23.4 C
New York
Wednesday, July 2, 2025

Buy now

spot_img
Home Blog Page 2

।।। কুরআন বোঝার মজা ।।। আব্দুল্লাহ আল মাসউদ

।।। কুরআন বোঝার মজা ।।।

আরবীভাষা জানার সবচে উপকারী দিক হলো, কুরআন তিলাওয়াত করার সময় আল্লাহ তাআলা কী বলছেন তা আপনাআপনি বোঝা যায়। কুরআন বুঝে পড়লে সেই তিলাওয়াত অনেক বেশি প্রভাব ফেলে অন্তরে। অপার্থিব এক প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ে হৃদয়ের প্রতিটি অলিগলিতে। কখনো কখনো দেখা যায় নিজের অবস্থার সাথে অনেক আয়াত মিলে যায়। তখন মনে হতে থাকে, আমাকে উদ্দেশ্য করেই বুঝি এই কথাগুলো আল্লাহ তাআলা বলেছেন!

আজকে আমি সূরা মুমিনুন তিলাওয়াত করছিলাম। চেষ্টা করছিলাম তিলাওয়াতের ভেতর দিয়েই অর্থগুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে। এই সূরার শেষের দিকে এসে একটা আয়াতে আমার চোখ আটকে গেলো। আমি একবার পড়লাম। দুইবার পড়লাম। বারবার পড়লাম। তৃপ্তিতে আমার মনটা ভরে উঠলো। মনে হলো আত্মিক প্রশান্তির সরোবরে অবগাহন করে চলছি। সাতার কাটছি এপাশ থেকে ওপাশে, ওপাশ থেকে এপাশে। আমার কল্পনার পর্দায় ভেসে উঠছিলো পরিচিত অনেক ভাইদের কথা। মনে পড়ে যাচ্ছিলো অজানা-অচেনা অনেক বোনদের কথা। যারা দ্বীন মানার কারণে আপন সমাজের কাছে উপহাসের পাত্র হয় মাঝেমধ্যে। আত্মীয়-স্বজনরা তো বটেই, খোদ নিজ পরিবারের সদস্যরাও অনেক সময় তাদের নিয়ে উপহাস করে। তাদের দেখে টিপ্পনি কাটে। সুযোগ পেলেই দুইচার কথা শুনিয়ে দিয়ে খোঁচা মারতে ভুলে না। আমি নিশ্চিত, এমন ভাই-বোনেরা কুরআনের আয়াতটা চোখের সামনে রাখলে এসবকিছু তাদের কাছে তুচ্ছজ্ঞান হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, “আমার বান্দাগণের মধ্যে একদল আছে, যারা বলে, ‘হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি। অতএব আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও দয়া করুন। আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ কিন্তু তাদেরকে নিয়ে তোমরা এতো ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে যে, তা তোমাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছিল আমার স্মরণ। আর তোমরা তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টাই করতে। নিশ্চয় আমি আজ তাদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে এমনভাবে পুরস্কৃত করলাম যে, তারাই হল সফলকাম।” [সূরা মুমিনূন : ১০৯-১১১]

এই যে দ্বীন মানার কারণে প্রায়শই হাসি-ঠাট্টার শিকার হতে হয় আমাদেরকে এর বিনিময়ে আল্লাহ পরকালে আমাদেরকে পুরস্কৃত করবেন; এরচে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে? আজকে দাড়ি রাখার কারণে কেউ হয়তো আমাদেরকে জঙ্গি বলছে, পর্দা করা শুরু করলে বলছে- লাদেন বাহিনীর সদস্য, পরকালের মহা সফলতার বিপরীতে এমব তাচ্ছিল্য অত্যন্ত তুচ্ছ। একজন মুমিন যখন কুরআনে এমন পরিষ্কার ঘোষণা পায় তার মহান রকের পক্ষ থেকে, তখন কারও কোন ঠাট্টা-মশকারি-তামাসা তাকে মনোক্ষুণ্ন করতে পারে না। দ্বীনের পথে অবিচলতাকে টলাতে পারে না। কারণ সে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, এখন যাই হোক না হোক, বেলাশেষে বিজয়ের পুষ্পমাল্য গলায় পরে সফলতার হাসিটা সে-ই হাসবে।

কুরআনের সাথে আমাদের আচরণ মন্ত্রের বইয়ের মতো। খুললাম, গুনগুনিয়ে পড়লাম আর গিলাফে পুরে তাকে তুলে রেখে দিলাম। কি পড়লাম তা জানলাম না। আল্লাহ তাআলা কী বলতে চাইলেন, তা বুঝলাম না। যার ফলে দেখা যায় কেউ একজন সকালে উঠে তিলাওয়াত করেছে। তার তিলাওয়াতকৃত আয়াতে হারাম না খাওয়া, সুদের বিরুদ্ধে আল্লাহর যুদ্ধ ঘোষণা করা ইত্যাদি বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিলো। কিন্তু সে এর কিছুই জানলো না। ব্যাস, কুরআন তিলাওয়াত শেষে মুসহাফটা গিলাফে পেঁচিয়ে ব্যাংক থেকে সুদ তুলতে রওনা হয়ে গেলো কিংবা অফিসে ঘুষের জন্য আটকে রাখা ফাইলটা দফারফা করে কতো ইনকাম হবে সে হিসাব কষতে বসে গেলো। এসব কারণেই দেখা যায় কুরআন আমরা তিলাওয়াত করি কিন্তু কুরআনের শিক্ষা আমাদের বাস্তব জীবনে কোন প্রভাব ফেলে না।

কুরআন বুঝে না পড়ার একটা কারণ হলো, অনুবাদ বোঝা বা তাফসীর পড়ার জন্য আলাদাভাবে সময় ব্যায় করতে হয়। আমরা তো সবাই আজকাল ত্রস্ত-ব্যস্ত। রাজ্যের কাজকাম নিয়ে ঘুরিফিরি। সো এতো সময় কই আমাদের হাতে। এই কারণে আরবীভাষা জানা থাকলে বাড়তি ফায়দা পাওয়া যায়। অনুবাদের জন্য আলাদা সময় বের করতে না পারলেও সমস্যা নাই। তিলাওয়াতের সময় ধ্যানটা একটু অর্থের দিকে ঘুরিয়ে দিলেই হয়ে যায়।

মূলত কুরআন তিলাওয়াত একটা স্বতন্ত্র ইবাদাত। সেই কুরআনে আল্লাহ তাআলা কী বললেন তা জানা ও সেই আদেশ-নিষেধ-উপদেশ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা ভিন্ন ইবাদাত। দুইটার জন্যই আলাদা আলাদা সওয়াব রয়েছে। অনেককেই দেখা যায় সারাবছর কয় খতম করলেন সেই হিসেবে মত্ত থাকে। খতম তোলার সংখ্যাটা মোটাতাজা করাটাই তাদের কাছে মূখ্য। এটাই তাদের সুখ দেয় ও মনের ভেতর তৃপ্তির ঢেকুর জাগ্রত করে। অথচ সারাবছর অর্থ না বুঝে তিন খতম তিলাওয়াত করার চেয়ে অর্থসহ পড়ে এক খতম তিলাওয়াত করাটাই শ্রেয়। কারণ এতে ভিন্নধর্মী দুই ইবাদাতের সম্মিলন ঘটছে। নিশ্চয়ই একই স্বাদের খানা দিয়ে পেটের পুরোটা ভরাট করার চেয়ে এক স্বাদের খানা দিয়ে অর্ধেক, আর অন্য আরেক স্বাদের খানা দিয়ে বাকি অর্ধেক পুরা করা বুদ্ধিমানের কাজ।

কুরআন বুঝে পড়ার সবচে মজার দিক হলো, আপনি হঠাৎ হঠাৎ দেখবেন এমন কিছু কথার সম্মুখীন হচ্ছেন যেন এগুলো সরাসরি আপনাকে বলা হচ্ছে। কিংবা যেন আপনার অবস্থাটাই আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে। ধরুন, আপনার মাথায় কোন একটা গুনাহ করার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সে গুনাহতে আপনি এখনও জড়ান নি। তবে জড়াবেন জাড়বেন অবস্থা। এর মধ্যেই আপনি কুরআন তিলাওয়াত করতে বসলেন। আপনার সামনে এলো এই আয়াত:

“আর যে তার রবের সামনে দাড়ানোকে ভয় করে এবং নিজেকে কুপ্রবৃত্তির বাসনা চরিতার্থ করা থেকে বিরত রাখে তার অবস্থানস্থল হলো জান্নাত।” [সূরা নাযিআত : ৪০-৪১]

আপনি নিশ্চিত জেনে রাখুন, তখন এই আয়াত আপনার হৃদয়-নদে চিন্তার ঢেউ তুলবে। আপনাকে ভাবনার অতল সমুদ্রে ছুঁড়ে মারবে। বাধ্য করবে এভাবে চিন্তা করতে, একদিকে আমার সামনে জান্নাতের হাতছানি, অপরদিকে পাপের সাময়িক স্বাদের লোভ। কোনটা ছেড়ে কোনটা ধরি? বারবার এই আয়াতটা তিলাওয়াত করতে থাকুন এবং আপন মনে হিসেব কষতে থাকুন। একবার, দুইবার, তিনবার, বারবার বারাবার। দেখবেন আপনি হৃদয়ের গহীনে ঐশ্বরিক শক্তির অনুভূতি টের পাবেন। নিজের পাপের ইচ্ছার মুখে লাগাম পরানো তখন আপনার ‘বায়ে হাত কা খেল’ হয়ে যাবে।

সুতরাং কুরআন বোঝার কোন বিকল্প নাই। কুরআন না বোঝা মানে হৃদয়ের দরজা তালাবদ্ধ হওয়া। যেই দরজা দিয়ে কখনো কল্যাণ-চিন্তার আগমন ঘটবে না। নিত্যনতুন মঙ্গলজনক ভাবনার উদয় হবে না। যে হৃদয় তালাবদ্ধ সে হৃদয় মাহরূম। আল্লাহ কুরআনে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন: “তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে না, নাকি তাদের অন্তরগুলো তালাবদ্ধ?” [ সূরা মুহাম্মাদ : ২৪]
বড় মায়ময় প্রশ্ন। যার থেকে ঝরে পড়ে অভিমানের ছটা। কেমন যেন এতো বড় দৌলত পেয়েও আমাদের গাফেল হয়ে থাকার ফলে আল্লাহ তাআলা শ্লেষাত্মক ভঙ্গিতে বললেন কথাটা।

অনেকে আবার অদ্ভুব চিন্তা লালন করেন। কুরআনের অনুবাদ পড়ার পক্ষপাতী নন তারা। এ যেন হিন্দু ধর্মের পুরোহিততন্ত্রের ইসলামী সংস্করণ। কুরআনের অর্থই যদি না পড়ে, তবে কুরআনের মর্ম নি্রযে ভাববে কীভাবে? যদি বলেন, এই ভাবনার দরকার নাই তাহলে প্রশ্ন আসে, না ভাবলে হৃদয় তালাবদ্ধ হয়ে থাকার কথা আল্লাহ তাআলা কেন বললেন? বুঝা গেলো এটা ফাও কথা। বরং আমাদের অর্থ পড়তে হবে। কুরআন বুঝতে হবে। কুরআন নিয়ে ভাবতে হবে। তবে হ্যা, কোন কিছু বুঝে না আসলে বা জটিল মনে হলে আলেমদের কাছে যেতে হবে। নিজে নিজে পণ্ডিতি করার সুযোগ নাই। হয়তো কেউ কেউ স্ব-পণ্ডিত হয়ে যান বিধায় অনেকে কুরআনের অনুবাদ পড়তে বারণ করেন। এটা কেমন যেন মাথা ব্যাথার চিকিৎসাস্বরূপ মাথা কেটে ফেলা দেবার মতোই। আমাদেরকে এসকল প্রান্তিকতার বৃত্ত থেকে মুক্ত হয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে হবে। এটিই হলো সীরাতে মুস্তাকীম।

কয়েক বছর আগে রমজানে তারাবির পর প্রতিদিন পঠিত অংশের এক দুই আয়াত নিয়ে কিছু কথা আলোচনা করতে হত আমাকে। শেষের দিন আমি চাইলাম তাদেরকে এমন কিছু বলি যা সুদূরপ্রসারী হবে। তাদেরকে যা বলেছিলাম সেগুলোই এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

সুরা ফাতেহা হল কুরআন নামক শহরের প্রবেশ পথ। তারপরের সুরাটির নাম বাকারা। যার মানে হল গরু। এটি একটি নির্বোধ প্রাণী। যার ভালো-মন্দ, সঠিক-বেঠিক ও কল্যাণ-অকল্যাণের কোন জ্ঞান নেই। তাকে ডানে যেতে বলা হলে সে যায় বামে। বামে যেতে বলা হলে যায় ডানে। সে বৈধ-অবৈধ বুঝে না। যারতার ফসলে মুখ ঢুকিয়ে দেয়। তো কেমন যেন, একজন মানুষ কুরআনের সংস্পর্শে আসার আগ পর্যন্ত তার অবস্থা একটা নির্বোধ গরুর মতোই। তারমধ্যে ভালো-মন্দ ও সঠিক-বেঠিকের কোন জ্ঞান থাকে না। তার জীবনটা হয় সেচ্ছাচারিতায় পরিপূর্ণ।

তারপর গরুর মতো নির্বোধ একজন ব্যক্তি কুরআন নামক শহরটির রাস্তা ধরে এগুতে থাকে। আস্তে আস্তে এক আয়াত করে করে সামনে বাড়তে থাকে এবং সেসব আয়াতে পাওয়া হুকুম-আহকাম, আদেশ-নিষেধ, উপদেশ-নসীহতগুলো গ্রহণ করে নেয়। নিজের জীবনে সেগুলোর বাস্তবায়ন ঘটায় এবং দেখতে দেখতে এক সময় সে শহরের শেষ ফটকে পৌঁছে যায়। যার নাম হল সুরা নাস। নাস শব্দটি ইনসান শব্দের বহুবচন। এর অর্থ হল মানুষ। তারমানে যে লোকটি কুরআনের কাছে আসার সময় গরুর মতো নির্বোধ ছিল, তার ভালো-মন্দের জ্ঞান ছিল না, পুরো শহর ঘুরে শেষ প্রান্তে আসার পর এখন আর সে গরুর মতো নির্বোধ নয়। বরং জ্ঞানসম্পন্ন একজন মানুষে পরিণত হয়েছে। তার এখন সঠিক-বেঠিকের বুঝ আছে। কুরআনের সুরাগুলোর ধারাবিন্যাসের মাঝেই কেমন যেন আমাদেরকে এই ইঙ্গিতটা দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন হল, বহু লোককেই তো দেখি সারাজীবন বহুবার কুরআন খতম করেছেন। কিন্তু কই, তারা তো মানুষের কাতারে আসতে পারে নি! কুরআন তার জীবনে কোন পরিবর্তনই আনে নি। সে আগের মতোই মিথ্যা বলে। মানুষকে গালি দেয়। মা-বাবাকে কষ্ট দেয়। সুযোগ পেলে চুরি করে। অন্যের সম্পদ মেরে দেয়।
গরুর মতোই সে নির্বোধ রয়ে গেছে। আসলে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এই লোক শুধুই কুরআন অন্ধের মতো পড়ে গেছে। এর অর্থ জানার চেষ্টা করে নি কোনদিন।


