বাজারে জবাইকৃত মুরগির পশম ছাড়ানোর জন্য মেশিনে ড্রেসিং করার ব্যবস্থা থাকে। আমাদের দেশে প্রচলিত ড্রেসিংয়ের পদ্ধতি অনেকটা নিম্নরূপ। মুরগী জবাই করে ড্রেসিং মেশিনে দেয়ার আগে মুরগীর পশম নরম করার জন্য পেটের নাড়ি-ভুঁড়িসহ উত্তপ্ত গরম পানিতে চুবানো হয়। সেজন্য দোকানে হাঁড়িতে করে পানি ফুটানো হয়। আর ঐ ফুটন্ত পানির মধ্যে সারাদিনে অন্তত কয়েকশো মুরগী চুবানো হয়। কিন্তু ঐ পানি সাধারণত পরিবর্তন করা হয় না। ফুটানো পানি কমে গেলে ঐ পানির মধ্যে আবার পানি ঢালা হয়।
এভাবেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঐ পানিতে একের পর এক মুরগী চুবানোর ফলে পানির রঙ নর্দমার কালো ময়লা পানির রূপ ধারণ করে। এছাড়া যে মুরগীকে গরম পানিতে চুবানো হয় তার গায়ে এবং পায়ে প্রচুর পরিমানে নানা রকম ময়লা, রক্ত ও বিষ্ঠা লেগে থাকে। কিন্তু এসব ময়লার কোনো কিছুই গরম পানিতে চুবানোর আগে পরিস্কার করা হয় না। ফলে এসব ময়লা ফুটন্ত গরম পানিতে মিশার কারণে পানি নাপাক হয়ে যায়।
মূলত এসব কারণেই প্রচলিত পদ্ধতিতে মুরগী ড্রেসিং করাকে কেউ কেউ নাজায়েয বা মাকরূহ মনে করে। তাই মেশিনে মুরগী ড্রেসিং করার ক্ষেত্রে পরামর্শ হলো, মুরগী জবাই করার পর তার শরীর ভালো পানি দ্বারা ধুয়ে পরিস্কার করে তারপর গরম পানিতে চুবানো। এভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ মুরগী চুবানোর পর ঐ ময়লা পানি ফেলে দিয়ে আবার নতুন পরিস্কার পানি গরম করবে। দোকানে এমনটি সম্ভব না হলে সেখান থেকে মুরগী ড্রেসিং না করানোই শ্রেয় হবে। এক্ষেত্রে বাসা-বাড়িতে নিজেরা মুরগির পশম হাতে পরিষ্কার করা ভালো হবে।
তবে দোকানের ড্রেসিংয়ে উপরোক্ত ত্রুটিগুলো সত্ত্বেও কেউ যদি সেখানে মুরগী ড্রেসিং করায় তবে এতে উক্ত মুরগী খাওয়া হারাম বা মাকরূহ হয়ে যাবে না। বরং তা হালালই থাকবে।
কেননা একে তো মুরগির পশম উপড়ানোর জন্য গরম পানিতে তাকে এতো দীর্ঘ সময় রাখা হয় না যে, এর ফলে বাইরের নাপাক পানির প্রভাব গোশতের মধ্যে বিস্তার লাভ করে। তদ্রূপ পাকস্থলীর নাপাকির প্রভাবও গোশতের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না।
এ কারণেই এভাবে ড্রেসিং করার পর গোশতের মধ্যে নাপাকির গন্ধ পাওয়া যায় না এবং স্বাদের মধ্যেও পরিবর্তন আসে না। বরং এক্ষেত্রে মুরগির পশম ছাড়ানোর জন্য গরম পানিতে এতো সামান্য সময় রাখা হয়, যাতে শুধু চামড়ার লোমকূপগুলো ঢিলে হয়ে যায়।
অবশ্য উক্ত গরম পানি নাপাক থাকে বিধায় লোমকূপের ভেতরেও নাপাক ঢুকে যায়। তাই মুরগী ড্রেসিং করার পর পরিষ্কার পানি দ্বারা তা ভালোভাবে ধুয়ে পাক করে নিতে হবে। এভাবে ধুয়ে রান্না করলে তা খেতে কোনো অসুবিধা নেই। আর সবাই মুরগী রান্না করার আগে গোশত ভালোভাবে ধুয়েই নেয়। ফলে সব ময়লা ও রক্ত এমনিতেই দূর হয়ে যায় এবং তা পবিত্রও হয়ে যায়।
তবে দোকানে মুরগী ড্রেসিংয়ের ক্ষেত্রে কেউ কেউ মুরগির পেট কেটে নাড়ি-ভুঁড়ি বের করে গরম পানিতে চুবায়। মনে রাখতে হবে, মুরগির পেট কেটে এধরনের ফুটন্ত নাপাক পানিতে চুবানো বৈধ নয়। কেননা পেট কেটে নাপাক গরম পানিতে মুরগিকে চুবালে গোশতের ভেতরে নাপাক পানির প্রভাব দ্রুত বিস্তার করে। এতে উক্ত মুরগির গোশত খাওয়া মাকরূহ তাহরীমী হয়ে যায়। অতএব দোকানে মুরগী ড্রেসিং করাতে চাইলে পেট না কেটেই গরম পানিতে চুবাতে হবে।
[ফাতহুল কাদীর ১/২১১; আল-বাহরুর রায়েক ১/৪১৫; মাজমাউল আনহুর ১/৯১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ ১৬০-১৬১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৩৪; আহসানুল ফাতাওয়া ২/৯৬]
Facebook Comments