14.9 C
New York
Saturday, October 25, 2025

Buy now

spot_img
Home Blog Page 7

আসুন জেনে নেই ঢাকায় কবে কোন এলাকায় মার্কেট বন্ধ থাকে।

রবিবার পুরোদিন এবং সোমবার অর্ধেক দিন বন্ধ

এলাকার নাম-১: আগারগাঁ, তালতলা, শেরে বাংলা নগর, শ্যাওড়া পাড়া, কাজী পাড়া, পল্লবী, মিরপুর-১০, মিরপুর-১১, মিরপুর-১২, মিরপুর-১৩, মিরপুর-১৪, ইব্রাবীমপুর, কচুখেত, কাফরুল, মবাখালী, নিউ ডিওএসএইচ, ওল্ড ডিওএসএইচ, কাকলী, তেজগাঁও ওল্ড এয়ারপোর্ট এরিয়া, তেজগাঁ ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এরিয়া, ক্যান্টনমেন্ট, গুলসান-১, ২, বনানী, মবাখালী কমার্শিয়াল এরিয়া, খালপাড়া, মবাখালী ইন্টার সিকি বাস টার্মিনাল এরিয়া।
মার্কেটের নাম-১: এসকল এলাকার মার্কেটগুলো রবিবার পুরোদিন এবং সোমবার অর্ধেক দিন বন্ধ থাকে। উল্লেখযোগ্য মার্কেটগুলোর মধ্যে রয়েছে বিসিএস কম্পিউটার সিটি, পল্লবী সুপার মার্কেট, মিরপুর বেনারসী পল্লী, ইব্রাবীমপুর বাজার, ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্স, বনানী সুপার মার্কেট, ডিসিসি মার্কেট গুলশান-১ এবং ২, গুলশান পিংক সিটি।
এলাকার নাম-২: রামপুরা, বনশ্রী, খিলগাঁ, গোড়ান, মালিবাগের ব্যাকাংশ, বাসাবো, ধলপুর, সায়েদাবাদ, মাদারটেক, মুগদা, কমলাপুরের ব্যাকাংশ, যাত্রাবাড়ী ব্যাকাংশ, শনির আখড়া, দনিয়া, রায়েরবাগ, সানারপাড়।
মার্কেটের নাম-২: মোল্লা টাওয়ার, আল-আমিন সুপার মার্কেট, রামপুরা সুপার মার্কেট, মালিবাগ সুপার মার্কেট, তালতলা সিটি কর্পোরেশন মার্কেট, কমলাপুর স্টেডিয়াম মার্কেট, গোরান বাজার, আবেদিন টাওয়ার, ঢাকা শপিং সেন্টার, আয়েশা মোশারফ শপিং কমপ্লেক্স, মিতালী অ্যান্ড ফ্রেন্ড সুপার মার্কেট।

মঙ্গলবার পুরোদিন এবং বুধবার অর্ধেক দিন বন্ধ

এলাকার নামঃ কাঁঠালবাগান, বাতিরপুল, মানিক মিয়া এভিনিউ, রাজাবাজার, মণিপুরিপাড়া, তেজকুনীপাড়া, ফার্মগেট, কাওয়ান বাজার, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, এলিফ্যান্ট রোড, শুক্রাবাদ, সোববানবাগ, ধানমন্ডি, বাজারীবাগ, জিগাতলা, রায়েরবাজার, পিলআছাড় খানা, লালমাকিয়া।

মার্কেটের নামঃ বসুন্ধরা সিটি, মোতালেব প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজা, সেজান পয়েন্ট, নিউ মার্কেট, চাঁদনী চক, চন্দ্রিমা মার্কেট, গাউসিয়া, ধানমন্ডি হকার্স, বদরুদ্দোজা মার্কেট, প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার, গাউসল আজম মার্কেট, রাইফেলস স্কয়ার, অর্কিড পয়েন্ট, ক্যাপিটাল মার্কেট, ধানমন্ডি প্লাজা, মেট্রো শপিং মল, প্রিন্স প্লাজা, রাপা প্লাজা, আনাম র‌্যাংগস প্লাজা, কাওয়ান বাজার ডিআইকি মার্কেট, অর্কিড প্লাজা।

বুধবার পুরোদিন এবং বৃহস্পতিবার অর্ধেক দিন বন্ধ

এলাকার নামঃ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, মধ্য এবং উত্তর বাড্ডা, জগন্নাথপুর, বারিধারা, সাতার উর্বশীকুল, শাহাজাদপুর, নিকুঞ্জ-১,২, কুড়িল, খিলখেত, উত্তরআছাড় খান, দক্ষিণআছাড় খান, জোয়ার সাবারা, আশকোন উর্বশীা, বিমানবন্দর সড়ক ও উত্তরা থেকে টঙ্গী সেতু।

মার্কেটের নামঃ যমুনা ফিউচার পার্ক, নুরুনবী সুপার মার্কেট, পাবলিক ওয়ার্কস সেন্টার, ইউনিকি প্লাজা, ইউনাইটেড প্লাজা, কুশাল সেন্টার, এবি সুপার মার্কেট, আমির কমপ্লেক্স, মাসকট প্লাজা।


বছরের পর বছর লুকিয়ে নামাজ আদায় করেছি! অ্যানা কলিন্স ওসামা


বৃহস্পতিবার পুরোদিন এবং শুক্রবার অর্ধেক দিন বন্ধ

এলাকার নাম-১: মোহাম্মাদপুর, আদাবর, শ্যামলী, গাবতলী, মিরপুর স্টেডিয়াম, চিড়িয়াআছাড় খানা, টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর, আসাদগেট।

মার্কেটের নাম-১: মোহাম্মাদপুর টাউন বল মার্কেট, কৃষি মার্কেট, আড়ং, বিআরটিসি মার্কেট, শ্যামলী বল মার্কেট, মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট, মাজার কর্পোরেট মার্কেট, মুক্ত বাংলা শপিং কমপ্লেক্স, শাহ আলী সুপার মার্কেট, মিরপুর স্টেডিয়াম মার্কেট।

এলাকার নাম-২: ইস্কাটন, মগবাজার, বেইলি রোড, সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, শাজাবানপুর, শান্তিনগর, শহিদবাগ, শান্তিবাগ, ফকিরাপুল, পল্টন, মতিঝিল, কিকাটুলি, কাকরাইল, বিজয়নগর, সেগুনবাগিচা, বাইকোর্ট ভবন এলাকা, রমনা শিশু পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, নিউমার্কেট।

মার্কেটের নাম- ২: মৌচাক মার্কেট, আনারকলি মার্কেট, ফরচুন শপিং মল, আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স, কর্নফুলি গার্ডেন সিটি, কনকর্ড টুইং টাওয়ার, ইস্টার্ন প্লাস, নাভানা বেইলি স্টার, সিটি হার্ট, জোনাকি সুপার মার্কেট, গাজী ভবন, পল্টন সুপার মার্কেট, স্টেডিয়াম মারকেত-১, এবং ২, গুলিস্থান কমপ্লেক্স, রমনা ভবন, খাদ্দার মার্কেট, পীর ইয়ামেনি মার্কেট, বাইতুল মুকাররম মার্কেট, আজিজ কোওপারেনাকিভ মার্কেট, সাকুরা মার্কেট।

শুক্রবার পুরোদিন এবং শনিবার অর্ধেক দিন বন্ধ

এলাকার নামঃ বাংলাবাজার, পাটুয়াটুলী, ফরাশগঞ্জ, শ্যামবাজার, জুরাইন, করিমউল্লাববাগ, পোস্তগোলা, শ্যামপুর, মীরবাজীরবাগ, দোলাইপাড়, টিপু সুলতান রোড, ধূপখোলা, গেণ্ডারিয়া, দয়াগঞ্জ, স্বামীবাগ, ধোলাইখাল, জয়কালী মন্দির, যাত্রাবাড়ীর দক্ষিন-পশ্চিম অংশ, ওয়ারী, আহসান মঞ্জিল, লালবাগ, কোতোয়ালী থানা, বংশাল, নবাবপুর, সদরঘাট, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, শাঁখারী বাজার, চাঙ্খারপুল, গুলিস্থানের দক্ষিন অংশ।

মার্কেটের নামঃ আজিমপুর সুপার মার্কেট, গুলিস্থান বকারস মার্কেট, ফরাশগঞ্জ টিম্বার মার্কেট, শ্যামবাজার পাইকারি দোকান, সামাদ সুপার মার্কেট, রহমানিয়া সুপার মার্কেট, ইদ্রিস সুপার মার্কেট, দয়াগঞ্জ বাজার, ধূপখোলা মাঠ বাজার, চক বাজার, বাবু বাজার, নয়া বাজার, কাপ্তান বাজার, রাজধানী সুপার মার্কেট, দয়াগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মার্কেট, ইসলামপুর কাপরের দোকান, ছোট কাঁটরা, বড় কাঁটরা বোলসেল মার্কেট, শারিফ ম্যানসন, ফুলবাড়িয়া মার্কেট, সান্দ্রা সুপার মার্কেট।

সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়্যুবির দিনগুলি – ইমরান রায়হান

সুলতান সালাহুদ্দিনের সভাকক্ষে তখন থমথমে নীরবতা বিরাজমান৷ সুলতানের চোখে প্রতিশোধের নেশা৷ তেল-জাযিরের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর বাহ্যিক পরাজয় সুলতানের দেহের শিরায় শিরায় নড়ছে প্রচন্ড দাম্ভিমতায়৷ তিনি খবর পাঠালেন আমির-উজিরদের উপস্থিতি কামনা করে, সেনাপতি বরাবর নির্দেশ পাঠালেন অস্ত্র হাতে বল্ডউইনের কেল্লার দিকে যাত্রা করার৷ লেবাননের দক্ষিণে অবস্থিত মার্জেইন শহরে ক্রুসেডারদের সাথে সুলতানের তুমুল যুদ্ধ হলো৷ যুদ্ধে সুলতানের বাহিনীর পদচুম্বন করলো অভূতপূর্ব বিজয়ের গৌরব৷

এবারের যুদ্ধে ক্রুসেড বাহিনীর বড় বড় অমাত্যরা আটক হয়েছে৷ টাইবেরিয়ার গভর্নর, হুজের শাসক থেকে টেম্পলের সেনাপ্রধানও সুলতানের হাতে জিম্মি পড়েছে৷ নিয়মমতো বন্দিদের থেকে মুক্তিপণ নিয়ে সুলতান তাদের পথ ছেড়ে দিলেন৷ মুক্তিপণে ব্যর্থ বাকি বন্দিদের নিয়ে দামেশকের পথে হাঁটলো মুসলিম বাহিনী৷

পরাজিত আটকদের মধ্যে এক যুবকের উপর সুলতানের চোখ আটকে গেলো৷ মনে হলো, একে তিনি দেখেছেন কোথাও৷ ইশারায় ডাকলেন তাকে৷ তিনি লক্ষ্য করলেন যুবকটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আসছে৷ কাছে আসলে জানতে চাইলেন, নাম কী তোমার? যুবকের নির্দ্বিধ জবাব, কনরড আ’রাজ৷ সুলতানের কপাল কুঁচকে এলো, ফিলিপ আ’রাজের ছেলে? ছেলেটি হ্যাঁ বলে উত্তর করলো৷ তোমার বাবাকে আমি চিনি— সুলতান বললেন৷ ছেলেটি বললো, হ্যাঁ বাবাও আপনাকে জানেন৷ খুঁড়িয়ে হাঁটছো যে? কোন আঘাত লেগেছে নাকি রোগে পেয়েছে?সুলতানের কৌতূহলভরা প্রশ্ন৷ যুবক বললো, না; বরং আপনার বিরুদ্ধে তেল-জাযিরের যুদ্ধে আহত হয়েছিলাম৷

তেল-জাযির শব্দটি শুনতেই সুলতান সালাহুদ্দিনের মুখ ছেয়ে গেলো গাম্ভীর্যে৷ পরাজয়ের ঘ্রাণ ভেসে এলো তার নাকে৷ শব্দটি সুলতানকে প্রতিশোধের আক্রোশে ব্যাকুল করে তুললো৷ তাছাড়া কনরড সেই ফিলিপের ছেলে যে সেই যুদ্ধে পরাজয়ের মূল-নায়ক তিন ঘোড়সওয়ারের একজন৷

সুলতান জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি সেই যুদ্ধে আমাকে গোপনে হত্যা করতে চেয়েছিলে? কনরড বললো, যুদ্ধের ময়দানে হত্যা করাকে গুপ্ত হত্যা বলে না সুলতানে আজিজ৷ সেদিন আপনাকে হত্যা করতে পারলে আমার গোত্রকে আজ অনুতাপের ভারে ন্যুব্জ দেখতে হতো না; বরং তারা নিরাপদে থাকতো৷ কিন্তু আল্লাহ আপনাকে বাঁচিয়েছেন— কারণ তিনি চান, আপনি বেঁচে থাকুন৷

যুবকের কথাগুলো সুলতানকে আলোড়িত করলো৷ তিনি বললেন, তুমি বরং সেদিন তোমার দায়িত্বই পালন করেছো৷ কারণ, তোমার শরীরে বীরের রক্ত খলবলায়; এমনকি তোমার পায়েও বাবার মতো পঙ্গুত্ব লেগে আছে৷ কনরড বললো, আমার ভয় হয় সুলতান; আমার এই পঙ্গুত্ব আমাকে আসন্ন যুদ্ধ থেকে ফিরিয়ে দেয় কি না!