আমি কিছু একটা হয়ে গেছি


সকালে সে যে আয়াতগুলো তেলাওয়াত করেছে সেখানে বলা হয়েছিল, তোমরা মা-বাবাকে উফ পর্যন্ত বলো না। অথচ সে কুরআন তেলাওয়াতটা শেষ করেই মা-বাবার সাথে কটুবাক্যে কথা বলা শুরু করলো। একটু আগে সে পড়েছিল, আল্লাহর নাফরমানি করো না। তবে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। সে কুআরনটা গিলাফে ভরেই টিভির রিমোট হাতে নিয়ে হিন্দি সিনেমা দেখতে বসে গেল। কিংবা অফিসে গিয়ে ঘুষ নেওয়ার ধান্ধায় ডুবে গেল। আজ যদি সে যতোটুকু তেলাওয়াত করেছে তার অনুবাদটাও পড়ে নিতো সাথে, তবে মা-বাবার সাথে কটুবাক্যে কথা বলতে গেলেই তার মনে আসতো, একটু আগেই না এই বিষয়ে কুরআন আমাকে নিষেধ করেছিল! তদ্রুপ সিনেমা দেখতে বসার আগে বা অফিসে ঘুষের টাকাটা নেওয়ার সময় মনের পর্দায় ভেসে উঠতো সকালের পঠিত আয়াতের হুশিয়ারি বাক্যগুলো। ফলে সে পাপটা করতে পারতো না। করলেও তার ভেতরে ভয়টা থেকে যেত। যা তাকে পরবর্তীতে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাওয়ার পথে নিয়ে যাবার এটা সম্ভাবনা আছে। কিন্তু যেহুতু সে কুরআন নামক শহরটাতে ভ্রমন করেছে চোখ বন্ধ করে। কুরআনে কি বলা হয়েছে এটা সে জানতে পারে নি তাই কুরআনের শিক্ষাগুলো তার জীবনে কোন প্রভাব ফেলে নি। সে রয়ে গেছে আগের মতোই।

মূলত অর্থ না বুঝে শুধু তেলাওয়াত করাও একটা ইবাদাত। এটা অস্বীকার করার বা খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এর জন্যও প্রতি অক্ষরে কমপক্ষে দশ নেকি পাওয়া যাওয়ার কথা হাদিসে এসেছে। তদ্রুপ কুরআনে গচ্ছিত বিষয় থেকে শিক্ষা নেওয়া, সেগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করাও আরেকটা ইবাদাত। এটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আল্লাহ তাআলা কতো দরদের সাথে বলছেন, নিশ্চয়ই আমি কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি। সুতরাং কোন উপদেশ গ্রহণকারী নাই কি! সুবহানআল্লাহ, কতো মায়াভরা আহবান।

তো যারা শুধু তেলাওয়াত করে তাদের একটা ইবাদাত হয়। আর যারা তেলাওয়াত করে এবং অর্থ না বুঝলে পঠিত অংশের অনুবাদ, সুযোগ হলে সাথে সংক্ষিপ্তাকারে হলেও তাফসিরটাও দেখে নেয় তাদের হয় দুইটা ইবাদাত। এরাই হচ্ছে বেশি সফলকাম। তাই যিনি দৈনিক দুই রুকু তেলাওয়াত করেন তিনি যদি তার স্থলে এক রুকু তেলাওয়াত করেন এবং অপর রুকুর স্থলে পঠিত রুকুর অনুবাদ পড়ে নেন সেটাই হবে বেশি ফলপ্রসু ও উপকারী।

আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলছেন, তারা কেন কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না, নাকি তাদের অন্তরগুলো তালাবদ্ধ! এই আয়াত থেকেও বুঝে আসে তেলাওয়াতের পাশাপাশি পঠিত অংশটুকুর অর্থ জেনে নেওয়াটা আমাদের জন্য কতোটা গুরুত্ব বহন করে। তাই আসুন, আমরা শুধু তিলাওয়াতের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে অর্থ জানার প্রতিও মনোযোগী হই। সারাজীবন শুধু এক ধরনের ইবাদাত না করে দুই ধরনের ইবাদাতে সচেষ্ট হই। তবেই পঞ্চাশ পঞ্চাশে আমাদের কুরআন তেলাওয়াত একশত ভাগ পূর্ণতা লাভ করবে।

আমার কথাগুলো শেষ হবার পর দেখেছিলাম শ্রোতারা জ্বলজ্বলে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের মুখাবয়বে অন্য রকম প্রশান্তির ছাপ।
======
।।। কুরআন বোঝার মজা ।।।
আব্দুল্লাহ আল মাসউদ

নবীন বরণ – কবীর-আনোয়ার

আর রহমান এবং আর রহিম আল্লাহর নামে

সন্তান আল্লাহ তা’আলার দেওয়া একটি অমূল্য নিয়ামত। এই নিয়ামতের মূল্য যে কত বেশি তা কেবল তারাই বুঝবেন যারা এ থেকে বঞ্চিত। আর যাদেরকে এই নিয়ামত দিয়ে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন তারা কিছুটা হলেও সেই মূল্য অনুভব করতে পারেন। ইসলাম একটি পূর্ণাংগ জীবনবিধান হিসেবে নবজাতক সন্তানের প্রতি কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য বেঁধে দিয়েছে। একটি নবজাতক সন্তানকে দুনিয়ার বুকে স্বাগত জানানোর কিছু ইসলামিক বিধিবিধান রয়েছে যেগুলো মুসলিম হিসেবে পালন করা আমাদের জন্য জরুরী।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, অনেক দ্বীনদার পরিবারেও নবজাতক সন্তানের ক্ষেত্রে এই বিধানগুলো সঠিকভাবে পালন করা হয় না। যারা করেন তাদের অনেকেই আবার প্রতিটি কাজের সময়সীমা সম্পর্কে গাফেল। অথচ কোন কাজটি কখন এবং কীভাবে করতে হবে সেই বিষয়ে ইসলামের সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে। আমি এখানে সে সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করব ইনশা আল্লাহ।

(১) নবজাতকের কানে আযান দেওয়াঃ

সন্তান জন্মের পর প্রথম কাজ হল তার ডান কানে আযান দেওয়া। এটি রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে প্রমাণিত সুন্নাহ। ‘আলিমগণ বলেছেন এর পেছনে হিকমাহ হল একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই সে আল্লাহর একত্বের বাণী শ্রবণ করবে। যদিও পরবর্তী জীবনে জন্মলগ্নের আযানের কথা তার মনে থাকবে না তবুও এর একটি রুহানী প্রভাব শিশুর মনে রয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।

উবাইদুল্লাহ ইবনু আবু রাফে’ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ “ফাত্বিমাহ (রা) যখন আলী (রা) এর পুত্র হাসান (রা) কে প্রসব করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সা) তার কানে সালাতের আযানের ন্যায় আযান দিয়েছিলেন।“
[আবু দাউদঃ ৫১০৫ (তাওহীদ পাবলিকেশন); আলবানী (রহ.) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]

অনেকেই মনে করেন এই আযান সালাতের আযানের মত উচ্চস্বরে হতে হবে। কিন্তু তা ঠিক নয় বরং বাচ্চার কানের কাছে স্বাভাবিক কণ্ঠে আযান দিলেই যথেষ্ট। এই আযান দেওয়ার কোন সময় বাধ্যতামূলকভাবে নির্দিষ্ট করা হয়নি তবে ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেছেন উত্তম হচ্ছে শিশুর জন্মের পরপরই আযান দিয়ে দেওয়া যেন দুনিয়াবী অনর্থক কথাবার্তার পূর্বেই তাওহীদের বাণী তার কানে প্রবেশ করে। তবে বিন বায (রহ.) শিশুর জন্মের ৭ম দিনে আযান দেওয়াকে মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন-
ﻓﻲ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻟﺴﺎﺑﻊ ﻳﺴﺘﺤﺐ ﺃﻧﻪ ﻳﺆﺫﻥ ﻓﻲ ﺃﺫﻧﻪ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻭﻳﻘﺎﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ
অর্থঃ “ সপ্তম দিনে মুস্তাহাব হল তার ডান কানে আযান দেওয়া এবং বাম কানে ইক্বামাহ দেওয়া।”
[বিস্তারিত দেখুনঃ https://bit.ly/2PCpQIX ]

নবজাতকের বাম কানে ইকামত দেওয়ার বিষয়ে যে হাদীসগুলি রয়েছে সেগুলোর বিশুদ্ধতা নিয়ে একদল ‘আলিম প্রশ্ন তুলেছেন। এই ব্যাপারে আবু ইয়ালা ও বায়হাকীতে বর্ণিত হাদীসটিকে আলবানী (র) মাওদ্বূ’ বা জাল এবং ইবনুল কায়্যিম (র) দূর্বল বলে উল্লেখ করেছেন। তবে আহলুল ‘ইলমদের মধ্যে থেকে এক দল এবং বিন বায (রহ.) বাম কানে ইকামত দেওয়ার আমলকে সমর্থন করেছেন। বিন বায (রহ.) বলেছেন-
ﻭﻟﻜﻦ ﺟﺎﺀ ﻋﻨﻪ ﻓﻲ ﺑﻌﺾ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺘﻲ ﻓﻴﻬﺎ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻀﻌﻒ ﺍﻷﺫﺍﻥ ﻓﻲ ﺃﺫﻥ ﺍﻟﺼﺒﻲ ﻭﺍﻹﻗﺎﻣﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻣﻦ ﺃﺫﻧﻴﻪ، ﻓﺈﺫﺍ ﻓﻌﻠﻪ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﻓﻼ ﺑﺄﺱ، ﻭﻗﺪ ﻓﻌﻠﻪ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﻭﺟﻤﺎﻋﺔ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ، ﻻ ﺑﺄﺱ، ﻭﺇﻥ ﺗﺮﻙ ﺫﻟﻚ ﻭﺳﻤﺎﻩ ﺑﺪﻭﻥ ﺃﺫﺍﻥ ﻭﻻ ﺇﻗﺎﻣﺔ ﻓﻼ ﺑﺄﺱ

অর্থঃ “কিন্তু কিছু হাদীসে সন্তানের ডান কানে আযান দেওয়া এবং বাম কানে ইক্বামাহ দেওয়ার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে, যেগুলোতে কিছুটা দূর্বলতা রয়েছে। তবে যদি কেউ তা করে তবে তাতে কোনও সমস্যা নেই এবং ‘উমর ইবনে আবদুল আযীয এবং আহলুল ‘ইলমদের একটি দল এটি করেছে। এতে কোন সমস্যা নেই। আর কেউ যদি এটা না করে আযান-ইকামাত ছাড়াই সন্তানের নাম রাখে তাহলেও কোনো সমস্যা নেই”।
[সূত্রঃ https://bit.ly/2PCpQIX ]

ইবনুল কায়্যিম (র) তাঁর “তুহফাতুল মাওদুদ বি আহকামিল মাওলুদ” গ্রন্থে নবজাতকের কানে আযান দেওয়ার বেশ কিছু তাৎপর্য উল্লেখ করেছেন যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনটি হল-

(ক) দুনিয়াবী অনর্থক কথাবার্তার পূর্বেই তাওহীদের বাণী তার কানে প্রবেশ করবে।

(খ) জন্মলগ্নে শয়তানের অনিষ্ট থেকে হেফাযত করবে।

(গ) দুনিয়ায় ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে ইসলামের দাওয়াত তার কাছে পৌঁছে যাবে।

(২) তাহনীক করা ও শিশুর বরকতের দুয়া করাঃ

শিশুর জন্মের পর সম্ভব হলে খেজুর চিবিয়ে অথবা অন্য কোন উপায়ে চটকে তার সামান্য রস শিশুর মুখে দেওয়াকে বলা হয় তাহনীক। খেজুর না থাকলে মধু বা যে কোন মিষ্টি জাতীয় খাদ্য দিয়েও তাহনীক করা যায়। এটিও রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে প্রমাণিত সুন্নাহ।

আবূ মূসা (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, “আমার একটি পুত্র সন্তান জন্মালে আমি তাকে নিয়ে নবী (সা) এর কাছে গেলাম। তিনি তার নাম রাখলেন ইবরাহীম। তারপর খেজুর চিবিয়ে তার মুখে দিলেন এবং তার জন্য বরকতের দূয়া করে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলেন। সে ছিল আবূ মূসার সবচেয়ে বড় ছেলে।“ [বুখারী (ইসলামিক ফাউণ্ডেশন): ৪৯৫৮]

উত্তম হল কোন ‘আলিম বা পরহেযগার ব্যক্তি অথবা তা সম্ভব না হলে শিশুর পিতা/মাতার দ্বারা তাহনীক করা। ইমাম নববী (র) বলেছেন, “তাহনীকের বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে প্রমাণিত সুন্নাহ এবং এই বিষয়ে ‘আলিমগণের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে”।

এই তাহনীকের জন্য উত্তম সময় হল শিশুর জন্মের পরপরই।

(৩) শিশুর নাম রাখাঃ

শিশুর নাম রাখার জন্য উত্তম সময় হল জন্মের সপ্তম দিন। তবে প্রথম দিন থেকে সাত দিনের মধ্যে যে কোন সময় রাখা যায়।

আয়িশাহ (রা) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা) সপ্তম দিনে হাসান এবং হুসাইন এর আক্বীকাহ করেছিলেন এবং তাদের নাম রেখেছিলেন।“ [ইবনু হিব্বান এবং হাকিম থেকে বর্ণিত। ইবনু হাজার আসকালানী তাঁর ‘ফাতহুল বারী’তে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]
বিন বায (রহ.) বলেছেন-
ﻓﻲ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻟﺴﺎﺑﻊ ﻳﺴﺘﺤﺐ ﺃﻧﻪ ﻳﺆﺫﻥ ﻓﻲ ﺃﺫﻧﻪ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻭﻳﻘﺎﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﻳﺴﻤﻰ ﻓﻲ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻟﺴﺎﺑﻊ
অর্থঃ “ সপ্তম দিনে মুস্তাহাব হল তার ডান কানে আযান দেওয়া, বাম কানে ইক্বামাহ দেওয়া এবং নাম রাখা।”
[বিস্তারিত দেখুনঃ https://bit.ly/2PCpQIX ]

নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে ‘আলিমগণ এভাবে ক্রম অনুসরণ করতে উৎসাহ দিয়েছেন-

(ক) আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান (এই দুটি নাম আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়) অথবা আল্লাহর যেকোন নামের আগে ‘আবদ’ যোগ করে নাম রাখা।

(খ) নবীগণের নামানুসারে নাম রাখা।

(গ) সাহাবাগণের নাম অথবা সাহাবাগণ যেসব নাম পছন্দ করতেন সে অনুসারে নাম রাখা।

(ঘ)কোন ‘আলিম অথবা পরহেযগার ব্যক্তির সাথে পরামর্শ করে নাম রাখা।

আর এই ধরণের নামগুলি ‘আলিমগণ রাখতে নিষেধ করেন-

(ক) অমুসলিমদের কালচার অনুযায়ী কোন নাম

(খ) অমুসলিমদের দেব-দেবীকে উপস্থাপন করে এমন কোন নাম

(গ) শির্ক/কুফরী/অনৈসলামিক রীতি প্রকাশ পায় এমন কোন নাম (যেমন- গোলাম রসুল যার অর্থ রাসূলের গোলাম)

