রাসুলুল্লাহ(স) এর মৃত্যু নিয়ে ইসলামবিরোধীদের অপপ্রচার এবং এর জবাব

654
রাসুল সাঃ এর মৃত্যু

আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যু সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো ব্যবহার করে ইসলামবিরোধীরা বিশেষ করে খ্রিষ্টান মিশনারীরা দাবি করে যেঃ মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যু দ্বারা নাকি প্রমাণ হয় যে তিনি আল্লাহর নবী নন এবং তাঁর মৃত্যু আল্লাহর শাস্তির কারণে হয়েছিল (নাউযুবিল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ)। সুনির্দিষ্টভাবে তাদের অভিযোগগুলো হচ্ছে—

◘ সহীহ বুখারীসহ বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী এক ইহুদি মহিলার দেয়া বিষের প্রতিক্রিয়ায় মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যু হয়েছিল। একজন নবীকে কী করে কোন মানুষ হত্যা করতে পারে?

◘ কুরআনে বলা হয়েছে যেঃ যদি মুহাম্মাদ(ﷺ) আল্লাহর নামে নিজে থেকে কোন কিছু রচনা করতেন, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাঁর aorta(ইংরেজি অনুবাদ অনুযায়ী) কেটে দেবেন।  বুখারীর কিছু ইংরেজি অনুবাদ অনুযায়ী মৃত্যুকালে বিষের প্রতিক্রিয়ায় রাসুল(ﷺ) এর মনে হচ্ছিল যেন তাঁর aorta কর্তিত হচ্ছে। অতএব এ থেকে প্রমাণিত হয় যে মুহাম্মাদ(ﷺ) নিজে থেকে আল্লাহর নামে কোন কিছু উদ্ভাবন করে প্রচার করেছেন এবং পরিনামে তাঁকে আল্লাহ শাস্তি দিয়েছেন ও তাঁর মৃত্যু ঘটেছে। (নাউযুবিল্লাহ, আসতাগসিরুল্লাহ)।

 

প্রথমে আমরা দেখে নিই কিভাবে আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীজি মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যু হয়েছিল।

وَقَالَ يُونُسُ عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ عُرْوَة: قَالَتْ عَائِشَةُ رضى الله عنها : “كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ فِي مَرَضِهِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ :‏ “‏ يَا عَائِشَةُ! مَا أَزَالُ أَجِدُ أَلَمَ الطَّعَامِ الَّذِي أَكَلْتُ بِخَيْبَرَ، فَهَذَا أَوَانُ وَجَدْتُ انْقِطَاعَ أَبْهَرِي مِنْ ذَلِكَ السَّمِّ ‏”‏‏.‏

অর্থঃ  ইউনুস(র) যুহরী ও ‘উরওয়াহ(র) সুত্রে বলেন, আয়িশা(রা) বলেছেন, নবী(ﷺ) যে রোগে ইন্তিকাল করেন সে সময় তিনি বলতেন, “হে ‘আয়িশা! আমি খাইবারে (বিষযুক্ত) খাবার খেয়েছিলাম আমি সর্বদা তার যন্ত্রণা অনুভব করছি । আর এখন মনে হচ্ছে বিষক্রিয়ার ফলে আমার শিরাগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে।

[সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৪৪২৮]

আরো দেখুনঃ ‘আর রাহিকুল মাখতুম’; পৃষ্ঠা ৫৩৪ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) অথবা পৃষ্ঠা ৪৮৯(আল কোরআন একাডেমী লন্ডন)

নিচে নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যুর ব্যাপারে ইসলামবিরোধীদের অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ ও খণ্ডন করা হল।

 

◘ একজন নবীকে কী করে কোন মানুষ হত্যা করতে পারে?

ইসলামবিরোধীরা বিভিন্ন হাদিস ও সিরাত গ্রন্থ থেকে নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যুসংক্রান্ত বিবরণগুলো উল্লেখ করলে অনেক সময় মুসলিমরাও চমকে ওঠে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে বর্তমান যুগে মুসলিমদের একটা বড় অংশের ভেতর ইসলামের বেসিক জ্ঞানগুলোও নেই। ইসলাম ও নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) সম্পর্কে তাদের জ্ঞান একেবারে ভাসা ভাসা, যদিও ইসলামের প্রতি তাদের ভালোবাসার কোন অভাব নেই। অধিকাংশ মুসলিমেরই সারা জীবনেও একবার অর্থসহ কুরআন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া নেই, সারা জীবনেও নবী(ﷺ)  এর একটা সিরাত(জীবনী) গ্রন্থ পড়া নেই। তাদের জানা নেই যে কিভাবে আমাদের নবী(ﷺ) এর মৃত্যু হয়েছিল। তাই যখন ইসলামবিরোধীরা হাদিসের বই থেকে দেখায় — বিষ প্রয়োগে নবী(ﷺ) এর মৃত্যু হয়েছিল তখন অনেক সরলপ্রাণ মুসলিমই অজ্ঞতার কারণে বিব্রত হয়ে যান। চমকের সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই তারা ইসলামবিরোধী এক্টিভিস্টদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে থাকেঃ কী করে আল্লাহর কোন নবীকে বিষ প্রয়োগ করে মেরে ফেলা যেতে পারে? আল্লাহর নবীকে কিভাবে কোন মানুষ খুন করে?