যুবকের দ্বিধাহীন কথার খই শুনে সুলতান বললেন, তোমার কি এই ভয় হয় না এই মুহূর্তে চাইলে আমি কল্লা উড়িয়ে দিতে পারি? কনরড বললো, না— আমি জানি আপনি সেটা করবেন না৷ কারণ আমি এখন নিরস্ত্র সৈনিক, আমাকে হত্যা করাটা কারুপুষতার পরিচায়ক৷ আর যে সালাহুদ্দিনকে আমি চিনি, সে কাপুরুষ নয়৷ অথচ আমি তাকে পরাজিত করেছি সম্মুখ সমরে; যখন সে উৎকৃষ্ট আরবী ঘোড়ায় বসে দু’হাতে দ্বিধারী তলোয়ার চালাচ্ছিলো৷

সুলতান কনরডের হাতের বাঁধন খুলে দিলেন৷ হত্যা বা বন্দি না করে তাকে ছেড়ে দিলেন তার নিজের সিদ্ধান্তে৷ কোন অদৃশ্য ইশারায় কনরড প্রতিজ্ঞা করে বসলো, সে গোত্র-পরিবার ছেড়ে ইসলামী রাষ্ট্রে থেকে যাবে৷ পালিয়েও কখনো নিজ শহরে যাবার চেষ্টা করবে না৷ এদিকে তখনকার মানুষ সংকল্পে শুদ্ধ এবং প্রতিজ্ঞা-পূরণে দৃঢ়পদ হতো৷ তার এমন অদ্ভূত সিদ্ধান্ত উপস্থিতদের হতবাক করে দিলো৷

সুলতান সালাহুদ্দিন জানতে পারলেন কনরড সেই নির্বাচিত শতজনের একজন যারা জর্ডান নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা ক্রুসেডারদের প্রসিদ্ধ দুর্ভেদ্য দূর্গের কলকাঠি জানে৷ সে জানে দূর্গে প্রবেশের সুড়ঙ্গ এবং গোপন পথগুলোর ব্যাপারে, দূর্গের ভেতরকার প্রতিটি অদৃশ্য রহস্য এবং ইট-কাঠের ব্যাপারেও কনরডের জানাশোনা আছে৷ সুলতান ভেবে রাখলেন, এই দুর্জেয় দূর্গ জয়ের সময় কনরডকে কাজে লাগাবেন তিনি৷

২৪শে আগষ্ট, ১১৭৯—
কনরড সুলতানের বাহিনীর সহযোগী হয়ে দূর্গের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিতে প্রস্তুত হয়েছে৷ মুসলিম বাহিনী কেল্লা জয়ের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে নদীর পাড় ধরে, নেতৃত্বে খোদ সুলতান সালাহুদ্দিন৷ দীর্ঘ পনেরো দিন ধরে ক্রুসেড বাহিনীর সাথে যুদ্ধ চললো৷ ২৯শে আগস্ট দূর্গের দক্ষিণপার্শ্বের দেয়াল ধসে পড়লো কেল্লার ভেতরদিকে৷ দূর্গরক্ষী বাহিনীর বড় অংশের প্রাণ নাশ হলো তাতে৷ মুসলিম সেনারা তরবারি উঁচিয়ে ঢুকে গেলেন কেল্লার অন্দরে৷ কনরড তাদেরকে দূর্গের পুরোটায় পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলো; তার সহায়তার সুলতানের বাহিনী দূর্গের ইটে ইটে পৌঁছে গেলো সহজেই৷ শক্ত বাহুর অবিরত আঘাতের তোড়ে দূর্গের দেয়ালগুলো ধুলো করে দিলো ইসলামের সৈনিকেরা৷ এদিকে সুলতান বেঁচে যাওয়া রক্ষীদের কল্লা ফেলছেন তখনও, যারা অস্ত্র ফেলে দিচ্ছে তাদেরকে আটক করছেন চরম লাঞ্ছনায়৷

সুলতানের কাছে খবর এলো ধ্বসে যাওয়া প্রাসাদের পড়ে থাকা ইট-সুরকিতে এখনো লটকে আছে কয়েকজনের টিমটিমে প্রাণ৷ তারা মৃত্যুর আগে অন্তত একটিবার সুলতানের সাক্ষাত চায়— হয় বাহিনী তাদের এখানে আনুক; নতুবা সুলতানকে কষ্ট করে সেখানে যেতে হবে৷

সুলতান কষ্টটুকু করলেন৷ সেখানে এক পৌঢ় যোদ্ধাকে দেখলেন খুন-বালুতে গড়াগড়ি করছে৷ দেহের পুরোটায় নেযার আঘাত, ক্ষতগুলো তখনও টপটপে রক্ত ঝরাচ্ছে৷ ব্যথায় থেকে থেকে আপাদমস্তক নাড়িয়ে কেঁপে উঠছে সে৷ সুলতান তার চোখ বরাবর এগিয়ে গেলেন৷ বুকের কাছে মাথা নামিয়ে জানতে চাইলেন, কে আপনি?

বৃদ্ধের তখন চকিত কণ্ঠস্বর, বললো— আমি মহাবীর ফিলিপ আ’রাজ! সুলতানের চোখে বিস্ময়; জিজ্ঞেস করলেন, কনরডের পিতা ফিলিপ কি? বৃদ্ধ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো৷ সালাহুদ্দিন বললেন, আপনি তাকে দেখতে চান? বৃদ্ধ সম্মতি জানালো৷ বললো, তবে আমাকে সত্য জানান মহামান্য— আমার ছেলে কনরড কি তার জাতি-আদর্শের সাথে গাদ্দারি করেছে? সে কি সালাহুদ্দিনের বাহিনীর সাথে মিশে বেদুঈনের পোশাকে আজকের ময়দানে প্রতারণার কদম ফেলেছে?

সুলতানের চোখে প্রশ্ন— কে আপনাকে এসব বলেছে? বৃদ্ধ বলে, মুখ-চর্চায় আমার কানে পড়েছে এই খবর৷ সুলতান শুধালেন, আপনার ধারণা যদি অমূলক হয়, তাহলে কী হবে? বৃদ্ধ তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বললো— প্রফুল্ল ও কৃতজ্ঞচিত্তে ছেড়ে যাবো ইহজগতের মায়া; একজন প্রতারক ধুর্তের পিতা হয়ে বাঁচার চেয়ে স্বজাতির জন্য লড়ে যাওয়া বীরের বাবা হয়ে মৃত্যুর মদিরা চাখা আমার জন্য গৌরবের— শৌর্যের, বীর্যের৷

সুলতানের বুকে সংশয়, বাস্তবতা জানালে একজন বীর পিতার অকৃতজ্ঞ মউত দেখতে হবে তার৷ তিনি বললেন, যে আপনাকে এই খবর দিয়েছে সে বরং ধোঁকা দিয়েছে৷ আপনার ছেলে একজন দুঃসাহসী এবং বিচক্ষণ বীর; আপনার সন্তুষ্টি তার প্রাপ্য৷

বৃদ্ধের ঠৌঁটে রেঙে উঠলো আনন্দ-সকালের মিহি রোদ— এক টুকরো মুচকি হাসি৷ সুলতানের হাতে চুমু খেয়ে স্রষ্টার প্রশংসায় তার প্রাণ উড়ে গেলো অজানা কোথাও৷

কনরড কয়েক কদম দূরত্বে ঠায় দাঁড়িয়ে তখন৷ বাবার কাছে আসার সাহস সে হারিয়ে ফেলেছে৷ সুলতান বললেন, আমি তোমার স্বাধীনতাকে চড়া মূল্যে খরিদ করেছিলাম কনরড৷ তুমি বরং তোমার গোত্রে ফিরো, তাদের কাছে কর্মের মাফি চাও— যদি তোমার খিয়ানত তাদের জানায় থাকে৷ আর তারা অজ্ঞাত হলে, বরং তুমি ঘটনাকে চেপে যাও তোমার মাথার কোটরে৷ ভুলে যাও কোন বিকেল শীতল হয়ে উঠেছিলো তোমার প্রতারণার মিশেলে৷ জলদি যাও তুমি!

তথ্যসূত্র—
১৷ আন-নাসের সালাহুদ্দিন
ড. সাঈদ আব্দুল ফাত্তাহ (২০১—২০৪)
২৷ হায়াতু সালাহুদ্দিন
মাহমুদ শিবলি (৬৪—৬৫)
৩৷ মাফরাজুল কারুব ফি-আখবারি বনি আইয়ূব
জামালুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে সালিম (২/২১৪)

নারীবাদ এবং অবাস্তব সমতা

নারীবাদী প্রশ্নঃ যদি পুরুষ ধর্ষণের জন্য দায়ী হয়ে থাকে, তবে কেন নারী নিজেকে বোরখা বন্দী বা ঘরবন্দী করবে? কেন সে রাতের বেলায় বাইরে থাকতে পারবে না প্রয়োজনে? পুরুষকে ঘরে বন্ধ করে রাখা হোক! নারী-পুরুষ সবাই সমান।

জবাবঃ এখানে বলা হল – “কেন নারী নিজেকে বোরখাবন্দী করবে”। এটা মোটেও বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন না। এ ধরণের প্রশ্ন করে কিছু বোকা-সোকা নারীবাদীর হাততালি পাওয়া যাবে, এর বেশি কিছু হবে না।

প্রথম কথাঃ
পর্দার বিধান আল কুরআন ও হাদিস থেকে এসেছে। [১] পর্দা করার কারণ হচ্ছে এটা। কেউ ইচ্ছা করলেই এটা পরিবর্তন করতে পারে না। কুরআন-হাদিসে নারীদেরকে পুরুষদের থেকে অধিক আবৃত থাকতে বলেছে। নারীর সতর ও পর্দা পুরুষের চেয়ে অধিক। প্রয়োজনে বাইরের কাজ করার অনুমতি থাকলেও ইসলাম নারীদেরকে ঘরে অবস্থান করতেই উৎসাহিত করে। [২] এটাই আল্লাহর বিধান। কাজেই কেউ দাবি তুললেই আল্লাহর বিধান কেউ পরিবর্তন করবে না। ইসলামের বিধানগুলোর মূল কারণ হচ্ছেঃ এগুলো আল্লাহর আদেশ। মুসলিমরা আল্লাহর আদেশ পালন করে।

দ্বিতীয় কথাঃ 
ধর্মীয় বিধানের ব্যাপার যদি বাদও দেয়া হয়, সাধারণ যুক্তি, পর্যবেক্ষণ এবং বিজ্ঞান থেকেও আমরা এটা জানি যে – নারী আর পুরুষ এক না। তাদের দৈহিক গঠন ভিন্ন, চিন্তা-চেতনা ভিন্ন, যৌন চেতনার প্রকৃতিও ভিন্ন। নারীদের দেখেই পুরুষদের মধ্যে তাৎক্ষনিক যেসব প্রতিক্রিয়া হয়, পুরুষদের দেখে নারীদের তাৎক্ষনিকভাবে সে রকম কিছু হয় না। [৩] এগুলো সবাই বোঝে, বিজ্ঞানীরা বোঝে, কর্পোরেট ব্যাবসায়ীরাও বোঝে।

এ কারণেই দেখা যায় শোবিজ ইন্ডাস্ট্রিতে নারী মডেলদের খোলামেলা ছবির বাহার। বিজ্ঞাপন, ম্যাগাজিন – সব জায়গায় স্বল্পবসনা নারীদের উপস্থিতি। গাড়ির শোরুম বা বিজ্ঞাপনে বিকিনি পরা মেয়েদেরকে “শোপিস” হিসাবে রাখা হয়; আন্ডারওয়্যার পরা পুরুষদের রাখা হয় না। কেউ যদি “সমানাধিকার” এর কথা বলে জাঙ্গিয়া পরা পুরুষ মডেলদের গাড়ির শোরুমে রাখার দাবি জানান – কেউ তার কথাকে ২ পয়সাও গুরুত্ব দেবে না। কারণ তারা জানে যে অনাবৃত নারী দেহের প্রতি পুরুষের আকর্ষণ কীরকম, আর অনাবৃত পুরুষ দেহের প্রতি নারীদের আকর্ষণ কীরকম। নারী আর পুরুষের যৌন চেতনা বা অপরের প্রতি যৌন আকর্ষণ যদি এক রকম হত – তাহলে #Me_Too এর সমান ভিকটিম ছেলেরাও হতো। এগুলো বোঝে না শুধু impractical নারীবাদীরা।
[কথাগুলো লিখতে খুব বিব্রত লেগেছে, পরিষ্কার করে বোঝাবার স্বার্থে লিখতে হয়েছে।]

নারী দেহ যদি পুরুষ দেহের অনুরূপ হত – তাহলে এ নিয়ে বিশ্বব্যপী এভাবে ব্যাবসা হতো না। মুক্তমনারা মেয়েদের বেশি আবৃত থাকার কোনো কারণ খুঁজে পায় না, পর্দার গুরুত্ব তারা বোঝে না কিন্তু ব্যাবসা সবাই বোঝে। চলচ্চিত্রে নায়ককে দেখা যায় শরীর ঢাকা পোশাক পরতে, নায়িকাদের দেখা যায় শরীরের ৫০% বা আরো বেশি অংশ অনাবৃত রাখতে, এবং ঐ জাতীয় গানকে বলা হয় “কমার্শিয়াল” গান।

বরফে ঢাকা পাহাড়ের চুড়াতে কিংবা ইউরোপের হিমশীতল লোকেশনে গানের দৃশ্যে নায়ক থাকে জ্যাকেট পরা, হুডি পরা আর নায়িকা ও নারী extraরা থাকে সংক্ষিপ্ত পোশাক পরা। শীতে কেঁপে কেঁপে শুটিং করার সময় নায়িকার মাথায় ঠিকই এটা থাকে যে – সে এখানে শোপিস। “বাণিজ্যিক কারণে” তাকেই খোলামেলা হতে হবে। নায়ককে না। নায়কদেরকে দেখা যায় না হাফপ্যান্ট পড়ে আইটেম গানের কেন্দ্রিয় চরিত্র হতে, ওগুলো শুধু মেয়েরাই করে।

ছোটখাটো ড্রেস ছেলেদের অফিসিয়াল পোশাক হয় না, মেয়েদের হয়। জেমস বন্ড থাকে বিজনেস জ্যাকেট পরা, স্যুটেড-বুটেড; আর বন্ড গার্ল থাকে খোলামেলা পোশাক পরা আকর্ষনীয় দেহবল্লরীর মেয়েরা। এটাকেই সবাই স্বাভাবিকভাবে নেয়।

“সমানাধিকার” এর কথা বলে যদি জেমস বন্ডকে জাঙ্গিয়া পরানো হয়, আর বন্ড গার্লকে শরীর ঢাকা পোশাক পরানো হয় – ঐ চলচ্চিত্র কি আদৌ ব্যবসা করবে?