(ঘ) ইসলামী অর্থবোধক হলেও মানুষের গুণের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন/কল্পনা প্রকাশ পায় সেসব নাম। (যেমন- মুহিউদ্দীন যার অর্থ দ্বীনের পুনর্জীবনদানকারী, জাহাঙ্গীর যার অর্থ দুনিয়া ধারণকারী ইত্যাদি)

(৪) আক্বীকাহ করাঃ

আক্বীকাহ করার সুন্নাহ সম্মত সময় হল শিশুর জন্মের সপ্তম দিন। তা সম্ভব না হলে ১৪ তম অথবা ২১ তম দিনেও করা যায়। এমনকি ইবুন কুদামাহ (র)-এর মতে, সপ্তম দিনের আগেও কেউ যদি কোনো কারণে আক্বীকাহ করে ফেলে তাহলেও তা যথেষ্ট হবে। (আল-কাফী, খণ্ড-০২, পৃষ্ঠা-৪৯৮)

এগুলো বাধ্যতামূলক সময়সীমা নয় বরং মুস্তাহাব। আক্বীকাহ ওয়াজিব না সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ তা নিয়ে ‘আলিমগনের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে যার সামর্থ্য আছে তার জন্য অবশ্যই উচিত হবে আক্বীকাহ করা। ছেলে শিশুর পক্ষ থেকে দুটি ছাগল বা ভেড়া এবং মেয়ে শিশুর পক্ষ থেকে একটি ছাগল বা ভেড়া জবাহ করতে হবে। আমাদের দেশে কুরবানীর গরুর সাথে ভাগে আকীকা দেয়ার যে প্রচলন রয়েছে তা সুন্নাহসম্মত নয়। আর সামর্থ্য থাকার পরেও নির্দিষ্ট সময়ে আকীকা না দিয়ে কুরবানীর সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা সুন্নাহবিরোধী কাজ।

শাইখ বিন বায (র)-এর মতে, অতিথি বেশি হওয়ার কারণে বা অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য কারণে আকীকার পশু বেশি কম করলে কোনো সমস্যা নেই। এই বিষয়টি প্রশস্ত। আর আকীকার গোশত শিশুর মা-বাবাসহ সবাই খেতে পারবে। কাউকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো যায়, কিছু নিজেরা রেখে কিছু আত্মীয়-স্বজন বা ফকীর-মিসকীনদের হাদিয়া দেয়া যায়। (আল-হাদইউন নাবাবী ফী তারবিয়াতিল আওলাদি ফী যাওয়িল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, ড. সাঈদ আল-কাহতানী, পৃষ্ঠা- ৬৭)

সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “আকীকার সাথে শিশুর বন্ধক। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে পশু জবেহ করা হবে। তার নাম রাখা হবে। তার মাথা মুণ্ডণ করা হবে।” [সহীহ ইবনু মাজাহঃ৩১৬৫, তিরমিযীঃ ১৫২২ (আল মাদানী প্রকাশনী)]

ইমাম তিরমিযী (রহ.) এই হাদীসের ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, “এই হাদীসটি হাসান সহীহ। আলিমদের এতদনুসারে আমল রয়েছে। তারা শিশুর পক্ষ থেকে সপ্তম দিন আকীকা করা মুস্তাহাব বলে মত প্রকাশ করেছেন। সপ্তম দিন যদি প্রস্তুত না হয় তবে চৌদ্দতম দিনে, সে দিনে প্রস্তুত না হতে পারলে একুশতম দিনে আকীকা দিবে। কুরবানীতে যে ধরণের ছাগল জবাই করা যায়েয, আকীকাতেও সে ধরণের ছাগল না হলে তা জবাই করা যথেষ্ট বলে গণ্য হবে না।”

ইবনুম কায়্যিম (র) তাঁর “তুহফাতুল মাওদুদ বি আহকামিল মাওলুদ” গ্রন্থে আক্বীকাহ-র কয়েকটি তাৎপর্য উল্লেখ করেছেন-

(১) এর মাধ্যমে নবজাতক আল্লাহর নিকটবর্তী হয়।

(২) শয়তানের অনিষ্ট থেকে হিফাজতে থাকে।

(৩) শিশু সন্তান তার বাবা-মার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার সুযোগ লাভ করে।
“আকীকার সাথে শিশুর বন্ধক”- হাদীসের এই অংশের বাখ্যায় অনেক উলামায়ে কিরাম বলেছেন- এর অর্থ হল বাবা-মা যদি সন্তানের জন্য আক্বীকাহ না করে তবে সন্তান ঐ বাবা-মার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে পারবে না।

(৪) আল্লাহ যেমন ইসমাঈল (আ) এর মুক্রিপণস্বরূপ দুম্বা প্রেরণ করেছিলেন তেমনি আক্বীকাহ হল নবজাতকের জন্য মুক্তিপণস্বরূপ।

আক্বীকাহ-র আরেকটি উপকারিতা হল এর ফলে আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে “Halaal Gathering” হয় এবং পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়।
আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি ভিত্তিহীন কুসংস্কার হল আক্বীকাহ-র গোশত শিশুর বাবা-মা খেতে পারবে না। এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট কুসংষ্কার। আক্বীকাহ-র গোশত কুরবানীর গোশতের মতই সবাই খেতে পারবে ইনশাআল্লাহ।

এছাড়াও শিশুর আক্বীকাহ তার নানা-নানী/দাদা-দাদী করতে পারে। বাবা-মাকেই করতে হবে এমনটা জরুরী নয়। রাসূলুল্লাহ (সা) হাসান বিন আলী (রা) এর আক্বীকাহ করেছিলেন বলে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তবে আমাদের সমাজে নবজাতকের নানা-নানীর উপর আক্বীকাহ-র খরচ চাপিয়ে দেওয়ার যে বাধ্যতামূলক রীতি দেখা যায় তা নিন্দনীয় ও বর্জনীয়।
আক্বীকাহর পশু কুরবানি সংক্রান্ত অনেক মাস’আলা রয়েছে যেগুলো কোন নির্ভরযোগ্য ‘আলিমের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।

(৫) মাথা কামিয়ে দেওয়াঃ

নবজাতক পুত্র সন্তানের মাথা কামিয়ে দেওয়ার উত্তম সময় হল তার জন্মের ৭ম দিন, যেমনটা সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত উপরোক্ত হাদীসে দেখা যায়। মাথার চুল কামিয়ে তা ওজন করে সমপরিমাণ স্বর্ণ অথবা রূপা অথবা তার সমতুল্য মূল্য সাদাকাহ করে দিতে হবে। যেহেতু এই চুলের ওজন খুব কম থাকে তাই সঠিক ওজন নির্ণয় করতে না পারলে কাছাকাছি অনুমান করে সমপরিমাণ মূল্যের টাকা সাদাকাহ করে দিতে হবে। নবজাতক কন্যা সন্তানের মাথা কামানোর প্রয়োজন নেই বরং শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন (রহ.) এর মতে তা মাকরুহ। তিনি বলেন-
It is not Sunnah to shave a girl’s head on the seventh day as is the case for boys. With regard to shaving it for a reason, as referred to in the question, if that is true, the scholars say that it is makrooh to shave the head of a girl, but it may be said that if it is proven that this is something that will make the hair grow and become thick, then there is nothing wrong with it, because it is well known that what is makrooh is no longer regarded as makrooh if there is a reason for it.
সূত্রঃ https://goo.gl/LxrE4শ

(৬) খৎনা করাঃ

ছেলে শিশুর জন্য খৎনা করা সুন্নাতুল ফিতরাহ এর অন্তর্ভুক্ত।
আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, নাবী (সা) বলেছেন, “ফিতরাহ পাঁচটি অথবা বলেছেন, পাঁচটি কাজ হল ফিতরাহ এর অন্তর্ভুক্ত- খৎনা করা, ক্ষুর দ্বারা নাভীর নিচের লোম পরিষ্কার করা, নখ কাটা, বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা এবং গোঁফ কাটা।”
[সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমি): ৪৮৫]

বালেগ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যেকোন সময় খৎনা করা যায়। তবে একেবারে বালেগ হওয়ার আগে আগে খৎনা করলে তা সন্তানের জন্য আতঙ্ক ও ভয়ের কারণ হয়। তাই বুঝ হওয়ার পূর্বেই খৎনা করে ফেলা ভাল। এতে সন্তান মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি পায়।

এই ছিল আমাদের আলোচনার বিষয়। এর যা কিছু সঠিক তা আল্লাহর পক্ষ থেকে আর যা কিছু ভুল তা আমার পক্ষ থেকে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে নেককার সন্তান দান করুন, পরিপূর্ণ সুন্নাতী পন্থায় নবজাতক সন্তানকে বরণ করে নেওয়ার তাওফীক দিন, আমাদের সন্তানকে পরিপূর্ণ বয়সে পৌঁছে দিন এবং আমৃত্যু আমাদের ও তাদেরকে দ্বীন ইসলামের উপর অটল ও অবিচল থাকার তাওফীক দিন। আমীন।
——-
নবীন বরণ,কবীর আনোয়ার
নোঙর

আমি কিছু একটা হয়ে গেছি

“আমি কিছু একটা হয়ে গেছি!”

কুরআনে একটি আয়াত আমরা প্রায়ই পড়ি। কিন্তু প্রয়োজন অনুপাতে খুব কমই মনোযোগ দেই। সত্যি বলতে, এটি গভীর চিন্তার দাবী রাখে। আয়াতটি হচ্ছে,
“…পা দৃঢ় হওয়ার পর পিছলে যাবে।” [সূরা আন নাহল, ৯৪] 

আল্লাহ্‌ বলেননি ‘পা দূর্বল হওয়ার পর পিছলে যাবে।’ বরং বলছেন ‘দৃঢ় হবার পর’।

দুনিয়ার এই জীবন অসংখ্য পরীক্ষায় ভরপুর। একের পর এক পরীক্ষা আসতেই থাকে। আর আল্লাহ্‌ যদি আমাদের অন্তরকে দৃঢ় না রাখতেন, তাহলে খুব সম্ভব আমাদের ভিতরটা কষ্টে, আঘাতে এমনভাবে দুমড়ে মুচড়ে যেত যে, আমরা নিজেরাই অবাক হয়ে যেতাম! কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই আমাদের পদস্খলন ঘটিয়ে দিতো।

তবে এ ধরনের পদস্খলন ক্রমশই হয় না। তথাপি দ্বীনের ওপর দৃঢ়তা স্রেফ নসিহত শোনা বা পড়ার দ্বারা বজায় থাকে না। বরং তা বজায় থাকে তাৎক্ষণিক আমলে নেবার দ্বারা। এর প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ্‌ বলেন,
“…যা করতে তাদেরকে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা তা করলে তাদের জন্য নিশ্চয়ই কল্যাণকর হত এবং চিত্তস্থিরতায় দৃঢ়তর হত।” [সূরা আন-নিসা, ৬৬]

সালাফদের মতো করে যারা বোঝে না, তাদেরকে তুচ্ছজ্ঞান করবেন না। তেমনি ‘পাপের ওপর অটল’ কারও ওপর আশাও ছেড়ে দেবেন না। অবাক হবেন না সেই বোনকে দেখে, যিনি এখনো ঠিকভাবে হিজাব করে না। আর আপনি যে আল্লাহর প্রশংসা করতে পারছেন, দ্বীনের ওপর আছেন, এগুলো আপনার কৃতিত্ব নয়; বরং আল্লাহর করুণার-ই ফল।

বিশ্বাস হচ্ছে না? বেশি কিছু করতে হবে না, শুধু তাদের কাছে যান, যারা হেদায়াত পাওয়ার পর তা খুইয়ে ফেলেছে, জাহিলিয়াতের জীবনে আবার ফিরে গেছে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন। বুঝতে পারবেন, তারা ফেঁসে গেছে।
আপনি কি জানেন, আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর নবিকেও অনুরূপ বলেছেন?
“আমি তোমাকে অবিচলত না রাখলে তুমি তাদের দিকে কিছুটা প্রায় ঝুঁকে পড়তে।” [সূরা আল ইসরা, ১৭: ৭৪]

হ্যা, আল্লাহর দয়া না থাকলে নবিজীর অন্তরও ভ্রান্তিতে পড়ে যেত। নবিজীর! জ্বী। তাহলে আপনার আমার অবস্থান কোথায়?
.
দ্বীনের পথে আপনার অবিচলতা, প্রত্যহ নিজেকে আরও এগিয়ে নেবার আগ্রহ-উদ্দীপনা—এগুলো কোনোটাই আপনার হাতের কামাই নয়।

‘আমরা কী করব তাহলে? ফিতনার এই যুগে কীভাবে আমরা দ্বীনের ওপর অবিচল থাকব?’
আমি আপনাদেরকে ৫টি উপায় সাজেস্ট করছি। এগুলো দ্বারা আপনি দ্বীনের ওপর অবিচল থাকতে পারবেন ইন শা আল্লাহ:

(১) কুরআন পড়ুন, কুর’আন নিয়ে ভাবুন
আল্লাহ্‌ বলেন, ‘আপনার হৃদয়কে তা দ্বারা মযবুত করার জন্য’ [সূরা আল-ফুরকান, ৩২]

(২) পূর্ববর্তী নেককারদের জীবনী পড়ুন
“রসূলদের ঐ সব বৃত্তান্ত আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি, এর দ্বারা আমি তোমার হৃদয়কে সুদৃঢ় করি।’ [সূরা হুদ, ১২০]

(৩) জানা মাত্রই ইলমের ওপর আমল করুন
“…যা করতে তাদেরকে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা তা করলে তাদের জন্য নিশ্চয়ই কল্যাণকর হত এবং চিত্তস্থিরতায় দৃঢ়তর হত।” [সূরা আন-নিসা, ৬৬]

(৪) বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হোন
“তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখো, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে তাঁর মুখমন্ডল (দর্শন বা সন্তুষ্টি) লাভের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না। আর তুমি তার আনুগত্য করো না, যার হৃদয়কে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি, যে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে ও যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে।” [সূরা আল-কাহাফ, ২৮]

(৫) এবং সবশেষে দুয়ায় লেগে থাকুন
يَا مُقَلِّبَ القُّلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِيْنِكَ
“হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের ওপর অটল রাখুন।”
[আত-তিরমিযী]

— উস্তাদ আলী হাম্মুদা
.
[অনূদিত এবং কিঞ্চিত পরিমার্জিত]
কলামিষ্ট হুজুর

কেমন ছিলেন নবী (সাঃ) ?

কেমন ছিলেন নবী (সাঃ) ?