এখানে ইসলামবিরোধীরা “নবী কিভাবে হয়” –এ ব্যাপারে নিজস্ব একটা স্ট্যান্ডার্ড দাঁড় করিয়ে দিয়েছে যেটা অনেক সরলপ্রাণ মুসলিম ধরতে পারেন না। “কী করে আল্লাহর কোন নবীকে বিষ প্রয়োগ করে মেরে ফেলা যেতে পারে?” – এই প্রশ্ন দ্বারা ইসলামবিরোধীরা একটা তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে যেঃ আল্লাহর কোন নবীই আল্লাহর পথে শহীদ হতে পারে না। অথচ এটা এমন একটা স্ট্যান্ডার্ড যার সাথে কুরআন ও বাইবেল কোন গ্রন্থই একমত না। রাসুল(ﷺ) এর মৃত্যুর ব্যাপারে অনলাইন ও অফলাইনে অপপ্রচার চালায় মূলত খ্রিষ্টান মিশনারীরা। অথচ খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল বলছে যেঃ অতীতেও অনেক নবীকে অবিশ্বাসীরা হত্যা করেছিল। আমি বাইবেলের পুরাতন নিয়ম(Old Testament) ও নতুন নিয়ম(New Testament) উভয় অংশ থেকেই এমন অনেক উদাহরণ দেখাতে পারব।  যেমনঃ

 

“ঈশ্বর লোকদের মন তাঁর প্রতি ফিরিয়ে আনার জন্য ভাববাদী(নবী/prophet)দের পাঠালেন। কিন্তু লোকরা সদুপদেশে কর্ণপাত পর্য়ন্ত করলো না। তারপর ঈশ্বরের আত্মা যাজক যিহোয়াদার পুত্র সখরিয়র ওপর ভর করলো। তিনি লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “ঈশ্বর এই কথা বলেছেন: ‘তোমরা কেন প্রভুর বিধিসমূহ ও আজ্ঞা অমান্য করছো? এভাবে তোমরা কখনোই কোনো কাজে কৃতকার্য় হতে পারবে না। তোমরা প্রভুকে ত্যাগ করেছো, তাই তিনিও তোমাদের ত্যাগ করেছেন।”
কিন্তু বিচারবুদ্ধিহীন লোকরা তখন একসঙ্গে চএান্ত করলো এবং রাজা যখন তাদের সখরিয় [Zechariah/যাকারিয়া(আ)]কে হত্যা করতে আদেশ দিলেন, তারা পাথর ছুঁড়ে মন্দির চত্বরেই তাঁকে হত্যা করলো।”

[২ বংশাবলী(2 Chronicles) ২৪:১৯-২১]

“আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আমি কি করেছিলাম। ঈষেবল যখন প্রভুর ভাববাদী(নবী/prophet)দের হত্যা করছিলেন, আমি তখন তাদের ৫০ জন করে দুভাগে মোট ১০0 জন ভাববাদীকে দুটো গুহায় লুকিয়ে রেখে নিয়মিত খাবার ও জল দিয়েছিলাম। ”

[১ রাজাবলী( 1 Kings) ১৮:১৩]

◉  “সেখানে একটি গুহার ভেতরে এলিয় [ইলইয়াস(আ)/Elijah] রাত্রি বাস করলেন। সে সময় প্রভু এলিয়র সঙ্গে কথা বললেন, “এলিয় তুমি এখানে কেন?” এলিয় উত্তর দিলেন, “প্রভু ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, আমি সব সময় সাধ্য মতো তোমার সেবা করেছি। কিন্তু ইস্রায়েলের লোকরা তোমার সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ করে তোমার বেদী ধ্বংস করে ভাববাদী (নবী/prophet)দের হত্যা করেছে। এখন আমিই একমাত্র জীবিত ভাববাদী আর তাই ওরা আমাকেও হত্যার চেষ্টা করছে।”

[১ রাজাবলী( 1 Kings) ১৯:৯-১০]