এটা বুঝতে চলচ্চিত্র বোদ্ধা হতে হয় না। চলচ্চিত্র পুরস্কার বা পার্টিতে পুরুষদের অফিসিয়াল ড্রেস হয় পা থেকে মাথা পর্যন্ত আবৃত সুটেড বুটেড পোশাক। আর নারীদের পোশাক হয়… (থাক বললাম না)। নারী আর পুরুষের দৈহিক গঠন, যৌন চেতনা এগুলো যদি এক রকম হতো – তাহলে এগুলো হতো না।

এরা নারীদেরকে বাইরে নামিয়ে আনতে চাবে, নারীদের ভিন্ন শারিরীক বৈশিষ্ট্য ও পর্দার গুরুত্বের বাস্তবতবতাকে এরা স্বীকার করবে না।
বাস্তবতা দেখার জন্য কিন্তু রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না। বাস্তব হচ্ছে – মিউজিক ভিডিও ইন্ডাস্ট্রি, চলচ্চিত্র, মডেলিং এই সব জায়গাতেই নারীদের অর্ধনগ্ন কিংবা পুরো নগ্ন করে ইউজ করা হয়। এসব ইন্ডাস্ট্রির মেয়েরা নিজেরাও জানে যে তাদেরকে শরীর দেখাতেই হবে, “খোলামেলা” হতে হবে। এই খোলামেলা হয়ে মানবদেহকে পণ্য বানানোতে কোনো সমস্যা হয় না, অথচ এই দেহকে মর্যাদার সাথে আবৃত রাখার কথা বললে নারীবাদীদের “জাত যায়”। “Miss Universe” প্রতিযোগিতা হয়। মিস্টার ইউনিভার্স বলে সেভাবে কোনো মাতামাতি দেখা যায় না। সেসব জায়গায় মেয়েদেরকে একটা বিশেষ কন্টেস্টে বিকিনি পরিয়ে হাঁটানো হয়, দেহের প্রতিটি ইঞ্চি যাচাই করা হয়। ছেলেদের নিয়ে এগুলো হয় না।

ছেলেদের খেলাধুলায় মেয়েরা ছোট স্কার্ট পরে চিয়ার গার্ল হয়ে নাচে। মেয়েদের খেলায় ছেলেরা নাচে না। আমি রেফারেন্স দিয়ে যে কোনো কিছু বলতে পছন্দ করি। কিন্তু এই অশ্লীল জিনিসের রেফারেন্স আমি দিতে ইচ্ছুক নই। মুক্তচিন্তা (?)র নোংরামী খণ্ডনের নিজেই ওসব আবর্জনা ঘেটে নিজেকে নোংরা করতে চাই না।
নারীদেহ আর পুরুষদেহ মোটেও এক না, তাদের চিন্তাধারাও এক না। আর এটাই নারীদের জন্য অধিক আবৃত থাকার ইসলামী বিধানের হিকমত।
[খুব বিব্রত হয়ে এগুলো লিখলাম। রেফারেন্স ছাড়া সাধারণত কিছু লিখি না, কিন্তু এগুলোর রেফারেন্স দিলাম না। না দেয়াই ভালো।]

এগুলো practical বা realistic মানুষমাত্রই বোঝে। বোঝে না শুধু Sultana’s dream বা অবাস্তব স্বপ্নের মাঝে ডুবে থাকা নারীবাদীরা। এ কারণেই তারা পুরুষদেরকে ঘরে বন্দী করার কথা বলে, নারীদের পর্দার গুরুত্ব অস্বীকার করে, পুরুষকেও সমান “পর্দা” করার দাবি জানায়। তারা নারীদের শরীর নিয়ে ব্যবসা নিয়ে সেভাবে প্রশ্ন তোলে না। আপত্তি তোলে ইসলামের পর্দার বিধান নিয়ে। অথচ ইসলাম কিন্তু প্রয়োজন অনুসারে পুরুষেরও পর্দার বিধান দিয়েছে।

এরা অবাস্তবভাবে নারী ও পুরুষকে সব জায়গায় “সমান” বানাতে চায়। আমি দৈনন্দিন জীবনের কিছু বাস্তব উদাহরণ দিয়ে এদের কথাবার্তার অসারতা বুঝিয়ে দিচ্ছি।

“আধুনিক” চিন্তাধারার এই মানুষেরা মুখে বলে যে – নারী-পুরুষ সমান। আবার বাসে-ট্রেনে এরা আলাদা মহিলা সিট চায়। কেন, আপনারা না সমান? তাহলে আলাদা সুবিধা চান কেন? মহিলা সিটগুলো কেন আপনাদের জন্য আলাদা করে রাখা হবে?

আপনারা না সমান? তাহলে মহিলা ক্রিকেটে কেন মাঠের বাউন্ডারীর আয়তন কম থাকে? খেলাধুলায় কেন নারী-পুরুষের জন্য কিছু জায়গায় আলাদা নিয়ম? কেন নারী ও পুরুষের জন্য আলাদাভাবে ইভেন্ট হয়? সামরিক বাহিনীওতে কেন মহিলাদের জন্য আলাদা শারিরিক রিকুয়ারমেন্ট? আপনারা না সমান? পুরুষের থেকে কম উচ্চতার একজন নারী কেন সামরিক বাহিনীতে সুযোগ পাবে? [৪] একজন পুরুষ সামরিক বাহিনীতে মাসের ৩০টি দিন যেভাবে সার্ভিস দিতে পারবে, একজন মহিলা কি মাসের ৩০ দিন পুরুষের মতো সমান সার্ভিস দিতে পারবে? নাকি ৩-৪ দিন কিছুটা সমস্যা হবে? একটা দেশ যদি “নারী-পুরুষ সমান” এই তত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে সব পুরুষকে ঘরবন্দী করে শুধু মহিলা সৈন্য দিয়ে সামরিক বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গঠন করে, তাহলে ঐ দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কি শক্তিশালী হবে নাকি দুর্বল হবে?

নারীবাদীরা সব ক্ষেত্রে “নারী-পুরুষ সমান অংশগ্রহন” এর (অবাস্তব) দাবি জানায়। এদের “সমান অংশগ্রহন” আসলে কর্পোরেট অফিস আর কিছু চাকচিক্যে ভরা কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এদেরকে যদি বলা হয় – রেল স্টেশনে ভারী জিনিস বহন করার কুলির কাজ, রিকশা চালানোর কাজ, বাসে হেল্পারির কাজ, চালের দোকানগুলোর বস্তা বহনের কাজ {যেখানে ৫০+ কেজি ওজনের চালের বস্তা বহন করতে হয়}, ম্যানহোলের ক্লিনারের কাজ {যেখানে ম্যানহোলের গভীরে ঢুকে দুষিত বায়ুর মধ্যে বিপদ মাথায় নিয়ে স্যুয়ারেজ লাইন পরিষ্কার করতে হয়} এসব জায়গাতেও সমানভাবে কিংবা ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসুন — এদেরকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না।

সব জায়গায় সত্যি সত্যি এদেরকে “সমান” করে দিলে, অতিরিক্ত সুবিধা দেয়া বাদ দিয়ে দিলে এবং সব পুরুষকে ঘরবন্দী করে দিলে দেখা যাবে এরা কিভাবে দেশ চালায়।

যার যেখানে দায়িত্ব, তার সেখানেই সেটা পালন করা উচিত। ঘরে কাজ করলে বা পর্দা করলে নারী অসম্মানিত হয় না। আমাদের নিকট নারীরা মায়ের জাতি, বোনের জাতি। তারা সম্মানিত। [৫] বাসে বা গণপরিবহনগুলোতে কোনো মহিলা যদি সিট না পায়, তাহলেই এই ইসলামিস্ট হুজুররাই দাঁড়িয়ে নারীদের জন্য সিট ছেড়ে দেয়। কারণ হুজুরদের কাছে নারীরা মা ও বোনের জাতি। আমরা এখানে সমানাধিকারে বিশ্বাস করি না; আমরা বিশ্বাস করি এখানে নারীদের অধিকার বেশি। নারীদের জন্য সিট ছেড়ে দিতে হুজুরদের কোনো “মহিলা সিট” লাগে না। আমরা মনে করি উপার্জনের জরুরত পুরুষের জন্য; নারীর জন্য না। [৬] কিন্তু সমানাধিকারের বুলি আওড়ানো বুদ্ধিজীবিরা যখন “সমান সমান” করে মুখে ফেনা তুলে সব শেষে নারীদের জন্য অধিক সুবিধা দেবার কথা বলে – আমাদের কাছে সেটাকে দ্বিমুখিতা ছাড়া কিছু মনে হয় না।

ইসলাম শুধু অপরাধের জন্য শাস্তির বিধানই রাখে না, অপরাধের কারণগুলোও ধ্বংস করে দেয়। ইসলামে ধর্ষণ, ব্যভিচার – এগুলোর জন্য শাস্তির বিধান আছে। যৌন হয়রানী, ধর্ষণ – এগুলো কেন হয়? কামোত্তেজিত পুরুষের কারণেই এগুলো হয় [নারীরাও “সমানভাবে” এগুলো করতে পারে – এ কথা বললে সেটা হাস্যকর হবে ]।

নারী-পুরুষের অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টিপাত বন্ধ করে এবং একই সাথে সর্বক্ষেত্রে নারীরাও যদি নিজেদের আবৃত রাখে, তাহলে এই জাতীয় sexual crime এর প্রাথমিক কারণই শেষ হয়ে যায়। এরপরেও যদি কিছু কুলাঙ্গার এ জাতীয় অপরাধ করে- ইসলামে তার শাস্তির ব্যবস্থা আছে। বাস্তব তো এটাই যে – আল্লাহর বিধানের মধ্যেই মুক্তির সকল উপাদান আছে। নারীবাদী বা মুক্তমনারা যতই অবাস্তব কথা বলুক না কেন।

মায়েরা বাচ্চাদের নিরাপত্তা চায়। এ জন্য তারা বাচ্চাদেরকে একা একা রাস্তা পার হতে নিষেধ করে, দেখে শুনে রাস্তা পার হতে বলে। যাতে দুর্ঘটনার কোনো সম্ভাবনা না থাকে।
এখন কেউ এসে যদি বলা শুরু করেঃ “দুর্ঘটনা হলে সেটা গাড়ির চালকদের দোষ, একা রাস্তা পার হতে নিষেধ করে বাচ্চাদের “অধিকার” হরণ করা যাবে না। দেশে তো আইন আছে, দুর্ঘটনা হলে চালকদের শাস্তি হবে। দুর্ঘটনা ঘটলে সেটা চালকদের সমস্যা, বাচ্চাদের না। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী গাড়ী; বাচ্চারা না! বাচ্চারা কেন রাস্তায় ইচ্ছামত চলতে পারবে না? দরকার হলে সব গাড়ীকে গ্যারেজে বন্ধ করে রাখুন!” – তাহলে ঐ লোককে সবাই পাগল বলবে।

কিন্তু ইসলামের পর্দা নিয়ে উল্টোপাল্টা কথা বলে, তাহলে তাকে কেউ পাগল বলে না, তাকে সবাই “নারীবাদী” না হলে “মুক্তচিন্তাকারী” বলে।

“হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মু’মিনদের নারীদেরকে বলঃ তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবেনা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
(আল কুরআন, আহযাব ৩৩ : ৫৯)

“মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।

আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।”
(আল কুরআন, নুর ২৪ : ৩০-৩১)

তথ্যসূত্রঃ
=======

[১] “Verses and hadeeth about hijab – islamQA (Shaykh Muhammad Saalih Al-Munajjid)”
https://islamqa.info/en/13998/
[২] “Guidelines on women working outside the home – islamQA (Shaykh Muhammad Saalih Al-Munajjid)”
https://islamqa.info/en/106815/
[৩] ■ এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখা যেতে পারে এই বইটিঃ “Brain Sex: The Real Difference Between Men and Women” By Anne Moir & David Jessel
এখানে বেশ কিছু গবেষণামূলক তথ্য ও উপাত্ত উল্লেখ করা হয়েছে। নারী ও পুরুষের মস্তিষ্ক ও চিন্তা-চেতনার ভিন্নতা যে কতো ব্যাপক তা আলোচনা করা হয়েছে।
https://www.amazon.com/Brain-Sex-Difference-Be…/…/0385311834
■ অথবা দেখতে পারেন, এনামুল হক লিখিত ‘বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে বিবাহ ও নারীবাদ’ বইটি।
ডাউনলোড লিঙ্কঃ http://www.pathagar.com/book/detail/799
[৪] “Officer – Bangladesh Army”
https://www.army.mil.bd/Officer
[৫] এক লোক রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল(ﷺ)! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেনঃ তোমার মা। লোকটি বললঃ অতঃপর কে? নবী(ﷺ) বললেনঃ তোমার মা। সে বললঃ অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বললঃ অতঃপর কে? তিনি বললেনঃ অতঃপর তোমার বাবা।
[মুসলিম ৪৫/১, হাঃ ২৫৪৮] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৩)
[৬] “If a woman works, does she have to pay the household expenses– islamQA (Shaykh Muhammad Saalih Al-Munajjid)”
https://islamqa.info/en/2686/

শাইখুল ইসলাম ইযযুদ্দিন রহঃ যার প্রস্থানে জনশূন্য হয়ে যাচ্ছিল গোটা শহর।

লেখক ইমরান রাইহান– একজন আলেম শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন এ সংবাদ শুনে ঘরবাড়ি ছেড়ে তার পিছু নিয়েছে শহরবাসী। জনশূন্য হয়ে যাচ্ছে গোটা শহর।

অবিশ্বাস্য এই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল মিসরে। ৮০০ বছর আগে।

মিসরে তখন আল মালিকুস সালিহ নাজমুদ্দিন আইয়ুবের শাসনকাল। সেসময় মিসরের প্রশাসনে মামলুকদের কর্তৃত্ব বাড়ছিল। আরবীতে মামলুক বলা হয় গোলাম বা দাসকে। আইয়ুবী শাসনামলে আমীর ও সুলতানরা যুদ্ধের জন্য মামলুকদের উপর ভরসা রাখতেন। তাদের দেয়া হতো উচ্চতর প্রশিক্ষণ। মামলুকদের আরবী শেখানো হতো। ফিকহের প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া হত। সাধারণত এই মামলুকদের সংগ্রহ করা হতো খাওয়ারেজম ও মা ওয়ারাউন্নাহার অঞ্চল থেকে। নিজেদের যোগ্যতাবলে মামলুকরা প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদের অবস্থান মজবুত করে। নাজমুদ্দিন আইয়ুবের আমলে একজন মামলুক সুলতানের সহকারী পদে নিয়োগ পান। এছাড়া আরো কয়েকজন মামলুক প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ন পদে অবস্থান করছিলেন। এ বিষয়ে মিসরের আলেমরা চুপ থাকলেও একজন আলেম গর্জে উঠেন। তিনি পরিস্কার ভাষায় জানিয়ে দেন, এই সকল আমীরদের শরিয়তসম্মত পন্থায় মুক্ত করা হয়নি। তাই এরা ক্রীতদাস হিসেবেই বিবেচিত। এদের সাথে লেনদেন করা শরিয়তের দৃষ্টিতে ঠিক হবে না।

শায়খের এই ফতুয়ার ফলে জনমত প্রভাবিত হয়। বাধ্য হয়ে আমিররা এই আলেমের কাছে এসে বললেন, আপনি কী চান? শায়খ বললেন, আমি চাই বড় একটি মজলিস ডাকা হবে। সেখানে বাইতুল মালের পক্ষ থেকে আপনাদের নীলামে চড়ানো হবে। এরপর আপনাদেরকে শরয়ী পন্থায় আযাদ করা হবে।

আমিরদের জন্য পুরো ব্যাপারটিই ছিল লজ্জাকর। আমিররা এ বিষয়ে নাজমুদ্দিন আইয়ুবের সাথে আলাপ করেন। সুলতান নানাভাবে এই আলেমকে বুঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি কারো কথাই মানছিলেন না। শেষে সুলতান বিরক্ত হয়ে বললেন, এসবের সাথে তার কী সম্পর্ক? তাকে কে বলছে আমিরদের ব্যাপারে মাথা ঘামাতে?