মা আ’ইশা (রা.) বলেন, প্রিয়নবীকে দু’টি কাজের মধ্যে একটি বেছে নিতে বলা হলে সহজ কাজটিই বেছে নিতেন। পাপের সাথে সম্পৃক্ত কাজ থেকে তিনি দূরে থাকতেন।

তিনি ক্রোধ ও দুর্বিনীত ব্যবস্থা থেক দূরে ছিলেন। সকলের প্রতি তিনি সহজেই রাজী হয়ে যেতেন। তাঁর দান ও দয়াশীলতা পরিমাপ করা অসম্ভব ছিল। তিনি কল্যাণ ও দানশীলতায় পরিপূর্ণ বাতাসের চেয়ে অগ্রণী ছিলেন।

বীরত্ব ও বাহাদুরীর ক্ষেত্রে প্রিয় নবী (সাঃ) – এর স্থান ছিল সবার উপরে। তিনি ছিলেন সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বীর। তিনি সুকঠিন সময়েও পশ্চাৎপসারণ না করে সামনে এগিয়ে যেতেন। তাঁর চেয়ে বেশী দৃঢ়তার সাথে অন্য কেউ শত্রুর মোকাবেলা করতে সক্ষম হতো না। তিনি ছিলেন সর্বাধিক লাজুক প্রকৃতির।

তিনি সাধারণত মাটির দিকে দৃষ্টি রাখতেন। কোনো কিছু তাঁর পছন্দ না হলে তাঁর চেহারা দেখেই বোঝা যেত। লজ্জাশীলতা ও সম্মানবোধ এত প্রবল ছিল যে, কারো মুখের ওপর সরাসরি অপ্রিয় কথা বলতেন না। তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশী ন্যায়পরায়ণ পাক-পবিত্র, সত্যবাদী এবং বিশিষ্ট আমানতদার। বন্ধু, শত্রু সকলেই এটা স্বীকার করতেন। তিনি ছিলেন অতি বিনয়ী ও নিরহঙ্কার।

বিশ্বজাহানের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূল (সাঃ) নিজের জুতো, কাপড় নিজেই সেলাই করতেন। নিজ বকরি দোহন করা ইত্যকার নানা সাংসারিক কাজ তিনি নিজ হস্ত মোবারক দিয়েই করতেন। অঙ্গীকার পালনে তিনি ছিলেন অগ্রণী।

তিনি আত্বীয়-স্বজনের প্রতি অতিমাত্রায় খেয়াল রাখতেন। মানুষের সাথে সহৃদয়তা ও আন্তরিকতার সাথে মেলামেশা করতেন।

স্বভাবগতভাবেই তিনি কখনো অশালীন কথা বলতেন না। কাউকে কখনো অভিশাপ দিতেন না। উচ্চস্বরে কথা বলতেন না। তাঁর খাবার-দাবার, আচার-আচরণ, কথা-বার্তা সকল কিছু সকল মানুষের প্রতি সমান ছিল। তিনি কাউকে ছোট মনে করতেন না।

সাইয়্যেদুল মুরসালিন প্রিয়নবী (সাঃ) বেশীরভাগ সময় গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। অপ্রয়োজনে কথা বলতেন না। কথার শুরু ও শেষে সুস্পষ্ট উচ্চারণ করতেন।

তিনি ছিলেন নরম মেজাজের অধিকারী। তিনি কখনো সমালোচনা করতেন না। সত্য ও ন্যায়ের পরিপন্থী কোনো কিছু দেখলে তিনি বিরক্ত হতেন। তাঁর মন ছিল বড় উদার।

তিনি কাউকে ইশারা করতে চাইলে হাতের পুরো তালু ব্যবহার করতেন। বিস্ময়ের সময় হাত উল্টাতেন। ক্রুদ্ধ হলে মুখ ফিরিয়ে নিতেন এবং খুশী হলে দৃষ্টি নিচু করতেন। অধিকাংশ সময়ে মৃদু হাসতেন।

হাসির সময়ে তাঁর দাঁতের কিয়দংশ ঝকমক করত। তিনি সম্মানিত লোককেই নেতা নিযুক্ত করতেন।

মানুষের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতেন। সাহাবাদের খবরা-খবর নিতেন। সব বিষয়েই মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতেন। কোনো বিষয়ে অমনোযোগী থাকা তিনি পছন্দ করতেন না। তাঁর কাছে তাঁদের মর্যাদাই ছিল অধিক— যারা ছিলেন অন্যের দুঃখে কাতর, স্বভাবতই গম্ভীর এবং অন্যের সাহায্যকারী।

তিনি উঠতে বসতে সর্বদাই আল্লাহকে স্মরণ করতেন। তাঁর বসার জন্য আলাদা কোনো জায়গা ছিল না। যেখানে খালি জায়গা পেতেন সেখানেই বসতেন। তিনি ছিলেন সবার কাছে পিতৃতুল্য। তিনি তাদেরকেই অধিক সম্মান দিতেন যারা বেশীমাত্রায় তাকওয়ার অধিকারী। তাঁর মজলিস বা সমাবশ ছিল জ্ঞান, ধৈর্য, লজ্জাশীলতা ও আমানতদারীর মজলিস।

তিনি বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করতে আদেশ দিতেন। অপরিচিত লোককে অবজ্ঞা বা উপেক্ষা করা হতো না।

তিনি তিনটি বিষয় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতেন।
১) অহঙ্কার
২) কোনো জিনিসের বাহুল্য এবং
৩) অর্থহীন কথা।

আর তিনটি বিষয় থেকে লোকদের নিরাপদ রাখতেন। এগুলো হচ্ছে—
১) পরের নিন্দা
২) কাউকে লজ্জা দেওয়া এবং
৩) অন্যের দোষ প্রকাশ করা।

তিনি এমন কথাই শুধু মুখে আনতেন, যে কথায় সওয়াব লাভের আশা থাকত। তিনি যখন কথা বলতেন তখন সাহাবীগণ এমনভাবে মাথা নিচু করে বসতেন যে, মনে হতো তাদের মাথায় চড়ুই পাখি বসে আছে।

তিনি হাসলে সাহাবীগণ হাসতেন, তিনি অবাক হলে তারাও অবাক হতেন, তিনি নীরব হলে সবাই নীরব হয়ে যেতেন। এমনই ছিল তাঁর ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন তাঁর মজলিশের সবচেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদাশীল। পোশাক পরিধানে তিনি ছিলেন অতীব শালীন।

-বিভিন্ন সীরাতগ্রন্থ থেকে সংকলিত।

সাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া সাল্লাম
তোমাকে ভালোবাসি হে নাবী
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
লিখেছেনঃ রাজিব হাসান (বা-রাকাল্লাহু ফি ইলমিহি)

আপনার হিরো কে ?

গল্পটি ইসলামের শুরুর দিকের। প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ডাকলেন। বললেন, ‘কোনো কারণে আজ আমি অনেক বেশি আনন্দিত৷ এ উপলক্ষ্যে তুমি আমার কাছে যা চাইবে, তা-ই দেব। বল, কী চাও তুমি?হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ভাবনায় পড়ে গেলেন। হঠাৎ করে এমন কী চাইবেন! তাছাড়া মনে যা-ই আসে, তা তো আর চাইতে পারেন না তিনি! যদি কোনো ভুল আবদার করে বসেন! ভয় হয় তার। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি ভুল আবদারে কষ্ট পেয়ে যান?

এমন অনেক প্রশ্নই তাঁর মনে জাগতে লাগলো।বহু সময় পর হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কী আব্বুর কাছ থেকে একটা পরামর্শ নিতে পারি?’ প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুমতি দিলেন। বললেন, ‘ঠিক আছে, তুমি তোমার আব্বুর পরামর্শ নিয়েই আমার কাছে চাও।’

হজরত আয়েশা রাদিল্লাহু আনহা তার পিতা হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে গেলেন। কুশলাদি বিনিময়ের পর বিশ্বনবির পুরো ঘটনাটি তাঁকে বললেন। অতঃপর পরামর্শ চাইলেন।হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘নবীজির কাছে যখন কিছু চাইবেই, তখন মিরাজের রাতে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে তাঁর যেসব গোপন কথা হয়েছিলো, সেসব জানতে চাইতে পারো। তবে আমায় কথা দাও, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলবেন, তা সর্বপ্রথম আমাকেই জানাবে।’পরামর্শ পেয়ে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা উৎফুল্ল হলেন। বাবাকে কথা দিলেন সবার আগে বিষয়টি তাঁকেই জানাবেন।

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন। অতঃপর মিরাজের রাতের এমন একটি গোপন কথা জানতে চাইলেন, যা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখনও কাউকে বলেননি। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হাসলেন। সহধর্মিনীর এমন আবদারে অবাক হলেন। বললেন, ‘সেইসব কথা বলে দিলে আর গোপন থাকে কী করে! একমাত্র আবু বকরই পারেন এমন বিচক্ষণ প্রশ্ন করতে।`

এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আয়েশা! আল্লাহ আমাকে মিরাজের রাতে বলেছেন, হে মুহাম্মদ! তোমার উম্মতের মাঝে যদি কেউ কারো ভেঙে যাওয়া মন জোড়া লাগিয়ে দেয়, তাহলে আমি তাকে বিনা হিসেবেই জান্নাত দান করব।

(সুবহানাল্লাহ!)প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার পিতা হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এসে সালাম দিয়ে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখে শোনা কথাগুলো শোনালেন।

হজরত আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তো কথাগুলো শুনতেই কাঁদতে আরম্ভ করলেন৷ হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বাবার এমন (কান্নার) আচরণে বেশ অবাক হলেন! বললেন, ‘আব্বু! আপনি তো শত শত ভাঙা মন জোড়া লাগিয়েছেন৷ আপনার জন্য তো সরাসরি জান্নাতে যাওয়ার সুসংবাদ এটি, তবে কাঁদছেন কেন?

হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘হে আয়েশা! কথাটির উল্টো দিক নিয়ে খানিকটা চিন্তা কর। কারো ভাঙা মন জোড়া লাগালে যেমন আল্লাহ তাআলা জান্নাত দান করবেন, তেমনি কারো মন ভাঙলে আল্লাহ যদি সোজা জাহান্নামে দিয়ে দেন? নিজের অজান্তেই না জানি কত জনের মন ভেঙেছি আমি। আল্লাহ যদি আমাকে জাহান্নামে দিয়ে দেন, সেই চিন্তায় আমি কান্নায় ভেঙে পড়ছি।

এ হলো ইসলাম ও তার অনুসারীদের কাহিনী। কোনো কারণে দুনিয়ায় থেকে জান্নাতের সুসংবাদ লাভের পরও এভাবে ওই বিষয়ের উল্টা দিকও চিন্তা করতেন সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম। এভাবেই ইসলাম আমাদেরকে শিক্ষা দেয় কাউকে কষ্ট না দিতে; মানুষকে মানুষের বিপদাপদে পাশে দাঁড়াতে৷ প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ‘তুমি গোস্ত রান্না করলে ঝোলের জন্য এক গ্লাস জল বেশি দাও, যেনো তোমার গরিব প্রতিবেশীকেও খানিকটা দিতে পারো। আর যদি না দিতে চাও, তাহলে এমন সময় রান্না করো, যখন প্রতিবেশীর বাচ্চা ঘুমিয়ে থাকে।

গোস্তের সুঘ্রাণ পেয়ে তারা যেন বাবা-মাকে গোস্ত খাওয়ার কথা বলতে না পারে। কারণ গরিব বাবা-মা হয়ত তাদের গোস্ত কিনে খাওয়াতে পারবে না, তখন তারা হয়তো মনে অনেক কষ্ট পাবে।’ইসলাম মানুষকে এভাবেই মানবতার শিক্ষা দিয়েছে। নিজেদের জীবনেও প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমও আমাদেরকে বাস্তবজীবনে মানবতা স্বরূপ শিক্ষা দিয়েছেন।

তাঁরাই আমাদেরকে বলেছেন মানুষের মন না ভাঙতে, মানুষকে কষ্ট না দিতে।কিন্তু আজ খোদ আমরাই ইসলাম ও মুসলমানের সুরে সুর মেলাই৷ দাবি করি খাঁটি মুসলমান৷ ইসলামের নামে গাই কত শত গান। শত নীতি বাক্যে স্লোগানে স্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তুলি। কিন্তু বাস্তবে কাজ করি কীসের? হায়! কবে যে বোধোদয় হবে আমাদের!

ইসলামই একমাত্র মানবতার শ্রেষ্ঠ কথা বলে৷ ইসলামই একমাত্র সত্য ও সাম্যের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা দেয়৷ কিন্তু আমরা মুসলমান হয়েও কী সেই শিক্ষা ধারণ করতে পেরেছি! আফসোস! কবে যে পূর্ণভাবে নিজেদের রাঙিয়ে তুলবো প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সর্বোত্তম আদর্শে! কবে যে মুসলিম উম্মাহ হবে সাহাবায়ে কেরামের মতো উত্তম ও শ্রেষ্ঠ চরিত্রিক গুণাবলীর অধিকারী!

লেখক- শিক্ষার্থী, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত

সত্য বলতে লজ্জা নেই,ডা. শামসুল আরেফিন

সত্য বলতে লজ্জা নেই ✒✒ Shamsul Arefin Shakti

পুরুষ যেন নারীর প্রতি আকর্ষিত হয়, এভাবেই নারীকে সৃজন করা হয়েছে। নারীদেহের গড়নের প্রতি পুরুষের দুর্বলতা আছে। পুরুষের গড়নের প্রতিও নারীর দুর্বলতা আছে, এটা সিস্টেম। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক যে আপনাকে একটা মেয়ে আঁকতে দিলে আপনি শরীরের বাকি অংশের চেয়ে কোমর সরু করে আঁকবেন।

বয়ঃসন্ধিকালে নারীর ডিম্বাশয় থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোন বেরিয়ে পুরো দেহে নানান জায়গায় প্রভাব ফেলা শুরু করে। ফলে কন্ঠস্বর চিকন হয়, ত্বকের নিচে চর্বিস্তর জমে শরীর নরম-মোলায়েম হয়, ত্বক মসৃণ হয়, স্তন-নিতম্ব-উরুতে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়ে ‘নারীসুলভ’ আকার (Feminine Contour) চলে আসে। এবং এই উঁচুনিচু জিওগ্রাফি পুরুষকে আকর্ষণ করে, তাদের কাছে ভালো লাগে।গবেষকরা বলেছেন, চেহারার সৌন্দর্যের চেয়ে পুরুষ বেশি গুরুত্ব দেয় ফিগারকে। বিশেষ করে ‘বালুঘড়ি’র মত গড়ন (hourglass figures)।

এবং এই অনুভূতি হতে পুরুষের মগজ সময় নেয় সেকেন্ডেরও কম সময়। মানে সেকেন্ডের কম সময়ে [ড] একজন পুরুষ একটা মেয়ের ফিগার দেখে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, মেয়েটি আকর্ষণীয় কি না। তাদের মতে, মেয়েদের নিতম্ব ও কোমরের অনুপাত (waist-to-hip ratio) ০.৭ হলে সেটা হল সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফিগার। এবং এই অনুপাত নারীর সুস্থতা ও উর্বরতার জন্যও ভাল। বিভিন্ন কালচারে এই অনুপাত ০.৬-০.৮ এর মধ্যে [1]।

বালুঘড়ি

New Zealand-এর Victoria University of Wellington –এর অধীন School of Biological Sciences এর নৃতাত্ত্বিক Dr Barnaby Dixson এর নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয় Archives of Sexual Behaviour -এর 2011তে ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় (শিরোনাম: Eye-tracking of men’s preferences for waist-to-hip ratio and breast size of women.) [2]। একই নারীর ছবিতে বুক, কোমর ও নিতম্বের মাপকে বাড়িয়ে কমিয়ে ভলান্টিয়ারদের দেখানো হয়।

ইনফ্রারেড ক্যামেরার দ্বারা তাদের চোখ কোথায় কতবার আটকাচ্ছে দেখা হয় (numbers of visual fixations), কতক্ষণ কোথায় আটকে আছে তা দেখা হয় (dwell times), প্রথমবারেই কোথায় আটকাচ্ছে (initial fixations) তাও দেখা হয়। তারা পেলেন, সব পুরুষের চোখ প্রথমেই নারীর যে অঙ্গে আটকায় তা হল বুক আর কোমর। সবচেয়ে বেশি সময় আটকে থাকেও এই দুই জায়গায়। তবে বার বার তাকিয়েছে এবং বেশিক্ষণ ধরে তাকিয়েছে বুকের দিকে, কোমর-হিপের মাপ যাই হোক। আর মার্কিং করার সময় বেশি আকর্ষণীয় হিসেবে মার্ক দিয়েছে চিকন কোমর ও ‘বালুঘড়ি’ শেপের ফিগারকে, স্তনের মাপ যাই হোক। ডেইলিমেইল [3] ও টেলিগ্রাফ পত্রিকায়ও এসেছে গবেষণাটি [4]।