“তারা তোমার বিরুদ্ধে গেল এবং তোমার শিক্ষামালা ছুঁড়ে ফেলে দিল। তারা তোমার ভাববাদী(নবী/prophet)দেরও হত্যা করল, যারা তাদের সতর্ক করে তোমার কাছে ফেরাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষরা তোমার বিরুদ্ধে বিভত্স সব কাজ করলো। “

[নহিমিয়(Nehemiah)  ৯:২৬]

“মেয়েটি তার মায়ের পরামর্শ অনুসারে বলল, ‘থালায় করে বাপ্তিস্মদাতা যোহনের[ইয়াহইয়া(আ)/John the Baptist] মাথাটা আমায় এনে দিন।’ যদিও রাজা হেরোদ এতে খুব দুঃখিত হলেন, তবু তিনি শপথ করেছিলেন বলে এবং যাঁরা তাঁর সঙ্গে খেতে বসেছিলেন তারা সেই শপথের কথা শুনেছিলেন বলে সম্মানের কথা ভেবে তিনি তা দিতে হুকুম করলেন।  তিনি লোক পাঠিয়ে কারাগারের মধ্যে যোহনের [ইয়াহইয়া(আ)] শিরশ্ছেদ করালেন। এরপর যোহনের মাথাটি থালায় করে নিয়ে এসে সেই মেয়েকে দেওয়া হলে, সে তা নিয়ে তার মায়ের কাছে গেল।তারপর যোহনের অনুগামীরা এসে তাঁর দেহটি নিয়ে গিয়ে কবর দিলেন। আর তাঁরা যিশুর কাছে গিয়ে সব কথা জানালেন। ”

[মথি(Matthew) ১৪:৮-১২]

[যিশু বললেন] “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীর দল, তোমরা ভণ্ড! তোমরা ভাববাদীদের জন্য স্মৃতিসৌধ গাঁথো ও ঈশ্বর ভক্ত লোকদের কবর সাজাও, আর বলে থাক, ‘আমরা যদি আমাদের পূর্বপুরুষদের সময়ে থাকতাম, তবে ভাববাদীদের হত্যা করার জন্য তাদের সাহায্য করতাম না।’ এতে তোমরা নিজেদের বিষয়েই সাক্ষ্য দিচ্ছ  যে, ভাববাদীদের যারা হত্যা করেছিল তোমরা তাদেরই বংশধর। তাহলে যাও তোমাদের পূর্বপুরুষেরা যা শুরু করে গেছে তোমরা তার বাকি কাজ শেষ করো। সাপ, বিষধর সাপের বংশধর! কী করে তোমরা ঈশ্বরের হাত থেকে রক্ষা পাবে? তোমরা দোষী প্রমাণিত হবে ও নরকে যাবে। তাই আমি তোমাদের বলছি, আমি তোমাদের কাছে যে ভাববাদী, জ্ঞানীলোক ও শিক্ষকদের পাঠাচ্ছি তোমরা তাদের কারো কারোকে হত্যা করবে, আর কাউকে বা ক্রুশে দেবে, কাউকে বা তোমরা সমাজ-গৃহে চাবুক মারবে। এক শহর থেকে অন্য শহরে তোমরা তাদের তাড়া করে ফিরবে। এই ভাবে নির্দোষ হেবলের রক্তপাত থেকে শুরু করে বরখায়ার পুত্র সখরিয় [যাকারিয়া(আ)/Zechariah], যাকে তোমরা মন্দিরের পবিত্র স্থান ও যজ্ঞবেদীর মাঝখানে হত্যা করেছিলে, সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত যত নির্দোষ ব্যক্তির রক্ত মাটিতে ঝরে পড়েছে, সেই সমস্তের দায় তোমাদের ওপরে পড়বে। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এই যুগের লোকদের ওপর ঐ সবের শাস্তি এসে পড়বে।’ ‘হায় জেরুশালেম, জেরুশালেম! তুমি, তুমিই ভাববাদীদের [নবী/prophet] হত্যা করে থাকো, আর তোমার কাছে ঈশ্বর যাদের পাঠান তাদের পাথর মেরে থাক। মুরগী যেমন তার বাচ্চাদের ডানার নিচে জড়ো করে, তেমনি আমি তোমার লোকদের কতবার আমার কাছে জড়ো করতে চেয়েছি, কিন্তু তোমরা রাজী হও নি। ”

[মথি(Matthew) ২৩:২৯-৩৭]


এটা পড়তে পারেন মুহাম্মাদ(স) কি সন্তান জন্মে নারীর ভূমিকার ব্যাপারে অজ্ঞ ছিলেন?