সুলতানের কথা আলেমের কানে আসে। তিনি খুবই অসন্তুষ্ট হন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি মিসর ত্যাগ করে সিরিয়ায় হিজরত করবেন। তিনি দ্রুত তার পরিবারকে নিয়ে কায়রো ত্যাগ করেন। এদিকে এই আলেমের শহর ত্যাগের ঘটনা জানতে পেরে কায়রোতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। উলামা, সুফি, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার লোকেরা তার পিছু নেয়। তাদের একটাই কথা, শায়খ যে শহরে থাকবেন না, আমরাও সেখানে থাকবো না। শায়খ যেদিকে যাবেন, আমরাও সেদিকে যাবো।

সুবহানাল্লাহ, এ ছিল সমকালীন জনজীবনে একজন আলেমের প্রভাব। একজন আলেম শহর ত্যাগ করছেন বলে শূন্য হয়ে যাচ্ছে কায়রো।


এই সংবাদ পৌছলো সুলতানের কানে। সুলতান নিজেই এবার শায়খের কাছে যান। তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে কায়রো ফিরিয়ে আনেন। সুলতান সিদ্ধান্ত নেন, আমিরদেরকে নিলামে তোলা হবে। একথা শুনে সুলতানের সহকারী রেগে যান। তিনি বলেন, আমরা দেশের শাসক। আর সে আমাদের নিলামে তুলবে ? দেখি কীভাবে সে আমাদের নিলামে তোলে। আমি যাচ্ছি, সে বাড়াবাড়ি করলে তার গর্দান উড়িয়ে দিব। এই কথা বলে তিনি নাংগা তরবারী হাতে শায়খের ঘরের সামনে উপস্থিত হন। শায়খের ছেলে আবদুল লতিফ দরজা খুলে দেয়।

ছেলে পিতাকে জানায় সুলতানের সহকারী নাংগা তরবারী হাতে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। শুনে শায়খ বললেন, তোমার পিতার সৌভাগ্য, হয়তো সে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হবে। শায়খ ঘর থেকে বের হন। শায়খকে দেখেই সুলতানের সহকারীর হাত কাপতে থাকে। তার হাত থেকে তরবারী পড়ে যায়।

তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, হে আমাদের অভিভাবক, আপনি কী চান? শায়খ নির্বিকার কন্ঠে বলেন, আমি চাই তোমাদেরকে নিলামে তুলে বিক্রি করবো।

‘আমাদের মূল্য কী কাজে লাগাবেন?’
‘মুসলমানদের কাজে’
‘এর দাম কে দিবে?’
‘আমি নিজেই দিব’

সুলতানের সহকারী রাজি হয়ে যান। নির্ধারিত দিনে নিলাম ডাকা হয়। শায়খ সকল মামলুক আমিরকে নিলামে তোলেন। তাদের সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রেখে উচু দাম নির্ধারণ করেন। সুলতান নাজমুদ্দিন আইয়ুব নিজের ব্যক্তিগত অর্থ থেকে সকল আমিরকে ক্রয় করে মুক্ত করে দেন। বিক্রয়মূল্য বাইতুল মালে জমা করা হয়।
সেদিন থেকে শায়খকে বাইউল উমারা বা আমির বিক্রেতা বলে অভিহিত করা হতে থাকে।

এই ঘটনা উল্লেখ করে তকিউদ্দিন আস সুবকি লিখেছেন, ইতিপূর্বে আর কোনো আলেমের ক্ষেত্রে এমনটা শোনা যায়নি। (১)

এ ছিল একজন আলেমের সাহসিকতা ও দৃঢ়তা। এই আলেম সাধারণ কেউ ছিলেন না। তিনি ছিলেন শাইখুল ইসলাম ইযযুদ্দিন বিন আব্দুস সালাম।

ইযযুদ্দিন বিন আব্দুস সালামের জন্ম ৫৭৮ হিজরীতে, সিরিয়ার দামেশকে। যুগের শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের কাছে তার পড়াশোনার পাঠ সমাপ্ত হয়। পড়াশোনা শেষে তিনি দীর্ঘদিন যাবিয়া-ই-গাযালিয়া নামক স্থানে দরস দেন। দামেশকের জামে উমাভির খতিব ছিলেন অনেকদিন। এসময় তিনি শিরক, বিদাত উচ্ছেদের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন।

সিরিয়ায় অবস্থানকালে শায়খ সিরিয়ার শাসক সালিহ ইসমাইলের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। সালিহ ইসমাইল ছিলেন মিসরের শাসক নাজমুদ্দিন আইয়ুবের ভাই। তবে দুই ভাইয়ের মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি ছিল। সালেহ ইসমাইল নিজের ভাইয়ের সাথে যুদ্ধ করার জন্য খ্রিস্টানদের সাথে চুক্তি করেছিল। চুক্তির শর্তাবলী ছিল,

১। সালেহ ইসমাইল খ্রিস্টানদের সয়দা ও সাকিফ শহর প্রদান করবে।
২। খ্রিস্টানদেরকে দামেশক থেকে অস্ত্র কেনার সুযোগ দেয়া হবে।
৩। মিশর আক্রমনের সময় সালেহ ইসমাইল খ্রিস্টানদেরকে সংগ দিবে। (২)

তিনটি শর্তই চুড়ান্ত অপমানজনক। কিন্তু ক্ষমতার লোভে মত্ত সালেহ ইসমাইলের এসব ভাবার সময় কোথায়।

শায়খ ইযযুদ্দিন বিন আব্দুস সালাম জুমার খুতবায় এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য রাখেন। তিনি পরিস্কার বলে দেন, মুসলমানদের শহরগুলো সালেহ ইসমাইলের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, যে সে চাইলেই যাকে ইচ্ছা দিয়ে দিবে। এছাড়া খ্রিস্টানরা এই অস্ত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করবে সুতরাং তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করাও নাজায়েজ। শায়খ ফতোয়া দিয়েই ক্ষান্ত হলেন না। তিনি জুমার খুতবায় সুলতানের জন্য দোয়া করা থেকে বিরত থাকেন। এছাড়া তিনি দোয়ায় বারবার বলতেন, হে আল্লাহ, আপনি ইসলামের অনুসারীদের সাহায্য করুন। মুলহিদ ও ধর্মের শত্রুদের লাঞ্চিত করুন।

অল্পকদিনের মধ্যেই শায়খের সকল পদপদবী কেড়ে নেয়া হয়। শায়খকে বন্দী করা হয়। কিছুদিন পর শায়খকে বাইতুল মাকদিসে পাঠানো হয়।

এদিকে সালেহ ইসমাইল, হেমসের শাসনকর্তা আল মালিকুল মানসুর ও খ্রিস্টান নেতারা মিসরে হামলার প্রস্তুতি নিতে থাকে। তারা নিজস্ব সেনাবাহিনী নিয়ে বাইতুল মাকদিসে আগমন করে। সালেহ ইসমাইল শায়খের বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত ছিল। সে নিজের এক সহকারিকে একটি রুমাল দিয়ে বলে এটি শায়খকে দিয়ে আসো। তুমি তাকে বলবে তিনি চাইলেই আমি তাকে পূর্বের সকল পদ ফিরিয়ে দিব। তিনি যদি তিনি তা না চান তাহলে তাকে আমার পাশের তাবুতেই বন্দী করে রাখা হবে। সেই আমির শায়খের কাছে এসে বললো, আপনি সুলতানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে ফেলুন। আপনি তার দরবারে যান। আপনাকে কিছুই বলতে হবে না। শুধু সুলতানের হাত চুম্বন করলেই হবে। তিনি আপনাকে আপনার সব পদ-মর্যাদা ফিরিয়ে দিবেন।

একটি সুবর্ণ সুযোগ। শায়খ চাইলেই আবার ফিরে পাবেন নিজের হারানো পদ-মর্যাদা। মুক্তি পাবেন কারাগার থেকে। আবার তিনি ফিরে যেতে পারবেন মসজিদের দরসে, মাদরাসার মসনদে। শায়খ চাইলে ভাবতে পারতেন, আমি মুক্ত হলে কতো কতো খেদমত করতে পারবো। কিন্তু শায়খ জানতেন, তার মুক্ত হওয়া মানে বশ্যতা স্বীকার করে নেয়া, পরাজিত হওয়া। যতক্ষণ সালেহ ইসমাইল নিজের কর্ম থেকে সরে আসবে না, ততক্ষন তার পক্ষ নেয়ার সুযোগ নেই।
শায়খ দীপ্ত কন্ঠে বললেন, আরে মূর্খ, বাদশাহ আমার হাত চুম্বন করুক, এটাও তো আমি চাই না। আর সেখানে আমি কেনো তার হাত চুম্বন করবো? শুনে নাও, তোমরা এক জগতের বাসিন্দা, আমি অন্য জগতের। প্রশংসা আল্লাহর, তোমরা যার হাতে বন্দী, আমি তা থেকে মুক্ত।

শায়খের জবাব শুনে শায়খকে সুলতানের পাশের তাবুতে বন্দী করা হয়। একদিন শায়খ সেই তাবুতে বসে তিলাওয়াত করছিলেন। পাশের তাবুতে সুলতান ও খ্রিস্টান রাজা বসা ছিল। সুলতান বললো, পাশের তাবুতেকে আছে জানো? সে মুসলমানদের মধ্যে একজন শ্রেষ্ঠ আলেম। তোমার সাথে চুক্তি করায় সে আমার বিরোধিতা করে। তাই আমি তাকে বন্দী করেছি। একথা শুনে খ্রিস্টান রাজা বললো, সে যদি আমাদের পাদ্রী হতো তাহলে আমরা তার পা ধুয়ে পানি পান করতাম।

কিছুদিন পরেই মিসরী বাহিনীর সাথে সালেহ ইসমাইলের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে সালেহ ইসমাইল ও খ্রিস্টানদের সম্মিলিত বাহিনী পরাজিত হয়। শায়খ মুক্ত হন। তিনি মিসরের দিকে রওনা হন।

পথে কির্কের শাসক তাকে কির্কে অবস্থানের আবেদন জানান। শায়খ বলেন, তোমাদের এই ছোট শহর আমার জ্ঞানের ভার বইতে পারবে না। (৩)

শায়খ যখন মিসরে পৌছলেন (৬৩৯ হিজরীতে) তখন আত তারগিব ওয়াত তারহিব গ্রন্থের লেখক আল্লামা মুনযিরি বললেন, আজ থেকে আমি আর ফতোয়া দিব না। যে শহরে ইযযুদ্দিন বিন আব্দুস সালামের মত আলেম অবস্থান করেন সেখানে অন্যদের ফতোয়া দেয়া উচিত নয়।

শায়খ একবার সুলতান নাজমুদ্দিন আইয়ুবের দরবারে উপস্থিত হন। দরবার চলছিল তখন। শায়খ সুলতানকে কোনো সম্মান না জানিয়ে সরাসরি বলেন, আইয়ুব তোমার রাজত্বে স্বাধীনভাবে মদপান করা হয়। কেয়ামতের দিন এ বিষয়ে আল্লাহ তোমাকে জিজ্ঞেস করলে কী জবাব দিবে?

নাজমুদ্দিন আইয়ুব বলেন, আসলেই কি এমনটা হচ্ছে? তখন শায়খ বিভিন্ন এলাকার নাম বলেন। সুলতান তখনই এসব মদের দোকান বন্ধ করার আদেশ দেন।

শায়খ শুধু নির্জন খানকাহয় বসা সাধক ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন মর্দে মুজাহিদ। একবার ক্রুসেডারদের সাথে নাজমুদ্দিন আইয়ুবের লড়াই চলছিল। ক্রুসেডাররা মানসুরা পৌছে গিয়েছিল। শায়খ ছিলেন মুসলিম বাহিনীর সাথে। যুদ্ধে খ্রিস্টানরা এগিয়ে গেলে শায়খ কয়েকবার , হে বায়ু, তাদেরকে আটকে ফেলো, বলে চিৎকার করেন। কিছুক্ষণ পরে বাতাসের গতি পালটে যায়, ক্রুসেডারদের অনেকগুলো জাহাজ ডুবে যায়। যুদ্ধের ফলাফল মুসলমানদের অনুকুলে এগিয়ে আসে। (৪)

৬৫৮ হিজরী। ১২৬০ খ্রিস্টাব্দ।

তাতারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুয। সিরিয়া দখলের পর তাতারীরা এগিয়ে আসছে মিসরের দিকে। মিসরের কোষাগার প্রায় শূন্য তখন। সাইফুদ্দিন কুতুয সিদ্ধান্ত নিলেন জনগনের উপর কর ধার্য করবেন। যে মজলিসে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় শায়খ ইযযুদ্দিন বিন আব্দুস সালাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, দুটি শর্তসাপেক্ষে কর নেয়া জায়েজ হবে।

১। রাষ্ট্রিয় কোষাগারে সম্পদ না থাকতে হবে।
২। আমির ও সভাসদরা তাদের তরবারী ও ঘোড়া ব্যতিত সব বিক্রি করে দিবে। এরপরও যদি অর্থের দরকার হয় তখন কর বাসানো যাবে।

শায়খের এই ফতোয়া মেনে নেয় সবাই। আমিররা নিজেদের সকল সম্পদ বিক্রি করে দেয়। (৫)

এই ঘটনার সময় শায়খের বয়স ছিল ৮০ বছর। তবু শায়খ শরিয়াহর ব্যাপারে কঠোর ছিলেন। নিজেকে মাজুর মনে করে কুতুযের কাজের বৈধতা দেননি, কিংবা খাদেমবর্গ দ্বারাও প্রভাবিত হননি।

শায়খ ছিলেন উচু মাপের আলেম। ইবনুল হাজিব বলেছেন, ইযযুদ্দিন বিন আব্দুস সালাম গাজালির চেয়েও বড় ফকীহ ছিলেন।

তার সম্পর্কে ইমাম যাহাবী বলেছেন, তিনি যুহদে ছিলেন অন্যদের চেয়ে অগ্রগামী। সর্বদা আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকারের দায়িত্ব পালন করতেন।

জালালুদ্দিন সুয়ুতী বলেছেন, তিনি শাইখুল ইসলাম, সুলতানুল উলামা।

ইবনুল ইমাদ হাম্বলী বলেছেন, তার যুগে তিনি একাই ছিলেন অনন্য। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্ররা তার কাছে আসতো। (৬)

শায়খ সত্য প্রচারে কঠোর ছিলেন। যা হক তাই প্রচার করতেন। নিজের ভুল হলে অকপটে স্বীকার করতেন। মিসরে অবস্থানকালে তিনি একটি ভুল ফতোয়া দেন। পরে তিনি প্রকাশ্যে ঘোষনা দেন , আমার ফতুয়াটি ভুল ছিল। কেউ যেন এর উপর আমল না করে। (৭)

শায়খের জানাযায় আল মালিকুজ জাহের রুকনুদ্দিন বাইবার্স বলেছিলেন, আজকে আমার শাসন প্রতিষ্ঠিত হলো। যদি তিনি বলতেন, হে জনতা তোমরা বের হও, বিদ্রোহ কর। তাহলে লোকেরা তাই করতো ।