তাহলে বুঝা গেল, পুরুষের সব আকর্ষণের কেন্দ্র তিনটা জায়গা [ঢ]। বয়সন্ধিকালে ইস্ট্রোজেন হরমোনের কারণে যে নারীসুলভ প্যাটার্নে চর্বি জমে (Female distribution of fat) তার ফলেই তৈরি হয় এই নারীসুলভ গড়ন। কেউ যদি অধিকাংশ পুরুষের দৃষ্টির উদ্দীপক হতে না চায়, অলক্ষ্যে থাকতে চায় তাহলে এমন পোশাক পরিধান করতে হবে যাতে এই টিপিক্যাল ‘বালিঘড়ি’ শেপ অস্পষ্ট হয়ে যায়, নারীদেহের উঁচুনিচু যেন বুঝা না যায়।

এবার ৭ জন মেয়েকে প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়। তাদের ওজন না কমিয়ে কেবল কোমরের চর্বি কেটে নিতম্বে লাগিয়ে দেয়া হয়, সুন্দর শেপ দেয়ার জন্য। এবার এই মেয়েগুলোর সার্জারির আগের ছবি আর সার্জারির পরের ছবি দেখানো হয় বছর পঁচিশেক বয়েসের ১৪ টা ছেলেকে। তাদের ব্রেইন স্ক্যান করে পাওয়া গেল কী জানেন? আমাদের ব্রেইনে ‘Reward Center’ নামে একটা কেন্দ্র আছে। দেখে নেন, ১ নং জায়গাটার নাম VTA (Ventral Tegmental Area), ২ নং জায়গাটার নাম (nucleus accumbens) , আর ৩ নং জায়গাটা হল ফ্রন্টাল কর্টেক্স যা আমাদের ব্যক্তিত্ব নিয়ন্ত্রণ করে। এই তীর চিহ্নিত রাস্তার নাম ‘Dopamin Pathway’। এই জায়গাগুলোতে যে নার্ভকোষ থাকে তারা ‘ডোপামিন’ নামক নিউরোহরমোন ক্ষরণ করে ৩ নং জায়গায় উত্তেজনা তৈরি করে।

রিওয়ার্ড সেন্টার

আর ২ নং জায়গাটা আসক্তি সৃষ্টির জায়গা (highly sensitive to rewards and is the seat of addictive behavior)। আমাদের মগজ সব ধরনের আনন্দের অনুভূতি এভাবে তৈরি করে, সেটা বেতন-বোনাস-লটারী জেতাই হোক, যৌনমিলন হোক, কিংবা হোক নান্নার কাচ্চি, অথবা নেশাদ্রব্য [5]। তবে ড্রাগ এ এলাকায় ডোপামিনের বন্যা বইয়ে দেয়, ফলে এত আনন্দ হয় যেটা আসক্ত লোক আবার পেতে চায়। এভাবে নেশা বা আসক্তি হয় [6]। এই ১৪ টা ছেলের ব্রেইন স্ক্যান করে পাওয়া গেল, সার্জারি করার পরের ছবি দেখে (এবং কোমর নিতম্বের অনুপাত ০.৭ এর কাছাকাছি) ওদের এই এলাকাগুলো উত্তেজিত হচ্ছে। [ণ] সুতরাং, পর্নোগ্রাফি একটা নেশা।

(প্রমাণিত) আমেরিকার Georgia রাজ্যে Gwinnett College-এর Neuroscientist Steven M. Platek সাহেবের এই গবেষণা প্রকাশিত হয় PLoS One জার্নালে 5 ফেব্রুয়ারি, 2010 সংখ্যায় Optimal waist-to-hip ratios in women activate neural reward centers in men শিরোনামে [7]। তিনি Livescience ম্যাগাজিনকে বলেন, পর্নোআসক্তি এবং আসক্ত লোকের পর্নো ছাড়া যে erectile dysfunction (উত্থানরহিত) হয় তার একটা ক্লু হতে পারে এই গবেষণাটি [8]। আমরা দেখলাম, নারীর ফিগার দেখাটা নেশার মত, স্রেফ দেখাটাই [ড+ণ]। সেক্স উত্তেজিত করবে Reward Center-কে এটা তো খুবই স্বাভাবিক।

কিন্তু স্রেফ দেখাটাও একজন পুরুষে ড্রাগের মত অনুভূতি তৈরি করছে, বিষয়টা একটূ লোমহর্ষক না? এবং কারো ফিগার মূল্যায়ন হয়ে এই অনুভূতি তৈরি হতে সময় নিচ্ছে সেকেন্ডেরও কম সময়, এমন না যে একটানা তাকিয়ে দেখার পর এমন হচ্ছে। এবার এর সাথে আপনি মিলিয়ে নিন [ট] University of Arizona-র প্রফেসর Mary P. Koss- এর কথাটা, ধর্ষণ ব্যাপারটা অনেকটা মাত্রা-নির্ভর (Dose). [9]

তাহলে আমাদের এই ফিটিং ফ্যাশন, স্বচ্ছ ওড়না, ফিতাওয়ালা বোরকা, উরুর অবয়ব প্রকাশ করে দেয়া লেগিংস কী এক ফোঁটাও দায়ী নয়? একটুও দায়ী নয়? এখন আপনিই হিসেব করুন, আপনি কতজনের কত নম্বর ডোজ হয়েছেন?

আপনি কতজনের নেশাদ্রব্য হয়েছেন এ যাবত? আপনার Optimal waist-to-hip ratio কত অগণিত পুরুষের neural reward center-কে ডোপামিনে ভাসিয়েছে? ভিকটিমের পোশাক হয়ত সরাসরি দায়ী নয়, তবে আর যে হাজার হাজার নারী ধর্ষকটার সামনে দিয়ে হেঁটেছে বেসামালভাবে, তাদের ফিটিং স্বচ্ছ পোশাকের দায়, প্রকাশমান দেহাবয়বের দায় তো এড়ানো যাবে না। গবেষণাগুলোর ইঙ্গিত তো তাই বলছে, না কি?

নয়নের আলো
আমরা এই পর্যায়ে একটু জেনে নেব, আমরা কীভাবে দেখি। যেমন ধরেন, একটা লাল আপেল। ঘরটা অন্ধকার, আপেলের উপর কোন আলো পড়ছে না, তাই অন্ধকার ঘরে আপনি আপেলটা দেখতে পাচ্ছেন না। এবার লাইট জ্বালালেন। ঝলমল করে উঠল ঘর। আলোর কিছুটা আপেলের উপরও পড়ল। আপনারা হয়ত জেনে থাকবেন, সাদা আলো আসলে সাদা না, ৭ রঙা আলোর মিশেল।

সাত রঙ

বেনীআসহকলা- বেগুনী, নীল, আসমানী, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল। এই ৭ রঙ মিলেমিশে হয় সাদা রঙের আলো। এই লাল আপেলে যখন আলোটা পড়ল, আপেলটা সবগুলো রঙকে শুষে নিল, শুধু লাল আলোটাকে ফিরিয়ে দিল, প্রতিফলন করে দিল। এই ফিরিয়ে দেয়া লাল আলোটুকু আপনার চোখের মণির ভিতর দিয়ে চলে গেল চোখের পিছনে। সেখানে কিছু স্পেশাল কোষ আছে যারা আলো পড়লে বিদ্যুত তৈরি করে। লাল আলো গিয়ে ওদেরকে উত্তেজিত করল, তারা বিদ্যুত তৈরি করে মাথার পিছনে পাঠাল। আর আপনার আপেলাকারের লাল কিছু একটা দেখার অনুভূতি হল। বিঃদ্রঃ কালো কিন্তু কোন আলো না, কোন রঙের আলো না থাকলে কালো দেখা যায়। কালো জিনিস সব রঙকে শুষে নেয়। তাই কালো দেখায়।

লাল কীভাবে দেখি

চোখের পিছনে যে জায়গায় আলো গিয়ে পড়ে, সেখানে একটা বিন্দু আছে যেখানে স্পেশাল কোষগুলো ঘনভাবে থাকে। জায়গাটার নাম ‘ফোভিয়া সেন্ট্রালিস’। যখন কোন বস্তুর আলো গিয়ে এখানে পড়ে তখন সেটা স্পষ্ট দেখা যায়। মানে বস্তুটা ফোকাস হয়।

আপনি আপেলটা দেখছেন,

ফোভিয়া সেন্ট্রালিস

আপেলের পাশে জগ-গ্লাস-অন্যান্য জিনিসও আপনি দেখছেন, কিন্তু আপেলটাকে বাকিগুলোর চেয়ে একটু বেশি দেখছেন। মানে আপেলের আলোগুলো গিয়ে জায়গামত পড়েছে, ঐ বিন্দুতে। ব্যাপারটা এমন—

 

 

 

ফোকাস ননফোকাস

আর সামনে তাকালে আপনি পাশের অনেককিছুও দেখেন কিন্তু। ফোকাস ছাড়া বাকি যতদূর মাথা স্থির রেখে আপনার নজরে আসে, পুরোটাকে বলে দৃষ্টিক্ষেত্র বা Visual Field. এই ফিল্ডে যা থাকবে, সব আপনার নজরে আছে, ফিল্ডের বাইরে আমরা দেখি না।

ভিজুয়াল ফিল্ড

সাধারণত কোন একটা জিনিস ফোকাস করলে আমরা আরেকটা ফোকাসে যাই যখন আমাদের ভিজুয়াল ফিল্ডে কোন কিছু আমাদের দৃষ্টিকে আকর্ষণ করে। যেমন ফিল্ডের মধ্যে কোনকিছু নড়ে উঠল [ত] বা উজ্জ্বল হয়ে উঠল [থ], তখন আমরা আগের ফোকাস চেঞ্জ করে ঐ আন্দোলিত বা উজ্জ্বল বস্তুকে ফোকাস করি। নিজে নিজেই পরীক্ষা করে দেখুন।

উদ্দীপকের সমাধান ১:

রাস্তায় যে হাজারো পুরুষ ঘুরে বেড়ায়, তাদের প্রত্যেকের ইউনিক মনোজগতকে জানা এমনকি অনুমান করাও অসম্ভব। আলোচনার আগে আমি আপনাদের স্মরণ করার অনুরোধ করছি ‘সিম্বোলিজম’ অধ্যায়টা। কত কিছু আমাদের যৌন-উদ্দীপনার কেন্দ্র হতে পারে। প্রয়োজনে আরেকবার পড়ে নেয়া যেতে পারে। একটা মেয়ের শরীরের প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আলাদাভাবে ও সামষ্টিকভাবে সিম্বলিক হতে পারে। আপনার কলিগ বা সহপাঠীদের মাঝে এমন কেউ আছে কি না যে আপনার হাতের সৌন্দর্য নিয়ে ফ্যান্টাসিতে আছে, তা আপনি আসলেই জানেন না। কেউ চুল নিয়ে, কেউ চোখ নিয়ে, বা কেউ পুরো আপনাকেই নিয়েই অন্ধকুঠূরিতে কোন পর্যায়ে আছে, তা জানার কোন উপায়ই নেই। তাই আপনি যদি যেকোন মানসিকতার পুরুষের কাছে উদ্দীপক না হতে চান তাহলে সর্বপ্রথম [ঢ] পুরুষের আকর্ষণের কেন্দ্রীয় তিন অংশ আপনাকে ঢেকে ফেলতে হবে, ‘বালিঘড়ি’ শেপকে ও waist-to-hip ratio-কে অস্পষ্ট করে দিতে হবে। এমন একটা পোষাক গায়ে চড়াতে হবে যাতে কোন উঁচুনিচু বুঝা না যায়। কুরআন আমাদের তা-ই জানাচ্ছে:

হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা আল আহযাব: ৫৯)


পড়ুন-  ইসলাম বনাম ফেমিনিজম : ইকুইটি না ইকুয়্যালিটি ?


বিশ্বাসী নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টি কে নত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যা সাধারণতঃ প্রকাশ তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের মাথার কাপড় দ্বারা বক্ষস্থল আবৃত রাখে। এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগন, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা আন নূরঃ ৩১)

এখন আপনি কেমন আবরণ দ্বারা নিজেকে আবৃত করবেন। আচ্ছাদন কেমন হলে তা আপনাকে উদ্দীপকের ভূমিকা নেয়া থেকে সুরক্ষা দেবে। এখন আমরা যে আলোচনায় যাচ্ছি, এর সাথে ফিকহের কোন সম্পর্ক নেই। এই আলোচনা গ্রহণ বা বর্জন আপনার নিজের ইচ্ছে। ইসলাম আমাদের নিচের সিদ্ধান্তের অনেক কিছুরই অনুমোদন দেয়, নিষেধ করে না। আমরা আমাদের এতক্ষণের বৈজ্ঞানিক আলোচনার রেশ ধরে যে ফলাফলে পৌঁছবো সেগুলোর সবই অননুমোদিত তা কিন্তু নয়। আমরা আমাদের আলোচনা যেখানে আমাদের নিয়ে যায় সেখানে চলে যাব।

১. বোরকা অনুজ্জ্বল রঙের হবে। কালো বেস্ট। কারণ কালো রঙ আলোর পুরোটুকু শুষে নেয়। তাই কালো বস্তু থেকে দর্শকের চোখে আলো আসে না। নজর কাড়ে না। কালো না হলেও কালো জাতীয় (নেভী ব্লু, ধূসর)। মোটকথা ম্যাদামারা রঙের হওয়া চাই। উজ্জ্বল রঙ হলুদ-লাল-নীল-গোলাপী রঙ ভিজুয়াল ফিল্ডে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। এমন রঙের বোরকা ‘বোরকার উদ্দেশ্য’ পূরণ করে না। [ত]

২. প্রচলিত বোরকার কাপড় একটা আছে সিল্কের মত চকচকে। কালো হলেও চকচকে জিনিস আলো প্রতিফলন করে। তাই, ভিজুয়াল ফিল্ডে যেকোন চকচকে বস্তু নজর কাড়ে। এমন কাপড়ের বোরকায়ও উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। [ত]

৩. একটা কাপড়ের নাম বিএমডব্লিউ, হালে বেশ জনপ্রিয়। এই কাপড়ের সমস্যা হল বেশি আন্দোলিত হয়। ভিজুয়াল ফিল্ডে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি নড়াচড়ার দিকে দৃষ্টি চলে যায়। ফলে উদ্দীপকতা কমাতে বা নিজেকে দৃষ্টির অলক্ষ্যে রাখতে এজাতীয় বোরকাও অনুপযোগী। [থ]