বাইবেলের পুরাতন নিয়ম(Old Testament) অংশটি ইহুদি ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ। আমরা উপরে দেখলাম যে বাইবেলের অনেক জায়গাতেই ইহুদিদের দ্বারা নবী হত্যা করার ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে। কাউকে হত্যা করা হলে সে নবী হতে পারে না—খ্রিষ্টান প্রচারকদের এই কথাকে সত্য ধরা হলে বাইবেলের অনেক নবীই মিথ্যা হয়ে যান!

বাইবেল অনুযায়ী যাকারিয়া(আ) {সখরিয়/Zechariah}, ইয়াহইয়া(আ) {যোহন বাপ্তাইজক / John The Baptist} সহ অনেক নবী-রাসুলকে হত্যা করা হয়েছে। যে সব খ্রিষ্টান প্রচারক মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তারা কিন্তু এই ব্যাপারগুলো বেমালুম চেপে যান! তাদের কিতাব অনুযায়ী যাকারিয়া(আ), ইয়াহইয়া(আ) প্রমুখ নবীকে অবিশ্বাসীরা হত্যা করেছে। খ্রিষ্টান প্রচারকরা কিন্তু তাঁদেরকে ঠিকই নবী বলে বিশ্বাস করেন; অথচ সেই একই প্রচারকরা মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে তাঁর নবুয়ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই হচ্ছে তাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।

 

আল কুরআনও এ ব্যাপারে একমত যে—অতীতেও বহু নবীকে হত্যা করা হয়েছে। আল কুরআনে ইহুদিদের নবী হত্যা করার জন্য ভৎর্সনা করা হয়েছে।

“…বলে দাওঃ যদি তোমরা [ইহুদিরা] বিশ্বাসীই ছিলে, তবে তোমরা ইতিপূর্বে কেন আল্লাহর নবীদের হত্যা করেছিলে?”

(আল কুরআন, বাকারাহ ২:৯১)

“ …এমন হলো এ জন্য যে, তারা [ইহুদিরা] আল্লাহর বিধি বিধান মানতো না এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান সীমালংঘকারী।”

(আল কুরআন, বাকারাহ ২:৬১, আলি ইমরান ৩:১১২)

 

নবী হলেই যে তাঁকে কেউ হত্যা করতে পারবে না—এ কথা প্রকৃতপক্ষে কোন জায়গায় বলা নেই। আমরা মুসলিম হিসাবে বিশ্বাস করি যে আল্লাহর অনেক নবীকেই যুগে যুগে জালিমরা হত্যা করেছে। সেইসব নবীরা আল্লাহর পথে প্রাণ দিয়েছেন; তাঁরা শহীদ হয়েছেন।

এ ছাড়া একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ইসলামবিরোধীরা এড়িয়ে যায় আর তা হচ্ছেঃ বিষ প্রয়োগ করার সাথে সাথে কিন্তু নবী(ﷺ) মারা যাননি। বরং তিনি মারা গিয়েছিলেন বিষ প্রয়োগের ঘটনার প্রায় চার বছর পর।[১]   তিনি মারা গিয়েছিলেন মক্কা বিজয়ের পরে, বিদায় হজের পরে, আরবের গোত্রগুলো দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করার পরে তথা তাঁর মিশন শেষ হবার পরে। বিষ প্রয়োগের ফলে অন্য সাহাবীর মৃত্যু ঘটে কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় নবী(ﷺ) সে সময়ে মারা যান না বরং তাঁর মিশন শেষ করার পরে মারা যান। এর দ্বারা বরং তাঁর নবুয়তের সত্যতা আরো বেশি করে প্রমাণিত হয়, সুবহানাল্লাহ। এটাই সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ(রা) এর অভিমত। তাঁর মতে – বিষ প্রয়োগ করার এত পরে এর ক্রিয়া করা নবী(ﷺ) এর একটি মুজিজা এবং আল্লাহ তা’আলা তার নবী(ﷺ)কে তাঁর দায়িত্ব সমাপ্ত করা পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং তাঁকে সম্মানিত করার জন্য শহীদের মর্যাদা দান করেছেন।  [২]

এ ছাড়া বিষ প্রয়োগের সেই ঘটনার বিবরণ লক্ষ্য করলে তাঁর নবুয়তের সত্যতা আরো বেশি করে ফুটে ওঠে। সুনান আবু দাউদ থেকে ঘটনাটির একটি বিবরণ উল্লেখ করছি—

 

“খায়বারের অধিবাসী এক ইহুদি মহিলা বিষ মিশিয়ে একটা বকরী ভুনা করে তা রাসুলুল্লাহ(ﷺ)কে হাদিয়া দেয়। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) একটি রান নিয়ে খাওয়া শুরু করলেন এবং তাঁর কতিপয় সাহাবীও তাঁর সঙ্গে খেতে লাগলেন।

কিছুক্ষণ পর রাসুলুল্লাহ(ﷺ) তাদেরকে বললেনঃ তোমরা হাত গুটিয়ে নাও।

অতঃপর রাসুলুল্লাহ(ﷺ) ঐ ইহুদি মহিলাকে লোক মারফত ডেকে এনে বললেন, “তুমি কি এ বকরীর সঙ্গে বিষ মিশিয়েছ?”