শায়খ ইন্তেকাল করেন ৬৬০ হিজরীতে।

সূত্র–
১। তবাকাতুশ শাফিয়িয়্যাতিল কুবরা, ৮ম খন্ড, ২১৭ পৃষ্ঠা– আল্লামা তকিউদ্দিন আস সুবকি।
২। কিসসাতুত তাতার, ২৬২ পৃষ্ঠা– ড রাগেব সিরজানি
৩। তবাকাতুশ শাফিয়িয়্যাতিল কুবরা, ৮ম খন্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা– আল্লামা তকিউদ্দিন আস সুবকি।
৪। তবাকাতুশ শাফিয়িয়্যাতিল কুবরা, ৮ম খন্ড, ২১৬ পৃষ্ঠা– আল্লামা তকিউদ্দিন আস সুবকি।
৫। তবাকাতুশ শাফিয়িয়্যাতিল কুবরা, ৮ম খন্ড, ২২৫ পৃষ্ঠা– আল্লামা তকিউদ্দিন আস সুবকি।
৬। আল ইয বিন আব্দিস সালাম সুলতানুল উলামা ওয়া বাইউল মুলুক– মুহাম্মদ যুহাইলি।
৭। হুসনুল মুহাদারা ফি তারিখি মিসর ওয়াল কাহেরা, ২য় খন্ড, ৩১৩ পৃষ্ঠা — জালালুদ্দিন সুয়ুতী।
৮। তবাকাতুশ শাফিয়িয়্যাতিল কুবরা, ৮ম খন্ড, ২১৫ পৃষ্ঠা– আল্লামা তকিউদ্দিন আস সুবকি।


লেখক ইমরান রাইহান

ইব্রাহিম আ. প্রিয়তমা স্ত্রী-সন্তানের জন্য অনাবাদী বিজন মরুপ্রান্তে যে দোয়া করেছেন।

ইব্রাহিম আ. যখন প্রিয়তমা স্ত্রী আর প্রাণাধিক প্রিয় শিশুকে এক অনাবাদী বিজন মরুপ্রান্তে রেখে গেলেন- তখন তিনি তাঁদের জন্য রবের কাছে দোয়া করেছিলেন। সেই কাহিনী আল্লাহ্‌ কোরআনে আমাদের জানিয়েছেন।

যাতে আমরা শিক্ষা নিই। ইব্রাহিম আ. তাঁদের জন্য প্রথমেই এই দোয়া করেন নি যেন খাদ্য, সুখ ও স্বচ্ছন্দ্যের প্রাচুর্য্য আসে। বরং দোয়া করেছেন,

رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ
ও আমার রব, (তাদেরকে তোমার এই পবিত্র ঘরের কাছে রাখছি) যেন তারা নামাজ করে (আল-ইব্রাহিম, ৩৭)।

প্রথমেই নামাজের কথা বলেছেন। কারণ, নামাজ কায়েম হলে রিজিক্বের নিশ্চয়তা আসে, সুখ ও নিরাপত্তা তৈরি হয়। তাই ইবরাহীম আ. নামাজ কায়েমের প্রসঙ্গ নিশ্চিত করে এরপর বলছেন,

فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ
১। সুতরাং কিছু মানুষের অন্তরে তাদের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিন
২। এবং তাদেরকে ফলফলাদির মাধ্যমে রুজির ব্যবস্থা করুন।
৩। যাতে তারা শুকরিয়া জ্ঞাপন করে।

অর্থাৎ তাঁরা যেন আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞচিত্ত থাকে সর্বদা। কারণ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় নেককার বান্দার বৈশিষ্ট্য, সর্বোত্তম ইবাদাত। কৃতজ্ঞতার বোধ মানুষের মধ্যে অন্যসব ইবাদাত ও আনুগত্যের শিক্ষা দেয়।

এখানে আরও একটা বিষয় অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে নিহিত আছে। তা হচ্ছে, কিছু মানুষের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টির প্রসঙ্গে। কখন সেই ভালোবাসা সৃষ্টির কথা বলা হচ্ছে? নামাজ কায়েমের পর।

অর্থাৎ নামাজের সাথে ভালোবাসা, অনুরাগের সম্পর্ক আছে। সে যদি নামাজের প্রতি যত্মবান হয়, তার প্রতি আপনার ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। আর সে যদি নামাজের সাথে সম্পর্ক না রাখে, তবে আপনার সাথে তার সম্পর্কেও ভাঁটা পড়া উচিত, অনুরাগের, ভালোবাসার বোধে টান পড়া উচিত।

আপনার বন্ধু, স্বজন নামাজ পরিত্যাগ করলেও আপনার তার প্রতি অনুরাগ সমান থাকা আপনার এবং তার উভয়ের জন্যেই অকল্যাণকর। কারণ এই সমান অনুরাগ বোধ তাকে নামাজের প্রতি দাওয়াত দেওয়া থেকে আপনাকে বিরত রাখে। আর আপনাকেও ক্রমে আপনার দ্বীনি দায়িত্ব সম্বন্ধে গাফেল করে দেয়।

আল্লাহ্‌ তাই প্রকারান্তরে শিক্ষা দিচ্ছেন, নামাজের সাথে ব্যক্তির সম্পর্কের উপরভিত্তি করে সেই ব্যক্তির সাথে অন্তরের ভালোবাসার সম্পর্ক থাকবে। নামাজীদের সাথে সুসম্পর্কের ব্যাপারে কোরআনে আরও বহু জায়গায় উৎসাহিত করা হয়েছে।

এখান থেকে এই শিক্ষা উঠে আসে, আপনি যার ফ্যান হবেন, যার প্রতি আপনার মুগ্ধতা জন্মাবে, যার প্রতি আপনার অন্তরের ভালোবাসা তৈরি হবে, যে আপনার বন্ধু হবেন, তার আবশ্যকগুণ হতে হবে, সে নামাজ নিজে পড়ে এবং সমাজে নামাজ কায়েমের শিক্ষা দেয়।

এবার আসুন নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি যার ফ্যান, আমি যাকে ভালোবাসি, আমি যার বন্ধু, তার কাজ কি আমাকে আল্লাহ্‌কে স্মরণ করায়? আল্লাহ্‌কে স্মরণের শিক্ষা দেয়? নাকি তার কাজ আমাকে আল্লাহ্‌র স্মরণ থেকে বিমুখ করে, আল্লাহকে ভুলিয়ে দেয়?

যদি তাই হয়, তবে সেই বিচারের দিনের অবস্থাটা ভাবুন যেদিন একমাত্র বিচারকার্যের অধিকার থাকবে আল্লাহ্‌র। আর তিনি বলবেন,

فَالْيَوْمَ نَنسَاهُمْ كَمَا نَسُوا لِقَاءَ يَوْمِهِمْ هَٰذَا
সুতরাং আজকে আমিও তাদেরকে ভুলে যাব, যেভাবে তারা (আমাকে) ভুলে গিয়েছিল (আল- আ‘রাফ ৫১)।.

বিচার দিবস কেমন হবে? আল্লাহ্‌ নিজে সে দিনের ব্যাপারে বর্ণনা করেছেন।

সেদিন সব হবে আত্মপক্ষের স্বীকারোক্তির মতন, কনফেশন। সেই কনফেশনের উপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হবে শাস্তি।

يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

যে দিন তারা যা করেছে সেসব বিষয়ই তাদের জিহ্বা, তাদের হাত, তাদের পা প্রকাশ করে দেবে (আন-নূর, ২৪)

শুধু কি জিহ্বা কিম্বা হাত-পা ? তা-ই নয়, বরং কানে কোন গান শুনেছি, কোন কথা শুনেছি পাপের সেসব সাক্ষ্যও কান দেবে। সব অঙ্গই সব ফাঁস করে দেবে।

কিছুই বাকিই থাকবে না। ফেসবুকের একটা লাইক, পোস্ট থেকে শুরু করে ম্যাসেঞ্জারের একটা কথা অবধি। কারণ

أحْصَاهُ اللَّهُ وَنَسُوهُ
আল্লাহ্‌ তো তা গুণে গুণে হিসেব রেখেছেন (আল- মুজাদালা, ৬)।

এমন কিছুই তো থাকবে না যা ভুলে যাবেন আল্লাহ্‌ তা’আলা, এমন কিছুই থাকবে না যা হিসেব থেকে বাদ যাবে। আল্লাহ্‌ বলছেন,

وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا
আপনার প্রতিপালক কিছুই ভুলে যাবার নন (মারয়াম, ৬৪)

সুতরাং যা কিছু আছে সব কিছুর ব্যাপারেই আমাদের সাবধান হওয়া উচিত, আরও অধিক।


লেখক – আরজু আহমদ

এ. পি. জে. আবদুল কালামের জীবন থেকে নেয়া একটি শিক্ষণীয় গল্প

যখন আমি ছোট ছিলাম, আমার মা আমাদের জন্য রান্না করতেন। তিনি সারাদিন প্রচুর পরিশ্রম করার পর রাতের খাবার তৈরি করতেন। এক রাতে তিনি বাবাকে এক প্লেট সবজি আর একেবারে পুড়ে যাওয়া রুটি খেতে দিলেন। আমি অপেক্ষা করছিলাম বাবার প্রতিক্রিয়া কেমন হয় সেটা দেখার জন্য। কিন্তু বাবা চুপচাপ রুটিটা খেয়ে নিলেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করলেনi স্কুলে আমার আজকের দিনটা কেমন গেছে।

আমার মনে নেই বাবাকে সেদিন আমি কি উত্তর দিয়েছিলাম কিন্তু এটা মনে আছে যে, মা পোড়া রুটি খেতে দেয়ার জন্য বাবার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। এর উত্তরে বাবা মা’কে যা বলেছিলেন সেটা আমি কোনদিন ভুলব না। বাবা বললেন, ‘প্রিয়তমা, পোড়া রুটিই আমার পছন্দ’।

পরবর্তীতে সেদিন রাতে আমি যখন বাবাকে শুভরাত্রি বলে চুমু খেতে গিয়েছিলাম তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে তিনি কি আসলেই পোড়া রুটিটা পছন্দ করেছিলেন কিনা। বাবা আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তোমার মা আজ সারাদিন অনেক পরিশ্রম করেছেন এবং তিনি অনেক ক্লান্ত ছিলেন। তাছাড়া একটা পোড়া রুটি খেয়ে মানুষ কষ্ট পায় না বরং মানুষ কষ্ট পায় কর্কশ ও নিষ্ঠুর কথায়। জেনে রেখো, জীবন হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ জিনিস এবং ত্রুটিপূর্ণ মানুষের সমষ্টি।

আমি কোনক্ষেত্রেই সেরা না বরং খুব কম ক্ষেত্রেই ভাল বলা যায়। আর সবার মতোই আমিও জন্মদিন এবং বিভিন্ন বার্ষিকীর তারিখ ভুলে যাই। এ জীবনে আমি যা শিখেছি সেটা হচ্ছে, আমাদের একে অপরের ভুলগুলোকে মেনে নিতে হবে এবং সম্পর্কগুলোকে উপভোগ করতে হবে। জীবন খুবই ছোট; প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে অনুতপ্ত বোধ করার কোন মানেই হয় না। যে মানুষগুলো তোমাকে যথার্থ মূল্যায়ন করে তাদের ভালোবাসো আর যারা তোমাকে মূল্যায়ন করে না তাদের প্রতিও সহানুভূতিশীল হও।”

ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ড. এ.পি.জে আব্দুল কালামের জীবন থেকে নেয়া এই গল্পটির মাধ্যমে ইসলামের আদর্শই ফুটে ওঠেছে।

এ পি জে আবদুল কালাম এর ৩০টি স্মরনীয় বানী


২৭শে জুলাই ২০১৫ তারিখে পরলোকগত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান ও বিজ্ঞানী আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আবদুল কালাম তার জীবদ্দশায় ৮৪ বছরের দীর্ঘ ও সফল কর্মজীবনে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও দর্শন থেকে আমাদের জন্য রেখে গেছেন অসংখ্য মহামূল্যবান বানী। তার থেকে বাছাইকৃত কিছু বানী সবার জন্য নিচে তুলে ধরা হল:-

১. স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে স্বপ্ন দেখতে হবে। আর স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখ, স্বপ্ন হল সেটাই যেটা পুরণের প্রত্যাশা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না।

২. তুমি তোমার ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে পারবে না কিন্তু তোমার অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারবে এবং তোমার অভ্যাসই নিশ্চিত ভাবে তোমার ভবিষ্যত পরিবর্তন করবে।

৩. একটি ভাল বই একশত ভাল বন্ধুর সমান কিন্তু একজন ভাল বন্ধু একটি লাইব্রেরীর সমান।

৪. সফলতার গল্প পড়ো না কারন তা থেকে তুমি শুধু বার্তা পাবে। ব্যার্থতার গল্প পড় তাহলে সফল হওয়ার কিছু ধারনা পাবে।

৫. জাতির সবচেয়ে ভাল মেধা ক্লাসরুমের শেষ বেঞ্চ থেকে পাওয়া যেতে পারে।

৬. জীবন এবং সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ট শিক্ষক। জীবন শিখায় সময়কে ভালভাবে ব্যবহার করতে সময় শিখায় জীবনের মূল্য দিতে।

৭. তোমার কাজকে ভালবাস কিন্তু তোমার কোম্পানিকে ভালবাসো না। কারন তুমি হয়ত জান না কখন কোম্পানিটি তোমাকে ভালবাসবে না।

৮. তুমি যদি সূর্যের মতো আলো ছড়াতে চাও, তাহলে আগে সূর্যের মতো জ্বলো,

৯. ছাত্রজীবনে বিমানের পাইলট হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়ে, হয়ে গেলাম রকেট বিজ্ঞানী

১০. জীবন হলো এক জটিল খেলা। ব্যক্তিত্ব অর্জনের মধ্য দিয়ে তুমি তাকে জয় করতে পার।

১১. জটিল কাজেই বেশি আনন্দ পাওয়া যায়। তাই সফলতার আনন্দ পাওয়ার জন্য মানুষের কাজ জটিল হওয়া উচিত।

১২. পরম উৎকর্ষতা হলো একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা হঠাৎ করেই আসে না। ধীরে ধীরে আসে।

১৩. যারা মন থেকে কাজ করে না, তাঁরা আসলে কিছুই অর্জন করতে পারে না। আর করলেও সেটা হয় অর্ধেক হৃদয়ের সফলতা। তাতে সব সময়ই একরকম তিক্ততা থেকে যায়।

১৪. জীবন হলো একটি জটিল খেলা। ব্যক্তিত্ব অর্জনের মধ্য দিয়ে তুমি তাকে জয় করতে পার।

১৫. আমরা তখনই স্মরণীয় হয়ে থাকবো, শুধুমাত্র যখন আমরা আমাদের উত্তর প্রজন্মকে উন্নত ও নিরাপদ ভারত উপহার দিতে পারবো।

১৬. যদি কোন দেশ দুর্নীতিমুক্ত হয় এবং সবার মধ্যে সুন্দর মনের মানসিকতা গড়ে ওঠে, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করি সেখানকার সামাজিক জীবনে তিন রকম মানুষ থাকবে, যারা পরিবর্তন আনতে পারেন। তারা হলেন পিতা, মাতা ও শিক্ষক।

১৭. শিক্ষাবিদদের উচিত শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুসন্ধানী, সৃষ্টিশীল, উদ্যোগী ও নৈতিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়া, যাতে তারা আদর্শ মডেল হতে পারে।