৪. বোরকার উদ্দেশ্য হল, আপনার নিচের সুন্দর পোশাক, যেটা আপনার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণে- সেটা ঢাকা। যাতে আপনি কারো দৃষ্টি আকর্ষক না হন। যেহেতু কে আপনাকে দেখে কি ভাবছে, কী ডোজ নিচ্ছে, কী কল্পনা করছে আপনি জানেন না। ডিজাইনওয়ালা আর নানান ফ্যাশনেবল বোরকা তো সেই সৌন্দর্য্যবর্ধকই হয়ে গেল। তাহলে শুধু শুধু ডবল পোশাক পরে কী লাভ হল? কেউ যদি আপনাকে বলে- বাহ এই বোরকায় তো তোমাকে দারুণ মানিয়েছে। বা, চমৎকার লাগছে তোমাকে। তাহলে সেই বোরকা পরা অনর্থক। কারণ আপনি তো সুন্দর লাগার জন্য বোরকা পরছেন না, বরং সৌন্দর্য্য ঢাকার জন্যই সেটা পরার কথা।

৫. অর্ধসচ্ছ শিফন/জর্জেট জাতীয় কাপড়ের বোরকা পরার চেয়ে না পরাই তো ভাল। শুধু শুধু গরমে দুই স্তর সিনথেটিক কাপড় পরার কী দরকার। পর্দার উদ্দেশ্যও পুরা হল না, আবার গরমে কষ্টও হল। আর মানুষের স্বভাব হল কৌতূহল। যা স্পষ্ট দেখা যায়, তার চেয়ে যা আবছা দেখা যায়, তার প্রতি কৌতূহল বেশি কাজ করে। ফলে অর্ধস্বচ্ছ বোরকা আপনাকে আরও বেশি নজর আহ্বানকারী করে তুলবে।

৬. বোরকার কোমরের কাছে ফিতা যদি বেঁধে নেন, তবে বোরকা পরার উদ্দেশ্য ব্যাহত হল। বোরকার উদ্দেশ্য ছিল আপনার দেহকাঠামোকে অস্পষ্ট করে দেয়া। ফিতা বেঁধে কোমরের মাপকে প্রকাশ করে সেই গড়নকে আপনি স্পষ্ট করে দিলেন।

৭. হাল আমলের বোরকার ফ্যাশন হল ঘের অনেক বেশি রাখে গাউনের মত। সেদিন এক ফেসবুক পেইজ যারা দাবি করে যে তারা শারঈ বোরকা বিক্রি করেন। দেখলাম লিখেছে, “ঘের অনেক বেশি…You will feel like a princess”। মানে হল, রাজকন্যারা যেমন গাউন পরে সেরকম। বেশ, নিজেকে নিজে রাজকন্যা মনে হলে তো সমস্যা নেই। কিন্তু রাস্তার লোকে রাজকন্যা মনে করে চেয়ে থাকলে তো সমস্যা। পর্দার উদ্দেশ্য পুরা হল না। আর অতিরিক্ত কাপড় থাকলে তা হাঁটার সময় আন্দোলিত হবে বেশি [থ], ফলে ফোকাস টানবে বেশি।

৮. আর একটা ফেব্রিক সম্পর্কে বলে আমাদের এই আলোচনা শেষ করব, যেটা এখন ব্যাপক জনপ্রিয়। লন কাপড় পরতে আরামদায়ক হলেও শরীরের সাথে লেপ্টে থাকে বেশি। ফলে বাইরে থেকে শরীরের অবয়ব স্পষ্ট ফুটে ওঠে। যদিও আপনার পোশাকটা ফিটিং না, বা স্বচ্ছ না। আপনি ভাবছেন সব তো ঢাকাই, আসলে কাপড় লেপ্টে থেকে সব অবয়ব বুঝিয়ে দিচ্ছে।

আবু ইয়াযীদ মুযানী রাহ. বলেন, হযরত ওমর রা. মহিলাদেরকে কাবাতী (মিসরে প্রস্ত্ততকৃত এক ধরনের সাদা কাপড়) পরতে নিষেধ করতেন। লোকেরা বলল, এই কাপড়ে তো ত্বক দেখা যায় না। তিনি বললেন, ত্বক দেখা না গেলেও দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুটে ওঠে।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৫২৮৮

তাহলে কেমন বোরকা পরলে উদ্দীপক হিসেবে আমার ভূমিকা মিনিমাম হবে?
১. নিকাবসহ কালো বা কালো জাতীয় রঙের
২. সুতি ধরনের কাপড় যা অতিরিক্ত দুলবে না, লেপ্টে থাকবে না। বরং কিছুটা ফুলে থাকবে, বডি শেপকে অস্পষ্ট করে দেবে। কাপড় সুতি হলে সিনথেটিক এসব কাপড়ের চেয়ে আরামও পাবেন বেশি। আরেকটা ব্যাপার আছে। সুতি কাপড় ইস্ত্রি নষ্ট হয়ে পরিপাটিভাব থাকে না, ফলে আপনার দিকে কেউ লক্ষ্যই করবে না, চোখ পড়লেও অনীহাভরে সরিয়ে নেবে। বোরকা পরার মূল উদ্দেশ্য সবচেয়ে সুন্দরভাবে পূরণ হবে।

রেফারেন্স

[1] চীনে ও তানজানিয়ায় ০.৬, ইন্ডিয়ান ও ককেশীয় আমেরিকানদের ০.৭ ও ক্যামেরুনে ০.৮ পাওয়া গেছে। Dixson, A.F. (2012) Primate Sexuality: Comparative Studies of the Prosimians, Monkeys, Apes and Human Beings (Second Edition). Oxford: Oxford University Press. এর বরাতে https://www.psychologytoday.com/us/blog/how-we-do-it/201507/waists-hips-and-the-sexy-hourglass-shape
[5] Harvard Mental Health Letter, How addiction hijacks the brain https://www.health.harvard.edu/newsletter_article/how-addiction-hijacks-the-brain
[6] The Brain on Drugs: From Reward to Addiction, Nora D.Volkow ও Marisela Morales, National Institute on Drug Abuse, National Institutes of Health, Bethesda, MD 20892, USA প্রকাশিত হয় জার্নাল Cell (Volume 162, Issue 4, 13 August 2015, Pages 712-725) https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0092867415009629
[7] https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20140088 https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2918777/ (Curvaceous female bodies activate neural reward centers in men)

টাইম ম্যানেজমেন্ট – Time Management

“সময় পাই না” কিংবা “সময় পাচ্ছি না” কথাটা আমরা এখন খুব বেশী বলে এবং শুনে থাকি। সন্দেহ নাই, বিবিধ পাপ ও আলসেমির কারণে আমাদের সময়ের বারাকাহ অনেক কম। কিন্তু তারপরও একটা কথা মাথায় রাখা উচিত- সময় কখনই পাওয়া যায় না, সময় বের করে নিতে হয়।

অনেক দ্বীনি ভাইও প্রায়ই বলে থাকেন-কীভাবে যে সময় চলে যাচ্ছে টেরই পাচ্ছেন না অথচ তারা অনেক ভাল ভাল কাজের নিয়্যাত করে থাকেন। তাই দৈনন্দিন জীবনের শত ব্যস্ততা ও কাজের মাঝে থেকেও কীভাবে আমরা সময় বের করে নিতে পারি তার জন্যই এই লিখা। তবে Time Management এর উপর হাজারখানেক বই পড়লেও আর কোর্স করলেও কিছুতেই সফলতা হতে আসবে না যদি আল্লাহর সাহায্য ও সন্তুষ্টি না থাকে।

সবসময় মাথায় রাখতে হবে সময় ও কাজের বারাকাহ একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। ত তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের দিকে সবার আগে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। আরেকটি শর্ত হল-তীব্র ইচ্ছাশক্তি নিয়ে
শুরু করতে হবে। রুটিন মেনে চলে সময়কে কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর জন্য ইচ্ছাশক্তির কোন বিকল্প নাই।

আর কথা না বাড়িয়ে আমরা মূল আলোচনায় চলে আসি-

১. ফযরের পর ঘুমানোর অভ্যাস বন্ধ করুনঃ
________________
শুনে বেশ কঠিন মনে হলেও এটি Time Management এর এক নম্বর শর্ত।
নিঃসন্দেহে ফযরের পরের সময়টুকু খুবই বরকতপূর্ণ। এই সময়ে নানাবিধ দূয়া ও যিকর হাদীসে পাওয়া যায় যেগুলোর ফযীলত ও প্রভাব অপরিসীম। দিনের শুরুই যদি হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং অন্তরের প্রশান্তি নিয়ে তবে সারা দিনের সমস্ত কাজ সময়মত গুছিয়ে নেওয়ার মানসিকতা তৈরী হয়ে যায়।

গ্রীষ্মকালে ফযরের পর অফিস/স্কুল/কলেজ/ভার্সিটি টাইমের আগ পর্যন্ত প্রায় ২.৫-৩ ঘণ্টা এবং শীতকালে ১.৫-২ ঘণ্টা সময় পাওয়া যায়। এই বিপুল পরিমাণ সময়কে কাজে না লাগানোর কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারে না, বিশেষত যখন এই সময়ে আল্লাহর অতিরিক্ত রহমত ও বরকত নেমে আসে। কুরআন-হাদীস পাঠ ছাড়াও দিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজের কিছু অংশ এই সময়ে করে রাখা গেলে সারাদিনের চাপ কমে যাবে ইনশাআল্লাহ।

২. নির্দিষ্ট একটি Time Frame এর মধ্যে কী কী করতে চান তা সুস্পষ্টভাবে লিখে ফেলুনঃ
________________
ধরুন, নভেম্বরে আপনার সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষা। আপনি এখন প্রস্তুতি শুরু করতে চান। প্রথমেই একটি কাগজে লিখে ফেলুন কোন কোন সাবজেক্টের কতটুকু সিলেবাসের পরীক্ষা। আপনি এই ১.৫ মাস প্রতিটি
সপ্তাহে কোন সাবজেক্টের কী কী টপিক পড়তে চান তা সুস্পষ্টভাবে লিখে ফেলুন।

আমি শুধু উদাহরণ দিচ্ছি। অন্য যেকোন কাজেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। যদি আপনি চান পরবর্তী ২ মাসে কুরআনের ১ পারা মুখস্থ করবেন তবে লিখে ফেলুন প্রতিদিন কতক্ষণ সময় দিয়ে কয়টি আয়াত মুখস্থ করবেন।
তবে এই কাজে দুটি জিনিষ মাথায় রাখবেন-

নিজের উপর সাধ্যের অতিরিক্ত চাপ নিয়ে প্ল্যান করবেন না, তাহলে শেষমেষ সবই গোল্লায় যাবে অস্পষ্টভাবে লিখবেন না। যেমন- এই কাজের ৬০% শেষ করতে চাই বা (পড়াশোনার ক্ষেত্রে) অমুক অমুক
সাবজেক্ট এগিয়ে রাখতে চাই

৩. আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে লক্ষ্য রাখুনঃ
________________
Time Frame এর মধ্যে যা যা করতে চান এবং যে কারণে করতে চান তার কোনটিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি আছে কিনা তা যাচাই করে নিন। থাকলে এক্ষুণি এবং এক্ষুণি সেটা বাদ দিন। আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হল, সালাতের জন্য প্রয়োজনীয় যথেষ্ট সময় আলাদা রেখেই Daily Schedule তৈরী করুন। এটি এমন হতে পারে- সালাত শুরুর আগে ও পরে ১০ মিনিট করে সময় অতিরিক্ত রেখে দিতে পারেন সুন্নাহ ও আযকারের জন্য। কখনই কাজের জন্য সালাত ছেড়ে দিবেন না।

৪. প্রতিদিন দূয়া করুন, জানা না থাকলে শিখে নিনঃ
________________
যেহেতু সফলতা আসবে একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছায়, তাই প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সময়ের যথার্থ ব্যবহার ও আলসেমি পরিত্যাগের জন্য সাহায্য চেয়ে দূয়া করুন। এই ধরণের অনেক সুন্দর দূয়া হাদীসে রয়েছে। অন্যান্য ইবাদাহ ছাড়াও যে Proper Time Management এর জন্য আল্লাহর কাছে আলাদাভাবে দূয়া করতে
হবে সেটা আমরা অনেকে মাথায়ই রাখিনা। নির্ভরযোগ্য দূয়ার বইগুলি থেকে প্রয়োজনীয় দূয়া মুখস্থ করে নিন।

৫. Self Discipline is The Key
________________
কথাটা শুনে খুব বেশি তাত্ত্বিক মনে হল, তাই না? স্বাভাবিক। কিন্তু বিষয়টা একটু অন্যরকমভাবে দেখা যাক-

আপনার Time Frame কে ভেঙ্গে Daily এবং Weekly schedule এ ভাগ করে নিন। এতে ধীরে ধীরে অলসতা চলে আসার সুযোগ কমে যাবে। প্রতিটা দিন এবং সপ্তাহই নতুন নতুন কাজের চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হবে। যে কোন মূল্যে schedule ঠিক রাখার চেষ্টা করুন। আজ একটু কম করে কাল পুষিয়ে দিব
এমন চিন্তা ঘুণাক্ষরেও করবেন না।

Urgent, Important, Necessary এগুলোর মধ্যে পার্থক্য করুন এবং সময়মত ঠিক কাজটি করুন। যেমন- ধরুন কাল আপনার ফিজিক্স পরীক্ষা। কিন্তু এই মুহুর্তে আপনার একদম পড়তে ভাল লাগছে না বরং কোন লেকচার শুনতে বা বই পড়তে বা ডকুমেন্টারি দেখতে ইচ্ছা করছে। এগুলোর সবগুলি Necessary হলেও
কোনটিই আপনার জন্য এই মুহুর্তে Necessary না বরং Urgent এবং Important হচ্ছে জোরপূর্বক ফিজিক্স পড়া।

প্রচলিত খুব ফালতু একটা কথা হল- “যা করতে ভাল লাগে সেটাই কর”। আসলে বলা উচিত-“যা করা দরকার ঠিক সেটাই কর”।

ক্ষেত্রবিশেষে Urgent এবং Important এর মধ্যে পার্থক্য করুন এবং অধিক প্রয়োজনীয়টি গ্রহণ করুন। যখন যেটা করবেন বলে ঠিক করেছেন তখন দাঁতে দাঁত চিপে সেটাই করুন, যদিও বা সেটা করতে ভাল না লাগে। দরকার হলে রুটিন চেঞ্জ করে সুবিধামত করে নিন কিন্তু “শুধু আজই একটু অন্যথা করি, কাল
ঠিক করে নিব”-এভাবে ভাববেন না।

মেইল-ফেসবুক ইত্যাদি চেক করার জন্য প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে নিন। পড়তে পড়তে বা অন্য কোন কাজের মাঝে এগুলোতে উঁকিঝুঁকি মারবেন না।

প্রতিদিন ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সময় আলাদা করে রাখুন Personal/Spiritual Development নিয়ে পড়াশোনা এবং নিজেকে যাচাই করার জন্য। কতটুকু এগোতে পারলেন, কী কী পারছেন না, কেন পারছেন না এগুলো সুস্পষ্টভাবে লিখুন।

৬. খুব বেশি কাজ একসাথে করার চেষ্টা করবেন নাঃ
________________
আপনার কাজগুলিকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিন। প্রতিদিন যে প্রতিটি কাজ করতে হবে-এমনটা না। একইদিনে খুব বেশি কাজ করবেন না। বরং যেদিন যেটা বেশি দরকার সেদিন সেটাতেই ফোকাস করুন। যেমন- ধরুন আপনার রুটিনের ৪ টি কাজ-