সে বলল, “আপনাকে কে সংবাদ দিয়েছে?”

তিনি বললেন, “আমার হাতের এই রান আমাকে সংবাদ দিয়েছে।”

সে বলল, “হ্যাঁ”।

তিনি বললেন, “এরূপ করার উদ্যেশ্য কী?”

সে বলল, “আমি ভেবেছি যদি তিনি সত্যিই নবী হন তাহলে বিষ তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি নবী না হন তবে আমরা তার থেকে ঝামেলামুক্ত হব।”

অতঃপর রাসুলুল্লাহ(ﷺ) তাকে কোন প্রকার শাস্তি না দিয়ে ক্ষমা করে দিলেন।

যে সব সাহাবী তাঁর সঙ্গে বকরীর গোশত খেয়েছেন তাদের কেউ কেউ মারা গেলেন {{এ জন্য পরবর্তীতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়; সহীহ মুসলিম ৩৫০ দ্রষ্টব্য}} এবং রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বকরীর গোশত খাবার প্রতিক্রিয়া প্রতিহত করার জন্য তাঁর বাহুদ্বয়ের মাঝখানে রক্তমোক্ষণ (শিঙ্গা লাগানো / cupping) করালেন। … ”

[সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৫১০; এ অনুচ্ছেদে অনুরূপ ঘটনার বেশ কয়েকটি হাদিস আছে।]

 

এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে বিষযুক্ত বকরীর রানটি রাসুলুল্লাহ(ﷺ)কে বিষের ব্যাপারে অবহিত করেছিল – যা তাঁর একটি মুজিজা, সুবহানাল্লাহ। যে সব খ্রিষ্টান মিশনারী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নবুয়ত মিথ্যা প্রমান করার জন্য এই বিবরণ উল্লেখ করেন, তাদের জন্য এটা এক চপেটাঘাত। তাদের কী দুর্ভাগ্য যে, মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নবুয়ত মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য তারা যে বিবরণ উল্লেখ করেন তাতেই তাঁর একটি মুজিজা(miracle) দেখা যাচ্ছে!

কোন কোন খ্রিষ্টান মিশনারী(যেমন ডেভিড উড) বলতে চান যে–মুহাম্মাদ(ﷺ) বিষ প্রয়োগের চার বছর পর মারা গিয়েছেন এতে কোন অলৌকিকতা নেই কেননা তিনি খুব কম বিষ গ্রহণ করেছেন ফলে তাঁর তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয়নি বরং তাঁর স্লো পয়জনিং হয়েছিল।

এর জবাবে আমরা তাদের প্রশ্ন করব—তিনি কেন খুব কম বিষ গ্রহণ করেছেন?

এর উত্তর হবে—বিষযুক্ত বকরীর রানটি রাসুলুল্লাহ(ﷺ)কে বিষের ব্যাপারে অবহিত করেছিল; যার ফলে তিনি দ্রুত গোশত খাওয়া বন্ধ করে দেন এবং অন্যদেরকেও খাওয়া বন্ধ করতে বলেন। রানটি বিষের ব্যাপারে অবহিত করার আগে খুব সামান্য গোশতই তিনি খেয়েছিলেন।

কাজেই আমরা যদি খ্রিষ্টান মিশনারীদের কথাকেও বিবেচনা করি যে – মুহাম্মাদ(ﷺ)খুব কম বিষ গ্রহণ করেছেন ফলে তাঁর তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয়নি — তবুও এর মাঝে তাঁর নবুয়তের সত্যতা নিহিত আছে। মুজিজার দ্বারা তিনি বকরীর রানের কাছ থেকে বিষের সংবাদ পেয়েছিলেন বলেই তো তিনি দ্রুত খাওয়া বন্ধ করেছিলেন এবং অন্যদেরকেও খাওয়া বন্ধ করতে বলেছিলেন।

কেউ যদি এরপরেও অপতর্ক করে বলতে চায়—ঐ সামান্য বিষটুকুও বা কেন তিনি গ্রহণ করলেন? বকরীর রানটি কেন খাওয়া শুরুর আগেই তাঁকে বিষের ব্যাপারে অবহিত করল না?