১৮. তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান হলো ভিন্নভাবে চিন্তা করার সাহস থাকতে হবে। আবিষ্কারের নেশা থাকতে হবে। যেপথে কেউ যায় নি, সে পথে চলতে হবে। অসম্ভবকে সম্ভব করার সাহস থাকতে হবে। সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে এবং তারপর সফল হতে হবে। এগুলোই হলো সবচেয়ে মহৎ গুণ। এভাবেই তাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তরুণদের কাছে এটাই আমার বার্তা।

১৯. উত্কর্ষ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়।

২০. জীবন এক কঠিন খেলা। এই খেলায় জয় তখনই সম্ভব, যখন তুমি ব্যক্তি হিসেবে জন্মগতভাবে পাওয়া অধিকারকে ধারণ করবে।

২১. জীবনে সমস্যার প্রয়োজন আছে। সমস্যা আছে বলেই সাফল্যের এতো স্বাদ।

২২. যে হূদয় দিয়ে কাজ করে না, শূন্যতা ছাড়া সে কিছুই অর্জন করতে পারে না।

২৩. শিক্ষাবিদদের বিচক্ষণতা, সৃজনশীলতার পাশাপাশি উদ্যোগী হওয়ার ও নৈতিক নেতৃত্বেরও শিক্ষা দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজেকে পথিকৃত্ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার যোগ্যতা অর্জন করা উচিত।

২৫. যদি একটা দেশকে সম্পূণর্রূপে দুর্নীতিমুক্ত ও একটা জাতিকে সুন্দর মনের অধিকারী করতে হয়, তাহলে আমি বিশ্বাস করি, তিনজন ব্যক্তি এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন- বাবা, মা ও শিক্ষক।

২৬. আমরা শুধু সাফল্যের উপরেই গড়ি না, আমরা ব্যর্থতার উপরেও গড়ি।

২৭. একজন খারাপ ছাত্র একজন দক্ষ শিক্ষকের কাছ থেকে যা শিখতে পারে তার চেয়ে একজন ভালো ছাত্র একজন খারাপ শিক্ষকের কাছ থেকে অনেক বেশী শিখতে পারে ।

২৮. আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। মহাবিশ্ব আমাদের প্রতি বন্ধুপ্রতীম। যারা স্বপ্ন দেখে ও সে মতো কাজ করে, তাদের কাছেই সেরাটা ধরা দেয়।

২৯. আমি আবিষ্কার করলাম সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেশী বিক্রি হয়ে যায় সিগারেট ও বিড়ি। অবাক হয়ে ভাবতাম, গরিব মানুষেরা তাদের কঠোর পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থ এভাবে ধোঁয়া গিলে উড়িয়ে দেয় কেন।

৩০.

# If you fail, never give up because F.A.I.L. means “First Attempt In Learning”

# End is not the end, in fact E.N.D. means “Effort Never Dies”

# If you get No as an answer, remember N.O. means “Next Opportunity”

## So let’s be positive.


মাহাথির মুহাম্মদের জীবনী পড়ুন এখানে 

হিন্দুস্তানে যেভাবে এলো ইসলাম – একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

[হিন্দুস্তান বা হিন্দুস্থান, বর্তমান Indian Subcontinent (ভারতীয় উপমহাদেশ) এর ঐতিহাসিকভাবে জনপ্রিয় নামগুলির একটি। এই নামের আক্ষরিক অর্থ “সিন্ধু নদের দেশ”। হিন্দুস্তান নামটি বেশ প্রাচীন, যা এসেছে আদি ফার্সি শব্দ “হিন্দু” থেকে। ফার্সি ভাষায় সিন্ধু নদকে বলা হতো হিন্দু নদ। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জনপ্রিয় “স্তান” অনুসর্গটি (ফার্সি ভাষায় যার অর্থ “স্থান”)। আগে হিন্দুস্তান বলতে গোটা উপমহাদেশকেই বোঝাত।
ঐতিহাসিকভাবে “হিন্দু” কোন ধর্মের নাম নয় বরং সিন্ধু নদের পাড়ে বসবাসরত মানুষদেরকে বোঝাতো তারা যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন। অন্যদিকে, বর্তমান হিন্দুধর্মের মূল নাম হচ্ছে সনাতন ধর্ম (সংস্কৃতঃ सनातन धर्म) যা কালের বিবর্তনে এখন হিন্দুধর্ম নামে পরিচিত হয়ে গিয়েছে।
সারা বিশ্বের মুসলিমগণ অতীতে এই অঞ্চলকে (এবং এখনও) “আল-হিন্দ/হিন্দুস্তান” বলেই ডাকতেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, রাসূল ﷺ এর সময়ও এই উপমহাদেশকে বুঝানোর জন্য আল-হিন্দ (الهند) নামটি ব্যবহৃত হয়েছে। এই ওয়েবসাইট এর মূল ইংরেজি আর্টিকেলগুলোতে India বলতে বুঝানো হয়েছে গোটা উপমহাদেশ, যা মূলত হিন্দুস্তান। ঐতিহাসিকভাবে ইসলামের হারানো ইতিহাস এর ক্ষেত্রেও তাই আমরা “হিন্দুস্তান” নামটিই ব্যবহার করব।

আজ হিন্দুস্তানে (বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানে) বসবাসরত প্রায় ৫০ কোটি মুসলিম এই অঞ্চলকে বিশ্বের মুসলিম জনশক্তির অন্যতম একটি কেন্দ্রে পরিণত করেছে। ইসলাম সর্বপ্রথম এই অঞ্চলে আসার পর থেকেই এই অঞ্চলের মানুষদের মাঝে অনেক অবদান রেখেছে এবং এখনও রেখে যাচ্ছে। কিভাবে এই বিশাল অঞ্চলে ইসলাম এসেছে তা নিয়ে অনেক মতবাদ আছে। রাজনৈতিভাবে, কেউ কেউ (যেমন বর্তমান ভারতের ‘হিন্দুত্ব’ আন্দোলন) ইসলামকে বিদেশী বলে আখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে, তাদের ভাষ্যমতে, আরব ও পারস্যের মুসলিমদের বহিরাক্রমণের কারণেই এখানে ইসলামের প্রবেশ ঘটে ও বিস্তার লাভ করে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা এরকম নয়।

হিন্দুস্তানের সর্বপ্রথম মুসলিমগণ

চেরামান জুম’আ মসজিদ
চেরামান জুম’আ মসজিদ

রাসূল ﷺ এর জন্মের পূর্বে থেকেই আরব ব্যবসায়ীদের হিন্দুস্তানে বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে তারা পশ্চিম হিন্দুস্তানের উপকূলীয় বন্দরগুলোতে ভীড়তেন। ব্যবসার মূল দ্রব্য ছিল মশলা, স্বর্ণ এবং আফ্রিকান পণ্য। স্বাভাবিকভাবেই আরবরা যখন নতুন নতুন ইসলাম গ্রহণ করে, তারা তাদের এই নতুন ধর্ম হিন্দুস্তানের উপকূলে নিয়ে আসে। এভাবে হিন্দুস্তানের প্রথম মুসলিম “পেরুমল ভাস্কর রবি বার্মা” ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে (রাসূল ﷺ এর জীবনকালেই) কেরালা তে হিন্দুস্তানের প্রথম মসজিদঃ চেরামান জুম’আ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। আরব মুসলিম এবং হিন্দুস্তানীদের মাঝে অব্যাহত বাণিজ্যের মাধ্যমে ইসলাম আস্তে আস্তে হিন্দুস্তানের উপকূলীয় শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এর মূল মাধ্যমগুলো ছিল দেশান্তর এবং ধর্মান্তরীকরণ।

মুহাম্মাদ বিন কাশিম
হিন্দুস্তানে ইসলাম সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে দামেস্ক-ভিত্তিক উমাইয়া খলিফাদের শাসনামলে। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে, সিন্ধু অঞ্চলে উমাইয়াদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে উমাইয়ারা মাত্র ১৭ বছর বয়সী তায়েফের এক অধিবাসীঃ “মুহাম্মাদ বিন কাশিম” কে নিয়োগ দেয়। ‘সিন্ধু’ হচ্ছে উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, যা বর্তমান পাকিস্তানের সিন্ধু নদের তীরবর্তী এলাকা। মুহাম্মাদ বিন কাশিম এর নেতৃত্বাধীন ৬০০০ সৈন্যের এক বাহিনী পারস্যের সবচেয়ে-পূর্বের ‘মাক্‌রান’ (বর্তমান সিন্ধু এবং বেলুচিস্তানের দক্ষিণে) অঞ্চলে এসে পৌঁছায়।

হিন্দুস্তানে আসার পথে তিনি তেমন বাধার সম্মুখীন হননি। সিন্ধু নদের তীরবর্তী শহর ‘নেরুন’ এর কাছাকাছি পৌঁছালে শহরের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা তাকে স্বাগত জানান, শহরটি মূলত সন্ন্যাসীদের অধীনেই ছিল। সিন্ধু নদের তীরবর্তী অন্যান্য শহরগুলোও এরপর কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ ছাড়াই স্বেচ্ছায় মুসলিমদের অধীনে চলে আসে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, নির্যাতিত বৌদ্ধ সংখ্যালঘুরা তাদের এলাকার হিন্দু শাসক থেকে পালিয়ে মুসলিম সেনাবাহিনীর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে।

জনসাধারণের মধ্যে সিংহভাগের মুসলিমদের প্রতি সমর্থন থাকা সত্ত্বেও, সিন্ধুর রাজা দাহির মুসলিমদের এই অগ্রযাত্রার বিরোধিতা করেন এবং মুহাম্মাদ বিন কাশিম এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধ শেষ হয় রাজা দাহিরের শোচনীয় পরাজয়ের মাধ্যমে। এই বিজয়ে পুরো সিন্ধু মুসলিমদের অধীনে চলে আসে।

উল্লেখ্য যে, সিন্ধুর জনসাধারণকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হয়নি। বরং প্রকৃতপক্ষে, কারো দৈনন্দিন জীবনে কোন পরিবর্তনই আসেনি। মুহাম্মাদ বিন কাশিম তার অধীনস্থ হিন্দু ও বৌদ্ধদের নিরাপত্তা দেন এবং ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেন। উদাহরণস্বরূপ, আগের মতোই ব্রাহ্মণরা কর সংগ্রহের দায়িত্বে আর বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা তাদের মঠ রক্ষণাবেক্ষণ এর দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। ধর্ম পালনের এই স্বাধীনতা এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠার কারণে, অনেক শহরের অধিবাসীরা গান-বাজনার মাধ্যমে মুহাম্মাদ বিন কাশিম এবং তার বাহিনীকে অভিবাদন জানায়।

ধর্মান্তরীকরণের নমুনা

ধারাবাহিক জয়ের মাধ্যমে মুসলিম সেনারা একই পদ্ধতিতে হিন্দুস্তান র অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে থাকে। হিন্দুস্তানের সমাজের ধর্মীয় এবং সামাজিক কাঠামো পরিবর্তন করা ছাড়াই গজনীর সুলতান মাহমুদ এবং মুহাম্মাদ তুঘলুক মুসলিমদের রাজনৈতিক এলাকা বিস্তৃত করেন।

প্রাক-ইসলামিক যুগে হিন্দুস্তানের সমাজের কাঠামোর ভিত্তি ছিল বর্ণ প্রথা, যার মাধ্যমে সমাজ কয়েক অংশে বিভক্ত ছিল। মানুষের মাঝে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ব্যাপারটা ধাপে ধাপে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এক বর্ণের সকলেই ইসলাম গ্রহণ করে। এর পিছনে বিভিন্ন কারণও ছিল। বর্ণ প্রথার বৈষম্যের চেয়ে ইসলাম সমাজে যে সমতা এনেছিল তা মানুষের কাছে বেশী আকর্ষণীয় ছিল। বর্ণ প্রথায় মানুষের অবস্থান নির্ণয় হয় জন্মের মাধ্যমে। সমাজে সক্রিয় অবদান রাখা তো দূরের কথা, এমনকি পিতা-মাতার যতটুকু অর্জন করেছে তার চেয়ে বেশী অর্জন করাই সম্ভব ছিল না। ইসলাম এসে মানুষকে উপরে ওঠার সুযোগ করে দেয়, ব্রাহ্মণ গোত্রের পরাধীনতা থেকে দেয় মুক্তি।

দিল্লি জামি মসজিদ
দিল্লি জামি মসজিদ

উপমহাদেশের এককালের জনপ্রিয় ধর্ম ছিল বৌদ্ধধর্ম। মুসলিম শাসনামলে এসে ধর্মটি আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যেতে থাকে। উপমহাদেশের মানুষ সাধারণত বর্ণ প্রথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে কোন বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে গিয়ে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করতো। যখন ইসলাম তাদের কাছে আরো ভাল এক বিকল্প হিসেবে আসে, তারা বৌদ্ধধর্মের পরিবর্তে ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু বর্ণ প্রথা ত্যাগের ব্যাপারটা যথারীতি চলছিল। মুসলিমদের আগ্রাসনে উপমহাদেশে বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলে যে জনশ্রুতি আছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। মুসলিম শাসনামলে বৌদ্ধদের ধর্ম পালনে কোন রকম বাধা দেয়া হয়নি এবং জোর করে ধর্মান্তরীকরণ কিংবা আগ্রাসনের কোন প্রমাণও নেই।

হিন্দুস্তানে জনসাধারণের মাঝে ইসলাম এর বাণী পৌঁছিয়ে দিতে শিক্ষকগণ মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। মুসলিম পণ্ডিতগণ গোটা হিন্দুস্তান জুড়ে পরিভ্রমণ করেছিলেন, মানুষকে ইসলামের শিক্ষা দেয়াকে করে নিয়েছিলেন জীবনের লক্ষ্য। বেশীরভাগই আবার সুফী মতবাদ প্রচার করেছিলেন। এই মতবাদ ছিল ইসলাম প্রচারের এক রহস্যময় পন্থা যা জনসাধারণকে অনেক কৌতূহলী করে তুলেছিল। শুধুমাত্র মুসলিম শাসকদের নিকটস্থ সমাজের অভিজাত শ্রেণীদেরই নয়, গ্রামাঞ্চলের বৃহৎ জনসংখ্যাকে ইসলামের পথে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে এই শিক্ষকদের সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল।

ইসলাম এর প্রসার কি জোর-জবরদস্তি করে হয়েছে?