আপনার হাতে এই ৪ টি কাজের জন্য সময় মোট ৩ ঘণ্টা। প্রতিদিন সবকিছু করতে গেলে প্রতিটি কাজে আপনি দিতে পারবেন ৪৫ মিনিট। অথচ প্রতিদিন কিন্তু সবকিছু করার দরকার নেই। ডকুমেন্টারী দেখা, আরবী পড়া কিংবা হালাকা ছুটির দিনের জন্য রেখে দিন। ক্লাশ/অফিসের দিনগুলিতে একাডেমিক পড়া বা অফিসিয়াল কাজে ১.৫ ঘণ্টা করে সময় দিন। আর তাতে ছুটির দিনেও ডকুমেন্টারী, আরবী কিংবা হালাকার প্রতিটিতে ১ ঘণ্টা করে সময় দিতে পারবেন। এতে আপনি Quality Job করতে পারবেন। সবকিছু একইদিনে রেখে রুটিনকে অনাকাঙ্খিত ভারী করে তুলবেন না।

৭. ক্রমাগত আত্মশুদ্ধি
________________
যথার্থ Time Management এর অন্যতম একটি শর্ত হল আত্মশুদ্ধির পেছনে ক্রমাগত লেগে থাকা। নিজেকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারলেই আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞান ও সময়ের বারাকাহ আসবে।
এজন্য আত্মশুদ্ধিমূলক বিভিন্ন বই পড়ে ও লেকচার শুনে নিজের কর্মপদ্ধতি ঠিক করে নিতে হবে। সবার জন্যই যে একই পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে তা নয়।

এখানে আমি কিছু বই এর নাম উল্লেখ করছি যেগুলো এই কাজে ইনশাআল্লাহ সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস-

(1) In the Early Hours- Khurram Murad
(2) The Purification of the Soul- Ibn Rajab, Ibn al Qayyim, Al-Ghazali
(3) Purification of the Soul: Concept, Process & Means- Jamaal Zarabozo
(4) The Journey to Allah- Ibn Rajab al Hanbali
(5) Salvation Through Repentance- Dr. Bilal Philips

এছাড়াও ইউটিউবে সহজলভ্য ইংরেজীভাষী ‘আলিমদের মধ্যে Md. Ali Hazratji এর আত্মশুদ্ধির আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ হতে পারে। বাংলা ভাষায় উস্তাদ নাসিল শাহরুখ এর “আত্মশুদ্ধি” শিরোনামে ধারাবাহিক আলোচনা ইউটিউবে OIEP এর চ্যানেলে পাওয়া যাবে। আত্মশুদ্ধির জন্য প্রচুর দুয়া, তাওবাহ ও ইস্তিগফারের
কোন বিকল্প নাই। তাই প্রয়োজনীয় মাসনূন দুয়াগুলো ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর রাহে বেলায়েত থেকে শিখে নেওয়া হতে পারে একটা ভাল বুদ্ধি।

আত্মশুদ্ধির পথে নিজেকে যাচাই করার জন্য “প্রাত্যহিক কর্মতালিকা” তৈরী করে নেওয়া যেতে পারে। এই তালিকা হতে হবে নিজের ‘লেভেল’ অনুযায়ী।

সকল ফরয-ওয়াজিব ইবাদাহ আগে পালন করার চেষ্টা করুন। এরপর সেগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে বেশী বেশী নফল ইবাদাহ পালন করুন। নিজের প্রয়োজনমত ফরয/ওয়াজিব/নফল কাজগুলি তালিকায় স্থান দিন। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে তালিকা পূরণ করুন এবং আগের দিনের সাথে মিলিয়ে দেখুন কোনটা কম হয়েছে, কেন হয়েছে, কীভাবে সেটার উন্নতি করা যায়।

৮. হালাল বিনোদনের ব্যবস্থা রাখুন
________________
রুটিনের একঘেয়েমি কাটাতে হালাল বিনোদনের ব্যবস্থা রাখুন। সাপ্তাহিক বা মাসিক বিনোদনের জন্য কিছু সময় নির্দিষ্ট করে নিন। এই সময়টায় বন্ধু-আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে ঘুরতে পারেন কিংবা হালাল ডকুমেন্টারি, মুভি, নাশীদ ইত্যাদি দেখতে ও শুনতে পারেন। যদি ঠিকমত রুটিন মেইনটেইন করতে পারেনবে নিজেই নিজেকে ‘ট্রিট’ দিন!

অর্থাৎ পছন্দের কোন জায়গায় পছন্দের খাবার খেতে যান-ভাববেন, রুটিন মেইনটেইন করার পুরষ্কার এটি। আবার রুটিন ভংগ হলে নিজেই নিজেকে শাস্তি দিন। তবে এই শাস্তিও হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। এটি হতে পারে সিয়াম রাখা কিংবা নিজের উপার্জিত টাকা থেকে কিছু দান করে দেওয়া।

তবে অবশ্যই এই দানের পরিমাণ এমন হতে হবে যে সেই পরিমাণ দান করতে আপনার কিছুটা হলেও অস্বস্তি লাগে, সিয়াম রাখলে অনেকগুলি সিয়াম (আপনার কষ্ট হয় এমন) রাখার ‘শাস্তি’ নির্ধারণ করবেন যেন কিছুতেই রুটিন ভাংতে মন না চায়। প্রথম কাজটি শরীরের জন্য কষ্টকর আর দ্বিতীয়টি নাফসের জন্য।

কিন্তু উভয়টিই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করলে ইবাদাহ-র পাশাপাশি নিজের উপর একটু কষ্টও চাপিয়ে নেওয়া হল-রুটিন ভংগ করার শাস্তি হিসেবে এটা মেনে নিন!

৯. সব কাজ নিজে না করে অন্যকে কাজ ভাগ করে দিন
________________
সবকাজ নিজে করতে যাবেন না। যে কাজ অন্যকে দিয়ে মনমত করিয়ে নিতে পারবেন তা উপযুক্ত কাউকে দিয়ে করিয়ে নিন। এতে নিজের উপর থেকে কাজের চাপ কমে যাবে ও সময়ের পরিমাণ বাড়বে। ধরুন, আপনি
নিজের জন্য একটি ওয়েবসাইট বানাতে চান।

এখন আপনি ওয়েবসাইটের কাজ না জানলেতো বটেই, এমনকি জানলেও নিজে না করে ওয়েবসাইটের কাজ ভাল পারে এমন কাউকে করে দিতে বলুন, দরকার হলে তাকে পারিশ্রমিক দিয়ে করিয়ে নিন। আবার ধরুন, আপনার একটি নোটখাতা টাইপ করতে হবে। কোন দরকার নাই নিজে থেকে টাইপ করার, কম্পোজের দোকান থেকে টাইপ করিয়ে নিন। একইভাবে, যে কাজ অন্যকে দিয়ে মান বজায় রেখেও করতে পারবেন তা নিজে করতে যেয়ে অতিরিক্ত চাপ নিবেন না।

১০. সব ধরণের Time Waster থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন
________________
হারামতো বটেই, সবধরণের হালাল Time Waster থেকেও দূরে থাকুন। ফালতু আড্ডা পুরোপুরি ছেড়ে দিন, অপ্রয়োজনীয় কথা, কাজ, মুভি-নাটক-কার্টুন (অভ্যাস থাকলে) ইত্যাদি দেখার অভ্যাস বাদ দিন। রুটিন ভংগ করে “শুধু আজই একটু আড্ডা দিই” এমনটা করবেন না।

প্রয়োজন না থাকলেও ঘনঘন বাইরে খেতে/ঘুরতে যাওয়া, খাওয়া নিয়ে রসিক আড্ডা ইত্যাদি বাদ দিন। একজন ইসলামী জ্ঞানের ছাত্র হিসেবে বন্ধুদের সাথে খাদ্য ও নারী সংক্রান্ত আলোচনা পুরোপুরি বাদ দিতেই হবেই-এগুলো ফালতু Time Waster ছাড়া কিছুই না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘুম আরেকটি হালাল Time Waster. এটা থেকেও সাবধান থাকুন।

১১. শর্টকার্ট শিখুন
________________
অনেক কাজ আছে যেগুলো শর্টকার্ট পদ্ধতিতে করতে পারবেন-এই শর্টকার্টগুলো শিখে নিন।

কোন ইসলামিক/অন্যান্য লেকচার শুনতে হলে VLC player এ 2X speed এ শুনুন। এতে অর্ধেক সময় বেঁচে যাবে। প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও পরে অভ্যাস হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। রুটিনে কিছু flexible সময় রাখুন। এতে কোন একটি কাজ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে হলেও রুটিনের অন্য কাজগুলি ঠিক সময়ে করতে পারবেন। বই পড়ার জন্য internet থেকে speed reading শিখে নিতে পারেন। লিখার জন্য করে নিতে পারেন শর্টকার্টে লিখার কোর্স। তবে শর্টকার্ট করতে যেয়ে আবার কাজের মান যেন কমে না যায় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।

এগুলোর বাইরেও Effective Time management এর জন্য কিছু Extra Tips:

একসাথে একাধিক কাজ কেবলমাত্র তখনই করবেন যখন সেটা beneficial হবে।
যেমন- প্র্যাক্টিকাল খাতা লিখতে লিখতে কিংবা অফিসের ফাইল সাইন করতে করতে ইয়ারফোনে কোন লেকচার শুনতে পারেন। কিন্তু একাডেমিক স্টাডি করার সময় কখনই এমনটা করবেন না।

– সর্বদা সৎসঙ্গে থাকুন।
– অন্যের উপদেশ ও সংশোধনী খোলা মনে গ্রহণ করুন।
– ভদ্রভাবে ও বিনয়ের সাথে “না” বলতে শিখুন।
– সর্বদা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
– প্রতিটি কাজে সর্বোচ্চ পরিশ্রম দিন এবং সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে ভালভাবে
করার চেষ্টা করুন।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
.
লেখাঃ কবির আনোয়ার (আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)
——★——
সারাংশ:- দুনিয়া / আখেরাতে উপকারে আসেনা; এমন কাজ থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

জীবনের অতি-গুরুত্বপূর্ণ ক্যারিয়ার ভাবনা বনাম আমাদের বোকামি

আমি অনেকগুলো মানুষ দেখেছিলাম যারা আকণ্ঠ ডুবে থাকতো তাদের ‘ ক্যারিয়ার কে’ কতটা ‘জোস’ করা যায় তা নিয়ে। আমি সত্যিকারের ‘জোস ক্যারিয়ার ওয়ালা’ কিছু মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম যারা তাদের জীবনকে খুব মূল্যবান মনে করতেন।

সবাই তাদের জীবনকে মূল্যবান মনে করে। আমিও করতাম। স্কুল-কলেজ জীবনে এই-সেই বই পড়ে দেশ-জাতি নিয়ে চিন্তা করা খুব স্বল্প সংখ্যক তরুণকে দেখেছিলাম যারা ভাবতো তাদের চিন্তাগুলো খুব দরকারি। তাদের কেউ কেউ স্পিন বলের মতন ঘুরতে ঘুরতে কনফিউশনিস্ট-অ্যাগনস্টিক হয়ে এখন একটা বাফারে পড়ে আছে।

দেশ-জাতি তাদের কাছে তেমন কিছু পায়নি, পেয়েছে তাদের প্রেমিকারা। প্রেমিকাদের নামে রচনা হয়েছিলো গানের লিরিক, কিছু কবিতা। প্রেমিকাদের দেখাতেই হয়ত ফেসবুকে তারা রচেছে বিশাল কলেবরের শব্দসর্বস্ব পোস্ট যা আদতে তেমন কোন অর্থবহন করে না। তাদের মূল্যবান জীবন ভালো ইউনিভার্সিটির ভালো ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারি পেরিয়ে ভালো চাকরি, লিঙ্কিং পার্কে-আয়রন মেইডেনের গান, বাসায় ফিরে মুভি দেখা, বুক খা-খা করে এমন কিছু ব্লগপোস্ট লেখাতে রূপ নিয়ে আছে। ওরা অনেক বুঝে, কেউ কিছু গেলতে গেলে উলটা বুঝিয়ে ছ্যাড়াব্যাড়া করে দেয়। ধর্মবিশ্বাসীরা অনেক ব্যাকডেটেড, না বুঝেই নাকি বিশ্বাস করে বসে থাকে যা ওরা পারেনা। ওরা ব্রিলিয়ান্ট ইঞ্জিনিয়ার/সরকারি কলেজে পড়া ডাক্তার তাই ‘ধর্মের’ কথা বলা ‘লিমিটেড ভিশনের’ বন্ধু/বড় ভাইদের বেইল নাই।

এমন দামী জীবনের অনেকেই বিদেশ গিয়ে পিএইচডি করতে গিয়েছে। তাই এখন অধিকার পেয়েছে দেশটাকে নিয়ে ‘সুশীল’ মন্তব্যে ভরে দেয়ার। দেশ আসলে অনেক পিছিয়ে আছে, ভার্সিটিগুলা খারাপ, অমুক দল খারাপ, তমুকেরা ফাউল। এসব মন্তব্যের বেশিরভাগই খুব অগভীর। সমস্যা থেকে দূরে বহুদূরে। এই দামী জীবনের মালিকেরা ক’মাস পর এখানে ওখানে বেড়ায়, ফেসবুকে ছবি আপলোড করে ‘ট্রিপ টু অমুক’ নাম দিয়ে।

এমন ‘দামী জীবন’ অনেকেরই ছিল। কত নামই তো মনে পড়ে, অনেকদিন পত্রিকা কাঁপিয়ে দিতো। খবর দেখতে গেলেই নাম শুনতাম। মরে যাওয়া দুই অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান আর শাহ কিবরিয়া, রাজনীতিবিদ আব্দুল মান্নান ভুইয়া, মীর শওকত আলী, প্রেসিডেন্ট জিল্লুর, লেখক হুমায়ূন আজাদ, হুমায়ূন আহমেদ, কবি শামসুর রাহমানরা আমার চোখে-কানে অনেক পড়তেন। তারা এখন আর পত্রিকার পাতায় থাকে না। দামী জীবন সবারই ছিলো। জীবনটা শেষ হওয়া পর্যন্ত দামী ছিলো, এখন ইতিহাস। তাদের নিয়ে কেউ তেমন আবেগাপ্লুত হয়না আর।

আমাদের জীবনের এখন অনেক দাম। অনেক প্ল্যান। অনেক ভবিষ্যত। প্রতিটা মানুষই মনে করে তার আবেগ অনেক দামী, তার অনুভূতিরা অনেক দামী। অথচ প্রতিটি মানুষেরই আবেগ আর অনুভূতি একই রকম। প্রিন্স উইলিয়ামের বউয়ের প্রতি যে ভালোবাসা তা মতিন রিকসাওয়ালার বউয়ের প্রতি যে ভালোবাসা তার চেয়ে আহামরি কিছু না।

দু’টি হৃদয়ের আবেগগুলোও একই রকম। দামী হবার মতন কিছু নেই। অমন অনেক প্রিন্স দুনিয়াকে জ্বালা দিয়ে বিয়ে করেছে, এখন তাদের চিহ্নও নাই। থাকে না। থাকার নয়…

অনেকগুলো মানুষের কথাও জানি, যারা জীবনকে দামী করেছেন। ঈমানের কালিমা মুখে নিয়ে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে শহীদ হয়েছেন যে সাহাবী তার জীবনটা সত্যিকারের দামী। অল্প সময়ের ঈমানে বিপুল পুরষ্কার, সবুজ পাখি হবার গৌরব অনন্তকাল। অনেক দামী জীবনের মানুষকে জানি যারা মুক্ত করেছিলেন মানুষকে, ভেঙ্গেছিলেন রাজা-বাদশাহদের হাতে পরাধীনতার জিঞ্জির। মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে মানবতাকে এনেছিলেন আল্লাহর দাসত্বের মাঝে। এমন অনেক দামী প্রাণের কথা জানি যারা জীবনভর কষ্ট করেছেন ইলমের জন্য, শিখিয়েছেন হাজার-লক্ষ মানুষকে। হাজার বছর পরেও তাদের নাম আমরা আজো রাহিমাহুল্লাহ বলে দু’আ করে উচ্চারণ করি।