এর জবাবে আমরা বলব– এটাই আল্লাহর ফায়সালা ছিল যে তিনি তাঁর শেষ নবীকে শহীদের মর্যাদায় ভূষিত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী। এর দ্বারা শেষ নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে—তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসুল, সর্বশেষ নবী এবং একজন শহীদ।

সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ(রা) বলেনঃ “আমাকে যদি ৯ বার আল্লাহর নামে শপথ করতে হয় যে – আল্লাহর রাসুল(ﷺ)কে হত্যা করা হয়েছে, তবে তা আমার নিকট ১ বার শপথ করার চেয়ে প্রিয় হবে। কারণ আল্লাহ তাঁকে [মুহাম্মাদ(ﷺ)] একজন নবী বানিয়েছেন এবং একজন শহীদ বানিয়েছেন।”

[মুসনাদ আহমাদ ৩৬১৭, সনদঃ সহীহ]

 

◘ নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) কি আল্লাহর শাস্তির কারণে মৃত্যুবরণ করেছিলেন?

এ প্রসঙ্গে আল কুরআনের যে আয়াতগুলো ইসলামবিরোধীরা উদ্ধৃত করে থাকে সেগুলো হচ্ছেঃ

( 44 )   وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْأَقَاوِيلِ ( 45 )   لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِينِ ( 46 )   ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِينَ

অর্থঃ “যদি সে [মুহাম্মাদ(ﷺ)] নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিতো, তবে অবশ্যই আমি তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম, এবং কেটে দিতাম তাঁর জীবন-ধমনী(শাহরগ)।”

(আল কুরআন, হাক্কাহ ৬৯:৪৪-৪৬;  ড. মুজিবুর রহমানের অনুবাদ)

 

এখানে বলা হচ্ছে যে, মুহাম্মাদ(ﷺ) যদি আল্লাহর নামে নিজে থেকে কোন কথা রচনা করতেন, তাহলে আল্লাহ তাঁর ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) বা জীবন-ধমনী কেটে দিতেন। এখানে মূল আরবিতে الْوَتِينَ শব্দটি এসেছে।

কয়েকটি ইংরেজি অনুবাদে [যেমনঃ আহমেদ আলী, হাবিব শাকির, সহীহ ইন্টারন্যাশনাল] দেখা যাচ্ছে যে, الْوَتِينَ এর অনুবাদ করা হয়েছে ‘Aorta’। বুখারীর কিছু ইংরেজি অনুবাদেও দেখা যাচ্ছে যে বিষ প্রয়োগের ফলে রাসুল(ﷺ) এর মনে হচ্ছিল যে তাঁর  aorta কেটে যাচ্ছে। এই ইংরেজি অনুবাদগুলো দেখিয়ে ইসলামবিরোধীরা প্রমাণের চেষ্টা করে যে রাসুল(ﷺ) এর উপর আল্লাহ শাস্তি বাস্তবায়ন করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)।

কিন্তু ইসলামবিরোধীদের এই অভিযোগের পেছনে কিছু শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। যে হাদিসটিতে রাসুল(ﷺ) এর মৃত্যুযন্ত্রনার উল্লেখ আছে, তার আরবি ইবারত আমি ইতিমধ্যেই এই নোটে উল্লেখ করেছি। এই লিঙ্ক থেকে হাদিসটি আবারও দেখতে পারেন।  সেখানে মূল আরবি ইবারতে বর্ণনা করা হয়েছে যেঃ রাসুল(ﷺ) এর মনে হচ্ছিল যে তাঁর ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) কেটে ফেলা হচ্ছে [[فَهَذَا أَوَانُ وَجَدْتُ انْقِطَاعَ أَبْهَرِي مِنْ ذَلِكَ السَّمِّ  ]] । সুরা হাক্কাহ এর আয়াতটিতে বলা হচ্ছে যে মুহাম্মাদ(ﷺ) যদি আল্লাহর নামে নিজে থেকে কোন কথা রচনা করতেন, তাহলে আল্লাহ তাঁর ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) বা জীবন-ধমনী কেটে দিতেন।

অর্থাৎ আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, মূল আরবিতে ভিন্ন ভিন্ন শব্দ আছে। মুহাম্মাদ(ﷺ) যদি আল্লাহর নামে মিথ্যা রচনা করতেন (নাউযুবিল্লাহ), তাহলে আল্লাহ শাস্তিস্বরূপ তাঁর ডান হাত ধরে ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) কেটে দিতেন। আর বিষের যন্ত্রণায় মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মনে হয়েছে যে তাঁর ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) কেটে ফেলা হচ্ছে।