দাবী করা হয় যে, হিন্দুস্তানে ইসলামের অসংখ্য অনুসারীর কারণ হচ্ছে জোর-জবরদস্তি এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ধর্মান্তরীকরণ। এ ব্যাপারে কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেনি। যদিও পরবর্তীতে মুসলিম শাসকদের পরিবর্তে হিন্দু রাজারা শাসনে এসেছিল, কিন্তু সমাজ রয়ে গিয়েছিল আগের মতোই। জবরদস্তি ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ধর্মান্তরীকরণ এর ঘটনা খুবই কম, তাছাড়া একাডেমিক আলোচনা এবং গবেষণার ক্ষেত্রেও বিশ্বাসযোগ্য নয়।

ইসলাম যদি সত্যিই সত্যিই সংঘাত ও যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করতো, তাহলে হিন্দুস্তানে মুসলিম সম্প্রদায় আজ শুধুমাত্র অন্যান্য মুসলিম অঞ্চলের কাছাকাছি জায়গাগুলোতে বিদ্যমান থাকতো। অর্থাৎ শুধুমাত্র উপমহাদেশের পশ্চিমাংশে মুসলিম জনসংখ্যা থাকতো। বরং আমরা এখন যা দেখতে পাই তা হলো উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম ছোট-বড় আকারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের ১৫ কোটি মুসলিম রয়েছে উপমহাদেশের সর্ব-পূর্বে, যা হিন্দুস্তানের বিশাল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের মাধ্যমে অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন। এমন আরো বিচ্ছিন্ন অঞ্চল আছে পশ্চিম-মিয়ানমার, মধ্য-হিন্দুস্তান এবং শ্রীলঙ্কার পূর্বাঞ্চলে। এই অঞ্চলগুলোতে মুসলিমদের অস্তিত্বই প্রমাণ করে ইসলাম শান্তিপূর্ণভাবে গোটা উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে, মুসলিম শাসক ছিল কি ছিলনা তার উপর নির্ভর করে নয়। অনেকের দাবী ইসলাম জোর-জবরদস্তির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করেছে, একথা সত্যি হলে উল্লেখিত অঞ্চলগুলোতে মুসলিম সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব থাকতো না।

ইসলাম হচ্ছে এই উপমহাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই উপমহাদেশ এখন এক বহুজাতিক ও বহু ধর্মের মানুষের অঞ্চল। এখানে ইসলামের অবস্থান কেমন তা উপলব্ধি করা খুবই জরুরী। ইসলামকে অনেকে এমনভাবে অ্যাখ্যা দেন যেন এটি যুদ্ধ-বিগ্রহের ধর্ম, আবার অনেকে বলেন এটি একটি বিদেশী ধর্ম। এ ধরনের দাবীকে ইসলামের শান্তিপূর্ণ বাণী প্রচারের মাধ্যমেই মোকাবেলা করতে হবে।


অনুবাদ করা হয়েছেঃ How Islam Spread in India আর্টিকেল থেকে।
অনুবাদকঃ আহমেদ রাকিব

Bibliography – গ্রন্থপঞ্জিঃ
Hodgson, M. The Venture of Islam . 2. Chicago: University of Chicago Press, 1961. Print.

Kennedy, Hugh. The Great Arab Conquests: How the Spread of Islam Changed the World We Live In. Philadelphia: Da Capo Press, 2007. Print.

“World’s second oldest mosque is in India.” Bahrain Tribune 07 06 2006, n. pag. Web. 23 Nov. 2012..

 

কালিমায়ে তাইয়েবা: একটি শপথ, এ বিশ্বাস আমার, এই চেতনা আমার।

লেখকঃ  মুহাম্মাদ মনযূর নুমানী, অনুবাদঃ মাহমুদ হাসান মাসরুর।  লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কেউ নেই, মুহাম্মদ সা. তাঁর রাসুল) প্রিয় ভাই! এটা হলো কালিমায়ে তাইয়েবা (মহা পবিত্র বাক্য)। ইসলামে প্রবেশের একমাত্র দরজা। এর উপর স্থাপিত দ্বীন ও ঈমানের আকাশ-ছোঁয়া মিনার। আজন্ম কাফের-মুশরিকও যদি এ কালিমা গ্রহণ করে এবং বিশ্বাসের সঙ্গে পাঠ করে তাহলে মুহূর্তের মধ্যে সে মুমিন ও মুসলমানরূপে আত্মপ্রকাশ করে; দুনিয়া ও আখেরাতের চির মুক্তি ও নাজাতের অধিকারী হতে পারে।

তবে শর্ত হলো এ কালিমার মাধ্যমে মহান আল্লাহর তাওহীদ এবং প্রিয় নবীর রেসালাতের যে স্বীকৃতি সে দান করলো তাকে তা বুঝতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে এবং মনে প্রাণে মেনে নিতে হবে। কিন্তু সে যদি তাওহীদ ও রেসালাতের মর্ম মোটেই বুঝতে না পারে, শুধু মুখে উচ্চারণ করে, তাহলে আল্লাহ তাআলার নিকট সে মুসলমানরূপে গণ্য হতে পারবে না।

এ-জন্য কালিমায়ে তাইয়েবার অর্থ ও মর্ম শিখে নেওয়া জরুরি। কালিমার প্রথম অংশ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর মাঝে আল্লাহ তাআলার তাওহীদের স্বীকারোক্তি নিহিত। এই স্বীকারোক্তির মর্ম ও মতলব হলো, মহান আল্লাহর সত্ত্বা ব্যতীত এমন কিছু নেই, যা ইবাদত ও উপাসনার উপযুক্ত হতে পারে। বরং ইবাদত-বন্দেগী কেবলি আল্লাহ তাআলার প্রাপ্য। তিনিই স্রষ্টা, তিনিই কর্তা, রিযিকদাতা, পালনকর্তা। শুধু তিনিই জীবনদাতা, কেবল তিনিই মৃত্যুদাতা, রোগদাতা-আরোগ্যদাতা। উপকার-অপকার, স্বচ্ছলতা-দরিদ্রতা মোটকথা, জগতের সকল ভাঙ্গাগড়ার একমাত্র মালিক তিনি। আসমান জমিনের সবকিছু মানুষ হোক, ফেরেশতা হোক অন্য আর যাইহোক সবই তাঁর সৃষ্টি, তাঁর হুকুমের গোলাম। কোনো সমকক্ষ নেই তাঁর। তাঁর রাজত্বে কারো কোন অংশ নেই। কারো কোনো শক্তি নেই তাঁর কাজে ব্যাঘাত ঘটাবার।

সুতরাং তিনিই, শুধুই তিনি ইবাদতের উপযুুক্ত। সুখে-দুঃখে হৃদয় কেবলি তাঁর দিতে ছুটে যাবে। বিপদে-আপদে, জীবনের সকল প্রয়োজনে মানুষ তাঁরই দরবারে হাত ওঠাবে, অশ্রু ঝরাবে এবং ফরিয়াদ জানাবে। তিনি প্রকৃত বাদশাহ। দুনিয়ার সমস্ত হাকিমের চেয়ে বড় তিনি। মহীয়ান তিনি। গরীয়ান তিনি।

সুতরাং তাঁরই হুকুম মান্য করা উচিৎ। পরম আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে শুধু তাঁর হুকুম মোতাবেক জীবন যাপন করা উচিত। তাঁর হুকুম লংঘন করে কখনো কারো কথায় কর্ণপাতই করা উচিৎ নয়। সে যেই হোক; দেশের সরকার, বংশের সরদার, আপন পিতা, অন্তরঙ্গ বন্ধু এমনকি নিজের দিলের চাহিদা কিংবা অন্তরের প্রত্যাশা হলেও না। আমরা আল্লাহ তাআলাকেই ইবাদতের উপযুুক্ত বলে জেনেছি, মেনে নিয়েছি এবং তাঁর গোলামি এখতিয়ার করে নিয়েছি।

এবার আমাদেরকে আমাদের বিশ্বাসের অনুরূপ কাজ করে দেখাতে হবে। দুনিয়াদারেরা যেন বুঝতে পারে, আমরা এক আল্লাহর গোলাম। আমরা কেবল আল্লাহর হুকুম মতো চলি। আল্লাহর জন্য বাঁচতে চাই, আল্লাহর জন্যই মরতে প্রস্তুত থাকি। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- এটা আমাদের স্বীকৃতি ও ঘোষণা। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- এটা আমাদের বিশ্বাস ও চেতনা। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- এটাই আমাদের কাজ ও প্রেরণা।

হে প্রিয় ভাই! ঈমানী প্রাসাদের প্রথম ইট হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এটাই ছিলো উম্মতের প্রতি সকল নবী-রাসুলের প্রথম সবক। দ্বীনের সকল বিষয়ের মাঝে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর মর্যাদা সর্বাধিক।

নবীজী ইরশাদ করেন, الْإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ: أَفْضَلُهَا قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ঈমানের সত্তরের অধিক শাখা রয়েছে। তার মাঝে সর্বোত্তম শাখা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর প্রবক্তা হওয়া। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৭৬)

এ জন্য সমস্ত যিকিরের মাঝে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। এক হাদীসে এসেছে,
أَفْضَلُ الذِّكْرِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ যিকির সমূহের মাঝে শ্রেষ্ঠ যিকির হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩৮০০)

অপর একটি হাদীসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা আলাইহিস সালামকে বলেন,
يَا مُوسَى لَوْ أَنَّ أَهْلَ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَالْأَرَضِينَ السَّبْعِ فِي كِفَّةٍ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فِي كِفَّةٍ، مَالَتْ بِهِمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ. أَخْرَجَه النَّسَائِيُّ بِسَنَدٍ صَحِيحٍ كما قال ابن حجر في فتح الباري.
হে মুসা! সাত তবক আসমান-জমিন এবং এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু আছে, সবি যদি এক পাল্লায় রাখা হয়, আর অন্য পাল্লায় শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ রাখা হয়, তবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর পাল্লাই ভারী হয়ে যাবে। (সুনানে কুবরা নাসাঈ, হাদীস নং ১০৬০২)

কালিমায়ে তাইয়েবার এই অংশটুকুর এত ওজন ও ফজিলত এজন্য যে, এর ভেতর আল্লাহ তাআলার তাওহীদ ও একত্ববাদের স্বীকৃতি রয়েছে। তাঁর ইবাদত করা এবং তাঁর হুকুম মতো চলার অঙ্গীকার নিহিত আছে। এটাই ঈমানের রূহ এবং প্রাণস্পন্দন। নবীজী উম্মতকে বারবার এই কালিমা পাঠ করে ঈমান তাজা করার জন্য নসীহত করেছেন
جَدِّدُوا إِيمَانَكُمْ. قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَكَيْفَ نُجَدِّدُ إِيمَانَنَا؟ قَالَ: أَكْثِرُوا مِنْ قَوْلِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ. قال الهيثمي إِسْنَادُهُ جَيِّدٌ.
হে লোকসকল! তোমরা সব সময় তোমাদের ঈমানকে তরতাজা রাখার চেষ্টা করো। কতক সাহাবী আরজ করলেন, ঈমান তাজা রাখার উপায় কী?

নবীজী ইরশাদ করলেন, বেশী বেশী ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর যিকির করো। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৮৭১০)

এই কালিমার যিকির দ্বারা ঈমান তাজা হওয়ার কারণ হলো এতে আল্লাহ তাআলার বন্দেগীর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হয়। সর্বাবস্থায় তাঁর প্রতি নিবিষ্ট এবং তাঁর মুহাব্বত ও ভালোবাসায় নিমগ্ন থাকার প্রেরণা সৃষ্টি হয়। সুতরাং যত গভীর ধ্যান ও পরম উপলব্ধির সঙ্গে আমরা বেশী বেশী এই কালিমার যিকির করবো, নিশ্চিতভাবে আমাদের ঈমান সে পরিমাণ তাজা হতে থাকবে, ঈমানের মজবুতি ততই বাড়তে থাকবে ইনশাআল্লাহ। এভাবে এক সময় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’এর যিকিরই আমাদের সর্বক্ষণের আমল হয়ে যাবে এবং এর দাবী অনুযায়ী জীবন যাপন আমাদের বৈশিষ্ট্যে পরিণত হবে।

সুতরাং, হে মুসলমান ভাই! আসুন আমরা খাঁটি দিলে ধ্যানের সঙ্গে বেশী বেশী ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ যিকির করি, যাতে আমরা ঈমান তাজা রাখতে পারি। আমাদের জীবনকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর ছাঁচে ঢেলে সাজাতে পারি।

কালিমার দ্বিতীয় অংশ: মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ
কালিমার এই অংশে মুহাম্মদ সাল্লালল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার নবী হওয়ার ঘোষণা রয়েছে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে নবীজীকে পৃথিবীবাসীর হেদায়েতের জন্য প্রেরণ করা এবং কোরআন আল্লাহ তাআলার বাণী হওয়া, ফেরেশতার বিদ্যমানতা, কেয়ামত সংঘটিত হওয়া, মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত হওয়া, নেককারের জন্য জান্নাত এবং বদকারের জন্য জাহান্নামের ফয়সালা হওয়া ইত্যাদি যত সংবাদ নবীজী দান করেছেন, সবই ধ্রুব সত্য বলে বিশ্বাস করা।

নবীজী আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে অকাট্য ও নিশ্চিত জ্ঞান লাভের পর উম্মতকে তা জানিয়েছেন। এর মাঝে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। এমনিভাবে নবীজী অন্যান্য যে সকল হেদায়েত দান করেছেন, যে সমস্ত হুকুম-আহকাম ও বিধানাবলী বর্ণনা করেছেন, সেগুলো মূলত আল্লাহরই আহকাম ও হেদায়েত। আল্লাহ তাআলা ওহীর মাধ্যমে নবীজীর অন্তরে সেগুলো ঢেলে দিয়েছেন।

এই আলোচনা থেকে আপনি বুঝতে পেরেছেন যে, কাউকে আল্লাহর নবী ও রাসুল হিসেবে মেনে নেওয়ার অর্থ তাঁর প্রতিটি আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। কারণ আল্লাহ তাআলা যে বিধানাবলীর উপর মানব মণ্ডলীকে চালাতে চান, সে বিধানগুলিই নবীর মাধ্যমে বান্দাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন।

কোরআন শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ
আমি কেবল এজন্য নবী প্রেরণ করেছি যে, আমার হুকুমে নবীর আনুগত্য করা হবে, তার আদেশ-নিষেধগুলো মান্য করা হবে। (সূরা ৪, আয়াত ৬৪)

মোটকথা নবীর উপর ঈমান আনার উদ্দেশ্য নবীর কথা সত্য বলে বিশ্বাস করা, তার বাতানো হেদায়েত ও শিক্ষাকে আল্লাহ তাআলার হেদায়েত ও শিক্ষা বলে মনে করা এবং তাঁর শেখানো তরিকার উপর চলার সিদ্ধান্ত নেওয়া। সুতরাং যে ব্যক্তি মুখে কালিমা পড়ে নিয়েছে, কিন্তু নবীজীর আনীত সকল বিষয়কে সত্য মনে করে না, নবীজীর তরিকার বিপরীত সকল মত ও পথকে অকার্যকর জ্ঞান করে না, নবীজীর দেয়া শরীয়ত মোতাবেক জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নেয় না, আসলে সে মুসলমানই নয়। সম্ভবত সে মুসলমান হওয়ার অর্থই বুঝেনি।

আমরা যখন কালিমা পড়ে নবীজী সাল্রাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলার সত্য নবী বলে স্বীকার করলাম, তখন তাঁর হুকুম মতো চলা, তাঁর দেয়া শরীয়ত অনুযায়ী আমল করা এবং তাঁর সকল কথা মান্য করা আমাদের উপর অপরিহার্য।