কোন ধরণের দাম দিয়ে জীবনকে আমরা দামী করতে চাই? সে হয়ত আমাদের সবারই ভেবে নেয়া উচিত। সেদিন হয়ত দূরে নয় যখন আচমকা দেখা হবে মালাকুল মাওতের সাথে। শোয়ার ঘরে, বাসের উপরে, হাসপাতালের বেডে, খাবার টেবিলে সে সাক্ষাতের পরে আর জীবনে মূল্য জোড়ানো যাবে না।

আল্লাহ সেদিনের আগেই যেন আমাদেরকে সফল হবার, মুক্তি পাওয়ার, সবুজ পাখি হবার জীবন দান করেন। দয়াময় আল্লাহ আমাদের জন্য যা সহজ করে দেন তা কেউ কঠিন করতে পারে না, তিনি যা কঠিন করে দেন তা সহজ করার সাধ্য কারো নেই। হে আমাদের রব, আমাদের অন্তরকে আপনার দ্বীনের দিকে ঘুরিয়ে দিন।

বিশ্বাসের রসায়ন

আমি কখনোই রসায়ন পছন্দ করতাম না, কারণ আমি এটাতে ভালো করতে পারতাম না। এমনকি এখনও আমি পুরোপুরি স্বীকার করছি যে, আমার ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা দ্বারা এই হ-য-ব-র-ল বিষয়টির মূল্যায়ণ করা একেবারেই অন্যায়। এখনও প্রতিবার ল্যাব শব্দটি শোনার পর কিংবা কাউকে গগল্‌স (বিশেষ চশমা) পড়া দেখলে আমি প্রচণ্ড চাপ অনুভব করি।

অধিকাংশ মানুষই বিভিন্ন জিনিস মেশাতে পছন্দ করে; এটিএকটি সহজাত প্রবৃত্তি যা শুরু হয় ছোটবেলা থেকেই। হতে পারে এটি বিস্কিট তৈরির বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন উপাদান মেশানো কিংবা বিভিন্ন রঙ মিশিয়ে নতুন রঙ তৈরি করা। আর এই সহজাত প্রবৃত্তিকে আমি খুব কাছ থেকেই দেখছি আমার সন্তানদের মাঝে। একটি ছোট্ট শিশুও বুঝতে পারে যে মিশ্রণটির ফলাফল নির্ভর করে এর উপাদানগুলো কতটা ভালো তার উপর এবং কিছু উপাদান আছে যেগুলো এমনিতেই মিশে না। তারপরেও, এদের মধ্যে সেরা উপাদান তো সম্ভবত সেগুলো যেগুলো পরস্পরের সাথে মিশ্রিত হয়ে তৈরি করে শক্তি।

একদিন যখন তারা বড় হবে, আমি তাদের কাছে এটা ব্যাখ্যা করতে ভালোবাসবো যে, ভৌত জগতের বিভিন্ন উপাদানের এই মিশ্রণ আধ্যাত্মিক জগতের বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণেরই একটি প্রতিরূপ।

আন্তরিকতা (ইখলাস) নামে একটি বিশেষ যৌগ আছে যা অসংখ্য চমৎকার বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটায়।সর্বপ্রথম, এর খুব নিম্নমাত্রার একটি স্ফুটনাঙ্ক আছে; যে কোন ধরনের পতিত আলোকরশ্মি (রিয়া- লোক দেখানো ইবাদাহ্‌) একে খুব সহজেই বাষ্পীভূত করে দেয়। এটা এতটাই বিস্মৃতিপ্রবণ (ইলূসিভ্‌) যে, অসংখ্য বিজ্ঞানী একে বোঝার জন্য নিজেকে সকল প্রকার পারিপার্শ্বিক প্রভাব থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন (আধ্যাত্মিক সাধনা)। তরল অবস্থায় এটি বিভিন্ন ধরনের যৌগ গঠন করতে পারে, কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই এটি তার আসল রূপ থেকে প্রায় পুরোপুরি অজ্ঞাত হয়ে যায় (মিশ্র বা দুর্বল নিয়্যাহ্‌)।

কঠিন অবস্থায় এটি সর্বাধিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এর এত উচ্চমাত্রার একটি গলনাঙ্ক রয়েছে যে একে তরলে পরিণত করতে অতি উচ্চমাত্রার তাপের প্রয়োজন হয়। কঠিন অবস্থায় আন্তরিকতা (ইখলাস) কোন কিছুর সাথেই মিশ্রিত হতে চায় না এবং স্বাভাবিকভাবেই এটি সকল প্রকার অপবিত্রতাকে নির্মূল করে দেয়। আন্তরিকতার কঠিন অবস্থার অভেদ্য বিশুদ্ধতা এতটাই অনন্য যে, রসায়ন শাস্ত্রে বিজ্ঞানীগণ এর একটি বিশেষ নাম দিয়েছেন; তাওহীদ (এক আল্লাহ্‌-কে বিশ্বাস করা)। বিজ্ঞানীগণ এই নামটি দিয়েছেন এর অপরিবর্তনীয় ও স্বাধীন অবস্থাকে নির্দেশ করার জন্য, আর এটা এমনই যে বস্তু জগতে এমন কোন উপাদান নেই যা একে পরিবর্তন করে দিতে পারে।

অদ্ভুত ব্যাপার হল দুনিয়াতে শুধুমাত্র একটি বস্তু আছে যা কঠিন তাওহীদের সাথে বিক্রিয়া করে। এটি জ্ঞান নামে পরিচিত। জ্ঞান সাধারণত গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। মানুষ এ গ্যাসটি নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করতে পারে (সমাজ ও সংস্কৃতি থেকে) এবং প্রতিনিয়ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও করে যাচ্ছে। কিন্তু এর প্রতক্রিয়ায় বিভিন্ন বিষয়ের বিকাশ মানুষ থেকে মানুষে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে দেখা যায়। গ্যাসটি অধিক মাত্রায় গ্রহণ করলে এর প্রভাব দীর্ঘ সময় ধরে ক্রিয়া করে, গবেষণায় দেখা গেছে এর জন্য কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।

গ্যাসটির প্রতি নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে প্রতিটি বিষয় একজন মানুষকে চিন্তা করতে, কথা বলতে এমনকি ভিন্নভাবে পোশাক পড়তে অনুপ্রাণিত করে। কিন্তু, এটা উল্লেখ্য যে, জ্ঞানের প্রতি প্রতিক্রিয়া ও পৃথিবীর কিছু নির্দিষ্ট স্থানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে, যেখানে জ্ঞানের গ্যাস সংরক্ষিত আছে (সভ্যতাগত ঐতিহ্য)। বিজ্ঞানীরা এটা আবিষ্কার করে হতভম্ব হয়ে গিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি দৈনিক ৫ টি করে কঠিন তাওহীদের বড়ি (পিল) গ্রহণ করে, সে জ্ঞানের বিরূপ প্রভাব থেকে প্রায় পুরোপুরি মুক্ত।

অন্যদিকে, তরল অবস্থায় জ্ঞান সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের প্রভাব তৈরি করে। এটি একটি উচ্চমানের উদ্বায়ী রাসায়নিক যা অন্য সকল পদার্থের সাথে যুক্ত হতে চায় (কাল্পনিক, তাত্ত্বিক, অপ্রমাণিত জ্ঞান)। এসব যৌগেরমধ্যে অনেকেই দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস নিঃসরণ করে, কিছু যৌগ অল্প পরিমাণ শক্তি নির্গত করে, আর কিছু যৌগ তৈরি করে অত্যন্ত বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থ। যখন সামান্য পরিমাণ কঠিন তাওহীদ তরল জ্ঞানের সাথে মেশানো হয় তখন এটা জমাট বেঁধে যায় এবং অপবিত্রতা নির্গত করে।

আরেকটি মজার মিশ্রণ হল তরল জ্ঞান (কাল্পনিক জ্ঞান) ও তরল আন্তরিকতার (দুর্বল বা মিশ্র নিয়্যাহ্‌) মিশ্রণ। সাধারণ পর্যবেক্ষকের কাছে এর প্রভাবের কোন অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয় না; কিন্তু দীর্ঘ গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, তরল জ্ঞান আন্তরিকতার স্ফুটনাঙ্ক মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেয় (উদাহরণস্বরূপ, অতি নিম্ন তাপমাত্রায়ও আন্তরিকতার বাষ্পীভবন ঘটানোর মাধ্যমে) এবং হিমাঙ্কও বাড়িয়ে দেয় (যেমনঃ আন্তরিকতাকে তার কঠিন অবস্থায় ফিরে যাওয়ায় বাঁধা প্রদানের মাধ্যমে)।

অধিকাংশ বিজ্ঞানী এ ব্যাপারে একমত যে, জ্ঞান তার কার্যকারিতা এবং স্থিতিশীলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যখন এটি কঠিন অবস্থায় থাকে। কঠিন জ্ঞান সাধারণত বিভিন্ন স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্থ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়; কারণ, চাপের মধ্যেও এটি স্থিতিশীল থাকতে পারে। চিকিৎসা শাস্ত্রেও এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। কঠিন জ্ঞানকে নিজের ইচ্ছেমত কাজে লাগানো প্রায় অসম্ভব, কারণ, বাস্তব জগতে এটি শুধু একটিমাত্র পদার্থের সাথে বিক্রিয়া করে, কঠিন তাওহীদ! অধিকন্তু, কঠিন তাওহীদ এবং কঠিন জ্ঞানের মিশ্রণই মানব ইতিহাসে বিজ্ঞানীদের দেখা সবচেয়ে সেরা বিস্ময়।

এমনকি তাদেরকে মেশানোর পূর্বে যখন শুধুমাত্র পরস্পরের নিকটে আনা হয় তখনই তারা একটি অদ্ভুত কিন্তু প্রশান্ত গুঞ্জন নিঃসরণ করা শুরু করে (কুর’আন তিলাওয়াতকারীর মতো)। যদি তাদেরকে আরও নিকটে আনা হয় তবে তাদের মধ্য থেকে এক ধরনের আভা এবং একটি সুমিষ্ট গন্ধ নির্গত হয়। বিজ্ঞানীরা যখন কঠিন তাওহীদ ও কঠিন জ্ঞানকে পরস্পরের সাথে মেশার সুযোগ দেন তখন তারা একত্রিত হয়ে একটি একক বস্তু গঠন করে। এই বস্তুটি থেকে যে আলো নির্গত হয় তা এতটাই শক্তিশালী যে, কাজ করার সময় বিজ্ঞানীরা চোখ সুরক্ষাকারী সরঞ্জাম ব্যবহার করতে বাধ্য হন। এটা ধারণা করা হয় যে, প্রথম দিকের কিছু সম্প্রদায় (সালাফগণ) তাওহীদ-জ্ঞান নামক বস্তুটি ব্যবহার করতেন তাঁদের সম্প্রদায়ের প্রতিটি মানুষকে শক্তি (এবং আলো) সরবরাহের জন্য।

বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তিটির কার্যকারীতার ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। অনেকেই ধারণা করছেন যে, মানুষ পৃথিবীর প্রাকৃতিক শক্তির সঞ্চয় নিঃশেষ করে ফেললেও, তাওহীদ-জ্ঞান নামক বস্তুটি সমগ্র পৃথিবীর টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট শক্তির যোগান দিতে পারবে। বর্তমানে একটি গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে এই শক্তির উৎস উৎপাদনের সম্ভাবনা ও তাকে কীভাবে মানব জাতির কল্যাণে কাজে লাগানো যায় সে ব্যাপারে।

তাওহীদের রাসায়নিক গঠনটি পাওয়া যায় সূরা আল-ইখলাস এ।

এবং জ্ঞানের রাসায়নিক গঠনটি পাওয়া যায় সূরা আল-আসর এ।


মূল লেখকঃ ইমান বাদাওয়ী
উৎসঃ suhaibwebb.com
অনুবাদ সম্পাদকঃ নাজমুস সাকিব

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাচনভঙ্গি/যেভাবে কথা বলতেন ৷

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাচনভঙ্গি /যেভাবে কথা বলতেন৷

হাসান ইবনে আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (আমার) মামা হিন্দ ইবনে আবু হালা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবয়ব ও আখলাক সম্পর্কে সুন্দররুপে বর্ণনা করতেন।

আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাচনভঙ্গি সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা আখিরাতে উম্মতের মুক্তির চিন্তায় বিভোর থাকতেন। এ কারণে তাঁর কোন স্বস্তি ছিল না। তিনি অধিকাংশ সময় নীরব থাকতেন। বিনা প্রয়োজনে কথা বলতেন না।

তিনি স্পষ্টভাবে কথা বলতেন। তিনি ব্যাপক অর্থবোধক বাক্যালাপ করতেন। তাঁর কথা ছিল একটি থেকে অপরটি পৃথক। তাঁর কথাবার্তা অধিক বিস্তারিত ছিল না কিংবা অতি সংক্ষিপ্তও ছিল না। অর্থাৎ তাঁর কথার মর্মার্থ অনুধাবনে কোন প্রকার অসুবিধা হতো না। তাঁর কথায় কঠোরতার ছাপ ছিল না, থাকত না তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভাব।

আল্লাহর নিয়ামত যত সামান্যই হতো তাকে তিনি অনেক বড় মনে করতেন। এতে তিনি কোন দোষত্রুটি খুঁজতেন না। তিনি অপরিহার্য খাদ্য সামগ্রীর ত্রুটি খতিয়ে দেখতেন না এবং উচ্ছসিত প্রশংসাও করতেন না।

পার্থিব কোন বিষয় বা কাজের উপর ক্রোধ প্রকাশ করতেন না এবং তাঁর জন্য আক্ষেপও করতেন না। অবশ্য যখন কেউ দীনি কোন বিষয়ে সীমালঙ্ঘন করত তখন তাঁর রাগের সীমা থাকত না। এমনকি তখন কেউ তাঁকে বশে রাখতে পারত না। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত কারণে ক্রোধাম্বিত হতেন না এবং এজন্য কারো সাহায্য গ্রহণ করতেন না।

কোন বিষয়ের প্রতি ইশারা করলে সম্পূর্ণ হাত দ্বারা ইশারা করতেন। তিনি কোন বিস্ময় প্রকাশ করলে হাত উল্টাতেন। যখন কথাবার্তা বলতেন তখন ডান হাতের তালুতে বাম হাতের আঙ্গুলের আভ্যন্তরীণ ভাগ দ্বারা আঘাত করতেন। কারো প্রতি অসন্তুষ্ট হলে তাঁর দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নিতেন এবং অমনোযোগী হতেন।

যখন তিনি আনন্দ-উৎফুল্ল হতেন তখন তাঁর চোখের কিনারা নিম্নমুখী করতেন। অধিকাংশ সময় তিনি মুচকি হাসতেন। তখন তাঁর দাঁতগুলো বরফের ন্যায় উজ্জ্বল সাদারূপে শোভা পেত।

শামায়েলে তিরমিযী ৷
শুআবুল ঈমান, হা/১৩৬২।