এখানে ২টা জিনিস মোটেও এক না।

তা ছাড়া আল্লাহর নামে মিথ্যা রচনা করলে শাস্তি হিসাবে ডান হাত ধরে ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) কেটে দেবার কথা বলা আছে ; অথচ রাসুল(ﷺ) মৃত্যুর আগে বিষের কারণে কষ্ট হয়েছে। কেউ তাঁর ডান হাত ধরে ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) কেটে যবাই করে ফেলেনি। উভয় ঘটনায় বিশাল তফাত রয়েছে।

যেহেতু ইংরেজি বুখারীর অনুবাদেও aorta ব্যবহার করা হয়েছে এ কারণে ইসলামবিরোধী প্রচারকরা বেছে বেছে কুরআনের কিছু অনুবাদ দেখায় যেগুলোতে aorta শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ আমরা দেখেছি যে মূল আরবিতে ভিন্ন ভিন্ন শব্দ আছে।  ইতিমধ্যেই দেখানো হয়েছে যে বাংলা অনুবাদগুলোতে বুখারীর হাদিসটিতে ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) এর অনুবাদ ‘শিরা’ দিয়ে করা হয়েছে। রাসুল(ﷺ) এর সুবিখ্যাত জীবনীগ্রন্থ ‘আর রাহিকুল মাখতুম’ এর বাংলা অনুবাদেও আলোচ্য ঘটনায় ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) এর অনুবাদ ‘শিরা’ দিয়ে করা হয়েছে। [দেখুন— ‘আর রাহিকুল মাখতুম’; পৃষ্ঠা ৫৩৪ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) অথবা পৃষ্ঠা ৪৮৯(আল কোরআন একাডেমী লন্ডন)]  কাজেই এখানে বাংলা অনুবাদ দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা শক্ত কাজ। অতএব এখানে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য ইসলামবিরোধীদের কেবলমাত্র বেছে বেছে কিছু ইংরেজি অনুবাদ ব্যবহার করতে হয়।

ইসলামবিরোধীরা যদি এরপরেও অপতর্ক করে বলতে চায় –না না, ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) এবং ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) উভয়ই এক জিনিস; কোন কোন অনুবাদক তো উভয়কে ‘aorta’ দিয়ে অনুবাদ করেছেন!! – তাহলে আমি এইসব তর্কপ্রিয় লোকদেরকে আরবি ভাষাবিদদের মতামত দেখতে বলব।

প্রসিদ্ধ আরবি ভাষাবিদ আল মুরতাজা আয-যাবীদী তাঁর ৪০ খণ্ডে রচিত ‘তাজুল আরুস’ গ্রন্থের ১০ নাম্বার খণ্ডের ২৬৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- –

 

”الأَبْهَرُ عِرْقٌ مَنْشَؤُه مِن الرَّأْس، ويَمْتَدُّ إِلى القَدمِ، وَله شَاريِينُ تتَّصِلُ بأَكثرِ الأَطرافِ والبَدَنِ، فَالَّذِي فِي الرأْس منهُ يُسَمَّى النَّأْمَة ويَمتدُّ إِلى الحَلْق فيُسَمَّى فِيهِ الوَرِيدَ، ويمتدُّ إِلى الصَّدْر فيُسَمَّى الأَبْهَرَ، ويمتدُّ إِلى الظَّهْر فيُسَمَّى الوَتِينَ، والفُؤادُ معلَّقٌ بِهِ، ويمتدُّ إِلى الفَخِذ فيُسَمَّى النَّسَا، ويمتدُّ إِلى السّاق فيُسَمَّى الصّافِنَ
[تاج العروس (10/ 263)]

অর্থঃ “ ‘আবহার’  মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিস্তৃত একটি রগ। যার কিছু শিরা-উপশিরা আছে, যা পুরো শরীরের অধিকাংশ অঙ্গ-প্রতঙ্গে বিস্তৃত। মাথার শিরাকে বলা হয় ‘না’মাহ্‌’, কণ্ঠনালীর শিরাকে বলা হয় ‘ওয়ারিদ’, বুকের শিরাকে বলা হয় ‘আবহার’, পিঠের শিরাকে বলা হয় ‘ওয়াতিন’, তার সাথেই হৃদপিণ্ডের সম্পর্ক, রানের শিরাকে বলা হয় ‘নাসা’ আর পায়ের নলার শিরাকে বলে ‘সাফিন’। ”

[এই রেফারেন্সটির জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ মুহতারাম  Hossain Mohammed Naimul Hoque ]

 

