন পড়তে শিখেনি!

এমনও কত ঘর আছে, যে ঘরের কেউ নামায সম্পর্কে অবগত নয়। বলুন, এ বাঞ্চনার, এ পতনের কি কোন শেষ আছে? অথচ সকলেরেই আল্লাহর দরবারে যেতে হবে!! কিন্তু এর প্রস্তুতি কোথায়?

মনে রাখতে হবে, এ পৃথিবীতে আমাদের আগমনের লক্ষ্য হচ্ছে রাসূলে আরাবী(সাঃ) -এর আদর্শকে বাস্তবায়ন করা। দুর্ভাগ্যবশত আজ আমরা তার জালানো প্রদীপকে নেভাতে বসেছি। আমরা নিজ হাতে তার রচিত জীবনাদর্শের প্রতিটি ইট তুলে এনে ছুড়ে মারছি!! আমরা এ মুহাম্মদী বাগানের মালি। আমরাই যদি এ বাগান উজার করি, তাহলে বাগান আবাদ হবে কিভাবে।

আসুন জান্নাতের পথে, রাসূলের বাগানকে আবাদ করি। জান্নাতের সন্ধান করি। জান্নাতিই হল আমাদের কাঙ্খিত গন্তব্যস্থল। আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’আলা কোরআনে বলেছেনঃ তাদের প্রতিপালক তাদের পান করাবেন বিশুদ্ধ পানীয়। (সূরা দাহর -২১)

সত্যিকার অর্থে এটাইতো জীবনের সফলতা। আল্লাহ যখন নিজ বান্দাকে পবিএ পানীয় পান করাবেন, সেখানকার পরিবেশেই হবে ভিন্ন। মূলত এই মর্যাদা লাভ করার পথই হলো আমাদের উপর যে তাওহীদ রিসালাত ও আখেরাতের প্রতি মানুষকে আহ্বান করে নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। এপথে চলতে গিয়ে হয়তো নিজেদের আবেগকে বিসর্জন দিতে হবে। বিসর্জন দিতে হবে চোখের সামনে দেখা অনেক স্বার্থকে। তবেই পরকালে পাব আমরা যথাযথ পুরুস্কার।
আল্লাহ তা’আলা কোরআনে বলেছেনঃ স্হায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতিপত্নী ও সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও ফিরেশতাগন তাদের কাছে উপস্থিত হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। (সূরা রাদ-আয়াতঃ২৩)

সম্মানিত ভাই ও বোনেরা আমার—এটা হচ্ছে জীবনের প্রকৃত সফলতা। শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে এটাইতো আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। হয়তো জানিনা আল্লাহ তা’লা হাশরের ময়দানে আমার সাথে কি রকম আচরণ করবেন? সবার কাছে আমার একটাই আবেদন, বেশি বেশি দোয়া করবেন আমার জন্য । জাযাকাল্লাহ খাইরান ।

Facebook Comments