“আমি কিছু একটা হয়ে গেছি!”

কুরআনে একটি আয়াত আমরা প্রায়ই পড়ি। কিন্তু প্রয়োজন অনুপাতে খুব কমই মনোযোগ দেই। সত্যি বলতে, এটি গভীর চিন্তার দাবী রাখে। আয়াতটি হচ্ছে,
“…পা দৃঢ় হওয়ার পর পিছলে যাবে।” [সূরা আন নাহল, ৯৪] 

আল্লাহ্‌ বলেননি ‘পা দূর্বল হওয়ার পর পিছলে যাবে।’ বরং বলছেন ‘দৃঢ় হবার পর’।

দুনিয়ার এই জীবন অসংখ্য পরীক্ষায় ভরপুর। একের পর এক পরীক্ষা আসতেই থাকে। আর আল্লাহ্‌ যদি আমাদের অন্তরকে দৃঢ় না রাখতেন, তাহলে খুব সম্ভব আমাদের ভিতরটা কষ্টে, আঘাতে এমনভাবে দুমড়ে মুচড়ে যেত যে, আমরা নিজেরাই অবাক হয়ে যেতাম! কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই আমাদের পদস্খলন ঘটিয়ে দিতো।

তবে এ ধরনের পদস্খলন ক্রমশই হয় না। তথাপি দ্বীনের ওপর দৃঢ়তা স্রেফ নসিহত শোনা বা পড়ার দ্বারা বজায় থাকে না। বরং তা বজায় থাকে তাৎক্ষণিক আমলে নেবার দ্বারা। এর প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ্‌ বলেন,
“…যা করতে তাদেরকে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা তা করলে তাদের জন্য নিশ্চয়ই কল্যাণকর হত এবং চিত্তস্থিরতায় দৃঢ়তর হত।” [সূরা আন-নিসা, ৬৬]

সালাফদের মতো করে যারা বোঝে না, তাদেরকে তুচ্ছজ্ঞান করবেন না। তেমনি ‘পাপের ওপর অটল’ কারও ওপর আশাও ছেড়ে দেবেন না। অবাক হবেন না সেই বোনকে দেখে, যিনি এখনো ঠিকভাবে হিজাব করে না। আর আপনি যে আল্লাহর প্রশংসা করতে পারছেন, দ্বীনের ওপর আছেন, এগুলো আপনার কৃতিত্ব নয়; বরং আল্লাহর করুণার-ই ফল।

বিশ্বাস হচ্ছে না? বেশি কিছু করতে হবে না, শুধু তাদের কাছে যান, যারা হেদায়াত পাওয়ার পর তা খুইয়ে ফেলেছে, জাহিলিয়াতের জীবনে আবার ফিরে গেছে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন। বুঝতে পারবেন, তারা ফেঁসে গেছে।
আপনি কি জানেন, আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর নবিকেও অনুরূপ বলেছেন?
“আমি তোমাকে অবিচলত না রাখলে তুমি তাদের দিকে কিছুটা প্রায় ঝুঁকে পড়তে।” [সূরা আল ইসরা, ১৭: ৭৪]

হ্যা, আল্লাহর দয়া না থাকলে নবিজীর অন্তরও ভ্রান্তিতে পড়ে যেত। নবিজীর! জ্বী। তাহলে আপনার আমার অবস্থান কোথায়?
.
দ্বীনের পথে আপনার অবিচলতা, প্রত্যহ নিজেকে আরও এগিয়ে নেবার আগ্রহ-উদ্দীপনা—এগুলো কোনোটাই আপনার হাতের কামাই নয়।

‘আমরা কী করব তাহলে? ফিতনার এই যুগে কীভাবে আমরা দ্বীনের ওপর অবিচল থাকব?’
আমি আপনাদেরকে ৫টি উপায় সাজেস্ট করছি। এগুলো দ্বারা আপনি দ্বীনের ওপর অবিচল থাকতে পারবেন ইন শা আল্লাহ:

(১) কুরআন পড়ুন, কুর’আন নিয়ে ভাবুন
আল্লাহ্‌ বলেন, ‘আপনার হৃদয়কে তা দ্বারা মযবুত করার জন্য’ [সূরা আল-ফুরকান, ৩২]

(২) পূর্ববর্তী নেককারদের জীবনী পড়ুন
“রসূলদের ঐ সব বৃত্তান্ত আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি, এর দ্বারা আমি তোমার হৃদয়কে সুদৃঢ় করি।’ [সূরা হুদ, ১২০]

(৩) জানা মাত্রই ইলমের ওপর আমল করুন
“…যা করতে তাদেরকে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা তা করলে তাদের জন্য নিশ্চয়ই কল্যাণকর হত এবং চিত্তস্থিরতায় দৃঢ়তর হত।” [সূরা আন-নিসা, ৬৬]

(৪) বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হোন
“তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখো, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে তাঁর মুখমন্ডল (দর্শন বা সন্তুষ্টি) লাভের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না। আর তুমি তার আনুগত্য করো না, যার হৃদয়কে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি, যে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে ও যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে।” [সূরা আল-কাহাফ, ২৮]

(৫) এবং সবশেষে দুয়ায় লেগে থাকুন
يَا مُقَلِّبَ القُّلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِيْنِكَ
“হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের ওপর অটল রাখুন।”
[আত-তিরমিযী]

— উস্তাদ আলী হাম্মুদা
.
[অনূদিত এবং কিঞ্চিত পরিমার্জিত]
কলামিষ্ট হুজুর

Facebook Comments