এটা খুবই সুস্পষ্ট ব্যাপার যে, ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) এবং ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) মোটেও এক জিনিস নয় এবং গত দেড় হাজার বছরে কোন আরব সুরা হাক্কাহ পড়ে এরপর সহীহ বুখারী ও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থ থেকে রাসুল(ﷺ) এর বিষের যন্ত্রণার বিবরণ দেখে এটা বোঝে না যে আল্লাহ ঘোষিত শাস্তির দ্বারা এটা হয়েছে। দেড় হাজার বছর পরে কিছু খ্রিষ্টান মিশনারী এবং ইসলামবিদ্বেষী একটিভিস্ট ধূর্ততার সাথে কিছু অনুবাদ ব্যবহার করে রাসুল(ﷺ) এর মৃত্যুকে ‘আল্লাহর আযাব’ বানিয়ে ফেলার যে অপচেষ্টা করেছে, তা কখনোই সফল হবার নয়। আল্লাহ এদের অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের নিপাত করুন এবং এদেরকে হেদায়েত দিন।

যারা আল কুরআন থেকে সুবিধামত এক অংশ উদ্ধৃত করে অপব্যাখ্যা করে নিজেদের মিথ্যা মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাদেরকে বলব—আপনারা প্রসঙ্গসহ সুরা হাক্কাহ এর আয়াতগুলো পড়ুন।

 

“নিশ্চয়ই এটা (কুরআন) এক সম্মানিত রাসুলের তেলাওয়াত। এটা কোন কবির কথা নয়; তমরা অল্পই বিশ্বাস কর। এটা কোন গণকের কথাও নয়, তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর।

এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ।

যদি সে [মুহাম্মাদ(ﷺ)] নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিতো, তবে অবশ্যই আমি তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম, এবং কেটে দিতাম তাঁর জীবন-ধমনী(শাহরগ)। অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তার ব্যাপারে আমাকে বিরত রাখতে পারে।

এটা (কুরআন) মুত্তাকীদের(আল্লাহভীরু) জন্যে অবশ্যই এক উপদেশ।

আমি অবশ্যই জানি যে, তোমাদের মধ্যে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীও রয়েছে।

এবং এই (কুরআন) নিশ্চয়ই কাফিরদের অনুশোচনার কারণ হবে। অবশ্যই এটা নিশ্চিত সত্য।

অতএব তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামের মহিমা ঘোষনা কর।”

(আল কুরআন, হাক্কাহ ৬৯:৪০-৫২)

 

এখানে সুস্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে যে আল কুরআন আল্লাহর সম্মানিত রাসুল মুহাম্মাদ(ﷺ) এর তিলাওয়াতকৃত কিতাব। এটা কোন কবি কিংবা গণকের কথা নয় বরং এটা স্বয়ং আল্লাহর কাছ থেকে আগত।  ইসলামবিরোধীরা মাঝখানের কিছু আয়াতের উপর ‘ঈমান’(?) এনে রাসুল(ﷺ) এর মৃত্যুকে আল্লাহর গজব প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ। আমি তাদেরকে আহ্বান জানাব যে—আপনারা অন্য আয়াতগুলোর উপরেও ঈমান আনুন, মেনে নিন যে কুরআন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলার বাণী।

এরপরেও যদি না মানেন, তাহলে পরের আয়াতগুলো দেখুন। আল্লাহ বলে দিচ্ছেন যে এই কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী আছে। সুবহানাল্লাহ, এখানে ইসলামবিরোধী মিথ্যাচারকারীদের ব্যাপারে কী স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হচ্ছে। আর এই মিথ্যা প্রতিপন্ন করলে পরকালে যে কী পরিনতি হবে তাও বলে দেয়া আছে। কাজেই সিদ্ধান্ত আপনার। আল্লাহ আপনাদের হেদায়েত দিন।

 

এই ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করে খ্রিষ্টান মিশনারীদের অব্যাহত অপপ্রচারের প্রেক্ষিতে তাদেরকে খণ্ডন করে একটি ভিডিও তৈরি করা হয়েছেঃ

“David Wood Refuted | Was Prophet Muhammad (PBUH) Punished in Death by Allah? | Episode 1”

সবাই এই ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন। এই চ্যানেল থেকে এরূপ আরো ভিডিও আপলোড করা হবে ইন শা আল্লাহ।  এরূপ আরো কোন কোন টপিকে ভিডিও তৈরি করা প্রয়োজন তা কমেন্টে সাজেস্ট করতে পারেন।

 

তথ্যসূত্রঃ

[১] “The Jews’ attempts to kill the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) – islamqa.info” [islamQA (Shaykh Muhammad Salih al Munajjid)]

https://islamqa.info/en/32762

[২]  “Did the Prophet Muhammad Die As a Martyr” [islamQA Hanafi]

https://islamqa.org/hanafi/seekersg…

Facebook Comments