কালিমায়ে তাইয়েবা : একটি শপথ একটি অঙ্গীকার কালিমার উভয় অংশের ব্যাখ্যা থেকে আপনি অনুভব করতে পেরেছেন যে, কালিমা যেন এক মহিমাময় শপথবাক্য। যার সার কথা হলো, আমি কেবল আল্লাহ তাআলাকে ইবাদতের উপযুক্ত মনে করি, দুনিয়া ও আখেরাতের সকল বিষয় তার কুদরতের কব্জায় রয়েছে বলে বিশ্বাস করি। সুতরাং আমি তাঁরই বন্দেগী ও গোলামি করি। তাঁকে ভালোবাসি, তাঁর হুকুম মতো জীবন পরিচালনা করি এবং আমি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলার প্রেরিত সত্য নবী বলে স্বীকার করি।

জীবনের সকল বিষয়ে আমি তাঁর আনুগত্য করি, তাঁর আনীত হেদায়েতের অনুসরণ করি। এ-ভাবে শপথ নেওয়াকেই বলে ঈমান আনা, তাওহীদ ও রেসালাতের সাক্ষ্য দেওয়া। সুতরাং এই একরারনামা স্মরণ রাখা এবং এর দাবী অনুসারে জীবন গড়া প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। তাহলে সে জান্নাতের হকদার হতে পারবে, আল্লাহ তাআলার নিকট সাচ্চা মুমিনের মর্যাদা লাভ করবে।

যে ব্যক্তি খাঁটি দিলে কালিমার দুই অংশ তথা তাওহীদ ও রেসালাত স্বীকার করবে এবং কাজেকর্মে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে, এমন খোশনসীব বান্দার জন্য বড় সুসংবাদ! নবীজী ইরশাদ করেন,

مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ النَّارَ যে ব্যক্তি খাঁটি মনে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’-এর স্বাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ পাক তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭)

আমার দ্বীনি ভাই বোন! আসুন, এই কালিমার হাকীকত ও মাহাত্য অন্তরে নিয়ে আমরা তাওহীদ ও রেসালাতের সাক্ষ্য দিই। এই কালিমার দাবী অনুসারে আপন আপন জিন্দেগী পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিই। অন্যথায় আমাদের এই সাক্ষ্য ধোকা ও প্রতারণা বলে সাব্যস্ত হবে। আমাদের ঈমান ও ইসলাম শংকার ভিতর পড়ে যাবে। অথচ এই কালিমা আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তির মূলমন্ত্র। ঈমান ও ইসলামের প্রথম বুনিয়াদ।

সুতরাং পরম ভক্তি ও সুগভীর বিশ্বাসের সঙ্গে বলি, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ- এটা আমার স্বীকারোক্তি, এটা আমার ঘোষণা । লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ- এ বিশ্বাস আমার, এই চিন্তা-চেতনা আমার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এটাই দাওয়াত আমার, জীবনসূত্র আমার। এরই প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় জীবন আমার, মৃত্যু আমার।


সম্পাদনাঃ আবু সাবের আব্দুল্লাহ দাঃবাঃ
সিনিয়র মুহাদ্দিস,মালিবাগ মাদ্রাসা।

জীবনের প্রকৃত সফলতা / মুবাশ্বিরাহ্ শর্মা

ইসলাম গ্রহণের আগে আমার যত মেয়ে বান্ধবী ছিলো, তাদের বেশিরভাগই ছিলো মুসলিমা, আমার জানামতে তারা অনেকেই ধার্মিক এবং পরহেজগার ছিলো। নিয়মিত নামায আদায় করতো। একদিন আমি নাঈমাকে বললাম আমি খুব টেনশনে আছি, কিছু একটা উপায় দাও যাতে টেনশন কমে, সে মজা করে বললো, তাহাজ্জুদ এর নামায পড়ো! সব ঠিক হয়ে যাবে!

তখন কথাটার মর্মার্থ বুঝিনি, কিন্তু আল্লাহ তা’লার অশেষ রহমতে এখন বুঝতে পেরেছি, যখন মনের মধ্যে হতাশা আর কষ্ট অনুভব করি, তখনই মনে পড়ে তার সেই কথাটা! আর যখন সিজদায় যায়, তখনই মনের সব কষ্ট দূরীভূত হয়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ।

“এর চাইতে বোকামী আর কি হতে পারে? আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েই মনে করি পরকালের সব পুঁজি সঞ্চয় করে ফেলেছি”।

যেখানে অনন্তকাল থাকবো, সেখানকার জন্য মাত্র দুই ঘন্টা সাধনা। আর আজকাল পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে দু’ঘন্টা সময় ও খরচ হয় না। আমরা দশ মিনিটে এশার নামায পড়ে অবসর হয়ে যাই। অথচ ইশার নামাযই হলো সবচেয়ে দীর্ঘ।

চট্টগ্রামের অনেক মসজিদে এখন নারী এবং পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা নামাযের ব্যবস্তা করা হয়েছে, কয়েকদিন আগে আমি আর বান্ধবী নাঈমা বাইরে গিয়েছিলাম কিছু বইপুস্তক কেনার জন্য। নামাযের ওয়াক্ত হওয়াতে তেমনই এক মসজিদে আমি আর নাঈমা নামায পড়তে দুতলায় উঠলাম।

এক মাঝবয়সী আপুকে দেখলাম নামায পড়ছে, তার নামায পড়া দেখে আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছিল। আমি ভাবছিলাম, এ যদি হয় নামাযীর অবস্থা। তাহলে বেনামাযীর অবস্থা কি হবে। দেখলাম আপুটি দেড় মিনিটে চার রাকাত নামায পড়ে ফেলেছে। আমাদের অনেকেরেই অবস্থা এমন, দেড় মিনিটে চার রাকাত নামায পড়ে মনে করি জান্নাত কিনে ফেলেছি।

আমাদের মধ্যে এমন মানুষও আছে, যারা আজ পর্যন্ত ফজরের সময় ঘুম থেকে জেগে দেখেনি। সূর্যদয়ের চার থেকে পাঁচ ঘন্টা পর তাদের ঘুম ভাঙ্গে। জীবনে কখনও তারা ফজরের সিজদা আদায় করার সৌভাগ্য লাভ করেনি। আমাদের মাঝে এমনকত লোক আছে যে, জীবনে একবারও আল্লাহ্কে সিজদা করেনি!!

আমাদের সমাজে এমন কত ঘর আছে যে, ঘরের একজনও পবিএ কোরআন পড়তে শিখেনি!

এমনও কত ঘর আছে, যে ঘরের কেউ নামায সম্পর্কে অবগত নয়। বলুন, এ বাঞ্চনার, এ পতনের কি কোন শেষ আছে? অথচ সকলেরেই আল্লাহর দরবারে যেতে হবে!! কিন্তু এর প্রস্তুতি কোথায়?

মনে রাখতে হবে, এ পৃথিবীতে আমাদের আগমনের লক্ষ্য হচ্ছে রাসূলে আরাবী(সাঃ) -এর আদর্শকে বাস্তবায়ন করা। দুর্ভাগ্যবশত আজ আমরা তার জালানো প্রদীপকে নেভাতে বসেছি। আমরা নিজ হাতে তার রচিত জীবনাদর্শের প্রতিটি ইট তুলে এনে ছুড়ে মারছি!! আমরা এ মুহাম্মদী বাগানের মালি। আমরাই যদি এ বাগান উজার করি, তাহলে বাগান আবাদ হবে কিভাবে।

আসুন জান্নাতের পথে, রাসূলের বাগানকে আবাদ করি। জান্নাতের সন্ধান করি। জান্নাতিই হল আমাদের কাঙ্খিত গন্তব্যস্থল। আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’আলা কোরআনে বলেছেনঃ তাদের প্রতিপালক তাদের পান করাবেন বিশুদ্ধ পানীয়। (সূরা দাহর -২১)

সত্যিকার অর্থে এটাইতো জীবনের সফলতা। আল্লাহ যখন নিজ বান্দাকে পবিএ পানীয় পান করাবেন, সেখানকার পরিবেশেই হবে ভিন্ন। মূলত এই মর্যাদা লাভ করার পথই হলো আমাদের উপর যে তাওহীদ রিসালাত ও আখেরাতের প্রতি মানুষকে আহ্বান করে নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। এপথে চলতে গিয়ে হয়তো নিজেদের আবেগকে বিসর্জন দিতে হবে। বিসর্জন দিতে হবে চোখের সামনে দেখা অনেক স্বার্থকে। তবেই পরকালে পাব আমরা যথাযথ পুরুস্কার।
আল্লাহ তা’আলা কোরআনে বলেছেনঃ স্হায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতিপত্নী ও সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও ফিরেশতাগন তাদের কাছে উপস্থিত হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। (সূরা রাদ-আয়াতঃ২৩)

সম্মানিত ভাই ও বোনেরা আমার—এটা হচ্ছে জীবনের প্রকৃত সফলতা। শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে এটাইতো আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। হয়তো জানিনা আল্লাহ তা’লা হাশরের ময়দানে আমার সাথে কি রকম আচরণ করবেন? সবার কাছে আমার একটাই আবেদন, বেশি বেশি দোয়া করবেন আমার জন্য । জাযাকাল্লাহ খাইরান ।

আল্লাহর সাথে ব্যবসা / মুবাশ্বিরাহ্ শর্মা

কলেজে পড়া অবস্থায় যখন বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে যেতাম, খাওয়ার বেলায় সবসময় দামী জিনিসটাই অর্ডার করতাম। ভাবতাম জীবনতো একটাই, খাওয়াদাওয়া, ঘুরাঘুরি, হাসিখুশি এটাইতো জীবন। অবশ্য থাকা পয়সার অভাব না হলে যা হয় আর কি! অথচ কখনো ভাবিনি আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা একবেলা একমুঠ খাবারের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কষ্ট করে!

দেখেই বোঝা যাচ্ছিল মানুষটা গরীব। প্রচন্ড ঠান্ডায় হি হি করে কাঁপছিল। সাথে ছোট্ট একটা মেয়ে তার। কন্যাই হবে। তার পরনেও প্রয়োজনীয় গরম কাপড় নেই। কনকনে শীতে তার দাঁতে কপাটি লেগে যাচ্ছে বারবার।

ভেতরে বসে বসে ব্যাপারটা লক্ষ্য করছিলেন এক দোকানদার। বুঝতে পারছিলেন, গরীব মানুষটা ভেতরে আসতে ইতস্তত করছে। একজন কর্মচারী দিয়ে তিনি তাকে ডেকে পাঠালেন।

– আপনি কোনও প্রয়োজনে এসেছিলেন?

– ইয়ে মানে, প্রয়োজন তো ছিল! কিন্তু আপনাদের দোকানের সাজসজ্জা দেখে মনে হলো, এটা বড়লোকদের দোকান। আশেপাশে আর কোন সস্তা দোকানও দেখছি না। দূরের কমদামী বাজারে যাওয়ার মতো ভাড়াও নেই। এদিকে আমার ছোট্ট মেয়েটা শীতে খুবই কষ্ট পাচ্ছে।

– আপনি কি শীতের কাপড় কিনতে এসেছেন?

– জ্বি! রাতে গায়ে দেয়ার জন্যে আমার পরিবারের ছয়টা কম্বল দরকার আর তিনটা বাচ্চার জন্যে শীতবস্ত্র। কিন্তু আপনাদের দোকান থেকে কিছু কেনার মতো আমার কাছে টাকা নেই। আমি কয়েক দিন একটানা কাজ করে বাড়তি কিছু টাকা জমিয়েছি। আমার কাছে ঐ কয়টা টাকাই শুধু আছে।

– কে বলেছে এখান থেকে আপনার কেনার কিছু নেই? আমাদের দোকানে সব ধরনের শীতবস্ত্র আছে। আর বিশেষ একটা কম্বল আমরা বিশেষ ছাড়ে বিক্রি করছি।

– ওটা কতো?

– একেকটা দুইশ’ টাকা করে! পাঁচটা একসাথে কিনলে, একটা কম্বল ফ্রি। পাশাপাশি প্রতিটি কম্বলের সাথে কোম্পানীর পক্ষ থেকে একটা করে শীতের জামাও পাওয়া যাবে।

– তাই নাকি! আল্লাহ বড়ই দয়ালু!

শীতের জামাটা পরে বাচ্চা মেয়েটার মুখে হাসি আর ধরে না। বারবার আয়নার সামনে গিয়ে দেখছে। বাবাকেও টেনে নিয়ে দেখাচ্ছে। তার খুশি দেখে দোকানের মালিক তো বটেই কর্মচারীরাও বিহ্বল হয়ে পড়লো।

লোকটা একহাতে কম্বল আরেক হাতে মেয়েকে ধরে চলে গেলো।

দোকানদারের পাশেই বসে তার এক বন্ধু বসে বসে চা পান করছিলেন। এতক্ষণ চুপ করে ছিলেন তিনি, টু’শব্দটিও করেন নি। এবার মুখ খুললেন –

– কী ব্যাপার! এই কম্বলটাই তো আমার কাছে তুমি গত সপ্তাহে একটাই ৩৫০ টাকায় বিক্রি করেছ?

– হাঁ, করেছি!

– আমার কাছ থেকে এত বেশি লাভ করলে যে?
– উঁহু! তোমার কাছ থেকে আমি নামমাত্র লাভ করেছি!

– তাহলে কিছুক্ষণ আগে লোকটার কাছে যে পাঁচটা কম্বল মাত্র ১০০০ টাকায় বিক্রি করলে? আবার একটা ফ্রী-ও দিলে !

– উঁহু, আমি তার কাছে বিক্রি করিনি, বিক্রি করেছি আল্লাহর কাছে। বিনিময়ে আল্লাহর কাছ থেকে আরেকটা জিনিস কিনেছি।

– আল্লাহর কাছ থেকে কিনেছ! কী কিনেছ?

– ঠান্ডা, শীতলতা কিনেছি।

– কিভাবে!?

– তাকে কম্বলের উষ্ণতা দিয়ে আমি আল্লাহর কাছ থেকে শীতলতা কিনেছি।

– কিসের শীতলতা?

– জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার শীতলতা। কেয়ামতের মাঠে মাথার ওপর নেমে আসা গনগনে সূর্যের তাপ থেকে বাঁচার শীতলতা।

কথাগুলো শুনে হৃদয়টা শান্তিতে ভরে গেলো। জ্বী এটাই জীবন! এটাই মানবতা। আমরা সবাই মিলে যদি সমাজের ছিন্নমূল মানুষদের পাশে এসে দাড়ায়, যারা এই শীতে একটা সামান্য কম্বলের জন্য কষ্ট পাচ্ছে, তাহলে কতই না খুশি হবেন আমার রাব্বে কারীম।
আল্লাহর সাথে ব্যবসা – এটাও পড়ুন


আল্লাহর সাথে ব্যবসা
লেখক – নও মুসলিমা আপু মুবাশ্বিরাহ্ শর্মা